JustPaste.it

সম্পাদকীয়

চেতনার বহ্নি মশাল পবিত্র রবিউল আউয়াল

=====================================================================

 

        কালের চক্র ঘুরে আবার ফিরে এসেছে মহা মহিমান্বিত চান্দ্র মাস রবিউল আউয়াল । বিশ্ব মুসলিমের স্মরণীয় মাস এই রবিউল আউয়াল । এই মাসেই পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন মানবকূল শিরোমণি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) । আবার এই মাসেই তিনি পার্থিব জীবন শেষে পরম বন্ধুর সান্নিধ্যে তিরোধান করেন । তাই আমাদের নিকট এই মাস একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে বেদনাময় । মহাকালের হিসেবে তাঁর এই পার্থিব জীবনের স্থায়িত্ব  খুবই ক্ষণকালীন এবং নগণ্য হলেও এই স্বল্প সময়ে তিনি ঘটিয়েছেন পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট বিস্ময়কর ঘটনা । পৃথিবী ব্যাপী তখন চলছে জাহেলিয়াতের আধিপত্য, মানবতা হচ্ছিল ভূলন্ঠিত । দ্বন্ধ-সংঘাত,স্বার্থপরতা, রক্তপাত,যুদ্ধ-বিগ্রহ, দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার,শোষণ, নারী নির্যাতন,  পরের ধন লুন্ঠন সকল প্রকার সামাজিক অপরাধে জর্জরিত হচ্ছিল পৃথিবীর বনী আদম । এই অন্ধকার থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন নবী (সাঃ) । তিনি মানুষকে মানবতার জিয়ন কাঠির ছোঁয়ায় করে তোলেন প্রকৃত মানুষ ।

 

        এর জন্য তাঁকে কম বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয় নি । সত্যের, ইনসাফের বাণী প্রচার করতে তিনি কম শারীরিক, মানসিক দূর্ভোগ পোহান নি । ইসলামের বাণী প্রচার করতে গিয়ে তিনি দুষ্ট চরিত্রের মানুষদের পথে বিছিয়ে রাখা কাঁটায় বিদ্ধ হয়েছেন । সত্যকে মিথ্যা দিয়ে চাপিয়ে রাখতে সমাজের প্রতিপত্তিশীল মানুষ জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে । তাদের দ্বারা তিনি পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন । আঘাতে আঘাতে তাঁর শরীর হয়েছে জর্জরিত । পাথরের আঘাতে বিধ্বস্ত শরীরের রক্ত পাদুকায় গিয়ে জমে শক্ত হয়ে গেছে । তবুও দ্বীন ইসলাম প্রচারে তিনি পিছপা হন নি । অঢেল অর্থ-সম্পদ,রাজত্ব, সুন্দরী নারীর এহেন হাজারো প্রলোভন দেখানো হয়েছে সত্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য । কিন্তু তিনি  দ্বীন ইসলামের খাতিরে ইসলামের শত্রুদের সাথে কোন আপোষের চিন্তাও করেন নি । অপপ্রচারকারীরা তাঁকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য পাগল, যাদুকর, কবিতা রচয়িতা প্রভৃতি আখ্যা দিয়েছে । কিন্তু এরপরও তিনি এক বিন্দু বিচলিত হন নি বলেই ইসলাম প্রচার এগিয়ে গেছে দূর্বার গতিতে । চক্রান্তকারীরা এরপর তাকে হত্যার চক্রান্ত করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ইসলামের স্থায়ী ঘাটি মদিনায় সামরিক অভিযান চালায় মুসলমানদের সমূলে ধ্বংস করার কুমতলবে । এবার দয়ার নবী দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করলেন । স্বজন-স্বজাতির বিরুদ্ধে হাতে তুলে নিলেন হাতিয়ার । দুশমনের আঘাতের প্রতিঘাত দিয়েই তিনি ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করলেন সুদৃঢ় ভাবে ।

 

        চৌদ্দশ বছর পরেও নবীজী (সাঃ) এর পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত এ মাস আগমন করে সেই আপোষহীন সংগ্রামী ইতিহাসকে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে । বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সে ইতিহাস আমাদের যোগায় সর্বাত্মক প্রেরণা । ইসলাম বিদ্বেষী ও ইসলামের মহাশত্রুদের ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাতের পর আঘাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে । নাস্তিক, মুরতাদদের ঔদ্ধত্য, সরকার, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের তাদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ভূমিকার কারণে মুসলিম প্রধান এই দেশটিতে ইসলামের এই স্বকরুণ অবস্থায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কিছুটা হতাশা রোগে আক্রান্ত । ঠিক সেই মূহুর্তে স্নিগ্ধ-মিষ্টি সমীরণ নিয়ে মৃত প্রায় প্রকৃতিকে প্রাণ সঞ্চার করতে যেমন আগমন করে বসন্ত তেমনি আমাদের সকল হতাশা, গ্লানিকে মুছে দিতে, সংগ্রামে প্রেরণা যোগাতেই যেন সংগ্রামী ইতিহাসের ডালি নিয়ে এই রবিউল আউয়াল মাসের পদার্পণ ।

