JustPaste.it

বসনিয়ার মুসলমানদের আহবানঃ

 

খাদ্য নয় অস্ত্র চাই

==================================================

 

        কমাণ্ডার আবু আব্দুল আজীজ বর্তমানে বসনিয়ার মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে জিহাদ ফি সাবিলিল্লায় লিপ্ত একজন মুজাহিদ কমাণ্ডার। এর আগে তিনি আফগানিস্তানে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে বারত্বের সাথে লড়াই করেছেন। ইসলামের দুশমনরা তার নাম শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ত। বর্তমানে সার্ব শয়তানদের কাছে তিনি সাক্ষাৎ মৃত্যু দূত হিসেবে বিবেচিত। বসনিয়ার রণাঙ্গণে এই বীর কেশরীর দীপ্ত পদচারণায় সার্ব যোদ্ধাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা এই মুজাহিদ কমাণ্ডারের রক্তপিপাসু হয়েছে এবং তাঁকে ধরার জন্য বিপুলু পরিমাণ অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

 

       এই বীর মুজাহিদের বীরত্ব ও জিহাদী জজবার কাহিনী আজ বসনিয়ার সর্বত্র মুখরোচক আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছে। তিনি কোন দেশের নাগরিক তা জানা সম্ভব হয়নি। কেননা, তিনি সর্বত্র এই পরিচয় দেন যে, আমার দেশ মুসলিম অধ্যুষিত এবং আমার পরিচয় মুসলমান, আমার জন্য কোন ভৌগোলিক সীমারেখা গুরুত্ব রাখে না। সম্প্রতি তিনি বসনীয় মুসলমানদের দুর্দশা বিশ্ব মুসলমানদের জানানোর জন্য এবং তাদের এই মজলুমদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন মুসলিমদেশ সফরে বের হয়েছেন। এ সময় তিনি বিখ্যাত আরবী দৈনিক ‘আশ-শকর-এর’ সাথে এক সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। আমরা এখানে তার অনুবাদ তুলে ধরছিঃ

 

       প্রশ্নঃ আপনার দেশ কোথায় এবং বসনিয়ায় কিভাবে গেলেন? বর্তমানে সেখানে কি করছেন?

 

       উত্তরঃ সর্ব প্রথমে আল্লাহ রাবুল আলামীনের শোকর এবং নবী করিম(সাঃ) -এর ওপর দরুদ ও সালাম। আমার পরিচয় আমি মুসলমান। এর ওপর কোন ভৌগোলিক বা ভাষাগত জাতীয়তায় আমি সীমাবদ্ধ হতে রাজি নই। আবু আব্দুল আজীজ নামইে আমি পরিচিত। (গোপনীয়তার স্বার্থে আসল নাম প্রকাশ করা হয়নি) বয়স ৫০ বছর। বিবাহিত এরং আলহামদুলিল্লাহ, নয় সন্তানের জনক। আমার দেশ ইসলামী জগত এবং এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে আল্লাহু আকবর আওয়াজ জারী হবে সেখানেই আমার মনের অবস্থান। আর মজলুম মুসলমানরা আমার দেহের অংশ। তাদের সমস্যাই আমার সমস্যা। আমার জন্য দুর্বল মুসলমানদের সাহায্য করা ফরজ। অতএব যেখানেই প্রয়োজন হয় আমি তাদের সাহায্যের জন্য পৌঁছে যেতে চেষ্টা করি। ১৯৯২ সালে ঈদুল ফিতরের পর যখন বসনিয়ার মুসলমানদের করুণ অবস্থা পত্র-পত্রিকায় আসতে শুরু করে তখন থেকেই সেই ব্যাপারে তথ্য সগ্রহ করতে শুরু করি। প্রথমে মনে করেছিলাম যে, এই দেশ আমেরিকার দক্ষিণে কোথাও হবে। পরে জানলাম, এটি প্রধানত যুগোশ্লাভিয়ার অংশ।

 

       এরপর বসনিয়ার ইতিহাস, ভূগোল বিষয়ক তত্ত্ব সংগ্রহ করে জানতে পারলাম এ বসনিয়া সাবেক ওসমানীয়া খেলাফতের অংশ। কয়েকশ বছর যাবৎ এ দেশে মুসলিম শাসন চলেছে। ইউরোপের অংশ হয়েও সেখানকার কৃষ্টি, কালচার সবকিছুই মুসলমানদের অনুরূপ ছিল। পরবর্তীকালে সাবীয়ানরা এদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে সমগ্র বসনিয়াকে দখল করে নেয়। ইসলাম এবং মুসলমানদের নাম-নিশানা মুছে ফেলার জন্য তারা কোন প্রচেষ্টাই বাদ দেয়নি। এদের কৃষ্টি, কালচার পরিবর্তন করেছে; আচার-আচরণ,আদব-কায়দাকে পাল্টে দিয়ে সার্বিকভাবে ইউরোপীয়ান বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু এরপরও মানসিকভাবে তারা মুসলমানই থেকে গেছে। সার্বদের হাজারো অপচেষ্টাও তাদের ঈমানকে ধ্বংস করতে পারেনি। আফগান জিহাদ দুনিয়ার মজলুম জনগোষ্ঠীর নিকট কমুনিজমের মুখোশ খুলে দেয়। দিকে দিকে রাশিয়ার মাতুব্বারির বিরদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। রুশ সাম্রাজ্য ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায় এবং এর প্রভাবে যুগোশ্লাভিয়াও ভেঙ্গে ছয় টকুরোয় পরিণত হয়। জন্ম নেয় বসনিয়া-হার্জেগোভিনা নামে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রটির।

