ধারাবাহিক উপন্যাস
মরণজয়ী মুজাহিদ
==================================================
আলীর বিজয় অভিযানের খবর চীফ কমাণ্ডারের কাছে পৌঁছলে তিনি আলীকে হেড কোয়ার্টারে ডেকে পাঠান। মারকাজী কমাণ্ডার আলীকে নিয়ে হেড কোয়ার্টারে আসেন। চীপ কমাণ্ডার উঠে দাড়িয়ে আলীকে বুকে চেপে ধরে আনন্দের আতিসয্যে তিনি আলীর গালে চুমু এঁকে দেন। আনুষ্ঠানিক কুশলাদী জিজ্ঞাসার পর হাত ধরে আলীকে কাছে বসিয়ে ঐতিহ্যবাহী ‘সিন’ চা পান করতে দেন। গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে আলীর অভিযানের সকল খবর তিনি তার কাছ থেকে শুনলেন। এর পর বললেন, “আলী! প্রথম দিনই আমি তোমার মধ্যে সাহস ও প্রতিভার আভাষ পেয়েছিলাম। আমি তখনই মনে করেছিলাম এ ছেলে বড় হয়ে একদিন মুজাহিদদের খুব বড় কমাণ্ডার হবে। আজ আমার ধারণা সত্যে পরিণত হলো। তোমার হিম্মত ও বিচক্ষণতা দেখে আমি আনন্দিত। এখন তোমাকে এক জরুরী কমাণ্ডারের দায়িত্ব দিব। আশা করি তুমি তা সফলতার সাথে সম্পাদন করতে সক্ষম হবে।”
আলী বিনীত ভাবে বললো, “আপনি যে প্রশংসা করেছেন আমি তার যোগ্য নই। তবে আমার ওপর কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পন করলে আমি অত্যন্ত খুশী হব এবং জীবন বাজি রেখে আমি তা সম্পাদন করতে চেষ্টা করব।”
কমাণ্ডার এবার আস্বস্ত হয়ে বললেন, “বহুত আচ্ছা। গরদীজ সেনানিবাসে মেজর ফয়ইয়াজ খান নামে একজন অফিসার আছেন — সে আমাদের লোক। তাঁর কাছে আমার এক পয়গাম পৌছিয়ে তার জওয়াব নিয়ে আসতে হবে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে একাজ করতে হবে। গরীজের নিকটবর্তী মারকাজের দু’জন কমাণ্ডারকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তাকে তালাশ করে বের করত ব্যার্থ হয়েছে। এছাড়া গত দুই মাস ধরে তার সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই। হতে পারে তিনি ধরা পড়ে গ্রেফতার হয়েছেন। তার সকল তথ্য জানা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। আমাদের বিশেষ গোয়েন্দা সার্ভিসের সে একজন একনিষ্ঠ কর্মী। অতএব বুঝতেই পারছ, তার সাথে যোগাযোগ করার গুরুত্ব কত বেশী। গরদীজ পৌছার পূর্বেই তাঁর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাবে! এ ব্যাপারে গরদীজ শহরে আমাদের যারা হিতাকাঙ্খী রয়েছে তারা তোমাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে। এখান থেকে তুমি পাঁচজন মুজাহিদ সাথে নিয়ে গরদীজের নিকটবর্তী ঘাঁটি “মারকাজে হায়দার” পৌঁছবে। সেখানে অস্ত্র রেখে খালী হাতে তোমাকে শহরে প্রবেশ করতে হবে। এই মারকাজের কারো সাথে তুমি তোমার মিশন সম্পর্কে আলাপ করবে না। দুশমনদের গুপ্তচর তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে। যার পরিনামে শহরে প্রবেশের সাথে সাথে তারা তোমাকে গ্রেফতারও করতে পারে।”
