আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্র মধ্যে মানহাজগত পার্থক্য
শাইখ আহমাদ আল হামদান হাফিযাহুল্লাহ
"আবু বাকর আল বাগদাদির নেতৃত্বাধীন “আইসিস”/”আইএস” নামক দলটির পক্ষ থেকে তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদ প্রতি উত্থাপিত অসংখ্যা অভিযোগসমূহের মধ্যে অন্যতম হল – তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদ সালাফি জিহাদের প্রকৃত মানহাজ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। আইসিস দাবি করে তারাই সালাফি জিহাদের মানহাজের অনুসরণ করে, যে মানহাজ ছিল শায়খ উসামাহ্ বিন লাদিনের রাহিমাহুল্লাহ। তারা আরো দাবি করে শায়খ উসামাহ্ বিন লাদিনের আল-ক্বা’ইদাহ্ আর শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর নেতৃত্বাধীন আল-ক্বা’ইদাহ্র মানহাজ ভিন্ন।
২০১৪ এর এপ্রিলে তাদের কথিত খিলাফাহ ঘোষণার প্রায় দু মাস আগে, আল-ফুরক্বান মিডিয়া থেকে প্রকাশিত আইসিসের মুখপাত্র আবু মুহাম্মাদ আল-আদনানির “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না” শীর্ষক বক্তব্যে সর্বপ্রথম তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করে বর্তমান আল-ক্বা’ইদাহ্র নেতৃবৃন্দ, সালাফি জিহাদের প্রকৃত মানহাজ ও শায়খ উসামাহ্র মানহাজ থেকে পথভ্রষ্ট হয়েছে। এ দাবির স্বপক্ষে কিছু অভিযোগ এ বক্তব্য পেশ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই নানাভাবে এ সকল অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করতে থাকে।
এ প্রবন্ধগুলোতে দালীলিক আলোচনা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে সালাফি জিহাদের প্রকৃত মানহাজ কোনটি এবং কারা সে মানহাজের অনুসরণ করছে আর কারাই বা বিচ্যুত হয়েছে। সম্পূর্ণ বইটি পড়া শেষ হলে আইসিসের দাবির সত্যতা সম্পর্কে পাঠক নিজেই মন্তব্য করতে পারবেন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত আল-আদনানি মহাসত্য উচ্চারন করেছিল যখন সে বলেছে “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না”। সত্যই আল-ক্বাইদাহ্র মানহাজ এবং আইসিসের মানহাজ এক নয়, আর না কখনো হবে, এবং সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর যিনি হাক্বকে বাতিল থেকে পৃথক করেন যাতে করে মানুষর উপর হুজ্জাহ প্রতিষ্ঠিত হয়।"
আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্র মধ্যে মানহাজগত পার্থক্য
ডাউনলোড করুন
পিডিএফ – manhaj difference_PDF
ওয়ার্ড –manhaj difference
https://mega.nz/file/EUg3SZab#BUp2nYVyLXw2pjikpaeSlBvo5qjzkJZOcoCnHOe2HLE
https://archive.org/details/manhaj-difference_pdf1_202008
http://www.mediafire.com/file/febsr1stbht4hi4/manhaj-difference_pdf1.pdf/file
—————————
আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্র মধ্যে মানহাজগত পার্থক্য
কোন দলটি পথভ্রষ্ট হয়েছে?
শায়খ আহমেদ আল-হামদান
আল্লাহ তাকে হেফাযত করুন
১৪৩৭ হিজরি/ ২০১৫
বঙ্গানুবাদেঃ
আল মুরাবিতীন মিডিয়া
অনুবাদকের টীকা – “দাবিক্ব” ম্যাগাযিন ছাড়া অন্যান্য সকল রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে মূল আরবী উৎস থেকে।
সূচীপত্র
শি’আদের কাফির ঘোষণা এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা
এক মানহাজ যা অহিংসবাদে বিশ্বাসী
এক মানহাজ যা সংখ্যগরিষ্ঠের অনুসরণ করে
মুবাহালা (মিথ্যাবাদির উপর অভিসম্পাতের জন্য দু’আ)
আলিমদের প্রশংসা ও নিন্দার মানদণ্ড কী?
মুরতাদ এবং বিদ’আতিদের পাশাপাশি যুদ্ধ করা
পরিশিষ্ট –মিথ্যাচার ও স্ববিরোধী বক্তব্য
ভূমিকা
এ বইটি মূলত কিছু প্রবন্ধের সংকলন। প্রবন্ধগুলো লেখা হয়েছিল ২২ এপ্রিল ২০১৪ থেকে, ৩ মার্চ ২০১৫ এর মধ্যে। বইটিতে এ প্রবন্ধগুলোকেই সম্পাদিত ও পরিমার্জিত করে একত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রবন্ধগুলো মাধ্যমে একদিকে আমি আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্র যে পার্থক্য তার মূল উৎস ও ভিত্তিকে তুলে ধরেছি। অন্যদিকে গবেষণালব্ধ তথ্য –উপাত্তের মাধ্যমে একটি প্রশ্ন পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছি, আর তা হল –
আইসিস দাবি করে উসামাহ্র আল-ক্বাইদাহ্ সঠিক মানহাজে ছিল আর আইমানের আল-ক্বাইদাহ্ বিভ্রান্ত হয়েছে। আইসিস তাদের বিভিন্ন বক্তব্য ও প্রকাশনার মাধ্যমে আল-ক্বা’ইদাহ্র বিরুদ্ধে যে বিচ্যুতির অভিযোগসমূহ উত্থাপন করেছে এগুলো কি প্রথম থেকেই আল-ক্বাইদাহ্র মাঝে বিদ্যমান ছিল নাকি এগুলো নতুন কোন বিভ্রান্তি?
শার’ঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এ অভিযোগগুলোর বৈধতা বিচারের বদলে, বরং আইসিস যেসব বক্তব্য দিচ্ছে,এবং অভিযোগ তুলছে সেগুলোর আলোকে যদি সালাফি জিহাদি আন্দোলনকে বিশ্লেষণ করা হয় তবে কি ফলাফল পাওয়া যায়, সেটাই আমাদের আলোচনা ও গবেষণার বিষয়বস্তু।
এ গবেষণা ও আলোচনাতে আমরা শুধুমাত্র এমন সব রেফারেন্স এবং গ্রন্থ-প্রবন্ধ-বিবৃতি ব্যবহার করেছি যেগুলোর ব্যাপারে আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্, উভয়পক্ষই একমত।
বইটির কাজ প্রায় অর্ধেকের মতো শেষ হবার পর, কিছু ভাই আমাকে নাসীহাহ করেন বইটি ইংরেজিতেও প্রকাশ করার। আর তাই আমি ইংরেজীতেও বইটি প্রকাশে সচেষ্ট হই। বইটির ফুটনোটে আমি কিছু মন্তব্য যোগ করেছি যাতে করে যেসব ব্যক্তি ও বক্তব্যের ব্যাপারে আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে পাঠক ধারণা পেতে পারেন।
লক্ষ্যনীয় হল, আমি আইসিসের যুক্তিখন্ডন করছি তার অর্থ এই না যে আমি আল-ক্বাইদাহ্র সকল ধারণা ও সকল কাজের সাথে একমত। এ বইয়ে যা উপস্থাপন করা শুধুমাত্র একটি গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ, তার বেশি কিছু না।[1]
আহমেদ আল-হামদান
বঙ্গানুবাদের ভূমিকা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। সকল প্রশংসা জগত সমূহের অধিপতি আল্লাহর জন্য। আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক আশরাফুল আম্বিয়া, সাইয়্যিদিল মুরসালীন মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর। আম্মা বা’আদ…
১৪৩৫ হিজরির রমাদ্বানের প্রথম দিন ইতিপুর্বে দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফীল ইরাক ওয়া আশ-শাম [Islamic State of Iraq & Sham – আইসিস] নামে পরিচিত দলটির প্রধান মুখপাত্র আবু মুহাম্মাদ আল-আদনানি আশ-শামী একটি অডিও বক্তব্যের মাধ্যমে ঘোষণা করে আইসিস নামক দলটি ইরাক ও সিরিয়াতে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে নিয়ে ইসলামি খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তারা তাদের আমির ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আল-বাদরি আস-সামারাউয়ি ওরফে আবু বাকর বাগদাদিকে মুসলিম উম্মাহ্র ইমাম বা খালিফাহ হিসেবে নির্বাচিত করেছে। আইসিসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তাদের এ খিলাফাহর ঘোষণার মাধ্যমে অন্যান্য সকল ইসলামি দল, জিহাদি সংগঠন ও ইসলামি ইমারাহ্ কার্যকর ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, এবং আইসিসের আমিরের প্রতি আনুগত্যের শপথ করা বা বাই’য়াহ প্রদান করা সমগ্র বিশ্বের সকল মুসলিমের উপর ওয়াজিব। যে এ বাই’য়াহ প্রদান না করে মারা যাবে সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করবে। পরবর্তীতে আইসিস আরো দাবি করে যে তারাই আল জামা’আ (বৃহত্তর মুসলিম জামা’আ/ আলা জামাতুল মুসলিমীন) এবং তারা ব্যাতীত অন্যান্য সকল জামা’আ পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ।
বাংলাভাষী অধিকাংশ মুসলিম এ ঘোষণা ও ঘোষণা পরবর্তী মিডিয়ার শোরগোলের মাধ্যমে সর্বপ্রথম আইসিসের সাথে পরিচিত হয়।তবে যারা বিশ্বব্যাপী জিহাদ আন্দোলনের খবরাখবর রাখতেন, যারা মনোযোগ সহকারে জিহাদি আন্দোলন অনুসরণ করতেন এবং যারা এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত তাদের কাছে আইসিসের এ ঘোষণা অপ্রত্যাশিত ছিল না। বরং ২০১৪ এর শুরু থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিলো আইসিসের পক্ষ থেকে এরকম একটি ঘোষণা আসতে পারে।
সিরিয়ার জিহাদ সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক জিহাদের সবচেয়ে উজ্জ্বল নিদর্শনে পরিণত হয়েছে। ঠিক যেভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের জিহাদ একটি প্রজন্মকে বৈশ্বিক জিহাদের শিখা প্রজ্জ্বলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলো, তেমনিভাবে সিরিয়ার জিহাদ এক নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছে বৈশ্বিক জিহাদের আদর্শে– এবং সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ্র।
তবে আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। আগ্রাসী শত্রুর পরাজয়ের আগ পর্যন্ত আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল আফগান ময়দানকে ফিতনা থেকে রক্ষা করেছিলেন, কিন্তু সিরিয়ার ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে নি। এবং সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় যারা সিরিয়ার ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমেই সালাফি জিহাদের মানহাজ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং এ মানহাজের যৌক্তিকতা শার’ঈ ও বুদ্ধিগতভাবে অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন, তাদেরকে অতিরিক্ত আরেকটি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর তা হল প্রকৃত সালাফি জিহাদের মানহাজ কোনটি, কারা সালাফি জিহাদের মানহাজের অনুসরনের দাবি করে, আর কারা প্রকৃতপক্ষে তা অনুসরণ করে – তা নির্ণয়ের পরীক্ষা। আফগানিস্তানের জিহাদের সময় জিহাদ আন্দোলন ছিল ঐক্যবদ্ধ, শত্রু ছিল এক ও নির্দিষ্ট। কাতার সমূহ ছিল সারিবদ্ধ। কিন্তু সিরিয়ার জিহাদের ঘটনাপ্রবাহে মুজাহিদিনের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে, কাতারসমূহ বিদীর্ণ হয়েছে এবং হারাম রক্ত প্রবাহিত হয়েছে। আফগান জিহাদের শেষ পর্যায় থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সময়কাল বিশ্বব্যাপী মুজাহিদিন তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদের নেতৃত্বে, বৈশ্বিক জিহাদে ঐক্যবদ্ধ ছিল। কিন্তু আইসিস তাদের খিলাফাহ্র ঘোষণার সাথে সাথে অন্য সকল দলের বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়ে এবং বাই’য়াহ কে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নীতি হিসেবে গ্রহন করার মাধ্যমে, এবং সর্বোপরি তাদের আমিরকে বাই’য়াহ দেওয়াকে জিহাদের আবশ্যক পূর্বশর্ত হিসেবে প্রচার করার মাধ্যমে সার্বিক ভাবে বিশ্বব্যাপী জিহাদী অঙ্গনে এবং বিশেষ ভাবে সিরিয়াতে ব্যাপক বিভেদ ও বিরোধের সূচনা করে। যদি আইসিস এ ধরনের নীতি গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতো তাহলে হয়তো তাদের খিলাফাহ্র ঘোষণার ব্যাপারে দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও কার্যকর ভাবে ক্রুসেডার-যায়নিস্ট-রাওয়াফিদ-মুশরিক অক্ষের বিরুদ্ধে তাদের সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করা সম্ভব হতো – এবং আল্লাহর ইচ্ছা ব্যাতীত কিছু সঙ্ঘটিত হয় না।
সৃষ্টএ ফিতনার প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের অবস্থান, অভিযোগ ও বক্তব্যের বৈধতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে। আইসিস তাদের বৈধতা প্রমান ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খন্ডনের জন্য প্রধান যে কৌশল গ্রহন করে তা হল আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসব মুসলিম দল বিভিন্ন কারনে তাদের বিরোধিতা করেছে তাদের উপর তাকফির করা (কাফির ঘোষণা করা), বিভিন্ন বিশেষণে (সাহওয়াহ, গোমরাহ) আখ্যায়িত করা। পাশাপাশি তারা শক্তিশালী মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নিজেদের ঘোষণাকে বাস্তব প্রমান করা এবং খিলাফাহ্ ও শারিয়াহ্ র প্রতি উম্মাহ্র ভালোবাসা ও দুর্বলতাকে ব্যবহার করে আবেগসর্বস্ব প্রপাগ্যান্ডার মাধ্যমে সমর্থকদের মনে নিজেদের বৈধতা সৃষ্টির নীতি গ্রহন করে। অন্যদিকে বৈশ্বিক জিহাদের ক্ষেত্রে তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদকে সালাফি জিহাদের সঠিক মানহাজ থেকে বিচ্যুত হবার অভিযোগে অভিযুক্ত করে, এবং দাবি করে তারাই সালাফি জিহাদের প্রকৃত মানহাজ বিশুদ্ধ ভাবেঅনুসরণ করছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে সালাফি জিহাদের প্রকৃত মানহাজ সম্পর্কে, মূল উৎস থেকে প্রকাশিত কিতাবাদি-বক্তব্য-বিবৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকার কারনে অনেক আন্তরিক ভাইবোনেরা তাদের এ ধরনে মিডিয়া কৌশল দ্বারা প্রভাবিত হন, এবং এখনো হচ্ছেন। তারা আইসিসের বক্তব্য শুনছেন, তাদের উত্থাপিত অভিযোগ শুনছেন, তাদের দাবি শুনছেন – এবং এগুলো দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন কিন্তু এর কোনটির তাহক্বিক করার মানসিকতা দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিকাংশ ভাইবোনের মধ্যে গড়ে উঠছে না। বাংলাভাষী জিহাদী অঙ্গনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কারনে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারন করেছে।
এর মধ্যে প্রথম বৈশিষ্ট্য হল বিভিন্ন আলিম ও জিহাদি সংগঠনের অফিশিয়াল মিডিয়া ও বক্তব্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখেয়াল থাকা। বাংলাভাষী জিহাদ সমর্থকদের মধ্য এতো বটেই এমনকি অনেক জিহাদি সংগঠনের নেতাদের মধ্যেও এ দুঃখজনক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল জাতিগতভাবে আমাদের মাঝে বিদ্যমান চিন্তার অলসতা। দ্বীনের যেকোন ইবাদাতের ক্ষেত্রে অগ্রসর হবার জন্য সে ইবাদাত সম্পর্কে আন্তরিকভাবে জানার চেষ্টা এবং ইচ্ছা থাকা আবশ্যক। প্রয়োজন তাহক্বিক করার মেজাজ এবং শারিয়াহ্ র আলোকে দাবি-অভিযোগ এবং ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করার মানসিকতা। কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে এ বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। একারনে ঠিক যে বৈশিষ্ট্যের কারনে আমরা পূর্বের প্রজন্মকে দেখেছি অন্ধভাবে পীর পূজো করতে, ঠিক একই বৈশিষ্ট্যের কারনে আমরা দেখছি অন্ধভাবে কোন দল বা ব্যাক্তির বক্তব্য বা বিবৃতির অনুসরণ করতে।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হল অত্যাধিক আবেগ নির্ভরতা এবং নিজ জ্ঞানের তুলনায় কথায় অধিক অগ্রসর হওয়া, এবং এগুলোও আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। অত্যাধিক আবেগ নির্ভর চিন্তারকারনে আমরা দেখেছি শুধুমাত্র আইসিসের খিলাফাহ্র দাবি “সঠিক হলেও হতে পারে”– এরকম একটি সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে অনেকেই মুজাহিদিনের রক্ত প্রবাহিত করা এবং অন্যায় তাকফিরের মত সুনিশ্চিত ভাবে হারাম বিষয়ের জন্য অজুহাত সৃষ্টি করেছেন। একই সাথে আমরা দেখেছি দিনের পর দিন কেউ একজন আইসিসের পক্ষ নিয়ে তর্ক করার পর দেখা যাচ্ছে আইসিসের পক্ষ থেকে আসলে কি বলা হয়েছে, কিংবা যে দল বা যার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে তাদের পক্ষ থেকে আসলে কি বলা হচ্ছে, তা নিয়ে কোন ধারনা ছাড়াই ঐ ব্যাক্তি তর্ক শুরু করেছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে।
জ্ঞানপিপাসু, সত্যসন্ধানী এবং জিহাদের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা কোন যুবকের মাঝে এ বৈশিষ্ট্যগুলোর কোন একটি থাকা গ্রহনযোগ্য না। বরং জিহাদের প্রতি ভালোবাসা এবং জিহাদের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা সকলের করনীয় হল আবেগ ও ত্বরাপ্রবণতাকে একপাশে সরিয়ে রেখে, অপ্রমানিত অভিযোগ, দাবি ও সন্দেহকে সরিয়ে রেখে, শারিয়াহ্ ও সালাফগনের অবস্থানের আলোকে, সালাফি জিহাদের মানহাজের আলোকে, সুস্পষ্ট ভাবে যা প্রমানিত সত্য তার আলোকে পরিস্থিতির বিবেচনা করা। কারন আল-ক্বা’ইদাহ্ ও আইসিসের মধ্যে এ মতবিরোধ প্রকৃতপক্ষে দুটি মানহাজের মধ্যে বিরোধ, দুটি পৃথক আদর্শের মধ্যে বিরোধ, যার মধ্যে একটিই হাক্ব অপরটি বাতিল। আর আল্লাহর জন্য জিহাদের ময়দানে, মুজাহিদিনের কাতারে শামিল হতে ইচ্ছুক প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য হাক্ব ও বাতিলকে চিনে নেওয়া আবশ্যক।
এ সংকলনে আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্র একটি মৌলিক মতপার্থক্যে ও দাবির ব্যাপারে সত্যের অনুসন্ধানে উপরোক্ত নীতিসমূহের আলোকে অগ্রসর হওয়া হয়েছে। অনুবাদ করার সময় বেশ কিছু স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু তথ্য ও রেফারেন্স যোগ করা হয়েছে যাতে করে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য গবেষণা ও সত্যায়ন করা সহজ হয়।
আমরা আশা করি সত্য অনুসন্ধানী ভাইবোনদের জন্য এ অনুবাদটি সহায়ক হবে, এবং এটি আল্লাহ আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করবেন, এবং দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের জন্য কল্যাণের উপলক্ষে পরিণত করবেন। নিশ্চয় হেদায়েত শুধুমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে, তিনি যাকে হেদায়েত করেন কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না, তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে সঠিক পথের নির্দেশ দিতে পারে না।
হে আল্লাহ্, এই উম্মাহর জন্য সঠিক হেদায়েতের পথ সুস্পষ্ট করে দিন, যার মাধ্যমে যারা আপনার আনুগত্য করে তাঁরা সম্মানিত ও শক্তিশালী হবে, আর যার আপনার অবাধ্য তাঁরা অসম্মানিত ও অপমানিত হবে। হে আল্লাহ্, আপনি মুসলিমের ঐক্যবদ্ধ করে দিন, মুসলিমদের মধ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে দিন, এবং তাঁদেরকে আপনার কাছে কল্যাণময় প্রত্যাবর্তন দান করুন।
সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ-র জন্য, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহরﷺ উপর, তারﷺ পরিবারের উপর ও তারﷺ সাহাবীগণের উপর।
আল মুরাবিতীন মিডিয়া টিমের পক্ষে
আবু আনওয়ার আল হিন্দী
শাওয়াল, ১৪৩৭
পূর্বকথা
আবু বাকর আল বাগদাদির নেতৃত্বাধীন “আইসিস”/”আইএস” নামক দলটির পক্ষ থেকে তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদ প্রতি উত্থাপিত অসংখ্যা অভিযোগসমূহের মধ্যে অন্যতম হল – তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদ সালাফি জিহাদের প্রকৃত মানহাজ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। আইসিস দাবি করে তারাই সালাফি জিহাদের মানহাজের অনুসরণ করে, যে মানহাজ ছিল শায়খ উসামাহ্ বিন লাদিনের রাহিমাহুল্লাহ। তারা আরো দাবি করে শায়খ উসামাহ্ বিন লাদিনের আল-ক্বা’ইদাহ্ আর শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর নেতৃত্বাধীন আল-ক্বা’ইদাহ্র মানহাজ ভিন্ন।
২০১৪ এর এপ্রিলে তাদের কথিত খিলাফাহ ঘোষণার প্রায় দু মাস আগে, আল-ফুরক্বান মিডিয়া থেকে প্রকাশিত আইসিসের মুখপাত্র আবু মুহাম্মাদ আল-আদনানির “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না” শীর্ষক বক্তব্যে সর্বপ্রথম তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করে বর্তমান আল-ক্বা’ইদাহ্র নেতৃবৃন্দ, সালাফি জিহাদের প্রকৃত মানহাজ ও শায়খ উসামাহ্র মানহাজ থেকে পথভ্রষ্ট হয়েছে। এ দাবির স্বপক্ষে কিছু অভিযোগ এ বক্তব্য পেশ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই নানাভাবে এ সকল অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করতে থাকে।
এ প্রবন্ধগুলোতে দালীলিক আলোচনা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে সালাফি জিহাদের প্রকৃত মানহাজ কোনটি এবং কারা সে মানহাজের অনুসরণ করছে আর কারাই বা বিচ্যুত হয়েছে। সম্পূর্ণ বইটি পড়া শেষ হলে আইসিসের দাবির সত্যতা সম্পর্কে পাঠক নিজেই মন্তব্য করতে পারবেন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত আল-আদনানি মহাসত্য উচ্চারন করেছিল যখন সে বলেছে “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না”। সত্যই আল-ক্বাইদাহ্র মানহাজ এবং আইসিসের মানহাজ এক নয়, আর না কখনো হবে, এবং সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর যিনি হাক্বকে বাতিল থেকে পৃথক করেন যাতে করে মানুষর উপর হুজ্জাহ প্রতিষ্ঠিত হয়।
শি’আদের কাফির ঘোষণা এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা
উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্ থেকে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্ পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে –এ অবস্থানের পক্ষে আদনানির অনেকগুলোর অভিযোগের মধ্যে একটি হচ্ছে রাফিদাদের ব্যাপারে আল-ক্বা’ইদাহ্ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এখন পাল্টে ফেলেছে। এ ব্যাপারে আদনানি “এটা না আমাদের মানহাজ আর না কখনো হবে” শিরোনামে বার্তাতে বলেছে, বর্তমান আল-ক্বা’ইদাহ্ পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর তারা (আল-ক্বা’ইদাহ্) এখন বলছে নাপাক রাফিদা মুশরিকিনদের ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে[2], এবং এটি (সম্মিলত ভাবে রাফিদাদের বিষয়টি) হল দাওয়াতী ময়দানের কাজ”।
অথচ আল-ক্বা’ইদাহ্র সাথে জামা’আতুল জিহাদের[3] সংযুক্তির আগেও ড. আইমান আয্-যাওয়াহিরীর অবস্থান এটিই ছিল। শি’আদের ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, “সাধারণ মুর্খ শি’আদের ব্যাপারে অবস্থান হল, তারা তাদের অজ্ঞতার কারনে ওজর পাবে।”[4] আজ পর্যন্ত ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী তার এ অবস্থান পরিবর্তন করেন নি, এবং এমন কিছুই বলেন নি যা তার পূর্বের এ বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। এমনকি দুটি জামা’আ একীভূত হবার সময়েও শায়খ উসামাহ্ও কিন্তু শর্ত হিসেবে ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরীকে বলেননি তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বা এ অবস্থান থেকে সরে আসতে।[5] যদি এটি স্পষ্ট গোমরাহিই হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে এরকম গোমরাহিপূর্ণ বক্তব্য ডঃ আইমান আয্-যাওয়াহিরী দেয়ার পরও জামা’আহ দুটি একীভূত হল? আর কেনই বা শায়খ উসামাহ্, এরকম “গোমরাহ” ব্যক্তি আইমান আয-যাওয়াহিরীকে নিজের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও আল-ক্বা’ইদাহ্র শূরা সদস্য হিসেবে গ্রহন করলেন?
আর ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরীর এ বক্তব্যের ব্যাপারে এত অবাক হবারই বা কি আছে, যেখানে উসামাহ্ আল-ক্বা’ইদাহ্র আমীরা থাকাকালীন অবস্থাতেই ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী তার প্রথম সম্মুখ সাক্ষাৎকারে একই কথা বলেছিলেন: “শি’আদের সাধারণ জনগণের ব্যাপারে আমার অবস্থান হচ্ছে, আহলুস সুন্নাতের আলিমদের অবস্থান, এবং সেটা হল যে তারা তাদের অজ্ঞতার জন্য (তাকফির থেকে) ওজর পাবে (উযর বিল জাহল)… এবং যেসব সাধারণ শি’আ, মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন যুলুমে অংশগ্রহণ করে নি, তাদের প্রতি আমাদের পথ হল দাওয়াহ এবং সত্য উপস্থাপন করার পথ।”[6]
২০০৫ এ আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়িকে লেখা চিঠিতেও ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেছিলেন – “কেন সাধারণ শি’আদের হত্যা করা হচ্ছে যখন তাদের ব্যাপারে অজ্ঞতার অজুহাত (উযর বিল-জাহল) রয়েছে?”[7]
এ বক্তব্যের ব্যাপারে খুরাসানের নেতৃত্বও একমত ছিলেন। শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী[8], আয-যারক্বাউয়ির কাছে লেখা চিঠিতে ড. আইমান আয-যাওয়াহিরীর চিঠির উল্লেখ করে বলেন, “তারা (খুরাসানের নেতৃবৃন্দ) কিছু বিষয় এবং নির্দেশনাবলীর ব্যাপারে একমত হয়েছেন, যার সারসংক্ষেপ আপনি ডঃ সাহেবের চিঠিতে পাবেন, এবং এটাই আমাদের ভাইদের, বিশেষ করে শায়খদের, এবং উলামা–উমারাহ যারা এখানে আছেন তাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে।”[9]
এতো কিছুর পরও আয-যারক্বাউয়ি তো বলেন নি যে তারা (আল-ক্বা’ইদাহ্) পথভ্রষ্ট!
