JustPaste.it

আমার দেশের চালচিত্র

 

ইসলাম কি বিজ্ঞান ও প্রগতির অন্তরায়?

ফারুক হোসাই খান

=======================================================================

 

        দেশে যেন একটা ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলছে। না, এটা বুলেট-কামান-বন্দুক মার্কা কোন যুদ্ধ নয়, আর এ যুদ্ধে পক্ষ প্রতিপক্ষও নেই। এ যুদ্ধ হল এদেশের, এ জাতির কতিপয় কুলাঙ্গার চাপাবাজদের চাপাবাজী জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার যুদ্ধ। প্রগতি ও বিজ্ঞানের সংজ্ঞা সম্পর্কেও অজ্ঞ এসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নিজেদের বিজ্ঞান ও প্রগতির মহান খাদেম দাবী করে ইসলামকে বিজ্ঞান ও প্রগতি বিরোধী প্রমাণে ‘হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম’ করে যাচ্ছেন।  পত্র-পত্রিকা, সভা-সমাবেশ, বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে একমাত্র ইসলাম এবং এর একনিষ্ট অনুসারীদের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে যে প্রলয় তাগুব সৃষ্টি করে চলছে তা যুদ্ধ পরিস্থিতিকেও হার মানায়।

 

        এই চিহ্নিত বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর সর্বত্র বিধৃত কেচ্ছা কাহিনীর সারাংশ হল, “ইসলাম ধর্ম প্রগতি বিরোধী এটা মধ্যযুগীয় বর্বরদের একটা ধর্মমত। মধ্যযুগে কতিপয় রাজা-বাদশাহ ও সমাজের প্রভাবশালীদের শোষণের হাতিয়ার ছিল এই ধর্ম এবং ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী মোল্লা-মৌলবী শ্রেণী। আধুনিক বিজ্ঞানের পরশে ধর্মের কুপমণ্ডুকতা, শোষন প্রক্রিয়া এবং জাতিকে পশ্চাদপদ করে রাখার প্রবণতা দূর হয়েছে। বিশ্বে মানবতা, সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে সভ্যতা দিন দিন অগ্রগতি লাভ করছে। সুতরাং বিশ্ব যখন সম্মুখপানে এগিয়ে যাচ্ছে তখন কতিপয় মৌলবাদীর জাতিকে ১৪০০ বছরের পুরোনো বাসী ও বস্তাপঁচা মতবাদে নিমজ্জিত করার চক্রান্ত চরম নিন্দনীয় অপরাধ। সুতরাং এই মৌলবাদকে ঠেকাতে হবে। জাতিকে প্রগতি ও বিজ্ঞান থেকে পশ্চাদপদ করে রাখার চক্রান্ত রুখতেই হবে।”

 

        প্রথমেই বলেছি, প্রগতি ও বিজ্ঞানের এসব মহান খাদেমরা প্রগতি আর বিজ্ঞান নিয়ে যতই আর্তনাদ করুক না কেন ওরা প্রগতি ও বিজ্ঞান সম্পর্কে জানাতো দূরের কথা প্রগতি ও বিজ্ঞানের সংজ্ঞা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নয়। বিজ্ঞান ও ধর্ম সম্পর্কে না জেনে শুনেই ওরা বিজ্ঞানকে ধর্মের বিশেষ করে ইসলামের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করিয়ে বিভ্রান্তির ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে। দেশে ইসলামী জাগরণে ভীত হয়ে ইসলামকে হঠানোর মতলবী উদ্দেশ্য সাধণের জন্য বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছে হাতিয়ার হিসেবে। সুতরাং যারা সূর্যের আলো দেখে ভীত হয়ে চোখে ঠুলি পরে নেয়, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে বদ্ধ ঘরের অন্ধকারে থাকতে যারা ভালবাসে তাদের শেখানোর কোন অভিলাষ আমার নেই। তাদের উদ্দেশ্যেও আমার এ লেখা নয়। আমার এ লেখা জাতির ভবিষ্যৎ সেই সব তরুণ যুবকদের উদ্দেশ্যে যারা মতলববাজদের ধুম্রজালে পড়ে বিভ্রান্ত হওয়ার আাশংকা দেখা দিয়েছে।

 