মুজাহিদদের এই মারকাজ থেকে ছয়দিনের দূরত্বে গরদীজের অবস্থান। সেখানে পঞ্চাশ হাজার লোকের বসবাস। গরদীজ আফগানিস্তানের পাকতিয়া প্রদেশের রাজধানী। সামরিক দিক দিয়ে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এখান থেকে গরদীজের পথ অত্যন্ত বিপদসংকুল। পথে ঘন জঙ্গল, উঁচু উঁচু পাহাড়। এর মাঝে মাঝে বয়ে গেছে স্রোতস্বীনী পাহাড়ী ঝর্ণা। উপরন্তু অবিরামভাবে চলছে জঙ্গি বিমানের বোমা বর্ষণ। পথে পথে দুশমনের গুপ্তচর ও সৈনিকদের পোষ্ট তো রয়েছেই। তবে আলীর বিগত পাঁচ বছর এনিয়েই কেটেছে বিধায় তার কাছে এ সফর অতি সাধারণ বলে মনে হল।
আলী ও তার সফর সঙ্গীরা হালকা অস্ত্র, খাওয়ার জন্য শুকনো রুটি, কিসমিস এবং সামান্য বিছানা পত্র নিয়ে এই বিপদসংকুল পথে রওয়ানা হলো। দুই দিন চলার পর এক উচু পাহড়ের চূড়ায় উঠে এক গাছের ছায়ায় তারা ঘুমাচ্ছিল। এমন সময় পাহাড়ের অপর পাশ থেকে তারা গড় গড় আওয়াজ শুনতে পায়। আলী সাথীদের নিয়ে দ্রুত একটি পাথরের আড়ালে এসে দাড়ায়। পাহাড়ের নিচের এক গ্রামে রুশ সৈন্যরা প্রবেশ করেছে। ট্যাঙ্ক এবং সাঝেয়া গাড়িতে গ্রাম ভরে গেছে। গ্রামে চরম ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। অধিকাংশ ঘরে আগুন জ্বলছে। বহু নিস্পাপ সরল মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে জালিমরা।
আলীর মনে সেই দিনের কথা স্মরন হলো, যে দিন রুশীরা আলীর গ্রামে হামলা করে তার মা ও ফুফুকে শহীদ করেছিলো। আলী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তার হৃদয়ে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠলো। আলী তার সাথীদের বললো, “আজ আমার কাছে অস্ত্র থাকলে রুশদের হেস্ত নেস্ত করে ছাড়তাম।” তার সাথীরা বললো, “আমরা এখন অন্য মিশন নিয়ে যাচ্ছি, অন্য কোন কাজে জড়িয়ে পড়া আমাদের উচিত হবে কি? চুপে চুপে পথ পরিবর্তণ করে উদ্দেশ্যের পানে অগ্রসর হওয়াই ঠিক।”
আলীর মনে রুশদের দেখতেই শত শিখায় প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে। তার মনে পড়ে ওদের খেলনা বোম বিস্ফোরনে ছটফট করে মরে যাওয়া খেলার সাথী সায়েমার কথা। রক্তে লাল হওয়া মা ও ফুফুর লাশ তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। তার হৃদয় স্বজন হারা যন্ত্রনা ও তাদের হত্যাকারীদের প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহায় ব্যাঘ্র হয়ে ওঠল। সে তার সাথীদের পরামর্শ রদ করে বললো, “চলুন বন্ধুরা, রুশদের বদলা নিয়েই সামনে অগ্রসর হব বলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” একজন মুজাহিদ কথা টেনে নিয়ে বললো, “আমার কাছে তো শুধু ক্লাসিনকভ, এদিয়ে কি ভাবে আমরা ওদের মোকাবেলা করব?” আলী মৃদু হেসে বললো, “বন্ধুরা! সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, রাতের অন্ধকারে ওদের