JustPaste.it

সিরাতে রাসূল (সাঃ)

 

প্রিয় নবীর মু'জিযাঃ তিরোধান পূর্বে ও পরে

মুফতী মুহাঃ শফী (রাহঃ)

=====================================================================

 

        মক্কা বিজয় শেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছেন । ফুযালা ইবনে ওমায়ের প্রিয় নবীকে অতর্কিতে আঘাত হেনে শহীদ করার দূরভীসন্ধি নিয়ে তাঁর সাথে তাওয়াফ করতে থাকে । তার এ দুরভিসন্ধি প্রিয় নবী বুঝতে পারেন । তাওয়াফরত অবস্থায় ফুযালা তাঁর খুব নিকটবর্তী হয় । তখন তিনি তাঁকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমার নাম কি ফুযালা? উত্তরে তিনি বললেনঃহাঁ,আমিই ফুযালা । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন,তুমি মনে মনে কি চক্রান্ত এঁটেছো?ফুযালা আসল কথা গোপন রেখে বললো,কিছুই না,আমি তো আল্লাহর জিকিরে মশগুল ছিলাম । ধৈর্য্য ও সহনশীলতার মূর্ত প্রতীক প্রিয় নবী অত্যন্ত কোমল ভাষায় তার মনের গোপন ষড়যন্ত্র প্রকাশ করে স্বীয় মুবারক হাত ফুযালার বুকে চেপে ধরে বললেন,আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, ফুযালা!

 

        ইসলাম গ্রহণের পর এই ঘটনা প্রসঙ্গে ফুযালা বলেন,আল্লাহর কসম! প্রিয় নবী আমার বক্ষ থেকে হাত তুলে নেয়ার পর তিনি আমার কাছে পৃথিবীর সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন । কাল বিলম্ব না করে ফুযালা তখনই ইসলাম গ্রহণ করেন । প্রিয় নবীর এক সাক্ষাতে তাঁর হৃদয় মন পূত-পবিত্র হয়ে যায় । সকল জাহেলী ও কুফরী চিন্তা ও বিশ্বাস তাঁর হৃদয় থেকে মুছে যায় । যে ফুযালা মহানবীকে হত্যার মত পাপ সংঘটনের জন্য এসেছিল সে রহমতের নবীর কয়েক মূহুর্তের সান্নিধ্য লাভের বরকতে নবী প্রেমে আসক্ত হয়ে ফিরে গেল । বাড়ীতে ফিরে গেলে তার জনৈক প্রেমিকা যার কাছে তার নিয়মিত যাতায়াত ও মেলামেশা ছিল,সে এসে হাজির হলো এবং পুরাতন প্রেমালাপ করতে চাইলো । কিন্তু ফুযালা যে তাওহীদের অমীয় সুধা পান করে এসেছেন, হৃদয়ের মিথ্যা প্রেম ভালোবাসা ও প্রবৃত্তির অন্যায় দাবী প্রিয় নবীর পদতলে বিসর্জন দিয়ে এসেছেন,তার দ্বারা কি আর কোন অন্যায় পাপে লিপ্ত হওয়া সম্ভব? তাই তিনি ওই অসৎ মহিলার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কবিতার পংক্তি পাঠ করে বলেনঃ

 

        " প্রিয়তমা বললো, এসো প্রেমালাপ করি ।

 

        আমি বললাম, "না" । কেননা আল্লাহ ও ইসলাম তা অনুমোদন করে না ।

 

     পবিত্র কা'বা গৃহে যখন প্রতিমাগুলো ভাঙ্গা হচ্ছিল, তুমি যদি তখন মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুগামীদেরকে দেখতে,   " তুমি যদি স্বচক্ষে অবলোকন করতে সক্ষম হতে যে, শিরক ও কুফরের অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া সমাজ আল্লাহর দ্বীনের আলোয় কিভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে । "

 

        সুবহানাল্লাহ!  প্রিয় নবীর মুবারক তাওয়াজ্জুহ-র কি আশ্চর্য প্রভাব, গোটা জীবন সাধনা করেও যা লাভ করা সম্ভব নয় তা এক নিমিষে কিভাবে সম্পাদিত  হলো!