        প্রকৃতি, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড ও বস্তু সম্পর্কে বিশেষভাবে জানার যে জ্ঞান তাই বিজ্ঞান। মানুষ যেভাবে একে পরিচালনা করবে সেভাবেই এটা পরিচালিত হবে। তাই এ জ্ঞান মানব কল্যাণেও ব্যবহৃত হতে পারে আবার অকল্যাণেও। যেমন “আনবিক বোমা" বানাচ্ছে। এর মাধ্যমে মানব কল্যাণের কোন আশা নেই। বিশ্বে প্রতিপত্তি অর্জন এবং প্রয়োজনে কোটি কোটি মানুষকে এর অসহায় শিকারে পরিণত করাই এর উদ্দেশ্য। আবার এই আনবিক শক্তি যখন রিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারিক কাজে লাগানো হয় তখন কোটি কোটি মানুষের উপকার সাধণ হয়। তদ্রুপ বিজ্ঞানের বদৌলতে বিশ্বে যে ধ্বংসাত্মক সমরাস্ত্রের মওজুদ গড়ে উঠেছে তাও মানুষের কল্যাণের জন্য নয় অক্যাণেই। পক্ষান্তরে এই জ্ঞান মানব কল্যাণে ব্যয় হলে বিশ্বের চেহারা আজ পাল্টে যেত।

 

        সুতরাং বলতে হয় বিজ্ঞানের ওপর মানুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও মানবাত্নার ওপর বিজ্ঞানের কোন প্রভাব নেই। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ জাগতিক বহু অগ্রগতি সাধন করলেও মানব প্রকৃতি পরিবর্তন এবং উন্নততর কোন মানবতা সৃষ্টিতে অপারগ রয়েছে। মানুষ চুরি করবে, জুলুম চালাবে, শাসনের নামে শোষন করবে, অহংকারী হবে, স্বার্থপরতায় লিপ্ত হবে, কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য পশুর ন্যায় নির্লজ্জ হবে, প্রতারণা, ভাওতাবাজ, পরনিন্দাকারী হবে কিন্তু, বিজ্ঞানে মানুষের এই কুপ্রবৃত্তিকে দমন করার কোন শক্তি নেই। বরং মানুষ এসব কাজ সহজতর করার জন্য বিজ্ঞানকেও ব্যবহার করতে  পারে। কিন্তু বিজ্ঞান যেমনি তাতে বাধ সাধতে পারে না তেমনি মানুষকে সভ্য, ভদ্র, লজ্জাশীল, সংযমী, দয়ালু, ন্যায়পরায়ণ, উদার, সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, বিনয়ী, নিরংহকার, সহানুভূতিশীল, জ্ঞানবান করে তুলতেও কোন ক্ষমতা রাখে না। আধুনিক এই বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞান মানব সভ্যতার বহু অগ্রগতি সাধন করলেও আজ পর্যন্ত মানুষের আত্মা বা মনের রহস্য উৎঘাটনে অপারগ রয়েছে। সুতরাং যে জ্ঞান মানুষের মনকে জানতেই ব্যর্থ তার নিকট মানবতা ও মানব প্রকৃতি সম্পর্কে নির্দেশনা চাওয়া বোকামী নয় কি?

 

        মানুষকে পাশবিকতা, ও কুপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত করে উন্নত মানুষে পরিণত করার জন্যই ধর্ম-ধর্মের আদর্শ। ইসলাম ধর্ম তার মহান আদর্শের পরশে মানুষকে সত্যিকার মানুষে পরিণত করে উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে সফলতা লাভ করেছে। এ ধর্ম মানুষকে সকল অপরাধ থেকে পবিত্র হয়ে সংযমী, দয়ালু, জ্ঞানবান, ন্যায়পরায়ন, সৎকর্মশীল ও ধৈর্য্যশীলে পরিণত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ইসলাম ধর্মই মানুষকে সভ্য-অসভ্য, ন্যায়-অন্যায়ের প্রভেদ শিখিয়েছে, মানুষকে ভালবাসতে এবং অন্যায়-অসত্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। মানব প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করার  ক্ষমতা রয়েছে ধর্মের, বিজ্ঞানের নয়। ধর্মের আদর্শই মানব মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, মানুষকে সুপথে চালিত করে। পক্ষান্তরে বিজ্ঞানের ওপর মানুষ প্রভাব বিস্তার করে, বিজ্ঞান মানুষ কর্তৃক যথেচ্ছা পরিচালিত হয়।

 

