সাক্ষাৎকার
চেচেন কুটনীতিক রমযান হারুন
ঈমানদার মুসলমানের পরাশক্তি কে ভয় করার যৌক্তিকতা নেইঃ স্বাধীন চেচনিয়া বিংশ শতাব্দীতে ঈমানী শক্তির বাস্তব উদাহরণ
অর্ধ শতাব্দি কাল পর্যন্ত জার রুশদের পর্যুদস্তকারী ইমাম শামেলের জন্মভূমি চেচনিয়া শত সহস্র বছরে ঐতিহ্য মন্ডিত মুসলিম অধ্যুষিত ভূমি।
১৯৯১-র শেষ দিকে সাবেক রুশ বিমান বাহিনীর দুর্ধর্ষ সাহসী জেনারেল জওহর দাউদ যখন খোদাদ্রোহী রুশ শাসকদের নাগপাশ ছিন্ন করে চেচনিয়ার আত্মমর্যাদাবান মানুষদের স্বাধীনতার ডাক দিলেন, তখন রুশ শাসকবর্গ অভাবিত ঝাকুনী খেল। রুশ শাসকবর্গ কল্পনাও করতে পারেনি যে, মধ্য এশিয়ার ছয় ছয়টি দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের জোয়াল থেকে নিজেদের মুক্ত করার পর রাশিয়ার সেট ছিড়ে আরেকটি স্বাধীন মুসলিম দেশের অভ্যুদয় ঘটবে।
জওহর দাউদের স্বাধীনতা ঘোষণার আগে বিশ্ব ছিল চেচনিয়া সম্পর্কে একেবারেই অন্ধকারে। কম্যুানিষ্ট রাশিয়ার হাল হাকিকত জানা কারো পক্ষে সম্ভব ছিলনা। চেচেন মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বহির্বিশ্বের মানুষের দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা ছিল দুঃসাধ্য। কম্যুনিজমের প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়ে জওহর দাউদ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বিশ্ব অবাক বিস্ময়ের সাথে চেচনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়। বিশ্ব মানবকে চেচেন মুসলমানদের স্বর্ণালী অবস্থান জানানোর জন্য মিডিয়াগুলোতে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বিশ্বের শক্তিশালী মিডিয়াগুলো বিস্তারিতভাবে প্রচার করতে শুরু করে চেচেনদের অবস্থা ও অবস্থান। জওহর দাউদের স্বাধীনতা ঘোষণা পরবর্তী পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে।
জওহর দাউদ স্বাধীনতা ঘোষণার পর পুরো চেচেন জাতি তার আহবানে সাড়া দেয়। রুশ সামরিক বাহিনীতে কর্মরত চেচেনরাও জওহর দাউদের সাথে অস্ত্র সরঞ্জামাদি নিয়ে যোগ দেয়।
১৯৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জওহর দাউদ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং চেচনিয়ায় পূর্ণ ইসলামী শাসন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। জিহাদী ময়দানে কর্মরত বিশ্ব নেতৃত্বের নতুন শক্তি হিসেবে তিনি অভিভূক্ত হন। অমুসলিম শক্তির দূর্গে জওহর দাউদের আত্মপ্রকাশ ভয়ংকর কম্পন সৃষ্টি করে। রুশ শাসক ইয়েলেৎসীন বেসামাল হয়ে পড়ে। জওহার দাউদের জিহাদী প্রেরণা ও চেচেনদের স্বাধীনতার স্বপ্ন গুড়িয়ে দেয়ার জন্য রুশ সরকার ছোট্ট একটি ভূখন্ডে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত নব্বই হাজার সেনা মোতায়েন করে।
১৯৯৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নব্বই হাজার রুশ সৈন্য অসংখ্য ট্যাংক-কামান-জঙ্গী বিমান নিয়ে রুশ সরকার চেচেন রাজধানী গ্রোজনী আক্রমণ করে।