 

দরবারে নববীতে হাযির হওয়ায় এক বিস্ময়কর ঘটনা ওফাতের পর প্রিয় নবীর মু'জিযা

        আলোচ্য ঘটনাটি হাদীসের নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং এটা কোনো স্বপ্ন বা কল্পনা নয় ।

 

        নবম হিজরী শতাব্দীর সুপ্রসিদ্ধ বুযূর্গ আল্লামা আব্দুল আজীজ মাক্কী (রঃ) "ফয়জুল জুদ আলা হাদীসে শায়বানী" নামক কিতাবে আরেফ বিল্লাহ আল্লামা ইবনে সাদ য়াফেয়ী (রঃ) কৃত " নশরুল মুহসিন" গ্রন্থের বরাতে এটি বর্ণনা করেছেন ।

 

        হযরত য়াফেয়ী (রহঃ) বলেছেন, ঘটনাটি আমি সঠিক ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে পেয়েছি এবং যেটি তখন সকলের মুখে মুখে ছিলো ।

 

        ঘটনাটি হলো, সুপ্রসিদ্ধ আরেফ বিল্লাহ শায়খ ইবনু যাগার য়ামানী(রাঃ) প্রতি বছর হজ্জ সফরে গিয়ে প্রথমে হজ্জের কাজ সমাধা করে যিয়ারতের জন্য রওজায়ে আতহারে হাযির হতেন । রওজা শরীফের সামনে দাঁড়িয়ে নবীজী ও তাঁর প্রিয় সাথীদ্বয় হযরত আবু বকর ও ওমর (রাঃ)- এর শানে গভীর ভালোবাসা পূর্ণ ও আবেগজড়িত কণ্ঠে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতেন । প্রতিবারের মত এবারও তিনি রওজা শরীফের সামনে কবিতা আবৃত্তি শেষে ফিরে আসতে উদ্যোগী হলে জনৈক রাফেযী তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো এবং তাঁর বাড়িতে দাওয়াত গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ জানালো । তিনি সুন্নাতে রাসূলের প্রতি লক্ষ্য করে এবং ভদ্রতার খাতিরে তার দাওয়াত কবুল করেন । তবে তিনি জানতেন না যে, লোকটি রাফেযী- আবু বকর ও ওমর (রাঃ)- এর প্রতি সে কঠোর বিদ্বেষ পোষণ করে । যথাসময়ে তিনি উক্ত রাফেযীর বাড়িতে উপস্থিত হলেন । ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই লোকটি পূর্ব থেকে প্রস্তুত করে রাখা তার দুই হাবশী কৃতদাস ইঙ্গিত করলে,সাথে সাথে তারা উক্ত আশেকে রাসূলকে ঘিরে ধরে এবং তাঁর মুবারক জিহ্বা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে । এরপর পাপিষ্ঠ রাফেযী তাঁকে লক্ষ্য করে বলে,যাও এই কর্তিত জিহ্বা নিয়ে আবু বকর ও ওমরের কাছে যাও - যাদের প্রশংসায় তুমি পঞ্চমুখ । ক্ষমতা থাকলে তারা তা জোড়া লাগিয়ে দিক । উক্ত বুযূর্গ তখন সত্যিই তার কর্তিত জিহ্বা হাতে করে রওজা শরীফে ছুটে গেলেন এবং নবীজীর পবিত্র চেহারা বরাবর দাঁড়িয়ে কান্না বিগলিত কণ্ঠে উক্ত ঘটনা শুনালেন । ওই রাতেই স্বপ্নযোগে প্রিয় নবীজীর যেয়ারত তাঁর নসীব হলো । তাঁর সাথে এই মর্মান্তিক ঘটনায় ব্যথাভারাক্রান্ত আবু বকর ও ওমর (রাঃ)ও রয়েছেন ।

 

