JustPaste.it

নারী স্বাধীনতা ও আমাদের সমাজ

প্রিন্সিপাল এ. এফ. সাইয়েদ আহমদ খালেদ

================================================================

 

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

        বিশ্ব চরাচরে দেখা যায় কিছু মুসলিম পণ্ডিত প্রবর, ক্ষেত্র বিশেষে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃতি সন্তানের দাবীদার তাদের বর্ষীয়ান বিবিদের আপাদমস্তক ঢেকে সঙ্গে নিয়ে চলেছেন। এই সুন্দর পরিবেশের মধ্যে ঘৃণিত ব্যাপার হলো সঙ্গে আরও কয়েকটি মেয়ে যাদের বয়স ষোল, আবার কুড়ি-পঁচিশের কোঠায়, তারা সম্পূর্ণ পর্দাহীন অবস্থায় উক্ত ভদ্রলোকের সাথে। এর অর্থ কি এবং এর দ্বারা সঙ্গী পুরুষ সাহেব কি বুঝাতে চান অন্যকে ও সমাজকে? বৃদ্ধাদের প্রতি, যৌবনলয় প্রাপ্ত নারীদের প্রতি কোনো যুবক বা পুরুষের অসংযত দৃষ্টি থাকে না বরং শ্রদ্ধার উদ্রেক হয়। কিন্তু খোলা-মেলা অশালীন পোশাকে সজ্জিত অর্ধনগ্ন যুবতীদের ব্যাপারে এর ব্যতিক্রম না হয়ে পারে কি? এটা কি নারীদের স্বাধীনতা প্রদান না আগামী প্রজন্মের চরিত্রে ধ্বংস সাধন? সুন্নতের কঠোর অনুসারী মুসলিমদের পরজ পালনে এত উদাসীনতা কেন? মনিবের অসন্তুষ্টিতে কি শান্তি আশা করা যায়? লজ্জার বিষয়, "আমারা পান্তা ভাত ঢেকে রাখি বিরিয়ানি রাখি উদোম।" 

 

        উল্লেখ্য, ইসলামী চেতনা সম্পন্ন কোন সন্তান এরূপ মনোবৃত্তির পরিবারে জন্ম গ্রহণ করতে পারে না। ফলে জাতীয় দুর্গতি ও মুসলিম সমস্যার মোকাবেলা স্বভাবতইং ' জিসাদী' মনা সন্তান পাওয়া দুষ্কর। একটু চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই স্বীকার করবেন, যে পরিবার আল্লাহ ও রাসূলের দেওয়া বিধান মোতাবেক জীবন-যাপনে যথাসম্ভব  অভ্যস্ত, তাদের মাঝেই বীর মাতা, বীর কন্যা, বীর যায়া, বীর সন্তান পয়দা হয়েছে। তারাই পৃথিবীর বুকে মঙ্গলময় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাদের পর্দার অন্তরালে কর্মময় জীবনের কাছে সব রকমের অশুভ শক্তি হার মেনেছে। উদাহরণ চান! শাহানা কস্তুরী কাব্যের রূপের রানী সাহসিনী বীরঙ্গনা খাওলার জীবন পডে দেখুন এবং এরকম আরো অনেক পর্দা বিমুখ নারী অপেক্ষা পর্দা নারী জীবনের সার্থকতা এখানে এইখানেই। এই-ই অন্তরায়হীন নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা।

 

