JustPaste.it

আমার দেশের চলচিত্র

আলেম সমাজের বিরুদ্ধে বিষোদগারঃ ওদেরকে রুখে দাঁড়াবার এখনই সময়

মোহাম্মদ ফারুখ হোসাইন খান

========================================================================

 

        সারা দেশব্যাপী আলেম সমাজের ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামী ব্যক্তিগণের বিরুদ্ধে কতিপয় এনজিওর তল্পিবাহক একটি চিহ্নিত মহল বিষাক্ত প্রচারণা - প্রোপাগাণ্ডার সয়লাব বইয়ে দিচ্ছে। একদিকে বিদেশী মদদপুষ্ট এসব মতলববাজ এনজিওর সেবা কর্মের মুখোশ উন্মোচন করার পরই তারা আলেমগণের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার জন্য মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলাবাজী শুরু করেছে , অন্যদিকে তাদের পোষ্য মহল ‘ইতরশ্রেণীর' ভাষায় প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে সংবাদ, বিবরণী, সম্পাদকীয়, বিশেষ নিবন্ধ, প্রচ্ছদ রিপোর্ট, বিশেষ ক্রোড়পত্র , বিবৃতি প্রভৃতির মাধ্যমে আলেমগণকে সমাজে হেয় ও একঘরে করার প্রচার অভিযানে নেমেছে । আলেমগণকে ফতোয়াবাজ, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, নারী নির্যাতনকারী, সমাজ ও নারীর উন্নয়নের প্রধান বাধা, সমাজের শোষক শ্রেণীর খেদমতগার প্রতিপন্ন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে ‘মালকোচা' দিয়ে নেমেছে।

 

        বগুড়ার কতিপয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলেমগণের বিরুদ্ধে তাদের এই সর্বাত্মক ক্রুসেড। কাহালু, ধুপচাঁচিয়া, নন্দীগ্রাম প্রভৃতি এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট আলেমের কাছে এলাকায় কর্মরত কয়েকটি এনজিও সংস্থার বিশেষ মতলবটি ধরা পড়ে। তারা এলাকাবাসীকে এনজিওদের এসব অপতৎপরতার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করে দেন। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিকের দায়িত্ব হিসেবে এলাকাবাসীকে এনজিওদের তথাকথিত সেবার নামে শোষণ থেকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মুক্ত করার জন্য সুদবিহীন একটি ঋণদান (করজে হাসানা) সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এটাই হয়েছে তাদের মহা অপরাধ। এনজিওদের ভাওতাবাজী ধরা পরে যাওয়ায় দেশব্যাপী সমালোচনা,  প্রতিবাদের মুখে তারা বিচলিত হয়ে ওঠে জাগো মুজাহিদজনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মুখোমুখি হয়ে তারা তাদের ব্যর্থতার দায়ভার প্রতিবাদী আলেমগণের ওপর চাপানোর অপকৌশল গ্রহণ করে। বগুড়া থেকেই এ ঘটনার সূচনা হয়েছে। স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের বিদেশী মদদদপুষ্ট কোন সংস্থার সেবা গ্রহণ করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। জনস্বার্থ এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর মনে হলে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে কোন তৎপরতার সমালোচনা বা প্রতিবাদ করার নাগরিক অধিকার ও তাদের রয়েছে। বগুড়ার আলেমগণ এই অধিকার বলে তথাকথিত 'সেবা' কর্মের প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেছিলেন। তাদের সমালোচনার মুখে সেবক সংস্থাগুলো ভুলে যায় যে, তারা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। জনগণ না চাইলেও তারা তাদের 'সেবা' করার অপরিহার্য দায়িত্ব পালনে মরিয়া হয়ে উঠে।

 

