JustPaste.it

সম্পাদকীয়


আহত হৃদয় মুমিনের ফরিয়াদ
হয় সুমতি নয় ধ্বংস

 

শেষ পর্যন্ত ওরা পবিত্র কুরআন মুখস্ত করার রীতিটির পেছনেও লেগে গেছে। বাংলাদেশ থেকে ইসলামী সমাজ, শাসন, বিচার ও শিক্ষা বৃটিশ বাক্ষণ্যবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ  ও চরিত্রহীন রাজনীতির ফলে বিতাড়িত হয়ে গেলেও সাধারণ জনগণ, নিরীহ মুসলিম নাগরিকদের ঐকান্তিক চেষ্টায় যে দ্বীন শিক্ষার নিভু নিভু প্রদীপগুলো জ্বলে রয়েছে, এ গুলোর পেছনেও লেগে পড়েছে মরদূদ শয়তানের বংশধরেরা। গোটা বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী ও ত্যাগী মানুষেরাই এত ভয়াবহ বৈরিতার মাঝে ইসলামী আদর্শ ও শিক্ষার দ্বীপশিখাগুলো প্রজ্বলিত রাখতে সচেতন রয়েছে অভাগা এ দেশে। এখনো আরব আজমের সকল দেশের তুলনায় বেশি হাফেয, আলেম ও দ্বীনদার নারী-পুরুষ বাংলার বুকে বিদ্যমান।
কিন্তু মালাউন শয়তানের বুকে যে এ বিষয়টি নিরন্তর শেল হয়ে বিধে, অতএব সে সয়ার হয় সরকারী শক্তিধর, পুলিশী ক্ষমতাধর, আর প্রচারণায় বলবান কতিপয় মানুষের কাঁধে। দ্বীন-ঈমান, আইন-কানুন ও সভ্যতা-মনুষত্ব বিরোধী কাজ করায় তাদের দিয়ে। অবিরাম মিথ্যাচার আর অব্যাহত বানোয়াট গাল-গপ্প ফাঁদা শয়তানেরই গুণ। স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে আল্লাহ্র কুরআন বক্ষে ধারণকারী ব্যক্তিদের উপর ক্ষমতার খড়গ চালান কি শয়তানের প্ররোচণা ছাড়া সম্ভব?
যে হাত এ বিষয়ে এক হরফও মিথ্যা লিখবে, যে মেধা ভাববে এ নিয়ে বিদ্বেষী ভাবনা, যে ক্ষমতাবান স্বার্থ, স্বজনপ্রীতি আর পাপ চিন্তায় এ ব্যাপারে অনাচারী হয়ে উঠবে এর প্রতিটি হাত, মেধা ও ক্ষমতায় সংযুক্ত হবে হৃদয়বিদারক অনল প্রবাহ। কলজে ভাজা পার্থিব অশান্তির দাহ তাদের তাড়া করবে সমূহ অশান্তির আকর কবর পর্যন্ত। চতুর্মুখী বিপদাপদে এদের জান হয়ে উঠবে ওষ্ঠাগত। অচিরেই ওরা টের পাবে পাক কুরআনের হিফজখানা, হাফেজ আর তাদের শুভানুধ্যায়ীদের হয়রানির ফল। আল্লাহ্র পবিত্র আমানতের চর্চাকেন্দ্র ত্রাস, হয়রানি, হাহাকার, নৈরাশ্য আর লাঞ্চনার বাতাবরণ সৃষ্টিকারী মাথা, বুক, হাত ও দাপট ছাতু ছাতু হয়ে যাবে। আল্লাহ্ করবেন, তার সীমা-সংখ্যাহীন কুদরতী শক্তি দিয়ে করবেন।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের নিকটে রেলের জায়গা লিজ নিয়ে হাফেয সালেহ আহমদ শত শত ছেলেকে ১৫/২০ বছর যাবত পবিত্র কুরআন হিফয করানোর মহান সাধনায় আত্মনিয়োজিত ছিলেন। দেশের অনেক অভিভাবক, পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের সেখানে ভর্তি করাতেন। অনেকে হাফেয হয়ে ফিরে যেতো। অনেকে শেষ হয়তো করতে পারতো না। কিন্তু কুরআনের সাথে পরিচিত হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যেতো। হাফেয সালেহ আহমদ শাসনে-সোহাগে ছেলেদের পড়াতো। নরম-গরম উভয় আমেজে তিনি ছিলেন একটু বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। শতকরা দু’এক জন ছাত্রকে শৃংখলায় আনতে সাজাও দিতেন। অনেক পিতা-মাতা ছেলেদের দস্যিপনা আর বেপরোয়া চালচলনে অতিষ্ট হয়ে হাফেয সাহেবকে অনুরোধ করতেন, ওদের উপর কঠোর নজর রাখতে। এক কথায় দেশের হাজারো হেফযখানা যদি সাধারণ বিদ্যালয় হয়, তাহলে হাফেয সালেহ আহমদের হেফযখানাটি ছিল কিশোর সংশোধন কেন্দ্র কাম বিশেষ বিদ্যালয়। এ ঘটনার পরই চট্টগ্রামে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এক হাফেয ছাত্রের পিতা-যিনি চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী-বাকরুদ্ধ কন্ঠে  সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমার তিন ছেলের মধ্যে দু’জন কুরআনের হাফেয হতে পেরেছে এ হুযুরের শাসন ও সোহাগে। তৃতীয় ছেলেটি এখনো পড়ছে। এ হুযুরের উপর এমন অপবাদ আর হয়রানি যারা করছে, আল্লাহ্ তায়ালা সহসাই তাদের বিচার করবেন।