        কিন্তু বিজ্ঞান মানব প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে সুপথে বা কুপথে কোন পথেই পরিচালিত করতে সক্ষম নয়। ধর্ম মানুষকে বলে দেয় আনবিক বোমা বিস্ফোরণ মানুষের জন্য কল্যাণ না অকল্যাণের। বিজ্ঞানের সে ক্ষমতা নেই বলেই মানুষ চাইলেই আনবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়ে মানুষের অকল্যাণ সাধন করতে বাধ্য হবে। আনবিক শক্তির আবিষ্কারক যদি ধর্মের একনিষ্ট অনুসারী হয় তবে সে এ শক্তিকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করবে অকল্যাণে নয়। পক্ষান্তরে সে যদি ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণের সংজ্ঞা সম্পর্কেই অজ্ঞ থাকে তবে সে তার স্বার্থ উদ্ধারে আনবিক শক্তিকে মানুষের অকল্যাণে নিয়োজিত করলেও বিজ্ঞানের ব্যবহৃত হওয়া ছাড়া কোন করণীয় থাকবে কি? থাকবে না। তখন বিজ্ঞান আর প্রগতির ধারক নয়, বিজ্ঞান মানুষের জন্য মূর্তিমান অভিশাপ হয়ে দেখা দিবে। সুতরাং আদর্শহীনতার কারণে মানব প্রকৃতি তথা মানুষের মন যখন লাগামহীন ও স্বোচ্ছাচারি হয় তখন সে মানুষের নিকট থেকে মানবতা, প্রগতি বা মানব কল্যাগের কোন আশা করা যায় লা। কিনতু ধর্ম বা সুমহান মানবীয় আদর্শ যখন মালর মনে স্থান পায়, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দবোধ তার বিবেককে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করে তখনই মানুষ মানব কল্যাণে ব্রত হয়, মালব অকল্যাণ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। তখনই কেবল মানব সভ্যতা বা প্রগতি অগ্রগতি লাভ করে। মানবিক গুণ ও মানবতার বিকাশই হল প্রগতির অন্যতম শর্ত। বিজ্ঞান প্রগতির চালিকা শক্তি নয় সহায়ক শক্তি হতে পারে।

 

        যেমন কোনো সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তি চিন্তা করল যে, সে মানুষের কল্যানে বিমান আবিষ্কার করবে। বিজ্ঞান তার এই মানব কল্যাণ চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে মাত্র। কিন্তু এদেশের তথাকথিত প্রগতিবাদীরা ইসলামের বিরুদ্ধে গদা ঘুরাতে গিয়ে এতটাই হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পরেছেন যে, বিজ্ঞানকেই মানব প্রকৃতি ও প্রগতির চালিকা শক্তিরূপে নিজেরা কল্পনা করছেন ও জাতিকে সে সবক দিতে কোশেশ করছেন। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ নিত্য নতুন পোষাক বানাচ্ছে, উড়োজাহাজে চড়ছে, গ্রহে নক্ষত্রে যাবার জন্য রকেট বানাচ্ছে এই দেখেই আমাদের দেশের প্রগতিবাদীরা সব চিন্তা-ভাবনা গুলিয়ে ফেলেছে। পোশাক, উড়োজাহাজ, রকেট আবিষ্কারকেই প্রগতির একমাত্র পথ ভেবে নিজেদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে জাহির করছে। আর এ যুগে ধর্ম অচল তথা ধর্মের কোন প্রয়োজন নেই বলে ফতোয়া দিচ্ছেন। ধর্ম কোন কলকব্জা-যন্ত্রপাতি তথা আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে মানুষের কোন উপকার করতে পারে না যা বিজ্ঞান পারছে। ফলে তারা মনে করছে, যখন বিজ্ঞান ছিল না তখন ধর্মের প্রয়োজন থাকলেও এখন মানব কল্যাণে অক্ষম ধর্মের প্রয়োজন কিসের।

 

        বিজ্ঞান এসে ধর্মের প্রয়োজন গুচিয়ে দিয়েছে-এ কল্পনাই তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারা যদি একটু গবেষণায় রত হত তবে দেখতে পেত ধর্ম বিশেষ করে তাদের দ্বারা সমালোচিত ইসলাম ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোন দ্বন্ধ নেই। ইসলাম মানুষকে মানবতা শেখায়, মানব গুণে তাকে গুণান্বিত করে মানুষের কল্যাণে উৎসাহিত করে। আর বিজ্ঞান তার এই মহৎ কর্ম সাধনে সহায়ক উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় মাত্র। ধর্ম মানুষকে যে মানবতা শেখায় তা বাদ দিয়ে মানুষ যদি শুধু বিজ্ঞান নিয়েই নিজেকে সভ্য ও সভ্যতা নির্মাণের কারিগর দাবী করে বসে তবে তো বানরকে সুন্দর পোষাক পরিয়েও ‘সভ্য’ বলা যাবে। রকেটে চড়ে যে রাশিয়ান কুকুর ‘লাইকা’ পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেছিল তাকেওত সভ্যতা নির্মাণের দাবীদার বলা যাবে। জার্মান নেতা হিটলার একমাত্র এই বিজ্ঞান আশ্রিত মারণাস্ত্রের ওপর নির্ভর করেই বিশ্বের বুকে নিজ জাতির আধিপত্য স্থাপনে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু তাকে কেন এত ঘৃণিত হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে? তার নিয়ন্ত্রণে সে যুগে হাজার হাজার বিজ্ঞানী অক্লান্ত পরিশ্রম করে হাজার হাজার বিমান, সাবমেরিন, মারণান্ত্র বানিয়েছে, বিশ্বে প্রথম আনবিক বোমা তৈরি হয় তার গবেষণাগারে, বিজ্ঞানী আনবিক বিজ্ঞানের জনক আইনষ্টাইনের এর তত্বাবধানে। বিজ্ঞান চর্চায় এত ব্যাপক ভূমিকা রেখেও হিটলার কেন সভ্য ও প্রগতিবাদী হতে পারল না?