        'করজে - হাসানা' ভিত্তিক ঋণদান সংস্থার উদ্যোক্তা মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহীমসহ প্রতিবাদী সকল আলেমগনের ‘বিরুদ্ধে’ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। মাওঃ ইব্রাহীম ও তাঁর সহকারীদের বিরুদ্ধে স্কুল ঘরে অগ্নি সংযোগ ও তুত গাছ কাটার মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। বান্দাই খাড়ার অধিবাসী মাওলানা আব্দুস সামাদ মহিলাদের পর্দা রক্ষার জন্য বাড়ির সীমানায় বেড়া দিলে কতিপয় এনজিও কর্মী অবাধ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ দিয়ে তার ওপর চালানো হয় চরম নির্যাতন। চিহ্নিত কয়েকটি দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকা তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো এসব বিভ্রান্ত ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদকে 'অহি' রূপে প্রতিষ্ঠায় জোর প্রচেষ্টা। চালায়। অথচ খোদ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে নন্দীগ্রামের নিমাই দীঘি হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় বক্তারা ২০বলেন, “আলেমদের ফতোয়ার কারণে, এনজিও মহিলা কর্মীদের দোররা মারা হচ্ছে, সমাজচ্যুত করা হচ্ছে, বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগ করা হচ্ছে, তুতগাছ উপড়ানো হচ্ছে বলে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তার সবগুলোই কাল্পনিক এবং ডাহা মিথ্যা“। সভায় দৈনিক করতোয়ার সম্পাদক জনাব মোজাম্মেল হক লালু, দৈনিক চঁদনী বাজার সম্পাদক জনাব যাহেদুর রহমান যদু, দৈনিক বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জনাব আমানুল্লাহ খান, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নজরূল ইসলাম খান, টি, এস, এসের পরিচালিকা অধ্যাপিকা হোসনে আরা, বিএনপি নেতা মোস্তফা আলী মুকুল এবং বগুড়া বারের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউল করিম প্রমুখ স্থানীয় বুদ্ধিজীবী জেলা প্রশাসক, স্থানীয় টি, এন, ও, এবং ব্র্যাক ও গ্রামীন ব্যাঙ্কের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বক্তৃতায় বলেন, “আলেমরা নির্দোষ, ফতোয়া জারীর মিথ্যা অপবাদ তাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে। গাছ উপড়ানো এবং অগ্নি সংযোগের আদেশ তারা দিতে পারেন না।

 

        সব মিথ্যা খবর প্রচার করা হচ্ছো।" সভায় জনগণের বিপুল সমর্থনের মধ্যে দাবী করা হয় যে, “এই অঞ্চলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম ও বুযুর্গ মাওলানা ও মুফতী ইব্রাহীম সাহেব স্থানীয় উদ্যোগে যে সুদমুক্ত ঋণ প্রকল্প চালু করতে চেয়েছিলেন, সেই মহান উদ্যোগকে বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্রকারী একটি মহল একটি পরিত্যাক্ত ঘরের চালায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে সেই দোষ চাপিয়ে দেয় মাওঃ ইব্রাহীম ও তার সহকর্মীদের ওপর।" সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক ও সাংবাদিকদের কাছে জানান যে, মাওলানা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোন অভিযোগ নেই, তার বিরুদ্ধে কোন গ্রেফতারী পরোয়ানাও নেই।" জনসভার এ সংবাদ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ও ঐ চিহ্নিত পত্রিকাগুলোর কাছে কোন গুরুত্ব লাভ করেনি। স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের মতামতের অপেক্ষা তাদের হলুদ সাংবাদিকদের প্রেরিত বার্তাই 'অহির' ন্যায় গুরুত্ব পেয়েছে। পত্র - পত্রিকার রিপোর্টে জানা যায়, হলুদ সাংবাদিকদের রিপোর্ট পত্র - পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর সেসব খবরা খবরকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক এই সভা ডাকলেও সে সভায় চিহ্নিত পত্রিকাগুলোর কোন স্থানীয় প্রতিনিধির উপস্থিতি দেখা যায়নি। জনগণ বার বার সাংবাদিকদের কাছে তাদের অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করেছে।

 

        ‘স্বাতন্ত্র ও নিরপেক্ষতার' তকমাধারী নতুন গজিয়ে ওঠা একটি পত্রিকা ২৮ শে মার্চ প্রথম পাতায় “১০১ দোররা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, জানাজায় হয়রানী, বগুড়ায় ফতোয়াবাজদের দৌরাত্ম, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বাধাদান, নারী নির্যাতন শিরোণামের অন্তরালে আলেমগণের কুৎসা রটনা করে এক বিশাল রিপোর্ট ছাপে। অথচ একই এলাকায় সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে স্থানীয় জনপ্রিয় একটি দৈনিক “ দৈনিক সাতমাথা "৩ রা মার্চ ‘বিবিসির অপপ্রচার, কাহালু, দুপচাচিয়ার জনগণ ক্ষিপ্ত প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। নিজেরা গাছ কেটে নাম দিচ্ছে মাওলানাদের। নির্দোষদের পাকড়াও করতে পুলিশি হয়রানী, এনজিও ও তাদের দোষরদের অপপ্রচারে মানুষ চরম বিক্ষুদ্ধ" শিরোনামে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “এনজিওদের দোসর ও তাদের বেতনভোগীদের স্থানীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাচিয়া এলাকার দেশপ্রেমিক নাগরিকদের নাজেহাল ও হয়রানী করা হচ্ছো। স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল এনজিওদের অসামাজিক কাজের প্রতিবাদ পরবর্তী সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। তারা এনজিওর দোসর হিসেবে আইন রক্ষকদের ওপর প্রভাব বিস্তারের এবং পুরাতন ঝাল মেটানোর চেষ্টা করছে। প্রকৃত ঘটনা হলো, একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গ্রুপ নিজেরাই গাছ কেটে মাওলানাদের নাম করছে আর এনজিও কর্তৃপক্ষও তাদের বিরুদ্ধে দেদারছে মামলা করছে।" জনগণ বিশ্বাস করবে কার কথা, স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন না ‘রহস্যজনক' সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদ?

