JustPaste.it

মরণজয়ী মুজাহিদ

মল্লিক আহমাদ সরওয়ার

==============================================================

 

          সবুজ শ্যামলে ঢাকা ছোট্ট একটি পাহাড়। তার ঠিক পিছনে দাড়িয়ে আছে ঘন গাছ গাছালীর সবুজ চাঁদর ঢাকা আকাশ চুম্বী পর্বতমালা। এর এক প্রান্তে জীর্ণ শীর্ণ একটি বস্তি। বস্তির উত্তর পার্শ্ব দিয়ে একটি পাহাড়ী ঝর্ণা কুল কুল রবে বয়ে চলেছে অবিরাম। ছোট্ট পাহাড়টির সম্মুখ ভাগে বিশাল স্থান জুড়ে গাছ গাছালিতে ভরা জঙ্গল। তার পার্শ্বেই বিরাট চারণ ভূমি! দূর থেকে দেখলে ছোট্ট পাহাড়টিকে অন্যান্য পাহাড় থেকে অবিচ্ছিন্ন মনে হয় না। পাহাড়ের মাঝে স্থানে স্থানে বিচ্ছিন্ন উর্বর যমিন। এতে বস্তীবাসীরা ফল-মূলসহ মৌসুমী ফসল আবাদ করে । পাহাড়টির পিছনের অংশে ফেলা হয়েছে বহু তাবু এবং মাটি খুড়ে তৈরী করা হয়েছে বহু মরিচা। এক পাশে ঘন ঝোপ-ঝাড়ের আড়ালে স্থাপন করা হয়েছে একটি বিমান বিধ্বংসী কামন। আফগানীদের ভাষায় এটিকে দাসাক্কা বলা হয়। এটি পরিচালনার দায়িত্ব টগবগে যৌবন দীপ্ত এক যুবকের ওপর ন্যাস্ত ! তার নাম আলী খান। বয়স তের কি-চৌদ্দ বছরে বেশী নয়। বয়স কম হলেও শরীরের একহাড়া গড়ন ও বাধন দেখে তাকে একজন শক্তিশালী বাহাদুর মুজাহিদের মতই মনে হয়। এইতো এক মাস পূর্বেও সে দুশমনের একটি বিমান ভূপাতিত করেছে। আলী দাসাক্কা ছাড়াও রকেট ল্যানসার চালাতেও বেশ দক্ষ।

 

          আজ থেকে কয়েক বছর আগের কথা। তখন তার প্রিয় মাতৃভূমি ছিলো স্বাধীন। আব্বা-আম্মা ও আদরের ছোট বোন সায়মাসহ সুখ স্বাচ্ছন্দে ভরপুর ছিলো তাদের ছোট সংসার। তাদের সুন্দর বাড়ীটির সামনে ছিল বিরাট একটি ময়দান। লম্বা লম্বা চেলগুজা বেষ্টিত চত্বরটির দুপাশে ছিল সারি সারি আংগুর ও আনার গাছ। গ্রামের অদূরে পাহাড়ের পাদদেশে ওদের চারণ ভূমি। এর নিকট থেকে প্রবাহিত ছিলো একটি পাহাড়ী ঝর্ণা। চারণ ভূমির কিছু অংশে ছিলো আনার ও শাহতুতের গাছ। বাকী অংশে আলীর আব্বা গম ভুট্টা ইত্যাদি চাষ করত। তার পাশদিয়ে প্রবাহিত ঝর্ণাটির স্বচ্ছ-সুন্দর পানি। ওই বাগানে তার আব্বা সেচ করত।

 

