JustPaste.it

সম্পাদকীয়:


 মুসলমানদের অবহেলার সুযোগেই শয়তানের নেতৃত্ব টিকে রয়েছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলনের শিক্ষা

 

        বেশ ক'বছর আগেই একবার এ কলামে লিখেছিলাম যে, "জাতিসংঘ নামক শয়তানের আড্ডাটা এই মুহূর্তেই ভেঙ্গে দেয়া দরকার" কথাটা শুনে সেদিন অনেকেই হয়তো চমকে উঠে থাকবেন। কিন্তু আজ আর আমাদের  এ প্রসঙ্গে বলতে হচ্ছে না। গোটা বিশ্বের প্রতিটি সচেতন মানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে এ শয়তানের আড্ডাটি ভেঙ্গে দেয়ার বাণী।
       শয়তানের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির কৌতুহল জাগলো, সে এক বড় শয়তানের কাছে জানতে চায় যে, তোমরা এত অনাচার পাপ-পঙ্কিলতা, অন্যায়, দুষ্কর্ম আর শয়তানী কর কিভাবে? এতে তোমাদের কি পরিমান মেধা, শক্তি ও সম্পদ ব্যয় হয়? তোমাদের কি ক্লান্তিও আসেনা? বৃদ্ধ শয়তান জবাবে বললঃ শোন হে মানুষ্য ভাই এত বোকা আমরা নই  আমরা কাজ করি সূক্ষ্মভাবে। কম কষ্টে, স্বল্প ব্যয়ে আর মিহি কৌশলে। লোকটি বললঃ আমায় কি দেখাবে তোমার কোন একটি শয়তানী? বললো শয়তানঃ সামনের রেস্তোরায়। রেস্তোরায় গিয়ে মিষ্টির খাঞ্চা থেকে একটু রস হাতে নিয়ে লাগিয়ে দিল দেওয়ালের এক কোণে। লোকটিকে বলল-তুমি ঘন্টা দুই এখানে বসে অবস্থাটি পর্যবেক্ষণ করো। আমি আশে পাশেই আছি আমার কাজ কিন্তু এ পর্যন্তই শেষ। পরবর্তী সব কিছু নিজ থেকেই ঘটে চলবে। শয়তান চলে গেল। লোকটি পাশের একটি দেয়ালে চড়ে বসে রইলো।
        মিষ্টির রসে কয়েকটি মাছি বসেছে। একটি বিড়াল মাছি গুলোকে তাক করে থেকে- থেকে থাবা বসাচ্ছে। পাশে শুয়েছিল একটি কুকুর। বিড়ালটির আনন্দ আর তৎপরতা দেখে সে ক্ষেপে উঠলো। দিলো কষে এক ধমক। সাথে দুটো থাপ্পড়। বিড়ালের মালিক রেস্তোরা ওয়ালা লাঠি নিয়ে এসে কুকুরটিকে লাগালো এক চোট। কুকুরটি পা গেলো ভেঙ্গে। কুকুরের চিৎকার আর কাতরানি শুনে ছুটে এলো পাশের গ্যারেজ ওয়ালা। ইতর একটি প্রাণীর উপর এমন জুলুম সে সইবে কেন? কথায় কথায় এল বিড়ালের দুঃখের কথা। বিড়াল ও জখম হয়েছে। কুকুরের মার খেয়ে। উত্তপ্ত দুপুরে রাগারাগির এক মারাত্মক পর্যায়ে গ্যারেজ শ্রমিকদের আক্রমণে নিহত হলো হোটেল মালিক। মারাত্মক আহত গ্যারেজ ওয়ালা  আশঙ্কাজনক অবস্থা ১৮ জনের। গোটা এলাকায় দোকান পাট বন্ধ। থানা পুলিশ হরতাল আন্দোলন। আরো অনেক কর্মসূচি। বুড়ো শয়তান দূরে দাড়িয়ে একটু হাসল। কৌতুহলী মানুষটির পরিস্থিতি দেখার শখ মিটে গেছে। সে আর কোন কথা না বাড়িয়ে নিজের পথ ধরল।
       এ কিসসা দীর্ঘ দিন আগের শোনা। কিন্তু সম্পাদকীয়ের ন্যায় ভাব-গম্ভীর কলামে এর উল্লেখ নতি সম্মত নয় জেনেও এ অপরাধ করতে হয়েছে কেবল শয়তানের কর্মকৌশল বোঝানোর জন্য। শয়তান শুধু রস লাগিয়েই দূরে সরে দাঁড়ায়। আর ক্রোধ, ঘৃণা অপ্রেম ও বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা নামক অস্ত্রগুলো প্রয়োগ করে ঘটনা এগিয়ে নিয়ে যায় মানুষ। মানুষের শিরা উপশিরার রক্তের প্রবাহে মিশে শয়তান তার কাজ করিয়ে নেয়।
       জাতিসংঘ তার চিরাচরিত অভ্যাস ও কর্মকৌশল অনুযায়ী গত ৫-১৩ ই সেপ্টেম্বর মিশরের রাজধানী কায়রোয় এক সম্মেলন ডেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে, পৃথিবী জুড়ে একটি জগত নির্মাণের "রস" লাগানোর কাজটি প্রায় সেরেই ফেলেছিল। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানী, মুসলিম বিশ্বের সচেতন আলেম, ওলামা, মুফতী ও চিন্তাবিদগণ এ চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেন। অনাচারের প্রতিবাদে এগিয়ে আসে খ্রিষ্টজগতের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ভ্যাটিকান নগরীর নেতৃবৃন্দ। অপরাপর ধর্মে বিশ্বাসী সভ্যতার সত্যাপ্রিয় মানুষ। মিশরের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র আল-আযহারের আলেমগণ, মক্কার আন্তর্জাতিক সংস্থা রাবেতা আলমে ইসলামী, রিয়াদের বিশ্ব মুসলিম যুব সংস্থা ইত্যাদি। জাতিসংঘের কুপ্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রচার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
       ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রতিবাদ ও সতর্কীকরণের দ্বারা গোটা মুসলিম বিশ্ব বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করে। ওআইসি ভুক্ত দেশগুলোতে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সৌদি-আরব, লেবানন, সুদানসহ কিছু সংখ্যক দেশ সম্মেলন বয়কট করে। মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ ইত্যাদি কতিপয় দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা এতে উপস্থিত না হয়ে সরকারী প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। ইরান, কুয়েত, পাকিস্তান সহ অন্যান্য অনেক দেশই সম্মেলনে যোগ দিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন। এক কথায় মুসলিম বিশ্বের ভূমিকা ছিল অসংলগ্নতা পূর্ণ। এক উম্মাহর অংশ হিসেবে তার কন্ঠ অভিন্ন হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু শয়তানের সাথে মিত্রতা ও বন্ধুত্বের দরুন আজ আর এই আশা করা যায়না।
      জাতিসংঘের অন্যতম পরিচালক, পাকিস্তানের নাগরিক ডাক্তার নাফিস সাদিকের ব্যবস্থাপনায় জাতিসংঘ "জনসংখ্যা ও উন্নয়ন" শীর্ষক এ সম্মেলনের প্রস্তাবাবলীর সারসংক্ষেপ ছিল এইঃ সারা বিশ্ব গর্ভপাত ও ভ্রুণ হত্যাকে আইন করে বন্ধ করা। সকল নারী পুরুষকে বিয়ে ছাড়া অবাধ যৌন মিলনের অধিকার প্রদান। ছেলের সাথে ছেলে, মেয়ের সাথে মেয়ে বিয়ে বিধিসম্মত করা। শিশু-কিশোরদের জন্য যৌনতার পথ উন্মুক্ত করা। বিশেষত ১৩ থেকে ১৮ বছরের কিশোর কিশোরীদের যৌনচর্চার ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ, সংস্থা ও রাষ্ট্রের সহযোগীতা প্রদান। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের নাগালের অতি কাছে গর্ভনিরোধ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করে পৃথিবীর জনসংখ্যা ও উন্নয়ন পরিস্থিতির উন্নতি বিধান করা।
       বিনা প্রতিবাদ ও বিনা বাধায় যদি জাতিসংঘের এ সম্মেলন সফল হয়ে যেত তাহলে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে গোটা পৃথিবী বাধ্য হয়ে পড়তো। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত কেউ না মানলে তার ওপর নেমে আসত বাণিজ্যিক অবরোধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, এমনকি সামরিক অভিযানের হুমকি। আমাদের মত গরীব মুসলিম দেশগুলো পড়তো বেশী বিপদে। অর্থ সাহায্য, ঋণ সহযোগীতা ও অর্থায়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেত।
        শক্তিশালী প্রতিবাদ ও মতভেদের দরুন সম্মেলনটির মূল উদ্দেশ্য সফল হয়নি বটে তবে, এর স্বপক্ষে একটি লম্পট শ্রেণীর প্রচারকার্য এগিয়ে চলছে। ওরা এখনো যৌনতার একটি বিশ্ব-বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রতীক্ষায় রয়েছে। সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এসব চাপিয়ে দিতে না পারলেও বিশ্বব্যাপী এনজিওদের মাধ্যমে এরা এ পাশবিক রীতি-পদ্বতির ধীর বিকাশে লিপ্ত। একশ্রেণীর সংবাদপত্র এ উদ্দেশ্যে কাজ করছে বিনিময়ে পাচ্ছে বিদেশি টাকা।
       জাতিসংঘের এবারকার সম্মেলনের ব্যবস্থা ছিল তার অতীত জীবনের সকল পাপের তুলনায় বড় পাপ। এ সময়ও যখন মুসলিম ও সভ্য পৃথিবী এর মোড়লিপনা অস্বিকার করে পৃথক কোন ফোরাম গঠনের চিন্তা করতে সক্ষম হয়নি। তখন আর ইঙ্গ-মার্কিন সম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তির আশু কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য এই সুযোগে একটা স্বতন্ত্র চিন্তা করার অবকাশ ছিল। ছিল যৌক্তিক অনুমোদন।
       অন্ততঃ অর্ধশতাধিক মুসলিম রাষ্ট্র মিলে একটি মিনি জাতিসংঘ খাড়া করতে পারতো। ধর্মীয় নৈতিক ও সংস্কৃতি বিষয়ে তারা এখানেই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ শাসকরাই এখন মনে প্রানে রীতি নীতিতে ইহুদী-খ্রিস্টানদের অন্ধ অনুসারী। কাফের মুশরিকদের তৈরি ব্যবস্থা ও পদ্ধতিতে তারা দেশ পরিচালনা করে থাকে। ছোট বড় সকল সমস্যা সমস্যা ওদের দেয়া সমাধানকেই হৃষ্ট চিত্তে গ্রহণ করে। অতএব এদের শাসনামলে কোন সুন্দর চিন্তার বাস্তবায়ন আশা করা বৃথা।
      পৃথিবীর সকল দেশে কোরআন সুন্নাহর শাসন কায়েমের সংগ্রামে নিবেদিত মুজাহিদদের বিজয় ছাড়া মানবতার মুক্তি নেই। দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তির জন্য ইসলামের বিজয় অনিবার্য। কেননা আল্লাহর হুকুম মেনে চলা আর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকার অনুসরণেই বিশ্বমানবের শান্তি ও কামিয়াবী। আর এভাবেই শয়তানের আড্ডা গুলো ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব।