জীবন পাথেয়
নবী-প্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ
মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন
যার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকে, তার সন্তুষ্টি লাভের প্রচেষ্টা ও আনুগত্য মানুষের স্বভাব হয়ে যায়। সাহাবা কিরাম (রাঃ) নবীজি (সাঃ) কে ভালোবাসতেন। তাই প্রতিটি কাজে তারা নবীজি (সাঃ)-এর ইচ্ছা ও পসন্দ অপসন্দের কথা চিন্তা করে চলতেন। যে কাজে নবীজি (সাঃ) অসন্তুষ্ট হতে পারেন, এমন কাজ করার কল্পনাও তারা কখনো করতেন না। যেমন, হযরত সা'দ (রাঃ) কৃষ্ণকায় লোক ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করে তিনি ইসলামের জন্য উৎসর্গপ্রাণ লোকদের একজন বলে গণ্য হন। একবার নবীজি (সাঃ) তাঁকে বললেন, সা’দ! তুমি বিয়ে করছ না কেন? সা'দ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মতো কালো মানুষটার কাছে কে মেয়ে বিয়ে দেয়? নবীজি (সাঃ) বললেনঃ “যাও সাকীফ গোত্রের সর্দারকে গিয়ে বল যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। আপনার মেয়েটিকে আমার কাছে বিয়ে দিন।” সা’দ (রাঃ) গেলেন এবং সর্দারের নিকট নবীজির পয়গাম পৌছালেন। সর্দার তার চেহারা-সুরত দেখে ভাবনায় পড়ে গেলেন যে, এই লোকটির কাছে আমার রূপসী মেয়েটি বিয়ে দেব, এ হয় কী করে! অবশেষে তিনি এ বিয়ে সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিলেন।
হযরত সা'দ (রাঃ) নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে উঠে দাঁড়ালেন। হঠাৎ পর্দার আড়াল থেকে আওয়াজ আসল, ভাই! একটু দাঁড়ান। সা’দ (রাঃ) দাঁড়ালেন। ভিতর থেকে আবার আওয়াজ আসল, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কি আমাকে বিয়ে করার জন্য আপনাকে পাঠিয়েছেন? সত্যিই যদি এটা নবীজির আদেশ হয়ে থাকে, তা হলে নির্দ্বিধায় সর্বান্তকরণে আমি তা গ্রহণ করলাম। অতঃপর মেয়েটি তাঁর পিতাকে বুঝালো যে, নবীজির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা আপনার ঠিক হয়নি। ইসলাম তো আল্লাহ এবং তার রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু উৎসর্গ করার নাম। ভালো হবে, আপনি নবীজির দরবারে গিয়ে এই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন।
মেয়ের কথাগুলো পিতার মনে তীব্র রেখাপাত করে এবং তিনি নিজের ভুল উপলদ্ধি করতে সক্ষম হন। তিনি অনতিবিলম্বে নবীজির দরবারে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। নবীজি (সাঃ) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বিদায় দেন। অবশেষে আরবের সম্ভ্রান্ত এই নেতার কন্যার সঙ্গে হযরত সা'দ (রাঃ)-এর বিয়ে হয়ে যায়।
০ ০ ০ ০ ০ ০ ০
একবার হুজুর (সাঃ) এক আনসারীকে বললেন, “তোমার মেয়েটিকে তুমি আমার হাতে তুলে দাও।” সাহাবীদের কাছে নবীজির মনের আকাংখা পূরণ করার চেয়ে ভাগ্যের বিষয় দ্বিতীয়টি আর ছিল না। প্রস্তাব শুনে সাহাবী তো আনন্দে আত্মহারা। পরে নবীজি (সাঃ) বললেন, “আমার নিজের জন্য নয়-এই প্রস্তাব জালবীব এর জন্য।” অপ্রাসংগিক হাসি- কৌতুকের কারণে হযরত জালবীব (রাঃ)-কে অনেকেই অপসন্দ করতেন। তাই জালবীব (রাঃ) এর নাম শুনে সাহাবী চিন্তায় পড়ে গেলেন। বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মেয়ের মায়ের সঙ্গে আমি একটু পরামর্শ করে নিই। মা জালবীবের কথা শুনামাত্র প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিলেন। কিন্তু মেয়েটি নিজে বলল, রাসূলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা ঠিক হবে না। আমার ব্যাপারে নবীজি (সাঃ) যে সিদ্ধান্ত ঠিক করেছেন, তাকে আমি শিরোধার্য বলে মনে করি। আমার আশা, নবীজির সন্তোষ অনুযায়ী কাজ করলে আল্লাহ আমাকে ফেলে দেবেন না।
০ ০ ০ ০ ০ ০ ০
