আমার এদশের চালচিত্র
গণতন্ত্রের ঘাড়ে জাহেলিয়াতের ভূত
ফারুক হোসাইন খান
========================================================================
আমার মাতৃভূমি নাম সোনার বাংলাদেশ। একদা সুখ-শান্তি, ধন-সম্পদ, ঐশ্বর্য, ধর্মীয় সম্প্রীতি, ধর্ম পালনের স্বাধীনতার জন্য এদেশকে সোনার বাংলা বলা হলেও এখন এ শব্দটি ব্যবহার করলে বোধ হয় এদেশকে ব্যঙ্গ করা হবে। কেননা সেই ধন-সম্পদ, ঐশর্য্য হারিয়ে গেছে। দেশ এখন পৃথিবীর অন্যতম গরীব রাষ্ট্র। এমনকি সামাজিক শান্তি জিনিসটা জনগণের কাছে সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। এদেশ এখন লুটেরার দেশ। স্বার্থপরের দেশ, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরের দেশ, মাস্তানের দেশ, রাজনৈতিক মতলববাজ, নৈতিকতা ও মানবতা বর্জিত নাস্তিকদের দেশ। এদেশ এখন এসব কীর্তিমান মহামানবের (?) স্বর্গভূমে পরিণত হয়েছে। তাই এদেশে এখন সন্ত্রাস, রাহাজানি, মানুষের মানুষের অধিকার ছিনতাই, ক্ষমতা দখলের লড়াই-খুনাখুনি-হানাহানির দেশ হিসেবে সুনাম(!) অর্জন করেছে। জাহেলিয়াত যুগে আরবে গোত্রে গোত্রে লড়াই রক্তপাত খুনাখুনি লেগে থাকত। এক গোত্রের মানুষ অন্য গোত্রের মানুষের রক্তপাত করতে সদা প্রস্তুত এবং উদগ্রীব হয়ে থাকত। সামান্য ঘটনা নিয়ে গোত্রে গোত্রে শত শত বৎসর পর্যন্ত যুদ্ধ হতো।
শিশুরা তাদের গোত্রের মানুষদের হত্যাকারী গোত্রের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার অনুপ্ররণার মধ্যে দিয়ে বড় হতো। বড় হয়ে শত্রু গোত্রের ওপর প্রতিশোধ নেয়াকে পবিত্র কর্তব্য বলে গণ্য করতো। এজন্য সে যুগে আরবে কোন কেন্দ্রীয় প্রশাসন ছিল না। গোত্র প্রধানেরা নিজ নিজ গোত্রের সর্বময় বলে বিবেচিত হতো। তারা অন্য কোন গোত্র বা শাসকের আনুগত্য মেনে নেয়াকে চরম অপমান এবং গোলামী বলে মনে করতো। স্বাধীনচেতা এই গোত্রগুলি নিজেদের মধ্যে মারামারি, কাটাকাটি করে যুগের পর যুগ পার করে দিত। এজন্যে আরবের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে 'একতা' ছিল একটা অকল্পনীয় এবং অসম্ভব ব্যাপার। সমগ্র আরব তাই বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, অস্ত্রের ঝংকার, গোত্রে গোত্রে ঈর্ষা, দ্বন্দ্ব সংঘাত, ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ স্পৃহা, গোত্র প্রধানের সেচ্ছাচারে নিমজ্জিত ছিল। মাতৃভূমি আধুনিক বাংলাদেশেও সেই জাহেলিয়াত যুগের আছড় পরেছে, জাহেলিয়াত যুগের ভূত স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘাড়েও চেপে বসেছে। আমরা যেন জাহিলিয়াত যুগের চেয়েও নিকৃষ্টতর যুগে ফিরে যেতে উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। সকল বাধা বন্ধন ছিড়ে ছুড়ে সেদিকেই ধাবিত হওয়ার জন্য যেন লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে আমাদের।
আমাদের দেশেও সীই জাহেলিয়াত যুগের চেয়েও নিকৃষ্টতর পন্থায় বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, হানাহানি, ভয়ঙ্কর রক্তারক্তি মানুষে মানুষে বিভেদ, শত্রুতা সৃষ্টি, মানুষকে হিংস্র পশুর ন্যায় প্রতিশোধপরায়ন করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। একদল মানুষকে আরেক দলের প্রতি হিংস্র, প্রতিশোধপরায়ন, উন্মাদ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ লড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতা রক্তপাত ও শত্রুতা