 

        তথাকথিত প্রগতিবাদীদের ধারণা, ইসলাম বিজ্ঞান বিরোধী। মূলত ইসলাম যে বিজ্ঞান বিরোধী নয় তার জলন্ত প্রমাণ আল-কুরআন।আল-কুরআনে রয়েছে প্রকৃতি, মহাবিশ্ব, বস্তু ও পদার্থ সম্পর্কে অগণিত তথ্যের সমাহার। চৌদ্দশ' বছর আগে আল-কুরআনে যে বৈজ্ঞানিক তথ্য বিধৃত হয়েছিল আজকের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে তা' সত্য বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন। ফলে আল-কুরআন বিশ্বের বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর এর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা নতুন নতুন আবিষ্কারে নিয়োজিত করছেন নিজেদের। এখানে কিঞ্ৎ উদাহরণ দেয়া প্রয়োজন মনে করছি-

 

        (১) কুরআন যখন নাজিল হয় তখন পানির গতিপথ (বিজ্ঞানের ভাষায় ওয়াটার সাইকেল) সম্পর্কে মানুষের বিভিন্ন ধরণের ধারণা ছিল। কোন কোন দার্শনিক মনে করতেন, সমুদ্রের পানি বাতাসের তাড়নায় দ্রুতগতিতে মহাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এ কারণেই পানি ভূমিতে আছড়ে পড়ে এবং সেই পানি পরে মাটির ভিতরে প্রবেশ করে। বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো এই মত সমর্থন করার সাথে সাথে আরও মনে করতেন যে, জমিনের পানি ‘টাইটারুশ’ নামক ভূগর্ভন্থ বিরাট এক গহবর দিয়ে সমুদ্রে ফিরে যায়। এ ছাড়া আরও বহু অভিমত এ সময় প্রচলিত ছিল। অবশেষে ১৫৮০ সালে বানার্ড প্যালিসি ওয়াটার সাইকেল সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করেন এবং সতেরশ' শতাব্দীতে এসে ম্যারিয়াট এবং পি প্যারলট এর দ্বারা তা সত্য প্রমাণিত হয়। বানার্ড প্যালিসি দাবী করেন যে, ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎস হল মাটি চোয়ানো বৃষ্টির পানি। অথচ ১৪শ' বছর আগেই আল-কুরআন ঘোষণা করে “আমরা আকাশ হতে পানি বর্ষিয়ে থাকি পরিমাণ মত এবং স্থান দেই তা জমিনের বুকে এবং আমরা তা সরিয়ে নেয়ারও ক্ষমতা রাখি .......। [সুরা ২৩, আয়াত ১৮-১৯]

 

        (২) আধুনিক জীব-বিজ্ঞান এই সেদিন গবেষণা করে ঘোষণা করেছে যে, পৃথিবীর সকল প্রাণের উৎস হল পানি। পানি হচ্ছে জীবন্ত জীবকোষ গঠনের প্রধানতম উপাদান। পানি ছাড়া জীবন আদৌ সম্ভব নয়। তাই তারা যখন অন্য গ্রহের জীবনের অস্থিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন তখন প্রথমে অনুসন্ধান করেন সে গ্রহে পানির অস্তিত্ব আছে কিনা। জীব-বিজ্ঞানের তথ্য প্রমাণের দ্বারা বুঝা যায়, পৃথিবীতে জীবনের প্রাচীনতম নিদর্শনের প্রথম হচ্ছে উদ্ভিদ জগত। আর পৃথিবীর প্রথম উদ্ভিদই হচ্ছে এক ধরণের সামুদ্রিক আগাছা বা শ্যাওলা, যেগুলি আলজে নামে পরিচিত। কিন্তু সেই মধ্য যুগের আল-কুরআন একটা বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কহীন জাতির ওপর নাজিল হয়েই ঘোষণা করে যে, “অবিশ্বাসীরা কি লক্ষ্য করে নাই যে, আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী একত্র মিলিত ছিল। পরে আমি তাদের পৃথক করেছি এবং আমি প্রতিটি জীবন্ত জিনিসকে বের করেছি পানি থেকে। তার পরেও কি তারা বিশ্বাস করিবে না?”[সূরা ২১, আয়াত ৩০]

 