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রেম-ভালোবাসা মুমিনের মূল্যবান সম্পদ। কোনো মুমিনের হৃদয়-ই এর থেকে শূন্য হতে পারে না। নবীপ্রেমই আল্লাহ তাআলার নৈকট্য এবং তার যাত ও সিফাতের সঠিক ধারণা লাভের একমাত্র উপায়। সাহাবা-কিরাম বড় ভাগ্যবান ছিলেন যে, এ দৌলতের বৃহৎ অংশ তাদেরই ভাগ্যে জুটেছিল। প্রেম-ভালোবাসার নমুনা দেখতে হলে আমাদের সাহাবীদের মধ্যেই তা খুঁজে দেখতে হবে।
সাহাবায়ে কিরাম নবীজি (সাঃ) এর স্বভাব-চরিত্র অবলম্বন এবং তার আনুগত্যের স্বার্থে অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করতেন। শুধু তা-ই নয়, এর জন্যে কষ্ট শিকারে তারা আনন্দ উপভোগ করতেন। ধন-সম্পদ তো আছেই, নিজের জীবন পর্যন্ত তারা এর জন্যে বিলিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করতেন না। নবীজির ঘোষণাও ঠিক এইরূপ, “তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে আমি তার সন্তান-সন্ততি বাপ-মা এবং অন্য সব মানুষ অপেক্ষা প্রিয় হবো।” (মিশকাত)
সাহাবা-কিরামের গোটা জীবন সাক্ষী যে, তাদের কাছে নবীজি (সাঃ) সবকিছু অপেক্ষা প্রিয় ছিলেন। যেমনঃ তাবুক যুদ্ধের ঘোষণা হলো। সাহাবীদের নিয়ে নবীজি (সাঃ) তাবুকের ময়দানে চলে গেলেন। মওসুমটা ছিল প্রচন্ড গরমের। হযরত খায়সামা (রাঃ) কোনো এক কারণে সে যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। একদিন তিনি ঘরে এসে দেখলেন, তার স্ত্রী তার আরামের জন্য ঘরের ছাদে পানি ছিটিয়ে ঘর ঠান্ডা করে রেখেছে, ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করেছে এবং নানা রকম সুস্বাদু খানা প্রস্তুত করে রেখেছে। ঘরে ঢুকে এসব আয়োজন দেখে খায়সামা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর রাসূল এই প্রচন্ড গরমের দিনে খোলা ময়দানে লড়াই করছেন আর আমি কিনা ঘরে বসে বিলাসিতা করব! আল্লাহর শপথ, এ হতেই পারে না। এ ঘরে আমি থাকবই না। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হাতের কাছে যা পেলেন, তা নিয়ে তাবুক অভিমুখে রওয়ানা হয়ে গেলেন।
০ ০ ০ ০ ০ ০ ০
তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করার কারণে রাসূল (সাঃ) হযরত কাব ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য সাহাবীদের আদেশ দিলেন। এমনকি স্ত্রী থেকে পর্যন্ত বিছিন্ন থাকার আদেশ দেওয়া হয়। দূত মারফত এই আদেশ পেয়ে কা'ব (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি আমি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেব? দূত বললেন, তালাক নয়-স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে বলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীকে তিনি বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নবীজির আদেশ পালন করলেন।
০ ০ ০ ০ ০ ০ ০
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বামী ব্যতীত অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য তিন দিনের সময় নির্ধারণ করে দেন। মহিলা- সাহাবীগণ অত্যন্ত কঠোরভাবে এ আদেশ পালন করে চলতেন। হযরত যয়নব বিনতে জাহশের ভাই এর মৃত্যু হলো। চতুর্থ দিন সমবেদনা প্রকাশ ও সাক্ষাতের জন্য কতিপয় মহিলা তার ঘরে আসে। হযরত যয়নব (রাঃ) তাদের সকলের সামনে গায়ে সুগন্ধি মাখলেন এবং বললেন, এ সময়ে আমার সুগন্ধি ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু নবীজি (সাঃ)-এর কাছে আমি শুনেছিলাম যে, মুসলমান নারী স্বামী ব্যতীত কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশী শোক পালন করতে পারে না। নবীজির হুকুম তামিলের জন্যই আমি আজ গায়ে সুগন্ধি মাখালাম।
০ ০ ০ ০ ০ ০
মক্কার কুরাইশরা হযরত খুবাইব (রাঃ)-কে লাগাতার কয়েকদিন পর্যন্ত অনাহারে বন্দী করে রাখে। এই অবস্থায় শূলের নীচে নিয়ে তাঁকে দাঁড় করিয়ে বলা হলো, এখনো সময় আছে ইসলাম ছেড়ে দে, জীবনটা বেঁচে যাবে। জবাবে তিনি বললেন, “ইসলামের দৌলত-ই যদি না রইল, তো বেঁচে থেকে করব কী?”