গোত্রে গোত্রে না হলেও আধুনিক সভ্য মানুষের উদ্ভাবিত 'গনতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার' নামে ঘটিত হচ্ছে। গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকারের নামাবলী গায়ে চাপিয়ে দেশের মানুষের ঐক্যের ভন্ধঙ্কে ছিন্ন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের উন্নতি, স্থিতিশীলতায় কুঠারাঘাত হানা হচ্ছে। আবার দাবী করা হচ্ছে এহেন রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা নাকি মানুষের মৌলিক অধিকার, গণতআন্ত্রিক অধিকার প্রভৃতি। রাজনীতি চর্চার নামে হরেক রকম মতাদর্শ আবিষ্কার করে দেশের মানুষকে দলে দলে বিভক্ত করা হচ্ছে ঠিক সেই জাহেলিয়াত যুগের গোত্রসমূহের ন্যায়। গোত্র প্রধানের ন্যায় রাজনৈতিক দলের প্রধানই দলটির মালিক-মুখতারের ভূমিকা পালন করে।
গোত্রের প্রতিটি লোক যেমন সর্দারের আনুগত্য কর্তব্য বলে গণ্য করতো, রাজনৈতিক দলের নেতা বা নেতৃবৃন্দের ইচ্ছাকে ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্ন ছাড়াই অন্ধ অনুগতের ন্যায় বাস্তবে রূপ দেয়াকে দায়িত্ব বলে মনে করে। জাহেলিয়াত যুগে মুষ্টিমেয় গোত্র প্রধান তাদের অনুসারীদের ব্যবহার করে রক্তে রঞ্চিত উপাখ্যানের জন্ম দিতো। বর্তমানে ঠিক একই কায়দায় আধুনিক আঙ্গিকে মুষ্টিমেয় রাজনৈতিক নেতা তাদের সমর্থক কর্মীদের ব্যবহার করে দেশের মানুষদের গোত্রের ন্যায় দলে দলে বিভক্ত করছে। বিভিন্ন দলীয় সমর্থকেদের মধ্যে বৈরিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সংঘাত, সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে রক্তপাত ঘটাচ্ছে। দেশের স্থিতিশীলতা এবং জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার নামে, দেশের সেবা করার নামে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে এদেশের যে তৎপরতা চলছে তা জাহেলিয়াত যুগের সেই বর্বরতার চেয়ে একটুও সরেস নয়। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বাক স্বাধীনতা, মৌলি অধিকারের বুলি আউড়িয়ে দেশের সেবা করার স্বঘোষিত ঠিকাদার সেজে ঝাকে ঝাকে রাজনৈতিক নেতা এবং দল দেশের উন্নয়নে (?) যে অবদান রাখছে তার কিঞ্চিৎ খতিয়ান তুলে ধরা হলোঃ
(১) দলীয় রাজনীতির কারণে সন্ত্রাস ব্যাপক আকার ধারণ করছে। রাজনৈতিক স্বার্থে, এলাকায় প্রভাব বজায় রাখার জন্য এলাকার সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়, ভাড়ায় খাটায়। এদের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে চাঁদা আদায় করা হয়। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা তাকে উচিৎ (!) শিক্ষা দিয়ে দেয়। প্রতিপক্ষ দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, নির্যাতন চালাতে এদের ব্যবহার করে। ভোটের সময় এরা ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোট গ্রহণ পর্বকে সংক্ষিপ্ত করে দেয়। আবার পুলিশ এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করলে দলের নেতা প্রভাব খাটায়, দলের পক্ষ থেকে তাকে নির্দোষ বলে তার মুক্তির দাবী করা হয়। মিছিল হয়, গাড়ী ভাংচুর, হরতাল পর্যন্ত ঘটনা গড়ায়। এরূপ খুটির জোড়ে প্রায়ই অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে যায়। রাজনৈতিক দলে আশ্রিত সন্ত্রাসী, মাস্তান, গুন্ডাবাহীনি এমনকি সমর্থক, কর্মীরাও প্রতিপক্ষকে সুযোগ পেলেই আঘাত খুন, গুম, করার জন্য তৎপর থেকে। প্রতিদিনের পত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা যায়, দেশের আনাচে কানাচে রাজনৈতিক দল্গুলি প্রতিপক্ষের মিছিল হামলা, অফিস ভাংচুর, নেতা কর্মী খুন, হাত কাটা, পা কেটে দেয়া, এরপর পরস্পুরকে দোষারপ করে বিবৃতির ঝড়ের খবর।
