কেন আমরা ফিলিস্তিনি ভাইবোনদেরকে সাহায্য করতে পারছি না?
আজ আমরা আলোচনা করবো কেন আমরা ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের সাহায্য করতে পারছি না? এ বিষয়টি নিয়ে। আল্লাহর কাছে তাউফিক কামনা করছি।
আমরা প্রথমে ফিরে যাবে পনেরশত বছর আগের একটি ঘটনার দিকে। ঘটনাটি ঘটেছে স্বয়ং মুজাহিদদের সর্দার,যোদ্ধা নবি রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জামানায়। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে হজ করার উদ্দেশ্য মক্কায় যাচ্ছিলেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠালেন এ মর্মে সংবাদ কাফেরদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে,আমরা যুদ্ধ করতে আসছি না। এবার আমরা হজ পালন করতে আসছি।
কাফেররা মুসলিমদের শক্তিশালী অবস্থান জানার জন্য গুজব ছড়িয়ে দিল যে,উসমানকে হত্যা করা হয়েছে।
এ খবর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছাল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উসমান হত্যার কথা শুনে এক মূহুর্তও বসে থাকেননি। জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং সাবাহিদের থেকে জিহাদের বাইয়াত নেওয়া শুরু করলেন এই মর্মে যে,উসমান হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে আমরা ফিরবো না। একে একে চৌদ্দশত সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বাইয়াত দিলেন।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। সাত আসমানের উপর আরশে আজিম থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওহি নাযিল করলেন এ মর্মে যে,হে মুহাম্মাদ! তোমার সাহাবিরা স্বয়ং আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছে। তোমাদের হাতের উপর আমার হাত। আল্লাহু আকবার!
ইরশাদ হচ্ছে,
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَى نَفْسِهِ وَمَنْ أَوْفَى بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
অর্থ: যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরষ্কার দান করবেন। সূরা ফাতাহ ৪৮:১০
এখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে রাসূল! যেসব লোক আপনার নিকট বাইআত হচ্ছিল তারা মূলত আল্লাহর নিকটই বাইআত হয়েছে। তাদের হাতের ওপর আল্লাহর কুদরতি হাত রয়েছে।
একই সূরার ১৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا
অর্থ: “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নিচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরষ্কার দিলেন। [সূরা ফাতাহ ৪৮:১৮]
এখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে বাইআত হয়েছিল।
কিন্তু আফসোস! আমাদের দেশের কথিত পীরেরা এ সকল আয়াত দিয়ে যে বাইয়াত দেয়,আয়াতে কিন্তু নিছক সে বাইয়াতের কথা বলা হয়নি। আল্লাহ তাঁদের সহিহ বুঝ দান করুন।
এ ছিল এক উসমানের হত্যার বদলা নেওয়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিশোধের ধরন। আর তাঁদের এ কাজে আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে আয়াত নাযিল করলেন। গাছের নিচে বসে বাইয়াত দিয়েছিল। আল্লাহ সুবনাহু তাআলা কুরআনে গাছের কথাও উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ
যুগে যুগে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়িন,তাবে তাবেয়িন,আইয়াম্মে কেরাম এবং যুগের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর অনুসারীরা এভাবেই মুসলিম হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেন। পৃথিবীর কোন প্রান্তে মুসলিম মাজলুম হয়েছেন আর উম্মাহর সিংহরা এগিয়ে আসেনি এমন কথা কল্পনায় আনাও ভুল।
এ ছিল যুগে যুগে আমাদের সালাফে সালেহিনদের আমল।
কিন্তু আজ কেন আমরা মাজলুম উম্মাহকে সাহায্য করতে পারছি না। কারণ কি? আমাদের সমস্যা কোথায়? এ নিয়ে কি আমরা চিন্তা ফিফির করেছি! মূল সমস্যা কি আমরা খুঁজে পেয়েছি!
আজ আমরা এ সমস্যাটি নিয়েই আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ
যুগে যুগে মাজলুম উম্মাহকে উম্মাহর সিংহরা সাহায্য করতে পেরেছে। কাফেরদের শক্তিকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। আজ পারছি না। কারণ কি? কারণ হলো-আমরা খেলাফত হারিয়ে ফেলেছি এবং কুফুরি গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছি।
আজ আমাদের উপর মুরতাদ শাসকগোষ্ঠী চাড়াও হয়ে আছে। দেশ পরিচালনা করছে কুফুরি গণতন্ত্র দিয়ে। আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে মানুষের মনগড়া আইন দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। শুধু এখানেই শেষ নয়।
মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের দিকে লক্ষ্য করুন। তাঁরা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে ক্ষমতায় টিকে আছে। কাফেরদের সাথে মিলে মুসলিম উম্মাহর একটা দেহকে পঞ্চান্নটার মতো টুকরা করেছে। আহ! গোটা মুসলিম উম্মাহ একটা দেহ ছিল। ওরা একে টুকরা টুকরা করে পঞ্চান্নটা অংশে ভাগ করে ফেলেছ।
পুরো দুনিয়া আল্লাহর। আল্লাহর বান্দা বিশ্বের যে কোন প্রান্তে গিয়ে নিজের মতো করে যে কোন বৈধ কাজ করতে পারবে। কিন্তু বর্তামানে পারছে না। কারণ কি? আমরা কি ভেবে দেখেছি!
