JustPaste.it

আমরা যাদের উত্তরসূরী:

 

হযরত বায়জীদ বোস্তামীর ইলমী কারামত

জসীম উদ্দীন খান পাঠান

==================================================

 

        হযরত বায়জীদ বোস্তামী (রহ) ছিলেন একজন উঁচুস্তরের আধ্যাত্মিক সাধক। শ্রম, ত্যাগ, এবাদত ও তাকওয়া দ্বারা তিনি কারামতের অধিকারী হয়েছিলেন। ইলম ও মারেফতের এই উজ্জল জোতিষ্কের জন্ম ইরানের বোস্তাম শহরে। মাতৃভক্তি এবং মাতৃ সেবার অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি ইতিহাসের অমর হয়ে আছেন। আরো আশ্চর্যের বিষয়, মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সকল ধর্মানুসারীদের নিকট তিনি সমানভাবে সমাদৃত এবং তার আধ্যাত্বিকতার ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয় সকল শ্রেণীর লোকের মাঝে। দুনিয়ার মানুষ একজন আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে তার নাম অতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

 

        হযরত বায়জীদ (রহ) এক দিন মোরাকাবায় (ধ্যান) মগ্ন। এমন সময় এলহাম (আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্তরে উদয়) হলো যে, হে বায়জীদ। ইহুদীদের পোশাক পরে দেরসাময়ান-এ (ইহুদিদের একটি উৎসব অনুষ্ঠানের নাম) যাও। তুমি তাদের আনন্দোৎসবে যোগদান কর। হযরত বায়জীদ প্রথম এইরূপ এলহাম দ্বারা ঘাবড়ে যান। কিন্তু বার বার একই এলহাম হতে থাকলে অবশেষে তিনি ইহুদি পোশাক পড়ে সেই উৎসবে যোগদেন। অনুষ্ঠানে এলাকার সকল ইহুদি জামায়াত হয়েছে। তার সাথে সাথে ইহুদি গোষ্ঠীর বড় বড় পন্ডিত, শাস্ত্রজ্ঞ এবং যাজকগণও উপস্থিত হয়েছে। সব শেষে তাদের সর্বোচ্চ শাস্ত্রজ্ঞ-পন্ডিত এবং পুরোহিত সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করার জন্য দাঁড়ান। কিন্তু তিনি দাঁড়িয়ে কোন কথা বলতে পারছেন না। তার মুখে ধর্মের কথা ফুটছে না। দাড়িয়ে বোকার মত এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন। অদৃশ্য শক্তির প্রভাব অনুভব করে সে হতবিহবল হয়ে উঠে। দীর্ঘক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে শ্রোতাদের মধ্যে তার ব্যাপারে গুঞ্জন উঠে। তারা তারা নিকট এর কারন জিজ্ঞেস করলে নিজের অবস্থা ও ব্যর্থতা চেপে রেখে বুদ্ধিমানি করে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেন আমাদের এই জামায়াত স্থলে অবশ্যই কোনো মুহাম্মদী ( মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ইসলামের অনুসারী) উপস্থিত হয়েছে। সুতরাং এ কারণেই আমি বক্তৃতা করব না।

 

        একথা শুনে উপস্থিত শ্রোতারা উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং সমস্বরে বলতে থাকে, আপনি অনুমতি দিন, আমরা ওকে খুঁজে বের করে মেরে ফেলব, রাহেব বললো কোনো অন্যায় বা যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা ঠিক নয়। বরং প্রথমে তোমরা তার সাথে মত বিনিময় করা এবং তাকে হত্যাযোগ্য প্রমাণিত করে মেরে ফেলতে পার-এর আগে নয়। সকলে এবার লোকটিকে খুঁজতে লাগল। ইতিমধ্যে রাহেব দাঁড়িয়ে বললো, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম) এর অনুসারী তোমাকে তোমার নবীর দোহাই দিয়ে বলছি, তুমি যেখানে বসে আছো সেখানেই দাঁড়িয়ে যাও। তুমি যদি আমাদের উত্থাপিত প্রশ্নসমূহের সঠিক উত্তর দিতে পার তবে আমরা তোমার অনুসরণ করব। আর ইসলাম সম্পর্কে যেসব সন্দেহ আমাদের মনে রয়েছে সেগুলি দূরীভূত করতে সক্ষম না হলে তোমাকে আমরা হত্যা করব।