        আমি আমার আব্বার মুখে তার দেখা একটি বাস্তব ঘটনার কথা শুনেছি যে, তুর্কি বীরঙ্গনা খালিদা এবিদ খানম একবার ভারত সফরে আসেন এবং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দান করেন।বিশ্বনন্দিতা  এই মহিলার অঙ্গ সৌষ্ঠব সম্পর্কে এবং রূপের কথা জানতে চাওয়ায় আব্বা বললেন, "ভদ্রমহিলার সর্বাঙ্গ বোরকাবৃত ছিল এমনকি হাত পা পর্যন্তও। দেহের রং কালো কি ফর্সা তা কেউ দেখতে পারেনি। তার ওজস্বীনি বক্তৃতা মন্ত্র মুগ্ধের মতো শুনে শ্রোতারা সবাই অভিভূত হয়ে পড়েন" শ্রদ্ধেয় নারীসমাজ! পর্দা প্রথা এই মহিয়সী নারীর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করেছে কি একবার ভেবে দেখুন। না পর্দায় তার গৌরব বৃদ্ধি করেছে। তুরস্কের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম কাতারের এই গরিয়সী মহিলার ব্যক্তিগত জীবন যতদূর জানা যায় বেশ সুখের ছিল। বাংলাদেশের মুসলিম নারীরা কি পারেনা এই আদর্শ অনুকরণ করে আদর্শিক কিছু সৃষ্টি করতে? নিশ্চ্য় পারে। ইসলামের বিধান এর ব্যাপারে বিতর্কে অবতীর্ণ হতে নেই। পরিণাম শুভ হয় না। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, স্বেচ্ছাচারী ও পর্দাহীন মেয়েদের বিভিন্ন প্রসাধনী পোশাক-পরিচ্ছেদ ইত্যাদির স্বল্পতার কারণে যে কোনো উৎসবের দিন অশালীন ব্যবহার, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে গণ্ডগোল, কথা কাটাকাটি মারামারি, জীবনের প্রতি হুমকি বরং শেষ পর্যন্ত উৎসবের আনন্দ তিরোহিত হয়। আর পর্দাহীনা চাকুরিয়া মেয়েদের (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) তো ব্যবহার ভুক্তভোগীরাই ভালো জানেন; বর্ণনার প্রয়োজন নেই। অনেক দেখেছি অনেক ঘর ভাঙছে। তদাপি সুবুদ্ধির উদয় হয় কৈ।

 

        স্বামী বেচারা স্ত্রীর চাকরি আদৌ পছন্দ করেন না, অত্যন্ত নারাজ। কিন্তু স্ত্রীর পিতা-মাতা মেয়েকে দিয়ে চাকুরী করানোর পক্ষপাতী। না হয় মেয়ের স্বাধীন সত্তা প্রকাশ পাবে কি করে? এই স্বাধীনতা দানের পক্ষপাতী হওয়ায় তারা যে দুটি জীবন বিষময় করে তুললেন, শান্তি সুখের নীড় ভেঙ্গে দিলেন সেদিকে লক্ষ্য করলেন না। হায়রে নারী স্বাধীনতা! শরীয়ত সম্মত জ্ঞান না থাকার ফল এই-ই। পুরুষ পদানত নারী-স্বাধীনতা আজকের সমাজে অহরহ দৃশ্যমান। দাম্পত্য জীবনে শান্তি কোথায়? ছেলে হোক, মেয়ে হোক, জামাই বাবাজী হোক বা যে কোনো আত্মীয়-স্বজন হোক, তারা কোন উদ্দেশ্যে কোথাও যখন রওয়ানা হন, তাদের বিদায় জানানোর জরুরত হয়ে পড়ে-না জানালেই নয়। বিদায় ভারাক্রান্ত ব্যক্তির হৃদয়কে সহজ করার উদ্দেশ্যে বাস, ট্রেন-লঞ্চ ইত্যাদি স্টেশন পর্যন্ত অগ্রসর হন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়ির কর্ত্রী ব্যক্তি ও যুবতীগণ। কর্তা ব্যক্তি ও যুবকগণ বাড়িতে থাকেন কোন কোন সময় চোখে পড়ে বিদায় দানকারী পর্দাহীন নারীদের হাতে তসবী থাকে, তসবী পাট বন্ধ নেই। আশ্চর্য এই দৃশ্য, অভিনব এই মহড়া। হাজার হাজার পর পুরুষের দৃষ্টিতে এরা যে ধরা পড়েছেন সে খেয়াল নেই। এই যদি নারী স্বাধীনতার স্বরূপ হয়, তাহলে যথেচ্ছাচার শব্দ কোথায় প্রয়োগ করতে হবে? ছেলে বা পুত্র বধূ বা কন্যার বিদায় লগ্নে যদি এ ধরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হয়, তবে পর্দা করে আসলে দোষ হয় কি? অন্য পক্ষের ললনাদের পরিবর্তে পুরুষরা বিদায় জানাতে স্টেশন পর্যন্ত গেলে পরিবেশটা অত্যন্ত সুন্দর দেখায় এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও রক্ষা পায়। প্রতিটি সংসারের পুরুষ ব্যক্তিদের ইসলামী চেতনার উপর আগে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই জাতীয় অবক্ষয় রোধ করতে হবে। নইলে বিপদের কালো ছায়া অচিরেই নেমে আসবে।