বর্তমানে অবস্থা এমন যে, কাজ করতে চাইলে ভিন্ন দেশে গিয়ে তাঁদের গোলাম হয়ে করতে হয়! সে দেশে পরাধীন থাকতে হেব। কেন এমন হল? আল্লাহর জমিনে বিচরণ করতে কেন আবার অনুমতি লাগবে? বরং সিস্টেম এমন যে, অনুমতি ছাড়া কোন দেশে কেউ গেলে সে হয়ে যাবে অবৈধ!
বর্তমানে কোন মুসলমান দেশের সরকারের অনুমতি ছাড়া নিজের বৈধ সম্পদ দিয়ে অন্য দেশ থেকে মালামাল কিনে নিজের দেশে এনে বিক্রি করতে চাইলে সে হয়ে যায় চোরা কারবারী! অথচ তার সম্পদ বৈধ, ব্যবসার পদ্ধতি বৈধ।
আমাদেরকে অসংখ্য রাষ্ট্রে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। আমরা কেউ বাংলাদেশী,কেউ মিসরি,কেউ পাকিস্তানী,কেউ আফগানি। এভাবে আমাদের পরিচয় ফিট করে দেওয়া হয়েছে। কাঁটাতার দিয়ে আমাদের সীমানা নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। ফুটবল আর ক্রিকেটের মত বেহুদা খেল তামশায় আমাদের যুবকদের নিমগ্ন করে রাখা হয়েছে। যাতে তাঁরা তাঁদের পরিচয় ভুলে যায়। জাতীয়তাবাদের মত কুফুরি মতবাদকে আঁকড়ে ধরে।
অথচ আমাদের পরিচয় কি ছিল? আমরা এক উম্মাহ। এক দেহের মত। আমার এক অঙ্গ আক্রান্ত হলে যেমন পুরো শরীর ব্যথা হয়। তেমনিভাবে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের কোন মুসলিম ভাইবোনকে হত্যা করলে,সম্মানহানি করলে আমার ব্যথা অনুভব হবে।
হাদিসে এসেছে,
عَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «مَثَلُ المُؤْمِنينَ في تَوَادِّهِمْ وتَرَاحُمِهمْ وَتَعَاطُفِهمْ، مَثَلُ الجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الجَسَدِ بِالسَّهَرِ والحُمَّى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
হযরত নুমান বিন বশীর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, দয়া-মায়া এবং স্নেহ-মমতার দিক দিয়ে মুমিনদের উদাহরণ হল একটি দেহের মতো। দেহের কোন একটি অঙ্গ ব্যাথাপ্রাপ্ত হলে সারাটা দেহ তার জন্য অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যায়। (সহী বুখারী ৬০১১; সহী মুসলিম ২৫৮৬)
উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে-
বিশ্বের যেকোন এক প্রান্তে কোন মুসলমান শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবার উপর তাকে বাঁচানো ফরয হয়ে যায়। যতক্ষণ না তাকে রক্ষার ব্যবস্থা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ ফরয থেকে কেউই মুক্ত হতে পারে না। সবাই এই ফরযের অন্তর্ভুক্ত থাকে। এ জন্য যদি দুনিয়ার সবকিছু ছাড়তে হয় তাহলে তা-ই করতে হবে। সব ছেড়ে হলেও একজন মুমিনকে রক্ষা করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ اِمْرِئٍ يَخْذُلُ اِمْرَأً مُسْلِمًا فِيْ مَوْضَعٍ تَنْتَهِكُ فِيْهِ حُرْمَتُهُ، وَيَنْتَقِصُ فِيْهِ مِنْ عِرْضِهِ، إلَّا خَذَلَهُ اللهُ فِيْ مَوْطَنٍ يُحِبُّ فِيْهِ نُصْرَتَهُ، وَمَا مِنْ اِمْرِئٍ يَنْصُرُ مُسْلِمًا فِيْ مَوْضَعٍ يَنْتَقِصُ فِيْهِ عِرْضُهِ، وَيَنْتَهِكُ فِيْهِ مِنْ حُرْمَتِهِ، إلَّا نَصَرَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيْ مَوْطَنٍ، يُحِبُّ فِيْهِ نُصْرَتَهُ. (رواه أبو داود، رقم: 4884)
অর্থঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে এমন স্থানে পরিত্যাগ করে চলে যায়, যেখানে তার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয় ও সম্মানহানি হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলাও তাকে পরিত্যাগ করেন এমন স্থানে, যেখানে সে সহায়তা কামনা করে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে সম্মান ও মর্যাদাহানির ক্ষেত্রে সহায়তা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার কাঙ্ক্ষিত জায়গায় সাহায্য করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৮৮৪)
ফিরে যাই সাহাবায়ে কেরামদের যুগে
মৃত্যুর আগ মুহুর্তেও অন্য ভাইকে ভুলেননি
হিশাম ইবনে আস রাযিয়াল্লাহু আনহুমৃত্যুর আগ মুহূর্তে তীব্র তৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও নিজে পানি পান না করে অন্য ভাইকে দিয়ে দেয়া যে কত কঠিন তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না। কোন মানসিকতায় উপনীত হওয়ার পর তাঁদের এ অবস্থাটা হয়েছে। তাঁদের ব্যাপারেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وَيُؤْثِرُونَ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ
তাঁরা নিজেরা অভাবগ্রস্থ হলেও অন্যদেরকে নিজেদের ওপর প্রাধান্য দেয়। সূরা হাশর (৫৯) : ৯