স্বপ্নের মধ্যেই প্রিয় নবী উক্ত বুযূর্গের হাত থেকে কর্তিত জিহ্বা স্বীয় হস্ত মুবারকে নিয়ে তাঁকে কাছে টেনে তা তাঁর মুখে যথাস্থানে সংস্থাপন করে দেন । তৎক্ষনাৎ শায়খের ঘুম ভেঙে যায় । তিনি দেখলেন, জিহ্বা যথাস্থানে সাবেক অবস্থায় জোড়া লেগে আছে । দরবারে নবুওয়্যাতের এই আশ্চর্য মু'জিযা সংগঠিত হওয়ার পর তিনি স্বদেশ ফিরে আসেন ।

 

        পরবর্তী বছর পুনরায় উক্ত বুযূর্গ যথানিয়মে হজ্জ আদায় করে মদীনা শরীফে পবিত্র রওজায় গিয়ে হাযির হলেন এবং তার  সেই আবেগ পূর্ণ স্মৃতি  গাঁথা আবৃত্তি শেষে মুখ ফিরানো মাত্রই এবারও এক যুবক এসে তাঁর সামনে হাযির হয় । সে তাঁকে তার বাড়ীতে দাওয়াত কবুলের জন্য আরয করলো । এবারও শায়খ আল্লাহর উপর ভরসা করে তার দাওয়াত কবুল করলেন এবং তখনই তার সাথে তার বাড়ীতে রওয়ানা দিলেন । বাড়ীতে ঢুকেই তিনি বুঝে ফেললেন, বিগত বছর এ বাড়ীতেই তিনি এসেছিলেন ।

 

        কিন্তু তিনি মোটেই বিচলিত হলেন না । আল্লাহর উপর ভরসা করে ঘরে প্রবেশ করলেন । যুবক খুবই শ্রদ্ধা ও আদবের সাথে তাঁকে বসানোর ব্যবস্থা করলো,বিভিন্ন রকম খাবার দ্বারা তাঁকে আপ্যায়ন করলো ।

 

        খাওয়ার পর শায়খকে সে একটি কামরায় নিয়ে গেলো । তিনি সেখানে একটি বানর দেখতে পেলেন । যুবক তাঁকে লক্ষ্য করে বললো,হুজুর! আপনি এ বানরটিকে চিনতে পারছেন? তিনি না সূচক জবাব দিলে সে আর‍য করলো,এই বানর সেই ব্যক্তি -বিগত বছর আবু বকর, ওমর (রাঃ) - এর শানে প্রশংসা সূচক কবিতা আবৃত্তির জন্য যে আপনার জিহ্বা কেটে দিয়েছিলো । এক আশেকে রাসূলের সাথে নির্মম আচরণের পরিণতিতে আল্লাহ তাকে বানরে পরিণত করেছেন । সে আমার জন্মদাতা পিতা এবং আমি তার সন্তান । মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য বিস্ময়কর মু'জিযার তুলনায় এটিতো একটি অতি নগণ্য ঘটনা মাত্র । আলোচ্য ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, নবীজী জীবিত অবস্থায় রওজায়ে আকদাসে অবস্থান করছেন । অনুরুপ ভাবে তাঁর মু'জিযা প্রকাশের ধারাবাহিকতাও কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে । যুগে যুগে তার উম্মতরা প্রত্যক্ষ করবে তাঁর বিস্ময়কর সব মু'জিযা ।

 

আরেকটি আশ্চর্য মু'জিযাঃ

        আবু আব্দুল্লাহ আল- জানা (রহঃ) স্বীয় ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, একবার আমি কঠিন অভাবে নিপতিত হই । সৌভাগ্যক্রমে আমার মদিনা শরীফ গমন নসীব হলো । রওজায়ে আতহারের সামনে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করে আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বড়ই ক্ষুধাক্লিষ্ট! আজ আপনার মেহমান হলাম ।

 

        রাত হলো, রওজা শরীফের নিকটেই ঘুমিয়ে গেলাম । স্বপ্নযোগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ আনলেন এবং স্বীয় মুবারক হাতে আমাকে কিছু রুটি দিলেন । স্বপ্নের মধ্যেই আমি তা খেতে লাগলাম । কিছু অংশ খেতেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো এবং দেখতে পেলাম যে, অবশিষ্ট রুটি আমার হাতেই রয়েছে ।

 

খাতিমুল আম্বিয়া (সাঃ) এর রিসালাত  ও নবুওয়াতের সত্যতার ব্যাপারে সৃষ্টিকুলের সাক্ষ্য