এবং শায়খ আতিয়াতুল্লাহ, যিনি উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্রই সদস্য ছিলেন, বলেছিলেন, “বরং সঠিক অবস্থান হল, তারা (রাফিদা) বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্তিযোগ্য, এবং রাফিদা শি’আদের সাথে সংযুক্ত সকলেই যে নিশ্চিত ভাবে কাফির, এমন না। বরং আমরা তাদের প্রত্যেককে তাদের বিশ্বাস এবং কাজের ভিত্তিতে উপযুক্ত শ্রেণীতে বিভক্ত করবো।”[10]
আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হল শুধু উসামাহ্ আর আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্ই না, বরং খোদ আইসিসের সবচেয়ে বড় তাত্ত্বিকরাও একই অবস্থানের কথাই ইতিপূর্বে বলেছে। তুর্কি বিন’আলী (তাদের প্রধান শার’ঈ) ইন্টারনেটে প্রচারিত অডিও রেকর্ডিং এ বলেছে:
“শি’আদের ব্যাপারে আলিমগণের মধ্যে মতপার্থক্য আছে…এবং ব্যক্তিগত ভাবেও প্রত্যেক শি’আ কি কুফরের উপর আছে, নাকি তাদের কুফর হল দলগত ভাবে কোন দলের কুফরের উপর থাকার অনুরূপ, সেটার ব্যাপারেও মতপার্থক্য রয়েছে…আমরা এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান এভাবেই উপস্থাপন করি যে, যখন সালাফগণ ইমামিয়্যাহ শি’আদের তাকফির করেছিলেন, তখনও তারা কি শুধুমাত্র দলগতভাবে কাফির নাকি তারা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে কাফির, এ ব্যাপারে সালাফগণের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংক্ষিপ্তভাবে এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হল, তাদের মধ্যে যারা দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং মুসলিমদের উপর শক্তি প্রয়োগ করেছে, তাদের প্রত্যেকের উপর ব্যক্তিগতভাবে তাকফির করা হবে, যেমন রাফিদা সরকার এবং রাফিদা মিলিশিয়াদের উপর। আর যারা তাদের মত না তাদের প্রত্যেকের অবস্থা আলাদা ভাবে বিচার করতে হবে। দেখতে হবে তারা কি সুস্পষ্টভাবে ইমান নষ্টকারী কোন কাজ করেছে কি না। এবং সে অনুযায়ী সে ব্যক্তির ব্যাপারে হুকুম হবে। যদি সে (সুস্পষ্ট ভাবে ইমান নষ্টকারী কোন আমল) করে থাকে তবে তার উপর তাকফির করা হবে। অন্যথায় করা হবে না। এবং আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।”
আরো অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে যে, বেশিরভাগের মুজাহিদিনের মতও এটিই। আবু মুস’আব আস-সুরী বলেন, “জা’ফরী শিয়া –‘আল-ইমামিয়্যাহ’, হল ইরানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, এবং লেবানন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যালঘু…এবং অধিকাংশ জিহাদি (জামা’আহ) এদেরকে গোমরাহ বিদা’আতি বলে মনে করে। যদিও কিছু জিহাদি শি’আদের ঢালাওভাবে কাফির ঘোষণা করেছে। তবে বেশিরভাগ জিহাদিরা শি’আদের মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত আহলুল ক্বিবলা (যারা ক্বা’বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করে) বলে গণ্য করে যারা গোমরাহ হয়েছে এবং বিদ’আতি।”[11]
বরং এমনকি শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসীও এই মতই গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই ব্যাপারে আমার মত হল, আমি মূলত এই ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়্যাহর মতের অনুসরণ করি যে শি’আদের সাধারণ জনগণের উপর তাকফির করা হবে না… শিয়াদের জনসাধারণদের মধ্যেও এমনও লোক আছে যারা কিনা সালাত অথবা সিয়াম বাদে (দ্বীনের) আর কিছুর ব্যাপারেই ধারণা রাখে না, এবং আক্বীদার ক্ষেত্রেও বিস্তারিত কোন জ্ঞানই তাদের নেই। যেমন, কুরআন বিকৃত হয়ে গিয়েছে এবং আরো শি’আদের এধরনের যেসব ঈমান ভঙ্গকারী আক্বীদাসমূহ রয়েছে, যেগুলো উপর ভিত্তি করে আহলুস সুন্নাহ রাফিদা শি’আদের উপর তাকফির করে, এরকম অনেক কিছুর ব্যাপারে সাধারণ শি’আদের অনেকেরই কোন ধারণাই নেই।”[12]
এবং শায়খ আল-মাক্বদিসীর এ বক্তব্য সত্ত্বেও, এবক্তব্যের প্রত্যুত্তর দেয়ার সময় শায়খ আয-যারক্বাউয়ি তাকে বলেন নি যে, “আপনি পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছেন কারণ শি’আদের সাধারণ জনগনকে আপনি কাফির ঘোষণা করেন না।” বরং তিনি তাকে বলেছেন, “হে মহান শায়খ! আপনি জেনে রাখুন, আমি নিজের ব্যাপারে সন্দেহপোষণ করতে পারি, কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে আপনার প্রতি সন্দেহকারীদের মধ্য হতে আমি নই… শেষ করার আগে আমি বলতে চাই, শায়খ মাক্বদিসী, আল্লাহ তাকে হিফাযাত করুক, হচ্ছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের মর্যাদা এবং প্রচেষ্টার প্রতি সবার খেয়াল রাখা উচিৎ। এবং তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের ব্যাপারে শুধুমাত্র সুধারনাই রাখা যায়। এবং যারা অজুহাত পাবার এবং ভুলের ক্ষেত্রে ক্ষমা পাবার সর্বাধিক যোগ্য। এবং আমি মনে করি না যে বর্তমানে এমন কোন মুওয়াহিদ (তাওহিদের অনুসরণকারী) আছে, যে কিনা শায়খের দ্বারা উপকৃত হয় নি, যে শায়খের কাছে কৃতজ্ঞ না। সুতরাং যদি কোন ব্যাপারে তার ভুল হয়ে থাকে তবে তার অর্থ এই না যে, তার অবস্থান এবং জ্ঞানকে অপমান করতে হবে, এবং তার অতীত অবদান এবং ত্যাগকে ভুলে যেতে হবে।”[13]
এবং শি’আদের ব্যাপারে শায়খ আল-মাক্বদিসী এরকম অবস্থান গ্রহন করা সত্ত্বেও আইসিস চেষ্টা করেছিল শায়খকে নিজেদের দলে টানার, এবং তখন তারা বলে নি শায়খ পথভ্রষ্ট হয়ে গেছেন। তুর্কি আল-বিন’আলি তার প্রাক্তন শিক্ষক শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল – “বস্তুত আমীরুল মু’মিনীন আবু বকর আল-বাগদাদি, আল্লাহ তাকে হিফাযাত করুক, আপনাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি আপনাকে তার কাছে নিয়ে আসতে পারেন, কিন্তু আপনি সেটাতে সক্ষম হন নি, যদিও সে সময় আপনি একাধিকবার গাযা ও খুরাসানে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।”[14]
অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে, যাদের মানহাজই ভুল (আইসিসের দাবি অনুযায়ী), একদিকে আইসিস তাদেরকে নিজেদের দলে আনার চেষ্টা করছে কিন্তু সিরিয়ার কোন দলে যদি কোন ধূমপায়ী থাকে তখন সেটার কারনে তারা সে দলের সমালোচনায় উঠে পড়ে লাগছে!
আর ঢালাও ভাবে সব রাফিদাকে হামলার নিশানা না বানানো যদি গোমরাহি হয়, তাহলে আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ি গোমরাহদের অন্তর্ভুক্ত। কারন তিনি রাফিদাদের কিছু অংশকে হামলার লক্ষ্য বানানো থেকে বিরত থেকেছিলেন। এ ব্যাপারে ১৫ই শাবান, ১৪২৬ হিজরি, সোমবার (১৯/০৯/২০০৫) তানযীম আল-ক্বা’ইদাহ্ ফী বিলাদ আর-রাফিদাইনের পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল (দুই নদের দেশের আল-ক্বা’ইদাহ্র পক্ষ থেকে সংগঠনে অবস্থানের ব্যাপারে শায়খ আবু মুস’আবের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু সংশয়ের নিরসন -“Clarification from Al Qaida in the Land of the Two Rivers regarding the stance of the organization after the statement of the Sheikh Abu Mus’ab”]। এ বক্তব্যে বলা হয়েছিল, “সংগঠনের কাছে এই ব্যাপারটি স্পষ্ট যে (রাফিদাদের অন্তর্ভুক্ত) কিছু গোষ্ঠি আছে যারা সুন্নীদের গণহত্যায় অংশগ্রহণ করে নি, এবং আরো কিছু আছে যারা দখলদার বাহিনীকে কোন সহায়তা দেয় নি, এবং তাদের দখলদারদের অপরাধের বিরোধিতা করেছে। যেমন সাদরী, খালিসী, হাসানী এবং আরো অন্যান্যরা। তাই সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এ দলগুলোর নেতা এবং সাধারণদের উপর সংগঠন কোনপ্রকার হামলা চালাবে না, যতক্ষণ এ দলগুলো (সুন্নীদের উপর) আক্রমণের কোন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকবে।”
এ অব্যহতির ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ি বলেছিলেন, “তাদের এই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, কারণ রাফিদাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা এর মাধ্যমে আহলুস সুন্নাহ সাথে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ার ফলাফলকে ভয় করে। তাই এধরনের রাফিদাদের এই সুযোগটা দেয়া দরকার যাতে করে আমরা তাদের বলতে পারি, ‘তোমরা যদি নিরাপত্তা চাও তবে আমাদের পথ হতে সরে দাড়াও, এবং আমরিকাকে সাহায্য করা বন্ধ কর, এবং আমাদের এবং ক্রুসেডরদের যুদ্ধে কোন বাধা সৃষ্টি করো না।‘”[15]
শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী (উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র সময়ে) সায়্যিদ ইমামের যুক্তিখন্ডন এবং শায়খ আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ির কথার অর্থকে স্পষ্ট করতে বলেন, “অতঃপর বইটিতে শি’আ এবং শি’আদের হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। আমি একটি ব্যাপার স্পষ্ট করতে চাই, তা হল যে তেল’আফারের ঘটনার পর, যেখানে শি’আ মিলিশিয়ারা মুসলিমদের সম্মানের উপর চরম যুলুম চালিয়েছিল, আমাদের শহীদ ভাই আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ি, আল্লাহ তার উপর রহম করুক, একটি বার্তা প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ইরাকে সকল শি’আদের বিরুদ্ধে সর্বাত্বক যুদ্ধের ঘোষণা দেন। এ বার্তার ব্যাপারে মিডিয়ার খুব আগ্রহ ছিল। এর দুইদিন পর তানযীম আল-ক্বা’ইদাহ্ ফী বিলাদ আর-রাফিদাঈন একটি বার্তা প্রকাশ করে, যেটাতে তেল আফারের ভয়ঙ্কর ঘটনার প্রেক্ষিতে যে বার্তা প্রকাশ করা হয়েছিল সেটির অস্পষ্ট অংশগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। সেখানে স্পষ্ট করা হয় যে আল-ক্বা’ইদাহ্ ফী বিলাদ আর-রাফিদাঈন শি’আদের জনসাধারণদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাবে না, বরং বদর ব্রিগেডের মতো ভাড়াটে মিলিশিয়া গুলোর উপর হামলা চালাবে। তবে মিডিয়া এ বার্তাটি এড়িয়ে যায়।[16]
অন্যদিকে যদি দাওয়াহ না বরং শি’আদের সাথে সর্বাত্বক ভাবে যুদ্ধ করাই একমাত্র সঠিক অবস্থান হয়, তাহলে দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহর আমির, আবু উমার আল-বাগদাদিও গোমরাহ। কারন তিনি রাফিদাদের প্রতি বলেছিলেন, “তাওবার দরজা এখনো তোমাদের জন্য খোলা, এবং এরকম ভেব না যে আমরা তামকীন পেলে/কতৃত্ব অর্জন করলে তোমাদের সকলকে হত্যা করে ফেলবো বা তোমাদের সমূলে ধ্বংস করে ফেলবো; কারণ শরীয়াহর নিয়মের অনুসরণ ছাড়া বাছবিচারহীন হত্যা আল্লাহর দ্বীনে হারাম করা হয়েছে। তোমাদের সাথে আমরা সেভাবেই বোঝাপড়া করবো যেভাবে শরীয়াহ আমাদের তোমাদের মতো যারা আছে তাদের প্রতি আচরণের নির্দেশ দেয়, আর তা হল সত্যের আহবান, সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দান, সন্দেহ দূরীকরণ এবং এসকল ক্ষেত্রে কোমলতার পন্থা অবলম্বন। আর যে তা প্রত্যাখ্যান করবে, সে জেনে রাখুক বিচার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর জন্যই।“[17]
তাহলে এসব গুলো বিবৃতির দ্বারা বোঝা যায় যে,
– উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্ও গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট ছিল কারণ উসামাহ্র সময়েও বার বার শি’আদের ব্যাপারে ঐ একই অবস্থানের কথা বলা হয়েছে যা আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্র সময় বলা হচ্ছে।
– অধিকাংশ জিহাদী জামা’আই বিভ্রান্ত
– আবু উমার আল-বাগদাদিও একইরকমভাবে গোমরাহ ছিল
– আবু বাকর আল-বাগদাদির রাষ্ট্র এধরণের “বিভ্রান্ত” লোকদের নিজেদের সাথে ভেড়াতে চাচ্ছে, কিন্তু অন্য দলগুলো একই কাজ করলে তারা সেটা মানতে রাজি না!
– শায়খ আয-যারক্বাউয়ির কাছে গোমরাহির সংজ্ঞা আর যারা দাবী করে যে তারা তার পথে আছে, তাদের মধ্যকার “বিভ্রান্তির” সংজ্ঞা এবং মানদন্ড একই না!
এক মানহাজ যা অহিংসবাদে বিশ্বাসী
আদনানি দাবি করে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্র বিচ্যুতিসমূহের মধ্যে একটি বিচ্যুতি হল এই যে, আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্ শান্তিপূর্ণ পন্থায় কাজ করায় বিশ্বাসী। কিন্তু উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্ শান্তিপ্রিয় পন্থায় বিশ্বাসী ছিল না। “এ কখনোই আমদের মানহাজ ছিল না, আর কখনো হবেও না” শিরোনামের বার্তাটিতে আল-ক্বা’ইদাহ্ কোন কোন ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হয়েছে তার আলোচনায় আদনানি বলেছিল – “কিন্তু এ বিষয়টি হল দ্বীনের বিকৃতির ও পথভ্রষ্টতার, ব্যাপারটা হল মিল্লাতু ইব্রাহীমের দাওয়াহ, তাগুত ও তার অনুসারীদের বর্জন এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার পরিবর্তে অহিংসবাদে বিশ্বাসী এক পথ বেছে নেয়ার।“
এবং ইতিপূর্বে “অহিংসবাদ কাদের ধর্ম?” বার্তাটিতে আদনানি সে যেসব বিষয় উত্থাপন করেছিল তার মধ্যে কয়েকটি হল –
১- অহিংসবাদের জায়গা হল আস্তাকুড়ে! এবং এর দিকে আহবান হচ্ছে বাতিলের দিকে আহবান!
২- শান্তিপূর্ণ অবস্থান না সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, আর না পারে বাতিলকে অপসারণ করতে! কেউ যদি এর বিপরীত দাবী করে, সে যেন নিজেকে নবীজী ﷺ এর চেয়েও বেশী জ্ঞানী এবং দয়ালু দাবী করল, এবং দাবি করলো তার নির্দেশনা নবীজীর ﷺ নির্দেশনার চেয়ে উত্তম।
৩- আর যে বলে যে আল্লাহর দ্বীন শান্তিপূর্ণ অহিংস পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত হবে, সে তো আল্লাহর কিতাব এবং নবীজী ﷺ এর সুন্নাহকে পেছনে ছুড়ে ফেলে নিজের নফসের অনুসরণ করেছে।
৪- অহিংসবাদের ফিকহ হচ্ছে, পরাধীনতা, পদাবনতা আর দাসত্বের ফিকহ।
৫- যারা কিনা শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি ও অহিংসবাদের দিকে আহবান জানায়, তাদের চাইতে ঐ মুরগীর সাহস বেশি যে কিনা নিজের ছানাগুলোকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করে!
অর্থাৎ “আল-ক্বাইদাহ্ বদলে গেছে” – আদনানির এ কথার অর্থ হল, আল-ক্বা’ইদাহ্ জিহাদ ত্যাগ করেছে এবং অহিংসবাদ ও শান্তিপূর্ণ পন্থার অনুসারিতে পরিণত হয়েছে।
অথচ আল-ক্বা’ইদাহ্র যোদ্ধারা আজো অস্ত্র ধারণ করে আছে এবং ক্বিতাল চালিয়ে যাচ্ছে!
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ পন্থাকে গ্রহন করা, আর কোন ক্ষেত্রে অনেকগুলো উপায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পন্থাকে একটি পন্থা হিসেবে গ্রহন করার মধ্যে পার্থক্য আছে।
শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী, যিনি কিনা উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্তে ছিলেন এ ব্যাপারটির ব্যাখ্যায় বলেন-
“মূলত আল-ক্বা’ইদাহ্ এবং এর মুজাহিদগণ সর্বক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ উপায় কাজ করার বিরোধিতা করেন না। তাদের কোন বক্তব্যেও আপনি এমন কিছু পাবেন না। বরং তারা কুফর এবং যুলুমের বিরুদ্ধে সাধ্য অনুযায়ী শরীয়াহ সম্মত সকল উপায়ে প্রতিরোধ গড়ার আহবান করে থাকেন। আর এসকল পদ্ধতির শিখর ও মূল ভিত্তি, উভয়ই হল জিহাদ। মুজাহিদরা যে ব্যাপারটির বিরোধিতা করেন, তা হল শান্তিপূর্ণ পন্থাকেই সম্পূর্ণভাবে জিহাদের বিকল্প হিসেবে গ্রহন করা ও দাবি করা। জিহাদের পথ হল প্রস্তুতি ও আসলিহাত অর্জন করার, অস্ত্রের মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায় আঘাত করা, ক্বিতাল করা এবং বিস্ফোরণের। শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে এ পথের অনুরূপ বিকল্প গণ্য করার বিরোধিতা মুজাহিদিন করে থাকেন। তবে যদি কোথাও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে শরীয়াহর সীমারেখার বাহিরে না গিয়ে কোন লক্ষ্য অথবা লক্ষ্যের কিছুটা হলেও অর্জন সম্ভব হয়, তবে মুজাহিদরা কখনোই বাধা দেন নি। আর আল-ক্বা’ইদাহ্র নেতৃবৃন্দই তো কত বার এ রকম জনপ্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলন ও অবরোধ-সমাবেশের প্রতি জনগণকে আহবান করেছেন!”[18]
উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র সময়েই শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীকে একটি সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়, “ইতিপূর্বে আপনার দেওয়া বক্তব্যগুলোতে যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের দিকে আহবান করে আপনি তাদের সমালোচনা করেছেন; অথচ আজ আমরা শুনছি আপনি রাজনৈতিক আন্দোলন, সভা-সমাবেশ আর অবরোধের প্রতি মানুষকে আহবান করছেন”।
এ প্রশ্নের উত্তরে শায়খ আইমান বলেন-
“না! আমি সমালোচনা করেছি তাদের, যারা দেশের শাসক শ্রেণী এবং ক্রুসেডার হানাদারদের বিরুদ্ধে বিরোধিতাকে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য সীমাবদ্ধ রাখার প্রতি আহবান করে। আর এ শ্রেণীর চাইতেও নিকৃষ্ট হল তারা যারা শাসক ও ক্রুসেডার হানাদারদের বিরুদ্ধে যারা জিহাদ করে এবং জিহাদের আহবান জানায়, তাদের বিরোধিতা করে। তবে জনসমাবেশ এবং এ জাতীয় কর্মসূচিগুলো মূলত জিহাদী কার্যক্রমকে পরিপূর্ণতা দেয় ও সহায়তা করে।”[19]
সুতরাং আদনানির এ অভিযোগের জবাবকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১) শায়খ উসামাহ্র ইন্তেকালের পর আল-ক্বা’ইদাহ্ কি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে জিহাদের বিকল্প হিসেবে গ্রহন করেছে?
২) শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিকে একটি বৈধ পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা কি পথভ্রষ্টতার প্রমাণ?
প্রথমটির ক্ষেত্রে, আমরা এমন কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করবো যার দ্বারা আদনানির মিথ্যাচারের স্বরূপ উন্মোচিত হবে।
শায়খ হুসাম আব্দুল রাউফ, যিনি খুরাসানের নেতৃবৃন্দের অন্তর্ভুক্ত, বলেন, “যারা বলে যে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা ও রাজনৈতিক যে পরিস্থিতির কারনে মুসলিমরা ক্রমাগত অপমানিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে, একে শান্তিপূর্ণ জনপ্রিয় আন্দোলনের পদ্ধতির মাধ্যমে বদলানো সম্ভব, তাদের প্রতি আমরা বলি, “আপনারা দ্বীনের একটি অংশ গ্রহণ করেছেন। এবং দ্বীনের যে একটি অংশ আপনারা গ্রহন করেছেন শুধু এটুকুরই সঠিক রূপ ও প্রয়োগ পদ্ধতি যদি আপনারা ভালোভাবে অনুধাবন করতেন তাহলেও আমাদের একটি চাওয়া পূর্ণ হতো। আর আপনারা যে অংশগুলো বাদ দিয়েছেন সেগুলো হল, জিহাদ, হুদুদের প্রয়োগ, হিসবাহ (তত্ত্বাবধান), এবং অন্যান্য বল প্রয়োগ ও নিবৃত্ত করার অন্যন্য পদ্ধতি যেগুলোর দ্বারা প্রথম অংশের (যে অংশটি আপনারা গ্রহন করেছেন) স্বাভাবিক প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা অর্জিত হয়। অর্থাৎ দ্বীনের একটি অংশ হল “দিকনির্দেশনা দানকারী কুরআন” এবং অপরটি হচ্ছে “সাহায্যকারী তলোয়ার”। নিশ্চয়ই আল্লাহ কুরআন দিয়ে যা প্রতিহত করেন না, সেটাকে তিনি শক্তি দ্বারা প্রতিহত করান।”[20]
শায়খ আবু দুজানা আল-বাশা আল-বাসিসী বলেন, “এইসব অপরাধীরা তাদের কথা এবং কাজের মাধ্যমেই তারা যেটাকে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি বলে সেটার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে, কারণ তাদের অভিধান অনুযায়ী অহিংস পদ্ধতির অর্থ হচ্ছে নিজেদের খেয়াল খুশির কাছে আত্মসমর্পণ করা। সত্য হচ্ছে, যে ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই, সত্যের বল প্রয়োগ ব্যতীত বাতিলকে সরানো যাবে না, ধ্বংস করা যাবে না। আর যারা বল প্রয়োগ ব্যতীত শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাতিলকে প্রতিরোধের কথা বলে, তারা মূলত বিভ্রান্তির অথৈ সাগরে হাবডুবু খাচ্ছে, এবং তাদের রক্তের সাগরে হাবুডুবু খাবারও প্রবল সম্ভাবনা আছে, এবং তাও কোনরূপ লক্ষ্য অর্জন ব্যতিরেকেই! এবং এ বিষয়টি এখনো পর্যন্ত আমাদের ভূখন্ডগুলোতে যতোগুলো বিপ্লব কিংবা বিপ্লবী আন্দোলন হয়েছে, প্রতিটির ক্ষেত্রেই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ ব্যাপারটি বোঝার জন্য এতো গভীর চিন্তারও দরকার হয় না, সামান্য মগজ আর সদিচ্ছা থাকাই যথেষ্ঠ।”[21]
আযযাম আল-আম্রিকি[22] বলেন, “যারা বলেন জিহাদ, শুহাদা এবং মূল্যবান সকল কিছুর আত্মত্যাগ ছাড়াই শুধু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমেই পরিবর্তন আনা সম্ভব, তাদের প্রতি জবাব হল- সাম্প্রতিক এসব ঘটনাবলীর মাধ্যমে জিহাদী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সেসব কথার সত্যতাই প্রমাণিত হয়েছে যা তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, আর তা হলঃ ভোট কিংবা বিভিন্ন রাজনৈতিক খেলার নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনা যাবে না। আর না-ই বা পরিবর্তনা আনা যাবে ত্বাগুত এবং তাদের পশ্চিমা প্রভুদের দরজায় ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে, তোষামোদী, আপোস অথবা পশ্চাদপসরণের মাধ্যমে।”[23]
একই জায়গায় তিনি আরো বলেন, “যারা গোঁ ধরে যে, বিপ্লব হতে হবে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ, রক্তপাতহীন বা তাদের ভাষায় “অহিংস বিপ্লব”; যেখানে এমনকি হাক্বের জন্যও এক ফোঁটা রক্তপাত হবে না, তারা আসলে বিপ্লবের ইতিহাসই পড়ে নি।”[24]
তিনি আরও বলেন, “যদি আমরা এই দুনিয়া আকড়ে পড়ে থাকার প্রতি আগ্রহী হয়ে পরিপূর্ণ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ বেছে নেইও, তবুও তারা (তাগুত ও হানাদার ক্রুসেডার) অনন্তকাল পর্যন্ত আমাদেরকে হত্যা করতেই থাকবে।“[25]
তিনি আরো বলেন, “সুতরাং হে লিবিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, মিশর, ইয়েমেন এবং পুরো অঞ্চলের জাগ্রত মুসলিম বীরেরা! আপনারা দেখেছেন এবং জেনেছেন যে পরিবর্তন এবং স্বীয় অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া কখনো ভোটাভুটি অথবা বিভিন্ন রাজনৈতিক খেলায় অংশগ্রহণ, অথবা ত্বাগুত এবং তাদের পশ্চিমা প্রভুদের দরজায় মাথা নত করে ভিক্ষাবৃত্তি ও তোষামোদী, অথবা আপোস এবং বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে আসবে না। বরং এটি আসবে ধৈর্যের সাথে ইসলামের আদর্শ ও মূলনীতির উপর অবিচল থাকার মাধ্যমে। লক্ষ্যের উপর দৃঢ় থেকে উত্তরোত্তর ধৈর্যের বৃদ্ধির সাথে সাথে আত্বত্যাগ, শাহাদাত, জিহাদ এবং ক্বিতালের মাধ্যমে।”[26]
এবং “ত্যাগ ও শাহাদাতের উম্মাহ” – শীর্ষক বক্তব্যে তিনি আরো বলেছেন “মিশরের জন্য আজ দরকার হল দাওয়াহ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জিহাদ ও ক্বিতাল”।
যদি আসলেই তাগুতের বিরুদ্ধে জিহাদের পরিবর্তে আল-ক্বা’ইদাহ্ কোন নতুন মানহাজ গ্রহন করে থাকে, এবং তারা যদি আসলেই অহিংসবাদে বিশ্বাসী হয়ে থাকে, তাহলে কেন মিশরের জন্য সমাধান হিসেবে তিনি “জিহাদ”-কে উল্লেখ করলেন?