        (৩) আধুনিক বিজ্ঞান যুগে গবেষণার বদৌলতে আমরা জানতে পারছি যে, জীবন্ত যাবতীয় কিছু তো বটেই এমন কোন জড় পদার্থও নেই যা জোড়া ভিত্তিক সৃষ্টি প্রক্রিয়ার আওতাধীন নয়। বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বিদ্যুৎ, টম, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে নেগেটিভ-পজেটিভ বা জোড়া ভিত্তিক সৃষ্টি কুশলতা। কিন্তু ল্যাবরেটরী বা গবেষণাগারের ধারণাহীন সেই যুগেই আল কুরআন ঘোষণা করেছে যে, “সকল গৌরব তারই যিনি সৃষ্টি করেছেন সমস্ত কিছু জোড়ায় জোড়ায় তা মাটি হতে উৎপন্ন হোক, তাদের (মানবজাতির) হোক বা হোক সেই সব যা তারা জানে না।” [সূরা ৩৬, আয়াত ৩৬]

 

        (৪) চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ প্রমাণ করেছে যে, মধু কোন কোন রোগের জন্য মহৌষধ। অথচ সেই যুগে কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, [সূরা ১৬, আয়াত ৬৯] “ তাহাদের (মৌমাছি) দেহ হতে নির্গত হয় নানা বর্ণের পানীয়-যাতে উপশম রয়েছে মানুষদের।”

 

        সুতরাং ইসলাম যদি বিজ্ঞান বিরোধী হতো তবে আল-কুরআনে বিজ্ঞানময় তথ্যের স্থান পেত না। ইসলাম যেমনি আল্লাহর ঘোষিত বিধান, তেমনি পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টিও সেই একমাত্র আল্লাহর। আমরা যাতে তার এই সৃষ্টি সমূহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে পারি সেই জন্যই আল্লাহ আল-কুরআনে সৃষ্টি সমূহ সম্পর্কে তথ্য সন্নিবেশিত করেছেন। তাই বলা যায়, বিজ্ঞানও আল্লাহ প্রদত্ত মেঘ, বৃষ্টি, আলো, বাতাসের ন্যায় একটি নিয়ামত। আমরা যাতে এই জ্ঞান চর্চা করে তাঁর সৃষ্ট নিয়ামত সমূহ সম্পর্কে আরও জানতে পেরে তার প্রতি আরও কৃতজ্ঞ হই সেজন্যই আল্লাহ আমাদের এই জ্ঞান দান করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত এই জ্ঞান চর্চা করেই ইসলামের সূচনা যুগে মুসলমানরা বিশ্বে বিজ্ঞান চর্চার সোনালী ইতিহাস রচনা করেন। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, রসায়ন, পদার্থ, ভূগোল, জ্যোতিষসহ বিজ্ঞানের সকল শাখায় তারা রেখে যান অসামান্য অবদান। তাদের সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়েই আজ পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ধনে ধনী। সেযুগে যেমন সকল বিজ্ঞান চর্চার মূল সূত্র ছিল আল-কুরআন, আজও আল-কুরআনই বিজ্ঞান চর্চার মূল সূত্র হিসেবে বিবেচিত।

 

        তাছাড়া ইসলামের আল্লাহ মানুষের জ্ঞান অন্বেষণে ক্ষুব্ধ হন না বরং যে মানুষ জ্ঞান আহরণ করে মানুষের কল্যাণে লাগায় আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। তিনি এ ভেবে শংকিতও নন যে, মানুষ জ্ঞানী হলে তাকে চ্যালেঞ্জ করবে। ইসলামের আল্লাহ ক্ষুব্ধ হন জ্ঞানের অপব্যবহারে, যখন বিজ্ঞানের শক্তিকে মানুষ ধ্বংসের, অকল্যাণে এবং মানুষকে শোষণ নির্যাতনে ব্যবহার করা হয়। এই প্রবন্ধের শুরুতেই বলেছি যারা ইসলামী জাগরণে ভীত হয়ে বা অন্য কোন কারণেই হোক ইসলামিক মধ্যযুগীয় বলে এক কথায় অচল প্রমান করতে মজা পান তাদের শেখানোর উদ্দেশ্যে আমার এই রচনা নয়। কিন্তু ইসলামকে অচল দাবী করা মুলত ইসলামের প্রাণ আল-কুরআনকে অচল দাবী করার শামিল। আল-কুরআনে বর্ণিত হাজার হাজার বিধি বিধানের মধ্য থেকে দু’ একটি বিধান তাদের মনঃপুত না হলেই আল-কুরআনকে দেয়া অচল ফতোয়া বিনা চ্যালেঞ্জে মেনে নেয়াও একজন ঈমানদার মুসলমান হিসেবে দুর্বলতা মনে করি। তাই ইসলামকে অচল প্রমাণের দাবীদার তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহলকে কতিপয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আহবান জানাচ্ছি।

 

