সম্পাদকীয়
সুবিচার, মানবতা ও শান্তি কায়েমের প্রয়োজনে তওহীদী জনতাকে একটিবারের জন্য হলেও জেগে উঠতেই হবে
====================================================================
এমন কোন জনগােষ্ঠী কি পৃথিবীর আর কোথাও আছে? আছে কি এমন শাসক ও শিক্ষিত সমাজ? দায়িত্ববোধ, মনুষ্যত্ব ও সৌজন্য বলতে কিছুই এ অভাগা বাংলাদেশের ভাগ্যে ছিল না? দুনিয়ার কোন একটি ভালাে নিয়ম, সুন্দর উপলব্ধি আর পরিচ্ছন্ন চিন্তাও কি এ দেশের বড়লােকগুলাের মধ্যে থাকতে পারলাে না? এতগুলাে জটিল প্রশ্ন আর বিদঘুটে জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হলাে কিসের ভিত্তিতে? পাঠক নিশ্চয়ই এর ব্যাখ্যা চাইবেন। কিন্তু এর ব্যাখ্যা দেয়ার কোন প্রয়ােজন আমরা বােধ করছি না। কারণ, বাংলাদেশের শাসক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আমলা, কর্মকর্তা, শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রসমাজ তথা সমাজের উল্লেখযােগ্য প্রতিটি স্তরের লােকদের আচার আচরণে জাতি আজ হতভম্ব। নতুন কোন আশা আকাংখা বা দীর্ঘসূত্র পরিকল্পনা এখন মানুষ আর করতে সাহস পায় না।
দেশে দৈনন্দিন ভােগ্য বস্তুর দাম মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেলে সরকারের মন্ত্রী নসীহত করেন যে, “পিয়াজ আর এমন কি জিনিস? এটা না খেয়ে কি মানুষ বাঁচেনা?” আর এ মন্ত্রী ব্যক্তিটিরই ব্যবস্থাপনায় একশ কোটি টাকা খরচ করে খেলাধুলার আয়ােজন হয়। ইনিই দশ মিনিটে ষাট লক্ষ টাকার পটকা আর আতশবাজি উড়িয়ে দেন দরিদ্র দেশের সমস্যাক্লিষ্ট রাজধানীর বেদনাবিধুর আকাশে। এর ব্যবস্থাপনায় দেশে জুয়া ও লটারীর সয়লাব আসে। রাস্তা-ঘাট, বাজার, আঙ্গিনা সবখানেই এক ভয়াবহ কর্মবিমুখতা, অন্ধকার আশাবাদ যদি লাইগ্যা যায়। একবার মহা ধুমধামে জুয়ার সমাপ্তি ঘটিয়ে তিনি আবার দ্বিতীয় লটারীর আয়ােজন করে দেশব্যাপি হারামকারির এক অবিরত ধারার সৃষ্টি করেছেন। দুঃখ হয় এ মন্ত্রী ও তার সহকর্মীদের বিবেচনা দৈন্যতা দেখে দারুনাহত হই, এ সরকারের প্রধান ব্যক্তিটির অসতর্ক যাত্রায়।
সারা দেশে প্রতিটি এলাকায় সরকার প্রধানের নির্দেশে যাত্রানুষ্ঠান শুরু হয়েছে। ইতিহাসের ব্যথা-ভারাক্রান্ত রেকর্ডের আলােকে দেখা যায়, বর্তমান প্রধান মন্ত্রীই প্রথম সরকার প্রধান যিনি নিজে যাত্রা দেখে এর তারিফ করেছেন এবং এর অবাধ বিকাশে অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কি জানেন, যাত্রার প্যান্ডেলে তার অযােগ্য নাগরিকেরা কীসব কাণ্ড ঘটায়? তিনি কি শুনেছেন, পেটের দায়ে বা স্বভাব দোষে, যাত্রামঞ্চে উলংগনৃত্যকারিণী তরুণীর বেলেল্লাপনার অসুস্থ প্রকৃতির, বিকৃত রুচির যুবকেরা কেমন পাশবিক হয়ে উঠে। উন্মত্ত হয়ে কী রকম চীৎকার ধ্বনি তুলে ওরা। একজন নারী হওয়ার সুবাদে তিনি কি এসব সংবেদনশীল ও লজ্জাকর ঘটনায় কান দিবেন?
