JustPaste.it

সম্পাদকীয়

 

দায়িত্বশীলদের আচরণ আরো স্বচ্ছ না হলে জনমনে স্বস্তি আসবে না

 

            আধুনিক একটি রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি বা কর্মকান্ডের প্রাণকেন্দ্র নিঃসন্দেহে প্রেসিডেন্ট হাউস, পার্লামেন্ট, মন্ত্রণালয় প্রভৃতি স্থান। সংবাদ পত্রকেও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফোর্থ পিলার অব স্টেট তথা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে। আমরা এসবের চেয়েও বেশি ভাবগম্ভীর ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করি উচ্চতর শিক্ষাঙ্গন বিশ্ববিদ্যালয়কে। দাম দেই জাতির বিবেকখ্যাত উন্নত চিন্তাশীল ইন্টেলেকচুয়াল লেখক, কলামিষ্ট ও সাংবাদিক শ্রেণীকে। অন্তরখোলা সমর্থন ও নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়ে মন্ডিত করি দেশরক্ষী সামরিক বাহিনীকে। এ সবের সাথে আমাদের কোন ভেদজ্ঞান নেই। নেই কোন সংকীর্ণতা। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিবাসী বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনতা হিসাবে এই আমাদের একান্ত অনুভব।

             কিন্তু অতি সম্প্রতি আমরা যেসব আলামত দেখছি এতে কোন বিবেকবান মানুষই শংকিত না হয়ে পারেনা। যেমন, মহামান্য ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রপতি, যিনি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী নন। দলীয়ভাবে যাকে মনোনীত বা নির্বাচিত করা হয়নি। যিনি একজন সাবেক বিচারপতি ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান রূপে গণঐকমত্যের প্রতীক হিসাবে এ পদে বরিত হয়েছেন। তিনি একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি জাহানারা ইমামের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন। বিগত সরকারের একটি আইনগত কার্যক্রমকে তিনি 'হাস্যকর' বলে আখ্যা দিয়েছেন। অথচ তিনি এ ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক ও সংকীর্ণ বিরোধ এড়িয়ে চলবেন বলেই দেশবাসী আশা করতো।

            দেশের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের অন্যতম প্রধান উৎসমুখ (কর্মকর্তাদের গাফিলতি বা কোন অজ্ঞাত মহলের অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতার ফলে) অগ্নিকাজে ধ্বংস হয়ে গেলে, হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট, মারাত্মক পরিবেশ দূষণ আর অর্থকরী সোনালী সম্ভাবনা চিরতরে সমাধিস্থ হয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী সহ দায়িত্বশীল অন্যান্য অনেকেই নিঃসংকোচে মন্তব্য করেছেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। জাতি হতাশ হয়েছে। উদ্বিগ্ন হয়ে চেয়ে আছে আগুন নেভানোর টিমে তেতলা তৎপরতা আর গদাই লশকরী চালের পানে। ভাবছে অনুসন্ধানী বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের গা ছাড়া ভাব নিয়ে। দেশের সাকুল্য খনিজ সম্পদের ভবিষ্যত নিয়েই মানুষ আজ সীমাহীন হতাশার শিকার। একাধিকবার ভিনদেশী হেলিকপ্টারের বাংলাদেশী আকাশ সীমা লংঘন ও অবতরণের ঘটনায় পররাষ্ট্র দফতরের অস্বাভাবিক নীরবতা ও অন্ধত্বও কি কম দুশ্চিন্তার কারণ?

            পার্লমেন্টে সংসদ নেতা ও সর্বদলীয় সদস্যের উপস্থিতিতে কোন কোন সদস্য কর্তৃক দেশ, জাতি, স্বাধীনতা, সংবিধান ও জাতীয় ভাবধারা পরিপন্থী আষ্ফালনপূর্ণ বক্তব্য শুনেও মানুষ যারপরনাই উৎকণ্ঠিত। বাজেট বক্তৃতায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে জনৈক সদস্যের ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হওয়ার ঘটনাকে একজন লুটেরা শোষকের পতন এবং বাঙালীর মুক্তি বলে আখ্যা দেন। বলেন, পৃথিবীতে মাদ্রাসা শিক্ষা বলতে কোন কিছু নেই। মাদ্রাসা শিক্ষা ঔপনিবেশিক যুগের একটি অপউদ্যোগ। স্পীকার এ সবের প্রতিবাদ করেন না। এ সব বক্তৃতা সংসদের কার্যাবলী থেকে এক্সপাঞ্জ করা হয়না। শত শত সদসোর কেউই এর প্রতিবাদে উদ্যত হননা। এ কেমন গণতন্ত্র, কিসের সুস্থ পরিবেশ!

             নবার সিরাজুদ্দৌলাকে বিদেশী তরুণ, অবাঙালী ও শোষক বলে ঢাকার বড় বড় পত্রিকায় নামীদামী অনেক বিশ্ববিদ্যায়ে শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, কলামকার ও সম্পাদক কলম ধরেছেন এবার। ২৪০ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে ১৭৫৭ সালে মযলুম নবাবকে এবারে ২৩ শে জুন যে ভাষায়, যে সমারোহে আক্রমণ করা হচ্ছে, এটাও অভিনব এবং শংকাজনক ঘটনা। বাংলায় মুসলিম শাসনের অবসানে যাদের আনন্দিত হওয়ার কথা আর যারা আনন্দিত হয়েছিল তাদের মুখপাত্র হয়ে ঢাকায় বসে যারা কলম ও মেধাচর্চা শুরু করেছেন তাদের ইচ্ছা, পরিকল্পনা ও মনোবৃত্তি সম্পর্কেও গণমানুষ সীমাহীন উৎকণ্ঠিত ও সন্দিহান। শিক্ষা-দীক্ষা ও মননচর্চার মানুষেরাও ইদানীং সেনাবাহিনী বিলোপ তথা সামরিক শক্তি হ্রাসের সুপারিশ করছেন।

             এক কথায় রাষ্ট্র, সরকার, শৃংখলা ও মেধা মনীষার প্রতিটি পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাথে যে ধরনের দায়িত্বহীনতা এবং পক্ষপাত দৃষ্টি হচ্ছে, তা দেখে আমরা অর্থাৎ আমজনতা স্বস্তিবোধ করতে পারছি না। জানা নেই, বড় বড় নেতা-নেত্রী ও জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের মুখের সেই অপয়া অবাঞ্চিত উক্তি ‘দেশ বিক্রী’ কি সত্যে পরিণত হয়ে চলেছে? সত্যিই কি কেউ আমাদের স্বাধীন অস্তিত্বকে কৌশলে নিস্তেজ, নিষ্প্রভ ও প্রাণহীন করে দিচ্ছে, যা লঘ্নমাত্রার বিলম্বিত বিষক্রিয়ার ন্যায় আমাদের দেশ ও জাতিকে ধীরলয়ে জড়, অথর্ব ও স্কুনুতে পরিণত করছে? এ জিজ্ঞাসার জবাব কি জাতি সময় থাকতে পাবে?