          আলী তখন স্কুলে পড়ে। স্কুল থেকে ফিরে প্রায়ই আবাদী জমিতে পিতার সাথে কাজ করত। গরমের মৌসুমে যে শাহত বৃক্ষের শীতল ছায়ায় বসে স্কুলের ছবক ইয়াদ করত মনের আনন্দে। তার কোন বন্ধু আসলে গাছ থেকে আনার ও শাহতুত পেড়ে আনন্দের সাথে হাতে তুলে দিত। সে এর চেয়েও আনন্দ পেত গরমের মৌসুমে পাহাড়ের নালাগুলো পানিতে ভরে গেলে তাতে নেমে বন্ধুদেরকে নিয়ে খেলায় মত্ত হওয়ায়। সায়মা পরিবারের সবার ছোট। তাই সে ছিলো সকলের সবচেয়ে বেশী প্রিয়। তার নানান রকম দুষ্টুমি সকলে উপভোগ করত। আলীর একমাত্র ফুফুর বাড়ীটি তাদের গ্রাম থেকে বেশ দূরে। একদিন খুব সকালে ফুফু হাঁফাতে হাঁফাতে তাদের বাড়ীতে এসে উপস্থিত হয়। ফুফুর এমন অবস্থা দেখে সবাই হতবাক। ফুফুর সাথে এসেছে তার সাত বছরের ছেলে খলীল। তাদের সাথে রয়েছে একটি সুন্দর তুল তুলে একটি বকরী! ফুফু আলীর আব্বাকে দেখে বিলাপ করে করুণভাবে কাঁদতে থাকে। আলীর আব্বা অনেক কষ্টে বোনের কান্না থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বোন কি হয়েছে তোমার? তোমার গায়ে কেউ হাত তুলেছে? বলো খলীলের আব্বা তোমাকে অপমান করেছে, সে তোমাকে মেরেছে, তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে? বল, কেন কাঁদছো তুমি? ফুফু জবাবে বল্লো, না ভাইজান, খলীলের আববা আমাকে মারেনি, ঘর থেকে বের করেও দেয়নি।

 

          অত্যাচারীরুশ সৈন্যদের প্রতি ঘৃণায় আমি কাঁদছি। ওরা আমার সবকিছু লুটে নিয়েছে।” একথা গুলো বলতে তার কণ্ঠ বারবার কেপে কেপে বন্ধ হয়ে আসছিলো। ফুফু পুনরায় ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। আলীর আব্বা জানতেন, আফগানিস্তানে জালিম রুশদের অনুপ্রবেশের পর নিরীহ আফগান মুসলমানরা পাইকারীভাবে তাদের বর্বরতা, অত্যাচার, ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশ ও জনগণের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত অন্ধকারাচ্ছন্ন! যে গ্রামেই তাদের অপবিত্র অনুপ্রবেশ ঘটছে সে গ্রামের পুরুষ মহিলা বৃদ্ধ ও শিশুদেরকে নির্বিচারে হত্যা করছে, মাটির মাথে গুড়িয়ে দিচ্ছে মসজিদগুলোকে। তাদের প্রজ্বলিত অগ্নিতে ভষ্মিভূত হচ্ছে জনপদের পর জনপদ। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে আলীর ফুফু অতপর বল্লেন, “গত সপ্তাহে রুশীরা আমাদের গ্রামে হামলা করে। প্রথমে তারা বহু ট্যাংক এবং গাড়ী নিয়ে আমাদের গ্রাম ঘিরে ফেলে। প্রতিটি ঘরে তারা তল্লাশী চালায়। রাইফেল হাতে একদল রশী ফৌজ আমাদের ঘরে এসে ঢুকে তল্লাশীর নামে। তারা মূল্যবান সব জিনিস হাতিয়ে নেয়। এক নরপিশাচ এগিয়ে আসে আমার গলার চাঁদীর হারটি খোলার জন্যে। আমি তাকে জোরে ধাক্কা দিলে পিছনের দেওয়ালের সাথে আঘাত খেয়ে নীচে পড়ে যায়। আঘাত সামলে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলতে উদ্যত হলো। খলীগের আব্বা ছুটে এসে যালিমের হাত থেকে ক্লাসিকভটি ছিনিয়ে নিয়ে তার বুকের ওপর গুলি চালায়। যালিম তৎক্ষণাৎ মারা যায়। এরমধ্যে অন্যান্য ফৌজ এসে এই অবস্থা দেখে ব্রাশ ফায়ার করে খলীলের আবার শরীর ঝাঝরা করে দেয়।

 