শূলে চড়ার আগে হযরত খুবাইব (রাঃ) দু'রাকাত নামায পড়ার সুযোগ প্রার্থনা করেন। সুযোগ পেয়ে তিনি নামায আদায় করলেন। অতঃপর তাকে শূলে চড়ানো হলো। এবার এক নরাধম তার কলিজা বিদীর্ণ করার মত একটি কথা বলে। বলল, এখনও সুযোগ আছে, যদি তুমি এতটুকু সম্মতি দাও যে, তোমার স্থলে মুহাম্মদকে রাখা হবে, তোমাকে মুক্তি দেওয়া হবে। কথা শুনে হযরত খুবাইব (রাঃ) অত্যন্ত জলদগম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন, 'অসম্ভব! আমার জীবন রক্ষা পাবে আর তার পরিবর্তে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর গায়ে একটি কাটা বিদ্ধ হবে এ-ও তো আমি সহ্য করতে পারব না।'
হযরত খুবাইব (রাঃ)-এর সঙ্গে হযরত এ যায়েদ (রাঃ)-ও বন্দী হয়েছিলেন। তার সঙ্গেও একই আচরণ করা হয় এবং তিনিও হযরত খুবাইব (রাঃ)-এর ন্যায় একই ধরনের নির্ভীক জবাব দেন। অবশেষে তাদেরকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
০ ০ ০ ০ ০ ০ ০
কোনো এক যুদ্ধের পর মুসলমানগণ ফিরে আসলে এক মহিলা-যার পিতা, ভাই ও স্বামী সে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন-বড় অস্থিরচিত্তে ঘর থেকে বাইরে আসেন। প্রত্যাগত মুজাহিদ তাকে জানালেন, তোমার পিতা, ভাই ও স্বামী তিনজনই শহীদ হয়ে গেছেন। মহিলা বললেন, ওসব জানতে চাই না, বল আল্লাহর রাসূল কোথায় কিভাবে আছেন? জবাবে সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহর কৃপায় তিনি নিরাপদ আছেন। মহিলা বললেন, কোথায় তিনি, আমাকে একটু দেখতে দাও। সাহাবীগণ নবীজিকে দেখিয়ে দিলে দূর থেকে দেখা মাত্র মহিলা উৎসাহে বলে উঠলেন, 'আপনি নিরাপদ থাকলে যে কোনো বিপদ-ই আমার সহ্য করা সম্ভব।'
০ ০ ০ ০ ০ ০ ০
হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করার পর সর্বপ্রথম তাওহীদের উপর কথা বলেন। কিন্তু একদিকে কাফিররা সে সব সত্য কথার সঙ্গে পরিচিত ছিল না, অপরদিকে তা ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের ধ্যান-ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ফলে কথাগুলো শোনামাত্র কাফিররা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সকলে মিলে তার উপর এত অত্যাচার করে যে, দেখে মানুষ মনে করেছিল, নির্ঘাত তিনি মারা গেছেন। গোত্রের লোকেরা তাকে একটি কাপড়ে পেচিয়ে ঘরে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার সময় কিছুটা জ্ঞান ফিরে পেলে তিনি নিজের এসব দুঃখ-কষ্ট আর জুলুম- নির্যাতনের কথা বলার পরিবর্তে