JustPaste.it

হাদীসে রাসূল

 

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

জিহাদের বরকতে দু’জন-ই জান্নাতে

 

            হাদীস

            হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা দু'ব্যক্তিকে নিয়ে হাসেন, যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করেছিল এবং পরে দু'জনই জান্নাতে প্রবেশ করে। প্রথমজন (জান্নাতে প্রবেশ করবে) এ কারণে যে, সে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে শহীদ হয়েছে। পরে আল্লাহ্‌ হত্যাকারীর তাওবা কবুল করে নেন এবং সেও জিহাদে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়ে যায়। (বুখারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৩৯৬)

 

            ব্যাখ্যা

            জমউল ফাওয়ায়েদ খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬-এ এ ধরনের একটি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটি নিন্মরূপঃ

             হযরত আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। এক কাফির ও এক মুসলমানের মধ্যে প্রাথমিক মোকাবেলা শুরু হয়। কাফির লোকটি মুসলমানকে হত্যা করে ফেলে। তারপর অপর এক মুসলমান মোকাবেলার জন্য এগিয়ে আসে। কাফির তাকেও হত্যা করে ফেলে। এবার কাফির লোকটি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট এসে দাঁড়িয়ে যায় এবং জিজ্ঞেস করে যে, ‘আপনি কি উদ্দেশ্যে লড়াই করছেন?’ জবাবে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমাদের ধর্মে আছে যে, আমরা মানুষের সঙ্গে লড়াই করতে থাকব, যতক্ষণ না তারা এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র রাসূল এবং আমরা আল্লাহ্‌র সমুদয় হক আদায় করব।’ একথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে কাফির মুসলমানদের দলে গিয়ে যোগ দিয়ে কাফিরদের উপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে যায়। মৃত্যুর পর তাকে তুলে নিয়ে সেই দু’ মুসলমানের সঙ্গে রাখা হয়-যাদেরকে এইমাত্র সে হত্যা করেছিল। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মন্তব্য করলেন, ‘এ লোকটি জান্নাতী।’

            আলোচ্য হাদীসে এই যে বলা হল, ‘আল্লাহ্‌ তা’আলা হাসেন’, তার দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও রহমত বর্ষণ। কোন কোন মুহাদ্দিস বলেছেন, আল্লাহ্‌ পাকের হাস্য করার অর্থ পুরস্কার প্রদান করা। অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তা’আলা এমন দু’ব্যক্তিকে পুরস্কার প্রদান করেন।

            হাদীস থেকেও জিহাদের আজমত ও শাহাদাতের ফজীলত জানা যায়। এও প্রমাণিত হয় যে, জিহাদ করার জন্য শুধু মুমিন হওয়াই যথেষ্ট। জিহাদের জন্য বিশেষ স্তরের ঈমান বা বিশেষ আমলের প্রয়োজন নেই। যেমন আলোচ্য হাদীস থেকে জানা গেল যে, ঐ লোকটি ক্ষণিক আগে মুসলমান হত্যা করছিল এবং এইমাত্র মুসলমানদের পক্ষে লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে গেল ও দরবারে নবুওত থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে গেল।

            আসল কথা হল, মুসলমান যদি একবার সাহস করে এই বরকতময় আমলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যেতে পারে, তাহলে তাদের উপর আল্লাহ্‌ তা’আলার রহমতে সমুদ্র বয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু সমস্যা হল, মানুষের জঘন্যতম দুশমন নফস মানুষকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে দেয় না এবং নানা রকম বাহানা সাজাতে থাকে। তার কারণ, জিহাদে নফস এর মৃত্যু ঘটে এবং শয়তান অপদস্ত হয়। তাই নফস ও শয়তান আপ্রাণ চেষ্টা করে, মানুষকে কিভাবে জিহাদ থেকে বিরত রাখা যায়। কিন্তু যে ভাগ্যবান মুসলমান সাহস করে এই মহান আমলের ময়দানে একবার পা রাখে, আল্লাহ্‌ তার জন্য রহমতের সব দরজা উন্মুক্ত করে দেন। হোক সে যাচ্ছে তাই। তবে জিহাদ দ্বারা তার উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন।

 

