ভূগোলময় পৃথিবী
ধারাবাহিক নিবন্ধ “আফগান সংকটের অন্তরালে'র পরিবর্তিত শিরোনাম
জিহাদ ও মুজাহিদদের সমালোচনার জবাব
বিশ্বব্যাপী আফগান জিহাদের গ্রভাব
মনযূর আহমাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এসব মুসলিম এলাকায় রাশিয়া কুফরী চিন্তা ও বিধান প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে মুসলমানদের শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, এতিহ্য নির্মূল করে দিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতার ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে থাকে। এমনকি রুশীভাষা ছাড়া অন্যসব ভাষা-ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ফারসী ও আরবী কথন-লেখনের উপর কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। স্কুল-কলেজে মুসলমান ছাত্রদেরকেও লেনিন-স্টালিনের চরম ইসলাম বিদ্বেষী দর্শন পড়তে বাধ্যবাধকতা ছিল চরম। তাজিকিস্তানের একজন আলিম ব্যক্তি বলেছিলেনঃ
“আমাদেরকে স্কুলে এমন আপত্তিকর কবিতা ও সংগীত শিখান হত, যাতে আল্লাহ তা'আলার প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ এবং ইসলামের উপর সরাসরি আক্রমণাত্মক কথার উল্লেখ থাকত। আমরা স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে আনন্দের সাথে সেইসব কবিতা সঙ্গীত নিজেরা গাইতে থাকলে আমার আব্বা-আন্মা লোকদেরকে শুনিয়ে আমাদের সাবাস দিতেন বটে; কিন্তু রাতে শোবার সময় একান্তভাবে তারা বলতেনঃ
“এসব কুফরী কথা-বার্তা। ঠেকায় পড়ে মুখে উচ্চারণ কর শুধু। খবরদার! এ সবের উপর বিশ্বাস রেখো না। সব মিথ্যা কথা।”
তিনি আরো বলেন, "আমাদের এলাকা চরম শীত কবলিত, প্রতিটি ঘরে 'হাম্মাম' রয়েছে। তাতে সর্বক্ষণ কাঠ-খড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হয়, যাতে ঘর গরম থাকে। লাল বিপ্লবের পরে কমিউনিস্টরা ছয় মাস পর্যন্ত তাদের ঘরের 'হাম্মাম' গুলো কুরআন, হাদীস ও ফিক্হ-এর কিতাব দিয়ে জালিয়ে রেখেছে।'
সুবিজ্ঞ এই আলিমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এমন অকল্পনীয় কঠিন পরিস্থিতিতে আপনি ইলমে দ্বীন অর্জন করলেন কিভাবে?
তিনি বলেন, 'আমার ওস্তাদ হযরত মাওলানা জান মুহাম্মাদ সাহেব (রাহঃ) লাল বিপ্লবের পূর্বেই দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে হযরত শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (রাঃ)-এর নিকট হাদীস পড়ে এসেছিলেন। কিন্তু যদিও বিপ্লবের পরে দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ হয়ে যায়, নামায আদায় সহ ইসলামী পোষাক পরার বিষয়টিও যখন চরম অপরাধ হিসাবে ঘোষিত হয়, তখন তিনি অতি গোপনীয়তার সাথে আমাদের পড়ানোর কাজ চালিয়ে যান। দিনের বেলা তিনি কমিউনিস্টদের মত পোষাক পরে চলাফেরা করতেন, রাত দুপুর হলে গহীন পাহাড়ের কোন গোপন গুহায় যেয়ে দিনের নামাযসমূহ কাযা করতেন এবং আমাদেরকে কুরআন ও হাদীস শিক্ষা দিতেন। এভাবে তিনি আমাদের এলাকায় পাঁচশত অভিজ্ঞ আলিম তৈরী করেন। মাত্র তিন বছর পূর্বে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি একশ পাঁচ বছর বেঁচেছিলেন।
ইমাম বোখারীর দেশেঃ
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ কিতাবাদি সংগ্রহ করতেন কোথেকে? তিনি বলেন, "প্রতিটি কিতাবের একটি করে সংখ্যা যে কোনভাবে সংগ্রহ করা হত। দিল্লি থেকে মুদ্রিত বুখারী শরীফের ফটোকপিই আমরা পড়েছি।"
একথা শুনে কার না কান্না আসে যে, ইমাম বুখারীর দেশে বুখারী শরীফের কী চরম সংকট!