গতমাসে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আলোচিত অপরাধ হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, এই হেফজখানা প্রতিষ্ঠানকে; এর চারপাশের দেয়াল আর ফটককে, হাফেয সালেহ আহমদের সাধনাকে, কতিপয় দুষ্ট ছাত্রের ওপর তার আপাত বিবেচনায় ‘কঠোরতাকে’। শুধু তাই নয় হাফেয সাহেবকে তা মাদ্রাসায় অভ্যাগত দুই হাফেযসহ গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্ররণ করার পর পুলিশ রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। হাফেয সাহেবের পুত্রসহ কয়েকজন ছাত্রকে থানায় নিয়ে বিশেষ কাষ্টোডিতে রাখা হয়েছে, কারণ এরা নাকি হাফেয সাহেবের কঠোরতার নির্মম শিকার।
এ অভিযানটি চালানো হয়েছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে। হেফযখানার ছাত্রদের সাজা দিয়ে শিক্ষক এমনই মানবাধিকার লংঘন করেছেন যে, মাদ্রাসাটিই উপড়ে ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা চলছে। দৈনিক জনকন্ঠ যেন তার জীবনের সর্ববৃহৎ রিপোর্টিং আবিষ্কার বলে ধরে নিয়েছে এই মাদ্রাসাকে। প্রথম পাতায় ব্যানার হেডীং করে পর পর ফলোয়াপ ছেপে জনকণ্ঠ যেন মানবেতিহাসের জঘন্যতম এক মহা নির্যাতন কেন্দ্র সম্পর্কে দেশ ও জাতিকে অবহিত করে ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকার প্রয়াস পেয়েছে। ইনকিলাব এর ভাষ্যঃ এখানে একটি এনজিও তাদের স্কুল খুলবে বলেই হেফযখানা উৎখাতের পায়তারা চলছে। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যঃ একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর আত্মীয়রা রেলের এ জায়গাটি পেতে আগ্রহী বলেই এখান থেকে হেফযখানা তুলে দেয়ার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হচ্ছে। 
হাফেজ ছালেহ আহমদের বিরুদ্ধে কোন দ্বীনদার বিশাসী নির্ভরযোগ্য নাগরিকের কোন অভিযোগ নেই। নেই কোন ছাত্রের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের কোন আর্জি। যত রাগ সব এক আধটি পত্রিকার। আর উঁচু পর্যায়ের এক আধজন ক্ষমতাধরের। এ সব তথ্যের বাস্তবতা কেবল আল্লাহ্ পাকই ভালো জানেন। কেননা, বিপদের সময় শাধারণত মানুষ সত্য গোপন করে থাকে। এ সময় অসহায় নির্দোষ ও নিরীহ মানুষের চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে। আপাত মনে হয়, উদ্ধারে আর কোন পথই নেই। কিন্তু সময়ে দেখা যায় সব উল্টে গেছে। অবস্থা বদলে গেছে। আবার আলো এসেছে। আর তাই মুমিনেরা কখনই নিরাশ হয়না।
আমরা দোয়া করি, হাফেয সাহেবকে আল্লাহ্ মুক্তি দিন। হেফযখানাটি রক্ষা পাক। হাফেয ছাত্ররা মুক্ত হোক। দুষ্ট ছেলেদের সুমতি হোক। তাদের নিয়ে আর এমন ঝামেলা, কোন বাড়াবাড়ি হাফেয সাহেবের হয়ে থাকলে এরও সংশোধন হোক। আর এ হেফযতখানাটি আল্লাহ্ পাক কবুল করুন। চিরদিন এর মাধ্যমে হেফযে কোরআনের ধারা অব্যাহত থাকুক। অপরদিকে চক্রান্তকারী বিদ্বেষ পোষোণকারী, লাঞ্চিতকারী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা এবং অপরাপর সব কুচক্রীকে আল্লাহ্ হেদায়েত করুন। হেদায়েত নসীবে না থাকলে এদের ধ্বংস করুন। এদের নাম নিশানাও যেন এ ধুলির ধরা থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আল্লাহুম্মা আমীন।