        এক বিস্ময়কর ঘটনা সম্বলিত আমার এক ভাগিনীর একটি চিঠি পেলাম । চিঠিটির বিষয়বস্তু নিম্নঃরুপঃ শুক্রবার দিবাগত রাতে আম্মাজান আকাশের তারকা রাজির মাঝে দেখতে পান, কালেমা লেখা রয়েছে । আরেক রাতে পুনরায় এরুপ দেখতে পেয়ে পাশেই ঘুমন্ত তাঁর ছোট মেয়ে ও ভাগিনীকে জাগালেন । তারা দু'জনেও তা স্পষ্ট দেখতে পেলো ।

 

        চিঠিটি পড়তেই আমার মনে পড়ল, কয়েক বছর পূর্বেও এ ধরনের ঘটনা শুনেছিলাম । স্বয়ং আমার এক মেয়ে আমাকে বললো, বিগত রাতে আমরা বিশেষ প্রয়োজনে ঘর হতে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পেলাম,  আকাশে অত্যন্ত উজ্জ্বল ও মোটা অক্ষরে লিখিত কালেমা শরীফ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে । বিস্ময়ের সাথে আমরা তা বেশ কিছুক্ষণ দেখলাম । সে সময় আরো অনেক জায়গা থেকে এ ধরনের ঘটনা শুনা গিয়েছিল । অনেক দিন পর্যন্ত তা সকলের মুখে মুখে ছিলো । দীর্ঘ নয় বছর পর একই ঘটনা পূনরায় স্বীয় ভাগিনীর পত্র দ্বারা জানতে পারলাম । বোনের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে মনে মনে আকাঙ্খা করলাম, এমন বরকতময় ও প্রিয় নামটি দেখার সৌভাগ্য আমারও যদি হতো । যে নামকে আল্লাহ বারবার স্বীয় নামের সাথে জুড়ে দিয়ে ইসলাম অস্বীকারকারীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাঁর সত্যতা দেখিয়ে দিয়েছেন ।

 

        কখনও আকাশের নক্ষত্ররাজির মাঝে আবার কখনও গাছে কিংবা পাথরে এ বিস্ময়কর মু'জিযা প্রকাশ পেয়েছে । দিল্লীর নতুন কিল্লা নির্মিত হওয়ার সময় সেখান থেকে যখন পাথর সরানো হচ্ছিল, তখনও একটি পাথরের গায়ে পূর্ণ কালেমা অংকিত পাওয়া গিয়েছিল । যা এক নজর দেখার জন্য সেখানে অগণিত মানুষের ঢল নেমেছিল । পাথরটি এখনও সংরক্ষিত রয়েছে । ভাগিনীর উক্ত চিঠি পাওয়ার পর থেকে আমি প্রতিরাতে বিছানায় শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে থাকতাম, পরওয়ার দিগার! আমাকেও সেই কালেমাটি দেখাও,যার বিজয় পতাকা বিশ্বের দিকে দিকে উড়ছে এবং তা কেয়ামত পর্যন্ত উড্ডীন থাকবে । কিন্তু আমার আকাঙ্খা আকাঙ্খাই থেকে গেল ।

 

        জনৈক নবাব সাহেবের মুহতারামা মা,যার স্বযত্ন আপ্যায়ন ও স্নেহে আমি বেশ কিছুদিন থেকে তার বাড়ীতে অবস্থান করছিলাম ।

 

        ঘটনাটি আমি তার কাছেও প্রকাশ করলাম । ফলে তিনিও অনেক সময় আমার সাথে দোয়ায় শরীক হতেন । আবার কখনও বলতেন, হতে পারে এটা আপনার বোনের কল্পনা । আমি বলতাম, কল্পনাই যদি হয় তবে আমরা দু'জনেও তো আকাঙ্খা ও কল্পনা করছি, আমরা কেন তা কল্পনায় দেখি না ।

 

