রুশ কয়েদীদের জবানবন্দী
আফগানিস্তানে আমরা কি দেখেছি?
সুলতান সিদ্দিকী
=======================================================================
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ফৌজ ছেড়ে পলায়ন
এই হামলার নেতৃত্ব ব্রিগ্রেডিয়ার হলিউড নামক এক অফিসারের হাতে সোপর্দ করা হয়। ৩৮টি ট্যাংক ও বহু সাজোয়া গাড়িসহ এই বাহিনীকে শাকরদরার মুজাহিদদের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরা শাকরদরা পৌঁছার সাথে সাথেই মুজাহিদরা তাঁদের ওপর তীব্র হামলা চালায় এবং তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। ফয়জুল্লাহ গায়রত তখনই পলায়ন করে সুযোগ কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। রুশ সেনারা যখন তাদের আহত সাথীদের দেখাশুনার জন্য এক জায়গায় সমবেত হয় তখন অন্ত্রসহ তারা নিকটের একটা ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর তারা সামনের দিকে অগ্রসর হতে আরম্ভ করে। তারাও মুজাহিদ দু'জনের সন্ধানে নেমে পড়ে। তারা দুজন কিছুক্ষণ পাহাড়ে ঘোরা ফেরা করায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের পক্ষে অস্ত্র বহন করে চলা কষ্টকর হয়ে দাড়ায়। ফলে একটি নিরাপদ স্থান দেখে বন্দুক গুলো সেখানে মাটিতে পুতে উপরে ঘাস দিয়ে আড়াল করে রাখে।
পাহাড়ের ঢালু বেয়ে তারা একটা বাগানের নিকট গিয়ে পৌঁছে। কিন্তু সেখানে তারা কোন লোকের সন্ধান পেল না যাকে তারা মুজাহিদ পরিচয় দিয়ে সহযোগিতার আশা করতে পারে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর একজন আফগানীর সাথে তাদের সাক্ষাত হয়। দেখে মনে হলো যেন লোকটি এই বিরাট বাগানের তত্বাবধায়ক হবে। তাঁরা লোকটির কাছে যায়। রুশ সৈন্যদের দেখে সে ঘাবড়ে যায়। এখনো সে নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারেনি। এরই মধ্যে তারা তার সামনে কালেমা তাইয়েবা পাঠ করতে থাকে। ভয়ে লোকটি ঝাপ দিয়ে নদীতে পড়ে ডুবে যায়। নদীর মধ্য থেকে লোকটি মাথা তুলে। তীর থেকে সেনাদ্বয় তুর্ক মিশ্রিত ফার্সী ভাষায় তাকে লক্ষ্য করে বল্লো, “আমরা মুসলমান। তুমি কি বুঝতে পারছ না যে, আমরা মুসলমান? এ কথা শুনে আফগানী লোকটি ভয়ে ভয়ে উপরে উঠে এসে ফারসী ভাষায় বল্লো, “হ্যা এবার আমি বুঝতে পেরেছি।' এবার ফয়েজ ও গায়রত বল্লো, তুমি কি আমাদের কোনো মুজাহিদ কমাণ্ডারের কাছে নিয়ে যেতে পার? আফগানী লোকটি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। সে তাদেরকে ভালোভাবে নীরিক্ষণ করতে লাগল। ব্যাপার বুঝতে পেরে তারা বল্লো, তুমি চিন্তা করো না, আমরা আমাদের অস্ত্র-শস্ত্র বনে ফেলে রেখে এসেছি।
অতঃপর তারা দুই বন্ধু আফগানী লোকটির সঙ্গে আঁকা বাঁকা পথ পেরিয়ে মুজাহিদ কমাণ্ডার নাসের খানের কাছে গিয়ে পৌঁছে। কমান্ডার তাদেরকে পুরোপুরি তদন্ত করে দেখেন এবং রুশ সৈন্যদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জিজ্ঞাসা করেন। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কোথাও ঠেকে গেলে কলেমা তায়েবা পাঠ করে তারা নিজেদের নির্ভেজাল সত্যতার প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করে। কমান্ডার নাসেরকে তারা ভাঙ্গা তাঙ্গা আরবীতে কুরআনের কয়েকটি আয়াতও তিলাওয়াত করে শুনায় যা তারা বাল্যকালে তাদের মাতা-পিতার নিকট শিখেছিল।
তাদের ব্যাপারে কমাণ্ডার নাসের আশ্বস্ত হওয়ার পর তারা মুজাহিদদেরকে রুশ সৈন্যদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা সম্পর্কে অবহিত করে এবং রাশিয়ান সেনাদের বিভিন্ন সামরিক মারকাজের সন্ধান দেয়। ফলে দুই বন্ধুকে মুজাহিদরা বড় শ্রদ্ধার সাথে বরণ করে নেয়। এর পর তারা সেখানে থেকে যায়। অন্যদের কাছে মুজাহিদরা তাঁদের পরিচয় এভাবে দিত যে, “এরা হলো ফয়েজ ও গায়রত। এরা মধ্য এশিয়ার মুসলমানদের সচেতনতা ও আত্মমর্ধাদার গ্রতীক।”
ফায়েজ ও গায়রত মুজাহিদদের জানিয়ে দেয়, রুশ সামরিক বাহিনীতে অংশ গ্রহণকারী মুসলিম রাষ্ট্রের অধিকাংশ সৈনিক পালিয়ে এসে মুজাহিদদের সঙ্গে যোগ দিতে চায়। কিন্তু একেত পালবার চেষ্টা করা বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ আর পলায়ণের পর কেউ ধরা পড়লে তাঁর শাস্তি নিশ্চিত মৃত্যু দণ্ড। দ্বিতীয়তঃ রশিয়ানরা অনবরত তাদের ব্রেণ ওয়াস করতে থাকে। তাদের বলা হয় যে, মুজাহিদরা ঘাতক ও হিংস্র। তারা শক্রদের ধরে ভুনা করে খেয়ে ফেলে।
ফয়েয বলে যে, কোন প্রকারে সে সব সৈন্যদের অন্তর হতে মুজাহিদদের সম্পর্কে ধারণা দূর করে দিতে পারলে তাদের অধিকাংশই এসে মুজাহিদদের সঙ্গে যোগদান করবে। অন্ততঃপক্ষে তারা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অস্বীকৃতি জানাবে এবং মনে প্রাণে মুজাহিদদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হবে।
ফয়েজ ও গায়রতকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ মুজাহিদরা যদি যুদ্ধে বিজয় লাভ করে তার পর কি আপনারা আফগানিস্তানে থেকে যাবেন? উত্তরে তারা বল্লোঃ “আমরা ফিরে যাব এবং এই স্বাধীনতার মশাল আমাদের দেশেও প্রজ্জ্বলিতকরব।[চলবে]
═──────────────═