নিরস্ত্র চেচেন মুসলমানরা ঈমানী শক্তি নিয়ে রুশ বাহিনীর মোকাবেলায় দাঁড়াতে বাধ্য হয়। 'মুত্যু না হয় স্বাধীনতা' এটিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থির করে সমগ্র চেচেন জাতি দাউদের নেতৃত্বে শুরু করে জিহাদ। চেচেনরা গেরিলা পদ্ধতি অবলম্বন করে ৯৪ সনের ৩১ ডিসেম্বর থেকে পয়লা জানুয়ারী এই দুই দিনে সাত হাজার রুশ সৈন্যকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। মুজাহিদদের অপূর্ব সাহস, ঈমানী শক্তি ও দেশপ্রেম বিংশ শতাব্দির ইতিহাসে সংযোজন করে জিহাদের আরেক নবতর অধ্যায়। স্বল্পসংখ্যক মুজাহিদের প্রতিরোধের মুখে শেষ পর্যন্ত শক্তিশালী রুশ বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
রুশ সরকার মুজাহিদদের বিভ্রান্ত করার জন্য শান্তি আলোচনার নামে মুজাহিদদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরানোর অপচেষ্টাও কম করেনি, কিন্তু অটুট ঐক্যের অধিকারী চেচেন জনতা জওহর দাউদের নেতৃত্বের প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং স্বাধীনতার বিনিময়ে কোন প্রকার আলোচনাকে প্রশ্রয় দেয়নি। দুর্নিবার আকাঙখা নিয়ে তারা স্বাধীনতার জন্যই সরাসরি জিহাদ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু এরই মধ্যে মুজাহিদদের জন্য জওহর দাউদের শাহাদত বয়ে আনে দারুণ হতাশা ও যন্ত্রণা। ১৯ এপ্রিল ৯৬ বিশ্বের তাবৎ মানুষ জানতে পারেন যে, রুশ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত গোলার আঘাতে চেচেন মুজাহিদ নেতা শাহাদাত বরণ করেন। জওহার দাউদের শাহাদাত বিশ্ব মুসলিমকে যেমন উদ্বিগ্ন ও বিচলিত করে, চেচেন স্বাধীনতাকামী জনতার সম্মুখেও সৃষ্টি করে কঠিন এক সমস্যা।
জওহর দাউদের জিহাদী কৌশল ও জিহাদী কর্মতৎপরতা রুশ বাহিনীর মধ্যে এমন ভীতি সৃষ্টি করেছিল যে, এখনও অনেক রুশ সৈন্য বিশ্বাস করতে রাজী নয় যে, জওহর শহীদ হয়েছেন। তাদের ধারণা, জওহর দাউদ কোন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন, আবার আত্ম প্রকাশ করে সারা রাশিয়া দখলের অভিযান শুরু করবেন।
চেচনিয়াই সম্ভবতঃ মুসলিম বিশ্বের ব্যতিক্রমী একটি মুসলিম জনপদ যেখানের অধিবাসীদের মধ্যে কোন গোষ্ঠীগত মতবিরোধ নেই। সমগ্র চেচেন মুসলমান একে অন্যের সাথে গভীর হৃদ্যতায় ঐক্যবদ্ধ। গোষ্ঠীগত মতবিরোধও যেমন চেচেনদের মধ্যে অনুপস্থিত, ঠিক তেমনি চেচেন মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মত বিরোধও নেই। গোষ্ঠীগত হাঙ্গামা বিরোধের কল্পনাও করেনা চেচেনরা। চেচেনরা সবাই কুরআন ও হাদীসের নির্ভজাল অনুকরণকেই প্রাধান্য দেয়। তারা যে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব-মতবিরোধের অনুপ্রবেশকে সচেতনতার সাথে নিরুৎসাহিত করে।
কিছু দিন আগে পাকিস্তানের একটি পত্রিকার সাথে চেচেন স্বাধীন সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি জনাব রমযান হারুন এক একান্ত আলাপচারিতায় চেচেন মুসলমান ও সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোলামেলা মত বিনিময় করেন। জাগো মুজাহিদের পঠক পাঠিকাদের খেদমতে রমযান হারুনের আলাপচারিতার নির্বাচিত অংশ এখানে তুলে ধরা হলো। জওহর দাউদের একান্ত সহচর পাকিস্তানে চেচেন সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি রমযান হারুনের মুখেই শুনুন চেচনিয়ার কথা।