 

        স্বার্থান্বেষী ও কুচক্রী মহলের আলেমগণকে টার্গেট করে এহেন মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্য যে ইসলাম এবং ইসলামের মূল শিকড় উৎপাটনের অপচেষ্টা তা আজ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। আলেমগণ মুসলিম সমাজের বিবেক। তারা সারাটি জীবন ধর্মীয় জ্ঞানের চর্চা করেন বলেই কোন ব্যাপারে ধর্মের কি নিষেধ আছে, কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায়, কোনটার ব্যাপারে শরিয়তের কি বিধান তা তারাই ভালো বলতে পারেন এবং বলেন, তারা ধর্মীয় দায়িত্ব অনুযায়ী সাধারণ মানুষদের ভালো মন্দের পথ নির্দেশনা দিক তাতে ঐ মহলের ভীষণ আপত্তি। ভাবখানা যেন ধর্মের ব্যাপারে আলেমগন নয় তসলিমা নাসরিন, আহমদ শরীফ প্রমুখ নাস্তিকেরাই শুধু ফতোয়া দেবেন, মুরতাদরা যা খুশি তাই বলবেন, লেখবেন, দেশে অপসংস্কৃতির সয়লাভ বইয়ে দেবেন, কিন্তু তাদের কোন ব্যাপারে কোন কথা বলা যাবে না। চমৎকার আবদার! সারাটি জীবন কুরআন হাদীস চর্চা করেও আলেমগণ ধর্মের ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন না। ধর্ম সম্পর্কে উল্টা পাল্টা প্রলাপ বকার একচ্ছত্র অধিকার যেন নাস্তিকরাই অর্জন করেছে। ‘দারিদ্র বিমোচন', ‘প্রগতি', 'গ্রাম উন্নয়ন' প্রভৃতির তকমাধারী 'ব্রাক' নামক এনজিওর কর্ণধার ফজলে হোসেন আবেদ সম্পাদিত মাসিক ‘গণকেন্দ্র’ পত্রিকা ফতোয়াজারী করেছেঃ 'স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ৮ দিনের মধ্যে স্বামী ইচ্ছা করলে স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করে ঘরে আনতে পারে। হিলার প্রয়োজন নেই। আলেমদের নিকট ফতোয়া তালাশ করতে হবে না।

 

        নিজের চেষ্টা নিজেকেই করতে হবে। দেশ স্বাধীনতা লাভের পর শাসন ক্ষমতায় ধর্ম নিরপেক্ষ সরকারের সুযোগে গজিয়ে উঠা কিছু বুদ্ধিজীবী অহরহ ইসলামকে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, প্রগতি বিরোধী বলে ফতোয়া দিয়ে আসছে। ডঃ আহমদ শরীফ নামক কুখ্যাত ব্যক্তিটি ইসলামকে ইতর ও মূখ ব্যক্তিদের ধর্ম বলে ফতোয়া দিয়েছে। তসলিমা নাসরিণ নামক গণধিকৃত মহিলা কথায় কথায় ইসলাম, রাসূল ও মুসলমানদের আক্রমণ করে বসে। সম্প্রতি একটি বিদেশী পত্রিকায় সে ফতোয়া ফেদেছে যে, “আল্লাহ নাকী মিথ্যাবাদী। আরেক মুরতাদ শামছুর রহমান (ওপার বাংলায় শ্যামছু দা নামে পরিচিত) কিছুদিন পূর্বে আজানকে বেশ্যার খদ্দের ডাকার সাথে তুলনা করে এবং বিবাহ পূর্ব পারকিয়া প্রেমকে নির্দোষ বলে ফতোয়া দেয়। ইসলামের ওপর সাড়াশী আঘাত হানা তাদের কাছে প্রগতির পরিচয়, গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ইসলামপ্রেমী আলমগণ এর প্রতিবাদ করলেই তারা মৌলবাদী, ফতোয়াবাজ বলে ফুসে ওঠেন। তাদের ধর্ম পালন, মতামত ব্যক্ত করার গণতান্ত্রিক অধিকারটুকুও নিষিদ্ধ করার শোরগোল ওঠে। আলেমগণ কি এদেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক নাকি?

