ভুল সবই ভুল
* অনেকের ধারণা, কাউকে যাকাত দিয়ে যদি এ কথা বলে দেয়া না হয় যে, এটা যাকাত, তা হলে যাকাত আদায় হয় না। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যাকাত আদায় হওয়ার জন্য গ্রহীতার নিকট যাকাতের কথা উল্লেখ করা শর্ত নয়।
* অনেকে মনে করে, সোনা বা রুপার যে অলংকার রীতিমত ব্যবহার করা হয়, তার যাকাত দিতে হয় না। এটা ভুল ধারণা। ব্যবহার করা হক বা তুলে রাখা হোক, যাকাত ফরজ হওয়ার ব্যাপারে উভয় রকম অলংকার-ই সমান। উভয় প্রকার অলংকারেই যাকাত দেওয়া ফরজ।
* অনেক লোক মনে করে যে, যাকাত যখন আদায় করে ফেললাম, তো এখন গরীব মিসকীনদের প্রতি আমাদের আর কোন দায়-দায়িত্ব নেই। ফলে চোখের সামনে কেউ না খেয়ে মরতে বসলেও তাদের মনে এতটুকু দয়া আসে না। হিসাব তাদের একটাই, যাকাত তো দিয়েই দিলাম, আর কি! এটা মারাত্মক ভুল ধারণা। ধনীদের সম্পদে যাকাতের পরেও অভাবী-বঞ্চিতদের পাওনা আছে।
* অনেকে যাকাত না দেওয়ার পক্ষে এই যুক্তি দাঁড় করায় যে, ভাই! আমার সম্পদ তো হালাল নয়। হারাম সম্পদে কি যাকাত আসে? বলা বাহুল্য যে, হারাম সম্পদে যাকাত আসে না, এ কথা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। হারাম সম্পদ যদি নিজের হালাল সম্পদের সঙ্গে মিশে যায়, তাহলে হালালের সঙ্গে সেই হারাম সম্পদেরও যাকাত দিতে হবে। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ পবিত্র হওয়া শর্ত নয়-শর্ত হলো মালিকানা। আর হারাম-হালাল একত্রে মিশে গেলে হালালের সঙ্গে হারামটাও মালিকানায় এসে যায়। যদিও এই মালিকানা অপবিত্র। আর সম্পদ পবিত্র হওয়া যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত নয়-যাকাত কবুল হওয়ার জন্য শর্ত। এরূপ সম্পদে যাকাত ফরজ হবে, কিন্তু যাকাত কবুল হবে না।
* এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, হারামমিশ্রিত সম্পদের যাকাত দিলে যখন তা কবুলই হবে না, তো যাকাত দিয়ে লাভ কি? এর জবাব হলো, যাকাত না দিলে যে পাপ হতো, তা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কবুল না হলেও যাকাত না দেওয়ার শাস্তি থেকে বাঁচা যাবে। শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া আর সওয়াব না হওয়া কি এক কথা? কখনই নয়। যাকাত না দিলে দু'টি অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হতো। এক, হারাম সম্পদ উপার্জনের শাস্তি, দুই, যাকাত না দেয়ার শাস্তি। আর যাকাত দেয়ার পর এখন ভোগ করতে হবে এক অপরাধের শাস্তি।
* অনেকে যাকাত দিয়ে বিনিময়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়। যেমন নিজের অধীনস্থ কর্মচারীকে এই আশায় যাকাত দিল যে, দেখব, লোকটা কত বড় নিমকহারাম। এতগুলি টাকা যাকাত দিলাম, আর তার কোন ফলই পেলাম না। অনেক সময় মুখের উপর বলেও ফেলে যে, বেটা! তোকে এত টাকা বেতন দেই, তার উপর যাকাত দেয়ার সময় তোর প্রতি খায়াল রাখি। আর তুই কিনা আমার প্রতি এতটুকু খায়াল রাখিস না! বলা বাহুল্য, এরূপ হলে যাকাতের দায় থেকে মুক্ত হওয়া যাবে ঠিক, কিন্তু যাকাত কবুল হবে না।
* অনেককে দেখা যায় যে, কারো কাছে কিছু টাকা পাওনা আছে। আর তার যাকাতের পরিমাণও ঠিক তা। এমতাবস্থায় যাকাতের নিয়তে সে উক্ত ব্যক্তির ঋণের দাবি ছেড়ে দেয় আর মনে মনে ভাবে, ব্যস আমার যাকাত দেয়া হয়ে গেছে। কিন্তু না, এভাবে যাকাত আদায় হয় না। যাকাত আদায় হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে যাকাতের মালিক বানিয়ে দেয়া শর্ত।
* অনেককে দেখা যায়, তারা যাকাতের নিয়তে সম্পদ আলাদা করে রাখে। তারপর যদি তা হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, তা হলে মনে করে যে, ব্যস, আমার যাকাত আদায় হয়ে গেছে, আর যাকাত দিতে হবে না। এ ধারণা ভুল। যাকাতের নিয়তে আলাদা করে রাখার পরে সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলে তাতে যাকাত আদায় হয় না।
* অনেকে যাকাত দেয় ঠিক, কিন্তু হিসাব করে দেয় না। ইচ্ছামত কিছু অর্থ-করি, কাপড়-চোপড় দিয়ে দেয়। এভাবে যাকাত দেয়া আর না দেয়া সমান কথা।
- হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানুবী (রহঃ)