---সম্পাদকীয়---
===========================================
আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
=======================================
ছোট সুন্দর স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ। এ দেশটি অতি প্রাচীন আমল থেকেই মুসলমানদের দেশ। এর বর্তমান শাসক ও প্রতিযোগী রাজনীতিকরা প্রায় সবাই মুসলমান। কিন্তু এ দেশটির শাসন ব্যবস্থা মুসলমানী নয়। ইসলাম এ দেশের গণ-মানুষের ধর্ম হলেও ব্যক্তি, সমাজ ও খন্ডিত পরিসরের বাইরে তার প্রভাব কম। রাষ্ট্রযন্ত্র ও বিচার ব্যবস্থার চৌকাঠে ইসলামকে ঢুকতে দিতে কায়েমী স্বার্থবাদী মহল নারাজ। ওরা অন্ধকারেই ছড়ি ঘুরাতে আগ্রহী। আলো জ্বেলে নিজেদের দুষ্টক্ষত প্রকাশ করতে রাজী নয়। এহেন পরিস্থিতিতে এ দেশে চালু রয়েছে পাশ্চাত্য ধারার গণতন্ত্র, সংকীর্ণ অর্থের জাতীয়তাবাদ, নিষ্ঠাহীন যান্ত্রিক ইসলামী তৎপরতা, সংস্কারগ্রস্ত দেশাচার, ব্রাহ্মণ্যবাদ ঘেঁষা ইসলাম বিরোধী রাজনীতি আর বস্তাপচা কক্ষচ্যুত সাধারণতন্ত্র।
ইসলাম তথা মানবতার মুক্তি সনদ যখন একটি জাতির ললাটে লেপে দেয়ার পরও তারা তার যথার্থ কদর করছে না- তখন এর অতি স্বাভাবিক পরিণতিতে তার উপর সেঁটে দেয়া হচ্ছে নানা ধরনের অপশাসন। নানা চক্করে এক সময় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসানো হয় একজন নারীকে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীও এক নারী।(যা আজ অপর দুটো বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রেরও অবস্থা) এ দু'জনের পেছনে কাতারবন্দি হলো সকল রাজনৈতিক শক্তি। (সংসদের বাইরে কিছু দল ছাড়া) এ দু'নেত্রীর 'পলিটিক্সের' ফলে দেশ আজ চরম সংকটের মুখে। তাদের ঝগড়া একটি মাত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে। বিষয়টি হলো, "ক্ষমতার সিংহাসন "।
একজনের দাবী " তুমি নেমে যাও"। অপর জনের কথা " আমি নামতে চাই না"। এ দু'টো কথার চারপাশে অলংকার রুপে আরো বিস্তর আলোচনা। এক সময় ঘরের ঝগড়া মিটানোর জন্য ডেকে আনা হয় বিদেশী একটি সংস্থার ব্যক্তিদের। কমনওয়েলথ - এর মহাসচিব হন এর প্রধান শালিস। (এ মহাসচিবের নিজের জন্মভূমিতেই এখন যদিও সামরিক শাসন চলছে।) এই মিঃ এমেকা প্রেরিত দূত স্যার নিনিয়ান প্রায় চল্লিশ দিন কসরত করে গলদঘর্ম হয়ে বিদায় হলেন। ব্যর্থতার শরমে তিনি বিদায়ী প্রেস কনফারেন্সে বিবৃতির কাগজ খানা দিয়ে নিজের চেহারা ঢেকে ফেলেন। এ চেহারা নিনিয়ানের নয়- কমনওয়েলথ -পশ্চিমা বিশ্বের দাতা ও সহায় গোষ্ঠীর। যাদের দয়ায় এ দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনের চাকা ঘুরে।
নিনিয়ান যাওয়ার সময় শেষ বাক্যটি উচ্চারণ করেছেন-" বাংলাদেশের অবস্থা যতই নাজুক হোক, কমনওয়েলথ ঐ দেশকে ত্যাগ করবে না"।এর একটা অর্থ এমনও কি হতে পারে না যে, "বেয়াদব, পুঁচকে বাংলাদেশকে কমনওয়েলথ ছেড়ে দেবে না।