মুখ খুলেই জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল কেমন আছেন? এতে গোত্রের লোকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে তার সঙ্গে কথা বলা-ই ছেড়ে দিলেন। লোকটার যার কারণে আজ এ দুরবস্থা, একটু জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর মুখে সেই তার-ই কথা! অবেশেষ তারা তাঁকে নবীজির কাছে নিয়ে রেখে আসে। এই করুণ অবস্থা দেখে নবীজি (সাঃ) তাকে জড়িয়ে ধরেন এবং চুমো খান।
উল্লেখ্য যে, ভালোবাসার আতিশয্য অনেক সময় পাগলামীর রূপ ধারণ করে। এ কারণেই সাহাবীদের জীবনী অধ্যয়ন করলে যেখানেই রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি তাদের তীব্র ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রশ্ন আসে, সেখানেই তাদেরকে পাগল বলে মনে হয়। বস্তুত, এটা ছিল নবীজি (সাঃ) এর প্রতি তাদের আনুগত্যের অনুপম নিদর্শন। যেমনঃ হযরত উরওরা ইবনে মাসউদ (রাঃ) একবার নবীজি (সাঃ)-এর দরবারে এসে ফিরে গিয়ে সম্প্রদায়ের লোকদের বললেন, আমি কায়সার কিসরার দরবারে গিয়েছি, তাদের প্রভাব প্রতিপত্তিও দেখেছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যে সুমহান মর্যাদা তার সাহাবীদের হৃদয়ে বদ্ধমূল দেখলাম, তার দৃষ্টান্ত কোথাও পাওয়া যায় না। তিনি থু থু ফেলেন, আর সাহাবারা তুলে নিয়ে তা চোখে-মুখে মাখায়। তিনি ওজু করেন, তাঁর ব্যবহৃত পানি তুলে নেয়ার জন্য সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, যেন এক্ষুণি তাদের মধ্যে লড়াই বেধে যাবে। নবীজি (সাঃ) কথা বলেন, সকলে গভীর ধ্যানে তা শ্রবণ করে।
হযরত উসায়দ ইবনে হুযায়র (রাঃ) অত্যন্ত প্রফুল্ল ও রসিক মনের লোক ছিলেন। একদিন তিনি রসিকতামূলক কথা বলছিলেন। এক পর্যায়ে নবীজি (সাঃ) তাঁকে লাঠি দিয়ে খোঁচা দেন। তিনি নবীজি (সাঃ) থেকে এর প্রতিশোধ নিতে চাইলেন। ইসলামী সাম্য নীতির খাতিরে তিনি তাতে সম্মত হয়ে যান। কিন্তু হযরত উসায়দ (রাঃ) বললেন, আপনি লাঠি দ্বারা খোঁচা দেওয়ার সময় যেমন আমার পিঠ উদোম ছিল, তেমনি আপনার গায়েও কোনো পোষাক থাকতে পারবে না। নবীজি (সাঃ) নিজের পিঠ উদোম করে দিলেন। গায়ের জামা তুলে পিঠ উদোম করা মাত্র হযরত উসায়দ (রাঃ) নবীজি (সাঃ)-কে জড়িয়ে ধরলেন এবং দেহের উন্মুক্ত স্থানে চুমু খেতে শুরু করলেন। অবশেষে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার উদ্দেশ্য আসলে এটাই ছিল। অন্যথায় কার এত দুঃসাহস আছে যে, আপনার থেকে প্রতিশোধ নেয়?