 

        এ মাস প্রত্যেক বছরই একবার কালচক্রে উঁকি মেরে যায় । যুগপদ আনন্দ ও বেদনার সাথে আমরা  নবীজী (সাঃ) এর জীবন চরিত্র স্মরণ করি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে । কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ মাসের আগমনকে যেওন আমরা গতানুগতিক ভাবে গ্রহণ না করি । এই মাসে যে মহামানব রাসূল (সাঃ) আগমন ও বিদায় নিয়েছিলেন সেই মহামানবের মানবতার জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম, কন্ঠ সাধনা,কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে তা থেকে আমরা যেন শিক্ষা নেই, বাতিল ও ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে নির্ভীক চিত্তে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা গ্রহণ করি । ইসলামের পথে অবিচল,  অটুট থাকলে বিজয় যে অবধারিত সে মন্ত্র আমাদের কানে ফুঁকে দিতেই তো প্রতিটি বছর এ মাস আগমন করে আমাদের মাঝে ।

 

        রাসুল (সাঃ) বাতিল ও মিথ্যার বিরুদ্ধে  যে প্রক্রিয়ায় সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটও তার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে । রাসূল (সাঃ) কে সত্যের বাণী প্রচারে বাধা দিয়েছিল তাঁরই স্বজন-রক্তের সম্পর্কের মানুষেরা । এদেশেও কেউ ইসলামের কথা বললেই তাকে 'মৌলবাদ' আখ্যা দিয়ে ঠেকাতে ময়দানে নামছে আমাদেরই ভাই মুসলমানের সন্তানেরা । রাসূল (সাঃ) কে তাঁর শত্রুরা পাগল, কবি এবং যাদুকর বলে জনবিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল, আমাদের দেশেও যারাই ইসলামের  কথা বলছে তাদের ফতোয়াবাজ, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক বলে জনবিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চলছে । রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারী মুসলমানরা সত্যপথের অনুসারী হওয়ায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন নিকট আত্মীয়দেরই হাতে । এদেশেও রাসূল (সাঃ) এর আদর্শের সৈনিক দাড়িওয়ালা, টুপি পরা মুসলমানদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হচ্ছে মুসলিম নামধারীদের কর্তৃক । রাসূল (সাঃ) কে হত্যার চক্রান্ত করে ব্যর্থ হয়ে শত্রুরা মুসলমানদের উৎখাত করার জন্য রক্তাক্ত যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল । এদেশেও ইসলামের কথা বলার অপরাধে পুলিশের গুলিতে মুসলমানরা শহীদ হচ্ছে । এরপর ইসলাম বিদ্বেষীদের সহানুভূতিশীলরা যদি ক্ষমতায় যায় এবং ইসলাম পন্থীদের ঠেকাতে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে বিদেশী কুটনীরা যে হারে উস্কানী দিচ্ছে তাতে যে মুসলমানদের ওপর কোন ঢালাও নিধন অভিযান চাপিয়ে দেয়া হবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই । আফগানিস্তান, মিশর, আলজেরিয়ার ইতিহাস তো এর জ্বলন্ত প্রমাণ ।

 

        রাসূল (সাঃ) এর সংগ্রামী ইতিহাসকে নখদর্পনে রেখে আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলামের শত্রুদের ন্যায় হিংস্র, অন্ধ এবং গোয়ার শত্রু দ্বিতীয়টি নেই । আফগান,  মিশর, আলজেরিয়ার ইতিহাসের ন্যায় দুনিয়ার অজস্র ইতিহাস স্বাক্ষী,  ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের দমন করতে প্রয়োজনে স্বদেশে বিদেশী প্রভূদের ডেকে এনেছে । ইসলামকে উৎখাত করতে তারা নিজেদের মা-বোনের ইজ্জত পর্যন্ত বিদেশী প্রভূদের মনোরঞ্জনে বিকিয়েছে । এদেশের ইসলামের শত্রুরাও সে পথ ধরেছে । মুসলিম স্বার্থ বিরোধী কাদিয়ানী, এনজিও, নাস্তিক-মুরতাদ চক্রকে এরা প্রশ্রয় দিচ্ছে । মুসলমানদের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক,  ফতোয়াগবাজ, সমাজ ও প্রগতির শত্রু প্রভৃতি মিথ্যা অপপ্রচার বিদেশীদের কাছে তুলে ধরে দেশের সুনাম নষ্ট করছে । বিদেশীদের এ দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে উদ্বুদ্ধ করছে । সুযোগ পেলে এরা বিদেশী প্রভূদের ডেকে এনে এদেশকে যে আর এক আফগানিস্তানে পরিণত করবে না তার কোন নিশ্চয়তা আছে কি?? তাই সময় থাকতে আমাদের সতর্ক হতে হবে । রবিউল আউয়াল মাসের সাওগাত হোক আমাদের সে সতর্কতার সাইরেন ।

 

 

═──────────────═