[রমযান হারুন ৩২/৩৩ বছরের এক তেজোদীপ্ত যুবক। শহীদ জেনারেল জওহর দাউদ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর পর পরই তাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে ইসলামাবাদে পাঠান। তীক্ষ্ণ ধীশক্তি, গভীর কূটনৈতিক প্রজ্ঞা তার কথা ও উপস্থাপনা থেকে বোঝা যায়। সেই সাথে মুগ্ধ হতে হয়, এতো অল্প বয়সের একটি যুবকের দেশপ্রেম ও নিজ দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা দেখে।]
চেচনিয়ার ইতিহাস খুবই ঐতিহ্য মন্ডিত। এখানকার মানুষের বংশপরম্পরা হযরত নূহ আলাইহিস্সালামের সাথে সরাসরি যুক্ত। ইসলামের তৃতীয় খীলফা হযরত উসমান (রাঃ) এর সময়ে চেচনিয়ায় ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে। এরপর দীর্ঘ দিন অত্র অঞ্চল ছিল ইসলামী কৃষ্টি কালচারের এক অনন্য লালন ভূমি। চেচনিয়ায় অসংখ্য মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকীহ, মুফাক্কিরের জন্ম হয়েছে। এদের অনেকেই ইসলামী ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র, ইতিহাসের অনিবার্য চরিত্র।
এক সময় রুশ কম্যুনিজমের অপশাসন সেকালের বিশ্ব মুসলিম নেতৃত্বের অসতর্কতায় অন্যান্য এলাকার মতো চেচনিয়াকেও গ্রাস করলো। রূদ্ধ হয়ে গেল চেচেন মুসলমানদের সার্বিক কর্মচর্চা, সকল ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিল। শরয়ী আহকাম পালনের বিরুদ্ধে জারী হলো কঠোর শাস্তির বিধান। কিন্তু চেচেন মুসলমানরা চাপিয়ে দেয়া দুঃশাসন কখনও মেনে নেয়নি। গত চারশ' বছর ধরে অব্যাহতভাবে জিহাদ চালিয়ে আসছে তারা।
ইতিহাস বিখ্যাত ইমাম শামেল (রহঃ) এই ভূখন্ডেরই লোক। দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর্যন্ত তিনি জিহাদ চালু রেখেছিলেন; তখন তার বাহিনীর হাতে দশ লাখ কম্যুনিষ্ট নিহত হয়েছিল।
তবে কমুনিষ্ট বিরোধী সশন্ত্র জিহাদের সূচনাকারী ছিলেন ইমাম মনসূর (রহঃ)। তিনি ছিলেন ইমাম শামেলের পূর্বসূরী।
৯৫ জানুয়ারী থেকে পরিচালিত সশস্ত্র জিহাদ চেচেনদের ইতিহাসে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের পঞ্চম পর্ব।
৪৪ সালে একবার স্বাধীকার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, কিন্তু সেভিয়েত শাসকরা অত্যন্ত নির্মমভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করে। যার ফলে তখনকার প্রতি দু’জন চেচেন মুসলমানের মধ্যে একজন নিহত হয়। চেচনিয়া বিশ্ব মানচিত্রে অতি ক্ষুদ্র একটি ভূখন্ড। বর্তমান চেচনিয়ার অধিবাসী ১০ লাখের মতো, আয়তন ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার। চেচনিয়ার দৈর্ঘ্য ১৫০ কিলোমিটার, প্রস্ত ১০০ কিলোমিটার।
সুখের বিষয় এই যে, চেচনিয়ায় কোন এমন নাগরিক খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমুসলিমদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এজন্যই পুরো চেচেন ভূমি রুশ আগ্রাসীদের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল একটি মৃত্যু গহবর।