যেন প্রতিটি দল প্রতিপক্ষের রক্ত পিপাসা মেটাবার জন্য যুদ্ধ বাধাবার জন্য ক্ষুদ্রতম কোন সুযোগও হাত ছাড়া করত না। সে যুগে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে পুলিশ, সেনাবাহীনির কোন ব্যবস্থা ছিল না বলে তারা বিপক্ষ গোত্রের লোকদের রক্তে হাত রঞ্চিত করতে দ্বিধা করতো না। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী থাকার পরও রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকরা বিপক্ষ দলের লোকদের খুন জখম করছে মির্বিচারে। যদি এই নিরাপত্তা বাহিনীর অস্তিত্ব না থাকত তবে গণতন্ত্রের নামে এই দলাদলির রাজনীতি আমাদের সমাজকে কোথায় নিয়ে যেত? একদলের নেতা কর্মীরা কি অন্য দলের নেতা-কর্মীদের নির্মূল করার জন্য সর্বদা বন্দুক-কামানে সজ্জিত হয়ে তাদের খুঁজে বেড়াত না? জাহেলিয়াত যুগের গোত্রীয় দ্বন্দ্বের ইতিহাস কি এর কাছে ম্লান হয়ে যেত না?
(২) দলীয় রাজনীতি আমাদের যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজকে বিপথে পরিচালিত করছে। রাজনৈতিক দলগুলো যুব ও ছাত্র শাখা গঠন করে যুব ও ছাত্র সমাজে নিজ নিজ সমর্থক তৈরি করছে। প্রতিপক্ষের প্রতি গৃণা, বিদ্বেষ, শত্রুতা পোষণ প্রবণাতা থেকে সম্ররথক ছাত্ররা ও যুবকেরা মুক্ত নয়। ফলে শিক্ষাঙ্গণে চলছে লাশের রাজনীতি। নিজ দলের একজন নিহত হলে বিপক্ষ দলের ৫ জনকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে। জাহেলিয়াত যুগে গোত্রের শিশুরা বড় হত তার পিতা এবং গোত্রের অন্যান্য নিহুতদের প্রতিশোধ নেয়ার শপথ নিয়ে। কোন ক্রমেই প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করাকে তারা কাপুরুষতা মনে করত। রক্তের বিনিময়ে রক্ত, হত্যার বিনিময়ে হত্যা করা ছিল তাদের নিকট পবিত্র দায়িত্ব।
তদ্রুপ রাজনৈতিক দলের নবীন সদস্য হিসেবে যুবক ও ছাত্ররাও সহকর্মীর হত্যার সুযোগকে কখনই হাতছাড়া করে না। তারা প্রতিপক্ষকে যেভাবেই হোক জব্দ করার, ঘৃণিত প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধ গ্রহণের জিঘাংসা মনোবৃত্তি নিয়ে শিক্ষাঙ্গন ত্যাগ করে আরও ব্যাপকভাবে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই সে গড়ে ওঠে হিংস্র, প্রতিপক্ষকে দমন করা এবং প্রতিশোধপরায়ন পরিবেশের মধ্যে। এছাড়া দেশে বেকার সমস্যার অন্যতম সমস্যা হওয়ায় ছাত্র জীবন শেষে দলের ছত্রছায়ায় অনেক ছাত্র অবৈধ চাঁদাবাজিকে জীবিকা অর্জনের মাধ্যম করে নেয়। দলের নেতারা দলীয় ও ব্যাক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তাদের আইনের হাত থেকে রক্ষা করে বলে এ তৎপরতা চলে নির্বিঘ্নে। এভাবে সমাজে দলীয় রাজনীতির কারণে সন্ত্রাস , হত্যা, জখম, নির্যাতন, চাদাবাজী, মাস্তানী প্রভৃতি অপরাধ বাধাহীন গতিতে চলছে এবং এসব সমাজের সর্বত্র দিনদিন বিস্তার লাভ করছে।