        এই চ্যালেঞ্জসমূহ তাদের কথিত অচল আল-কুরআনের আলোকেই বিধৃত। আমরা চাই তথাকথিত প্রগতিবাদীরা এই চ্যালেঞ্জ সমূহের যে কোন একটি খণ্ডন করুক। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে তাদের জন্য ইসলামের সমালোচনার দ্বারা অবারিত থাকবে। ইসলামের বিরুদ্ধে তারা যতই মারাত্মক অপপ্রচার চালাক না কেন আমরা সে ব্যাপারে কোন প্রতিবাদ, অভিযোগ খণ্ডন থেকে সবিনয়ে বিরত থাকব। যেহেতু ইসলাম চৌদ্দশ' বছর আগের ধর্ম বলে তাকে অচল দাবী করা হয়েছে। এ দাবী আধুনিক বিজ্ঞানের ছাচে ফেলে করা হয়েছে অর্থাৎ আধুনিক বিজ্ঞানের মোকাবিলায় ১৪০০ বছরের পুরানো ইসলাম অচল বলে রায় দেয়া হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। যেহেতু ইসলামের মূল উৎস আল-কুরআন। তাই ইসলামের বিধি বিধান অচল বলা মানেই আল-কুরআনে বর্ণিত বাক্য ও শব্দ সম্তারকেই অচল বলা। সুতরাং এ দাবীর আসল অর্থ দাড়ায় এ বিজ্ঞান যুগে আল-কুরআন আশ্রিত ধর্মমত ও বিধি-বিধান অচল। আল-কুরআনে শুধু ধর্মের বাণীই নয় ১৪শ বছর আগে বহু বৈজ্ঞানিক তথ্যও বিধৃত রয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের মোকাবিলায় নিশ্চয় সেই ১৪০০ বছরের পুরানো বৈজ্ঞানিক তথ্যও ভ্রান্ত ও অচল প্রমাণিত হবে। কেননা, সে যুগে বিজ্ঞান চর্চার কোন অস্তিত্বই ছিল না আর বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চলছে বিজ্ঞানের জয় জয়কার। প্রগতিবাদীরাও যেহেতু এই যুগের বিজ্ঞানের আলোকেই আল-কুরআনকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তাই ধর্মের কথা বাদ দিয়ে আল-কুরআনের বিজ্ঞানের ভাষায়ই তাদে মহা-বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ করলাম-

 

        ১। আল-কুরআনের সূরা ইবরাহিমের ৩৩ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, “তোমাদের জন্য আল্লাহ অধিনস্থ করিয়াছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে-উহারা শ্রান্তিহীনভাবে চলিতেছে, আপনাপন কক্ষপথে এবং তোমাদের জন্য তিনিই অধীনস্থ করিয়াছেন রাত্রি ও দিবসকে”

 

        কুরআনের এই ঘোষণা বাণীর সময় চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবীর ঘূর্ণন সম্পর্কে মানুষের তেমন কোন স্বচ্ছ ধারণা ছিল না। ষোড়শ শতকে গ্যালিলিও, কোপার্নিকাস প্রমুখ বিজ্ঞানী পৃথিবী সূর্য্যের চারিদিকে ঘুরে এ তথ্য আবিষ্কার ও প্রমাণ করে বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দেন। আর চন্দ্র, সূর্য যে নিজ নিজ কক্ষপথে নিজস্ব গতিবেগে আবর্তন করে এ তথ্য জ্যোতি বিজ্ঞানীরা এই সেদিন প্রমাণ করে আমাদের জানালেন। অথচ ১৪০০ বছর আগেই কুরআন চন্দ্র- সূর্য্যের কক্ষপথের ধারণা ব্যক্ত করেছে। চন্ত্র সূর্যও সেই সময়ই নয় তাদের সৃষ্টির শুরু থেকেই নিজস্ব কক্ষপথে একই গতিতে পরিক্রমণে রত আছে এটাও আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে। তাছাড়া চন্দ্র-সূর্য যে তাদের কক্ষপথ ছেড়ে কোন দিন ব্যতিক্রম পথে বা উল্টো পথে চলে তার একঘেয়েমি ঘুচিয়েছে এমন প্রমাণ জ্যোর্তি-বিজ্ঞানে নেই। সৃষ্টির শুরু থেকে চাঁদ পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর চতুর্দিকে পরিক্রমণ করছে।“চৌদ্দশ' বছর আগে কুরআন চাঁদ ও সূর্যের কক্ষপথ এবং নিজস্ব গতি সম্পর্কিত ধারণা পেশ করে। নিশ্চয় আধুনিক বিজ্ঞানের পরশে সে ধারণা অচল হয়ে গেছে। তাই বিজ্ঞান মনস্ক প্রগতিবাদীদের নিকট চ্যালেঞ্জ রইল, আপনাদের মহা শক্তিধর বিজ্ঞানের যাদুর কাঠির সাহায্যে অন্তত একটি দিনের জন্য হলেও চন্দ্রের গতিপথ পাল্টে দিন, তাকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ধাবিত করুন। সূর্যের মধ্যে নতুন শক্তি ভরে দিয়ে তাকে এক মুহূর্তের জন্য হলেও স্থির রেখে কুরআনের তথ্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করুন ।

 