“মুসলিমদের গৌরব এবং অপরাধীদের লাঞ্ছনা” নামক বার্তায় আয্যাম আল-আম্রিকি বলেন, “হে লিবিয়ার মুসলিম ভাইয়েরা! তারা আপনাদের বলে তাগুতের অপসারণের মাধ্যমেই নাকি বিপ্লব শেষ হয়ে গিয়েছে। না! আপনাদের বিপ্লব এখনো শেষ হয় নি, এবং ততোক্ষন শেষ হবে না, যতোক্ষণ না লিবিয়াতে শরীয়াহ দ্বারা পরিচালিত ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই সে দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরুন, যা আপনাদের বিষয়গুলোকে সংরক্ষণ করে, এবং দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরুন আপনাদের অস্ত্রগুলোকেও, যার মধ্য রয়েছে সুরক্ষা, শক্তি এবং সম্মান।”
যদি আল-ক্বা’ইদাহ্ অহিংসবাদে বিশ্বাসী হয়, জিহাদের বদলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে নিজেদের মানহাজ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, তবে কেন তারা অস্ত্র দৃঢ় ভাবে আকড়ে ধরার উপদেশ দিচ্ছে? নাকি শান্তিপূর্ণ, অহিংস আন্দোলনে অস্ত্রের প্রয়োজন হয়?!
উস্তাদ আব্দুল্লাহ আল-আদম[27] বলেন, “লিবিয়ান বিপ্লব হত্যাকারী যালিমদের বিরুদ্ধে বিজয়ের ও তাদের সমূলে উৎপাটিত করার একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যান্য যেসব সমাজ লিবিয়া যা অর্জন করেছে সেরকম অর্জন করতে চায়, তাদেরও লিবিয়ানদের মত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যে দিয়েই তা অর্জন করতে হবে। কারন এ অনিবার্য।[28]
(আইসিসের দাবি অনুযায়ী) যারা নাকি জিহাদ-ক্বিতালকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছে, তারাই তৎকালীন সময়ের একমাত্র সশস্ত্র বিদ্রোহকে “চমৎকার দৃষ্টান্ত” বলেছেন…হুম…চিন্তার বিষয়…!
ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী তার “নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতা” নামক বার্তায় বলেন, “এই প্রশ্ন আসতে পারে যে এ “নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত” এর বিকল্প কি হতে পারে? বিকল্প হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তার সাহাবাদের সুন্নাহ, আর তা হচ্ছে দাওয়াহ এবং জিহাদ।”
যদি তিনি অহিংস পদ্ধতিতেই বিশ্বাসী হতেন, তবে তার জন্য দাওয়াহ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য বের হতে বলাটাই অধিক উপযুক্ত হতো না?
একইভাবে দুই পবিত্র মসজিদের ভূমির অধিবাসীদের উদ্দেশ্য “ওয়াহী নাযিল ও ইসলামের শেকড়ের ভূমির মুসলিমদের প্রতি” – শীর্ষক বার্তায় শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেন – ‘ন্যায়নিষ্ঠ বীরদের পদাঙ্ক অনুসরণ করুন, যেমন: উসামাহ্ বিন লাদিন, আনওয়ার আল-আওলাকি, আব্দুল্লাহ্ আর-রাশুদ, ইউসুফ আল’উয়াইরি[29] ও খাত্তাব- আল্লাহ তাদের সকলের উপর রহমত বর্ষন করুন।’
আব্দুল্লাহ আর-রাশুদ আর ইউসুফ আল-‘উয়ায়রি কি তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা দুই পবিত্র মাসজিদের ভূমিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বের হয়েছিলেন? নাকি তারা অস্ত্রসহ বের হয়েছিলেন?
আস-সাহাব ফাউন্ডেশনের সাথে সপ্তম সাক্ষাৎকারে ড. আইমানকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি যে পরিবর্তনের কথা বলছেন, সেটি কীভাবে আসবে? সেটির উত্তর আপনার কাছ থেকে চাই। আমি আরও উত্তর চাই- যে ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যে জিজ্ঞেস করেছিলাম- সেনাবাহিনী ও তাদের সেক্যুলার মিত্রদের বিরুদ্ধে যে জনবিদ্রোহ শুরু হয়েছে, আপনি কি মনে করেন, এই পথে কোনো রকমের সাফল্য সম্ভব?’
ড. আইমান প্রতিউত্তরে বললেন, ‘আমি আপনার কাছে এ ব্যাপারে ‘আমভাবে প্রযোজ্য একটি নিয়ম উল্লেখ করছি। দ্বীন, সম্মান, সম্পদ ও জীবনের সুরক্ষার জন্য যালিমের যুলুমের প্রতিরোধ করা মযলুমের অধিকার; সেটি হতে পারে কথার মাধ্যমে অথবা প্রতিবাদের মাধ্যমে কিংবা লড়াইয়ের মাধ্যমে… এটিই স্বাভাবিক নিয়ম। অপরাধী যালিমের কোনো অধিকার নেই যে মজলুম কীভাবে প্রতিরোধ করবে তা সে নির্ধারণ করে দেবে, বরং স্বাভাবিকভাবেই সব বৈধ উপায় মযলুমের জন্য খোলা রয়েছে এবং কারও অধিকার নেই যালিমের বিরুদ্ধে কোনো বৈধ প্রতিরোধে মযলুমকে বাধা দেবে। আমেরিকা ও পশ্চিমারা চায়, তাদের ও তাদের দালালদের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ্র প্রতিবাদ যেন শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।’[30]
আমি বলি, যদি আল-ক্বা’ইদাহ্ জিহাদ-ক্বিতালের বিপরীতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে গ্রহণ করে থাকে, তারপরও তারা কেন বলে যে, লড়াই হচ্ছে অনেকগুলো সমাধানের মধ্যে একটি? তারা অবশ্যই বলত, ‘আমরা ও অ্যামেরিকা একমত হয়েছি, সমাধান শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যেই হতে হবে!’
একই সাক্ষাৎকারে তাকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়, ‘তবে সেখানে জিহাদি কার্যক্রম রয়েছে ও সশস্ত্রভাবে শাসকের বিরোধিতা করা হচ্ছে, এই ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?’
ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেন, ‘এমন প্রতিটি জিহাদি কার্যক্রমের জন্য আমরা দু’আ করি যা পরিচালিত হয় যায়নিস্ট, অ্যামেরিকার স্বার্থ ও ঐসব সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যারা ইস্রাইলের সীমান্তরক্ষী ও মুসলিম ভূখন্ডগুলোর অভ্যন্তরীণ অপরাধীদের রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে।“[31]
তিনি যদি জিহাদের পরিবর্তে অহিংসবাদকেই গ্রহণ করতেন, তবে নিশ্চয় তিনি জিহাদ ও ক্বিতালের জন্য দু’আ না করে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের উপদেশ দিতেন।
আস-সাহাব ফাউন্ডেশন থেকে প্রচারিত, ‘অতীত থেকে শিক্ষা এবং ভবিষ্যতের জন্য আশা’ নামক বার্তাটির শেষের দিকে মিশরীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আনসার আল-বাইতিল মাকদিসের একটি অপারেশনের প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ব্যাপারে আল-ক্বা’ইদাহ্র বিশ্বাস আছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেটার অস্তিত্ব কোথায় তাহলে?!
আল-ক্বা’ইদাহ্ ফি মাগরিব আল-ইসলামিয়্যাহর আমির শায়খ আবু মুস্য়াব আব্দুল ওয়াদুদ তার ‘উমার আল-মুখতারের ওয়ারিশদের প্রতি অভিনন্দন’ নামক বার্তায় লিবিয়ার বিপ্লবকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। অথচ লিবিয়ার বিপ্লব শান্তিপূর্ণ নয় বরং একটি সশস্ত্র বিপ্লব ছিলো! যদি আল-ক্বা’ইদাহ্ জিহাদ-ক্বিতাল বর্জন করে শান্তিপূর্ণ মানহাজ গ্রহণ করেই থাকে- যেমনটি আদনানি দাবি করেছেন- তবে তিনি কীভাবে তা সমর্থন করলেন?!
দ্বিতীয়তঃ শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিকে একটি বৈধ পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা কি পথভ্রষ্টতার প্রমাণ?
অর্থাৎ, যারাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অনুমোদন করেছে অথবা সমর্থন করছে, তারা সবাই কি বিপথগামী? যদি তাই হয়, তাহলে নিচে আমরা যাদের কথা তুলে ধরতে যাচ্ছি তারা সবাই বিপথগামী –
“ইসলামের শহীদের (আমরা তাকে গণ্য করি) বক্তব্য” – শীর্ষক শায়খ উসামাহ্র শেষ বার্তাতে তিনি বলেছেন –
‘আমার মুসলিম উম্মাহ্, আমরা আপনাদের সাথে এই মহান ঐতিহাসিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি… উম্মাহ্ অনেক দিন ধরে বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করছে, যেটির সুসংবাদের সূচনা প্রাচ্য থেকে এসেছে। এরপর হঠাৎ করেই পশ্চিম থেকে বিপ্লবের সূর্য উদিত হলো এবং তিউনিসিয়া থেকে বিপ্লবকে তা উদ্ভাসিত করলো। পুরো উম্মাহ এর সহযোগী ও সমর্থক হবার ইচ্ছা পোষণ করলো, তাদের অন্তর হলো আনন্দিত, শাসকদের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে এল এবং অনিবার্য প্রতিশ্রুতির আগমনের ব্যাপারে ইয়াহুদিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। তেমনি যালিমের পতনের মাধ্যমে অপমান, অবনমন, ত্রাস, হিংস্রতার বিপরীতে জাগ্রত হলো মুক্তি, সম্মান, সাহস ও নির্ভীকতা। মুক্তির জন্য পরিবর্তনের বাতাস বইতে লাগলো। তিউনিসিয়া এর নেতৃত্ব নিলো এবং তিউনিসিয়ার মানুষের প্রজ্জ্বলিত এই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের আলো, মিসরের যোদ্ধাদেরকেও তাহরির স্কয়ারের দিকে উদ্ধুদ্ধ করলো, এক মহান বিপ্লবের গোড়াপত্তন হলো, এক মহান বিপ্লব!!’
সুতরাং এটি নিশ্চয় একটি ইঙ্গিত যে, শায়খ উসামাহ্ শান্তিপূর্ণ বিপ্লবে বিশ্বাসীদের একজন! এজন্যই তিনি এই শান্তিপূর্ণ বিপ্লব ‘মহান ঐতিহাসিক ঘটনা’ ও ‘মহান বিপ্লব’ বলেও উল্লেখ করেছেন!
এমনকি অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে, আইসিস নিজেরাও কিছু দেশে শান্তিপূর্ণ পন্থা অবলম্বনের প্রতি আহবান করেছে এবং অনুমোদন করেছে! আর তারা তিনটি আলাদা জায়গায় শান্তিপূর্ণ পন্থাকে অসৎ কাজের নিষেধ বলেও উল্লেখ করেছে!
১- প্রথমটি হলো, ইরাকে দাবি আদায়ের জন্য আহ্লুস সুন্নাহ্র শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচীর ব্যাপারে তারা ‘আহলুস্ সুন্নাহর স্বাধীন জনসাধারণের জন্য প্রতিশোধের তৃতীয় ঢেউ”- শিরোনামে একটি বক্তব্য প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে তারা বলে:
‘আমরা আবারও সেইসব মুসলিমদের অভিনন্দন জানাতে চাই, যারা তাদের দ্বীন ও ইয্যতের জন্য- বন্দী মুসলিম বোনদের উদ্ধারে জন্য, যুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য- এবং আহ্লুস্ সুন্নাহর ওপর ক্রুসেডার সমর্থিত অপরাধী চক্র যা করে যাচ্ছে, যারা মুসলিমদের ওপর নিকৃষ্ট সাফাওয়ি বিষ পান করিয়ে যাচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে জাগ্রত হয়েছে। আমরা তাদের জানাচ্ছি, ‘নিশ্চয়ই আপনাদের মুজাহিদ সন্তানেরা কখনোই আপনাদের পরিত্যাগ করবে না, ইনশাআল্লাহ্ এবং আপনারা সবসময়, সবখানে যেখানেই আপনারা দ্বীনের স্বার্থে ও যুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থা নেবেন আপনারা তাদেরকে আপনাদের সামনের কাতারে পাবেন। আমরা আপনাদের শয়তানের দালালদের ব্যাপারে সতর্ক করছি, যারা মুজাহিদদের ব্যাপারে গুজব ছড়াচ্ছে যে, মুজাহিদরা নাকি আপনাদের বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের বিরুদ্ধে– অথচ এটি মিথ্যা ও মনগড়া কথা ছাড়া আর কিছুই নয়, এতে বিচক্ষণ ও বিশ্বাসীদের প্রতারিত হওয়া উচিত হবে না। কিন্তু আমার আপনাদের আবারও আহবান করছি এবং মনে করিয়ে দিচ্ছি আপনাদের সকল কর্মসূচির যেন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। বিশ্বাসঘাতকদের প্রতারণা এবং আপনাদের প্রচেষ্টা থেকে সবসময় সুবিধা পাওয়ার সন্ধানে থাকা চোরেরা আপনাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ব্যর্থ হওয়ার কারণ হতে পারে, আর তা সাফাওয়ি ইরানিদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপনাদের কোনঠাসা করে মালিকির সাম্প্রদায়িক অপরাধী প্রশাসনকে সুবিধা দেবে… এবং মনে রাখবেন হে লোকসকল, আল্লাহ্ যাদের বিশ্বাসঘাতকদের কাতারে ফেলবেন- যারা কিনা দ্বীন ও সম্মান বিক্রি করে- তারা আপনাদের অধিকার বিনষ্টের কারণ হবে, এরা কখনোই সম্মান-মর্যাদা রক্ষায় ও অধিকার অর্জনে কাজে আসবে না।’
আমরা এই বার্তায় তিনটি ব্যাপার দেখতে পাই:
- এ বার্তাটিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে বলা হয়নি!
- এ বার্তার মূল বক্তব্য হল, আইসিস বার্তায় উল্লেখিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর বিরুদ্ধে না।
- এ বার্তাতে শয়তানের দালালদের যে বর্ননা দেওয়া হয়েছে সেটা অনুযায়ী আদনানি নিজেই একজন শয়তানের দালাল, কারণ এ বার্তার বক্তব্য অনুযায়ী মুজাহিদিন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও আন্দোলনকে জায়েজ মনে করে না এমন গুজব শুধু শয়তানের দালালরাই ছড়ায়।
নোট: কেউ হয়তো বলতে পারেন যে- এই বার্তাটি বানোয়াট, এটি যে ইসলামিক স্টেটের, এর কোনো প্রমাণ নেই। মূলত, এটি হচ্ছে তাদের অফিসিয়াল বার্তা, যা শুমূখ ফোরামের ‘দাউলাতুল ইসলামের সকল বিবৃতি’ বিভাগে এখনও সংরক্ষিত আছে এবং এটি আল ফাজর মিডিয়া সেন্টার থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো! এবং এটি ‘মুরাসিল আশ-শুমুখখ’- থেকেও প্রচার করা হয়েছিল। যেখান থেকে শুধুমাত্র অফিসিয়াল বার্তাই প্রচার করা হয়।
২- দ্বিতীয়ত, দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহর মাজলিশ শূরা সদস্য আবু উবাইদা আল-ইরাকি এবং জিহাদি মিডিয়ার উর্ধ্বতনদের মধ্যে একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এ সাক্ষাৎকারটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ‘Elites of the Jihadi media’ এবং “আল-ফুরক্বান” মিডিয়ার সমন্বয়ে। উল্লেখ্য আল-ফুরক্বান হল আইসিসের অফিশিয়াল মিডিয়া। সাক্ষাৎকারটিতে আবু উবাইদা সেই শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের ব্যাপারে যা বলেন:
‘…এর মানে এই নয় যে, আন্দোলন সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলতে হবে অথবা এর অর্জন সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করতে হবে- যেমনটি অনেকে করছে- কারণ যা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি, সেটির জন্য যতটুকু অর্জিত হয়েছে তা বর্জন করা উচিত নয়। বরং এখনও তাওয়াগিত শাসকদের বিরুদ্ধে যে কোনো বৈধ পথে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমরা আহ্বান করছি। আমরা এটিকে আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদের সর্বোচ্চ পর্যায় বলেই মনে করি… সাথে সাথে আমরা অস্বীকার করি না যে, এইরকম অনেকগুলো পন্থা– যেগুলোকে আজ শান্তিপূর্ণ বলা হচ্ছে– আসলে অসৎ কাজের নিষেধের আওতায়ই পড়ে, যেটি শক্তি ও সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল, যেমনটি রাসুলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, ‘যদি তোমরা কোনো অন্যায় দেখো, তবে হাত দিয়ে থামাও, তা না পারলে কথা দিয়ে, তাও না পারলে অন্তর থেকে ঘৃণা করো এবং এটিই সবচেয়ে দুর্বলতম ইমান’।’
এই বার্তাটিতে যে বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে:
- শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও এর অর্জন পুরোপুরি বর্জন করা উচিত নয়, যেমনটি অনেকে করছে। (যেমন আদনানির মতো লোকেরা)
- শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অসৎ কাজের নিষেধের (নাহি আনিল মুনকার) আওতাধীন!! অর্থাৎ এটি এগুলো বৈধ পন্থা!!!
৩- তৃতীয়ত, আল-ফুরকান ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘সালিল আস-সাওয়ারিম’ প্রকাশনার প্রথম পর্বে একটি ভিডিও ক্লিপে দেখানো হয়, ইসলামি রাষ্ট্রের একজন যোদ্ধা বলছেন, ‘তিউনিসিয়ার ব্যাপারে আমরা বলতাম সেখানে কোনো ইসলাম নেই। আর আজ তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহে বিদ্রোহ করেছে। এখন সেখানে ইসলামের পতাকা তুলে আল্লাহ্র শারিয়াহ্ কায়েমের জন্য আন্দোলন চলছে।’ সেই একই প্রচারণায়, তিউনিশিয়ার বিক্ষোভ আন্দোলনের একটি ছবি দেখিয়ে নিচে মন্তব্য দেখানো হয় যে, ‘তিউনিসিয়া তার প্রভুর শারিয়াহ্কে সমর্থন করছে।’
এই বার্তাটির উল্লেখযোগ্য দিক হলোঃ
- তিউনিশিয়ার ব্যাপার যোদ্ধাটি বলেছে ‘এখন তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহে বিদ্রোহ করেছে’। যদি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও অহিংস আন্দোলন এটি শয়তানি, হারাম কাজই হতো- যেমনটি আদনানি দাবি করে- তাহলে কেন যোদ্ধাটি ‘আল্লাহ্র অনুগ্রহে’ বললো?!!
- ‘তিউনিসিয়া তার প্রভুর শারিয়াহ্কে সমর্থন করছে’-র দ্বারা বুঝায় যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শারিয়াহ্কে সমর্থনের একটি উপায়!!!
এমনকিও, তুর্কি বিন্’আলিও (আইসিসের প্রধান শার’ঈ) আমেরিকান দূতাবাসের সামনে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে একটি বিবৃতি দেন! এ বিবৃতিটি “অ্যামেরিকান দূতাবাসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে আবু সুফিয়ান আস-সুলামি” শিরোনামে ইন্টারনেটে বিদ্যমান। শুধু তাই না কারাবন্দীদের মুক্তির দাবিতে একাধিকবার এরকম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তুর্কি বিন্’আলি অংশগ্রহণ করেছে। আমি জানি না তখন তার ধর্ম শান্তিবাদের ধর্ম ছিলো কিনা!!
বরঞ্চ, মাজলিশ শুরা আল’ মুজাহিদিন ফি আকনাফ বাইতিল মাকদিসকেও- যাদের বেশির ভাগ এখন আইসিস-র সমর্থক – শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ব্যাপারে আইসিস-এর বক্তব্যের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট গণ্য করা উচিৎ। ইবন তাইমিয়্যাহ সেন্টার থেকে মাজলিশ শুরা আল’ মুজাহিদিন ফি আকনাফ বাইতিল মাকদিস অফিসিয়ালি একটি প্রবন্ধ প্রচার করে, যেখানে বলা হয়, ‘গাজায় সালাফি জিহাদিদের উচিৎ জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করা, এবং সেখানকার ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অনুকূল পরিস্থিতির সুবিধা নেয়া। তাদের উচিৎ সালাফি দাওয়াহর স্বাধীনতা ও অবাধ প্রচারণার পক্ষে, এবং যেন হামাস সালাফি জিহাদিদের বিরুদ্ধে ইয়াহুদীদের হয়ে যে ধাওয়া ও দমনপীড়ন চালাচ্ছে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মিছিল ও অবস্থান ধর্মঘট করা। এর জন্য ভাইদের বিপদে ধৈর্য ধরে আল্লাহর কাছে পুরষ্কারের প্রত্যাশা করতে হবে, কাজগুলোতে অধ্যবসায়ী হতে হবে, মিডিয়ার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং যা হামাস এতদিন শ্বাসরোধ করে চেপে রেখেছে সে বার্তা প্রত্যেক মুসলিমের কাছে পৌঁছাতে হবে যাতে করে আমাদের মুসলিমদের ওপরে চলা নিপীড়ন থেমে যায়।’ [32]
শায়খ নাসির আল-ফাহ্দ[33] যিনি তাদের বাই’য়াহ দিয়েছিল মনে করে আইসিস সমর্থকেরা খুব আনন্দিত হয়ে পড়েছিল, – নিজেই সেসব লোকেদের বিরোধিতা করেছিলেন, যারা কিনা আরবের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে হারাম বলেছিল। তিনি তাদের যুক্তিকে তিনটি ভাগে খণ্ডন করেছিলেন। শায়খ বলেন, ‘তাদের বিবৃতিতে যে দাবি করা হলো, এটি (শান্তিপূর্ণ আন্দোলন) মন্দের দিকে নিয়ে যাবে, তা সত্য নয়। আমরা এখন দেখছি যে, প্রতিটি জায়গায়ই এমন আন্দোলন হচ্ছে, আর যে মন্দের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপনকারীরা আপত্তি করছে সেরকম কোন কিছু আমরা এসব আন্দোলন থেকে দেখি নি। বরং এ থেকে অনেক ভালো কিছুই অর্জিত হয়েছে, যেমন মিশরের তাগূতের অপসারণ। যদিও এটি ইসলামি সরকার ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়নি, তবুও এটি যুলুম ও নিপীড়ন কমাতে এবং ন্যায় বিচার আনতে সক্ষম হয়েছে- যা এ তাগুতের শাসনকালে ছিল না।’[34]
তাহলে কি শায়খ নাসির আল-ফাহ্দ কি সেসব লোকের অন্তর্ভুক্ত যারা অহিংসবাদের ধর্মকে বৈধতা দান করেন ও প্রচার করেন?
যদি বলা হয় যে, আইসিস শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ব্যাপারে তাদর পূর্বের বিবৃতিগুলোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে, তাহলে বলবো, তবে কি আইসিস স্বীকার করে নিবে যে, তারা যখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির দিকে আহ্বান করছিলো, তখন তারা মূলত নিম্নোক্ত অপরাধসমূহের মধ্যে পতিত হয়েছিলোঃ
- তারা দাবি করেছিল রাসূলুল্লাহর ﷺ চেয়েও তারা বেশি জ্ঞানী ও দয়ালু, তাদের দেখানো পথ রাসূলুল্লাহর ﷺ দেখানো পথের চেয়ে উত্তম!
- তারা আল্লাহ্র কিতাব ও রাসূলুল্লাহর ﷺ সুন্নাহ্কে নিজেদের পেছনে ছুঁড়ে ফেলে নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করছিলো!
- তারা আবর্জনার দিকে আহবান করছিলো।
- তারা শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণের ফিকহ্কে অনুমোদন করছিলো এবং এটির প্রশংসাও করছিলো।
- কারন আদনানির মতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সমর্থন দিলে যেসব গুনাহ করা হয়, যা সে আরোপ করেছে আল-ক্বা’ইদাহ্র উপর, তার সবই তাহলে তাদের উপর আরোপিত হতে পারে।
- একইভাবে শায়খ উসামাহ্, শায়খ নাসির আল-ফাহ্দ, তুর্কি বিন্’আলি ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী আইসিস-র ওইসব সমর্থকদের ক্ষেত্রে এসব অভিযোগ সমভাবে প্রযোজ্য?
পরিশেষে আমরা দুটো সম্ভাব্য উত্তর পাই:
- আদনানি প্রথম অভিযোগটি বুঝিয়েছ। অর্থাৎ আল-ক্বা’ইদাহ্ জিহাদের বদলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে মানহাজ হিসেবে গ্রহন করেছে। যদি এটি আদনানির বক্তব্য হয় তবে এক্ষেত্রে আদনানি মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হন।
- অথবা সে দ্বিতীয়টি বুঝিয়েছে। অর্থাৎ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হালকা বিশ্বাস রাখাও হচ্ছে পথভ্রষ্টতা, তাহলে এই পর্যন্ত যতোজন নেতা ও মানুষের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারাসহ আদনানির নিজের দল আইসিস- সকলেই পথভ্রষ্ট, গোমরাহ।
আর এ ব্যাপারটি ভুলে গেলে চলবে না যে, আদনানি ঐ একই জায়গায় দাবি করেছিলেন যে- আল-ক্বা’ইদাহ্ তাদের নতুন মানহাজের কারনে নাকি ‘জিহাদ’ শব্দটি উল্লেখ করতে লজ্জা বোধ করে। একারনে তারা “জিহাদ” এর বদলে আন্দোলন, ‘বিপ্লব’, ‘জনসমর্থন’, ‘প্রচেষ্টা’, ‘প্রচারণা’, ‘উত্থান’ ইত্যাদি শব্দ গ্রহণ করেছে।
যদি আল-ক্বা’ইদাহ্ জিহাদ শব্দটি ব্যবহার করে লজ্জাই বোধ করতো, তাহলে প্রথমেই কেন তারা তাদের জামা’আহর নাম ‘তানযিম ক্বা’ইদাতুল জিহাদ’ থেকেই জিহাদ শব্দটি বাদ দিয়ে দিলো না? এখনো তাদের জামা’আর নামের মাঝেই জিহাদ শব্দটি বিদ্যমান। যখন নিজেদের নামের মাঝেই সগৌরবে তারা জিহাদ শব্দটিকে ধারন করছে তাহলে কিভাবে তারা জিহাদ শব্দটি নিয়ে লজ্জিত হলো?!
এখন আমরা দেখবো আল-ক্বা’ইদাহ্র নেতাদের বার্তায় কতোবার “জিহাদ” শব্দটি এসেছে আর কতোবার আদনানির উল্লেখিত অন্যান্য শব্দগুলো এসেছে –
- ‘বিশ্বাস অহংকারকে পরাজিত করেছে’ নামক বার্তায় ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী ‘জিহাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ২০ বার, এর বিপরীতে ‘বিপ্লব’ শব্দটি মাত্র ১ বার উচ্চারণ করেছেন।
- “নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতা” নামক বার্তায় ড. আয-যাওয়াহিরী ‘জিহাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ২১ বার, এর বিপরীতে ‘বিপ্লব’ শব্দটি মাত্র ৬ বার উচ্চারণ করেছেন।
- ‘তাগূতের মোকাবেলায় ঐক্য’ নামক বার্তায় ড. আয-যাওয়াহিরী ‘জিহাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ১০ বার, এর বিপরীতে ‘বিপ্লব’ শব্দটি ১ বারও উচ্চারণ করেননি।
যদি তাদের মানহাজ জিহাদ শব্দ উচ্চারণে লজ্জিতবোধ করার মানহাজ হয়, তাহলে তিনি জিহাদ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ৫১ বার, এর বিপরীতে আদনানির দাবি করা ওইসব শব্দ উচ্চারণ করেছেন মাত্র ৭ বার। আর আদনানি দাবি করছে ৫১ বারের বিপরীতে ৭ বার উল্লেখ করা এসব শব্দের মাধ্যমে তিনি এবং আল-ক্বা’ইদাহ্ জিহাদকে প্রতিস্থাপিত করেছেন! যদি (আদনানির দাবি অনুযায়ী) জিহাদের লজ্জাবোধ করার পর্ব তিনি ৫১ বার শুধু জিহাদ শব্দটিই উচ্চারণ করে থাকেন, তাহলে জিহাদ শব্দটি ব্যবহারের ব্যাপারে যদি তিনি লজ্জিত না হতেন তবে কতোশতবার জিহাদ শব্দটি উচ্চারিত হত!
এক মানহাজ যা সংখ্যগরিষ্ঠের অনুসরণ করে
আদনানি দাবি করেছে যে, উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র মানহজ থেকে থেকে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্র আরেকটি বিচ্যুতি হলো- আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্ সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুসরণ করে!
“এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না” শীর্ষক বক্তব্যে আল-ক্বা’ইদাহ্র “বিচ্যুতি” সম্পর্কে বলতে গিয়ে সে বলেছে – “কিন্তু এ বিষয়টি হল দ্বীনের বিকৃতির ও পথভ্রষ্টতার, (ব্যাপারটী হল) এমন এক পথ গ্রহনের যা সংখ্যাগরিষ্ঠের পেছনে ছোটে।“[35]
সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয় নিয়ে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্র কয়েকজন নেতাদের কয়েকটি বক্তব্য আমরা পর্যালোচনা করবো।
ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেন-
‘দুটি বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি ব্যাতীত কোনো ইসলামি আন্দোলনকে আমরা ইসলামি মনে করি না। এ দুটি বৈশিষ্ট্য হল, শারিয়াহ্কে আইনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করার আগ্রহ এবং সবধরনের সংবিধান, আইন ও সংখ্যাগরিষ্ঠের খেয়ালখুশির ওপরে শারিয়াহ্কে স্থান দেয়া। বিভিন্ন জায়গায় ক্রমান্বয়ে দুর্বল হওয়ার পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক পরাজয়ের মাধ্যমে খিলাফাহ্র বিলুপ্তি – আমাদের সামরিক পরাজয়ের পাশাপাশি মানসিক ভাবেও পরাজিত করে গিয়েছে। এ পরাজয় আমাদের মধ্যে অনেককে বাধ্য করেছে শারিয়াহ্র শত্রুদের তৈরি পদ্ধতির মাধ্যমে শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠার অনুসন্ধানে। ফলে আমাদের মধ্যে অনেকে শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে শারিয়াহ্-বহির্ভূত উপায়ে। তারা অধিকাংশের খেয়ালখুশিকে সার্বভৌমত্ব দেয়ার মাধ্যমে শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এ হল ঠিক ঐ ব্যক্তির মতো অবস্থা- যে কিনা খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করার মাধ্যমে মদ নিষিদ্ধ করতে চায়! এটি কি আদৌ কোনো যৌক্তিক উপায় হতে পারে?!’[36]
তিনি আরও বলেন, ‘এই (ইসলামী) রাষ্ট্র ততোক্ষন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে না, যতদিন না আমরা শারিয়াহ্ দ্বারা আমাদের দেশগুলো শাসন করবো। যতক্ষণ পর্যন্ত না বিচারিত হওয়ার পরিবর্তে শারিয়াহ্কেই বিচারক বানানো হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না শারিয়াহ্ সব আইনের উর্দ্ধে স্থান পাবে এবং অন্যসব মাপকাঠিকে অতিক্রম করে যাবে। আমাদের অবশ্যই এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যেতে হবে যা পরিচালিত হবে ওয়াহীর ব্যবস্থা দ্বারা এবং যার মাধ্যমে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও অধিকাংশের খেয়ালখুশি অনুযায়ী বিচার করার ব্যবস্থাকে মিটিয়ে দেওয়া হবে… অতঃপর সব ইসলামি আন্দোলনকে একটি সাধারণ সর্বাঙ্গীণ লক্ষ্যের দিকে আমরা আহবান করিঃ প্রথমত শারিয়াহ্কে আইনের উৎস বানানো এবং শারিয়াহ্ ব্যাতীত অন্য সকল নীতি, আদর্শ, বিশ্বাস ও আইনকে বিচারের উৎস হিসেবে অস্বীকার করা, জনগণের শাসনকে উপেক্ষা করা যা জনগণকে প্রভুর আসনে বসায় (জনগণের ইচ্ছাকে সার্বভৌম গণ্য করার মাধ্যমে)।“[37]
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামি রাষ্ট্র হল এমন একটি রাষ্ট্র যা শারিয়াহ্কে আইনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করে এবং যেখানে সার্বভৌমত্ব কেবলমাত্র আল্লাহ্ সুব্হানাহু ওয়া তা’আলারই। যেখানে শাসন কেবল শারিয়াহ্র মাধ্যমে এবং সরকার পরিচালিত হবে একটি শুরা (পরামর্শ-সভা) দ্বারা, যা শারিয়াহ্র অনুসরণ করে এবং কখনও এর বিরুদ্ধে যায় না। আইনজ্ঞগণ কতৃক প্রণীত সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা হলো, এটি হচ্ছে সর্বোচ্চ ক্ষমতা যার ওপরে আর কোনো কর্তৃত্ব নেই। অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে শারিয়াহ্ ব্যাতীত অন্য কিছুকে আইনের উৎস বানানো হয় – আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের খেয়ালখুশি- সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, যারা ভোট দেয় তাদের মাঝেকার সংখ্যাগরিষ্ঠের খেয়ালখুশি হল ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সুতরাং এরকম একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব থাকে জনগণের হাতে, শাসন করা হয় গণতন্ত্র অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের খেয়ালখুশি অনুযায়ী, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকার হয় গণতান্ত্রিক, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছাকে অনুসরণ করে এবং এর বিরুদ্ধে যায় না– এটি হলো প্রথম বড় পার্থক্য।’[38]
‘মিশরের জনগণের জন্য বিজয় এবং আশার সংবাদ’ সিরিযে ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেন-
‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মাত্রই ধর্মনিরপেক্ষ। অর্থাৎ নাস্তিক। কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন ও আইনের উৎস কেবলমাত্র আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলার না বরং তা সংখ্যাগরিষ্ঠের খেয়ালখুশির ওপর নির্ভরশীল। আর মিশরের শাসকগোষ্ঠী হল এমন এক গোষ্ঠী যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করা হয়। যারা অর্থ এখানে আইনের উৎস হলো অধিকাংশ লোকের খেয়ালখুশি। অন্যদিকে ইসলামি শাসন হলো এমন এক শাসন, যা স্হাপিত হয় শূরার ভিত্তিতে, যেখানে উম্মাহ্ শারিয়াহ্ থেকে বিচার গ্রহন করে, এবং শাসকদের বিচার করার ক্ষেত্রেও দ্বারস্থ হয় শারিয়াহ্র, যে শাসক হয় বাছাইকৃত এবং যে জবাবদিহি করতে বাধ্য’।’[39]
একই সিরিযে তিনি আরও বলেন –
‘…কিন্তু যারা এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে, তারা বুঝতে পারবে এটিই হলো গণতন্ত্রের বাস্তবতা। যেহেতু গণতন্ত্র হল এমন একটি ধর্ম যা কোনো ধর্ম, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও আদর্শের সাথে সম্পর্ক ছাড়া শুধুমাত্র একটি মূর্তির পূজা করে, যা হল – ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছা’। তাই এখানে সবকিছুই আপেক্ষিক এবং ভোটার সংখ্যার ওপর নির্ভর যেকোনো কিছুকে ইচ্ছামতো বদলানো বা পরিবর্তন করা যায়।’[40]
তিনি আরও বলেন,
‘এই হল গণতন্ত্রের বাস্তবতা। যতক্ষণ পর্যন্ত অধিকাংশ লোকের সমর্থন আছে ততক্ষণ পর্যন্ত এটি সবকিছু অনুমোদন করে, তা যতই নিকৃষ্ট ও অসংগত হোক না কেন।
বাস্তবতা হলো, গণতন্ত্র হচ্ছে ধর্ম, মান ও নৈতিকতা বিবর্জিত ভোট গণনার খেলা। ইসলাম যে শূরার ধারণা আছে, সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শারিয়াহ্ অনুযায়ী। আর গণতন্ত্রে (সংখ্যাগরিষ্ঠতা) কোন মাপকাঠি নেই। শুরা আর গণতন্ত্রের মধ্যে এটি একটি মৌলিক পার্থক্য।
যেমন, শুরার অধীনে এটি কখনোই সম্ভব নয় যে, মুসলিম রাষ্ট্র বন্দীদের ব্যাপারে, নির্যাতন প্রতিরোধের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হবে এবং তারপর যদি শুরা কাউন্সিলের অধিকাংশ লোক সম্মতি প্রদান করে তবে সে চুক্তি ভঙ্গ করবে।[41]
অ্যাডাম গাদান (আয্যাম আল-আম্রিকি) বলেন-
‘শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠা করা ঐচ্ছিক কোন বিষয় না যে একে ভোটের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল করা যাবে। এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে, – শারিয়াহ্ দ্বারা শাসন করা ইমানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ইবাদত। আর এটি এমন কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয় যেটি সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুমতি প্রদান করবে এবং ভোটের ওপর নির্ভর করবে। অতএব শারিয়াহ্ দ্বারা শাসন করা হবে নাকি শারিয়াহ্কে ত্যাগ করা হবে- এই ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠের বিচার খোঁজার জন্য আমি আহবান করছি না।’[42]
সুতরাং আদনানি কি এ অভিযোগ করার সময় আল-ক্বা’ইদাহ্র বক্তব্য, বিবৃতি, লক্ষ্য ও আদর্শ সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলো?! আর যদি সে অজ্ঞ হয়ে থাকে, তবে সত্যতা যাচাই ছাড়া কীভাবে তার এসব বেপরোয়া অভিযোগ করা বৈধ হতে পারে?
গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থি[43]
যত অভিযোগ উত্থাপিত করা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত ও ঢালাও অভিযোগের অন্যতম এটি। কারন গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থীকে তাকফির না করার এ অভিযোগককে সাধারণ (আম) ও সুনির্দিষ্ট (খাস) দুভাগেই বিভক্ত করা যায়। এর একটি অংশ হল তাওয়াগীতকে (কুফরের নেতা, কাফির শাসকবর্গ) তাকফির না করা এবং এখানে তাওয়াগিত দ্বারা বোঝানো হচ্ছে গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থীদের। দ্বিতীয় অংশটি হল গণতান্ত্রি ইসলামপন্থীদের জন্য দু’আ করা এবং তাদেরকে উম্মাহ্র বীর বলে আখ্যায়িত করা![44]
উদাহণরস্বরূপ, আদনানি তার “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না” শীর্ষক বক্তব্যে বলে যে, ‘ইখওয়ানের (মুসলিম ব্রাদারহুড) তাগূত (মুহাম্মাদ মুরসিকে নির্দেশ করা হচ্ছে) যারা মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা ব্যাতীত শাসন করছে, (অথচ) তার জন্য দু’আ করা হচ্ছে তার প্রতি সহানূভূতি প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং তাকে ‘উম্মাহর আশা ও বীরদের অন্যতম’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে……হে আল্লাহ্, আপনি তাদের জিজ্ঞেস করুন- সিনাইয়ের মুওয়াহিদীনের হত্যাকারীদের কুৎসিত চেহারা তারা কেন উন্মোচন করেনি? কেন জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেনি? তাদের জিজ্ঞেস করুন, কেন তারা তাগূতের প্রশংসা কছে এবং তাদের জন্য দু’আ করছে?’
আদনানি এখানে খন্ডিত ভাবে শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর বক্তব্যের একটি অংশ উপস্থাপন করেছে, এবং এর মাধ্যমে লোকজনের মাঝে এই ভ্রান্ত ধারণা প্রবেশ করাতে চেয়েছে যে- ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী ড. মুহাম্মাদ মুরসিকে কোনো ধরনের শর্তারোপ ছাড়াই দ্ব্যর্থহীনভাবে উম্মাহ্র একজন নেতা আখ্যায়িত করে তার জন্য দু’আ প্রার্থনা করেছেন।
ড. মুহাম্মাদ মুরসির উদ্দেশ্যে “নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতা” শীর্ষক বার্তায় ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেন-
‘আজ আপনি মহা পরীক্ষার সম্মুখীন। যদি আপনি কোনো ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দ্যোদুল্যমান না থেকে সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারেন, ঘুণে ধরা ধর্মনিরপেক্ষ বিচারপদ্ধতি ও শাসনতন্ত্রকে পরিত্যগ করে সুস্পষ্টভাবে শারীয়াহ্ প্রতিষ্ঠার প্রতি আহবান জানান, দখলকৃত প্রতিটি মুসলিম ভূখণ্ডকে মুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প করেন এবং এ সংকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধক এমন সকল চুক্তি বা সমঝোতা অস্বীকার করেন, এবং আপনার পালনকর্তার কাছে এই মর্মে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকেন যে, তার শারীয়াহ্ যা আপনার উপর বাধ্যতামূলক করেছে সে সত্য আপনি ঘোষণা করবেন এবং তা বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র আপোষ করবেন না- তাহলে আমি আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছি, সে মূহুর্তে (যখন আপনি এ সকল কাজ সম্পন্ন করবেন) আপনি উম্মাহ্র একজন আদর্শ নেতা ও বীর হিসেবে পরিচিত হবেন এবং আপনি মিশরসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ্কে উম্মাহর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উজ্জীবিত করতে সক্ষম হবেন।’
যদি মুরসি মানব রচিত আইন ও সেক্যুলার সংবিধানের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতো, শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠা করতো এবং দখলকৃত মুসলিম ভূমির প্রতিটি ইঞ্চি মুক্ত করার জন্য জিহাদের ঘোষণা দিত, আন্তর্জাতিক সকল চুক্তিকে বাতিল ঘোষণা করতো, তাহলে যে সে উম্মাহ বীরদের একজন বলে গণ্য হতো, এতে কি আদৌ কোন সন্দেহের অবকাশ আছে?
অথচ আদনানি তার বক্তব্যে বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করলো যেন ডঃ আইমান বলেছেন মুরসি যাই করুক, শারিয়াহ্ ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও সে উম্মাহর বীর বলে গণ্য হবে!
আর মুরসির ব্যাপারে দু’আ করার বিষয়টি আসলে কি রকম ছিল? ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী ড. মুহাম্মাদ মুরসির হেদায়েতের জন্য দু’আ করেছিলেন এবং তার একই বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দু’আ করি আল্লাহ যেন আপনাকে দ্বীন ও দুনিয়ার সঠিক পথে চালিত করেন। সবরকম ভয় ভীতি ছাপিয়ে আপোষহীনভাবে আল্লাহ্র দ্বীন ও শারিয়াহ্ বাস্তবায়নে তিনি আপনার হৃদয়ে দৃঢ়তা দান করুন এবং তা নিশ্চয়তা, বিশ্বাস ও শক্তিতে পূর্ণ করে দিন।’
কারো হেদায়েতের জন্য এরূপ দু’আ করতে ক্ষতি কোথায় যেখানে খোদ নবী ﷺ দু’আ করেছিলেন আল্লাহ যেন উমার ইবনুল খাত্তাব অথবা আবু জাহলের মাধ্যমে ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করেন? যদিও এ দুজনই সেসময়ে মুসলিম যথেষ্ট ক্ষতি করেছিলো। ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে উমার ইবনুল খাত্তাবের বিদ্বেষের তীব্রতা এতই প্রকট ছিলো যে, বলা হতো- এমনকি উমারের পিতার গাধাটি পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করবে কিন্তু উমার ইসলাম গ্রহণ করবেনা । তা সত্ত্বেও আল্লাহ্র রাসুল ﷺ দু’আ করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ্, উমার ইবনুল খাত্তাব ও আবু জাহল, এ দুজনের মধ্যে যাকে আপনি অধিক পছন্দ করেন তার দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করুন।’[45]
বরং এমনটি উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র সময়েও ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল-লিবি তার বক্তব্যতে হামাস যেসব ভ্রান্তি ও গুনাহতে পতিত হয়েছিল তা উল্লেখ করেছিলেন, এবং এগুলো ছিল ডঃ মুহাম্মাদ মুরসি ও ইখওয়ানের অবস্থার অনুরূপ। এবং এবক্তব্যের শেষের দিকে শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল-লিবী বলেছিলেন ‘হে আল্লাহ্, হামাসকে হেদায়েত দান করুন এবং ন্যায়-নিষ্ঠা ও সংশোধনের জন্য পথনির্দেশনা দান করুন”।[46]
আর তাদেরকে তাকফির করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নীতির ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, দুইজন লিবিয়ান শায়খ (শায়খ আতিয়াতুল্লাহ ও শায়খ আবু ইয়াহিয়া) ও ড. আইমান আয-যাওয়াহিরীসহ উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথম সারির নেতারা হামাস সরকারকে তাকফির করেনি। বরং শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী তো প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন, ‘হামাস যে ভুল করেছে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা আশা করি সেই জন্য তারা ক্ষমা প্রাপ্ত হবেন, কারণ তারা কিছু ভুল ব্যাখ্যা গ্রহন করেছে, এবং এর কারন হল তারা ঐসব আলিমদের কাছ থেকেই ফাতাওয়া গ্রহণ করেছিলেন যাদেরকে তারা বিশ্বাস করেন। আমারা বলিনা যে- তারা কাফির হয়ে গিয়েছে বরং তারা মুসলিম যারা ভুল করেছে। এবং আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাদেরকে নাসীহাহ করতে এবং সঠিক পথ নির্দেশ করতে, যেমনটা আমরা সকল মুসলিমের ক্ষেত্রেই চেষ্টা করি।’[47]
উসামাহ্র সময়কালেই ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেছিলেন-
‘আমি হামাসের নেতৃবৃন্দকে তাকফির করার অবস্থানের সাথে একমত নই। কারণ, কাউকে কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তিকে কাফির ঘোষণা করা একটি গুরুতর বিষয় এবং এরকম ক্ষেত্রে তাকফির করার জন্য তাকফিরের সকল শর্তসমূহ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়া এবং তাকফিরের প্রতিবন্ধক অনুপস্থিতি জরুরী। সুতরাং আমি আমার ভাইদের পরামর্শ দিচ্ছি- এই বিষয়টি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। হামাস যদি সঠিক পদক্ষেপ নেয় তবে তাতে তাদের সমর্থন, আর যদি তারা ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তবে উত্তম পন্থায় তাদের গঠনমূলক সমালোচনার দিকে মনোযোগ দিন।‘[48]
এমনকি তুর্কি বিন’আলি (আইসিসের প্রধান শার’ঈ) শায়খ আল-মাক্বদিসীর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল এ চিঠির উল্লেখ শায়খ আব্দুল্লাহ আল হুসাইনি তার “আস-সাওয়াইক্ব আল হুসাইনিয়্যাহ ফি দাহাদ্ব আল ইসতিদলালাত আল মানামিয়া”- নামক কিতাবের ৬ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। এ চিঠিতে তুর্কি বিন’আলি লিখেছে – “আমার প্রিয় শায়খ, আমি সত্যের পথে আপনার অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত আছি এবং আমি জানি আল্লাহ্র পথে আপনি কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় পান না। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে যখন হামাসের সরকারের উপর তাকফির করার ব্যাপারে আপনি ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী, শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল-লিবী, শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী, শায়খ আবু ওয়ালিদ আল-গাজী আল আনসারি, শায়খ আবু ক্বাতাদা আল-ফিলিস্তিনী, শায়খ আবু বাসীর আত-তারতুসিসহ অনেকের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিলেন।“
উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র নেতা শায়খ আতিয়াতুল্লাহ্ মাসজিদ ইবনু তাইমিয়াহ্তে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ঘটনার পরে হামাস সম্পর্কে ‘পাশ্চাত্য ও অন্ধকার গুহা’ নামক বার্তায় বলেন-
‘হামাস সরকার তার বিরোধী মুজাহিদিনকে নিদারুণভাবে হত্যা করে যে গুরুতর পাপ করেছিলো- তা থেকে আমরা পরাক্রমশালী আল্লাহ্র কাছে দায়মুক্তি ঘোষণা করছি। আমরা চাই তারা যেন মহিমান্বিত ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ্কে ভয় করে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর ক্রোধের ব্যাপারে আমরা তাদেরকে সতর্ক করছি। পাশাপাশি আমাদের ভাইদের হামাসের সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ন সিদ্ধান্তকে আমরা সঠিক মনে করি না।’
‘জামাতুত্ তাওহিদ ওয়াল জিহাদ ফি গাযা’-র আমির শায়খ আবু ওয়ালিদ আল মাক্বদিসী ‘মিম্বার আত-তাওহিদ ওয়াল জিহাদ’-এ হামাস সংক্রান্ত ফতোয়া নং ১১২৮-এ বলেন-
‘তবে প্রতিটি অঞ্চক ও ভূখণ্ডেরই নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিস্থিতি রয়েছে এবং প্রতিটি দলেরই নিজস্ব ক্ষমতা ও যোগ্যতা রয়েছে। একারনে গাযায় অবস্থানরত আমাদের ভাইদের জন্য তাদের সরকারের বিপক্ষে যুদ্ধ করাকে আমরা সঠিক মনে করি না, কারণ এতে করে তাদের শক্তিই বিনষ্ট হবে এবং পরিণতিতে নিঃশেষ হয়ে পড়বে। বিশেষত যেহেতু এ মূহুর্তে তারা দুর্বল। এই তাড়াহুড়া করে এ সংঘর্ষে অবতীর্ণ হওয়া অনেক নিরপরাধ মুসলমানের রক্ত ঝরাবে যার ফলশ্রুতিতে মানুষ তাওহিদের ডাক থেকে বিমুখ হয়ে পড়বে।’
এবং শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসী – যাকে আইসিস একাধিকবার চেষ্টা করেছিল নিজেদের দলে ভিড়াবার (যদিও তারা দাবি করে তিনি গোমরাহ), ‘মিম্বার আত-তাওহিদ ওয়াল জিহাদ’-এ ফতোয়া নং ১৫৯৯-এ বলেন –
“অনুরূপভাবে আমরা তারা যা লিখেছে, তাদের আন্দোলনের ব্যাপারে তো দূরে থাক হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারেও এমন কোন ফাতাওয়া আমরা দেই নি।“
বাই’য়াহ ভঙ্গকারী কে?
আদনানি দাবি করেছে আইসিস আল-ক্বা’ইদাহ্র কাছে কোন ধরনের আনুগত্যের বাই’য়াহ দ্বারা আবদ্ধ ছিল না, এবং তাদের ও আল-ক্বা’ইদাহ্র মধ্য সম্পর্ক ছিল নিছক শ্রদ্ধা ও বিনয়ের। সে আরও দাবি করেছে, বাগদাদি ও জুলানির মধ্যকার বিরোধে আল-ক্বা’ইদাহ্ হস্তক্ষেপ করেছে, এবং যিনি নেতার আনুগত্য থেকে সরে দাঁড়িয়েছে আল-ক্বা’ইদাহ্ তাকেই সমর্থন দিয়েছে! ড. আইমান আয-যাওয়াহিরীর বিবৃতি ‘শামের মুজাহিদীনের রক্ত সংরক্ষণে শাহাদাহ্” -র জবাবে আদনানি তার বক্তব্য ‘দুঃখিত! হে আল-ক্বা’ইদাহ্র আমির’– শীর্ষক বিবৃতিতে আলাদা ভাবে এ বিষয়ে আলোচনা করে, এবং আইসিস কখনো আল-ক্বা’ইদাহ্র অধীনস্ত ছিল একথা অস্বীকার করে। তার এ বক্তব্যে আদনানি দাবি করে আল-ক্বা’ইদাহ্র সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল শ্রদ্ধার ও বিনয়ের এবং এ সম্পর্ক ছিল বৈশ্বিক জিহাদের ঐক্যের স্বার্থে। প্রশ্ন হল এ দুটি সংগঠনের মাঝে সম্পর্ক কি আসলেই এমন ছিল?
‘শামের মুজাহিদীনের রক্ত সংরক্ষণে শাহাদাহ্’[49] – শীর্ষক বক্তব্যে শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী তৎকালীন দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহ (Islamic State of Iraq- ISI) – এর নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে আল-ক্বা’ইদাহ্র কাছে যেসব চিঠি পাঠানো হয়েছিল তার কিছু কিছু অংশ উল্লেখ করেছেন। এরকম একটি চিঠিতে আইসিসের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা –
‘সম্মানিত শায়খ (আল্লাহ তাকে হেফাযত করুন) আপনাদের নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন এখানকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে এবং ঐক্যের ভিত্তিতে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটছে, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এবং তিনি জানতে চাচ্ছেন সংগঠনের নতুন নেতা সম্পর্কে ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনটি আপনাদের মতে অধিকতর উপযুক্ত হবে? দাউলা কি প্রকাশ্যে বাই’য়াহ পুনঃনবায়ন করবে, নাকি পূর্বের ন্যায় গোপনে তা করবে?’