এ দেশের খয়রাত ভোগী নেতা-নেত্রী শাসক ও বিরোধী পক্ষের এ ধৃষ্টতার প্রতিকার আমরা (পশ্চিমা মোড়লেরা) করবই(!)"। দেখা যাক কি হয়।
বিরোধী নেত্রী যে মেহমানের সম্মানে সংসদ থেকে পদত্যাগ সহ কর্মসূচি স্থগিত রেখেছিলেন, সে মেহমানের কর্মকাণ্ডকে 'পক্ষপাত দুষ্ট' বলে আখ্যায়িত করে তিনি বার্তা প্রেরণ করেছেন কমনওয়েলথে। এর জবাব এসেছে। কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছেন,"নেত্রীর অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের প্রতিনিধি ঠিকই করেছেন"। এও কি কোন নাটক? আল্লাহই ভালো জানেন।
মূল ঝগড়ার বিষয়টি এখনো আছে। এ বিবাদ মিটবে বলে মনে হয় না। তবে কি বাংলাদেশ দুই মহিলার পিছনে কাতারবন্দী লাঠিয়ালদের রণক্ষেত্রে পরিণত হবে? নাকি এদের একজন নিজের দাবী ছেড়ে দেবেন? এদের দু'জনের উপর টেক্কা মেরে কি অপর কোন শক্তি সকল খেল খতম করে দেবে? সেনা শাসন আসবে? না কি তৃতীয় কোন শক্তি দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেবে?
আচ্ছা দেশীয় রাজনীতির সংবেদনশীল অঙ্গনে বিদেশী, বিধর্মী শক্তিকে দাঁত বসানোর সুযোগ দিয়ে যারা সংকটের বয়স বাড়াচ্ছে- সমস্যা পোক্ত করে চলেছেন তাদের কানে কানে যদি বিদেশী দাতাদের কোন মুখপাত্র, এমন কোন প্রস্তাব বা হুমকি দেয় যে, " আমরা বাংলাদেশে এ পলিসি করতে চাই। এই আমাদের প্রস্তাবিত পলিসির নকশা।এটি বাস্তবায়ন করবে আমাদের মনোনীত ও দীর্ঘ সময়ের পরীক্ষিত একটি সুশিক্ষিত ও যোগ্য টিম।এই হলো টিমের সদস্যদের নাম ঠিকানা।দ্বন্দ্বরত সকল শক্তি এদের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন বা নির্বাসনে যেতে পারেন। বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক শান্তিকামী ও আদর্শিক রাষ্ট্র-সংঘ-শক্তি এ টিমের পৃষ্ঠপোষক। " তখন কি করবেন, বিবদমান দুই নেত্রী এবং তাদের সহযোদ্ধারা"!
উপরের ঘটনা বা এর সদৃশ্য যা কিছুই ঘটুক না কেন, বাংলাদেশে এ ধরনের বিদেশী প্রেসক্রিপশন নির্বিবাদে চালিয়ে দেয়া যাবে না। এ ধরনের চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা প্রিয় ইসলামী জনতার বিপুল অংশ আজন্ম প্রস্তুত।লড়াই, প্রতিরোধ আর সংঘাতের পরই যা হওয়ার হবে। তামাটে বরণ, দারিদ্র্য -ক্লিষ্ট একটি প্রকৃতি ঋদ্ধ জাতির সাথে উন্নত, চর্চিত, পরিশীলিত, সাদা চামড়ার অসম লড়াইয়ের প্রথম দিকেই দেশ ও জাতির ঈমান, আকীদা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাধীনতা ও সম্মানের পুঁজি নিয়ে খেল-তামাশা আর অন্যায় বাণিজ্য করার দোষে এসব দেশদ্রোহী জাতীয় গাদ্দারদের কবর রচিত হবে।
এসব কবরের উপর দিয়েই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের তাওহিদি জনতার দুর্জয় জিহাদি কাফেলা। হয়তঃ বিজয়ের দিকে, নয়তঃ এর চেয়েও দামী লক্ষ্যবস্তুর দিকে। আর সেটি হলো অমরত্বের স্বর্ণসোপান শাহাদাত। অতএব, জাগো মুজাহিদ! জেগে ওঠো!!