প্রতিটি যাত্রার প্যান্ডেলে বা পাশাপাশি জায়গায় বসে জুয়ার আড্ডা। মাস্তান গুণ্ডা ও রাজনৈতিক টেণ্ডলেরা এ সবের পৃষ্ঠপােষক। নিষিদ্ধ জুয়ার আড়াকে নির্বিঘ্ন করতে স্বার্থ দেখিয়ে প্রশাসন ও পুলিশকে জড়ানাে হয় অহরহ। সরকার এ সবের বদনাম ও পাপের মূল প্রাপক। প্রধানমন্ত্রী! মৃত্যুর পরবর্তী কঠিন সময়টি আসার পূর্বেই ভাবতে শুরু করুন। দেখবেন, আপনার এবং আপনার শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যত সীমাহীন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। আপনি দয়া করে একাকী বসে ভেবে দেখবেন। আপনি এনজিওদের সুযােগ দিয়ে রেখেছেন। ডিশ এন্টিনার সূচনা আপনার হাতে হয়েছে। যাত্রা হাউজীতে আপনি সায় দিয়েছেন। লটারী আপনার অনুমতিতে চলছে। কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘােষণায় আপনি মন লাগাচ্ছেন না। সুদ, ঘুষ, দুনীতি বন্ধে আপনার ভূমিকা অনুজ্জ্বল।
আপনার সময়েই আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামকে সর্বাপেক্ষা বেশী আক্রমণ করে নাটক-উপন্যাস-কলাম ও বক্তৃতা উপস্থাপিত হয়েছে। আপনি খুব গভীর ভাবে চিন্তা করুন। দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোন পথ আপনার খােলা আছে কিনা ভেবে দেখুন। নতুন বছরের শুরুতে আহত ডাক্তারদের ধর্মঘট আর যেন শেষ হবে না। প্রতিদিন রােগীর মৃত্যুর সংখ্যা কেবলই বাড়ছে। ডাক্তারদের ন্যায্য দাবী সরকারের মেনে নেয়া উচিত। কিন্তু দাবী নিয়ে মানুষ হত্যা! একজন মুমূর্ষু রােগীর মরণ চোখে দেখে দেখে ডাক্তারেরা নিজেদের দাবী আর অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গ্যাট হয়ে থাবেন! আশ্চর্য! এরা কি তাহলে নিজেদের শিক্ষা যােগ্যতা ও যশকে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে কেবলই স্বার্থ আদায় করবেন? ডাক্তার কি একজন মানুষ নন? ‘বিনিময়’ আর ‘অধিকার’ না পেলেই কি তার মানব সেবার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? পৃথিবীর আর কোথাও হয়তঃ এ ধরনের পাশবিক ধর্মঘট ডাকা হয়নি।
আর এমন একটা ধর্মঘট ফিরানাের জন্য দাবী মেনে নেয়া- আলােচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা দাবী অন্যায় হয়ে থাকলে শক্তি ও শাসন প্রয়ােগ করে কঠোর হস্তে এসব উশৃঙ্খলতা নিরসন করার কোনটাই যে সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী করতে পারেনি। অন্ততঃপক্ষে ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে এরা কি পদত্যাগ করতে পারলেন না? কি অমানবিকতা! কি নির্লজ্জ পথপরিক্রমা! মানুষের গড়া আইন ও বিধান কি মানবতাকে নিঃশেষ করে দিলাে! দুঃখ হয় এ দেশের ভাগ্যাহত মানুষের জন্যে।
এদের ভাগ্যে কি কোনদিন সত্যিকার ন্যায় ইনসাফ আর মানবতার শাসন ও সুবিচার আসবে না? ডাক্তারদের ধর্মঘটে যে সব নিরপরাধ রােগী জীবন দিয়েছে, এদের প্রাণ নাশের জবাব আল্লাহর দরবারে সরকার ও ধর্মঘটি ডাক্তারেরা দেয়ার আগে আমার মনে হচ্ছে এ জন্য বােধ হয় আমরাই দায়ী।
এ অপরাধ বােধের কারণ আমাদের অলসনিদ্রা। অধপতিত, দাশােচিত ও পশুত্বের যিল্লতী নিয়ে রুগ্ন জীবন যাপনের ব্যর্থতার প্রতি সজোরে আঘাত হেনে আল্লাহর বান্দা রূপে তাঁর যমীনে তাঁর বিধান কায়েম করে জান্নাতী জিন্দেগী যাপনের স্বপ্ন ও সাধনা নিয়ে এগিয়ে চলা মুজাহিদরা কি এখনও জাগবে না? জাগার সময় কি হয়নি এখনাে? হে ঈমানদার নারী-পুরুষ, শিশু, কিশাের, কৃষক-শ্রমিক, জেলে, তাঁতী, চাকুরে, বেকার, ছাত্র, শিক্ষকও পেশাজীবী মেহনতী জনতা, মাত্র একটিবারের জন্যে কি আমরা মুজাহিদদের বেশে জেগে উঠতে পারি না? খােদাদ্রোহী, তাগুতী শাসনের যাতাকলে অসহায় জীবস্মৃত অবস্থায় পিষ্ট হওয়ার দিনগুলি শেষ করার প্রয়ােজনে আমরা কি জাগবােনা?
═──────────────═