 

        প্রতি বছর পর্যায়ক্রমে মুসলমানদের জীবনে আসে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব আনন্দের ঢেউ। কিন্তু অধর্মের ক্রিক্রমই যেন বেশী পরিলক্ষিত হয় উৎসবগুলিতে। এই সময় মহিলারা বিশেষ করে মুসলিম যুবতীরা ঘরের কোণে আর আবদ্ধ থাকতে চায় না। অধিকাংশ যুবতীদের এলোকেশী অবস্থায় নানা ঢঙে বেপরোয়া নগ্নভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় আনন্দ উপভোগের ও যাতায়াতের দৃশ্য প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তির মনে সততঃ বেদনার সঞ্চার করে। প্রশ্ন জাগে, সাবালিকা মেয়েরা, যুবতী বধু-কন্যারা এরূপ পর্দাহীন এলোমেলোভাবে পবিত্র ঈদের দিনে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে এবং কি করছে তাকি পিতা-মাতা অভিভাবকদের জানার দরকার নেই? সামাজিক শাসন আজ শিথিল কেন? যথাযথ দায়িত্ব পালনে অভিভাবক থেকে সমাজপতিরা যদি নীরব থাকি পরিণাম হবে ভয়াবহ। ধ্বংস থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না আমাদেরকে। অন্যপক্ষে সহস্র রকম পূণ্য কাজ করে বেহেশতের সনদ আশা করলেও সম্ভবত নারীর স্বেচ্ছাচারিতা, পর্দাহীনতা, অনিয়ম ও অনিয়ন্ত্রিত এবং চরম বিবর্জিত আচার আচরনের কারনে আপনার, আমার সকলের সব সাধনা পন্ডশ্রম হবে হয়তো। একটি জাতির ধ্বংস আসে, যুগে যুগে এসেছে নারীর সীমাহীন অবৈধ প্রশ্রয়ের কারণে। সীমিত ব্যক্তিদের আধিক্য প্রদর্শনের ফলে। মানব কল্যাণের দুটি মহা উপহারঃ আল-কোরআন ও আল-হাদীসের আলোকে কি আমরা নারীর স্বাধীনতা দিতে পারি না? দিলে তো সব কূল রক্ষা হয়।

 