সবগুলোকে জাহান্নামে পাঠাবার কৌশল আমার জানা আছে। কোন অস্ত্রের প্রয়োজন নেই।” অন্য মুজাহিদরা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কিভাবে আপনি এতবড় ঝুকি নিচ্ছেন? আলী ওকথার জবাব না দিয়ে সাথীদেরকে বল্লো, “ওইখানে তিনটি গাড়ি উল্টে পড়ে আছে তোমরা তিনজন যেয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওগুলোর টায়ার খুলে ফেলো। আমরা অন্য সরঞ্জাম জোগাড় করে তোমাদের কাছে আসছি।” মুজাহিদরা বুঝতে পারছিল না, আলী এই প্লাষ্টিকের টায়ার দিয়ে ট্যাঙ্ক ও সাঝেয়া গাড়ির মোকাবেলা কিভাবে করবে? তবুও আদেশ অনুযায়ী তারা টায়ার খুলতে চলে যায়। আলী তার অপর সঙ্গীকে সাথে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে চলে আসে। এ গ্রামে মাত্র কয়েকটি বাড়ি। গ্রামটি খুবই ছোট। ধ্বংস করে দেওয়া গ্রামের কিছু লোক এখনও বেঁচে আছে। আলী রাস্তার পাশে চিন্তায় মাথায় হাত দিয়ে বসা এক বৃদ্ধকে দেখে এই গ্রামে কোন দোকান আছে কি না তার কাছে জানতে চাইলো। বৃদ্ধ বললো, এ গ্রামে কোন দোকান নেই। পাশের গ্রামে ছিল। সে গ্রামটিও ওরা ধ্বংস করে দিয়েছে। আলী জিজ্ঞেস করলো, “গ্রামের লোকজন কোথায়?” বৃদ্ধ বললো তুমি যদি এই দেশের অধিবাসী হয়ে থাক তবে তোমার অজানা থাকার কথা নয় যে, কোথায় গেছে এই জনপদের লোকজন। আমরাও চলে যাব। আর থাকবোই বা কিভাবে? আমাদের পাশের গ্রামের দোকান থেকে মুজাহিদরা সওদাপাতি কিনতে বলে আজ সে গ্রামটিও রুশীরা ধ্বংস্তুপে পরিণত করেছে। প্রথমে বিমান দিয়ে বোমা বর্ষণ করেছে এর পর ট্যাঙ্ক নিয়ে এসে পুরো গ্রাম ঘেরাও করে ফেলে। উপর থেকে নিক্ষেপিত বিস্ফোরিত বোমার জ্বলন থেকে রক্ষা পাওয়া ঘরগুলোতে ওরা স্বহস্তে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করেছে। আল্লাহ জানেন, ওদের হিংস্র নখরাঘাতে কত নিস্পাপ শিশু ও অবলা নারী ও আজাদী পাগল পুরুষ শাহাদাত বরণ করেছে। এর পূর্বে এই গ্রামের বহুলোক হিজরত করে অন্যত্র চলে গেছে।
আলী বৃদ্ধকে বললো, আমরা মুজাহিদ, বিশেষ এক কাজের জন্য আমাদের কিছু পুরনো কাপড় ও কেরোসিন তেলের প্রয়োজন।
বৃদ্ধ গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে পুরোনা কাপড় কেরোসিন তেল সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এক টিন কেরোসিন তেল সে সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। আলী তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো, যথেষ্ট হয়েছে। আপনি বহু কষ্ট করেছেন।