হেদায়া প্রণেতার শহরেঃ
জনৈক আলিম বলেছেনঃ “উজবেকিস্তান বিশেষতঃ “হেদায়া' প্রণেতার শহরটি স্বাধীনতা লাভের পরও এই বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী আইন গ্রন্থখানা দুষ্প্রাপ্য রয়ে গেছে। সেখানের মুসলমানগণ এ গ্রন্থখানা একবার দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছেন।' অপর একজন আলিম বলেছেনঃ .....
'হেদায়া প্রণেতার মাজারে যাওয়ার পর আমাদের মালুম হলো, মাজারটি কোন ইয়াহুদীর দখলে রয়েছে। সে আমাদের নিকট থেকে টাকা আদায় করার পর মাজারটি জিয়ারত করার সুযোগ দিল।"
এক্ষেত্রে আমার দুঃখের সাথে মনে পড়ে, হেদায়া প্রণেতা তার বিশ্ববরেণ্য হেদায়া গ্রন্থে মুসলিম দেশে কাফিরদের বসবাসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠিন শর্ত উল্লেখ করে লিখেছেনঃ
“কোন মুসলিম দেশে কোন কাফির বসবাস করলে অমর্যাদার প্রতীক স্বরূপ তার গলায় লোহার শৃঙ্খল পড়া থাকবে, মুসলমানদের অনুকরণে কোন পোশাক সে পরতে পারবে না। মাথার সম্মুখভাগের কিছু চুল কেটে রাখবে। ঘোড়ায় চড়তে পারবে না, গাধার পিঠে চড়তে পারবে বটে, তবে গ্রাম ও শহরের মধ্য দিয়ে নয়। কোন প্রকার জাকজমক বাদে একান্ত বিনয়ীভাব প্রকাশ করে গাধায় চড়তে হবে। নিজেরা এসে জিযিয়া পরিশোধ করে যাবে ।”
আর এই হেদায়ার দেশে এই সেদিনও মুসলমানদের অবস্থা ছিল কত করুণ ।
তিনি আরো লিখেছেনঃ
“যখন কোন যিম্মি জিযিয়া নিয়ে আসবে তখন জিযিয়া উসুলকারী কর্মকর্তা তার ঘাড় ধরে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলবে,
اعطنى الجزية يا عدواللّه
“হে আল্লাহর দুশমন! জিযিয়া পরিশোধ কর।'
হেদায়া প্রণেতা কি জানেন যে, আজ তার কবরটিও ইয়াহুদীদের দখলে!
বায়তুল্লাহ সম্পর্কে রাশিয়ার সাধ!