        ২। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন, টর্নেডো, বন্যা, অনাবৃষ্টি, খড়া, ভূমিকম্প প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমস্যা। এর ছোবলে প্রায়ই এদেশ বিপর্যস্থ হয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়, কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আল-কুরআনের বর্ণনা হলো, “মানুষের নাফারমানির কারণে জলে-স্থলে অশান্তির সৃষ্টি হয় এবং তাদের আযাবে গ্রেফতার করা হয় সাময়িকভাবে, যেন তারা নিজেদের সংশোধন করার অবকাশ পায় ।” [সুরা রূম, আয়াত ৪১]

 

        কুরআনের ভাষ্য অনুযাষী আল্লাহ আমাদের নাফরমানির শাস্তি এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সুপথে ফিরে আসার জন্য আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিপতিত করেন। কিন্তু কুরআনই যখন অচল তখন কুরআনের এ ব্যাখ্যা আমরা মেনে নেব কেন। বিজ্ঞানের শক্তিকে প্রয়োগ করে আপনারা এদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত করে দিন।

 

        ৩। আল-কুরআনের সূরা ওয়াকিয়ার ৫৭ ও ৬০ আয়াতে বলা হয়েছে, “আমি (আল্লাহ) সৃষ্টি করেছি তোমাদের, অতঃপর তোমরা কেন তা’ সত্য বলে স্বীকার কর না। আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই ।”

 

        যেহেতু বহু বছর পূর্বে আল্লাহ আল-কুরআনে জীব সৃষ্টি ও মৃত্যুর-ক্ষমতা একমাত্র তার তা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানে পথিবীর চেহারা আজ বদলে গেছে। মহাশক্তিধর বিজ্ঞানের যুগে অচল কুরআনের এ কথা মেনে নেয়া যায় না। তাই মানুষ নয় ক্ষুদ্রাকৃতির একটি পিপিলিকার প্রাণ সৃষ্টি করে কুরআনকে তথ্য প্রমাণে অচল প্রমাণের চ্যালেঞ্জ করছি। আর হ্যাঁ মৃত্যুর ব্যাপারেও চ্যালেঞ্জ রইল। বিজ্ঞানের যুগে আমরা আর মৃত্যুর অত্যাচার সহ্য করতে রাজী নই। আমরা সবাই অবিনশ্বর থাকতে চাই। তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চাই পৃথিবীর সকল রূপ-রস-গন্ধ। সূরা রূমের ৫৪ আয়াতে বলা হয়েছে যে, আমাদের প্রথমে দুর্বল অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছিল, পরে শক্তিশালী করা হয়। আবার পরে দুর্বলতা ও বার্ধক্য দান করেন। না বিজ্ঞানের যুগে এ যে বড্ড অসহ্য ব্যাপার। আমরা বার্ধক্য চাই না, আমরা চির যৌবনা থাকতে চাই। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, শরীরে দুর্বলতা ও বার্ধক্য আসে স্নায়ুবিক দুর্বলতার কারণে। আর স্নায়ুবিক দুর্বলতা আসে শরীরে উপযুক্ত খাদ্য অর্থাৎ ভিটামিনের অভাব থেকে। চিন্তার কি, জীব-জন্তুর শরীরে যে পাঁচটি ভিটামিনের দরকার তাও চিকিৎসা বিজ্ঞানের জানা আছে। কোন্‌ খাদ্যে কি ভিটামিন আছে তাও বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা জেনেছি। সুতরাং শরীরে যখন যে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় তা সরবরাহ করে বা অন্য কোন উপায়ে আমাদের যৌবন অটুট রাখুন, মৃত্যুর নিপীড়ন থেকে আমাদের মুক্তি দিন।

 

        ৪। বাজারে যখন একটা জিনিসের অপেক্ষা গুণে ও মানে উন্নততর একই জিনিস আসে তখন পূর্বেকার জিনিসটি অচল বা বাতিল বলে গণ্য হয়, তা মানুষের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। তেমনি কুরআনকে বিজ্ঞানের এ যুগে অচল দাবী করার মানেই হল বিজ্ঞান গুণে মানে সার্বিক দিক দিয়ে কুরআনের চেয়ে উন্নততর, সমৃদ্ধ। বিগত চৌদ্দশতকে বিশ্ব ‍শিক্ষায়, সাহিত্য চর্চায় প্রভূত উন্নতি সাধন ঘটিয়েছে। বিশ্বে সাহিত্য চর্চায় নোবেল পুরস্কার সহ দেশে বিদেশে বহু পুরস্কার দেয়া হচ্ছে বরেণ্য সাহিত্যিকদের। এ যুগের সাহিত্যের কাছে নিশ্চয় ১৪০০ বছর আগেকার সাহিত্য গুণে মানে তুলনারও যোগ্য হতে পারে না। তাই কুরআনকে অচল দাবী করার পূর্বে কুরআনের যে সাহিত্য মান সে অনুযায়ী আরবী ভাষায় কুরআনের যে কোন ছোট সূরার সমতুল্য একটি সূরা রচনা করে দেয়ার চ্যালেঞ্জ রইল। এই চ্যালেঞ্জ আল-কুরআন [সূরা বাকারা, ২৩ আয়াত] সর্বকালের সমগ্র মানব জাতির নিকট রেখেছে। আমরাও প্রগতিবাদীদের প্রয়োজনে দুনিয়ার সমগ্র সহযোগী বন্ধু বান্ধবের সহায়তা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার আহবান জানাচ্ছি।