আলী ও তার সাথী তেল এবং পুরোনা কাপড় নিয়ে পাহাড়ে চলে আসে। কিন্তু অপর তিন সাথী টায়ার নিয়ে তখনও ফেরেনি। তাই তারা কাপড় ও তেল রেখে অন্যদের সহযোগিতার জন্য ছুটে যায়। সবাই মিলে টায়ার গুলি খুলে পাহাড়ের চূড়ায় তুলে আনে। সন্ধ্যার এক ঘন্টা পর আলী পাহাড়ের ওপর পাশে চলে আসে। চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। রুশ সৈন্যরা সারাদিন ধ্বংসযজ্ঞ চালাবার পর পাহাড়ের পাদদেশে তাবু খাটিয়ে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় ভেংগে পড়েছে। তাদের ট্যাঙ্ক এবং সাঝোয়া গাড়িগুলো তাবুর পাশে দাড়ানো। আলী সব কিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর একটি উপযুক্ত ঢালু স্থান নির্বাচন করে সব টায়ার সেখানে জমা করে। এবার পুরোনা কাপড় টায়ারে পেচিয়ে তাতে কোরোসিন তেল ঢেলে দেয়। পেচানো কাপড়ে ভালো করে তেল ঢেলে সে সাথীদেরকে বললো, আমি এগুলোতে ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, তোমরা এই পরিষ্কার সোজা ঢালু পথ দিয়ে একটি একটি করে গড়িয়ে দিবে। তারপর এখানে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করা চলবে না। সোজা দৌড়ে পাহাড়ের অপর প্রান্তে চলে যাবে। সেখানে বসে এর ফলাফল স্বচক্ষে দেখতে পাবে। সব টায়ারগুলিতে আগুন জ্বালিয়ে গড়িয়ে দেওয়ার পর মুজাহিদরা দৌড়ে পাহাড়ের অপর প্রান্তে যেয়ে আড়ালে বসে তাবুর দিকে তাকিয়ে রইল। জ্বলন্ত টায়ারগুলি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তেই রুশদের তাবুতে আগুন লেগে যাচ্ছে। প্রবল হাওয়া বইতে ছিল। দেখতে না দেখতে এক তাবু থেকে আগুন অন্য তাবুতে ছড়িয়ে পড়লো। প্রচণ্ড আগুন তাবুর আশে পাশে দাড়ানো ট্যাঙ্ক ও সাঝেয়া গাড়িতে লেগে গেলো। ফলে গাড়িতে রাখা, গোলাবারুদ আগুনে উত্তপ্ত হয়ে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে। রুশীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দ্বিগবিদিগ হারিয়ে দৌড়াতে থাকে। তারা কিছুই ঠাওরাতে পারছে না যে, কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে এবং কারা করছে। এই আকস্মিক বিপদের মুকাবিলা কিভাবে করবে তা তাদের মাথায় আসছে না। জালিম রুশদের অবস্থা দেখে মুজাহিদরা আনন্দে নেচে ওঠে। কয়েক মিনিট পর বিকট বিকট বিস্ফোরণ হতে শুরু হলে মনে হলো যেন কেয়ামত শুরু হয়েছে। আগুনে রুশদের গোলা-বারুদের গাড়ি জ্বলতে থাকলে তার মধ্যে রাখা ভারী-ভারী গোলা প্রচণ্ড আওয়াজে ফাটতে শুরু করে। আগুনের আলোতে নিচের সব কিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। রুশদের দেহ তাদেরই গোলার আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে হাওয়ায় উড়তে ছিলো। রুশদের কয়েকজন অফিসার জীবন বাঁচাতে পাহাড়ের দিকে ছুটে আসলে আলী ও তার সঙ্গীরা সিঙ্গেল সট গুলি ছুড়ে ওদের পাখির মত মজা করে হত্যা করে। ওরা গুলি খেয়ে তড়পাতে তড়পাতে পাহারের ওপর থেকে গড়িয়ে নিচের জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে গিয়ে পড়ে। হঠাৎ তারা পাহাড়ের অপর প্রান্ত থেকে গুলির আওয়াজ শুনতে পায়। আলী সবাইকে বললো মুজাহিদের কোন গ্রুপ হয়তো অপর দিক দিয়ে হামলা শুরু করেছে। আলী সাথীদের হুশিয়ার করে দিয়ে বললো, সজাগ দৃষ্টি রাখো। বেঁচে যাওয়া সৈন্যরা আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে। আক্রমণ করলে ওদের কেউ যেন জীবিত ফেরত না যেতে পারে। বলতে বলতে কয়েকজন রুশ সৈন্য এদিকে হামলা চালায়। আলী ও তার সাথীরা ক্লাসিনকভের ব্রাশ ফায়ারে তাদের ঝাঝড়া করে দেয়। রুশদের পক্ষ থেকে আর কোন আক্রমণের সম্ভাবনা নেই। তাদের দম্ভচূর্ণ হয়েছে। সকলের অস্তিত্ব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিচ থেকে আর কোন গুলির আওয়াজ শুনতে না পেয়ে আলী অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নীচে নেমে আসে। তাবুর নিকটবর্তী হয়ে সে এক ধরণের সংকেত বাজাতে লাগলো। মুজাহিদদের কমাণ্ডার ছাড়া অন্য কেউ সে সংকেতের অর্থ বুঝতে পারবে না। অপর পাশ থেকে তার জওয়াবে বলা হল, আমরা মুজাহিদ। নির্ভয়ে চলে এসো। আলী নীচে এসে মুজাহিদদের সাথে মিলিত হয়। তারা ইতিমধ্যে একশ’র মত রুশ সৈন্যকে গুলি করে মেরেছে। আর সমান সংখ্যক জান বাঁচাবার আশায় মুজাহিদদের নিকট আত্মসমর্পণ করেছে। আগুনে যারা পুড়ে মরেছে তাদের হিসাব তখনও করা হয়নি। অন্য গ্রুপের মুজাহিদরা আলীকে জানালো, আমারা এদের ওপর আকস্মিক আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ পাহাড়ের ওপর থেকে আগুনের বড় বড় কুণ্ডলী রুশদের তাবুর ওপর পড়তে দেখলাম। দেখতে না দেখতে সকল তাবুতে আগুন ছড়িয়ে পড়লো। তাদের মজুদ করা প্রেট্রোল ও গোলায় আগুন ধরলো। প্রাণের ভয়ে রুশ সৈন্যরা যে যেদিকে পারলো পালাতে থাকলো। আমাদের মুজাহিদরা পূর্বেই মরিচা বানিয়ে পজিশন নিয়ে বসে ছিলো। রেঞ্জের মধ্যে আসতেই তারা ব্রাশ ফায়ারে দুশমনদের কুপোকাৎ করতে থাকে। বাকীরা অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করেছে। আলী এবার তাদের নিকট আগুনের কুণ্ডলীর রহস্য বর্ণনা দেয়। তার কৌশলের কথা শুনে স্থানীয় মুজাহিদ গ্রুপের কমাণ্ডার তাকে বুকে জরিয়ে ধরে বললো, “যে দেশে আপনার মত নওজোয়ান ও বুদ্ধিমান মুজাহিদ থাকবে সেই দেশের মানুষকে কেউ দাসত্বের শিকল পড়াতে পারবে না।”
এর পর মুজাহিদরা মালে গনীমত জমা করলো। দুই শত ক্লাসিনকভ ও তিনটি ট্যাঙ্ক গনীমতে পাওয়া গেল। সতেরোটি ট্যাঙ্ক, পঞ্চাশেরও বেশী ট্রাক ও সাঝেয়া গাড়ি জ্বলে নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় কমাণ্ডার আলীকে বললো, আমাদের কাছে নগদ অর্থ নেই, আপনারা মারকাজে চলুন, সেখান থেকে আপনাদের গনিমতের সম্পূর্ণ অংশ আদায় করে দিব। আলী বললো, আমাদের গনিমতের প্রয়োজন নেই আর আমরা কোন লালসায় এ কাজ করিনি বরং আমাদের জরুরী কাজ আছে এখনই আমাদের বিদায় নিতে হবে। আলীর বারবার আপত্তি সত্ত্বেও স্থানীয় কমাণ্ডার সাহেব আলীকে কিছু নগদ টাকা গ্রহণ করতে বাধ্য করেন।
*****