        আজকাল এই ধরনের পর্দা প্রথার উদ্ভব ঘটেছে, সেটা হল মেয়েরা শরীরে পর্দা করেন, কিন্তু মুখমন্ডল অনেকেই খোলা রাখেন। প্রশ্নের উত্তরে জানতে পারি, তাদের নিঃশ্বাস বন্ধের উপক্রম হয় নাকি। ধন্যবাদ জবাবের জন্য। আবার স্কুল-কলেজে পড়ে এমন কিছু ছাত্রী নজরের পড়ে, বোরকা দ্বারা তাদের আপাদমস্তক ঢাকা থাকে। অবশ্যই তাদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা বোধ জাগে। তাদের জীবন ধন্য হোক আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করি। বলতে চাই, নারী দেহের আকর্ষণীয় যত দিক আছে, মুখমন্ডল তার মধ্যে অন্যতম এবং কোনক্রমেই এই বিষয়টিকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। যুবক তথা পুরুষ শ্রেণী আকৃষ্ট হয় মেয়েদের মুখ দেখেই তো? এই আলগা মুখকে কেন্দ্র করেই সমাজ-সংসারে যত অঘটন ঘটছে। এই জাতীয় প্রতারণামূলক পর্দার চেয়ে খোলামেলা থাকায় হয়তো ভালো। তাতে বাড়তি পয়সার অপচয় হয় না। কেননা শরীরের অন্যান্য অংশে তো কাপড় থেকেই এবং ইসলামী বিধানকে ও অযথা অবমাননা ও সমালোচনার হাত হতে মুক্ত রাখা যায়। অন্যথায় যা সত্য ও যা করণীয় সেই সঠিক পদ্ধতিকে পুরোপুরি ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। তাতেই মুক্তি ও হৃদয়ের প্রশান্তি।

 

        এ বিশ্বের কোন নারী সে যে ধর্মালম্বী হোক না কেন পর্দাহীন জীবন যাপনে শান্তি লাভ করতে পারেনি। পর্দার গুরুত্ব মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আভাগাউনার একজন নাসারা মহিলা। তিনি চিত্রনায়িকা এবং জগৎ জোড়া খ্যাতি ছিল তার। এ মহিলার পর্যায়ক্রমে চারটি স্বামী ছিল। আভাগাউনার ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার একমাত্র ক্ষেদোক্তি ছিলঃ "মনের মতো মানুষ পেলাম না এ সংসারে" কোটি কোটি মানুষের মনোরঞ্জন করেছেন যেই মহিলাটি, চিত্র দুনিয়ার প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিশ্ব-নন্দিতার সনদ লাভ করেছেন যিনি, মরণ বেলায় কেন তার এ ক্ষোভ? একটি নয়-চারটি স্বামীর সাহচর্য লাভ করেও তার হৃদয়ে প্রশান্তি ছিল কি? সুখ-শান্তির অমিও ধারা বা সূদা কার ভান্ডারে রক্ষিত, কে দিতে পারে? কোন পথে চললে এবং কোন কর্মের মাধ্যমে শান্তি পাওয়া যায়? নিশ্চয়ই খোদায় বিধান লংঘন করার কারণে আভাগাউনারের এ পরিণতি। বিকৃত পরিবেশে বিচরণ, অগণিত লোকের সাহচর্য লাভ করে ও শান্তি ছিল না  অগাধ অর্থ তাকে সুখ দিতে পারেনি। তাই মরন বেলায় তার হৃদয়ের গোপন ব্যথার সত্য প্রকাশ। তার শেষ উক্তি এই শিক্ষাদান করে যে, নারী জীবনের নির্লজ্জ খোলামেলা ও অবাধ চলাফেরা, পুরুষ পদানত মনোভাব, সমস্ত রকম গুন্ডিবহির্ভূত কর্মতৎপরতা, পর্দাহীনতা তাদের জীবনকে বিষময় করে তোলে। এর সংশোধন কোথায়? স্বাধীন সত্ত্বার রুপরেখা কি? আভাগাউনারের স্বাধীকারে কেউ তো হাত দেয়নি। বরং তার কর্মকাণ্ডের জগৎ বাহবা দিয়েছে। তবে কেন এ ক্ষোভ ছিল তার? উলঙ্গ জীবন এরকম হয় জেনেই ইসলাম সীমারেখা তৈরি করেছে। যা পালনের শান্তি এবং অবজ্ঞায় অশান্তি-ধ্বংস। উপলব্ধি ও বিবেক লোপ পেয়েছে তাই নারীর পর্দা বিমুখ স্বাধীনতায় সমাজ বাহবা দিচ্ছে। কোন সাগরে আমরা ভাসমান?