কিন্তু আমাদের এমন কেন হয়না? কারণ আমরা আমাদের পরিচয় ভুলে গিয়েছি। আমাদেরকে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি,আমি বা আমরা তো ভালো আছি। আমাদের দেশে তো সমস্যা নেই। অন্য দেশের মানুষ মার খেলে আমার কি? নাউযুবিল্লাহ!
কিন্তু আমাদের এ ভাবনা যে পুরোপুরি ভুল। কারণ ইহুদি ও কাফেররা ততক্ষণ সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষন না তাঁরা আমাদেরকে আমাদের দ্বীন ইসলাম থেকে না ফিরাতে পারে। এটা কি আমার কথা! না এটা আমার কথা নয়। এ কথা মহামহীয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَى وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُمْ بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
অর্থঃ এবং ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা - তুমি তাদের ধর্ম অনুসরণ না করা পর্যন্ত তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেনা; তুমি বলঃ আল্লাহর প্রদর্শিত পথই সুপথ; এবং জ্ঞান প্রাপ্তির পর তুমি যদি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ কর তাহলে আল্লাহ হতে তোমার জন্য কোনই অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।
সুরা বাকারাঃ আয়াত ১২০
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন-
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِلَّذِينَ آَمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا
“অর্থঃ তুমি মানুষের মাঝে মুমিনদের ঘোরতর শত্রু পাবে ইহুদী ও মুশরিকদের”। (সূরা আল-মায়েদা ৫:৮২)
তো ভাই! আমরা কেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মাজলুম মুসলিম উম্মাহর সাহায্য করতে পারছি না।
১.খিলাফত হারিয়ে ফেলেছি।
২.আমাদের উপর চেপে আছে মুরতাদ শাসকগোষ্ঠী (আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে মানবরচিত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে)
৩.আমাদের উপর জাতীয়বাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে (আমাদের অনেকগুলো রাষ্ট্রে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। পতাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং কাঁটাতার দিয়ে এরিয়া ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি আরো কয়েকটি কারণও আছে
১.আমরা জিহাদকে ছেড়ে দিয়েছে
২.দুনিয়া নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে পড়েছি
ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা ‘ঈনা (নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পুনঃ মূল্য কম দিয়ে ক্রেতার নিকট হতে ঐ বস্তু ফেরত নিয়ে) কেনা-বেচা করবে আর গরুর লেজ ধরে নেবে এবং চাষবাসেই তৃপ্ত থাকবে আর আল্লাহ্*র পথে জিহাদ করা বর্জন করবে তখন আল্লাহ তোমাদেরকে অবমাননার কবলে ফেলবেন আর তোমাদের দ্বীনে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে এটা অপসারিত করবেন না”। (আবূ দাঊদ - ৩৪৬২, আহমাদ - ৮৪১০)
আজ আপনি চাইলেও ফিলিস্তিনে গিয়ে মুসলিমদের সাহায্য করতে পারবেন না। কারণ মুরতাদ শাসকগোষ্ঠী আপনাকে যেতে দিবে না। আর আপনি পালিয়ে যদিও কোন দেশে যান,তবে আপনি সে দেশের অবৈধ সাব্যস্ত হবেন।
আমরা তাহলে কীভাবে মুক্তি পাবো? আমাদেরকে দাওয়াহ,ইদাদ ও জিহাদরে পথে অগ্রসর হতে হবে। উম্মাহর যুবকদের কর্ণকুহরে জিহাদের সুর পৌঁছে দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা জিহাদের মাধ্যমেই আমাদের খিফাফত ফিরিয়ে দিবেন। আমাদের হাত শত্রুদের শাস্তি দিবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থঃ তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার। (সূরা আত-তাওবাহ ৯:৪১)
আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ,
وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
“অর্থঃ আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত: যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না”। (সূরা আনফাল ৮:৬০)
আমরা কোন গাদ্দার রাষ্ট্র ও বাতিল হুকুমতের উপর ভরসা করব না। বরং নিজেদের সর্বাত্মক চেষ্টায় শুধু আল্লাহ তায়ালার সাহায্যের উপর ভরসা করবো। আল্লাহ তায়ালাই সকল বাদশাদের বাদশা। তিনিই পারেন সাহায্য-সহযোগিতা করতে। তিনিই তালুতের মাধ্যমে জালুতকে পরাজিত করতে সক্ষম।
আমারা যদি আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করি। তবে আল্লাহও আমাদের সাহায্য করবেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
“অর্থঃ হে ইমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন”। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৭)
