JustPaste.it

সেপ্টেম্বর ১৯৯৪

মাসিক

জাগো মুজাহিদ

===================================================

 

পাঠকের কলাম


* ওদের তুনিরের দ্বিতীয় তীর এবং একটি ঐতিহাসিক মহা সমাবেশ *

 


     ২৯ শে জুলাই ঢাকা বাসী প্রত্যক্ষ করেছে এক ঐতিহাসিক মহা সমাবেশ। লাখো জনতায় ঢল নেমেছিল রাজধানীর বুকে। কালেমা খচিত পতাকা ও জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সারি সারি বাস ট্রাক ও লঞ্চ, ষ্টিমারে করে কিশোর থেকে শুরু করে সফেদ শশ্রু মন্ডিত বৃদ্ধরাও এসেছে ধর্মদ্রোহীদের শাস্তির দাবী জানাতে। সেই জনস্রোতের কেন্দ্র বিন্দু ছিল মানিক জানাতে। সেই জনস্রোতের কেন্দ্র বিন্দু ছিল মানিক মিয়া এভিনিও, মাঠ পরিণত হয়েছিল বিশাল জন সমুদ্রে। উত্তাল তরঙ্গের মত তারা আন্দোলিত হয়েছিল গাদ্দারদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্রোহে। মুহু মুহু শ্লোগানের ধ্বনীতে কেঁপে উঠেছিল তৎসংলগ্ন সংসদ ভবন আর কুচক্রীদের শুরু হয়েছিল হৃদকম্পন। বিক্ষিপ্ত অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া পুরোপুরি সফল হয়েছিল দিনে সেই মহা সম্মেলন। ধর্ম প্রাণ মুসলমানের এই মহা মম্মেলন। ধর্ম প্রাণ মুসলমানের এই মহা মিলন সহ্য হয়নি শয়তানি চক্রের। বানচালের কোন প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনি ওরা, বাঁধা সৃষ্টি করেছে লং মার্চ প্রস্তুতি পর্বের সকল ক্ষেত্রে। ছুরিকাহত করেছে তার নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবীদের। এর পরেও গতি শ্লথ হয়নি অকুতভয় সত্যাশ্রয়ী মর্দে মুমিনের। জনতার এই স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলন নস্যাৎ করতে বসে থাকেনি বিদেশীদের পা চাটা নীচু প্রাণীর দল। তাদের ভয়! যদি সম্মেলন সফল হয়, তখন বিদেশী প্রভুদের কি জবাব দেবে, যারা এদেরকে আনুগত্যের নামে গাদ্দারীর শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছে এই মর্মে যে, “মৌলবাদের নামে ইসলামকে সমুল উৎখাত করবে এই মুসলিম অধ্যুসিত বাংলাদেশ থেকে।“ তাই তারা তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যে প্রভূদের নজরানা কোটি কোটি ডলার হালাল করতে মুসলমানের এই গণজাগরণের ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছিল। যার একটি অংশ ছিল লংমার্চ বানচাল করার চেষ্টায় ব্যস্ত কিন্তু তৌহিদী জনতা তাদের বেধে দেয়া হরতাল উপেক্ষা করে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যোগদান করেছে এই মহা সমাবেশে। এ পর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে ওরা মানিক মিয়া এভনিউতে পেতে ছিল এক মৃত্যু ফাঁদ। সেই নারকীয় তান্ডব থেকেও আল্লাহ্ তার প্রিয় বান্দাদের রক্ষা করেছেন। লংমার্চের সতর্ক প্রহরীরা ধরে ফেলেছে শক্তিশালী বোমা সহ তাদের চরদের আর এদের নিয়েই সূত্রপাত হয়েছিল সেই অপ্রীতিকর ঘটনার। এ ছাড়া সমাবেশ স্থল আর কোন অঘটন ঘটেনি। এখানেও যখন ব্যর্থ হল তখন লংমার্চ ফেরত যাত্রীদের বাস, ট্রাক থেকে নামিয়ে বেদম প্রহার করে তাদের হিংস্র প্রবৃত্তির লালসা পূর্ণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টি, এস, সি চত্ত্বর সেই সন্ধায় রঞ্জিত হয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের তপ্ত খুনে। এর পরেও তাদের আক্রোশ মেটেনি, আঘাত হেনেছে বাংলার বেরেলবী, মুসলমানের ঐক্যের প্রতীক ঐতিহাসিক লংমার্চ নেতা জাতীয় মসজিদের খতীব মাওলানা ওবায়দুল হক সাহেবের ওপর। এ হলো তাদের তুনিরের দ্বিতীয় তীর। যার প্রথমটা নিক্ষেপ করেছিল মুসলিম মিল্লাতের অতন্ত্র প্রহরী আফগান রনাঙ্গণের পরীক্ষিত মর্দে মুজাহিদ, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের দর্পন জাগো মুজাহিদ পত্রিকার সম্পাদক মুফতী আঃ হাই সাহেবকে লক্ষ্য করে। কিন্তু সে তীর লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে আঘাত হেনেছে তাদেরই বুকে। বিদীর্ন করতে পারেনি মুজাহিদের বক্ষ। ওরা আমাদের খতীবকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলায় জড়িয়ে ফাসিতে ঝুলাতে চায়। কারারুদ্ধ করতে চায় আমাদের সম্পাদককে। তারা ভেবেছে, এর পরে আমরা নীরব হয়ে যাব। খোদার কসম, নিশ্চুপ থাকবো না আমরা। ধর্মদ্রোহীতার অপরাধে ওদের প্রত্যেককে গাছের ডালে ঝুলাবো। এভাবেই সেই হত্যার বদলা নেবো যেমনি ভাবে তাদের পূর্ব সুরীরা আমাদের ত্রিশ লক্ষ আলেমকে-আলেম হওয়ার অপরাধে গাছের ডালে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল।