 

        ৫। কুরআনের [সুরা আন-নাযিয়াত ৩২ আয়াতে] বলা হয়েছে, “এবং পর্বতমালাসমূহ (আল্লাহ) গেড়ে দিয়েছেন দৃঢ়ভাবে।”

 

        আধুনিক ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী পৃষ্ঠের ভাঁজের ওপর ভিত্তি করে পর্বতসমূহ দন্ডায়মান। এসব খাঁজ-ভাঁজের আয়তন মোটামুটিভাবে দশমাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। এসব খাঁজ ভাঁজের প্রাকৃতিক অবস্থান থেকেই ভূত্বক দৃঢ়তা ও স্থিরতা লাভ করে। কিন্তু আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে অচল (?) কুরআনের মতবাদ মিলে যাওয়াটা সহ্য করব কেন। বিজ্ঞানের মানসপুত্রদের নিকট আমাদের বিনীত আবেদন, কুরআনের মতবাদ খন্ডন করতে পৃথিবীর সকল ইঞ্জিনিয়ার বৈজ্ঞানিক একত্রিত হয়ে একটি স্বতন্ত্র কাঠামোর হিমালয় পর্বত তৈরী করে দিন অথবা ‘পাহাড় ভূ-ত্বকের সাথে দৃঢ়ভাবে গেড়ে দেয়া’ এ কথা ভ্রান্ত প্রমাণ করতে হিমালয় বা অন্য কোন পর্বতের মধ্যে রকেটের গতি প্রয়োগ করে তাকে মহাশূন্যে প্রদক্ষিণ করিয়ে আনুন।

 

       পাদটীকাঃ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অর্থাৎ কুরআনের বর্ণিত যাবতীয় বিধি বিধানকে অচল প্রমাণে ব্যর্থ হলে কুরআনী বিধানের কাছে প্রগতিবাদী দাবীদারদের মাথা নত করার আহবান জানাচ্ছি। কেননা যে আল্লাহ্‌ পৃথিবী, বিশ্ব মন্ডল সৃষ্টি করে প্রতিটিকে নিজস্ব নিয়ম-শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছেন, মানুষ এর মাধ্যমে উপকার পাচ্ছে কিন্তু এর সমার্থক কিছুই সৃষ্টি করতে পারছে না। এমনকি এদের যে নিয়ম শৃঙ্খলা বেধে দেয়া হয়েছে তা” থেকেও মানুষ তাদের উদ্ধার করতে অপারগ। সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টি নিজ নিজ নিয়ম শৃঙ্খলা অনুযায়ী আজও পরিচালিত হচ্ছে, কোনটিরই নিয়ম শৃঙ্খলা অচল হয়ে যায়নি বা কেউ তা অচল করতে পারেনি। অথচ মাত্র ১৪০০ বছর না যেতেই আল্লাহর মানুষকে দেয়া জীবন বিধান অচল হয়ে গেল? অথচ আল্লাহ আজও তার সৃষ্ট সকলকে বিধি-বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারছেন কিন্তু তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবকে একটা সুষ্ঠু জীবন বিধান উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই মানুষকেই কিনা তার জীবন বিধান রচনা করে নিতে হচ্ছে। অথচ এই মানুষই আল্লাহর অন্য কোন সৃষ্টের পরিচালনার বিধি-বিধান রচনা, নতুনত্ব আরোপ বা পরিবর্তন করতে শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ! এ কেমন চিন্তা! আশা করি এ প্রশ্ন নিয়ে প্রগতিবাদীরা সর্বাগ্রে ভেবে চিন্তে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবতীর্ণ হবেন। আর সর্বশেষে প্রশ্ন হল, ইসলামের কতিপয় বিধান এ বিজ্ঞান যুগে মানবতার জন্য ক্ষতিকর মনে করে পুরো ইসলামকেই অচল সাব্যস্ত যারা করেছেন তারা বিজ্ঞানকে এ যুগে অচল বলতে রাজী আছেন তো? কেননা, বিজ্ঞানের একটা শাখা আনবিক বিজ্ঞান যে কোন মুহূর্তে কোটি কোটি মানুষকে ধ্বংস করতে পারে, পৃথিবী থেকে প্রাণের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে আনবিক বোমার কোন জুরি নেই।

 

═──────────────═