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَلَوْلا دَفْعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللّٰهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللّٰهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ (40)
“অর্থঃ আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে সন্ন্যাসীদের আশ্রমগুলো, গির্জাগুলো, ইহুদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেতো; যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয় তাদের সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব শক্তিধর, পরাক্রমশালী।” (সূরা হজ্জ ২২: ৪০)
আর আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলা ও তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানের কথাতো আছেই।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বলেন -
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّٰهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآَنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللّٰهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (111)
“অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ কিনে নিয়েছেন মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল, জান্নাতের বিনিময়ে। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে, অতঃপর তারা (কাফেরদের) হত্যা করে এবং নিজেরাও নিহত হয়। তাওরাত, ইনজিল ও কুরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর কে আছে, আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী? সুতরাং তোমরা তাঁর সাথে যে লেনদেন করেছো, সে জন্য আনন্দিত হও। আর এটাই মহাসাফল্য”। (সূরা আত-তাওবা ৯: ১১১)
এবং আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই হাদিস-
للشهيد عند اللهِ سِتُّ خِصَالٍ: يُغْفَرُ لَهُ فِيْ أَوَّلِ دَفْعَةٍ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ، وَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الوَقَارِ، اَلْيَاقُوْتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا، وَيُزَوَّجُ اِثْنَتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ زَوْجَةً مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ، وَيَشْفَعُ فِيْ سَبْعِيْنَ مِنْ أَقَارِبِهِ.
“অর্থঃ শহীদের জন্য রয়েছে ৬টি বিশেষ মর্যাদা -
১. প্রথমেই তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে,
২. সে জান্নাতে তার স্থান অবলোকন করবে,
৩. জাহান্নামের আযাব থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে,
৪. (কিয়ামতের) বিভীষিকাময় মুহূর্তে সে নিরাপদ থাকবে,
৫. তার মাথায় সম্মানজনক এমন মুকুট পরিয়ে দেয়া হবে, যার একেকটি মুক্তা দুনিয়া ও দুনিয়াস্থ তাবৎ জিনিস থেকেও উত্তম এবং
৬. জান্নাতের বাহাত্তরজন হুরের সাথে তাকে বিবাহ করিয়ে দেয়া হবে। এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্য থেকে ৭০জনের জন্য সে সুপারিশ করার ক্ষমতা লাভ করবে”। (তিরমিযী, হাদিস নং- ১৬৬৩)
আমাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। কারণ
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন-
كم من فئة قليلة غلبت فئة كثيرة بإذن الله
“অর্থঃ ...কত অল্প সংখ্যার দল বড় সংখ্যার দলকে পরাস্ত করেছে...”। (সূরা বাকারা ২:২৪৯)
আর আমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ তাআলা অন্য জাতি নিয়ে আসবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِن تَتَوَلَّوْا۟ يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓا۟ أَمْثَٰلَكُم
“অর্থঃ যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না”। (সূরা মুহাম্মদ 47:৩৮)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন—
إِلَّا تَنفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“অর্থঃ যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান”। (সূরা আত-তাওবাহ ৯:৩৯)
এজন্য আমরা নিজ নিজ ভূখণ্ডে দাওয়াহ,ইদাদ ও জিহাদের কাজ চালিয়ে যাব। আল্লাহ তাআলা অবশ্যই আমাদেরকে সাহায্য করবেন। শত্রুদের পরাজিত ও লাঞ্ছিত করবেন। এবং আমাদেরকেউ বিজয় দান করবেন। ইনশাআল্লাহ
হে আল্লাহ! আপনি ফিস্তিতিনি মুসলিমদের সাহায্য করুন। বর্বর ইসরাইলি বাহিনীকে আপনি উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দিন। বিশ্বের সকল মুজাহিদ ভাইদের সাহায্য করুন। আমিন। ইয়া রব্বাল আলামিন