পাকিস্তানের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মুফতী রশীদ আহমাদ বলেন, ১৪১৪ হিজরীর শাবান মাসে বায়তুল্লাহর সামনে বসে জনৈক উজবেক আলিম আমাকে বলেছেনঃ
অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলত, দেখবে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে মুসলমানদের কিবলা কাবার ছাদের উপরে উঠে আমরা মদ পান করব। আল্লাহ আফগান মুজাহিদদের কল্যাণ করুন। তাঁরা জীবন, ইজ্জাত ও বুকের তাজা রক্ত দিয়ে রাশিয়ার এই কুমতলব গুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।
মুসলমানদের উপর রুশ সরকারের অত্যাচারের মাত্রা ছিল অবর্ণনীয়। সে যজ্ঞের কথা কলম দিয়ে কাগজে লেখা যায় না, সে যন্ত্রণা যে ভোগ করেছে কেবল সেই বলতে পারবে, কত পাষণ্ড ওরা, কত নির্মম ছিল সে যন্ত্রণা।
একথা অস্বীকার করা ঠিক হবে না যে, রাশিয়ার কৌশল ও প্রোপাগাণ্ডার জোয়ারে সে দেশীয় মুসলিম সমাজ যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিল বটে। যে কারণে আজ তাদের কেবল এতটুকু মনে আছে যে, তাদের বাপ-দাদা মুসলমান ছিল। এর বেশী তারা জানে না।
তবুও যেহেতু ইসলাম হলো মানুষের জন্মগত ধর্ম-প্রতিটি মানুষ ইসলামের চরিত্র নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আর ইসলাম এমন এক বিশ্বাস, যা কারো হৃদয়ে কোনভাবে একবার প্রবেশ করলে তার হৃদয়মূল থেকে সে বিশ্বাস বিনাশ করা বাঘের পেট থেকে তার খোরাক বের করে আনার মত সুকঠিন ব্যাপার। ফলে প্রায় দীর্ঘ এক শতাব্দি কমিউনিস্ট পরিবেশে ও সমাজে তারা বসবাস করলেও তাদের মন থেকে ইসলামের প্রতি ভালবাসা মুছে ফেলা যায়নি।
রাশিয়া আফগানিস্তানে অন্যায় দখলদারিত্বের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করার পর তাদের প্রতিরোধকারী মুজাহিদদের দমনে রুশী-ফৌজের সাথে স্বধর্ম বিস্মৃত কৃত্রিম রুশী ফৌজেরও আগমন ঘটে। এদের বাপ-দাদা ছিল মুসলমান। এদের হৃদয়ের ক্ষুদ্র এক কোণে টিমটিম করে জুলছিল ঈমানের চেরাগ ।
মুজাহিদরা দেখে অবাক হয়েছে যে, মুসলমানের এই সকল আপন ভোলা সন্তানরা মুজাহিদদেরকে দেখার জন্য কিরূপ আগ্রহ পোষণ করত। তারা স্বদল থেকে পালানোর সামান্য সুযোগ পেলেই মুজাহিদ দলে এসে যোগদান করত। কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে যেত।
অসংখ্যবার এই সকল সেনা সদস্য আফগানীদের নিকট থেকে দামী ক্লাশিনকভের বিনিময়ে পবিত্র কুরআন সংগ্রহ করেছে। বহুযুগ পর কুরআন হাতে পেয়ে তারা কেঁদে ফেলত। পবিত্র কুরআনে তারা বার বার চুমু খেত এবং বলতঃ “এই আমাদের কুরআন, এই আমাদের কুরআন ।"
আফগান জিহাদের কল্যাণে আল্লাহ তা'আলা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নখরপাঞ্জায় আবদ্ধ বঞ্চিত, নির্যাতিত মুসলিম জাতিকে স্বাধীনতা ও মুক্তি দান করেছেন। যদিও সে সব মুসলিম প্রজাতন্ত্রের সরকার প্রধানগণ এখনো কমিউনিস্ট চিন্তায় বিশ্বাসী। তবুও মুসলিম জনতা পুর্বের তুলনায় বহুলাংশে স্বাধীনতা ভোগ করছে। গুরুতৃপূর্ণ বহু স্থানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। মসজিদ গড়ে উঠছে। পূর্ববর্তী সরকারের বন্ধ করে দেয়া মসজিদগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, সংস্কার চলছে। ইসলামের দাওয়াতী কার্যক্রম আবার শুরু হয়ে গেছে। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের মুবাল্পিগরা এখানে আসছে। দীর্ঘ সত্তর বছর পর কমিউনিস্টদের অপশাসন থেকে মুক্তি পাওয়া মুসলমানদের ইসলামী আদর্শ ও ইসলামী শিক্ষার প্রতি তৃষ্ণা ও আগ্রহ এতবেশী যে, তা দেখে বিহির্দেশ থেকে আগত আমলদার মুসলমানরাও নিজেকে তাদের তুলনায় খাট ভাবতে বাধ্য থাকে। আলিমগণ ও তাবলীগ জামাতের বিজ্ঞজন যখন তাদের সামনে ইসলাম জম্পর্কে আলোচনা করেন, তখন বিগত পাপ পংকিল জীবনের কথা মনে করে তাদের দু'চোখ বেয়ে উষ্ণ অশ্রুধারা নেমে আসে ।
কেনেডার নিউরন্তা শাখার তাবলীগ জামাতের প্রধান দায়িতৃশীল মুহাম্মাদ ইসমাঈল গুজরাটী কর্ণেল আমীর খানের বরাতে বলেছেন যে, রাশিয়ার এক এলাকায় তাবলীগ জামাতের লোকেরা আলোচনা শুরু করলে ধীরে ধীরে দু' হাজারের চেয়েও বেশী লোক সেখানে জমায়েত হয়ে যায়। তারা সকলে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে দ্বীনের আলোচনা শুনছিল। পরে তাশকীল করার সময় দেখা গেল, উপস্থিত সকলে এখনই তাবলীগে সময় দিতে রাজী আছে। কিন্ত ছোট একটি বিদেশী জামাতের পক্ষে এত লোককে সুনিয়ন্ত্রণের সাথে কাজে লাগন ছিল কঠিন ব্যাপার। ফলে দু' হাজারের ভিতর থেকে তিনশ' লোককে বাছাই করা হল। এই তিনশ লোকেরও নিয়ন্ত্রণ ছিল কঠিন ব্যাপার। কষ্টকর হওয়ায় তাদের মধ্যে থেকে মাত্র ষাট জনকে নির্বাচন করা হয়। অতঃপর আলাদা আলাদা “জামাত" গঠন করে তাদেরকে চেল্লায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
কেবল তারা কুফরী হুকুমত ও অত্যাচার নিম্পেষণ থেকে মুক্তি পেল। ইসলাম সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তবুও কোথাও আযান হলে এলাকার সকল মুসলমান মসজিদে এসে জড়ো হয়। কিন্তু নামায কিভাবে পড়তে হয়, তা তারা জানে না। কাউকে অযু করতে দেখলে সকলে তার অনুসরণ করে! কিরাত ছাড়, কিয়াম, রুকু, সিজদা ও বৈঠক করে তারা চলে যায়।
কোন এক গ্রামের লোকদেরকে কেউ বলেছে, এই একখানা পবিত্র কুরআন। ব্যাস, আর দেরী নেই। সকলে মিলে অল্প সময়ের মধ্যে মসজিদ চত্বরে দর্শনীয়রূপে বক্স তৈরী করে তার মধ্যে অত্যন্ত আদব ও মর্যাদার সাথে কুরআনখানা রেখে দিয়েছে, যাতে কারো দেখতে অসুবিধা না হয়। সেই গ্রামের নারী-পুরুষ সকলে প্রতিদিন এসে অবশ্যই একবার কুরআন খানা দেখে যায়।
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মুসলিম এলাকার লোকদেরকে বাকী দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। মস্কো যাওয়াও ছিল তাদের পক্ষে কল্পনাতীত ব্যাপার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরোপিত কঠিন শর্ত পূরণ করে মস্কো যাওয়া তাদের পক্ষে খুবই কঠিন ছিল। কোন কোন এলাকার মুসলমানদেরকে তো সংবাদপত্র, রেডিও, টিভি, টেলিফোন ও ফ্যাক্স সহ সকল প্রকার সংবাদ মাধ্যম ও যোগাযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল। মধ্য এশিয়ার এক অঞ্চলের লোকের অপর অঞ্চলের লোকের সাথে সম্পর্ক রাখা ও যোগাযোগের চিন্তা করাও অপরাধ ছিল। রুশ ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় লেখা ছিল এক কঠিন মহাপাপ। এসব কালাকানুন আরোপের কারণ ছিলো, কোন মুসলমান যেন কোন অবস্থাতেই ইসলাম ও তাওহীদের সংস্পর্শে আসার সামান্যতম সুযোগ না পায়। যদি তাদের কারো হৃদয়ে ইসলামের আলো জ্বলে উঠে, তখন কি হবে। যে আলো-আগুন বিদ্যুতের মত ছড়িয়ে পড়বে এক হৃদয় থেকে কোটি হৃদয়ে--এই ছিল তাদের সংশয় ।