 

        এই আহ্বান শুনে হযরত বায়জীদ বোস্তামী (রহ) দাঁড়ান। উপস্থিত সকলে তাকে উৎসুক্য নেত্রে দেখতে থাকে।

 

        রাহেবঃ হে মোহাম্মদী! আমরা তোমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করব, যদি উত্তর দিতে পারো তবে আমরা তোমার কথা শুনব এবং তোমার ধর্মের অনুসরণ করব। যদি যথাযথ উত্তর প্রদানে ব্যর্থ হও তাহলে তোমাকে এই মজলিসেই হত্যা করা হবে। হযরত বায়জীদ (রহ) বললেন আচ্ছা আপনাদের প্রশ্ন কি বলুন। রাহেবঃ জানতে চাই, সে এক কি যার কোন দ্বিতীয় নেই?

 

        বায়জীদঃ আল্লাহ এক যার কোন দ্বিতীয় নেই। রাহেবঃ সে দুই  কি যার তৃতীয় নেই?

 

        বায়জীদঃ সেটি হল রাত এবং দিন যার তৃতীয় নেই  আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ "আমি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন স্বরূপ বানিয়েছি"  (বনী ইসরাঈলঃ ১২ তম আয়াত)

 

        রাহেবঃ এমন তিনটি জিনিস কি যার চতুর্থ নেই?

 

        বায়জীদঃ আরশ, কুরসি ও কলম।

 

        রাহেবঃ এমন চারটি জিনিস সম্পর্কে অবগত করুন যার পঞ্চম নেই?

 

        বায়জীদঃ তাওরীত, ইঞ্জিল, যবুর, কোরআন। রাহেবঃ সেই পাঁচটি বিষয় কি যার ষষ্ঠম সংখ্যা নেই?

 

        বায়জীদঃ পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ।

 

        রাহেবঃ আমি জানতে চাই সে ছয়টি বিষয় সম্পর্কে যার সপ্তম সংখ্যা নেই?

 

        বায়জীদঃ ঐ ছয়টি দিন যে দিন গুলোতে আল্লাহপাক আসমান জমীন সৃষ্টি করেছেন। "পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে "আর আমি আসমান জমিন এবং এ দুইয়ের অভ্যন্তরীণ সকল বস্তু কে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি।" (কাহাফ ৩৮ নং আয়াত)

 

        রাহেবঃ সাতটি জিনিস সম্পর্কে বলুন যার অষ্টম সংখ্যা নেই?

 

        বায়জীদঃ সাত আসমান। "আল্লাহ পাক বলেছেন তোমরা কি দেখনা যে, আল্লাহ্ তায়ালা কেমনে স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন?" (নূহঃ ১৫)

 

        রাহেবঃ সে আটটি জিনিস কি যার নবম সংখ্যা নেই?

 

        বায়জীদঃ আরশ বহনকারীগণ। যথা কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে, এবং ঐ দিনে আপনার প্রভুর আরশকে আট জন ফেরেশতা বহন করবে।" (হাক্কাহ ১৭)

 

        রাহেবঃ সে নয়টি জিনিস কি যার দশম সংখ্যা নেই?

 

        বায়জীদঃ হযরত সালেহ (আঃ) এর এলাকার নয়টি বস্তি যাতে সন্ত্রাসী ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীরা বাস করত। "সেই জনপদে নয়জন গোত্রীয় সর্দার লোক ছিল যারা সমাজে সন্ত্রাস ও অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। আদৌ তারা শান্তি স্থাপন করছিল না।" (নমল ৪৮)

 

        রাহেবঃ "আশারায়ে কামেলা" অর্থাৎ পূর্ণ দশটি জিনিস দ্বারা কি বুঝায়?