 

        ভিলেজ পলিটিক্সের কারণে মৌলভী বাজারের নুরজাহান বিষপান করে আত্মহত্যা করে। ব্যাভিচারের অপরাধে তাকে ১০১ টি পাথর ছুড়ে শাস্তি দেয়ার ফতোয়া প্রদানকারী মান্নান নামক ব্যক্তিটি কোন মাওলানা নয়। সে যে কোন মাদ্রাসা শিক্ষিত নয়, মক্তবে সূরা ক্বেরাত শেখার সুবাদে গ্রামের মসজিদের ইমামতি করেছে, একথা সে নিজেও টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছে। সে ব্যভিচারের শাস্তি পাথর ছুড়ে শাস্তি দেয়া একথা লোকমুখে শুনেছে, কিন্তু ফতোয়া প্রদান করার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা যে শুধু অন্যায়ের শান্তি সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করতে পারেন কার্যকরী করতে পারেন না, এর জন্য কাজীর প্রয়োজন হয় এ সাধারণ জ্ঞানটুকু তার নেই। এহেন ব্যক্তিকে মাওলানা বানিয়ে দেশের তাবৎ আলেমগণকে হিংস্র ভাষায় আক্রমণ করেছে ওই কু - বুদ্ধিজীবীরা। সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, কলাম, প্রচ্ছদ রিপোর্ট ফেদে নূরজাহানকে কেন্দ্র করে আলেমগণের ফতোয়া দেয়া বন্ধ করার জন্য আর্তনাদ করেছে। নারী সমাজের অধিকার আদায়ে আপোষহীন (?) আমতলা, জামতলার নেত্রীরা পর্যন্ত পালসহ গাড়ী ভর্তি হয়ে নুর জাহানের দরদে ছুটে গেছে সুদূর মৌলভী বাজারে। রাজধানী শহরে মিছিল, মিটিং করে সৃষ্টি করেছে ভূমিকম্প।

 

        কিন্তু ওদের প্রভু এনজিও গোষ্ঠীর কর্মকর্তা কর্তৃক সিলেটের আয়েশা চরমভাবে নির্যাতিত হয়ে মৃতপ্রায় হয়েও, দিনাজপুরের মাহফুজা খৃস্টধর্ম গ্রহণে অস্বীকার করায় কারিতাশ থেকে চাকুরীচ্যুত হয়েও ওদের পত্রিকায় তা ‘খবর' হওয়ারও গুরুত্ব পেল না! এসব ঘটনার প্রতিবাদে নেত্রীদের বজ্রকণ্ঠগুলি হুঙ্কার ছাড়েনি। প্রগতি ও মানবতার ধ্বজাধারী। বিবৃতিবাজরা মুখে কুলুপ এটে চুপ মেরে গেছে। আয়েশা, মাহফুজার নির্যাতনের ঘটনায় দাড়ি টুপি ওয়ালাদের কোন গন্ধ নেই বলেই বোধহয় তা মানবতা লংঘনের পর্যায়ে পারেনি। বিদেশী নাগরিক এনজিও কর্মকর্তা ফাদার হোমারিক ময়মনসিংহের গারোদের নিয়ে স্বাধীকার আন্দোলন গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র করছে এ মর্মে পত্র - পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। স্বভাবতই জাতি এ সংবাদে উদ্বিগ্ন হলেও দেশ দরদীদের (!) পত্র - পত্রিকা এ নিয়ে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ফাদার ‘দায়িত্ব' বোধ করেনি। এনজিওদের সকল ‘সেবা' ও ঋণ তৎপরতা নারী কেন্দ্রীক কেন, পুরুষদের ঋণের টাকা ব্যবহারে অযোগ্য বিবেচনা করা হচ্ছো কেন, নারীদের উন্নতিই কি দেশের উন্নতির প্রধান শর্ত, দেশের পুরুষদের বাদ দিয়ে শুধু নারীদের নিরক্ষরতা দূরীকরণে তাদের এত দরদ কেন এসব প্রশ্ন নিয়ে 'মাথাভারী’ কলমবাজরা গবেষণামূলক নিবন্ধ লিখতে আগ্রহ বোধ করেন না।

 