(৩) দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কিংবা বিপক্ষ দলকে চাপের মুখে নতজনু হতে বাধ্য করার জন্য কিছু কিছু রাজনৈতিক দল 'ইস্যু' সৃষ্টি করে। তারা এসব 'ইস্যুকে' আবার জাতীয় সমস্যা বলে রঙ লাগায়, প্রচাআর করে। সম্প্রতি দেশে কয়েকটি রাজনৈতিক দল এমন কতকগুলি ইস্যু সৃষ্টি করে দেশে হরতাল, মিটিং, মিছিল, অবরোধ, ভাংচুর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। হরতালের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু বানিয়ে ফেলছে। বলা হয়, হরতাল নাকি অধিকার আদাআয়ের হাতিয়ার। ধরা যাক কোন দলের জনসমর্থন ২০%। সে দল সরকারী দলকে তাদের একটি দাবী পূরণে বাধ্য করার জন্য হরতাল ডাকল। দাবীটি পূরণ হলে শতকরা ২০ জনের সমর্থিত দলটির স্বার্থ হাসিল হতে পারে। কিন্তু এর জন্য বাকী ৮০ জন মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে, যেমন অপহরণকারীরা মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে। তাই বাকী ৮০% লোকের ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে, রাস্তায় তাদের গাড়ি বের করলে ভাংচুর করা হয়েছে, অফিসে যেতে বাধা পেতে হয়েছে।
সর্বোপরি যারা দিন আনে দিন খায় পর্যায়ের শ্রমিক যেমন রিক্সাওয়ালা,কুলি, মজুর, কারখানার শ্রমিক্রা আয় উপার্জনহীন হয়ে অভুক্ত থাকতে বাধ্য হয়েছে।অথচ এদেরও মৌলিক অধিকার আছে রস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল করার, ব্যবসা-বাণিজ্য করার, পেটের অন্ন সংস্থান করার। দলীয় রাজনীতি এদের সেই মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় রাষ্ট্রিয় সম্পদ যা রাষ্ট্রের নাগরিকদের পকেটের পয়সায় কেনা হয়। ক্ষমতায় আসীন রাজনৈতিক দলটিকে ক্ষমতাচুত্য করার জন্য ধ্বংস করা হয় এ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। অথচ এ সম্পদ সরকারী দলটির মালিকানাধীন সম্পদ নয়। এ সম্পদের ধ্বংস সাধন নিশ্চয়ই রাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধী তৎপরাতা। অথচ এই রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতাকে রাজনৈতিক দল্গুলি মোউলিক অধিকার বলে দাবী করে।
(৪) কোন দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা তথা দেশের কল্যাণকর সেবা করা একটি জটিল, কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এজন্য এ দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিটি ব্যক্তি সৎ, নিষ্ঠাবান, চরিত্রবান, নির্লোভ, নিঃস্বার্থপর হয়া জরুরী। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে দলীয় রাজনীতিতে এর কোন বাছ-বিচার নেই। এখানে যে কেউ এ দায়িত্ব লাভ করতে পারে। স্ৎ ধৈর্যশীল ও অন্যান্য মানবীয় সতগুণের অধিকারী এবং সুযোগ্য মানুষকে সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিচালক নির্বাচন করার কোনই সুযোগ নেই। সৎ ও আদর্শবান মানুষ কখনো নিজেকে নিজে ভালো মানুষ বলে দাবী করে না। সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবা করার যোগ্য বলে প্রচার করে না। চাটুকার, ক্ষমতালোভীরাই কেবল এমনটি করে। নির্বাচনে যদি একডোজন চোরও প্রার্থী হয় তবে জনগণ বাধ্য হয়ে একডজনের একজনকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করে। তাদের কোন ক্ষমতা নেই এই চোরদের বাদ দিয়ে এলাকার বা রাষ্ট্রের সবচেয়ে সৎ এবং যোগ্য লোকটিকে তাদের সেবা করতে নির্বাচিত করা।
এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী মনোনয়নের সময় নজর দেয়, কোন ব্যক্তি দলের ফান্ডে কত চাঁদা দিয়েছে, এলাআকায় কার দাপট বেশী এবং কে বেশী বিত্তবান। লোকটি অসৎ বা চোর হলেও সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ করে না। এভাবে দলাদলির রাজনীতি আমাদের সরকার প্রশাসনে অসৎ, চাটুকার, ক্ষমতালোভী, দূর্নীতিবাজদের জড়ো করে। এসব লোক ক্ষমতায় আসীন ক্ষমতায় আসীন হয়ে প্রথমে নজর দেয় নির্বাচনী ব্যয়, পার্টির ফান্ডে জমা দেয়া অর্থ উসুল করায়। নীতি দুর্নীতির প্রশ্ন এখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। পরবর্তিতে নিজ নিজ ক্ষমাতা পাকাপোক্ত করার জন্য কর্ম ক্ষেত্রে স্বজনদের নিয়োগ করতে প্রভাব খাটায়। কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগে স্বভাবগত দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। এসব কর্মকর্তা কর্মচারী আবার চাকুরী জোটাতে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ খাতে ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছে বলে চাকুরীতে থাকাকালীন দুর্নীতির মাধ্যমেই তা উসুল করে নেয়। প্রশাসনে সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে রাজনীতি অবদান রেখে চলছে।
(৫) রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় ক্ষমতাসীন দলের ত্রুটি আবিষ্কার করে, তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার পথ খোঁজে। কখনো জ্বালাও পোড়াও ও জঙ্গী আন্দোলন চালিয়ে সরকারকে পদত্যাগ ও নির্বাচন দিতে বাধ্য করে।যেমনটি বর্তমানে আমাদের দেশে ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। একটি নির্বাচনে দেশের হাজার হাজার টাকা ব্যয় হয়। ঘন ঘন কয়েকটি নির্বাচনই দেশকে দেউলিয়ে বানাতে যথেষ্ট। অথচ জাতীয় ক্ষতির প্রতি রাজনৈতিক দল সমূহের কোন ভাবনা নেই। কেননা নির্বাচনের ব্যয় কোন রাজনৈতিক দলকে বহন করতে হচ্ছে না, বহন করবে দেশের জনগণ। পক্ষান্তরে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ক্ষমাতায় গিয়েও তাদের এ ব্যয় বহ্ন করতে হচ্ছে না। সুতরাং জনগণের কিছু অর্থ খরচ হচ্ছে হোক না তারা তো জনগণের সেবা করার জন্যই ক্ষমতায় যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক এবং দলীয় রাজনীতির কারণে আমরা ১৯৯১ সালে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে আমাদের সেবক নির্বাচন করেছিলাম। আবার চলতি বছরেই আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে নতুন সেবক নির্বাচন করার আশঙ্কা রাজনৈতিক গগণে উঁকি ঝুকি মারছে।
(৬) দলীয় রাজনীতির কারণে কোন কোন দল দেশের স্বার্থবিরোধী বিদেশী চক্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বিদেশী চক্র দলের নেতাদের অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয়। তাদের মাধ্যমে দেশের সামরিক, অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার ঐ সব বিদেশী শক্তি দেশে বিভিন্ন উপায়ে আগ্রাসন চালালেও তারা নীরবতা পালন করে। সাম্প্রতিককালে দেশের সীমান্তে ভারতের তৎপরতা, উপজাতীয়দের উস্কানী প্রদান, ফারাক্কা সমস্যা, বাবরী মসজিদ বিতর্ক, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান পরিষদের সাম্প্রদায়িক ততপরতার ব্যপারে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ভুমিকা ছিলো বিতর্কিত। এসব দল দেশের স্বার্থ অপেক্ষা বিদেশী প্রভুদের স্বার্থ রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
(৭) দলীয় রাজনীতির কারণে দেশের জনগষ্ঠী বিভিন্ন দলের সমর্থক হওয়ায় তারা শতধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে জাতীয় ঐক্য, সংহতি স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দলীয় রাজনীতির কারণে বিভিন্ন দল, দলীয় নেতা সমর্থকদের মধ্যে আদর্শগত ও মনস্তাত্বিক শত্রু তা সৃষ্টি হচ্ছে। এক দলের নেতা বা সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতা বা সমর্থকদের কখনোই আন্তরিক ভাবে বন্ধু বলে ভাবতে পারছে না। রাজনৈতিক কারণে কখনো তাদের মধ্যে সমঝোতা বা এক টেবিল উপস্থিতি ঘটলেও আন্তরিক বন্ধুত্ব তাদের মধ্যে কখনোই পরিলক্ষিত হয় না। কেননা আদর্শগত মতপার্থক্য তাদের মধ্যে যে অদৃশ্য শত্রুতা সৃষ্টি করে তা থেকে তারা কখনোই মুক্ত হতে পারছে না। তাই দেখা যায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এক টেবিলে হাজির হলেও পরক্ষণে এক নেতা তার বিপক্ষ দলের নেতা বা দলের কোন ত্রুটি আবিষ্কার করে সে দলের আদর্শ না দলের নেতাদের চরিত্র, চিন্তা-চেতনা নিয়ে রাজপথে এমন ভাবে টানা-হেঁচড়া করছে যেমন শকুন মরা গরুর গোস্ত নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে। রাজনৈতিক নেতাদের বিপক্ষ দলের নেতাদের থেকে এমনভাবে সার্বিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং সদা সতর্ক থাকতে হয় যে, যদি তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগও ঘটে তবে তা নিয়ে পত্র পত্রিকায় রসালো গল্প ফাদে। তাকে নিয়ে নিজ দলে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা অদৃশ্য দেয়াল সর্বদা মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
অথচ জাতির উন্নতি অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। দেশের সমস্যা দারিদ্র, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, নৈতিক চারিত্রিক অবক্ষয় রোধ , দূর্নীতি, সন্ত্রাস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন জাতীয় উদ্যোগ। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় উদ্যোগ। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় উদ্যোগ। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবিরা এসব সমস্যা এবং সমাধানের জন্য ভিন্ন মত পোষণ করে এবং নিজ নিজ মতকে সর্বোত্তম মনে করে সে অনুযায়ী সমাধানের জন্য জোড় চেষ্টা চালায়। দলীয় রাজনীতির কারণে বুদ্ধিজীবিরা একত্রিত হয়ে পারস্পরিক মত বিনিময় করে একটি সুষ্ঠু এবং সমন্বিত সমাধানের পন্থা উদ্ভাবন করতে পারে না। এছাড়া দলীয় আদর্শ ও ব্যক্তি স্বার্থের জন্য অনেক রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রের এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর সমস্যাকেও এড়িয়ে যায়। যেমন ফারাক্কা বাঁধ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বাহিনী সমস্যা সম্পর্কে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের রহস্যজনক ভূমিকা কারো নজর এড়ানোর কথা নয়। এছাড়া দেখা যায়, জাতির সংকটজনক অবস্থা এবং দুর্যোগ মুহূর্তেও দলীয় আদর্শ ও মতের প্রাধান্য বজায় রাখতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে। জাতীয় সবার্থে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে গিয়ে জাতি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পড়ে, ফলে তারা সমন্বিত এবং সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয়।