 

        বায়জীদঃ যে ব্যক্তি তামাত্তু হজ্ব আদায় করবে কিন্তু কোরবানী করতে অক্ষম হবে তাকে দশ দিনে দশ টি রোযাকে রাখতে হয়। দশ দিনের শেষে দশ টি রোযাকে "আশারায়েকামেলা" বলা হয়। যেমন এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে "আর যে ব্যক্তি কোরবানীর পশু সংগ্রহ করতে পারবে না তার জন্য হজ্বের সময় তিনটি রোযা এবং সাতটি রোযা  হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় আদায় করতে হবে। এভাবেই মোট দশটি পূর্ণ হবে" (বাকারা ১৯৬)

 

        রাহেবঃ সেই এগারটি, বারটি এবং তেরটি বস্তু কি কি?

 

        বায়জীদঃ হযরত ইউসুফ (আঃ) এর এগার ভাই এবং বার মাস। "নিশ্চয় মাস সমুহের সংখ্যা আল্লাহ তায়ালার নিকট ধার্যকৃত ভাবে বারটি।" (তাওবা ৩৬) এবং ইউসুফ (আঃ) এর স্বপ্নে তেরটি জিনিসকে সেজদা করতে দেখেছিলেন। "আমি স্বপ্নে এগারটি তারকা এবং সূর্য ও চন্দ্রকে আমায় সেজদা করতে দেখেছি।" (ইউসুফ ৮)

 

        রাহেবঃ ঐ দলটি কারা যারা মিথ্যা বলেছিল অথচ বেহেশতে যাবে এবং ঐ দলটি কারা যারা সত্য কথা বলেছে কিন্তু জাহান্নামে যাবে?

 

        বায়জীদঃ হযরত ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরা মিথ্যা বলেছিল কিন্তু তারপরও তারা জান্নাতে যাবে।

        "হে আমাদের পিতা। আমরা দৌড় প্রতিযোগিতায় ছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের আসাব পথের নিকটে রেখে গিয়েছিলাম" (ইউসুফ ১৭)

 

        ইহুদি এবং খ্রীষ্টান এরা পরষ্পরে একদল আরেক দলকে মিথ্যাবাদী বলে যে দোষারোপ করে তা সত্য বিষয় কিন্তু তারপরও তারা উভয় সম্প্রদায় জাহান্নামে যাবে।

 

        এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে "এবং ইহুদীরা বলে খ্রিষ্টান ধর্ম কোন ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তদ্রুপ খ্রীষ্টানরাও বলে ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপর নেই ; অথচ তারা সকলেই আসমানী কিতাব পড়ে এবং এর অনুসারী বলে দাবি করে।" (বাকারা ১১৩)

 

        রাহেবঃ যারিয়াত, হামিলাত, জারিয়াত, মুকাসসিমাত এই শব্দগুলোর অর্থ কি?বায়জীদঃ যারিয়াত দ্বারা উদ্দশ্য বাতাস, হামিলাত দ্বারা পানি জমাট মেঘ মালা, জারিয়াত দ্বারা জাহাজ এবং মুকাসসিয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ ফেরেশতা যিনি ১৫ই শাবান থেকে আগামী মধ্যবর্তী শাবান (এক বছর) পর্যন্ত বান্দার রিযিক পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সম্পাদন করেন। "সে বাতাসের শপথ যা  ধুলিবালু উড়িয়ে নেয় এবং সেই মেঘ পুঞ্জের এর শপথ যা বোঝা বহন করে, অতঃপর সেই জলযানের (জাহাজের) যা স্বাচ্ছন্দ গতিতে চলে আর সেই ফেরেশতা সমূহের শপথ যারা বস্তুসমূহ বন্টন করে।" (যারিয়াত ১-৪)

 

        রাহেবঃ সেই বস্তুটি কি যা শ্বাস নেই অথচ তার রূহ নেই?