০ ০ ০ ০ ০ ০ ০
নবীজি (সাঃ)-এর দর্শনে সাহাবাদের ঈমান তাজা হয়ে যেত। এ জন্য তাকে এক নজর দেখার জন্য সকলেই ছিল পাগলপারা। মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় একদিন নামাযের সময় হলো। নবীজি (সাঃ) পর্দা তুলে নামাযরত মুসল্লীদের দিকে তাকালেন। এ সর্বশেষ দর্শনে সাহাবাদের মধ্যেও অবর্ণনীয় এক আনন্দ অনুভূত হয়। নবীজির (সাঃ) দর্শন-ই ছিল কোনো কোনো সাহাবীর দৃষ্টিশক্তির একমাত্র কাজ। এক সাহাবীর দৃষ্টিশক্তি লোপ পেতে শুরু করে। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব তাকে দেখতে আসলে তিনি বললেন, দুঃখ করার কোনো কারণ নেই। রাসূল (সাঃ)-কে দেখা-ই ছিল এই দুটি চোখের একমাত্র কাজ। এখন তিনিই যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন, তো এখন আর দৃষ্টিশক্তি অক্ষুন্ন থেকেও আমার লাভ নেই।
০ ০ ০ ০ ০ ০
নবীজি (সাঃ)-এর সাহচর্য ছিল সাহাবীদের এক অমূল্য সম্পদ। নবীজি (সাঃ) থেকে এক পলকের বিচ্ছেদও ছিল তাদের সহ্যের বাইরে। কারণবশতঃ কখনো মুহূর্তের জন্য নবীজী আড়াল হলে সাহাবীগণ অস্থির হয়ে যেতেন। এক দিনের ঘটনা। সাহাবীগণ নবীজি (সাঃ)-কে ঘিরে বসেছিলেন। কোনো এক প্রয়োজনে তিনি উঠে গেলেন। ফিরতে একটু বিলম্ব হলো, এতেই তারা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) নবীজির (সাঃ)-এর সন্ধানে বের হয়ে পড়েন। খুঁজতে খুঁজতে আনসারীদের একটি বাগানের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন। ভিতরে ঢোকার পথ পেলেন। অবশেষে দেওয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করে নবীজী (সাঃ)-কে দেখতে পেয়ে আশ্বস্ত হলেন! খবর পেয়ে অন্যান্য সাহাবীও চিন্তামুক্ত হন।
০ ০ ০ ০ ০ ০ ০
সাহাবা কিরাম (রাঃ) শুধুমাত্র দুনিয়াতে-ই নবীজির সাহচর্য ও দর্শন লাভে সন্তুষ্ট ছিলেন না। কোনো কোনো সাহাবার এই আকাংক্ষাও ছিল, যেন আমরা পরকালেও এই অমূল্য সম্পদ লাভে ধন্য হই। নবীজি (সাঃ)-এর খাদেম হযরত রবীয়া আসলামী (রাঃ)। নবীজি (সাঃ) একদিন তাঁকে বললেন, রবীয়া, “কিছু চাও” । রবীয়া বললেন, আমি জান্নাতে আপনার সহচর হতে চাই! নবীজি (সাঃ) বললেন, “আর কিছু?” রবীয়া বললেন, না আর কিছু চাই না। এতটুকু-ই আমার জন্য যথেষ্ট। নবীজি (সাঃ) বললেন, “ঠিক আছে এ-ই যদি তোমার কামনা হয়, তাহলে বেশী করে নামায পড়”।
০ ০ ০ ০ ০ ০
নবীজি (সাঃ)-এর আদরের মুআযযিন হযরত বেলাল (রাঃ)। নবীজির ওফাতের পর তিনি আযান দেয়া বন্ধ করে দেন। কারণ তার আযানে নবীজির কথা স্মরণ করে সকলে অস্থির হয়ে পড়তেন। হযরত উমর (রাঃ) এর আমলে অনেক পীড়াপীড়ির পর রাজী হয়ে আবার তিনি আযান দিতে শুরু করেন। আযান শুরু করা মাত্র লোকদের মধ্যে বিস্ময়কর এক অবস্থার সৃষ্টি হয়। নবীজি (সাঃ)-এর জীবদ্দশার চিত্র তাদের সামনে ভেসে ওঠে। সকলের চোখ থেকে ঝরঝর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। হযরত উমর (রাঃ)-ও অস্থির হয়ে পড়েন।
একেই বলে নবীপ্রেম! ভেবে দেখুন, আমরা কি প্রিয়নবী (সাঃ)-কে এরূপ করে ভালবাসি? হৃদয়ের সবটুকু আবেগ দিয়ে রাসূল (সাঃ)-কে ভালবাসতে হবে। তবেই হওয়া যাবে তার খাঁটি উম্মত।