            মুজাহিদের রোযা

            হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, যে আল্লাহ্‌র পথে (জিহাদ করা অবস্থায়) রোযা রাখল, আল্লাহ্‌ ত ’আলা জাহান্নাম থেকে তাকে সত্তর বছরের পথ দূরে রাখবেন। (বুখারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৩৯৮)

            আল্লামা ইবনে জাওযী (রহঃ) বলেন فى سبيل الله (আল্লাহ্‌র পথে) যখন সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়, তখন তার দ্বারা উদ্দেশ্য হয় জিহাদ। ঈমাম বোখারীর মতে কুরআন-হাদীসে- فى سبيل الله দ্বারা উদ্দেশ্য জিহাদ। (বুখারী, খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ৮০)

 

            ব্যাখ্যা

            মুজাহিদের সম্মানে আল্লাহ্‌ পাক তার সব আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেন। তেমনি মুজাহিদ ইচ্ছা করলে জিহাদ চলাকালে রোযা না রেখেও পারে। বুখারী শরীফের এক হাদীসে বরং এমনও আছে যে, এক জিহাদের সফরে কতিপয় লোক রোযা রাখে, কতিপয় রোযা বর্জন করে। গন্তব্যে পৌঁছে রোযাদাররা ক্লান্ত দেহে শুয়ে পড়ে আর যারা রোযা রাখেনি, তারা কোন বিশ্রাম ছাড়াই উদ্দীপনার সাথে কাজ করে। এদের প্রসঙ্গে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যারা রোযা রাখল না, তারা-ই আজ সওয়াব নিয়ে গেল। (বুখারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৪০৪)

            রোযার ন্যায় মুজাহিদের তিলাওয়াত, জিকর, নামায এবং অর্থব্যয়ের প্রতিদানও বাড়িয়ে দেয়া হয়। হযরত সাহ্‌ল ইবনে মু’আয আল-জুহানী তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে (জিহাদে) এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করল, আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের সঙ্গী বানাবেন।' (সুনানে কুবরা বায়হাকী, খণ্ডঃ ৯, পৃষ্ঠাঃ ১৭২)

 

            জান্নাতের প্রতিটি দরজা থেকে আহ্বান

            হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে একটি জোড়া (যে কোন বস্তুর) ব্যয় করবে, জান্নাতের দ্বাররক্ষীগণ তাকে আহ্বান করতে থাকবে। জান্নাতের রক্ষীগণ বলবে, আসুন, আসুন, আমাকে দিয়ে প্রবেশ করুন।' শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তবে তো সেই ব্যক্তির কোনো ভয় থাকবে না। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, আশা করি, আপনিও তাদের মধ্যে থাকবেন।' (বুখারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ৩৯৮)

 

মুজাহিদকে যুদ্ধের সরঞ্জাম দান করা এবং তাঁর অবর্তমানে

তাঁর পরিবারের তত্ত্বাবধান করার প্রতিদান

             হাদীস

             হযরত যায়েদ ইবনে খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের যুদ্ধরত ব্যক্তিকে সরঞ্জাম দান করল, সে-ও যুদ্ধ করল। আবার যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধরত ব্যক্তির পরিবারের তত্ত্বাবধান করল, সে-ও যুদ্ধ করল। (বুখারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৩৯৯)

 

            ব্যখ্যা

             কুরআন ও হাদীসের স্থানে স্থানে বিভিন্নভাবে আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করার প্রতি উৎসাহ এবং ব্যয় না করায় ধমকি প্রদর্শন করা হয়েছে। তাই নিম্নে তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ এতদসংক্রান্ত একটি আয়াত এবং কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল।

            পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন-

وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴿١٩٥﴾

            তরজমাঃ তোমরা ব্যয় কর আল্লাহ্‌র পথে এবং নিজের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। আর সৎকাজ কর, যারা সৎকর্ম করে, আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালবাসেন। (বাকারাঃ ১৯৫)

            আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যায় হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) লিখেছেনঃ

              ‘তোমরা আল্লাহ্‌র পথে (জিহাদে) জানের সঙ্গে মালও ব্যয় কর। এক্ষেত্রে নিজের সম্পদ ব্যয় করায় কার্পণ্য প্রদর্শন করে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। জিহাদে জীবন উৎসর্গ করার পাশাপাশি অকাতরে সম্পদও ব্যয় না করলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে আর প্রতিপক্ষ হবে শক্তিশালী, যা ধ্বংসের-ই অপর নাম।’ (মা’আরিফুল কুরআন, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৪৭২)