 

        বায়জীদঃ সুবহে সাদেক। যার মধ্যে রূহ নেই কিন্তু সে শ্বাস নেয় বলে উল্লেখিত হয়েছে। "এবং প্রভাতের কসম' যখন সে শ্বাস নেয় (আগমন করে)" (তাকবীর ১৮)

 

        রাহেবঃ আমি আপনার নিকট থেকে সে চৌদ্দটি বস্তু সম্পর্কে জানতে চাই যারা আল্লাহ তা'আলার সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল?

 

        বায়জীদঃ সাত আসমান এবং সাত জমীন। "অতঃপর তিনি আসমান জমীন কে বললেন, তোমরা অনুগত হয়ে আস, স্বাচ্ছন্দে হোক অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক উভয় বল্লো আমরা স্বাচ্ছন্দে  উপস্থিত আছি" (হা-মীম সেজদাহ ১১)

 

        রাহেবঃ  সে কবর কোনটি যে তার ভিতরকার ব্যক্তিকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল?

 

        বায়জীদঃ হযরত ইউনুস (আঃ) কে যে মাছটি গিলে ফেলেছিল। শেষে একটি মাছ তাকে গিলে ফেল্লো এবং তিনি নিজেকে তখন ধিক্কার দিচ্ছিলেন।" (সাফফাত ১৪২)

 

        রাহেবঃ ঐ  পানি কোথায় যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয়নি এবং মাটি থেকে ও উত্তলিত হয়নি?

 

        বায়জীদঃ হযরত সুলাইমান (আঃ) এর রানী বিলকিসের জন্য যে পানি পাঠিয়েছিলেন সেটা ছিল মূলত ঘোড়ার ঘাম। যা আকাশ থেকে নামেনি এবং মাটির নিচ থেকে উঠান হয়নি। রাহেবঃ সে চারটি বস্তু কি যা না তার  মার পেট থেকে জন্মেছে না পিতার পিঠ থেকে?

 

        বায়জীদঃ হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর দুম্বা, হযরত সালেহ (আঃ) এর উটনি এবং হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)।

 

        রাহেবঃ সর্ব প্রথম কার রক্ত পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়?

 

        বায়জীদঃ হাবিলের রক্ত। কাবিলই তার ভাইকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে সর্বপ্রথম বনী আদমের রক্ত মাটিতে প্রবাহিত করে।

 

        রাহেবঃ আমি এমন একটি বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করব যা আল্লাহ্ নিজেই সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তিনি সেটাকে ক্রয় করেছেন?

 

        বায়জীদঃ মমিন বান্দার জীবন। যা আল্লাহপাক সৃষ্টি করার পর কয় করে নিয়েছেন। "নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা করে নিয়েছেন মুমিনের জীবন ও সম্পদ বেহেশতের বিনিময়ে" (তাওবা ১১১)

 

        রাহেবঃ সে জিনিসটি কি যা আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তার নিন্দা করেছেন?

 

        বায়জীদঃ গাধার আওয়াজ। "নিশ্চয় আওয়াজ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে কর্কশ আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।" (লোকমান ১৯)

 

        রাহেবঃ আল্লাহ তাআলা কোন জিনিসকে সৃষ্টি করার পর তার চরিত্রের একটি বিষয়ে আশঙ্কা করেছেন?

 

        বায়জীদঃ নারীর ছলনা। "নিশ্চয়ই তোমাদের (নারীদের) ছলনা ভারী ভয়ঙ্কর।"( ইউসুফ ২৮)।

 

        রাহেবঃ সে বস্তুটি কি যা আল্লাহ তায়ালা নিজে সৃষ্টি করেছেন এবং সে সম্পর্কে অন্যের নিকট পরিচয় জানতে চেয়েছেন?