          খলিলের বড় ভাইকেও ওরা মেরে ফেলেছে। আমি অত্যন্ত কষ্টের ভিতর দিয়ে এই নরপশুদের হাত থেকে বেঁচে এসেছি। তাদের ক্লাসিন কোভের গুলী কয়েক বার আমার কানের পাশ দিয়ে চলে গেছে কিন্তু যিন্দেগীর আখেরী লমহা এখনো আসেনি বিধায় আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে গেছি। শত মুসিবতের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত এসে পৌছি। যদি দুধ দেওয়া এ বকরিটি আমাদের সঙ্গী না হত তাহলে হয়তো পথের মধ্যে কোন একস্থানে আমাদের উভয়কে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে হতো। আমরা চলে আসতে থাকলে গোলাগুলির আওয়াজে ভয় পেয়ে বকরীটি আমাদের পিছু নেয়। পথে পথে এর দুধ পান করে আমরা এ পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম।

 

          খলীলের আম্মার এ অত্যাচারের কাহিনী শুনে সবাই দারুণভাবে ব্যথিত হয়। সকলের চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা অশ্রু ঝড়ে কপোল প্রবাহিত হয়। আলীর আব্বা বোনকে শান্তনা দিয়ে বলেনঃ “বাহাদুর বোন 'আমার। সবর করো, এই দেশে আজ ‘ক’ জন মহিলা আছে যাদের স্বামী ও সন্তানদেরকে ওরা শহীদ করেনি। পুরা আফগান আজ কাঁদছে। ” এ জালিম রুশীরা শুধু আফগানেই নয় রাশিয়ায়ও তারা লক্ষ লক্ষ মুলমানদেরকে হত্যা করেছিলো। মসজিদ গুলোকে ওরা মদ্যপানের আডডা আর নাচ ঘরে পরিণত করেছে। ভষ্ম করেছে ওরা পবিত্র কুরআন আর ধর্মীয় সব কিতাব। তারই পুনরাবৃত্তি ঘটাতে যাচ্ছে ওরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে।” দিন দিন রুশী ফৌজদের যুলুমে নির্যাতন বেড়েই চলছে। তবে আলীদের গ্রামে ওদের দাজ্জালী অনুপ্রবেশ এখনো ঘটেনি। পার্শ্ববর্তী গ্রামের অত্যাচারের কথা সবার মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে। আলীর আববা তার বোনের ব্যাপারে খুবই চিন্তিত।

 

          আলীর ছোট্ট বোন সায়েমা এসবে কিছুই বুঝে না। সমবয়সীদের নিয়ে সে সরাদিন খেলায় মত্ত থাকে। আজকাল খলীলও সায়েমার খেলার সাথী হয়েছে। ওরা দুজন বকরী ও তার বাচ্চাটি নিয়ে পাহাড়ের উপর চরাতে যায়, ছুটোছুটি করে। এভাবে কদিনেই ওরা একে অপরের আপন হয়ে যায়। কখনো বাগানে লুকোচুরি খেলায় আবার কখনো পাহাড়ী ঝর্ণার ধারে পাথর সাজিয়ে খেলার ঘর তৈরী করে। পরস্পরে ঝগড়া হয়, কিন্তু অল্পক্ষণে মিটমাট করে সব ভুলে খেলায় মনোযোগ দেয়। তাদের এমন পিয়ারী পিয়ারী দুষ্টুমী দেখে বাড়ীর সবাই সীমাহীন আনন্দ অনুভব করে। এই কারণে এবং সময়ের ব্যবধানে খলীলের আম্মা নিজের শোক হয়রানীও অনেকটা ভুলে যায়। কিন্তু প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর নিজের দেশের আযাদীর জন্য দুআ করতে তিনি কখনো ভুলেন না। একদিন সায়েমা এবং খলীল কাঁদতে কাঁদতে ঘরে আসে। হাতে তাদের বকরীর বাচ্চাটি। বাচ্চাটির পুরো গা রক্তে ভেজা। সে রক্তে লাল হয়ে গেছে খলীল ও সায়মার গায়ের জামা।

 