“দাউলা কি প্রকাশ্যে বাই’য়াহ পুনঃনবায়ন করবে, নাকি পূর্বের ন্যায় গোপনে তা করবে”- এ শব্দগুলো নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করুন। একথা থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় আবু বাকর আল-বাগদাদি আমির হবার আগে থেকেই আইসিস, আল-ক্বা’ইদাহ্র কাছে বাই’য়াহবদ্ধ ছিল। এবং এসম্পর্ক শুধুমাত্র শ্রদ্ধার ও বিনয়ের নয় যেমনটা আদনানি দাবি করেছে।
আবার দেখুন, আদনানি তার বক্তব্য “দুঃখিত, হে আল-ক্বা’ইদাহ্র আমির”- এ বলেছেঃ “নিশ্চয় আপনার বক্তব্যে আপনি যা বলেছেন তার সবই সত্য।[50]“ সুতরাং শায়খ আইমান তার বক্তব্যে আল-ক্বা’ইদাহ্র কাছে আইসিসের বাই’য়াহবদ্ধ থাকার যে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন, আল-ক্বা’ইদাহ্র প্রতি আইসিসের আমিরের বাই’য়াহ পুনঃনবায়নের যে চিঠি উপস্থাপন করেছেন তার সত্যতা সম্পর্কে আদনানি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
অতঃপর শায়খ ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী তার ‘সম্মানিত শায়খদের প্রতি উত্তর’ নামক বার্তায় আবু বকর আল-বাগদাদি ঠিক যে শব্দাবলীতে আল-ক্বা’ইদাহ্ বাই’য়াহ প্রদান করেছিল তা হুবহু তুলে ধরেছেন –
“হে আমাদের সম্মানিত শায়খ, আমরা আপনাদের কাছ সুস্পষ্ট করতে চাই, এবং আপনার কাছে ঘোষণা করতে চাই, আমরা আপনাদেরই একটি অংশ। আমরা আপনাদের অন্তর্ভুক্ত এবং আপনাদেরই। এবং আমরা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা করছি আমাদের বিষয়াদির ব্যাপারে আপনি আমাদের আমির, এবং আমাদের উপর আপনার অধিকার হল, যতোক্ষন জীবিত আছি আমরা আপনার কথা শুনবো এবং মানবো, আর আপনার উপর আমাদের অধিকার হল, আপনার কাছ থেকে পরামর্শ ও উপদেশ পাওয়া। এবং আপনার আদেশ পালন আমাদের উপর বাধ্যতামূলক। তবে অনেক সময় কিছু ক্ষেত্রে আমাদের এখানকার বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সুতরাং আমরা আশা করি আপনার হৃদয় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি শোনার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং তারপর পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনি নির্দেশ প্রদান করবেন। আর আমরা আপনার তূণীরের তীর মাত্র।“
প্রশ্ন হল, কোন ধরনের শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সম্পর্কে আমৃত্যু শোনা ও আনুগত্য করা আবশ্যক হয়?! এবং কোন ধরনের শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সম্পর্কে এক পক্ষের বক্তব্য অপর পক্ষের উপর অবশ্য পালনীয় হয়?! একথা সরাসরি আদনানির বক্তব্যের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক যেখানে সে আল-ক্বা’ইদাহ্র নির্দেশের ব্যাপারে দাবি করেছে, “এগুলো (আল-ক্বা’ইদাহ্র নির্দেশ) আইসিসের অঞ্চলে প্রযোজ্য না, এবং এসব নির্দেশ মানা আইসিসের জন্য আবশ্যক না”!
সুতরাং আমরা কয়েকটি নিম্নোক্ত কয়েকটি উপসংহারে উপনীত হতে পারি –
- জুলানির সিদ্ধান্ত[51] না বিশ্বাসঘাতকতা ছিল আর না বাই’য়াহ ভঙ্গ ছিল, কারন সে শুধুমাত্র তার সরাসরি ঊর্ধ্বতন আঞ্চলিক আমিরের (অর্থাৎ আল-বাগদাদি) বদলে সামগ্রিক ভাবে যিনি মূল আমির(শায়খ আইমান), তার সাথে নিজেকে সংযুক্ত করেছে।
- আইসিসি যদিও জুলানিকে বাই’য়াহভঙ্গ এবং মুজাহিদিনের সারিকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, কিন্তু তারা নিজেরাই আল-ক্বা’ইদাহ্র সাথে ঠিক একই কাজ করেছে। তারা আল-ক্বা’ইদাহ্র প্রতি তাদের বাই’য়াহ ভঙ্গ করেছে এবং মুজাহিদিনের সঙ্ঘবদ্ধ সারিসমূহকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সুতরাং বাই’য়াহ ভঙ্গ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং অনৈক্য সৃষ্টির অভিযোগ তাদের ব্যাপারেই অধিক প্রযোজ্য।
মুবাহালা (মিথ্যাবাদির উপর অভিসম্পাতের জন্য দু’আ)
যে সব বিষয় নিয়ে মুবাহালা[52] করা হয়েছিল, তার মধ্যে একটি হল –
- আইসিস নাকি শায়খ আয-যাওয়াহিরীর কাছে জাবহাত আন-নুসরার সাথে তাদের বিরোধের বিষয়টি উপস্থাপন করেছে এবং উভয় পক্ষ (জাবহাত আন-নুসরা এবং আইসিস) বিচারক ও মধ্যস্ততাকারী হিসেবে শায়খ আয-যাওয়াহিরীকে নিয়ে সন্তুষ্ট।
আদনানির ভাষ্য হল-এটি একটি মিথ্যা। মধ্যস্থতাকারী এবং বিচারক হিসেবে শায়খ আয-যাওয়াহিরীর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হয় নি। এবং এই দাবির উপর সে মুবাহালা পর্যন্ত করেছে।
রায় দেয়ার সময় ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেছিলেন, ‘দুই পক্ষের বার্তাই আমার কাছে এসেছে’[53] ,অর্থাৎ দুই পক্ষই বিষয়টি শায়খ আয-যাওয়াহিরী র কাছে উপস্থাপন করেছিলেন।
শায়খ আবু আব্দুল আযিয আল-ক্বাতারি[54] এ বিষয়ে বলেছেন– “শায়খ আল-বাগদাদি এবং শায়খ আল-জুলানি, দুজনেই বলেছিলেন, ‘আমরা উভয়েই অপেক্ষা করছি শায়খ আইমানের হাফিযাহুল্লাহ পক্ষ থেকে ফায়সালা আসার।’ যদি আদেশ আসে, ‘হে শায়খ বাগদাদি, আপনি ফিরে যান যেখানে আপনি ছিলেন, দাউলাতুল ইসলামিয়্যা ইরাকের মধ্যে’ – তখন শায়খ বাগদাদি বললেন, ‘তখন (এরকম আদেশ আসলে) আমি শুনবো এবং মানবো। এবং আমার সেনারা ইরাকে ফেরত যাবে। শায়খের আবু আব্দুল আযিয আল-ক্বাতারির এ বক্তব্যের ভিডিও ইন্টারনেটে বিদ্যমান আছে।[55]
আর শায়খ আবু আব্দুল আযিয আল-ক্বাতারির বাগদাদির যে বক্তব্যের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছেন তা থেকে প্রমাণিত হয় যে আইসিস ও জাবহাত আন-নুসরার মাঝে বিরোধে তারা শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীকে হাফিযাহুল্লাহ মধ্যস্ততাকারী এবং বিচারক হিসেবে গ্রহন করেছিল এবং তারা এতে সন্তুষ্ট ছিল।
শায়খ আব্দুল আযিয আল-ক্বাতারি এ বিরোধে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি ছিলেন, এবং আদনানি তার “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না” – শীর্ষক বক্তব্য শায়খের নিরপেক্ষতার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং একজন গ্রহনযোগ্য মুজাহিদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার নাম উল্লেখ করেছে।
একইভাবে আলেপ্পো অঞ্চলে আইসিসের তৎকালীন প্রধান শার’ঈ কর্মকর্তা উমর আল-ক্বাহ্তানি ইন্টারনেটে প্রকাশিত তার এক অডিও বার্তায় স্বীকার করেছিল-
‘আবু বকর আল-বাগদাদি বলেছেন, “যদি শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে (দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক ওয়া আশ শামকে বিলুপ্ত করে দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহ হিসেবে ইরাকে ফেরত যাবার), আমি আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলছি, দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক ওয়া আশ শামের প্রতি যারা বাই’য়াহ দিয়েছে তারা সবাই তা মানতে বাধ্য। (যদি শায়খ আইমানের পক্ষে থেকে এ নির্দেশ আসে) তখন দাউলাতুল ইসলামের প্রতি বাই’য়াহ দানকারীদের বাই’য়াহ আর বৈধ থাকবে না।”
এ অডিও বার্তার রেকর্ডিং এখনে ইন্টারনেটে বিদ্যমান আছে।[56]
এটি আরেকটি সাক্ষ্য যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বাগদাদি মধ্যস্থতাকারী এবং বিচারক হিসেবে শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীকে গ্রহন করেছিল এবং সন্তুষ্ট ছিল। এবং এ সাক্ষ্য এসেছে খোদ আইসিসের একজন শার’ঈ কর্মকর্তার কাছ থেকে।
মুবাহালার ব্যাপারে দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য বিষয় –
আদনানি তার “হে লোকসকল! আল্লাহর দিকে আহবানকারীর আহবানে সাড়া দাও” – শীর্ষক বক্তব্য বলেছে “…তাই সাবধান, দাউলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।”
অথচ মুবাহালা করার সময় আইসিসের ব্যাপারে যেসব অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে সে মুবাহালা করেছিল, তার মধ্যে ছিল – “দাউলার (আইসিসের) বিরুদ্ধে যারাই যুদ্ধ করে দাউলা তাদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হিসেবে গণ্য করে, এবং তাদের মুরতাদ মনে করে।”
অর্থাৎ আদনানি মুবাহালার সময় দাবি করেছিল এ অভিযোগ মিথ্যা। আদনানি দাবি করেছিল “আইসিসের” বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে মনে করে না। “আইসিসের” বিরুদ্ধে যারাই যুদ্ধ করে আইসিস তাদেরকে কাফির-মুরতাদ মনে করে না।[57]
তাহলে কিভাবে “হে লোকসকল! আল্লাহর দিকে আহবানকারীর আহবানে সাড়া দাও” – শীর্ষক বক্তব্যে সে ঠিক ঐ কথাই ঘোষণা করলো যা সে ইতিপূর্বে এত প্রবলভাবে অস্বীকার করেছিলো? এবং আদনানি মুবাহালাতে তার যে প্রতিপক্ষ ছিল তার অভিযোগেরই সত্যতা প্রমাণ করলো! প্রথমে সে বললো – “যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা তাদের তাকফির করি না।” অতঃপর সে বললো, “দাউলাতুল ইসলামের (‘ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারনে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা উপলব্ধি করো আর না করো।” কিভাবে সে সাহস করলো এমন একটি বিষয়ে মুবাহালা করতে যাতে সে নিজেই সাংঘর্ষিক ও স্ববিরোধী বক্তব্য দিল?
কাফিরদের প্রশংসা
আদনানির দাবি অনুযায়ী আল-ক্বা’ইদাহ্ গোমরাহ হয়ে যাবার আরেকটি প্রমাণ হলো কাফিররা আল-ক্বা’ইদাহ্র প্রশংসা করে। “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না” বক্তব্যে সে বলে, “প্রকৃত আল-ক্বা’ইদাহ্ তো সেটি নয়, যাকে নিয়ে জঘন্য লোকজন প্রশংসা করবে, যার ব্যাপারে পথভ্রষ্ট ও বিপথে যাওয়া ব্যক্তিরা ভালোবাসার কথা বলবে – তাওয়াগীত যার সাথে সময়ে সময়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।“
অথচ কাফিরদের প্রশংসা পাওয়া এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্ এবং খোদ আইসিস, দুটোর মধ্যেই বিদ্যমান।
কত সুন্দর করেই না এ অভিযোগের খন্ডন ভাই আব্দুল হামিদ আল-মাক্কি করেছেন, আল্লাহ তার কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন – “কে প্রশংসা করলো আর কে নিন্দা করলো এগুলোর ভিত্তিতে কোন দল, ব্যাক্তি, বা কাজকে বিচার করা কখনো সঠিক পদ্ধতি না। আমরা কিসের উপর আছি, আমরা কি হাক্বের অনুসরণ করছি নাকি বাতিলের, তা পরিমাপের সঠিক পদ্ধতি এই না যে আমরা দেখবো কে আমাদের প্রশংসা করছে আর কে নিন্দা করছে।
বরং শারীয়াহ্র পদ্ধতি হল ব্যাক্তিকে তার কথা ও কাজের ভিত্তিতে বিচার করা ক্বুর’আন ও সুন্নাহর মাপকাঠি অনুযায়ী। এটুকু করার পর যদি কে প্রশংসা করলো আর কে নিন্দা করলো তা বিবেচনা করা হয় তবে তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু শুধুমাত্র প্রশংসা ও নিন্দা, স্বতন্ত্রভাবে মানুষকে বিচার করার ক্ষেত্রে কোন গুরুত্ব বহন করে না।“
শত্রু দুটি কারনে প্রশংসা করতে পারেঃ
১। এটি তাদের কোনো চক্রান্তের অংশ। একটি কৌশল যার মাধ্যমে তারা মুজাহিদিনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কেননা তারা বুঝতে পেরেছে এ কৌশলের মাধ্যমে মুজাহিদিনের মধ্যে অনৈক্য তৈরি করা যেতে পারে। এবং তারা জানে এমন দল আছে যারা এধরনের কৌশল দ্বারা প্রভাবিত হয়।[58]
২। এটা হতে পারে যে তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল-ক্বা’ইদাহ্র দাওয়াহ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ইমান কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ না। আল্লাহ যে কোন সময়, যে কাউকে ইমান দান করতে পারেন, এবং এটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য অসম্ভব না, বিশেষ করে যেহেতু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিয়াসাহ শারিয়াহ্ র আলোকে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে বিভিন্ন ভাবে আচরণের দ্বারা তাদের অন্তরসমূহকে নরম করে তাদের সত্যের নিকটবর্তী করার নীতি আল-ক্বা’ইদাহ্ তাদের মিডিয়া প্রচারণাতে গ্রহন করেছে।[59]
উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র ব্যাপারে আইসিসের অফিসিয়াল ম্যাগাজিন দাবিক্বে-র ষষ্ঠ সংখ্যায় আবু জারির আল-শিমালি একটি আর্টিকেল লিখেছে। ‘ওয়াযিরিস্তানের আল-ক্বা’ইদাহ্’ শিরোনামের এ লেখায়, ৪৩ নং পৃষ্ঠায় সে বলেছে-
‘অবশেষে ২০১০-র শেষের দিকে আমরা সবাই মুক্তি পেলাম, কিন্তু রাফিদারা কিছু ভাইকে জেলে রেখে দিয়েছিলো। এর মধ্যে ছিলেন দুইজন ভাই যারা আল-ক্বা’ইদাহ্কে বায়াহ্ দেয়নি, তাদের নাম আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, খালিদ আল-আরুরি ও সুহাইব আল-উরদুনি। আমার বিশ্বাস তাদের ছাড়া না পাবার কারণ ছিল (আল-ক্বা’ইদাহ্) –এর প্রতি তাদের বাই’য়াহ্ না থাকা।’
সুতরাং এ ভাষ্যমতে ইরানি সরকার ঐ ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র প্রতি বাই’য়াহ্ থাকাকে শর্ত হিসেবে আরোপ করেছিলো!! যদি এমনটাই হয় তবে এই আল-ক্বা’ইদাহ্র সাথে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্র আর কী পার্থক্য রইলো, যে আল-ক্বা’ইদাহ্কে নিয়ে আদনানি বলেছে – “প্রকৃত আল-ক্বা’ইদাহ্ তো সেটি নয়, যাকে নিয়ে জঘন্য লোকজন প্রশংসা করবে, যার ব্যাপারে পথভ্রষ্ট ও বিপথে যাওয়া ব্যক্তিরা ভালোবাসার কথা বলবে – তাওয়াগীত যার সাথে সময়ে সময়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।“
আমি বলি, যদি আদনানি এবং আইসিসের দাবিক্বের ম্যাগাযিনের যুক্তি এবং নীতি গ্রহন করা হয়, তাহলে উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্কে আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্র চেয়ে আরো বেশি গোমরাহ বলতে হয়! কারন উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র সময় ইরানি শাসকগোষ্ঠী জেল থেকে মুক্তি দেয়ার সময় আল-ক্বা’ইদাহ্র প্রতি বাই’য়াহ থাকাকে শর্ত হিসেবে গ্রহন করেছিল। সে জায়গায় আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্কে ক্ষেত্রে তারা তো নিছক প্রশংসা করেছে।
আর এ নীতি অনুযায়ী তাহলে আইসিসের ব্যাপারে আমাদের কি বলা উচিৎ যখন বা’থ পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইয্যাত আদ-দুরি ১২/৭/২০১৪ তে আইসিসের প্রশংসা করে তার বক্তব্যে বলেছিলে – ‘খোদা বিপ্লবী সেনাবাহিনি ও দলগুলোকে হেফাজত করুন। আর এদের মাঝে অগ্রবর্তী হলেন “দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহর” বীরসেনানীরা। আমার পক্ষ থেকে গর্ব, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসাপূর্ণ আন্তরিক অভিনন্দন এবং সমাদরপূর্ণ অভিবাদন তাদের নেতাদের প্রতি!’
তাহলে আদনানি ও দাবিক্ব ম্যাগাযিনের নীতি অনুসরণ করে আমরা তাদেরকেই প্রশ্ন করছিঃ
বা’থ পার্টির মুরতাদরা কিভাবে তোমাদের প্রশংসা করে? আইসিস কি তাহলে গোমরাহ হয়ে গেছে?
এছাড়া গাদ্দাফির অধীনে লিবিয়া-মিশর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তত্তাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী, আহমেদ ক্বাদ্দাফ আদাম, “ড্রিম” নামক টিভি চ্যানেলে ১৭/১/২০১৫ তে প্রচারিত এক ইন্টারভিউতে বলেছিল – “আমি দাইশের (আইসিস) সাথে, এবং এর বিশুদ্ধ তারুণ্যের সাথে আছি।“
নুরি আল-মুরাদি কমিউনিস্ট পার্টির একজন সাবেক সদস্য এবং ‘আল্হিওয়ার আল্ মুসামাদ্দিন’-এর লেখক (একটি সভ্য সংলাপ)[60] – যেটি কিছুদিন আগ পর্যন্ত তাগুত সাদ্দাম হুসাইনের প্রশংসা করতো। ‘আল ইতিজাহ আল্ মুয়াক্কিস’ নামক টিভি অনুষ্ঠানে ২৬/৫/২১০৫ তে, হাসান আদ-দাঘিমের সামনে যারা আইসিসকে সমর্থন করে, নুরি আল-মুরাদি তাদের অন্যতম।
সিরিয়ান আর্মির একজন কর্নেল মুহাম্মাদ বারাকাত ২০১৪ সালের মে মাসের ১৮ তারিখ তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে লিখেছে –
‘সিরিয়ান-আরব আর্মির নেতৃবৃন্দের নীতি সম্পর্কে যারা সমালোচনা করে, সম্ভবত তারা জানে না যে আইসিস সম্প্রতি আলেপ্পোতে দুই হাজার সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। এবং সিরিয়ান আর্মির নেতৃবৃন্দের নীতি সম্পর্কে যারা সমালোচনা করে তারা হয়তো জানে না যে, আইসিস দেইর আয-যুরে আল-ক্বা’ইদাহ্র শত শত ভাড়াটে সৈনিককে হত্যা করেছে। আল-ক্বা’ইদাহ্র এই সেনারা আমাদের সাহসী সৈনিকদের বিরুদ্ধে সেখানে প্রচন্ড আক্রমণ করছিলো। তাই আমি বলতে চাই যদি যতক্ষন আমাদের কাজে লাগছে ততোক্ষন আইসিসের সাথে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া, এমনকি প্রয়োজনে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করার যে নীতি সিরিয়ান আরব আর্মির (সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর আনুষ্ঠানিক নাম) নেতৃবৃন্দ গ্রহন করেছেন তা তাদের গভীর প্রজ্ঞা ও বিচক্ষনতার পরিচায়ক।
সুতরাং গোমরাহ ও বিচ্যুত হবার ব্যাপারে যে মানদন্ড আইসিস নির্ধারন করেছে সেটা অনুযায়ী উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্, আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্ ও আইসিস- সবাই পথভ্রষ্ট! সুতরাং যে দোষে আপনারা নিজেরাই পতিত, সেই দোষে কীভাবে অন্যদের দোষারোপ করতে পারেন?
আলিমদের প্রশংসা ও নিন্দার মানদণ্ড কী?
যদিও আদনানি তার মুবাহালাতে শপথ করে বলেছে, কেবল তাদের বিরোধিতা করার কারণে সে কারও নিন্দা করে না, কিন্তু আমি নিশ্চিত, সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত ‘আলিমদের নিন্দার ক্ষেত্রে আইসিসের মানদণ্ড একটিই, আর তা হল তাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করা। ‘আলিমদের প্রশংসা বা নিন্দা করার ক্ষেত্রে তাদের কাজের ব্যাখ্যা আর কোন ভাবেই দেয়া যায় না। তারা কিছু আলিমের সমালোচনা করেছে, কারণ তারা ঐসব ইসলামপন্থীদের উপর তাকফির করেন না যারা সংসদে প্রবেশ করেছে। আবার তারা এমন আলিমদের প্রশংসা করছে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহন ও সংসদে প্রবেশ করার[61] বৈধতা দেন। এরকম কিছু উদাহরণ হলো:
শায়খ আহ্মাদ শাকির, তার বই ‘কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহ্ই হবে মিশরে আইনের উৎস’-র ৪০-৪১ পৃষ্ঠায় বলেন,
‘শারিয়াহ্কে সাহায্য করার জন্য যা কিছু অর্জন করা প্রয়োজন তা সাংবিধানিক শান্তিপূর্ণ পথেই অর্জিত হবে- আর এ পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা আমাদের দাওয়াত উম্মাহ্র মধ্যে ছড়িয়ে দিই। আমরা এ পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রাম করি এবং খোলাখুলি কথা বলি আর এ পদ্ধতির মাধ্যমেই আমরা লক্ষ্য হাসিলের জন্য নির্বাচনে মাধ্যনে লড়াই করি। আমরা এ পদ্ধতির মাধ্যমে উম্মাহ্কে আহ্বান জানাই। যদি এ পথে একবার পরাজিত হই তবে আমরা অনেকবার বিজয়ী হবো। বরং সূচনাতে আমাদের পরাজয়কে আমরা আমাদের সাফল্যের উপলক্ষ বানাবো, যা আমাদের অনুপ্রেরণাকে উদ্দীপিত করবে এবং সংকল্পকে জাগ্রত করবে।’
এরকম বক্তব্য সত্ত্বেও তারা তাদের অফিসিয়াল প্রচারপত্র ‘সাওলাত আল-আনসার’-এ শায়খ আহ্মাদ শাকিরকে আল্লামা (উচ্চ পর্যায়ের আলিম)’ বলে অবিহিত করেছে।
এবং অনুরূপ ভাবে তারা শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম কে তাদের “হুদা আশ শুহাদা-১” শীর্ষক প্রকাশনাতে “মুজাহিদ শায়খ” বলে অভিহিত করেছে। অথচ শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম তার “ রাজনীতি ও শাসন নিয়ে আলোচনা” শীর্ষক অডিও রেকর্ডিং এ সংসদে প্রবেশকে জায়েজ বলেছেন।
এছাড়া আবু বকর আল-বাগদাদি তার ‘কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর নুরকে পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় করবেন না’ শিরোনামের বক্তব্যে শায়খ আতিয়াতুল্লাহ্ আল-লিবিকে অবিহিত করেছেন জিহাদের একজন মূর্তপ্রতীক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে, এবং আইসিসের পক্ষ থেকে শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবিকে অভিহিত করা হয়েছে “সক্রিয় মুজাহিদ ‘আলিম” হিসেবে।
আইসিস কতৃক প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে শায়খ আতিয়াতুল্লাহর ব্যাপারে বলা হয়েছে –
‘উম্মাহর বীরদের মধ্যে থেকে একজন বীর এবং উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন। মুসলিমদের অন্তরে গর্ব, দৃঢ়তা এবং সংকল্প বৃদ্ধি করে- এমন কথা ছাড়া অন্য কিছু আমরা তার কাছ থেকে শুনিনি। তিনি হলেন শায়খ, আলিম, মুহাজির, মুজাহিদ, বিনয়ী, উপদেশদাতা, ইবাদাতগুজার আতিয়াতুল্লাহ্ আল-লিবি।’[62]
অথচ যেসব বিশ্বাস ও অবস্থানের কারণে তারা শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীকে আজ আক্রমণ করেছে, সেই একই বিশ্বাস শায়খ আতিয়াতুল্লাহ্ পোষণ করতেন! বরং শায়খ আতিয়াতুল্লাহর মাঝে এ বিষয়গুলো আরো অধিক মাত্রায় উপস্থিত ছিল। তাহলে এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কি? কেন একজনের প্রশংসা করা হচ্ছে এবং অপরজনকে তীব্রভাবে আক্রমন করা হচ্ছে?