 

 মুহাম্মদ আবু জিহাদ
মালিবাগ জামিয়া, ঢাকা 
                                                                                        
  

                                  

* মুসলিম বিশ্বে সংঘাত সৃষ্টির রহস্য *

 

      প্রশান্ত মহা সাগর তীরের ইন্দোনেশিয়া থেকে আটলান্টিক তীরের মরক্কো পর্যন্ত মুসলিম শাসনের অধিনে রয়েছে শতাধিক দেশ। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, বর্তমান বিশ্বে সংঘাত-সংঘর্ষ এবং আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক বিপর্যয় দেখা যায় তার শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিম বিশ্বে ঘটছে। মায়ানমারের রোহিংগা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন, কাশ্মিরী স্বাধীনতাকামি মুসলমানদের ওপর ভারতীয় বর্বরতা, আফগান সংকট, তাজিকিস্তানের রুশ সমর্থিত কম্যূনিষ্ট কর্তৃক মুসুলিম নির্যাতন, ইরাকের ওপর সামরিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ ও ইঙ্গ-মার্কিন ষড়যন্ত্র, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দানে ইহুদী চক্রের ছলচাতুরী, ফিলিপিন্স সরকার কর্তৃক মিন্দানাওয়ের মরো মুসলমানদের উপর সার্ব বর্বরতা ও স্বাধীনতা হরণ, বুলগেরি’য়া ও সাইপ্রাসে তুর্কি বংশদ্ভূত মুসলমানদের জোর করে খৃষ্টাণ বানানোর প্রচেষ্টা, সোমালিয়া সমস্যা, স্পেনিয় সাহারা সমস্যা এবং ত্রিনীদাদ ও বাগোর কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের ওপর খৃষ্টান পাদ্রিদের নির্যাতন। এইস সব অঞ্চলে মুসলমানদের রক্ত ঝরছে প্রতিনিয়ত, তাদের জানমাল ও ইজ্জত লুন্ঠিত হচ্ছে। উপরের সমস্যাগুলো বাদে বর্তমান বিশ্বে আর কোন সমস্যা নেই বললে চলে। এখন দেখা যাক, এই সমস্যা এই স্মস্যা সংকুল দেশগুলো বাদে বাকি গুলো যাদের নিয়ন্ত্রণে সেই সব ইয়াহুদি, খৃস্টান নিজেদের সমস্যার ব্যাপারে যে ভুমিকা রাখছে মুসলমানদের ব্যপারে সেই ভুমিকা রাখছে কি? অবশ্যই না। একথা দিবা লোকের ন্যায় পরিস্কার যে, নামিবিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যায্য অধিকার সে দেশের জনগণ জাতিসংঘ বা পাশ্চত্য গোষ্ঠির সহযোগিতায় যত সহজে পেয়েছে সে ভাবে ফিলিস্তিন কিংবা বসনিয়ার মুসলমানরা পাচ্ছে না। যে ভাবে তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়াকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীণতা দেয়া হয়েছে সে ভাবে ককেশাশ মুসলমানদের, চেচিণ ইঙ্গশতিয়া, দাঘিস্তান ও মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোকে দেয়া হচ্ছে না। আর্মেনিয়া কর্তৃক আজার বাইজানের উপর অন্যায় আগ্রাসনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে পারমানবিক ও রাশায়নিক অস্ত্র রাখার জন্য। এ অজুহাতে ইরাক ও পাকিস্তানের উপর যে ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে ঠিক সে ভাবে কি আগ্রাসি ইসরাইল কিংবা ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে?
     এই সব অন্যায় কর্মে ইয়াহুদি-খৃষ্টাণ-পৌত্তলিক চক্র এক ও অভিন্ন। তাদের প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘে তারাই ইচ্ছামত মুসলমানদের ওপর আগ্রাসন চালানোর লাইসেন্স, অবরোধ আরোপের পারমিট কিংবা ভাগ বাটোয়ারার দালালি এবং মুসলমানদের ন্যায্য প্রস্তাবের উপর ভেটো দেয়ার সোল এজেন্সির অধিকারি। কিন্তু এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া ঠিক নয়। কেননা তারা মুসলিম জাতির কথা শুনলে ভয় পায়, এ জন্য ওরা আগের থেকে আরো শক্তি নিয়ে আদাজল খেয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধ উঠে পড়ে লেগেছে। এ উদ্দেশ্য সফল করতে মুসলিম মিল্লাতের জন্য আজ বেশি প্রয়োজন খাটি ঈমান, জিহাদ এবং শৃঙ্খলার সাথে একতাবদ্ধ হওয়া।

 

 মোঃ সাইফুল ইসলাম
গওহর ডাঙ্গা মাদ্রসা, গোপালগঞ্জ।