          বুঝাই যাচ্ছে, বাচ্চাটি আর বেঁচে নেই। বাচ্চাটির নাড়িভুড়ি বেরিয়ে গেছে। বকরীটিও তাদের পিছনে পিছনে চিৎকার করে ছুটে আসছে। বকরীটি ফ্যাল ফ্যাল চোখে সেদিকে তাকাচ্ছিল, জিভ বের করে মুখ চাট ছিলো আর তার মৃত অসাড় বাচ্চাটি দেখছিলো। মনে হয় যেন বকরীটির দু’চোখে প্রচুর অশ্রু এসে জমেছে। বেদনার অশ্রু দু’চোখ উছলে পড়তে চায়। এই অবোধ প্রাণীটির কথা বলার তাকাৎ থাকলে অবশ্যই এখন সে চিৎকার করে বলতো, "আমার প্রিয় শাবকটিকে কে কতল করেছে? কি কসুর ছিলো তার? কোন অপরাধে ওর শরীর রক্তাক্ত?” বকরীটি তার স্বভাবসুলভ মায়াবী চোখে কখনো সায়েমা আবার কখনো খলীলের দিকে চাইছে আর যেন বলছে, "তোমরা আমার বাচ্চাটিকে ভীষণ আদর করতে আর সর্বক্ষণ ওকে নিয়ে খেলতে। তোমাদের উপস্থিতিতে আমার এতবড় সর্বনাশটা কেন হতে দিলে তোমরা ? তোমরা ওর ব্যাপারে বেখেয়াল ছিলে; তোমরা অপরাধী নও কি? এদিকে সায়েমা এবং খলীলও কাঁদছে, কারণ ওরা সত্যিই বাচ্চাটিকে খুব আদর করত। এই শাবকটি ছিলো ওদের খেলার অকৃত্রিম সঙ্গী।

 

          খলীলের আম্মা খলীলের কান্না থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন; বেটা, বাচ্চাটিকে কে কতল করেছে, চিননা তাকে? খলীল কিছু বলার আগে সায়েমা বল্লো, ফুফী জান! বাচ্চাটি আমাদের অদূরেই ঘুরে ঘুরে ঘাস খাচ্ছিলো। আমি আর খলীল ভাইয়া খেলা করছিলাম। হঠাৎ ভীষণ এক আওয়াজ হওয়ায় আমরা উভয়ে ভয় পেয়ে যাই। বকরীটি দৌড়ে আমাদের কাছে এসে দাড়ায়। আওয়াজ যেদিকে থেকে আসছিল সেদিকে তখন ধুলোবালি উড়ছে। এর রহস্য কি তা দেখতে আমরাও সেই স্থানে পৌছে দেখি যে, বকরীর বাচ্চাটি খুনের মধ্যে ছটফট করছে। কাউকে দেখলাম না, কিছুই ঠাওর করতে পারলাম না যে, কে মারল এই শাবকটিকে। কোন মানুষ আমাদের নযরে পড়েনি। এবার সকলে পেরেশান হলো এইভেবে যে, তবে। কে কতল করলো, কোন কারণে বাচ্চাটির মৃত্যু ঘটল? গর্ত করে বাচ্চাটিকে মাটি চাপা দেয়ার সময় ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলো সায়মা। ওর আব্বা কান্না থামাতে চাইলে জড়ানো গলায় ও বলে, আমি এখন কাকে নিয়ে খেলা করবো আম্মু! তার আম্মা তাকে প্ররোধ দিয়ে বল্লেন, কেঁদনা, এভাবে কাঁদতে হয় না, বাজার থেকে একটি খুব সূরত বকরীর বাচ্চা তোমাকে কিনে দেবো।

 