শুধুমাত্র আইসিসের সাথে মতপার্থক্যের কারনে।
শায়খ সুলায়মান আল-‘উলওয়ানের[63] ব্যাপারে আলোচনা করা যাক।
আমরা সবাই জানি, আবু মায়সারা আশ-শামি হলো আইসিসের মিডিয়া মুখপাত্র যার লেখা তাদের অফিসিয়াল ম্যাগাযিন ‘দাবিক্ব’-এর প্রতিটি সংখ্যাতে আছে।
আবু মাইসারা আশ-শামী তার “আল হাযমিঃ জাহমিয়্যাহদের গোমরাহী ও পেছনে পড়ে থাকার কবীর গুনাহর মাঝে” – শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছে –
“বিদ’আতি, আর তাগুতের ‘আলিমদের কথা দূরে থাক যখন জিহাদ ফারযুল আইনে পরিণত হয়, তখন জিহাদের ময়দানের ছাত্ররা পেছনে বসে থাকাদের কারো কাছ থেকেই ‘ইলম গ্রহন করবে না। পেছনে বসে থাকা ও তোষামোদকারী সমসাময়িক ফাসিক (কবিরা গুনাহ্গার) ‘আলিমদের ওপর তারা সেইসব তাওহিদ ও জিহাদের ইমামের ইল্মকে প্রধান্য দেয়- যারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন…অতঃপর যখন মুজাহিদিনের সারি বিভক্ত হল যখন মুজাহিদিনের মধ্যে কেউ কেউ আল-মাক্বদিসি (যে ইরাকের জিহাদকে গণহত্যা মনে করতো), আল-‘উলওয়ানের (এ ব্যক্তির ব্যাপারে শহীদ শায়খ সুলতান ইবন বাজাদ আল-উতায়বির লেখা যুক্তিখন্ডন পড়তে পারেন। কারন এখানে আল-সুলুল ও তাদের সেনাদের ব্যাপারে এ ব্যক্তির অদ্ভুত অবস্থানের স্বরূপ উদঘাটিত হয়েছে) , এবং সুরুরি এবং হিযবুল উম্মাহর গোমরাহ আল-তুরাইফি, আল-আযামি এবং আল-মুতাইরিদের মতো ‘আলিমদের নিজেদের নিকটবর্তী হিসেবে গ্রহন করলো।“
আবু-মাইসারা আশ-শামীর লেখা থেকে নিচের বিষয়গুলো বুঝা যায়:
- শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ান হচ্ছেন ফাসিক্ব, কবিরা গুনাহ্কারী, যিনি পেছনে বসে থাকেন।
- শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ান তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা মুজাহিদিনের সারিগুলোকে বিভক্ত করে।
- শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ানকে, হিজবুল উম্মাহ্ ও সুরুরিদের সাথে একই কাতারে ফেলা হয়েছে।
মজার ব্যাপার হল, আবু-মাইসারা তার বক্তব্যে শায়খ সুলতান ইবন বাজাদ আল-উতায়বির যে লেখার কথা বলেছে, তা লেখা হয়েছিল ২০০৩ এর শুরু দিকে। তা সত্ত্বেও, ২০০৩ থেকে পরবর্তী প্রায় ১২ বছর তারা শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ানের ওপর প্রশংসার বৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকে এবং তার গুণকীর্তন করতে থাকে। এ সুদীর্ঘ সময়ে তারা শায়খ সুলাইমান ইবন বাজাদ আল-উতায়বির এ লেখার কথা উল্লেখ করে নি। কিন্তু যখন আইসিসের বিরুদ্ধে ব্যাপারে শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ানের একটি অডিও রেকর্ডিং ইন্টারনেটে প্রকাশ পেল। তখন তারা তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগলো এবং এতো বছর ধরে যে লেখার কথা তারা ভুলে ছিল তা হঠাৎ তাদের মনে পড়ে গেল।[64]
শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ান তার এ বক্তব্যে বলেছেন-
“দাউলার (আইসিস) জন্য কোন ‘আম বাই’য়াহ (খিলাফতের বাই’য়াহ) নেই। কারন ‘আম বাই’য়াহ্র শর্তসমূহের মধ্যে একটি হলো- তাকে আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্দ দ্বারা নির্বাচিত হতে হবে। আবু বকর আল-বাগদাদি আহলুল হাল্ল দ্বারা নির্বাচিত হয়নি এবং আহলুল আক্বদ দ্বারাও নয়।’
একইভাবে শায়খ উমার আল-হাদ্দুশীকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল[65] তাদের সাথে যোগ দেবার। এবং যখন তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাদের বিরোধিতা করলেন, তখন তারা তার পুরনো ভুলগুলো নিয়ে একটি ভিডিও[66] প্রকাশ করলো। যার অর্থ হল তিনি তাদের প্রত্যাখ্যান করার আগ পর্যন্ত এটা তাদের মনে ছিল না। আর যখন শায়খ হাদ্দুশীকে তারা তাদের সাথে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল তখনো এ ভুলগুলোর কথা তাদের মনে ছিল না, এবং তাকে প্রস্তাব দেবার ক্ষেত্রে এ ভুলগুলো প্রতিবন্ধক ছিল না। তবে যখন তিনি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাদের বিরোধিতা করলেন তখন হঠাৎ করে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো, যেমনটা হয়েছিল শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ান, শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসি, শায়খ আবু-ক্বাতাদা, শায়খ হারিস বিন গাযী আন-নাযারি, শায়খ ইব্রাহিম রুবাইশ, শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী সহ অন্যান্যদের ক্ষেত্রে। কারন তারাও আইসিসের বিরোধিতা করেছিলেন।
মুরতাদ এবং বিদ’আতিদের পাশাপাশি যুদ্ধ করা
আইসিসের নানা অফিশিয়াল প্রকাশনার নিয়মিত লেখক আবু মায়সারা আশ-শামি, আইসিসের অফিসিয়াল ম্যাগাজিন দাবিক্ব-এর ষষ্ঠ সংখ্যার ২২ নং পৃষ্ঠায় লিখেছে –
“আমি বিশ্বস্ত সূত্রে[67] জানতে পেরেছি যে ইয়েমেনের আল জউফ প্রদেশে “আনসার আশ শারীআহ্” হুথিদের বিরুদ্ধে মুরতাদ আর্মি (আব্দ রাব্বুর আর্মি, “আরব বসন্তের বাহিনী”) ও দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ব্রাদারহুডের সাথে মিলে যুদ্ধ করছে।”
এ কথার জবাবে আমরা বলি, “হে নির্যাতিত দাউলা (রাষ্ট্র), আল্লাহ তোমার সাথে আছেন” – শীর্ষক বক্তব্যে আইসিসের প্রধান মুখপাত্র বলেছিলঃ
“যখনি দাউলা কোন অপারেশন চালানোর সময় অন্য কোন গ্রুপকে তাদের সাথে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় তখনি দেখা যায় মিডিয়া দাউলার নাম উল্লেখ করা ব্যতীত অপারেশনের সমস্ত কৃতিত্ব কেবল ঐ দলের নামে চালিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, আলেপ্পোতে অবস্হিত “মিনাঘ” বিমানবন্দর মুক্ত করার কৃতিত্ব পুরোপুরি ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে দেয়া হয়, যদিও অপারেশনটির পরিকল্পনা,প্রস্তুতি এবং সম্পাদন করেছিল দাউলার। ফ্রি সিরিয়ান আর্মির কিছু ব্যাটালিয়ানের সৈন্য এ অপারেশানে অংশগ্রহণ করেছিল মাত্র। অপারেশন এর ব্যাপারে মিডিয়া দাউলার নামটি পর্যন্ত উল্লেখ করেনি। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি –FSA- এর সেক্যুলার “বাহিনী প্রধান” এর মুখপাত্র নির্লজ্জের মত এই অপারেশনের কৃতিত্ব দাবি করে। অথচ বাস্তবতা হল যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা ছিল হোটেলে !”
আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই, ফ্রি সিরিয়ান আর্মির ব্যাপারে তোমাদের মতে কি হুকুম হওয়া উচিৎ (তারা কি মুরতাদ না মুসলিম)?[68] বিশেষ করে তোমরা যাদের সাথে, যাদের পাশাপাশি, যাদের সাথে মিলে “মিনাঘ” বিমানবন্দরের যুদ্ধে অংশগ্রহন করলে তাদের সাথে যখন ফ্রি সিরিয়ান আর্মির মূল নেতাদের এতোই দহরম-মহরম যে খোদ “বাহিনী প্রধান”[69](Cheif Of Staff) এই অপারেশনের কৃতিত্ব স্বীকার করে বক্তব্য দিচ্ছে! আরো নির্দিষ্ট করে বললে, তোমাদের সাথে এই অপারেশনে অংশগ্রহণকারীরা হল সেই “নর্দান স্টর্ম”[70] যাদের সম্পর্কে তোমাদের মুখপাত্র সে একই বক্তৃতায় বলেছে –
“যারা “নর্দান স্টর্ম” নামে পরিচিত তাদের শয়তানী ও পাপাচার সম্বন্ধে সবাই জানে। দূরের এবং কাছের সবাই জানে যে তারা আমেরিকান শূকর জন ম্যাককেইনকে সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং তার সাথে আলোচনায় তারা,দাউলা ও মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সম্মত হয়েছে। যেদিন দাউলার সৈনিকরা মিনাঘ বিমানবন্দরে আক্রমণ করে সেদিন তারা একটা নুসাইরি ট্যাংকও চুরি করে নিয়ে গেছে,যে ট্যাংক থেকে মিনাঘ বিমানবন্দর থেকে মুসলিমদের উপর গোলাবর্ষণ করা হত। সম্প্রতি তারা ক্রুসেডারদের এক গুপ্তচরকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং এ গুপ্তচরকে রক্ষার্থে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। দাউলার সৈনিকরা এ গুপ্তচরের ক্যমেরায় স্থাপনা ও সামরিক অবস্থানের রেকর্ডিং পেয়েছে, এমন এক সময়ে যখন অ্যামেরিকা সামরিক হামলার ব্যাপারে আলোচনা করছে।“
যদি তোমাদের মতে এরা মুরতাদ হয়ে থাকে, তাহলে তো এটা স্ববিরোধি হয়ে গেল! নিজেরাই যেখানে এই কাজ করছ সেখানে কিভাবে তোমরা অন্যদের সমালোচনা কর?[71]
হুথিদের বিরুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে মিলে যুদ্ধ করার ব্যাপারে আলোচনা করা যাক।
এ ব্যাপারে তোমাদের প্রতি আমাদের প্রশ্ন হল ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ( মুসলিম ব্রাদারহুড) সাথে সম্পর্কিত সবাই কি তোমাদের মতে কাফির?[72] যদি তোমাদের উত্তর হয়, ‘না বরং তারা বিদ’আতি” – তাহলে তোমাদের উচিৎ শায়খ আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ির নিচের কথাগুলো বিবেচনা করাঃ
“শায়খ আব্দুল্লাহ আল জানাবি একজন সুফি, যার সাথে আমাদের মতপার্থক্য আছে। বিভিন্ন বিষয়ে আমরা উনার সাথে একমত নই। তা সত্ত্বেও শায়খ আবু আনাস আশ শামী (আল্লাহ্ তার উপর রহম করুন) তার মাথায় চুম্বন করতেন। আমরা তার ব্যাপারে ভাল ধারণা রাখতাম এবং আশা করতাম যেন তাকে আমরা সালাফদের পথে নিয়ে আসতে পারি। শায়খ আবু আনাস তাকে ইবন তাইমিয়্যাহর একটা বইও দিয়েছিলেন। আমরা তার কাছ থেকে আর কি চাইতে পারি যেখানে তিনি, জিহাদের পতাকাকে সমুন্নত করছেন এবং মুসলিমদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ডাক দিচ্ছেন? আল্লাহর কসম, আমরা উনাকে তাদের চেয়ে উত্তম মনে করি, যারা জিহাদের ব্যাপারে মুসলিমদের নিরুৎসাহিত করে এবং পেছনে পড়ে থাকে….সুতরাং আমার ভায়েরা! আমাকে একজন বিদ’আতে লিপ্ত সুফি এনে দাও,যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে। আমি তার পায়ে চুমু খাব। তিনি আমার কাছে পেছনে বসে থাকা সাহীহ আক্বিদাওয়ালাদের চেয়ে উত্তম। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন ব্যাক্তি মুসলিম এবং মুজাহিদ ততক্ষণ পর্যন্ত সে কল্যাণের উপর আছে। সে পেছনে বসে থাকা ব্যাক্তির থেকে উত্তম, পেছনে বসে থাকা ব্যাক্তি যেই হোক না কেন। তবে তার জিহাদ আমাকে তার বিদ’আতগুলো পরিত্যাগ করতে বাধা দেয় না এবং একই সাথে তার বিদ’আত জিহাদের ব্যাপারে তাকে সমর্থন করতে আমাকে বাধা দেয় না…বিদ’আতির ব্যাপারে আমাদের অবস্হান হল,আমরা তার ব্যাপারে ধৈর্য্য ধারণ করি,তাকে নাসীহাহ করি, তার পাশে থেকে যুদ্ধ করি এবং ভুলের মধ্যে তাকে ফেলে রাখি না আবার তার তোষামোদও করি না। আমরা তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত দাওয়াহ দিয়ে যেতে থাকি যতক্ষণ পর্যন্ত না সে সুন্নাহর পথে ফিরে আসে।”[73]
তবে কি যারক্বাউয়িও পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল?
দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহর পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে[74] ইখওয়ানুল মুসলিমীনসহ ইরাকের দলসমূহকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল-
“এটা জানা কথা যে তারা আক্বিদার কিছু বিষয়কে হালকা করে ফেলেছে। তারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পদ্ধতিকে গ্রহন করেছে এবং তারা মনে করে এটা শুরার মত। মাসলাহা ও মাফসাদার দোহাই দিয়ে তারা সেক্যুলার সরকারের সাথে অংশগ্রহণ করাও বৈধ মনে করে।”
আর দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত দলগুল সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়েছে –
এরা হল সে সব দল যারা সালাফিয়্যাহ এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর মানহাজের স্লোগান দেয়, কিন্তু তাদের এসব স্লোগানের আড়ালে তারা বিভিন্ন শার’ঈ বিষয়ে ইখওয়ানুল মুসলিমের মানহাজ ধারন করে, তারা উপলব্ধি করুক আর না করুক। এছাড়া এরা “সালাফি নবজাগরণের” বিভিন্ন আলিম এবং দা’ঈদের সাথেও সম্পর্কযুক্ত। এবং ইখওয়ানের মতই তারা সেক্যুলার সরকারে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহন করাকে বৈধ মনে করে, যদিও ইখওয়ানের সাথে অন্য অনেক বিষয়ে তাদের মতপার্থক্য রয়েছে। সুতরাং বলা যায়,এই আন্দোলন, বিশুদ্ধ মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়”
লক্ষ্য করুন, এখানে এমন দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যারা সরকারের সাথে যোগ দেয়া এবং গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারনা গ্রহন করাকে বৈধতা দেয়।
অতঃপর বিবৃতিটিতে এসব দলের ব্যাপারেই বলা হয়েছে –
“এবং জিহাদের ময়দানে এসকল পার্থক্য কোন ভাবেই মুসলিম ভূখন্ড আক্রমনকারী ক্রুসেডার শত্রুকে বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে এসব আন্দোলনের সাথে ইমানের ভিত্তিতে পারস্পরিক আনুগত্যের (আল ওয়ালা) দ্বারা সহায়তা, সহযোগিতা, পারষ্পরিক উপদেশ এবং একে অপরের সাথে মাশওয়ারার করার ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা হতে পারে না।”[75]
সুতরাং তোমরা যাদের সাথে ইতিপূর্বে একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করেছো তাদের মধ্যে যদি এই বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে থাকে, তাহলে কিভাবে তোমরা একই কাজের জন্য অন্যদের দোষারোপ করো?!!
আর এরূপ করা যদি পথভ্রষ্টতা হয় তাহলে সর্বাগ্রে তোমরাই পথভ্রষ্ট।
আত-তাইফাতুল মুমতানি’য়া
ড. আইমান আয-যাওয়াহিরীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দেওয়া “হে আল-ক্বা’ইদাহ্র আমীর, আমি দুঃখিত” শীর্ষক বক্তব্যে আদনানি মুজাহিদিনের মধ্যেকার, বিভক্তি, মতবিরোধ দূর করার এবং সংহতি বৃদ্ধির কিছু পথ উল্লেখ করে। যার মধ্যে ছিল “মানহাজের শুদ্ধিকরণ” এবং প্রকাশ্যে মিশরিয়, পাকিস্তানি এবং আফগান সেনাবাহিনীর মুরতাদ হবার ব্যাপারে ঘোষণা করা।
প্রশ্ন হল আদনানি এখানে কি দলগতভাবে কুফরের কথা বলছে? নাকি এসব বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের ব্যাক্তিগতভাবে কাফির-মুরতাদ হবার কথা বলছে?[76]
যদি সে দলগত কুফরের কথা বুঝিয়ে থাকে, তাহলে এটা জানা কথা ড. আয-যাওয়াহিরীও এসব বাহিনীকে কুফর ও রিদ্দাহ্র দল গণ্য করেন। “তাগুত” শীর্ষক অডিও টেপে তিনি স্পষ্ট ভাবে এটি উল্লেখ করেছেন এবং টেপটি মিম্বার আত-তাওহিদ ওয়াল জিহাদ” ওয়েবসাইটে “তাগুতের বিরুদ্ধে জিহাদ দ্বীনের অপরিবর্তনীয় পথ” শিরোনামের একটি ঘোষণাপত্র আকারে আছে। এটি “আল জিহাদ আল-ইসলামি আল-মাসরি” [Egyptian Islamic Jihad] নামক জামা’আহ্র, যেটি ঘোষণাপত্রটির প্রকাশকালে মিশরীয় সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত ছিল, অফিশিয়াল ঘোষণাপত্রের একটি। এ ঘোষণাপত্রটিতে আত-তাইফাতুল মুমতানি’য়া সম্পর্কে বলা হয়েছে –
‘শাসকের অনুগত এই দলটির ব্যাপারে হুকুম শাসকের অনুরূপ। আর তা হল শাসকদের মতোই এ দলটিও একটি মুরতাদ দল। তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করা হবে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নিয়ম কি হবে ইত্যাদি প্রশ্নের ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে একটি সম্মিলিত দল হিসেবে দেখি, স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে না, যদিও শাসকের অনুগত এদলের ভেতরে এমন ব্যাক্তিদের থাকার সম্ভাবনা আছে যারা মুসলিম। শার’ঈ ভাবে গ্রহনযোগ্য ওজর তাদের থাকলে তাদের সে ওজর গ্রহন করা হবে। আর যার কোন বৈধ ওজর নেই, এবং যে সজ্ঞানে ও জ্ঞাতসারে এসব শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন করে, সে নিজেও ঐসব শাসকদের মতো মুরতাদ।“
কিন্তু আদনানি যদি এরকম কোন দলের প্রতিটি ব্যাক্তির উপর তাকফির করাকে বুঝিয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় স্পষ্ট করার প্রয়োজন আছে। প্রকৃতপক্ষে এটিই সে বুঝিয়েছে, কারন তাদের অফিশিয়াল ম্যাগাযিন “দাবিক্ব”-এর ষষ্ঠ সংখ্যার, ২০ পৃষ্ঠার একটি ফুটনোটে তারা বলেছে সালাফদের ইজমা হল কোন দল আর সে দলের অন্তর্ভুক্ত ব্যাকিদের ক্ষেত্রে (হুকুমের) কোন পার্থক্য নেই। এবং তারা বলেছে “কুফরের ঘোষণা ও হুকুমের ব্যাপারে আয-যাওয়াহিরী কোন দল ও সে দলের অন্তর্ভুক্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে পার্থক্য করে। কুফরের উপরে, যেমন মানবরচিত আইন বা শিরকপূর্ণ মাজারের পক্ষে যারা একত্রিত হয়েছে। এধরনের দল ও দলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তির মধ্যে এধরনের পার্থক্য করা সালাফদের ‘ইজমা বিরোধী…আর তাই এ ধরনের দলের সদস্যদেরকেও আমরা ব্যক্তিগতভাবে কাফির মনে করি।“
সুতরাং আইসিসের অফিশিয়াল ম্যাগাযিনের এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় আত-তাইফাতুল মুমতানি’য়ার অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর যে তাকফির করবে না সে সালাফদের ইজমার বিরুদ্ধে গিয়েছে। শুধু তাই না এর মাধ্যমে তার মানহাজ ও বিচ্যুত হয়ে গিয়েছে! তাই আমরা এখন এরকম কিছু মানুষের তালিকা উপস্থাপন করবো যাদের মানহাজ, আইসিসের এ বক্তব্য অনুযায়ী ভ্রান্ত। এবং অতঃপর আমরা প্রশ্ন করবো, শায়খ উসামাহ্র সময়ে (অর্থাৎ আইসিসের দাবি অনুযায়ী তারা মানহাজচ্যুত হবার আগে) আল-ক্বা’ইদাহ্র নেতৃবৃন্দের এবং জিহাদি আন্দোলনের শায়খদের এ ব্যাপারে অবস্থান কি ছিল? তারা কি এ বিষয়টিকে একটি ‘ইজমা হিসেবে গ্রহন করেছিলেন যার ভিত্তিতে কোন দল বা ব্যাক্তি হাক্বের উপর আছে না গোমরাহ হয়ে গেছে তা বিচার করা হবে, নাকি তারা একে একটি ইজতিহাদি বিষয় হিসেবে গ্রহন করেছিলেন, এবং আইসিসই আজ নবউদ্ভাবিত বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছে যা জিহাদি আন্দোলনের শায়খ ও নেতাদের অবস্থানের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক?
উসামাহ্র সময়ের আল-ক্বা’ইদাহ্র নেতা শায়খ আতিয়াতুল্লাহ বলেন-
‘তবে কেউ যদি দাবি করে যে – তাইফাতুল মুমতানি’য়ার অন্তর্ভুক্ত সকলেই কাফির এবং এতে কোনো ধরনের ব্যতিক্রম থাকতে পারে না, এটিই একমাত্র সঠিক অবস্থান এবং বাদবাকি যা আছে তা হল গোমরাহি, এটি দ্বীনের একটি সুস্পষ্ট ও অপরিহার্য বিষয়, এবং যে এ বিষয়ে মতপার্থক্য করবে সে তাওহীদের শর্তসমূহ বুঝতেও সক্ষম হয় নি, পূরনও করেনি ইত্যাদি – তার ব্যাপারে আমি বলি – বরং এটিই প্রকৃত মূর্খতা ও গোমরাহি। এধরনের দাবি কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য না, কারন নিঃসন্দেহে এটি একটি ইজতিহাদি বিষয়, যেখানে বিভিন্ন দালিল-আদিল্লা বিবেচনায় নিয়ে একটি অবস্থান গ্রহন করা হয়েছে। এ বিষয়টি ঐসব বিষয়ের মত না, যেসব বিষয়ের প্রতিটি অংশ এবং প্রতিটি শাখার ব্যাপারে দ্বীনের একটিমাত্র হুকুম অপরিহার্য ভাবে জ্ঞাত।“
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে এই ব্যাপারে (তাগুতের অনুগত সেনাবাহিনি) সঠিক অবস্থান হলো- যেভাবে মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সেভাবেই যুদ্ধ করবো। কিন্তু তাদের উপরে তাকফিরের ব্যাপারে আমরা সতর্ক ও দ্বিধাগ্রস্ত… আমাদের বার্তাগুলোতে আমরা বলি – ‘এ সেনাবাহিনীগুলো হচ্ছে মুরতাদ তাগূত ও তাগূত রাষ্ট্রগুলোর হাত- যার মাধ্যমে এরা হামলা করে, যার অস্ত্র দিয়ে এরা হত্যা করে, তারা তাদের সমর্থক ও সাহায্যকারী এবং তারা তাদের সৈন্য এবং লোকবল’ বা এজাতীয় অন্যান্য বক্তব্য। এটি একটি দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক, কিন্তু তাদের (প্রত্যাককে) তাকফির করা ভিন্ন আরেকটি ব্যাপার।’[77]
শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল-লিবিও এ বিষয়ে বলেছেন কিছু কিছু পরিস্থিতিতে মুরতাদ শাসকদের সমর্থক বাহিনীর অর্থাৎ তাইফাতুল মুমতানি’য়ার অন্তর্ভুক্ত ব্যাক্তির উপর নির্দিষ্ট করে তাকফির করা যাবে না! তিনি এও বলেন যে, এ বিষয়টি ঐসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর ক্ষেত্রে ইখতিলাফ আছে, এবং নিয়ে যুক্তিতর্কের দুর্গ বানানো এবং কামান-দাগার প্রয়োজন নেই। অতএব এ বিষয়টিতে কারো হাক্ব বা বাতিল হবার পরিচায়ক কিংবা মানহাজের বিশুদ্ধতার শর্ত ধরার প্রশ্নই আসে না- যেমনটি আদনানি দাবি করেছে!
শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল-লিবি তার তার কিতাবের “নাযারাত ফিল ইজমা’ আল ক্বাতী” (অবিসম্বাদিত ইজমা’ ব্যাপারে পর্যালোচনা) উপসংহারে বলেন –
‘…মুরতাদ শাসকদের সমর্থনকারীরা (যেমন সেনাবাহিনী)- তারা আসলে ব্যক্তিগতভাবে কাফির কিনা?…যদি কেউ সন্দোহাতীতভাবে বুঝতে সক্ষম হয় যে, কোন সময়ে অথবা কোন জায়গায় এরকম দলগুলোর (তাইফাতুল মুমতানি’য়ার) লোকদের মধ্যে তাকফির না করার বৈধ প্রতিবন্ধকগুলো ব্যাপক ভাবে উপস্থিত আছে, সে ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগতভাবে তাকফির করা যাবে না, কারণ তাদের ক্ষেত্রে তাকফিরের প্রতিবন্ধক উপস্থিত আছে; বরং তাদের ইসলামের ভিত আকড়ে আছে বলেই গণ্য করা হবে, ব্যতিক্রম হবে ঐ ব্যাক্তিরা যাদের কুফরের ব্যাপারে বাস্তবতা জ্ঞাত।
তেমনি যে ব্যাক্তি সঠিক ভাবে জানতে সক্ষম হবে যে এসব দলের কোনটির কোনো বৈধ ওজর বা তাদের ক্ষেত্রে তাকফিরের বৈধ প্রতিবন্ধকসমূহ থেকে কোন প্রতিবন্ধক উপস্থিত নেই, তার জন্য তখন তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত ব্যাক্তিদের ওপর তাকফিরের ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। এ রকম দলগুলোর সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে তাকফিরের ক্ষেত্রে এটি জানা জরুরী যে- তাদের উপর তাকফির করার ক্ষেত্রে কোন বৈধ প্রতিবন্ধক আছে কি না। আর এ বিষয়টি নিয়েই রয়েছে বিভিন্ন মত এবং বিভিন্ন ব্যাখ্যা।
আর তাই এর ভিত্তিতে স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়, এটি একটি ইজতিহাদি বিষয় যেটা নিয়ে যুক্তিতর্কের দুর্গ গড়া ও কামান দাগার প্রয়োজন নেই, এবং এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ঝগড়া ও বিভক্তির প্রয়োজন নেই। আর এটা কিভাবেই বা হতে পারে যখন এরকম কুফরের উপর থাকা দলের (তাইফাতুল মুমতানি’য়া) আবির্ভাব দীর্ঘকাল ধরেই ক্রমাগত হয়ে আসছে, এবং পুর্বযুগ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তাদের উপর তাকফির করার ক্ষেত্রে ‘আলিমগণের মতপার্থক্য বিদ্যমান আছে। এবং ‘আলিমগণের কেউই কখনোই দাবি করেন নি এটি একটি স্পষ্ট বিষয় যা নিয়ে ‘ইজমা আছে এবং এ কারনে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করা অনুমোদিত নয়।“
অন্যত্র তিনি বলেছেন, “ইসলামের সুপরিচত বিষয় থেকে (সম্মিলিতভাবে) বিরত থাকা দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে ‘আলিমগণের ‘ইজমার সাথে এ দলগুলোর উপর তাকফির করা হবে কি না, এ নিয়ে ‘আলিমগণের মতপার্থক্য – এ দুইয়ের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই, একটি আরেকটির শর্তাধীন নয় । যদিও অনেকে এ দুটো বিষয়কে গুলিয়ে ফেলে এবং দুটোকে একই বিষয় মনে করে।[78]
শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্ (আইসিসের দৃষ্টিতে তিনি পথভ্রষ্ট হবার আগে) বলেন, ‘কোন মুরতাদ দলের ব্যাপারে আমাদের অবস্থানের কারনে (অর্থাৎ তাদের দলগতভাবে মুরতাদ গণ্য করার কারনে), ঐ দলের প্রত্যেক সদস্যকে ব্যক্তিগত ভাবে মুরতাদ ও অনন্তকালের জন্য জাহান্নামি গণ্য করা কি আবশ্যক? এব্যাপারে নানাবিধ অনুসন্ধান ও দালীল বলে যে এ বিষয়টি অধিকতর অধ্যায়নের দাবি রাখে কারন এটি হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে, এবং ঐসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর ব্যাপারে ইখতিলাফ আছে।’[79]
তাইফাতুল মুমতানি’য়া বা নিবৃত্ত থাকা দলের ব্যাপারে শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্র অবস্থান যে আইসিসের যে মানহাজের অনুসরণ করে সে মানহাজের অবস্থান থেকে ভিন্ন[80] এটি আগে থেকেই জানা একটি তথ্য। আইসিসের চোখে “গোমরাহ” হবার অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্র অবস্থান এটি, যা আইসিসের না জানার কোন কারন নেই। শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসী বলেন, “যারা শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্র উপর তাকফির করে, তাদের কেউ কেউ বলে এটা হল একারনে যে শায়খ ইসলামপন্থী সংসদ সদস্যদের উপর তাকফির করেন না, এবং তিনি তাগুতের সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সৈন্যর উপর তাকফির করেন না।“[81]
এমনকি খোদ আইসিসের মূল শার’ঈ তুর্কি আল-বিন’আলি বলেছে যে, ইজমা আছে এমন ক্ষেত্রেও মতপার্থক্য করা জায়েজ!! মিম্বার আত-তাওহিদ ওয়াল জিহাদ ওয়েবসাইটে তাইফাতুল মুমতানি’য়া বা নিবৃত্ত থাকা দলের প্রতিটি সদস্যকে ব্যাক্তিগতভাবে কাফির ঘোষনার ব্যাপারে তার ফাতাওয়াতে সে বলেছে – ‘হ্যাঁ! নির্দিষ্ট কোনো সৈন্য ও পুলিশ সদস্যের ওপর হুকুমের ক্ষেত্রে (হুকুম কি হবে এ বিষয়ে) মতপার্থক্য রয়েছে।’
খুরাসানের আল—ক্বা’ইদাহ্র শারিয়াহ্ কমিটির সদস্য শায়খ আবদুল হাকীম হাসসান বর্তমান মুসলিম বিশ্বের সেনাবাহিনীগুলোর কুফরের নিয়ে করা একটি গবেষণায় এ বিষয়টি নিয়ে বলেছেন-
“তাত্ত্বিকভাবে দালিল ও নুসুসের ভিতিতে যে ‘আম হুকুম পাওয়া যায় তা নির্দিষ্ট ভাবে দায়ী ব্যাক্তির উপর প্রয়োগ করার বিষয়টি নিয়ে আমি বলতে চাই, এটি দ্বীনের উসুল (মৌলিক বিষয়সমূহ) কিংবা আক্বিদাহ্র অন্তর্ভুক্ত কোন বিষয় না। বরং এটি হল ঐসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যা হল ফিক্বহুল ওয়াক্বি বা বাস্তব পরিস্থিতির অনুধাবনের সাথে জড়িত। এ বিষয়ে যারা নজর দেবে, তারা ভিন্নমত পোষণ করতেই পারে – এবং ভিন্নমত পোষণ করার কারনে সে গুনাহগার বা ফাসিক্ব বা বিদ’আতি গণ্য হবে না, যদি সে এ বিষয়টি গবেষণা ও অধ্যায়ন করার সময় সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হবার ক্ষেত্রে তার সাধ্যমত চেষ্টা করে থাকে। আমার ভাইদের প্রতি আমার উপদেশ হবে শারিয়াহ্র বিষয়গুলো নিয়ে, বিশেষ করে এধরনের সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে নিজেদের অন্তরকে উন্মুক্ত রাখার। যাতে করে হৃদয়গুলো চরমপন্থার (গুলুহ) দিকে ঝুঁকে না যায়, নিজের কাছে যা সঠিক বলে মনে হয় তা অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে আমরা যেন কেউ জোরাজুরি না করি এবং এধরবের আলোচনাতে কোন অনুচিত শব্দ যেন আমরা ব্যবহার না করি। আর সত্যের সন্ধানে যে ব্যাক্তি ইজতিহাদ করেছে তাকে অভিযুক্ত করা বৈধ না।।[82]
আবু মুস’আব আস-সুরিও এ রকম দলগুলোর প্রত্যেক সদস্যকেই ব্যাক্তিগতভাবে কাফির মনে করেন না, তাইফাতুল মুমতানি’য়া বা নিবৃত্ত থাকা দলগুলো সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার পর উপসংহারে তিনি বলেন- ‘শারীয়াহ্ থেকে এটা স্পষ্ট- এবং আল্লাহই ভালো জানেন- এ সব যোদ্ধাদের ওপর সম্মিলিতভাবে তারা যে ব্যানারের (আদর্শের,কতৃপক্ষের) অধীনে যুদ্ধ করে তার হুকুমই বর্তাবে। যারাই মুরতাদ শাসকের অধীনে যুদ্ধ করবে, তাদেরকে একটি মুরতাদ দল বিবেচনা করেই তাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করবো। যারা আমেরিকা ও অন্যান্য কুফফারের অধীনে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, আমরা তাদেরকে একটি কুফরের দল হিসেবে গণ্য করেই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো… এবং এর ভিত্তিতে তাদের মৃতদের জন্য দু’আ করা যাবে না। তবে লক্ষণীয় হল, আমরা এসব দলের প্রত্যেক সদস্যকে ব্যাক্তিগতভাবে কাফির মনে করি না।’[83][84]
শায়খ আলি আল-খুদাইরকে[85] জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ‘যদি এমন নিবৃত্ত থাকা দল বা তাইফাতুল মুমতানি’য়া পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে যেমন তাগূতের কাছে বিচার চাওয়ার মতো কুফর আছে, তবে কি যা আপাতভাবে প্রকাশ্য তার ভিত্তিতে সে দলের প্রত্যেকেই কাফির ঘোষণা করা হবে, নাকি প্রত্যেককে তার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি অনুযায়ী তাকফিরের প্রতিবন্ধকটা ও শর্ত বিবেচনা করে পার্থক্য করতে হবে?’ তিনি উত্তর দেন, ‘তাদের সকলের উপর তাকফির করা জায়েজ নয়।’[86]
দ্বিতীয়ত, এ রকম দলগুলোর কুফরের ব্যাপারে আসলেই কোনো ইজমা হয়েছে?? শায়খ নাসির আল-ফাহ্দ- যাকে আইসিস তাদের শায়খ মনে করে, বলেন- ‘এবং অবগত হও, শায়খুল ইসলাম তাদের কুফরের ব্যাপারে ফুকাহাদের কোনো ইজমার কথা উল্লেখ করেননি বরং তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে ইজমার কথা উল্লেখ করেছেন। আর সাহাবাদের মতের ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় তিনি বলেছেন যে, তারা ঐক্যমতে পৌঁছেছিলেন তারা মুরতাদ- যদিও এ তথ্যটি আহরিত হয়েছে এসব দলের কাজের পেছনের কারন ব্যাখ্যা ও পর্যালোচনার পর, সাহাবাদের কাছ থেকে সরাসরি কোনো উক্তি বা দালীলের মাধ্যমে নয়। সুতরাং এ ব্যাপারে সাহাবারা স্পষ্টভাবে যা নিয়ে একমত ছিলেন এবং বাস্তবেও করে দেখিয়েছিলেন- সেটি হচ্ছে এমন দলগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা- যেটির ব্যাপারে ফুকাহাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু যুদ্ধের কারণের ক্ষেত্রে স্পষ্ট ঐক্যমত পাওয়া যায় নি যে কারনে এ ব্যাপারে মতপার্থক্য হয়েছে- একারনে “যে ব্যাক্তি তাদের উপর তাকফির করে না, সে ‘ইজমার বিরুদ্ধে গেল”, এমন বলা যাবে না।’[87]
এমনকি নাজদী দাওয়াহ্র একজন ইমাম- শায়খ আব্দুল্লাহ্ আবু বাতিন- বলেন, ‘যদি কোনো দল ইসলামের নিদর্শনগুলো থেকে দূরে সরে যায় কিংবা পালনে বিরত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে যদিও তারা কুফফার বা মুশরিকীন না এবং তাদের ভূমি দ্বার আল-ইসলাম।[88]
তার এ কথাটি বিবেচনা করুন- ‘যদি তারা কুফফার নাও হয়ে থাকে!’ অর্থাৎ এমনো একটি নিবৃত্ত থাকা দল বা তাইফাতুল মুমতানি’য়া থাকতে পারে যারা ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত কিন্তু তারা এখনও মুসলিম।
উপসংহারঃ
যদি এ আলোচনার শুরুতে উল্লেখ করা আদনানির মূলনীতি; যার ভিত্তিতে সে বলেছে ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী এবং বর্তমান আল-ক্বা’ইদাহ্কে গোমরাহ হয়েছে এবং সঠিক মানহাজ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, গ্রহন করা হয় তাহলে উপরে উল্লেখিত অন্যান্য সকল ব্যাক্তিত্বকেও মানহাজ বিচ্যুত বলে গ্রহন করতে হবে। উল্লেখিত ব্যাক্তিদের মধ্যে উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র প্রথম সারির একাধিক নেতা আছেন। আদনানির নীতি অনুযায়ী তারাও গোমরাহ ছিলেন কিংবা গোমরাহীকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা লিপ্ত ছিলেন। যার অর্থ হয় উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্ও গোমরাহ এবং মানহাজ বিচ্যুত ছিল এবং উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্র কাছে যারা বাই’য়াহবদ্ধ ছিল ও সম্পর্কিত ছিল (যেমন আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ি এবং আবু উমার আল- বাগদাদি) তারাও গোমরাহ ছিল বা গোমরাহি মেনে নিয়েছিলেন।
তুর্কি আল-বিন’আলি একটি বই লিখেছিল যার নাম “আল ক্বিলাদা ফী তাযকিয়া শায়খিনা আবু ক্বাতাদা”, এবং এ কিতাবে সে শায়খ আবু ক্বাতাদার ব্যাপারে জিহাদি আন্দোলনের বিভিন্ন শায়খ এবং নেতাদের প্রশংসা একত্রিত করেছিল, যার মধ্যে ছিল শায়খ আয-যারক্বাউয়ি, আবু আব্দুল্লাহ আল-মুহাজির, শায়খ ফারিস আয-যাহরানি এবং মুজিব আদ-দুরুসির বক্তব্য। বিন’আলি কারিম আল-মুজাতির কথা উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছিল যিনি বলেছিলেন, “আমি আমার আক্বীদাহ্ শিখেছি শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্র কাছ থেকে”,[89] এবং আল-বিন’আলি এটা উল্লেখ করতেও ভুলে গিয়েছিল যে একাদিক বার শায়খ আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ি তার বক্তব্যে সরাসরি শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্র কথা উদ্ধৃত করতেন!”
যদি আইসিস আসলেই বিশুদ্ধ সালাফি জিহাদের মানহাজের প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে কেন সালাফি জিহাদের এ সকল বরেণ্য ব্যাক্তিত্ব শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্কে গোমরাহির অভিযোগে অভিযুক্ত করলেন না, যখন শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্ কোন দলের অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের উপর ব্যাক্তিগতভাবে তাকফির করাকে ইখতিলাফি বিষয় মনে করতেন?
পরিশিষ্ট –মিথ্যাচার ও স্ববিরোধী বক্তব্য
- আদনানি ডঃ আয-যাওয়াহিরীকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, ‘আপনি আমাদের একদিনও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেন নি, না আপনার আগে আপনার পূর্ববর্তী আমিররা আমাদের প্রশ্ন করেছিল।’ কিন্তু শায়খ উসামাহ্ বিন লাদিন দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহ [Islamic State of Iraq] -এর নেতাদে প্রতি এ চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনারা যদি আমাদেরকে আমাদেরকে ভাই আবু বকর আল-বাগদাদির ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য দেন তবে তা উত্তম হবে।’[90]
- আদনানি দাবি করেছে যে, আল-ক্বা’ইদাহ্ নাকি সাউদি সরকারকে “নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে উম্মাহ্র উলামা ও মুওয়াহিদ যুবকদের দ্বারা তাদের কারাগারসমূহ পরিপূর্ণ করার জন্য ছেড়ে দিয়েছ!” অথচ সাউদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও যুবরাজ নায়েফের ওপর তার প্রাসাদেই ২০০৯ সালে আল-ক্বা’ইদাহ্ হামলা চালিয়েছিল।[91] আমি জানি না, এটিই কি সাউদি সরকারকে দেয়া আল-ক্বা’ইদাহ্র নিরাপত্তার নমুনা কিনা! এছাড়া আল-ক্বাইদাহ্ ‘ওয়াদিয়াহ্’ বর্ডার পোস্টেও হামলা করেছে এবং সাউদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলের শারুরাহ্ শহরে গোয়েন্দা সদর দপ্তর উড়িয়ে দিয়েছে।[92] আর যখন সাউদি সরকার কিছু ‘আলিম ও যুবকদের মৃত্যুদণ্ড দিলো, তখন আল-ক্বা’ইদাহ্ একটি বার্তা প্রকাশ করলো যেখানে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহর কসম! আমাদের রক্ত আমাদের বন্দীদের রক্তের জন্য কুরবানি হবে, আর তাদের রক্ত শুকোবে না যতক্ষণ না আল-সাউদের সেনাবাহিনীর রক্ত প্রবাহিত হয়। আল্লাহর শপথ, আল-সাউদের শিরচ্ছেদ করার আগপর্যন্ত এ জীবন আর তার রঙ্গ ফিরে পাবে না।’[93]
- তার দল ও আল-ক্বা’ইদাহ্র মধ্যে মতপার্থক্য ও মতবিরোধ সমাপ্ত করার জন্য আদনানি ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরীকে প্রস্তাব দিয়েছিল, “প্রথমত আমরা আপনাদের আহবান জানাই আপনাদের চরম ভুল থেকে ফিরে আসতে, এবং বিশ্বাসঘাতক, প্রতারণাকারী ও পক্ষত্যাগকারীর (আল-জুলানি) বাই’য়াহ প্রত্যাখ্যান করতে।“ মজার ব্যাপার হল ঠিক এর আগের বক্তব্যে, অর্থাৎ “এটা আমাদের মানহাজ নয় আর কখনো হবেও না” শীর্ষক বক্তব্যে সে বলেছিল – “আইসিস ও আল-ক্বা’ইদাহ্র মধ্যে যে বিরোধ তা বাই’য়াহ সংক্রান্ত বিরোধ না“, এবং সে দাবি করেছিল বিরোধ হল মানহাজ নিয়ে। প্রশ্ন হল বিরোধ যদি বাই’য়াহ নিয়ে না হয় তাহলে তুমি বাই’য়াহ প্রত্যাখ্যান করার আহবান করছো কেন?
- আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে ড. আয-যাওয়াহিরীর সমালোচনা করে আদনানি বলেছিল, ‘শায়খ উসামাহ্ মুজাহিদদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন অথচ আপনি তাদের পুরোপুরি দুই দিকে বিভক্ত করলেন’- মানে ডক্টর সাহেবই নাকি জিহাদের সারিবদ্ধ কাতার নষ্টের জন্য দায়ী। অতঃপর আরেকটি বার্তায় সে নিজ মুখেই বললো, ‘আমরা দলগুলোকে বিভক্ত করবো, এবং সংগঠনগুলোর কাতারগুলোকে বিদীর্ন করবো’ (দেখুন ‘কাফিরদের বলো খুব শীঘ্রই তোমরা পরাভূত হবে…’, শিরোনামের বার্তাটিতে)। অর্থাৎ সে অন্যকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করতে চাইছে সে নিজেই সে দোষে দোষী!!
- শায়খ উসামাহ্ বিন লাদিন বলেছিলেন, ‘নিশ্চয় ইমাম নির্বাচনের অধিকার শুধুমাত্র উম্মাহ্র’। অথচ যারা তাকে সঠিকভাবে অনুসরণের দাবি করে তারা বলে, ‘তরবারির অগ্রভাগের মাধ্যমে আমরা খিলাফাত গ্রহন করেছি…“। অর্থাৎ উম্মাহ্র ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তারা উম্মাহর উপর কতৃত্বের আসন দাবি করছে।
- আদনানি বলেছিল, ‘আমির আবু মুহাম্মাদের (আল্লাহ্ তাঁকে হিফাজাত করুন, তাঁর ইল্মে বারাকাহ্ দান করুন) নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা আমাদের অন্তর প্রশান্ত করেছেন, আমরা কাভকাযের সেসব ভাইদের সমর্থন করি।’ অর্থাৎ তাদের নেতার অধীনে তাদের ঐক্য আদনানিকে খুশি করেছিলো। কিন্তু হঠাৎ….! উলাইয়াত দাগেস্তানের মিডিয়া উইং একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা কাভকাযের পরিস্থিতির ব্যাপারে আলোচনা করে এবং এ আলোচনার ভূমিকাতে তারা বলে, ‘আমরা সম্প্রতি কাভকাযে আইসিসের-র ফিতনা এবং কাভকাযের কাতারে ভাঙনের ব্যাপারে খবর পেয়েছি।’ অর্থাৎ গতকাল তাদের ঐক্যে তোমাকে আনন্দিত করছিলো অথচ আজ তোমাকে আনন্দিত করে তাদের ভাঙন!
উপসংহার
আইসিস নিজেদের সালাফি জিহাদের প্রকৃত অনুসারী দাবি করলেও বাস্তবতা হল আইসিস নতুন এক ভ্রষ্ট মানহাজের উদ্ভাবন করেছে যা সালাফি জিহাদের মানহাজের সাথে সাংঘর্ষিক। যেসব সালাফি জিহাদি ব্যাক্তিত্বদের ও তার অবস্থান আইসিস অনুসরণের দাবি করে তাদের সাথে আইসিসের পার্থক্য হল ব্যাক্তিগত ইজতিহাদের ব্যাপারে ঐক্যের সীমার মধ্যে থাকার যে নীতি ও অবস্থান তারা গ্রহন করেছিলেন, আইসিস তার উল্টোটা গ্রহন করেছে। যাদের সাথেই তাদের মতপার্থক্য হয়েছে, যারাই ভিন্নমত পোষন করেছে, কিংবা তাদের সমালোচনা করেছে তাদের সকলকে আইসিস বিদ’আতী, গোমরাহ ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করেছে, এবং তাদের ব্যাপারে কুৎসা রটনা করেছে। আইসিস যাদেরকে অনুসরণ করার দাবি করে, সালাফি জিহাদের সে পথিকৃৎগন কখনোই এমন নীতি গ্রহন করেন নি। আর তারা দ্বীনের ব্যাপারে দুর্বল ছিলেন এবং কাপুরুষ ছিলেন না যে অপরাধ বা গোমরাহি দেখেও তারা চুপ থাকবেন।
এছাড়া আইসিস অন্যদের যেসব অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে এবং সেগুলোর ভিত্তিতে অন্যদেরকে গোমরাহ বলেছে, অনেক ক্ষেত্রেই সেসব “অভিযোগ” তাদের নিজেদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য! এব্যাপারে যদি আইসিসের পক্ষ থেকে এখন দাবি করা হয়- “আমরা আমাদের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছি এবেওং আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছি, এবং ইতিপূর্বে আমরা যা বলেছি তা থেকে নিজেদের মুক্ত ঘোষণা করছি” – তাহলে তাদের প্রতি আমাদের প্রশ্ন হবে, ‘তাহলে কি তোমরা স্বীকার করে নিচ্ছো ইতিপূর্বে, যখন তোমরা এধরনের অবস্থান গ্রহন করেছিলে, তখন তোমরা পথভ্রষ্ট ছিলে? তখন তোমরা বিশুদ্ধ মানহাজ থেকে বিচ্যুত ছিলে?’
যদি আইসিস সত্যবাদি হয় তবে তাদের উচিত উসামাহ্র আল-ক্বা’ইদাহ্ এবং আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্কে একইরকম এবং সমান পর্যায়ের গোমরাহ গন্য করা। কারন যেগুলোকে তারা শায়খ আইমানের আল-ক্বা’ইদাহ্র পথভ্রষ্টতা ও বিচ্যুতি বলছে, তার সবগুলোই শায়খ উসামাহ্র সময়েও আল-ক্বা’ইদাহ্র মাঝে বিদ্যমান ছিল।
যদি আমরা আইসিসের নীতি গ্রহন করি তবে অনিবার্য ভাবে আমরা এ উপসংহারে পৌঁছুবো- সালাফি জিহাদি আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা ও আলিমগণ সকলেই পথভ্রষ্ট। আইসিস এমনই এক জগাখিচুরী মানহাজ দাবি করছে এবং স্ববিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যদি কেউ তাদের প্রথম অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পায় তবে সে অবধারিত ভাবে দ্বিতীয় অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। আর যদি সে দ্বিতীয় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পায় তবে সে প্রথম অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। এভাবে তারা সালাফি জিহাদি মানহাজকে ধ্বংস করেছে এবং এর নেতাদের আক্রমণ করেছে। বস্তুত তারা সালাফি জিহাদের মানহাজের অনুসরণ করে না বরং তারা একটি নতুন মানহাজের উদ্ভাবন করেছে। এবং তাদেরকে সালাফি জিহাদের মানহাজের সাথে সংযুক্ত করা, বা দাবি করা যে তারা সালাফি জিহাদের মানহাজের প্রতিনিধিত্ব করে, এমনকি তাদেরকে সালাফি জিহাদে আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত দাবি করাও ভুল।
পরিশেষে সব প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ্ রব্বুল আলামিনের জন্যই!