যে কারণে বলতে গেলে সে বিশাল মুসলিম জনপদের কেউ আরবী বর্ণমালা চিনেই না। একবার দেখা গেল, কারো হাতে একটি ইঞ্জিল। সে মনে করেছিল, এটিই কুরআন শরীফ! অজ্ঞতার সুযোগে কোন এক খৃষ্টান কুরআন শরীফ বলে তার হাতে তুলে দিয়েছিল ইঞ্জিল। এভাবে বহু মুসলমান বিভ্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন। তবুও আফগান জিহাদের প্রভাব ও কল্যাণে তারা আজ স্বাধীন। ইসলামের নিভে যাওয়া মশালগুলো আবার প্রজ্বলিত হচ্ছে জিহাদের জ্বালানীসহ প্রচণ্ড ঈমানী জযবায়। তা শুভসংবাদ এতটুকুই।
তাজিকিস্তানের সুবিজ্ঞ এক আলিম বলেছেনঃ তাজিকিস্তানে মুসলমানদের ইসলামের প্রতি আগ্রহ ও আস্থা এত বেশী যে, মাত্র এক বছরে সেখানে দশ হাজার মসজিদ নির্মিত হয়েছে যার মধ্য থেকে প্রায় তিনশটি জামে মসজিদ ।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে এক এলাকায় ও এক শহরে মাত্র একটি বড় জুমার মসজিদ থাকে, আমাদের এলাকায় জুমার দিনে সকলে একসাথে এক মসজিদে নামায পড়ার নিয়ম বহু পুরাতন। যে কারণে জুমা মসজিদের সংখ্যা আমাদের দেশে কম। হানাফী মাযহাবের আবেদনও এটাই যে, এক এলাকার সকল লোক জুমার দিন একটি মসজিদে সমবেত হয়ে নামায আদায় করবে।
তাজিকিস্তানের অন্য এক আলিম বলেছেনঃ
“আল্লাহর সুদৃষ্টি ও করুণায় পুনরজ্জীবন লাভকারী মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতে এখন কুরআন, হাদীস ও ফিকহ শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের জন্যে বহু দরসে নেজামী মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উজবেকিস্তানের লোকেরাও ইসলামের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হয়ে আসছে।
কিছুদিন আগে পাকিস্তান সরকারের এক মহিলা প্রতিনিধি উজবেকিস্তান গিয়েছিলেন। তিন সেখানের একটি নতুন মহিলা মাদ্রাসা পরিদর্শনের সময় খোলা মাথায় বোরকা ছাড়া ছিলেন বলে ইসলামের প্রতি গভীর আস্থাশীল পাচশ' ছাত্র-শিক্ষয়ত্রীর বিদ্রুপের মুখে সেখান থেকে সটান কেটে পড়ে।
কয়েক মাস পূর্বে তাজিকিস্তানের জনৈক আলিম অত্যন্ত দরদের সাথে বলেছিলেনঃ
এই সঙ্গিন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন ভ্রান্ত আকিদার লোকেরা এখানে এসে ইসলামের নামে পাগলপারা সরলমনা মুসলমানদেরকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করছে। শিয়া ও কাদিয়ানী চক্র সেখানে মজবুত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এখন জরুরীভাবে দরকার হলো, মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞ হক্কানী আলিমদের সেখানে যেয়ে বাতিল সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করা, তাদের ঈমান রক্ষা করা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য এই জনপদ বড়ই উর্বর। সেখানের বর্তমান অবস্থা সম্পূর্ণ মক্কা বিজয় পরবর্তী সময়ের অনুরূপ। যেমন মক্কা বিজয়ের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ .
“তুমি দলে দলে মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে।” এর বাস্তব নমুনা সেখানেই আজ চোখে পড়ে। (চলবে)
অবলম্বনেঃ আমেরেকী ইয়াহুদী সাজেস