             তাফসীরে মাজহারীর প্রণেতা 

কাজী ছানাউল্লাহ পানীপতী (রহঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখানে ‘সাবীলুল্লাহ' (আল্লাহ্‌র পথ) দ্বারা উদ্দেশ্য জিহাদ। (তাফসীরে মাজহারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৩৬৭)

             তিনি আরো লিখেছেনঃ

             ‘আমার মতে আলোচ্য আয়াতের মর্ম হল- হে মুসলমানগণ! তোমরা যদি জিহাদ ত্যাগ করে বস, তাহলে দুশমন তোমাদের মাথায় চড়ে বসবে, যার ফলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লামা বগবী (রহঃ) বলেছেন, এ আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) অনবরত আল্লাহ্‌র পথে জিহাদে কাটাতে শুরু করেন। জিহাদ করতে করতে তিনি শাহাদাতবরণ করেন এবং কুস্তুস্তুনিয়ার (কনস্টান্টিনোপল) পানাহ নগরে চির নিদ্রায় শায়িত হন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মারা গেল; অথচ সে জিহাদ করল না, এমনকি মনে জিহাদের কল্পনাও করল না; সে এক প্রকার মুনাফিক অবস্থায় মারা গেল।" (তোফসীরে মাজহারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৩৪৮)

             ইমাম বুখারী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, আয়াতটি জিহাদে ব্যয় করা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। (বুখারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৬৪৮)

ইমাম বুখারীর এ অভিমতের ব্যাখ্যা মুহাশশী (রহঃ) এভাবে করেছেন-

الظاهِرُ أن مُرادَه اَلنَّفَقَةُ في الجِهادِ فَإنه لَوْ لَمْ يُنْفَقْ فِيهِ غَلَبَ عَلَيْهِمُ الْكُفارُ وَأَهْلَكَهُمْ

            ‘বলা বাহুল্য যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, জিহাদে ব্যয় করা। কেননা, জিহাদে সম্পদ ব্যয় করা না হলে কাফিররা মুসলমানদের উপর জয়ী হয়ে যাবে এবং তারা মুসলমানদের ধ্বংস করে দেবে।’ (বুখারীর টীকা, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৬৪৮)

 

    আয়াতের শানে নুযূল

           আসলাম আবু ইমরান বলেন, একবার আমরা মদীনা থেকে কুস্তুস্তুনিয়া (কনস্টান্টিনোপল) অভিমুখে রওনা হই। আব্দুর রহমান ইবনে খালিদ ইবনে অলীদ আমাদের আমীর। পথে বিশাল এক রোমান বাহিনী আমাদের মোকাবেলায় এগিয়ে আসে। আমরাও সংখ্যায় অনেক। সারিবদ্ধভাবে আমরা তাদের প্রতিরোধে দাঁড়িয়ে যাই। হঠাৎ মুসলমানদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি একাকী রোমানদের উপর হামলা করে বসে এবং তাদের সারিতে ঢুকে পড়ে। সঙ্গীরা চীৎকার করে বলে উঠে, ‘হায়! হায়! লোকটা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করল!' একথা শুনে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) বলে উঠলেন, লোক সকল! তোমরা আয়াতটির ভুল ব্যাখ্যা করছ। এ আয়াত তো আমরা আনসারীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। ঘটনাটি এই ছিল যে, আল্লাহ্ তা’আলা যখন ইসলামের বিজয় দান করেন এবং ইসলামের সমর্থক-সহযোগীর সংখ্যা বেড়ে গেল, তখন আমরা কানাঘুষা করলাম যে, আল্লাহ্‌ তো ইসলামকে বিজয়ী করেছেন। এখন আর জিহাদের প্রয়োজন নেই। যুদ্ধে আমাদের বিপুল সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এস, এখন আমরা সে সবের প্রতিকারে আত্মনিয়োগ করি, সহায়-সম্পত্তির তত্বাবধান করি। তার-ই প্রতিবাদে আল্লাহ্‌ তা’আলা এ আয়াতটি নাযিল করেন। (তাফসীরে ইবনে কাছীর, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১৭৪- কাশশাফ, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ২৩৭ - মাজহারী খণ্ড ৪ ১, পৃষ্ঠাঃ ৩৬৮)