বর্তমানে চেচেনদের জিহাদ কোন পর্যায়ে রয়েছে? জানতে চাওয়া হলে রমযান হারুন বলেন, জিহাদের কোন পর্যায় থাকেনা। আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য লড়ে যাচ্ছিলাম। তখন তো রুশরা মাত্র ১০ লাখ চেচেনদের অবদমন করার জন্যে ৮ লাখ সৈন্য পাঠিয়ে ছিল। সামরিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে কিছুতেই বিশ্বাস করা যায় না যে, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত প্রশিক্ষিত বাহিনীর সাথে কি করে একটি নিরস্ত্র জাতি টিকে থাকতে পারে। কারণ প্রতি একজন চেচেনের মোকাবেলায় প্রায় একজন সশস্ত্র রুশ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা এতোসব চিন্তা করিনি। আল্লাহর উপর ভরসা করে মোকাবিলায় নেমে পড়ি।
শুরুতে আমাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুজাহিদ সংখ্যা ছিল চার হাজার। প্রতি ৮ জন করে একেকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপ করে আমরা গেরিলা আক্রমণ শুরু করি।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আমরা আজ পর্যন্ত বাহির থেকে কোন অস্ত্রের যোগান পাইনি। অস্ত্র আমদানীর সুযোগই আমাদের ছিলনা। শত্রু বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে এনে ওদের অস্ত্র দিয়েই ওদের রুখে দাঁড়ানোর কৌশল গ্রহণ করি আমরা।
এমনও হয়েছে যে, শত শত ট্যাংক কামান সজ্জিত রুশ অভিযানকে আমাদের দু’ তিনজনের গেরিলাদল হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। একবার রাজধানী গ্রোজনীর অতি দূরে একটি গ্রাম্য বাজারে ৩শ’ রুশ সৈন্য হানা দেয়। রুশ বাহিনী ছিল কয়েক ডজন ট্যাংক ও কামান সজ্জিত এবং এদের সহযোগিতা করছিল জঙ্গি বোমারু বিমান। ওদের সন্দেহ ছিল বাজারে চেচেন মুজাহিদ আত্মগোপন করে আছে। দেড় বর্গ মাইলের পুরো বাজারটিকে ওরা ট্যাংক কামান দিয়ে গুড়িয়ে দিতে শুরু করে। এ সময় ওখানের দায়িত্বে ছিল আমাদের মাত্র চারজন মুজাহিদ। আর তাদের হাতে অস্ত্র বলতে ছিল মাত্র ৪টি RPG। এ সামান্য অস্ত্র সম্বল করে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে আমাদের মুজাহিদরা রুশ বাহিনীকে এমনভাবে মোকাবেলা করলো যে, শেষ পর্যন্ত ওরা জীবন রক্ষার্থে বাজারে ট্যাংক রেখেই পালাতে বাধ্য হয়।
অনুরূপ অন্য এক দিন ৩শ’ ট্যাংক সজ্জিত একটি রুশ কোম্পানীকে মাত্র তিনজন মুজাহিদ ৩টি RPG দিয়ে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়। অবশ্য শুরুতেই আমাদের হাতে ৬শ’র মতো ট্যাংক ছিলো। কিন্তু এগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পরই রুশ বাহিনী ট্যাংকের অবস্থানে মারাত্মক বোমা হামলা করে। একমাত্র RPG ই ছিল আমাদের সুবিধের হাতিয়ার।
অপর দিকে রুশ বাহিনী ব্যবহার করছিল কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত মারণাস্ত্র। ওরা আমাদের অবস্থানে আঘাত হানার জন্য কম্পিউটারে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। বোম্বিং ও দূর নিক্ষেপনযোগ্য গোলা বিস্ফোরণে ওরা কম্পিউটার ব্যবহার করে। তদুপরি আল্লাহ তা'আলার অপার মদদে ওদের আগ্রাসন খতম হয়ে যায়। ওরা যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। ওদের মোকাবেলায় আমাদের দু'হাজার মুজাহিদ এবং এক লাখ বেসামরিক চেচেন শাহাদত বরণ করে। এর বিপরীতে ৯ হাজার রুশ সৈন্য চেচনিয়ায় নিহত হয়েছে।