        কয়েকদিন পর বোনের বাড়ীতে গেলাম । সকলের সাথে দেখা সাক্ষাৎ সেরে রাতে ঘুমানোর সময় ঘটনাটি মনে পড়ল । ঘটানাটি কখন কি অবস্থায় দেখেছেন আমি বোনের কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, প্রচন্ড গরম ও অস্থির অবস্থা প্রায় রাতেই আমার ঘুম হতো না(কারন তিনি তখন সন্তান সম্ভাবা ছিলেন) । শুক্রবার রাত প্রায় দু'টা । তখন পার্শ্ব পরিবর্তন করে আকাশের দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখতে পেলাম,আকাশে অত্যন্ত কাছাকাছি দুটি তারকা । একটি খুবই উজ্জ্বল - যেটি কিছুদিন থেকে পূর্বাকাশে প্রকাশ পাচ্ছিল । তখন বোন আমাকে আকাশের দিকে দেখিয়ে বললেন, ওই যে তারকা দু'টি এখনও দেখা যাচ্ছে, একটি কিছুটা আলিফের আকৃতি বিশিষ্ট এবং খুবই উজ্জ্বল । বোন বললেন, ঐ দু'টি  তারকা দ্বারা "লাম" হয়ে গেল এবং মধ্যখানে অত্যন্ত মোটা ও স্পষ্টাক্ষরে লেখা ছিল- " লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ " এবং এর ভিতরে অসংখ্য সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম তারকা দেখা যাচ্ছিল যেন তা দ্বারা  কালেমার ওপর জরি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে । কালেমার চতুর্পাশে আরও কিছু নাম লক্ষ্য করলাম । কিন্তু অস্পষ্ট থাকার কারণে সবগুলো নাম পড়তে সক্ষম হইনি । আব্দুল্লাহ, ওমর ইত্যাদি আরো দু'একটি পড়তে পেরেছিলাম বলে মনে পড়ে । বিস্ময়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ যাবত এ অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকন করলাম । মনে চাচ্ছিল, পাশেই ঘুমন্ত ছোট মেয়ে ও স্বামীকে উঠিয়ে এ দৃশ্য দেখাই । কিন্তু হতবাক হয়ে পড়েছিলাম,মুখ খুলতে পারছিলাম না ।

 

আকাশ এমন পরিষ্কার ছিল যে, শুয়ে শুয়ে আল্লাহর এ আজব লিলা খেলা দেখেই যাচ্ছিলাম । সুবহে সাদিকের সাথে সাথে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল এবং এ বরকতময় অভূতপূর্ব দৃশ্যটিও অদৃশ্য হয়ে গেল । হৃদয় আনন্দে ভরে উঠল । কালেমা উচ্চারণ করতে করতে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করলাম এবং সকলের কাছে এ ঘটনা  বর্ণনা করলে সকলেই আক্ষেপ করে বললোঃ আমাদেরকে কেন উঠিয়ে দেখালে না? দ্বিতীয় রাত অতিবাহিত হয়ে গেলো । তৃতীয় রাতে প্রায় দু'টা বাজে । পুনরায় আকাশের দিকে দৃষ্টি পড়তেই ওই দৃশ্য দেখতে পেলাম । এবার পুরো কালেমা নেই, শুধু 'মুহাম্মদ' লেখা রয়েছে । মনে মনে ভাবছিলাম, আজ পুরো কালেমা লেখা না থাকার কারণ কি? ইতিমধ্যে অচেতন হয়ে গেলাম । অদৃশ্য থেকে একটি আওয়াজ ভেসে এলো,এটা কালেমা নয় বরং 'মুহাম্মদ- আহমদ নাম' । নাম দু'টি ভালো ভাবে স্মরণ রেখো । তৎক্ষনাৎ চৈতন্য ফিরে এলো । কিন্তু কাউকে কাছে দেখতে পেলাম না ।

 