 

        এইডস, একটি সংক্রামক ঘাতক ব্যাধি। এর উৎপত্তি হলো আমেরিকা, যে দেশে নারী পুরুষের অবাধ গতি। মেলা-মেশায় নেই কোনো বৈধ নিয়ম-নীতি, প্রতিবন্ধকতা; জাহেলিয়াত যুগ হার মেনেছে। এক নারীর অনেক পুরুষ এই নারী স্বাধীনতার (?) দেশ আমেরিকায় আজ জাহান্নামের আগুন জ্বলছে। নারী স্বাধীনতারূপী বেহায়াপনা ও নগ্নতার চরম মূল্য দিতে বসেছে সেই দেশের জনগণ। যত্রতত্র নারী-পুরুষের লজ্জাহীন যে অবৈধ মিলন ঘটছে,  তারই পুরস্কার এই এইডস রোগ। (Acquired immuno Deficicncy Syndrome) এক কথায়, অবৈধ মেলামেশা জনিত যৌনাচারের ফলেই এই মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি। এর প্রতিষোধক কোন কিছুই আবিষ্কৃত হয়নি। লক্ষ কোটি মিলিয়ন ডলার এর মোকাবেলা করতে পারছেনা। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির অবধারিত মৃত্যুই একমাত্র সান্তনাজনিত ঔষধ। প্রিয় পাঠকগণ! নির্লজ্জ স্বাধীনতা উপভোগের কারণে এটা যে খোদায়ী গজব এ ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ আছে কি? পর্দাহীন অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার কুফল জনিত ভীতিপ্রদ এই পুরস্কার। আমেরিকা অন্যান্য দেশ সমূহ বিভিন্ন সংস্থায় নারী নিয়োগের কঠোর শর্তের মাধ্যমে (নইলে হয়তো বা সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে) এই রোগ সৃষ্টি করতে মোটেই ত্রুটি করছেনা।

 

        বেশ কয়েকটি দেশের বিরাট সংখ্যক লোক এ রোগে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে এই ভয়ঙ্কর বেদীর আক্রমণ এডানোর ব্যাপারে উচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। নিশ্চয় এদেশের মহিলা 'জরায়ুর' যে স্বাধীনতা চেয়েছেন, এইডস  সম্ভবতঃ তারই পুরুস্কার। পুরুস্কারের মালা তিনিই গ্রহণ করুন এদেশের অন্যরা যেন আল্লাহর রহমতে সুস্থ থাকেন এই কামনা। বিশ্বা-ত্রাস চেঙ্গিস খান, তাঁর উত্তরসূরি হালাকু খানের বর্বরতার চেয়েও মারাত্মক ভয়াবহ এই ঘৃণিত (AIDS) রোগ যাকে হিব (HIB) ভাইরাস বলা হয়। এর কোন ক্ষতি প্রতিষেধক নেই। হ্যাঁ, একমাত্র ইসলামী মূল্যবোধ দ্বারাই মানব বিধ্বংসী এই ভয়াল সংক্রামক রোগ রোধ করা সম্ভব। নারীর নগ্ন স্বাধীনতার বিলুপ্তি সাধন করতে হবে পর্দার মাঝ দিয়েই। প্রয়োজনে তাদের স্বাধীন সত্ত্বা প্রকাশও ঘটাতে হবে এ নিয়মের মধ্যে থেকেই। লেখা পড়া সহ সম্ভাব্য সকল কর্ম সম্পাদনে শরীয়ত সম্মতভাবে কঠোর সংযমী হতে হবে। পর্দার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই উপেক্ষার নয়। এটাকে উপেক্ষার কুফল অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুরু হয়ে গেছে। পর পুরুষ লোভী এমন কোন নোংরা দৃশ্যের অবতারণা করা ললনাদের উচিত হবে না। পক্ষান্তরে পুরুষদেরও পর নারী লোলুপ মনের অসংযত কামনা-বাসনার অবৈধ চিন্তা ধারণা পরিত্যাগ করতে হবে সংযমী হতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ভাইরাস জনিত ভয়াবহ এইডস রোগের আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ এভাবে রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব অন্যথায় এই দরিদ্র দেশ যেভাবে বেহায়াপনা ও পর্দাবিমুখতার দিকে ছুটে চলছে, তাতে ভয় হয়, আগামী ৫০ বছরে আমাদের জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায় কিনা। অমঙ্গলজনক পরানুকরন স্বাধীনতা নয়; ইসলামী চিন্তা-চেতনার মধ্যে মুসলিম নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা নিহিত।