            আয়াতে تهْلُكَه (তাহলুকা) দ্বারা উদ্দেশ্য সম্পদ রক্ষা ও ক্ষতিপূরণে জিহাদ বার্জন করা (মাজহারী, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৩৬৮)

 

জিহাদে সম্পদ ব্যয় না করা আর নিজেকে ধ্বংসের

মুখে নিক্ষেপ করা সমান কথা

               জিহাদে সম্পদ ব্যয় না করা আর নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া সমান কথা। কেননা, আল্লাহ্‌ যাদেরকে অর্থ-সম্পদ দান করেছেন, তারা যদি অর্থ দ্বারা মুজাহিদের সহযোগিতা না করে এবং অর্থ দিয়ে মুজাহিদদের জন্য যুদ্ধের সরঞ্জামের ব্যবস্থা না করে, তাহলে মুজাহিদরা একদিকে দুর্বল হয়ে পড়বে অন্যদিকে ইসলাম ও মুসলমানের শত্রুরা শক্তিশালী হয়ে যাবে। শত্রুরা মুজাহিদদের উপর জয়লাভ করে মুসলমানদের সহায়-সম্পদ লুটে নেবে এবং মুসলমানদেরকে তাদের অত্যাচারের টার্গেটে পরিণত করবে। মুসলমানদের ঘাড়ে কুফরী আইন কুফরী আইন চাপিয়ে দেবে। এমতাবস্থায় জিহাদ ও মুজাহিদদের জন্য সম্পদ ব্যয় করায় কার্পণ্য করার অর্থ নিজেদেরকে অপমান ও ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা ছাড়া আর কী হতে পাবে?

 

সম্পদ দ্বারা জিহাদ করার প্রয়োজনীয়তা

            যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক সময় যোদ্ধা অপেক্ষা অর্থ সম্পদের প্রয়োজন বেশি হয়। কারণ, সামরিক সরঞ্জাম ব্যতীত যুদ্ধ হয় না। একারণে ইসলামে জিহাদে অর্থ ব্যয় করার ব্যাপক ফজীলতের কথা বলা হয়েছে। অর্থ জিহাদের একটি মৌলিক উপাদান। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জিহাদের ডাক দিতেন, তখন গরীব লোকেরাও জিহাদে অংশ নেয়ার জন্য রাসূলের দরবারে এসে উপস্থিত হতেন। কিন্তু অর্থের অভাবে অনেক সময় তাদের জন্য অস্ত্র ও বাহনের ব্যবস্থা করতে পারতেন না। ফলে তারা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চলে যেতেন। অর্থাভাবে জিহাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তারা মনে যে ব্যথা পেতো, পবিত্র কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতে তার-ই বিবরণ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন-

وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ

                   “তাদেরও কোন দোষ নেই, যারা আপনার নিকট বাহনের জন্য আসলে আপনি বলেছিলেন, তোমাদের জন্য কোন বাহন আমি পাচ্ছি না। অর্থব্যয়ে অসামর্থজনিত দুঃখে তারা অশ্রুবিগলিত চোখে ফিরে গেল।’ (তাওবাঃ ১৯২)

              কারণে প্রত্যেক ঈমানদারের অপরিহার্য কর্তব্য যে, যদি আল্লাহ্‌ পাক তাকে অর্থ সম্পদে সমৃদ্ধ করে থাকেন, সে যেন আল্লাহ্‌র দ্বীনের বিজয় ও ঈমান-ইসলামের হেফাজতের জন্য তা থেকে ব্যয় করে। এ কাজে যেন সে কখনো হাত সংকুচিত না করে। কারণ জিহাদে অর্থ ব্যয় না করার প্রবণতা সমগ্র জাতির জন্য ধ্বংস ডেকে আনে।

            আল্লামা আবু সউদ বলেন, সম্পদ ব্যয় না করে আটকে রাখা এবং সম্পদের প্রতি মহব্বত রাখা পতনের কারণ। এ কারণে কৃপণতাকে ধ্বংস বলে আখ্যা দেয়া হয়। (তাফসীরে আবুস্‌ সউদ, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১৫৭)

(চলবে)