        ভাবতে লাগলাম, গর্ভে যে সন্তান রয়েছে, এটা তার নাম রাখার ইঙ্গিত নাকি অন্য কোন রহস্য এতে রয়েছে । কারো কাছে প্রকাশ না করে বিষয়টা শুধু স্বামীকে জানালাম । কয়েক দিন পর এক রাতে বড় বোনের মেয়ে । এসে আমার কাছে শোয় । প্রচন্ড গরম  ও অস্থিরতার কারণে আমার ঘুম হচ্ছিল না । বিগত রাত সমূহের মত এবারও আকাশে উজ্জ্বল আলাে লক্ষ্য করলাম এবং হুবহু ঐ একই কালেমা আকাশে স্পষ্টাক্ষরে লেখা দেখতে পেলাম । অপলক নেত্রে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম । অতঃপর অনেক কষ্টে মুখ খুলে অস্পষ্ট ও ক্ষীণস্বরে ছােট মেয়েকে ডাকলাম । ভাগিনী জেগে উঠল । বলল, খালাম্মা, কি হয়েছে? এভাবে আপনার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে কেন? তখন খুব কষ্টে তাকে বললাম, আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ । আকাশের দিকে দৃষ্টি উঠাতেই সেও তা দেখলাে । ও কাছেই ঘুমন্ত আমার ছােট মেয়েকেও জাগিয়ে তা দেখালাে ও অন্যদেরকেও জাগাতে চাইল । কিন্তু ও মুখ খুলতে না পারায় কাউকে জাগাতে পারলাে না । এভাবে ওরা দুজনও এ বিস্ময়কর দৃশ্য সুবহে সাদিক পর্যন্ত অবলােকন করলাে । আমি অনেক চিন্তা করেও তার রহস্য উদঘাটন করতে পারলাম না । এরপর এখানের একজন বিজ্ঞ আলেমের কাছে এই ঘটনা বলা হল । তাকে পরিষ্কার বলা হলাে, এটা কোন স্বপ্নযােগ নয় বরং জাগ্রত ও সম্পূর্ণ সচেতন অবস্থায় দেখা । তিনি বললেন, তার গর্ভে যে সন্তান রয়েছে সে অত্যন্ত নেক ও সৎ সন্তান হবে । আর "মুহাম্মদ-আহমাদ” নাম দ্বারা সম্ভবত উক্ত শিশুর নামকণের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে ।

 

        আমাদের এক আত্মীয় আলেম ও কারী সাহেব এলে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলাে, তিনিও বলেন, সম্ভবত গর্ভের সন্তানটি প্রখর মেধাবী এবং খুবই নেক বখত সন্তান । বিশ দিন বা একমাস পর বােন একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন । সুস্থ সবল এবং তার গড়ন-আকৃতি খুবই সুন্দর হলাে  । আল্লাহ্ তাকে দীর্ঘজীবি করুন । তার কিছু কিছু আকার ইংগীত দ্বারা মনে হচ্ছিল, এ শিশু ভবিষ্যতে বড় নেককার ও প্রখর মেধার অধিকারী হবে । এরপর থেকে প্রতিরাতে আমি উক্ত তারকা দু’টি দেখতাম । ঘটনাটা অনেকের কাছে শুনতে থাকি । কারণ আকাশে তা অত্যন্ত উজ্জল-ভাবে দেখা যেত  । রাতের প্রথমাংশে পূর্ব-উত্তর আকাশে থাকতাে । গভীর রাতে আকাশের মধ্যখানে এসে দাঁড়াত । একটি তারকা তাে খুবই উজ্জ্বল, দেখতে কিছুটা সবুজ রংয়ের মনে হতাে । অপরটি কম উজ্জল এবং কিছুটা লালচে । উক্ত তারকা দু'টিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপকথা প্রচলিত ছিল । কেউ কেউ বলতাে, এটা বর্তমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুই প্রতিপক্ষের দিকে ইংগীত করছে । উক্ত তারকা দু’টি আজও নিয়মিত উদিত হয় । পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, ইতিপূর্বে তা খুবই নিকটে ছিল, এখন দূরে সরে গেছে । বর্তমানের তুলনায় পূর্বে আরাে উজ্জ্বল ও ঝলমলে ছিল । কোন সুবিজ্ঞ আলেম কিংবা সৌর বিজ্ঞানীকে এর রহস্য জিজ্ঞেস করা দরকার  । ঘটনাটি যে বাস্তব সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত । আমি যা শুনেছি হুবহু তা-ই লিখলাম ।

 

অনুবাদঃ আহমাদ আল-ফিরােজী

 

═──────────────═