        মূলত: ওরা যে প্রগতি, নারীর অধিকার আদায়, মানবাধিকার প্রভৃতির নামে গলাবাজী করে মতলববাজ এনজিওদের নির্লজ্জ দালালীতে নেমেছে এটা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। নুরজাহান ও বগুড়ার ঘটনা নিয়ে এত হৈ চৈ মূলত নুরজাহান ও তথাকথিত নির্যাতিত নারীদের প্রতি দরদের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং ইসলামের ওপর আঘাত হানার জন্যই নুরজাহানরা ব্যবহৃত হচ্ছো। পক্ষান্তরে আয়েশা, মাহফুজাদের নির্যাতনের ঘটনায় ইসলামের ওপর আঘাত হানার কোন সুযোগ নেই বরং তা প্রভুদের বিরুদ্ধাচারণ হবে বলেই গোল পাকিয়েরা খামোশ মেরে গেছে।

 

        আলেমগণ এবং কুরআন হাদীসের আলোকে তাদের দেয়া 'ফতোয়া' মুসলিম জীবন ও সমাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, অবিচ্ছোদ্য অংশ। যুগে যুগে আলেমগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভূমিকা পালন করে গেছেন, সমাজকে সত্যের পথ প্রদর্শন করে মিথ্যা ও অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মুসলিম সমাজ যখনই রজানৈতিক, সংস্কৃতিক বা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, আলিমগণের সময়োচিত ফতোয়া তাদের যুগিয়েছে ধৈৰ্য্য, প্রেরণা ও সংগ্রাম করার শক্তি। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ ধরে যে বাংলাদেশের অভূদ্যয় ঘটেছে সেই স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক ছিলেন আলেম কূল শিরোমনী মাওলানা শাহ আব্দুল আজিজ (রাহঃ)। ১৮০৩ সালে তিনি ইংরেজ কবলিত উপমহাদেশকে ‘দারুল হরব' অর্থাৎ শত্রুকবলিত দেশ এবং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আগ্রাসী ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরজ বলে ঐতিহাসিক ফতওয়া দেয়ার পরই স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। সীতানা, বালাকোট, নারকেল বাড়িয়া ও সীপাহী বিদ্রোহের ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান, অতঃপর ১৯৭১ এ বাংলাদেশের জন্ম হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আলেমগণের শহীনী রক্তের সাগর পারি দিয়ে যে বাংলাদেশের জন্য সেই বাংলাদেশের বুকে গজিয়ে ওঠা কিছু পরগাছা আলেম সমাজকে হেয় করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে।

 

        ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বার বার ঘটে এই ঐতিহাসিক সত্যের পুনরাবৃত্তি ঘটছে এ মহলের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণায়। ইংরেজ আমলেও উপমহাদেশের আলেম সমাজ ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তুললে ইংরেজরা তাদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তাদেরকে 'ওহাবী' হিসেবে চিহ্নিত করে প্রচারণা চালানোর জন্য এমনি একটি দালাল শ্রেণী নিযুক্ত করেছিল, ইসলামের জিহাদ'কে হারাম করার জন্য জন দিয়েছিল, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নব্য ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর শোষণের প্রতিবাদ করায় 'ফতোয়াবাজ' আখ্যা দিয়ে আলেমগণকে জন - বিচ্ছিন্ন করার সে ‘ঐতিহাসিক' দায়িত্বই যে ঐ মহল পালন করছে তা আর জাতির বুঝতে বাশ নেই।

 

        যুগে যুগে বিধর্মী বিদেশী শত্রুর হাতে ইসলাম যতটুকু না ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরের শত্রু এই মোনাফেক, ছদ্মবেশী মুরতাদদের হাতে। এদেরই চক্রান্তে পলাশী, বালাকোট, কারবালার ন্যায় অসংখ্য রক্ত রাঙ্গা ইতিহাসের জন্ম হয়েছে। জাতির ভাগ্যচক্রকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে এই গোষ্ঠী। ইংরেজ আমলে ও এর আজাদীকামী আলেকগণকে বিদ্রোহী ফতোয়া নিয়েছিল। সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর প্রেতাত্মাগনের “বরকন্দাজ" সেজে নব্য মীরজাফর গোষ্ঠী আবারও আলেমগণকে খতম - নির্মূল করার পায়তারায় মেতেছে। তাই আর কালক্ষেপণ না করে আমাদের পূর্বসূরী মজনু শাহ, তীতুমীর, শরীয়তুল্লাহ ও সৈয়দ আহম্মদ শহীদ প্রমুখ মর্দে মুজাহিদের ন্যায় জাতির চিহ্নিত শক্রদের প্রতিরোধে অবর্তীণ হতে হবে। একটি বারের জন্য হলেও জাতির প্রয়োজনে বাংলার মুজাহিদদের গর্জে উঠতেই হবে।

 

═──────────────═