চেচনিয়ায় কয়টি স্বাধীনতাকামী দল জিহাদে শরীক হয়েছিল? প্রশ্ন করলে রমযান হারুন বলেন, চেচনিয়ায় কোন রাজনৈতিক কিংবা সাম্প্রদায়িক দল উপদল নেই। বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে চেচেনরা জিহাদ করেনি। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দল উপদলীয় বিভক্তি থাকলে বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের বিজয়ী হওয়া সম্ভব ছিলনা।
চেচনিয়ায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রমযান হারুন বলেন, রাশিয়ার শাসকদের দৃষ্টিতে চেচনিয়া রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু তাদের দাবী সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। পরাধীনতার চারশ’ বছরের ইতিহাসের মধ্যেও কখনও চেচনিয়ায় রুশ ভাষা স্থান পায়নি। চেচেনদের ভাষা ছাড়া রুশ ভাষায় একটি বাক্যও ছাপা হতে পারেনি। সোভিয়েত আগ্রাসনের মুখেও চেচেনদের মুখের ভাষা বদলাতে পারেনি, তাদের ইসলামী তাহযীব তামদুন সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে সমর্থ হয়নি। একমাত্র আমরা বিশাল সোভিয়েতের মধ্যে কমু্যনিষ্ট নিষ্পেষণের পরও ইসলামী রীতি-নীতি যথাসম্ভব আকড়ে রেখেছিলাম। সর্ব ক্ষেত্রেই আমরা রাশিয়া থেকে ভিন্ন। অতএব রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্যতার দাবী মিথ্যা।
১৯৯৭ এর জানুয়ারীতে সম্পাদিত চুক্তির পর চেচনিয়া থেকে রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। বর্তমানে চেচনিয়ায় কোন রাশিয়ান সৈন্য নেই। ২৭ জানুয়ারী ৯৭-এ চেচনিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জওহর দাউদের সহযোদ্ধা তৎকালীন ফিল্ড চীফ কমান্ডার আসলান মাসখাদভ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। বহির্বিশ্বের সাথে চেচনিয়ার সম্পর্ক বিষয়ে রমযান হারুন বলেন, বর্তমান বিশ্ব প্রধানতঃ মার্কিন শক্তিকে পূজা করে। মার্কিন ভীতির কারণে এখন পর্যন্ত কোন মুসলিম দেশ আমাদের সাথে কূটনৈতিক সহযোগিতায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেনি। ওদিকে প্ররোচনা তো রয়েছেই। নির্বাচনের পর চেচনিয়ায় আমরা পূর্ণ শরয়ী শাসন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছি, সেই সাথে বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি, যাতে তারা আমাদেরকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেন। রাশিয়া এখনও আমাদের স্বাধীনতা মেনে নেয়নি। ওরা চার/পাঁচ বছর পর আমাদের স্বাধীনতা মেনে নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। আমরা বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করছি, তারা যেন অমুসলিম সামরিক শক্তিকে ভয় না করে আমাদের তথা বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তির জন্য মজবুত অবস্থান গ্রহণ করেন। মুসলমান আল্লাহ ছাড়া কোন পরাশক্তিকে ভয় করতে পারেনা। কাফের কখনও মুসলমানের বন্ধু ও সুহৃদ হতে পারে না।আমরা অনর্থক ওদের ঠাট দেখে ভয় করি। প্রকৃত পক্ষে ওদের ভয় করার কোন কারণ নেই।
শহীদুল ইসলাম