(৮) দলীয় রাজনীতি দেশের জনগণকে বিভিন্ন শিবিরে বিভক্ত করেছে। বর্তমানে এই রাজনীতির কারণে মানুষ সেকুলার এবং ইসলামপন্থী এই দুই রাজনৈতিক পরিচয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। দেশে যারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী তাদের প্রতিহত এবং নিন্দা করার জন্য সেকুলার পন্থীদের মুখে তুলে দিয়েছে “মৌলবাদী”, “প্রতিক্রিয়াশীল” প্রভৃতি ব্যঙ্গাত্বক শব্দ। এ রাজনীতি মানুষকে মানুষের বন্ধুত্বে পরিণত করতে পারে নি।, করেছে শত্রু। মানুষকে ভালোবাসতে শিক্ষা দেয় নি, দিয়েছে দলে দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিপক্ষকে ঘৃণা করা, গালাগাল দেয়ার তালিম। এই রাজনীতি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের সংহতিকে মজবুত করার শিক্ষা দেয়নি, দিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত উদ্ভাবন করে দলে দলে ভাগ হয়ে একে অপরকে দোষারোপ করা, খারাপ প্রমান করা, অপরের ত্রুটি আবিষ্কার করে তার চরিত্রকে কলুষিত করার প্রবণতার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা, তিক্ততা সৃষ্টি করা ও তাতে লিপ্ত থাকার শিক্ষা।
যেহেতু প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাজনীতি ইসলাম সম্মত নয়। দেশে কাদিয়ানী ও নাস্তিকচক্রের অপতৎপরতা বেড়েই চলছে। ইসলাম বিরোধী অপসংস্কৃতি প্রচার হচ্ছে বিভিন্ন কায়দায়। শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার অভাবে যুব সমাজের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় ক্রমেই বাড়ছে। অথচ এসব সমস্যা সমাধানে তারা মোটেই আগ্রহী নয়। সকল অন্যায়কে উচ্ছেদ করে সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হলো ইসলামের দাবী। অথচ গণতন্ত্রের দাবীদার সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলো ইসলামী রাজনীতিকে বর্তমান সমাজের জন্য ক্ষতিকর দাবী করে তা নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চাচ্ছে ইসলাম অপেক্ষা তাদের রাজনীতি উত্তম, তারা ইসলামের চেয়েও উত্তম ন্যায় ও ইনসাফ পূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে সক্ষম।
রাজনীতি ইসলামের একটি অঙ্গ। স্বয়ং আল্লাহ্ অন্যান্য হারাম, হালালের বিধানের সাথে সাথে মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ভাবে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রাজনীতি চর্চার তাগিদ করেছেন। সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বিধান বাতলে দিয়েছেন। অথচ তথাকথিত সেকুলার গণতন্ত্রপন্থীরা আল্লাহ্ মুসলমানদের জন্য যা হালাল করেছেন তা হারাম করতে উদ্যত হয়েছে। নিজেদের খোদার বিধান অপেক্ষা শ্রেষ্টতর বিধান প্রণেতা হিসেবে জাহির করে পক্ষান্তরে নিজেদেরই খোদার চেয়ে প্রাজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। যা স্পষ্টতই শিরক। গণতান্ত্রিক দলাদলির রাজনীতি এভাবেই মুসলমানদের দ্বারা ইসলামের ওপর আঘাত হানাচ্ছে।
গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকারের রাজনীতির মোড়কে আমাদের দেশে বর্তমানে যে বর্বরতা চলছে জাহিলিয়াত যুগেও এগুলি বিদ্যমান ছিল। গোত্রগত দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে আরব দেশে কোন সম্প্রীতি, ঐক্য ছিল না বলে ইসলাম সর্বপ্রথম এই গোত্র প্রথার ওপর আঘাত হানে। প্রতিটি মানুষ ভাই ভাই এবং অকারণে রক্তপাত মহাপাপ বলে ঘোষণা করে। আরববাসীর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে। অথচ এদেশে মুসলমানরাই