 

        ভক্তির পাত্র মায়ের জাতি নারীদের বিবেক-সাগরে অবগাহন করে ভাবতে হবে যে, তাদের মান-সম্ভ্রম ইজ্জত রক্ষায় পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম; পর্দা কেবলমাত্র সর্বাঙ্গকেই ঢেকে রাখে না, নারী সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে নিঃসন্দেহে এটা সুন্দর ও শালীন আবরণ। এ আবরণের ভিতর থেকেই নারীর বুদ্ধির দীপ্তী বিকশিত হয়। ইসলাম নারীকে খাটো করে দেখে নি। নারী স্বাধীনতা খর্ব করেনি। ইসলামী জ্ঞান বিবর্জিত "তাসলিমা নাসরিনের" মত পন্ডিতরাই (?) নারীদের খাটো করে দেখার ফলেই নারী নির্যাতন আজ সর্বত্র। প্রতিহত যারা করবে, বেহায়াপনা তাদেরকেই  (বখাটেদের) সুযোগ করে দিচ্ছে আক্রমণ করার জন্য। সময় আছে, সুচিন্তার উদয় হোক এই-ই প্রত্যাশা।

 

        পরিশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, নেতৃত্বে আনুগত্য স্বীকার না করা পর্যন্ত ব্যক্তি ও পরিবার থেকে জাতীয় জীবনের কোথাও শান্তি আসতে পারে না। আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত বিধান মেনে চলার বিপক্ষে কোন যুক্তি বা মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। আনুগত্যের ভিতরে নারীর স্বাধীনতা নিহিত, ক্ষুদ্র জ্ঞানের আলোকে একটি উদাহরণ পেশ করছিঃ ধরুন স্বামী বা অভিভাবকের নেতৃত্বের প্রতি যখন একজন নারী আনুগত্য স্বীকার করবে, হৃদয় মন-প্রাণ দিয়ে কর্তাব্যক্তির সকল (ধর্মীয় বাধা ব্যতিরেকে) আদেশ-উপদেশ অবনত মস্তকে মেনে নিবে, তখনই অনুগত আচরণের কারণে স্বামী বা কর্তা ব্যক্তি বা অভিভাবক স্ত্রী বা সে নারীর প্রতি বিশেষভাবে অনুরক্ত হয়ে পড়বে। সঙ্গত কারণেই উভয়ের মধ্যে প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হবে সকল দুঃখ-কষ্ট বিদূরিত শান্তির আবহ তথা খোদার রহমত সংসারে বইতে থাকবে। এখানেই শেষ নয় কোন এক শুভ মুহূর্তে কর্তা ব্যক্তি বা স্বামী বেচারা সংসারের চাবি কাঠি অনুগত স্ত্রী বা সেই নারীর হাতেই তুলে দেবেন। পুরুষ হবে কর্তা, নারী দাসী নয় বরং হবেন সংসারের কর্তী।

 