 

        বায়জীদঃ হযরত মূসা (আঃ) এর লাঠি। যা  ছিল তারি  সৃষ্টি কিন্তু তারপর এ সম্পর্কে মূসা (আঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন "হে মুসা! তোমার ডান হাতে ওটা কি? তিনি বললেন ওটা আমার লাঠি।" (তোহা ১৭-১৮)

 

        রাহেবঃ নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান কে কে? এবং নদীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কোন কোনটি?

 

        বায়জীদঃ রমনীদের মধ্যে হযরত হাওয়া, খাদিজাতুল কোবরা, আয়েশা, আসিয়া, ফাতিমা, মারইয়াম সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারীনী এবং সমুদ্রের মধ্যে যায়হূন, সায়হূন, দজলা, ফোরাত, ও নীল শ্রেষ্ঠ।

 

        রাহেবঃ শ্রেষ্ঠ পাহাড় এবং সর্বোত্তম পশু কোনটি?

 

        বায়জীদঃ পাহাড়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তুর এবং সর্বোত্তম  সর্বোত্তম পশু হল ঘোড়া।

 

        রাহেবঃ হে মুহাম্মদী (সাঃ) বলুন সর্বোত্তম মাস এবং শ্রেষ্ঠ রাত কোনটি?

 

        বায়জীদঃ সর্বোত্তম মাস রমযান। "রমযান মাসে মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে" (বাকারা ১৮৫) এবং সর্বোত্তম রাত হল লাইলাতূল কদর। "লায়লাতূল কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম" (ক্বদর ৩)

 

        রাহেবঃ একটি গাছের বারটি ডাল, প্রতি ডালে ত্রিশটি পাতা, প্রতিটি পাতায় পাঁছটি ফুল, তন্মধ্যে দুইটি ফুলের অবস্থান সূর্যালোতে এবং তিনটির অবস্থান ছায়ায় সুতারাং বলুন গাছটি কি?

 

        বায়জীদঃ গাছ দ্বারা উদ্দেশ্য বছর।তন্মধ্যে বারটি মাস রয়েছে এবং প্রতিটি মাসের ত্রিশ  দিন এবং প্রতি দিনে রয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। তন্মধ্যে দুই ওয়াক্ত অর্থাৎ জোহর ও আসর  পড়তে হয় সূর্য্যালোতে বাকী তিন ওয়াক্ত ছায়ায় অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর।

 

        রাহেবঃ সে বস্তুটি কি যে বাইতুল্লাহ্ শরীফে পৌঁছার পর হজ্ব করেছে অথচ তার প্রাণ নেই এবং তার উপর হজ্ব ফরজ ও নয়?

 

        বায়জীদঃ হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজ বন্যায় ভেসে ভেসে জাজিরাতুল আরব বাইতুল্লাহ শরীফ প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু তখন বাইতুল্লাহ্ পানির নীচে ডুবন্ত ছিল।

 

        রাহেবঃ আল্লাহ তা'আলা কতজন নবী পাঠিয়েছেন এবং কতজন রাসুল,

 

        বায়জীদঃ এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্ রাখেন। তবে যতটুকু জানা গেছে পয়গম্বরগণের সংখ্যা এক লাখ ছব্বিশ হাজার। তন্মধ্যে তিন শত তের জন ছিলেন রাসূল বাকি সকলে নবী।

 

        রাহেবঃ সে চারটি জিনিস কি যে গুলোর মূল এক কিন্তু রং ও সাদ ভিন্ন ভিন্ন?