গণতন্ত্রের নাই সেই ঘৃণ্য গোত্রীয় অভিশাপকে পুনরুজ্জীবিত করেছে দলীয় রাজনীতির লেবাছ পরিয়ে। ইসলাম দলাদলি, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, সুদ, ঘুষসহ সকল অন্যায়কে উচ্ছেদ করে সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠা রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থা প্রণয়ন করে। যার মূলনীতি হল, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্য থেকে সৎ, নির্লোভ, নিঃস্বার্থপর , চরিত্রবান ও নিষ্ঠাবান মানুষ ঝুজে নেয়া অথবা একদল মানুষের মন-আনুষিকতা এরূপ তৈরি করে নেয়া। এদের মধ্য থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রশাসনের কর্মী নিযুক্ত করা হবে।
ইলম ও তাকওয়ার ভিত্তিতে রাষ্ট্র নায়ক ও মন্ত্রী সভার সদস্য, পার্লামেন্ট সদস্য এবং অন্যান্য প্রশাসকদের নির্বাচিত করা হবে। এরা পরস্পরকে সৎ পথে চলার আদেশ এবং অসৎ পথে চলতে নিষেধ করবে। তারা নিজেরা নিস্বার্থপর, পক্ষপাতদোষ মুক্ত এবং দেশপ্রেমিক হবে বলে দেশের স্বার্থে অন্যের ভুল ধরিয়ে দেবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ, প্রয়োজনে প্রতিরোধ করবে। আবার কেউ যদি তার ভুল ধরিয়ে দেয় তবে সে তা সংশোধন করে নেবে। এ পন্থায় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে তখন কোন বিরোধী দলের প্রয়োজন ছিল না, জাতীয় ঐক্যের প্রতি হুমকি স্বরূপ তথাকথিত গণতান্ত্রিক দলাদলির উদ্ভব ঘটেনি। বরং সর্বস্তরের জণগনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে দেশে ঐক্য অটুট ছিল। দুর্ভোগ, ইসলাম আমাদের জন্য এমন সুন্দর একটি সাসন পদ্ধতি বাতলে দেয়ার পরও আমারা তাকে বাদ দিয়ে এমন এক মরিচিকার পিছে ছুটছি যা ইসলাম অভ্যুদ্বয়ের পরক্ষণেই ছুড়ে ফেলেছিল নোংড়া ডাস্টবিনে।
জাহেলিয়াত যুগে আরবদের বর্বতার কাহিনী শুনলে আমরা অনেকেই শিহরিত হই, তাদের উদ্দেশ্যে ঘৃণার বাক্য ছুড়ে মারি। নিজেদের সভ্য যুগের সভ্য মানুষ বলে গর্ব অনুভব করলেও আমাদের দৈনন্দিন আচরণ আদিম যুগের জংলী মানুষের অসভ্যতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমরা বিজ্ঞান চ্ররচা করে, জ্ঞান অন্বেষার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে এবং উন্নত দর্শন, সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেও অন্ধকার যুগ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারিনি বলে প্রমাণিত হচ্ছে। মানিবিক গুণ বিকশিত করা এবং মানব কল্যাণের জন্য আমরা জ্ঞান অর্জন করে ভদ্র মানুষ হতে চেষ্টা করলেও আমাদের চিন্তা-চেতনার বন্ধ্যাত্ব ঘুচেনি। উন্নত শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আমাদের বৈষয়িক ও কারিগড়িতে উন্নতি সাধন করেছে বটে কিন্তু মানবিক গুণকে বিকশিত করতে পারেনি। বরং চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রে আমরা যে আদিম মানুষের চেয়েও বেশী অজ্ঞ তাই প্রমাণিত হচ্ছে অহরহ। অজ্ঞতার বশীভূত হয়ে মরিচীকার পিছনে ছুটতে আমরা যে জংলী মানুষের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী তা আমরা কাজে , চ্চিন্তা-চেতনায় প্রমাণ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত, প্রতক্ষণে। আমরা কি এ আধার চিরে সত্যের আলোয় আমার উদ্ভাসিত হতে পারি না? এমন কেউ কি নেই যে, সত্যের আলোকে শিখায় আমাদের পথ দেখাতে পারে, আমাদের ভ্রান্তি মোচন করতে পারে? (সমাপ্ত)
*****