          খলীল পাশেই দাড়ানো ছিলো, সে বললো, মামিজান, বড় বকরীটি বাচ্চা ছাড়া কি ভাবে একা একা থাকবে? ওর কষ্টের কথা কে বুঝবে? কাকে বলবে হৃদয়ের যন্ত্রণার কথা ? খলীলের কথা শুনে সায়মার আম্মার চোখে অশ্রু আসে। সন্তান হারার যন্ত্রণার অনুভূতিতে তার দুচোখ বেয়ে ফোটা ফোটা অশ্রু ঝরতে থাকে। আলী পাশে দাড়িয়ে সবকিছু শুনছিলে এবং অবলোকন করছিলো। আলীকে দেখে বুঝা যায়, গভীরভাবে সে কি যেন ভাবছে। আলী পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র হলেও বিচক্ষণ খুবই মেধাবী। সে এই ব্যাপারাট নিয়ে ভাবছে কিন্তু বুঝে উঠতে পারছে না যে, এই বিস্ফোরণটি কোথেকে কিভাবে হলো। রুশী ফৌজরা তো এখনো এদিকে আসেনি এবং আকাশে তাদের কোন বিমান উড়ত দেখা যায়নি। আলী তার আব্বাকে এ ব্যাপারে বহু প্রশ্ন করেছে। কিন্তু কোন সমাধান তার আব্বাও দিতে পারেনি। কেউ বিষয়টা আবিষ্কার করতে পারছেন না।

 

          সকলে ঘরেই বসা। হঠাৎ পাথর দিকে লোকজনের শোরগোল শুনে আলীর আব্বা বাইরে বেড়িয়ে দেখেন, একজন আহত যুবককে লোকেরা হাতে হাতে ধরে বাড়ীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যুবকটির হাত ও মাথা থেকে অস্ত্র খুন ঝরছে। আলী ও তার আব্বা আহত যুবকটির বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলেন-কি ঘটেছে তা জানার জন্যে। কিছুক্ষণ পর যুবকটির হুশ ফিরে আসলে সে জানালো যে, ক্ষেত থেকে বস্তীতে ফেরার পথে রাস্তার উপর একটি সুন্দর ঘড়ি দেখি! নীচু হয়ে ঘড়িটি তুলতেই বিকট শব্দে তা বিস্ফোরিত হয়। সাথে সাথে আমি বেহুশ হয়ে পড়ে যাই। আলী দেখলো, যুককটির তিনটি আঙ্গুলই উড়ে গেছে। কিন্তু কারো মাথায় ঢুকছিলো না যে, ঘড়ির সঙ্গে বিস্ফোরণের সম্পর্কটা কি! উপস্থিত সকলে যুবককে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকলে গো বেচারা অনুযোগের সুরে সে বলে, আমি তো ঘড়িটি হাতে তুলেছিলাম মাত্র।” একটি ঘড়ি বিস্ফোরিত হয়ে তার হাতের আঙ্গুল উড়িয়ে নিয়েছে এবং তাকে কিভাবে মারাত্মক রকম যখম করেছে তা কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না।

 

          এক বৃদ্ধ বললেন, “ঘড়ি হাতে নিলে বিস্ফোরণ ঘটে এমন কথাতো কখনো শুনিনি। সুতরাং এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে, সে কারও সাথে অবশ্যই মারামারি করেছে। আরেকজন এক ধাপ এগিয়ে বললো, "যদি ঘড়ি হাতে তুললে তা বিস্ফোরিত হয় তাহলে ভদ্রলোকেরা তা পরে কেন? এমনি ভাবে নানাজন নানা রকম মন্তব্য করে। আস্তে আস্তে নিজ নিজ বাড়ীর দিকে সবাই পা বাড়ায়। আলী তার আব্বার সাথে বাড়ী ফিরে আসে। সে বিষন্ন চিন্তিত। সে তার আব্বাকে বল্লো, আব্বু নিশ্চয় এর ভিতর কোন রহস্য লুকায়িত আছে। কেননা, এ ব্যক্তি যে ধরণের বিস্ফোরণে যখমী হয়েছে আমাদের বকরীর বাচ্চাটিরও একই ধরণের বিস্ফোরণের কবলে মৃত্যু ঘটেছে। সুতরাং এ বিস্ফোরণ কি ভাবে কোথেকে হয় চিন্তাভাবনা করে তার সূত্র খুঁজে বের করা একান্ত প্রয়োজন। একথা শুনে আলীর আব্বা তাকে বললেন, “বেটা যে কথা বড়দেরই বুঝে আসছে না তা নিয়ে তোমার চিন্তা করে লাভ কি? রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আলী ব্যাপারটা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ চিন্তা ভাবনা করেছে কিন্তু কোন কিনারা না পেয়ে কোন এক সময় নিন্দ্রার কোলে ঢলে পড়ে। (চলবে)