JustPaste.it


ইসলাম ও মানবতার ঘৃণ্য দুশমন-ইহুদীগোষ্ঠীর আতংকঃ

হামাসের দশ বছর

মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন


ফিলিস্তিনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনে নিবেদিতপ্রাণ 'হামাস'  বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইহুদীদের জবর দখল থেকে মুক্ত করার জন্য বিগত নয়টি বছর ধরে জীবনপণ সংগ্রাম করে আসছে। এই নয় বছরে অসংখ্য হামাস নেতা-কর্মী নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে এবং অগণিত ইসরাইলী সৈন্যকে নরকে পাঠিয়ে পবিত্র কাবা ঘর দখল করার মতো ঘৃণ্য ইহুদী ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
ইজজুদ্দীন আল-কাসসামের এই সংগ্রামী কাফেলা ১৯৯৬ এর ৮ ডিসেম্বরে দশম বছরে পা রেখেছে। লাখো ফিলিস্তিনীর হৃদয়ের ধন, ৪৫ লাখ ফিলিস্তিনী মুহাজিরের চোখের মনি 'হামাসের' অকুতোভয় মুজাহিদরা নিজেদের দেহের সংগে বোমা বেধে শত্রুর উপর আক্রমণ পরিচালনা করেছে এবং এক একজন মুজাহিদ হাজার হাজার কাপুরুষ ইহুদীকে হার মানতে বাধ্য করেছে। কুখ্যাত ইহুদীগোষ্ঠির অবর্ণনীয় নির্যাতন সত্ত্বেও হামাসের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। হামাসের প্রতিরোধের মুখে ইহুদীদের সব চক্রান্তই বলতে গেলে ব্যর্থ হচ্ছে। ফিলিস্তিনী মুসলিম সমাজে হামাসের গ্রহণযোগ্যতা দেখে ইহুদীরা এখন প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে। কারণ তাদের দাবী ছিল, ২০০০ সালের মধ্যে তারা আল্লাহর ঘর কাবা দখল করে ফেলবে। কিন্তু, এখন কাবা তো দুরের কথা, খোদ  ফিলিস্তিনের মাটিতেও তারা নিজেদেরকে  অরক্ষিত ভাবতে শুরু করেছে। এখন প্রতিমুহূর্তে এক রকম আতংকের মধ্যেই দিন কাটছে তাদের।
হামাস ফিলিস্তিনীদেরকে জাতীয়তাবাদের প্রতি নয়-ইসলামের প্রতি আহ্বান করছে। ফিলিস্তিনকে শুধু ফিলিস্তিনীদের-ই নয়-বরং সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করতে চাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, ফিলিস্তিন গোটা মুসলিম জাতির আমানত। এই আমানত রক্ষা করা ফিলিস্তিনীদের ঈমানী দায়িত্ব। এই মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই 'হামাস' যুবকদের তৈরী করছে, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছে। সর্বোপরি ফিলিস্তিনী মুসলমানদেরকে তারা জিহাদের মত মহান ফরয ইবাদতের প্রত্তি  উদ্বুদ্ধ করছে।  তাই ফিলিস্তিনের এক একটি মুসলিম যুবক এখন আল্লাহর পথে লড়াকু সৈনিক, প্রতিটি মুসলিম পরিবার ইসলামের এক একটি দুর্ভেদ্য দূর্গস্বরূপ।
'হামাসের' মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ইসরাঈল ও আমেরিকার যৌথ পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনীদের নেতৃত্বের জন্য জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ইয়াসির আরাফাতকে মনোনীত করা হয়। ইয়াসির আরাফাতকে দিয়ে ইহুদীরা তাদের চারটি স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়ঃ (১) হামাসকে দমন করে ফিলিস্তিনীদেরকে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত  করা। (২) আরব রাজ্যগুলোকে ইসরাঈলের পদানত করা। (৩) আরব দেশগুলোর মূল্যবান সম্পদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা, যেন কোন ইসলামী শক্তি তদ্বারা উপকৃত হতে না পারে এবং (৪) মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে আরব রাষ্ট্র-শক্তি সমূহকে নিন্দ্রায় রেখে বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস করে তথায় হাইকেলে সুলায়মানী নির্মাণ করা।
এসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯৯৩ সালে এমন একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে ফিলিস্তিনীদেরকে আধা সায়ত্ত্বশাসন দেওয়া হয়। অর্থ্যাৎ স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থার ন্যায় কিছু একটা দাড় করিয়ে ইয়াসির আরাফাতকে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয় এবং অত্যন্ত চতুরতার সাথে এমন একটি অঞ্চলকে ইয়াসির আরাফাতের হাতে ন্যাস্ত করা হয়, যেখানে 'হামাস' অত্যন্ত শক্তিশালী। আসল সমস্যা মসজিদে আকসা, জেরুজালেম এবং আল-খালীলকে আলোচনায়-ই আনা হয় নি। গাজা ও আরীহার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পররাষ্ট্রনীতি ইসরাঈলের হাতেই থেকে যায়।
