JustPaste.it

স্বাস্থ্য সমাচার

সমস্যার সমাধানঃ পেপটিক আলসার

 

যে রোগটি গ্যাস্ট্রিক হিসেবে বহুল প্রচলিত, তার বিজ্ঞানসম্মত নাম পেপটিক আলসার। পেপটিক আলসার হলো পরিপাক নালীর সেসব অংশের ক্ষত, যেখানে পেপসিন নামের এক এনজাইম এবং এসিড প্রবাহিত হয়। সে দুটি হলো পাকস্থলী ও ডিওডেনাম। পাকস্থলীর ক্ষতকে বলা হয় গ্যাস্ট্রিক আলসার আর ডিওডেনাম বা গ্রহণীয় ঘাকে বলা হয় ডিওডিনাল আলসার। কেন আলসার হয় তার সঠিক কারণ জানা যায় নি। ধারণা করা হয়, যাদের পেপটিক আলসার হয়, তাদের পাকস্থলীর গাত্রে এসিড নিঃসৃত কোষের সংখ্যা বেশী থাকে। তবে বর্তমানে হেলিকোব্যাকটেরিয়া পাইলোরিডি নামে এক প্রকার জীবাণু পাকস্থলী ও গ্রহণীয় নিঃসরণ থেকে সনাক্ত করা হয়েছে। দেখা গেছে যে, ঐ জীবাণুটি পেপটিক আলসার হওয়ার জন্য সরাসরি দায়ী। পেপটিক আলসারের প্রধান উপসর্গ বুক, গলা জ্বালা-পোড়া করা ও পেট ব্যথা। সাধারণত খালি পেটে এই ব্যথা শুরু হয় এবং কিছু খেলে ব্যথা ভাল হয়ে যায়। অনেক সময় শেষ রাতের দিকে রোগী ব্যথায় ঘুম থেকে জেগে উঠে। যদিও পুরুষদের এ রোগ বেশী হয়, তবু মেয়েদেরও এ রোগ হতে পারে।

এ রোগের প্রধান ওষুধ তিন ধরনের। এন্টাসিড, এইচ টু ব্লকার ও অমিপ্রাজল। এন্টাসিড ট্যাবলেট বা সিরাপ সাময়িকভাবেব্যথা উপশম করে কিন্তু ঘা শুকোতে তেমন ফলপ্রদ নয়। এইচ টু ব্লকার ওষুধগুলো-যেমন সিমেটিডিন, র‌্যালীনিটিডিন বা ফ্যামোটিডিন ক্ষত শুকানার ক্ষেত্রে কার্যকর। প্রতিদিন ১৫০ মিলিগ্রাম র‌্যালীনিটিডিন দিনে দু'বার অথবা ফ্যামোটিডিন ৪০ মিলিগ্রাম, রাতে একবার খেলে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ৯০ ভাগ আলসার শুকিয়ে যায়। পেপটিক আলসারে অমিপ্রাজল অত্যন্ত কার্যকরী ওষুধ। প্রতিদিন একবার ২০ মিলিগ্রাম ৬-৮ এ ওষুধ খেলে আলসার ভাল হয়ে যায়। তবে পেপটিক আলসারের প্রধান সমস্যা হলো, 'ঘা শুকাতোর পর ওষুধ বন্ধ করে দিলে আবার ক্ষত দেখা দেয়। তাই সব সময় কম ডোজে প্রতিদিন র‌্যালীনিটিডিন বা ফ্যামোটিডিন টেবলেট খেলে পুনরায় রোগ হওয়ার ভয় কমে যায়। এ দু'টি ওষুধে তেমন কোন পার্শ্বক্রিয়া নেই। বছরের পর বছর খাওয়া যায়। কিন্তু অমিপ্রাজল বেশী খাওয়া যাবে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে পেপটিক আলসার একটা সমস্যার সৃষ্টি করে। জরায়ু যত স্ফীত হয় মেয়েদের বুক-গলা জ্বালা-পোড়া করা তত বৃদ্ধি পায়। এ সময় র‌্যালীনিটিডিন, ফ্যামোটিডিন বা অমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ খাওয়া যাবে না। তাই এ সময় এন্টাসিড ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ খাওয়া যেতে পারে। ব্যথা হলেই এন্টাসিড খাওয়া যেতে পারে। এন্টাসিড গর্ভস্থ সন্তানের ওপর কোনো খারাপ প্রতিক্রিয়া নেই।

গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কে কয়েকটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে। অনেকে ভাবেন, বার বার কিছু কিছু খাওয়া আলসারের জন্য ভাল ।এটা ভুল ধারণা। এতে ক্ষতির ঝুঁকি বেশী। ঝাল, মরিচ অথবা মসলা খেলে আলসার শুকাতে চায় না। এটাও ভুল। মসলার সাথে আলসার শুকানোর কোনো সম্পর্ক নেই। তবে যারা ধুমপান করে, তাদের পেপটিক আলসার ভাল হতে চায় না। তাই ধুমপান ছেড়ে দিতে হবে। বেশী দুধ খেলে আলসার ভাল হয় এটাও ঠিক নয়। বেশী বেশী দুধ আর এন্টাসিড সিরাপ কিডনির ক্ষতি করতে পারে।

পেপটিক আলসারের জটিলতা প্রধানত তিনটি। ক্ষতস্থান ফুটো হয়ে যাওয়া, রক্তবমি অথবা কালো পায়খানা করা, আর পাকস্থলীর নীচের অংশ চেপে যাওয়া। তবে রোগী খেলেই বমি করে আর স্বাস্থ্য আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যেতে থাকে। এগুলোর যে কোনটি হলে রোগীকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এন্ডোস্কপি বা মুখ দিয়ে নল ঢুকিয়ে কোথায় ক্ষত তা নির্ণয় করা যায়। পাকস্থলীর ক্ষত থেকে অনেক সময় কান্সার হতে পারে। তবে এ ভয় খুবই সামান্য। ডিএডিনাম আলসার থেকে ক্যান্সার হওয়ার কোন ভয় নেই।

-ডাঃ বরেণ চক্রবর্তী

 

 

প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ

হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের অমূল্য বাণীসমূহের মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত মূল্যবান পরামর্শ দেখতে পাওয়া যায়। হাদীস শরীফের তিব্বে নবী অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত কয়েকটি পরামর্শ চয়ন করা হয়ছেঃ

(1) হজম শক্তি সবল রাখার জন্য সপ্তাহে অন্ততঃ দুটি রোযা রাখা বিশেষ উপকারী।

(২) রোগীর সাথে বসে খানা খাওয়া উচিত নয়।

(৩) ডান হাতে খানা খাবে।

(৪) কোন কিছুতে হেলান দিয়ে কিংবা দাঁড়িয়ে খেলে বদহজম হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

(৫) খানা ঠান্ডা করে খাও। অতিরিক্ত গরম খাবার হজমশক্তি দুর্বল করে দেয়।

(৬) লেবু এবং মধু একসাথে মিশিয়ে সকাল বেলা খালি পেটে খেলে হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক সবল হয়।

(৭) কাটা ছুরির সাহায্যে গোশত না খেয়ে হাত এবং দাঁতে চিবিয়ে খাও।

(৮) গরম খাবার ঠান্ডা করার উদ্দেশ্যে তাতে মুখে ফু দিও না ।

(৯) পারতপক্ষে একা একা খানা খেও না, কাউকে সাথে নিয়ে খাও।

(১০) খাওয়ার পর খেলাল করবে। অন্যথায় দাঁত দুর্বল হয়ে যাবে।

(১১) নিয়মিত মেসওয়াক করো ।

(১২) দস্তরখানার মধ্যে পড়ে যাওয়া খানা উঠিয়ে খাবে। এর দ্বারা রিজিকে বরকত হয়। নিজের এবং সন্তান-সন্ততির পক্ষে কুষ্ঠ, স্বেতী প্রভৃতি মারাত্মক রোগ থেকেও বেঁচে থাকা যায়।

(১৩) রাতের খাবার ত্যাগ করলে বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়।

(১৪) যয়তুন খাও এবং যয়তুনের তেল শরীরে মালিশ কর।

(১৫) কদু মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্র সবল করে।

(১৬) পেটে অতিরিক্ত বায়ুর প্রকোপে খিরা উপকার করে।

(১৭) খাদ্য তালিকায় সবজীর আধিক্য বিশেষ উপকারী।