         একটি সুখময় নীড় রচিত হবে উভয়ের ভালোবাসার মধ্য দিয়ে। আবেগে নয় এটা ওটা ইত্যাদি সংসারে যা কিছু প্রয়োজন স্বামী বেচারীকে বললেই তিনি এনে দেবেন-সাধ্যাঅনুযায়ী সকল সমস্যার সমাধানে অগ্রসর হবেন। বলতে চাই, এরূপ নারীরাই কি স্বাধীন নয়? ইসলামী চেতনা সম্পন্ন যে কোন মর্যাদাশীল ললনাই আমার যুক্তির সমর্থনে এগিয়ে আসবেন সে বিশ্বাস আমার আছে। কারণ, রাসুলে খোদা যে মর্মে নারী স্বাধীনতার রুপরেখা একে গেছেন। একে দিয়ে গেছেন, নারীর স্বাধীনতাই আমার কাম্য। এই রূপরেখা ধরে চললেই মায়ের জাতি ক্ষেত্র বিশেষ পুরুষের সমকক্ষতা অর্জন করতে পারে। যাহোক, ভদ্রোচিত ব্যবহারের মাঝ দিয়ে পুরুষদের নিকট থেকে পর্দাশীল হয়েও পূর্ণ স্বাধীনতার সনদ আদায় করে নিতে পারেন। একটি নয় গোটা নারী সমাজ এভাবেই হতে হবে স্বাধীন। যে কোন কর্মের বা কর্তব্যের প্রয়োজনে স্বামীর অনুমতিক্রমে শরীয়ত সম্মতভাবে বাইরে যেতে পারবে মেয়েরা গোড়ামীর প্রশ্রয় নেই। একেই বলা যেতে পারে নারী স্বাধীনতা এবং এভাবেই সুখী পরিবার, সুখী সমাজ ও নিরাপদে রাষ্ট্র সম্ভব। যথেচ্ছাচারের আশ্রয়ে, পরপুরুষ আকর্ষণীয় নানা রং ঢং বিশিষ্ট নির্লজ্জ পোশাক-পরিচ্ছদের সজ্জিত হয়ে, বেপর্দা জনিত অবস্থায় প্রকাশ্যভাবে যুবতীদের যত্রতত্র যাতায়াত ও ঘোরাফেরার কারনে জাতির দুর্ভাগ্য টেনে আনা বৈ কিছু আশা করা যায় না। চলমান নারী-স্বাধীনতা দুর্দশার ইঙ্গিত বহন করে। অতএব আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টির সার্থকতা রক্ষায়, আগামী দিনের মঙ্গলময় দিক-নির্দেশনার অতীব প্রয়োজন কেবল নারীকে নয় বেলেল্লাপনার আশ্রয়দানকারী সকল পুরুষকে চিন্তার রাজ্যে বিচরণ করতে হবে। নারীদের অবশ্যই সংযত হতে হবে। উভয় জগতের সমস্যা হতে মুক্তির ব্যাপারে এর বিকল্প নেই।

 

        সকল বিতরকের ঊর্ধ্বে এটাই কামনা; মুসলিম রমণীদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী মূল্যবোধের সংযোজন অত্যাবশ্যক। এই সংযোজনটাই প্রকৃত স্বাধীনতা এবং এরূপ স্বাধীনতা উপভোগ রয়েছে আল্লাহর তরফ থেকে অনাবিল শান্তি। ব্যতিক্রমধর্মী যে নোংরা স্বাধীনতা অধিকাংশ মেয়েরা আজকের দিনে ভোগ করছেন, সে কাতার থেকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে। চাকচিক্যময় খারাপ পরিবেশ থেকে সরে আসতে কষ্ট হলেও স্বভাবজাত শত্রুকে পরাজিত করতে হবে-সব বাধা পায়ে দলতে হবে। এখানে জিহাদের প্রশ্ন এসে যায়। জিহাদের বহু স্তর; এখানে ময়দানের জিহাদ নয়। এখানে আত্মাশাসন ও আত্মসংশোধন মূলক 'জিহাদ' বিশেষ প্রয়োজন। আর এই জিহাদের যারা জয়ী হবেন, তারাই স্বাধীন নারী, জাতির গর্ব, সত্যিকার অর্থে তারাই দিতে পারবেন আগামী দিনের উপহার সু-সন্তান।

 

*****