আহ্মাদ আল-হামদান
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫
[1]কেউ কেউ আমার লেখার ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন আমি আল-ক্বা’ইদার আদর্শকে উপস্থাপন করছি। তাদের প্রতি আমার উত্তর হল, একজন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র চিন্তাবিদের কখনোই উচিৎ না স্বীয় চিন্তা ও ধারণাকে সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিকোণের মাপকাঠি অনুযায়ী উপস্থাপন করা। কারন যদি এমনটা করা হয় তবে তিনি একটি বাক্সে বন্দী হয়ে পড়বেন, নিজের গ্রহনযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবেন এবং যে দলের সাথে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন তাদের ভুলের সমালোচনা করার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলবেন। আর তাই আমি এধরনের চিন্তা ও মন্তব্য উভয়কেই সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করি।
[2] শি’আদের এমন কিছু কাজ আছে যার মাধ্যমে তারা শিরকে পতিত হয়েছে এবং যা তাদের ইমানের মৌলিক ভিত্তিতে বাতিল করে দিয়েছে। তবে সাধারণ শি’আদের ঢালাও ভাবে ইসলামের গন্ডির বাইরে অবস্থিত কাফির বলে ঘোষণা করা হবে কি না, এ নিয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়া জামা’আর ‘আলিমগণে মধ্যে মতপার্থক্য আছে। আহলুস সুন্নাহর আলিমগণের মধ্যে অনেকে তাদের ঢালাওভাবে কাফির ঘোষণা করেছেন, আবার অনেকে বলেছেন তাদেরকে ঢালাও ভাবে তাকফির (কাফির ঘোষণা) করা যাবে না, কারন যেসব শিরকী কাজে শি’আরা লিপ্ত সেগুলো শিরক হবার ব্যাপারে তারা অজ্ঞ। একারনে যতোক্ষন এ কাজগুলো শিরক ও কুফর হবার ব্যাপারটি তাদের কাছে পরিষ্কার করা হবে না ততোক্ষণ তাদের অজ্ঞতার কারনে তাদেরকে কাফির বলা যাবে না। এখানে আদনানি, শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর বিরোধিতা করছে কারন শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী ঢালাও ভাবে সকল শি’আর উপর তাকফির করছেন না। আদনানির দাবি হল শি’আদের ব্যাপারে শুধুমাত্র একটি বৈধ শার’ঈ অবস্থান আছে আর তা হল শি’আরা কাফির, এবং এটাই স্পষ্টভাবে বলতে হবে। আর আদনানির মতে তাদের সাথে শুধু এক ধরনের আচরণই করা বৈধ, আর তা হল লড়াই করা এবং তাদের দাওয়াহ দেয়া যাবে না। আদনানির বক্তব্য হল এটি এমন একটি বিষয় যাতে উসামার সময় আল-ক্বা’ইদার যে অবস্থান ছিল তা থেকে আজকের আল-ক্বা’ইদা বিচ্যুত হয়েছে।
[3] الجهاد الإسلامي المصري বা الجهاد الإسلامي। ডঃ আইমান আয্-যাওয়াহিরীর নেতৃত্বাধীন মিশরিয় জিহাদি সংগঠন যা আল-ক্বা’ইদার সাথে একীভূত হয়।
[4] আল আনসার ম্যাগাযিন, সংখ্যা ৯১, পৃষ্ঠা ১৮, তারিখঃ বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ১৯৯৫
[5] অর্থাৎ যখন শায়খ উসামাহ্র নেতৃত্বাধীন সংগঠন আল-ক্বা’ইদাহ্ ও শায়খ আইমানের নেতৃত্বাধীন সংগঠন “আল-জিহাদ” ১৯৯৮ সালে একত্রিত হল, এবং এ একীভূত সংগঠনের নাম দেওয়া হল “তানযীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদ”। [দেখুন সেপ্টেম্বর ২০০৬ এ “আস-সাহাব” মিডিয়া কতৃক প্রকাশিত “ম্যানহাটন রেইড” শীর্ষক ভিডিওর প্রথম পর্ব]
[6] “শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর সকল প্রবন্ধ, রিসালাহ, চিঠি ও বক্তব্যের সংকলন”, পৃষ্ঠা ৪৭১ “
[7] ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরীর পক্ষ থেকে আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ির প্রতি চিঠি, পৃষ্ঠা ১৩
[8] শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল লিবি ছিলেন আফগানিস্তানে আল-ক্বা’ইদাহ্র সকল কর্মকান্ডের দায়িত্বশীল। দেখুন শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবীর সকল বক্তব্য, বিবৃতি ও লেখার সংকলন, পৃষ্ঠা ৫০
[9] আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবীর পক্ষ থেকে আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ির প্রতি চিঠি, পৃষ্ঠা ৮
[10] আজউয়িবাতুল হিসবাহ (আল-হিসবাহ ফোরামের প্রশ্নসমূহের উত্তর), পৃষ্ঠা ৩০১
[11] দাওয়াতুল মুক্বাওয়ামা আল ইসলামিয়্যাহ আল ‘আলামিয়্যা, পৃষ্ঠা ৭৯২
[12] শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসি- আল জাযিরার সাথে সাক্ষাৎকার ২০০৫, পৃষ্ঠা ১২/১৩
[13] শায়খ আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ির সকল বক্তব্য ও বিবৃতির সংকলন, পৃষ্ঠা ৩৩১
[14] “আমার প্রাক্তন শায়খ, এ হল আমার ও আপনার মাঝে সম্পর্কচ্ছেদ”, পৃষ্ঠা ৮
[15] আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়ির সাথে আবুল ইয়ামান আল-বাগদাদির কথোপকথন, পৃষ্ঠা ১৮
[16] তাবরিয়াত উম্মাতিল ক্বালাম ওয়া সাইফ মিন মানক্বাশাহ তুহমাত আল খাওর ওয়াদদ্ব’আফ, শায়খ আইমান আয্-যাওয়াহিরী, পৃষ্ঠা ১৬৪। ইংরেজীতে Exoneration, পৃষ্ঠা ২১৭
[17] দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহর নেতৃবৃন্দের সকল বক্তব্যের পূর্ণাঙ্গ সংকলন, পৃষ্ঠা ৩০
[18] আরব বিপ্লব এবং ফসল ঘরে তোলার মৌসুম, পৃষ্ঠা ৫
[19] “শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর সকল প্রবন্ধ, রিসালাহ, চিঠি ও বক্তব্যের সংকলন”, পৃষ্ঠা ৪০২
[20] “জিহাদ ও সমসাময়িক আরব বিপ্লবের মধ্যে সম্পর্কে” – প্রবন্ধ
[21] “মিশরের ঘটনাবলীর ব্যাপারে লক্ষণীয় বিষয়সমূহ”, পৃষ্ঠা ৪
[22] আয্যাম আল-আম্রিকি ছিলেন তানযীম আল-ক্বা’ইদাহ খুরাসানের অফিশিয়াল মুখপাত্র। ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের সমন জারি করেছে। তিনি হলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম অ্যামেরিকান নাগরিক যাকে রাষ্ট্রদ্রোহে অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
[23] “ত্যাগ ও শাহাদাতের উম্মাহ”, পৃষ্ঠা ৯
[24] ঐ, পৃষ্ঠা ২৪
[25] ঐ, পৃষ্ঠা ১৫৭
[26] ঐ, পৃষ্ঠা ২০৪
[27] তানযীম আল-ক্বা’ইদাহ খুরাসানের নিরাপত্তা বিষয়ক নেতা
[28] মিশর ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, পৃষ্ঠা ৩
[29] আব্দুল্লাহ আর –রাশুদ ছিলেন বিলাদুল হারামাইনে (সাউদী আরব) তানযীম আল-ক্বাইদার শুরা কমিটির প্রধান, এবং সাউদী আরবের সরকার পক্ষ থেকে যে ২৬ জনের বিউরদ্ধে হুলিয়া জারি করে হয়েছিল তিনি তাদের অন্যতম। শায়খ ইউসুফ আল ‘উয়াউরি বিলাদুল হারামাইনে তানযীম আল-ক্বা’ইদার উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অন্যতন, এবং যে হুলিয়া জাইর করে যে ১৯ জনের লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছিল তাদের অন্যতম। উভয়েই শাহাদাত বরণ করেছেন।
[30] বেদনা ও আশার মধ্যবর্তী পরিস্থিতি, পৃষ্ঠা ১৬
[31] বেদনা ও আশার মধ্যবর্তী পরিস্থিতি, পৃষ্ঠা ১৭
[32] “বাইতিল মাকদিসের পারিপার্শ্বিক অঞ্চলে সালাফি জিহাদিদের জন্য মানহাজগত নির্দেশনা”, পৃষ্ঠা ৫।
[33] জিহাদিদের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য শায়খদের অন্যতম। শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী তার “Exonertaion” নামক গ্রন্থে একাধিকবার শায়খ নাসিরের কথা উদ্ধৃত করেছেন। ২০০৩ সালে শায়খ আলি খুদাইর এবং শায়খ আহমেদ আল খালিদির সাথে সাউদী সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ২০১৫ সালে আইসিসের কিছু সমর্থক টুইটারে দাবি করে শায়খ নাসির সাউদী আরবের জেলের ভেতর থেকে আইসিসকে বাইয়াহ দিয়েছে। যার স্বপক্ষে তারা প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছে কয়েক লাইন লেখা সম্বলিত একটি কাগজের একটি অস্পষ্ট ছবি, যেটাকে তারা শায়খের হাতের লেখা বলে দাবি করেছ। কিন্তু শায়খের ছাত্রদের কাছ থেকে শায়খের হাতের লেখার যে নমুন পাওয়া গেছে তার সাথে এ লেখার কোন মিল নেই, এবং শায়খের ছাত্র বা পরিবারের পক্ষ থেকে কোন গ্রহনযোগ্য সূত্র থেকে এ দাবির পক্ষে কোন প্রমান পাওয়া যায় নি।
[34] আলা হায়ের কারাগার থেকে ফাতাওয়া, পৃষ্ঠা ৪৮
[35] ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ শব্দটির দুটো অর্থ থাকতে পারে। প্রথমটি হলো- যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকেই শর্তহীন ভাবে গ্রহণ করা। এটি আমাদের শারীয়াহতে বাতিল করা হয়েছে কেননা আল্লাহ্ বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ অমান্য করে। সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়’।’(৩৩:৩৬) এর মানে হলো- যে ব্যাপারে আল্লাহ্ পরিষ্কার রায় দিয়ে দিয়েছেন, সে ব্যাপারে কোনো বাছ-বিচার চলবে না। আমরা বাছাই করতে পারবো না যে- এটি আমরা গ্রহণ করবো কি করবো না, বরং আমরা তৎক্ষণাত তা গ্রহণ করি।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বারা আরেকটি অর্থ বোঝানো হতে পারে আর তা হল, যে ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ্তে কোনো সুস্পষ্ট দলিল নেই, সে ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠের অবস্থান গ্রহন করা। এটি খুলাফায়ে রাশিদার (ন্যায়পরায়ণ খলিফা) যুগে হয়েছে। খলিফা ঠিক কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হবে তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো দলিল নেই। একারনে যখন সাহাবীদের মধ্যে অগ্রবর্তীগণ খালিফাহ হিসেবে উসমান বিন আফফান রাদিআল্লাহু আনহুকে আলি ইবনু আবু তালিব রাদিআল্লাহু আনহুর ওপরে পছন্দ করেছিলেন, তখন তিনি খিলাফতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আর এটি পরিষ্কার যে, আল-ক্বা’ইদাহ্ ‘প্রথম’ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে [যা আসলে গণতন্ত্রের সমার্থক (সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন বা জনগণের শাসন)]- যে ব্যাপারে তাদের দোষারোপ করা হচ্ছে- অস্বীকার করে।
[36] “নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতা”
[37] ‘বিজয়ের সূর্য উদিত হচ্ছে বিজয়ী উম্মাহ এবং পরাজিত ক্রুসেডারদের উপর’- শীর্ষক বক্তব্য থেকে।
[38] ‘তাওহীদের ভিত্তিতে ঐক্য’, শীর্ষক বক্তব্য থেকে।
[39] ‘মিশরের জনগণের জন্য বিজয় এবং আশার সংবাদ’, পর্ব ১
[40] ‘মিশরের জনগণের জন্য বিজয় এবং আশার সংবাদ’, পর্ব ৪
[41] ‘মিশরের জনগণের জন্য বিজয় এবং আশার সংবাদ’, পর্ব ৫
[42] ‘ত্যাগ ও শাহাদাতের জাতি’, পৃষ্ঠা নং ১১৭
[43] গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থীদের তাকফির না করা ISIS গোমরাহি গণ্য করে। এটি তাদের অফিশিয়াল ম্যাগাযিন ‘দাবিক্ব’-এর ষষ্ঠ সংখ্যায় (পৃষ্ঠা ২০) এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে ‘হারিস আন-নাযারি কি এখন তাঁর নেতাকে অমান্য করবেন যাকে তিনি সমর্থন করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন সে পথভ্রষ্ট না?’ অতঃপর ফুটনোটে এখানে পথভ্রষ্টতা বলতে আরা কি বোঝাচ্ছে তা স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছে যে, ‘আয-যাওয়াহিরি নতমস্তক সাংসদ, রাফিদ্বা ও মাজুসদের তাকফির করেন না।’
[44] অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে ব্যাক্তি শারীয়াহ দ্বারা শাসন করে না, জিহাদী দলগুলোকে তাকে “তাগুত” আখ্যায়িত করবে। যার দ্বারা তারা বোঝায় উক্ত ব্যক্তি একজন অবিশ্বাসী কাফির, কারন শারীয়াহ ব্যাতীত অন্য কিছু দ্বারা শাসন করা কুফর। যখন মুসলিম বিশ্বে কিছু ইসলামপন্থী দল ক্ষমতাসীন হবার পর শারীয়াহ দ্বারা শাসন করতে ব্যার্থ হলো তখন এসব ইসলামপন্থীদের ব্যাপারে কি অবস্থান গ্রহন করা হবে, এ প্রশ্নে জিহাদীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। কেউ কেউ তাৎক্ষনিক ভাবে এসব ইসলামপন্থীদের কাফির ঘোষণা করেন, আবার কেউ কেউ এ অবস্থান গ্রহন করেন যে এসব ইসলামপন্থীদের কাফির বলা যাবে না। এবং এ দুই দলের মধ্যে পদ্ধতিগত পার্থক্যের কথা ইতিমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি। এদের মধ্য একটি দল তাৎক্ষণিক ভাবে তাকফির করায় বিশ্বাসী এবং অন্যটি ব্যাক্তির উপর তাকফিরের ক্ষেত্রে অজ্ঞতাবশত (উযর বিল জাহল) এবং ভ্রান্ত ব্যাখ্যাজনিত (তাউয়ীলের) ভুলের কারন অজুহাত বা ওজর বিবেচনার মাধ্যমে অগ্রসর হবার নীতিতে বিশ্বাসী।
[45] আল-আলবানী ও তিরমিযী মতে সাহীহ
[46] দেখুন, “হামাস ও সহজ মুনাফা” শীর্ষক বক্তব্যটি
[47] আজউয়িবাতুল হিসবাহ (আল-হিসবাহ ফোরামের প্রশ্নসমূহের উত্তর), পৃষ্ঠা ৭২
[48] “শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর সকল প্রবন্ধ, রিসালাহ, চিঠি ও বক্তব্যের সংকলন”, পৃষ্ঠা ৪৭৫
[49] ইংরেজী অনুবাদের লিঙ্ক – http://bit.ly/29MMxXq
[50] সম্পূর্ণ বাক্যটি হল – “নিশ্চয় আপনার বক্তব্যে আপনি যা বলেছেন তার সবই সত্য। বরং আমি এর সাথে আপনার হয়ে আরো যোগ করছি; কিছুদিন আগ পর্যন্ত যদি দাউলার সাথে আল-ক্বা’ইদাহ্র সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হতো, আমরা জবাব দিতাম, এ সম্পর্ক হল একজন সৈন্যের সাথে তার আমিরের।“
[51] আবু বাকর আল বাগদাদি যখন সম্পূর্ণ নিজের সিদ্ধান্তে এপ্রিল ২০১৩-তে, দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহ (Islamic State of Iraq-ISI) ও জাবহাত আন-নুসরার সম্মিলনে দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাক ওয়া আশ-শাম (Islamic State of Iraq & Sham) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় তখন জাবহাত আন-নুসরার আমির শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-জুলানি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন, এবং সরাসরি শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর কাছে তার বাইয়াহ ঘোষণা করেন, এবং উক্ত বিষয়টি মীমাংসার জন্য শায়খ আইমানের কাছে পেশ করেন। এ ঘোষণার সময় দাউলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়্যাহ (Islamic State of Iraq- ISI) এবং জাবহাত আন-নুসরা উভয়ের আল-ক্বা’ইদাহ্র শাখা ছিল। উক্ত ঘোষণার সময় আবু মুহাম্মাদ আল-জুলানি ছিলেন আবু বাকর আল-বাগদাদির অধীনস্ত, এবং আল-বাগদাদি ছিল আল-ক্বা’ইদাহ্র আমির শায়খ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরীর কাছে বাই’য়াহবদ্ধ।
[52] মুবাহালা হল এমন একটি দু’আ যা দু’জন ব্যক্তি যারা একে-অপরকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করছে, তারা জনসম্মুখে করে। তারা প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে এই দু’আ করে যেন দুজনের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী তার উপর আল্লাহর শাস্তি পতিত হয়, সে যেন অভিশপ্ত হয় এবং ধ্বংস হয়।
[53] “সম্পর্কচ্ছেদের বার্তা”, পৃষ্ঠা ২
[54] তিনি ছিলেন ‘জুন্দুল আক্বসা’-র প্রতিষ্ঠাতা আমীর। জুন্দুল আক্বসা – শুরুতে জাবহাত আন-নুসরার অংশ ছিল, কিন্তু আইসিস ও জাবহাত আন-নুসরার মাঝে যখন ফিতনা শুরু হয় তখন তারা জাবহাত আন-নুসরা থেকে বের হয়ে আইসিস ও জাবহাত আন-নুসরা উভয় দল থেকে পৃথক, একটি স্বতন্ত্র জামা’আহ হিসেবে কাজ করা শুরু করে।
[55] ভিডিও লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। যদি লিঙ্কে গিয়ে ভিডিওটি খুজে না পাওয়া যায় তাহলে সার্চ করুন এই নামে – شهادة الشيخ أبو عبد العزيز القطري في قضية تحكيم الدكتور ايمن الظواهري بين البغدادي و الجولاني – অথবা এই নামে – الشيخ أبو عبدالعزيز القطري رحمه الله يكشف كذب العدناني।
[56] লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। যদি ঐ লিঙ্কে না পাওয়া যায় তাহলে দেখুন –
, অথবা সার্চ করুন أعتراف شرعي الدوله ابو بكر القحطاني بتبعيتهم لظواهري অথবা عمر القحطاني شرعي جماعة الدولة[57] এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন – http://bit.ly/2a8cqVq
[58] বেশ কিছু পশ্চিমা সাংবাদিক এ নোংরা খেলায় মেতেছে। এ ব্যাপারে দেখুন মিম্বার আত তাওহিদ ওয়াল জিহাদের শার’ঈ কাউন্সিলের সদস্য শায়খ আবু মুনদ্বির আশ-শানক্বিতীর লেখা, “তারা চায় সব জিহাদ আইসিসের মতো হোক…”
[59] ‘খুরাসানের বাই’য়াহর পরতি প্রতিক্রিয়া”, পৃষ্ঠা ২০
[60] ‘আল হিওয়ার আল মুসামাদ্দিন”-এর ওয়েবসাইটে এমন এক আধুনিক উদারনৈতিক গনতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতি আহবান করা হয়, যেখানে সকলের জন্য স্বাধীনতা, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা থাকবে। এ সাইটের শিরোনামেই এমনটা লেখা আছে, এবং অধিকাংশ প্রবন্ধেই এ আহবান জানানো হয়।
[61] সংসদের প্রবেশ করা বলতে বোঝানো হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আইনসভাতে সংসদ সদস্য ও আইন প্রনেতা হিসেবে অংশগ্রহন করা।
[62] তথ্য মন্ত্রণালয় কতৃক প্রকাশিত বিবৃতি- ‘আবু আব্দুর রাহ্মান, আতিয়াতুল্লাহ্ আল-লিবির মৃত্যু উপলক্ষ্যে শোকপ্রকাশ করে বিবৃতি’, তারিখঃ ১৩ ডিসেম্বর ২০১১, ‘আল ফজ্র মিডিয়া’ কতৃক প্রকাশিত। ‘আল-শুমুখ’ ফোরামের ‘ইসলামিক স্টেটের আর্কাইভ, বিবৃতি ও রিপোর্ট’ অংশে এ বার্তাটি প্রকাশ করা হয়।
[63] শায়খ সুলাইমান বিন নাসির আল-‘উলওয়ান হলেন সেসব শায়খদের একজন যিনি মুজাহিদিনের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। ২০০৪ সালে আবু মুস’আব আয-যারক্বাউয়িকে সমর্থন করার অভিযোগে সাউদী সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ২০১২ সালে তিনি মুক্তি পান। ২০১৩ সালে তাকে পুনরায় বন্দী করা হয়।
[64] আবু মাইসারা আশ-শামীর এ প্রবন্ধ ছাড়াও শায়খ সুলাইমান আল-‘উলওয়ানকে গোমরাহ বলা হয়েছে আইসিসের ফরাসি ভাষায় ম্যাগাযিন, “দ্বার আল-ইসলাম”-এর ষষ্ঠ সংখ্যার ২৩ নং পৃষ্ঠায়, এবং আল-বাত্তার মিডিয়া থেকে প্রকাশিত “Refutation of Al Risalah Magazine” শীর্ষক প্রকাশনাতে।
[65] দেখুন শায়খ উমার আল হাদ্দুশীর সাথে কুয়েতি পত্রিকা “আল-রাই”-এর সাক্ষাৎকার। প্রকাশিত সোমবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫
[66] ভিডিওটির শিরোনাম হল “ ইসলামিক স্টেটের বিরোধিতাকারীদের বাস্তবতা – উমার আল হাদ্দুশীর উদাহরন”। উবওয়াসুল লাসিক্বাহ নামক আইসিসের একটি মিডিয়া ফাউন্ডেশান থেকে প্রকাশিত।
[67] “অতএব এসো মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর লানতের দু’আ করি”, শীর্ষক বক্তব্যে আবু মুহাম্মাদ আল-আদনানি বলেছিল – “আর যদি তুমি তাদের প্রশ্ন করো, ‘কিসের ভিত্তিতে তুমি বিচার করছো?’ তারা বলবে, ‘আমি বিশ্বস্ত কারো কাছ থেকে জানতে পেরেছি।‘ সুবহান’আল্লাহ! এ বিশ্বস্ত ব্যক্তি যদি আমাদের শত্রু হয় তবুও? (আমাদের বিরুদ্ধে তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার করা হবে?)।“ – আইসিসের জন্য সবাই তাদের শত্রু। আর তাই ইয়েমেন থেকে যদি কেউ আবু মাইসারা আশ-শামীর সাথে যোগাযোগ করে থাকে তাহলে নিসন্দেহে সে আইসিসের নিজেদের কেউ, এবং নিঃসন্দেহে সে আল-ক্বা’ইদাহ্র শত্রু। তাহলে যদি আইসিসের বিরুদ্ধে বিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহন অনুচিত হয় কারন সে আইসিসের শত্রু, তাহলে আল-ক্বা’ইদাহ্র বিরুদ্ধে বিশ্বস্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহন কিভাব উচিৎ হতে পারে, যখন সাক্ষ্যদাতা আল-ক্বা’ইদাহ্র শত্রু? দেখুন কিভাবে তারা অন্যদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করে নিজেরাই অহরহ সেসব কাজে লিপ্ত হয়।
[68] আইসিস তাদের অফিশিয়াল ম্যাগাযিন “দাবিক্ব” –এর দশম সংখ্যা ৪৪ নং পৃষ্ঠায় বলেছে, “ফ্রি সিরিয়ান আর্মির মুরতাদরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে”।
[69] ইসলামি ফ্রন্ট ও এর নেতাদের ব্যাপারে ১৬-ই জুমাদি আল-আখিরাত, বুধবারম ১৪৩৫ হিজরিতে আইসিসের অফিশিয়াল শারীয়াহ কাউন্সিল থেকে প্রকাশিত বক্তব্য হল, “…এবং এসব কারনে এই সম্মিলিত বাহিনীর সকল রুপে ও সকল অংশে, এদের কর্মচারী সহ মুরতাদ, যারা আল্লাহর দ্বীন ত্যাগ করেছে”, পৃষ্ঠা ৭
[70] ফ্রি সিরিয়ান আর্মির, নর্দান স্টর্ম প্লাটুনের পক্ষ থেকে ভিডিও প্রকাশ করা হয় যেখানে আইসিসের নেতৃত্বাধীন মিনাঘ বিমানবন্দরের যুদ্ধে আইসিসের সাথে নর্দান স্টর্মের পক্ষ থেকে অংশগ্রহনকারী ও মৃত্যুবরণকারী সেনাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়। যুদ্ধশেষে বিমানবন্দর মুক্ত হবার পর, নর্দান স্টর্ম বিমানবন্দরের ভেতর প্যারেডও করে।
[71] আইসিসের এধরনের স্ববিরোধিতা ও সু্যোগসন্ধানী তাকফিরি নীতির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন – “আইসিসের ভ্রান্ত ও সুযোগসন্ধানী তাকফির নীতির বাস্তবতাঃ কেন আইসিস মুরতাদ সাব্যস্ত হবে না?”
[72] যেমন দাউলাতুল ইসলামিয়্যাহ ফিল ইরাকের প্রথম আমীর, আবু উমার আল-বাগদাদি, ইরাকে কার্যরত ইখওয়ানুল মুসলিমীনের(মুসলিম ব্রাদারহুড) শাখা, “আল হিযবুল ইসলামি” সম্পর্কে বলেছিলেন – “আমরা মনে করি না, যারা এতে প্রবেশ করেছে তারা সবাই কাফির হয়ে গেছে, যদি না তাদের বিরুদ্ধে শারীয়াহ সম্মত প্রমান থাকে” দেখুন বক্তব্য- “বলুনঃ আমি আমার রবের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি”, ১৩ মার্চ,২০০৭ আল ফুরক্বান ফাউন্ডেশান
[73] “আবু ইয়ামান আল-বাগদাদি এবং আবু-মুস’আব আয-যারক্বাউয়ির মধ্যে কথোপকথন”, পৃষ্ঠা ২৩,২৪
[74] “বিংশ শতাব্দীর বিপ্লবী ব্রিগেডদের নিয়ে স্পষ্ট আলোচনা” শিরোনামে দেয়া বিবৃতি যা প্রকাশিত হয়েছে “আল ফাজর মিডিয়া সেন্টার” কর্তৃক ২২ শে সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে আল শুমুখ ফোরামের “ইসলামিক স্টেটের বিবৃতি এবং রিপোর্টের আর্কাইভ” সেকশানে। মুরাসিল আশ- শুবকা (ফোরাম সদস্য) দ্বারা বিবৃতিটি পোষ্ট হয়, যেটি থেকে শুধুমাত্র অফিশিয়াল পোস্ট করা হয়।
[75] আল ইখওয়ানুল মুরতাদ্দিন [The Murtadd Brotherhood] শিরোনামের দাবিক্ব ১৪ নং সংখ্যার প্রচ্ছদকাহিনী অনুযায়ী আইসিস এখন সমগ্র মুসলিম ব্রাদারহুডকেই মুরতাদ মনে করে। এবং যারা তাদের সাথে এক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করে তাদেরকে তারা চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী গোমরাহ বলে আখ্যায়িত করেছে। বিশেষ ভাবে শায়খ আবু মুস’আব আস-সুরি ফাঃআঃ কে এ বিষয়ে নাম ধরে গোমরাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নীতি অনুযায়ী আবু উমার আল-বাগদাদিসহ দাউলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়্যাহর সাবেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দও গোমরাহ, যেহেতু উপরের উদ্ধৃতিতে তারা স্পষ্ট ভাবে জিহাদের ময়দানে ইখওয়ান বা অনুরূপ দলগুলোর সাথে সহাবস্থান জায়েজ হবার অবস্থান গ্রহন করেছেন।
[76] মুসলিম উম্মাহর অনেক ‘আলিমগণের মত হল যদি একটি বড় দল যদি সম্মিলিতভাবে কুফরের পতিত হয় তাহলে সেটাকে সম্মিলিতভাবে একটি কাফির দল হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে সে দলের প্রতিটি সদস্যের উপর তাকফির করা হবে না যতোক্ষন তারা ব্যক্তিগতভাবে তার দলের কুফর কাজ ও এর বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে। আবার কিছু ‘আলিমগণের মতে যদি এরকম কোন দল অস্ত্র বহন করে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তবে সে দলের প্রত্যেক সদস্যের উপর ব্যাক্তিগতভাবে তাকফির করা হবে (যদিও দলের প্রতিটি সদস্য সংঘটিত কুফরের বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত না)।
কোন দল সম্মিলিত ভাবে কুফরের পতিত হওয়াকে “কুফর আত-তাইফা” (দলগত কুফর) বলা হয়। কিন্তু এরকম কোন দলের প্রতিটি ব্যাক্তির উপর তাকফির করাকে বলা হয় “তাকফির আল আইন” (ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিদের উপর তাকফির)
[77] আজউয়িবাতুল হিসবাহ (আল-হিসবাহ ফোরামের প্রশ্নসমূহের উত্তর), পৃষ্ঠা ১৯৯
[78] জিহাদ এবং বিভ্রান্তির যুদ্ধ, পৃষ্ঠা ৩০
[79] জিহাদ ও ইজতিহাদ…মানহাজের ব্যাপারে কিছু ভাবনা, পৃষ্ঠা ৫৯
[80] ‘ইমান’ সিরিযের ২৫ নম্বর লেকচার দ্রষ্টব্য। আরও দেখুন, “প্রশ্নকারীর উত্তর”, এবং “হিমসনিবাসির প্রশ্নের প্রতি উমারি উত্তর”। এছাড়া আল-মিনহাজ ম্যাগাযিনে এ বিষয়টি নিয়ে শায়খ আবু ক্বাতাদাহ্র একটী গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল।
[81] মাসজিদ আদ্ব-দ্বিরারের ব্যাপারে হুকুম, এবং তাগুতের মিত্র ও প্রতিনিধিদের পেছনে সালাত আদায়ের হুকুম”, পৃষ্ঠা ৮৭
[82] “তাগুত শাসক এবং তার সেনার ব্যাক্তিগতভাবে কাফির হবার ব্যাপারে ব্যাখ্যা”, পৃষ্ঠা ২৯
[83] দাওয়াতুল মুক্বাওয়ামা আল ইসলামিয়্যাহ আল ‘আলামিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ১৭৫
[84] অবশ্য দাবিক্বের সর্বশেষ সংখ্যা অর্থাৎ সংখ্যা ১৪ তে Murtadd Brotherhood নামক প্রবন্ধে শায়খ আবু মুস’আব সুরিকে “গোমরাহ” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
[85] সৌদি আরবে অবস্থিত জিহাদের প্রধান শায়খদের একজন। শায়খ নাসির আল ফাহদ ও শায়খ আহমাদ আল খালিদির সাথে ২০০৩ সালে সাউদী বাহিনীর গ্রেফতার হন।
[86] সালাফিদের ফোরামের সাথে উন্মুক্ত বৈঠক, পৃষ্ঠা ৬৪
[87] আল হায়ের কারাগার থেকে ফাতাওয়া, পৃষ্ঠা ২৮
[88] আবু বাতিনের সকল চিঠি, (১/২০৩)
[89] সাওতুল জিহাদ (জিহাদের কণ্ঠ) ম্যাগাযিন, সংখ্যা ৩০, পৃষ্ঠা ৪৫
[90] দেখুন অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টের প্রথম কিস্তির (SOCOM-2012-0000019) নম্বর ডকুমেন্ট। যদিও অ্যামেরিকানরা এসব ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে তবে এগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে মুজাহিদিনের পক্ষ থেকে। যেমন শাআবু মারিয়াম আল-আযদি জানিয়েছে – শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল-লিবি এগুলোরর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, এবং তিনি আরো বলেছেন এগুলো হিকমাহ্পূর্ণ ও উপকারি।“ [দেখুন, “কিতাবুশ শারীয়াহ এবং সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি” নামক কিতাবের ২০ নং পৃষ্ঠার ফুটনোট] অনুরূপভাবে তানযিম আল-ক্বা’ইদাহ ফী জাযিরাতুল আরব [AQAP – Al Qaidah in the Arabian Peninsula]-এর নেতা শায়খ নাসির আল-আনসি তার একটি সাক্ষাৎকারে অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্টগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, “হ্যা এগুলোর আসল ও নির্ভরযোগ্য তবে অসম্পূর্ণ। তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র এ চিঠিগুলোর অধ্যায়নি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের অনুরূপ, এবং আমরা আমাদের ভাইদের পরামর্শ দেব চিঠিগুলো অধ্যায়নের এবং এগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহন ও উপকৃত হবার।“
[91] আল-ক্বা’ইদাহ্ তাদের প্রকাশিত দুটি ভিডিওতে এ হামলার বিবরণ প্রকাশ করেছে। প্রথমটি হল ১৪৩০ হিজরির রমাদ্বানে আল-মালাহিম মিডিয়া থেকে প্রকাশিত “মুহাম্মাদ ইবন মাসলামার বংশধরেরা”, দ্বিতীয়টি হল ১৪৩১ হিজরির শাওয়ালে আল-মালাহিম মিডিয়া থেকে প্রকাশিত, “ক্বাবার রবের শপথ! আমি সফল হয়েছি” – পর্ব ২। আর আমরা আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি এখানে আমরা শুধুমাত্র ঐসব ঘটনার উল্লেখ করছি যারা দ্বারা আইসিসের মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়।
[92] ১৪৩৫ হিজরির রমাদ্বানে এ হামলার ব্যাপারে “মুসলিমাহ বন্দীদের জন্য প্রতিশোধ” শিরোনামে একটি ভিডিও আল-ক্বা’ইদাহ্ প্রকাশ করেছে।
[93] বিবৃতি নং ১০২, “আল সাউদের কারাগারে বন্দীদের হত্যার ব্যাপারে বক্তব্য”, ১৯শে সফর, ১৪৩৭ হিজরিতে প্রকাশিত।