ফিলিস্তিনী মজলুম জনতার স্বার্থবিরোধী এই ভয়াবহ চুক্তিকে ইয়াসির আরাফাত সাদরে গ্রহণ করে নেন। বস্তুত, ইয়াসির আরাফাতকে ইহুদীরা সুকৌশলে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার টার্গেট বানিয়ে নিয়েছে। কথিত শান্তিচুক্তির পর ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনে প্রবেশ করেই সর্বপ্রথম হামাসের মুজাহিদদেরকে ধরে ধরে জেলে পুরতে শুরু করেন। একদিকে ইসরাঈল অপরদিকে আরাফাত। উভয়ে মিলে হামাসকে রীতিমত এক ভয়াবহ অবস্থার শিকারে পরিণত করে। ইয়াসির আরাফাতের কারাগারগুলোতে হামাসের মুজাহিদদের উপর ইসরাঈলের কারাগারের তুলনায় নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বহু মুজাহিদ নাবলুসের এক কারাগারে আরাফাতের নির্যাতনের প্রকোপে শাহাদাত বরণ করেন। হামাস মুজাহিদদের ঘর-বাড়ি এবং আত্মীয়-স্বজনের উপরও অবিরাম নির্যাতন চলছে।
হামাসের মুজাহিদরা এখন দ্বীমুখী আক্রমণের সম্মুখীন। কিন্তু আল্লাহর এই শেরদিল বীর সেনানীরা অত্যন্ত ধৈর্য ও বীরত্বের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে চলেছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার চেয়ারম্যান মূসা আবূ মারজুককে আমেরিকায় গ্রেফতার করে কারাবন্দী রেখে হামাসের আন্দোলনকে  দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল বটে, কিন্তু পাহাড়সম অটল এই বীর মুজাহিদ দু'বছর যাবত আমেরিকার জেলে থেকেই পরিস্থিতি মুকাবিলা করে আসছেন। ইসরাঈলের রাজধানী তেল আবীবে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়েকটি সামরিক গাড়ী উড়িয়ে দিয়ে হামাস স্বাধীন ফিলিস্তিন আন্দোলনকে আরেকবারের মতো চাঙ্গা করে তোলে।
জর্দানের সাপ্তাহিক 'আস-সাবীল'-এর চীফ এডিটরকে হামাসকে সমর্থন করার অপরাধে গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। 'ফিলিস্তীন আল-মুসলিমা' নামক একটি পত্রিকার প্রকাশক মুজাদিকেও বন্দী করে রাখা হয়েছে। নির্মম নির্যাতন সত্ত্বেও বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইহুদীদের কব্জা থেকে পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর এসব মহান মুজাহিদ পাহাড়ের মত অটল থেকে দুশমনের মুকাবিলা করে যাচ্ছেন।
ইসরাঈলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবিন র্যাফেলের মৃত্যুর পরে নতুন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শান্তিচুক্তি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বিগত নির্বাচনে তিনি অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেছিলেন যে, নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস করে ছাড়বেন এবং ফিলিস্তিনে আরো কয়েক হাজার ইহুদীকে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করে দিবেন। বাস্তবিক নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পরিস্থিতির অনেকটাই অবনতি ঘটেছে। পরিকল্পনা মোতাবেক ইহুদীরা বাইতুল মোকাদ্দাস ধ্বংসের কাজ যথারীতি শুরু করেদিয়েছিল। মসজিদের চতুর্দিকে সুরঙ্গ খনন করে 'পুরনো স্মৃতি' অনুসন্ধানের নামে তারা এই ষড়যন্ত্র শুরু করে। কিন্তু ফিলিস্তিনী জনগণ এর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলে এবং এই প্রতিরোধ আন্দোলনে সত্তর জন ফিলিস্তিনী শহীদ হন।
কোন মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে দেখলে আমেরিকা তাকে 'মৌলবাদের উত্থান' আখ্যা দিয়ে তা প্রতিরোধ করার জন্য হৈ চৈ শুরু করে দেয় এবং সে দেশের  বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে বসে। কিন্তু ইসরাঈলে  'ইহুদী মৈলবাদী রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠা  হলেও তাতে আপত্তি করা তো দূরে থাক, উল্টো ১৫.০০০ কোটি ডলার সাহায্য দিয়ে আমেরিকা তাদের আরো শক্তিশালী করেছে। আজো ইসরাইলের বার্ষিক বাজেটের অর্ধেকের বেশী আমেরিকা থেকে আসে। কেন আসে? আসে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য, আসে হামাসের শক্তি খতম করার জন্য। বর্তমান মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ইসলামবৈরি শাসক  মণ্ডলীর প্রতিও আমেরিকার নির্দেশনা, ইসলামপন্থী লোকদের সহায়-সম্পদ, ব্যবসা, অর্থকড়ি যেখানে যেখানে আছে, সব দখল ও অচল করে দাও, যাতে তাদের কোমর ভেঙ্গে যায়।