 

        বায়জীদঃ সে চারটি বস্তু হল নাক, কান, চোখ ও  মুখ থেকে নিঃসৃত তরল বস্তুসমূহ। কান থেকে নিষ্কৃতি পানির স্বাদ হল তিক্ত, অশ্রুর স্বাদ হল লবণাক্ত, মুখের থুথু হলো মিষ্টি,নাকের শ্লেস্বার স্বাদ হল টক।

 

        রাহেবঃ কিতমীর এবং ফাতীল শব্দ দুটির ব্যাখ্যা দিন।

 

        বায়জীদঃ খেজুর দানার পেছনের যে অংশটুকু সাদা হয় তাকে বলে নাকীর এবং খেজুর বিচির উপর সাদা হালকা চামড়াটাকে বলে কিতমীর এবং বিচির জোড়া স্থানে যে হালকা সাদা পর্দা থাকে তাকে বলে ফাতীল।

 

        রাহেবঃ সুবাদুন এবং লুবাদুন শব্দের অর্থ কি?

 

        বায়জীদঃ বকরী এবং ভেড়ার পশমকে সুবাদ ও  লুবাদ বলে।

 

        রাহেবঃ বলুন হাম এবং রাম কাদের নাম?

 

        বায়জীদঃ হযরত আদম (আঃ) এর পূর্ববর্তী উম্মতগণের নাম ছিল হাম এবং রাম।

 

      রাহেবঃ সে প্রণীটির নাম কি যার নিকট আল্লাহ ওহী পাঠিয়েছিলেন, অথচ সে মানুষ,  জ্বীন, ফেরেশতা কোন প্রজাতিরই নয়?

 

        বায়জীদঃ মধু মক্ষিকা। "আর আপনার রব মধু মক্ষিকার অন্তরে একথা ঢেলে দিলেন যে তুমি গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষ রাজিতে এবং মানুষের অট্টালিকাগুলুতে।" (নাহল ৬৮)

 

        অতঃপর হযরত আবু ইয়াজিদ (বায়জীদ) (রা) বললেন, আরো কোন প্রশ্ন থাকলে বলুন। কিন্তু রাহেব অক্ষমতা প্রকাশ করে বল্লো আমার নিকট জিজ্ঞাস্য আর কিছুই নেই।

 

        অতঃপর বায়জীদ (রা) বললেন, আমি আপনাকে শুধুমাত্র একটি প্রশ্ন করব। সুতরাং শুধু একটি প্রশ্নের উত্তর দিন যে, আসমান এবং বেহেশতের চাবি কি?

 

        প্রশ্নটি শোনা মাত্র পুরোহিত বিস্ময়ে হতবাক হয়ে রইল। হযরত বায়জীদ উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি তোমাদের পুরোহিতের এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলাম কিন্তু সে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। এ কথা শুনার পর রাহেব বল্লো, আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম কিন্তু আশঙ্কা যে, আমার কথার সাথে উপস্থিত সকলে একমত হবে না। একথা শুনে সকলে সমস্বরে আওয়াজ দিল, আপনার কথার সাথে আমরা একাত্বতা জানাব। যদি কোন হক কথা হয় তবে আমরা অবশ্যই সমর্থন করবো  আপনি আমাদের শাস্ত্রজ্ঞ,  পুরোহিত, দলপতি আর আমরা আপনার অনুসারী সুতরাং সত্য কিছু থাকলে বলে ফেলুন। তখন রাহেব পরিষ্কার ভাবে ঘোষণা দিলেন, বেহেশতের চাবি হল, "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্"- একমাত্র আল্লাহই সত্য মাবুদ এবাদতের যোগ্য এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সর্বশেষ প্রেরিত রাসূল। রাহেফের মুখ থেকে এ ঘোষণা শুনা মাত্র সকলে ইসলাম গ্রহণ করার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে এবং হযরত বায়জীদ বোস্তামী (র) এর হাতে সকলে ইসলাম গ্রহণ করে। অতঃপর হযরত বায়জীদ বোস্তামীর অন্তরে আবার এলহাম হল,  হে বায়জীদ! তুমি আমার আদেশ পালন করার খাতিরে হাজার হাজার ইহুদিকে আমি খুশী হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় দিলাম।

 

*****