 

       প্রশ্নঃ বহিরাগতভাবে আপনি কি একা বসনিয়ায় জিহাদ করছেন? সেখানে আপনার অবস্থান সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।

 

       উত্তরঃ আমার সাথে আফগান জিহাদে অংশগ্রহণকারী কিছু বহিরাগত মুজাহিদও বসনিয়ায় গিয়েছেন। তাঁদের সাথে নিয়ে প্রথমে আমরা বসনিয়ায় যুবকদের জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর দাওয়াত ও ট্রেনিং দেই। বসনিয়ার বর্তমান অবস্থা খুবই করুন। সেখানের জুলুম নির্যাতনের পত্র-পত্রিকায় শত ভাগের এক ভাগও প্রকাশিত হয় না। সার্বরা বসনীয় মুসলিম শিশুদের মায়ের সামনেই জবাই করে। জীবিত শিশুদের অঙ্গ দেহে থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যায়। ছেলের সামনে মায়ের, ভাইয়ের সামনে বোনের, স্বামীর সামনে স্ত্রীর ইজ্জত হরণ করে। যুবকদের প্রকাশ্যে জবাই করে, কাউকেবা জীবন্ত দাফন দিয়ে দেয়। জনসাধারণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য বন্দী মুসলমানদের রশি দিয়ে গাড়ির পেছনে বেঁধে হেঁচড়ে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু এত নির্যাতনের পরও মুসলমানরা জিহাদ অব্যাহত রেখেছে, তারা ভীত হওয়ার বদলে দিন দিন ঈমানী জজবায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

 

       প্রশ্নঃ আপনি সেখানে কীভাবে জিহাদী তৎপরতা শুরু করলেন?

 

       উত্তরঃ প্রথমে আমরা বসনীয়দের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল বসনিয়ার লোকদের দ্বীন সম্পর্কে তেমন স্বচ্ছ ধারণা না থাকা। তারা ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে কিছুই জানত না। জিহাদ বা ইসলামে শাহাদাতের যে সীমাহীন মর্যাদা রয়েছে সে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই ছিল না। আলহামদুলিল্লাহ, আফগান থেকে আসা মুজাহিদদের চেষ্টার ফলে তারা ইসলাম ও জিহাদ সম্পর্কে জেনেছে। শাহাদাতের তীব্র আকাঙ্খায় তারা সার্ব আগ্রাসনের মোকাবিলা করে অসংখ্য বীরত্বপূর্ণ কাহিনীর জন্ম দিচ্ছে।

 

       ধর্ম সম্পর্কে তাদের এই অজ্ঞতার জন্য তাদের কোন দোষ দেয়া যায় না। সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর যাবৎ কমুনিষ্ট শাসনের ফলে তারা ধর্ম সম্পর্কে কোন শিক্ষা লাভ করতে পারেনি। তখন অবস্থা এমন ছিল যে, কোন বাপ যদি তার মেয়েকে অমুসলমানদের সাথে মিশতে নিষেধ করতো তবে প্রশাসন তাকে যুগোশ্লাভীয় ঐক্যের বিরোধী তৎপরতা এবং সাম্প্রদায়িক আচরণের অভিযোগ জেলে পাঠাত। বাপ তার ছেলেকে মদ খেতে নিষেধ করলে দণ্ড পেতে হতো। এজন্য আমাদের একই সাথে কয়েক ময়দানে লড়তে হয়েছে। একদিকে বসনিয়দের ধর্মীয় শিক্ষা ও জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা এবং অন্যদিকে সার্বদের বরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই।

 

       প্রশ্নঃ কোন সাফল্য অর্জন করতে পরেছেন কি?

 

       উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ আমাদের চেষ্টা সাধনার সুফল ফলেছে। বসনীয় মুসলমানরা সার্বদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ এবং তা মনে চলার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছে। আমরা তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পেরেছি। অন্যদিকে সামাজিক বিজয়ও অর্জন করেছি। সার্বদের সাথে আমাদের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ ঘটেছে তাতে আমরা সার্বদের পরাস্ত করেছি। যুদ্ধে আমাদের আটজন বহিরাগত মুজাহিদ শহীদ হন। অন্য এক লড়াইয়ে শহীদ হন তিনজন। বর্তমানে আমরা এখানে নিয়মিত মুজাহিদ বাহিনী গড়ে তুলেছি। বহিরাগত মুজাহিদরা বিনা জাতিভেদে সকলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই কমাণ্ডের অধীনে লড়াই করে যাচ্ছে। আমাদের অবস্থান স্থানীয় মুসলমানদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

       প্রশ্নঃ মুসলিম ফৌজদের নেতৃত্ব কে দিচ্ছে?

 

       উত্তরঃ মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর বর্তমান সেনানায়ক মাহমুদ কারমেশ। তিনি মদীনা ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে বসনিয়ার এক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন এবং এর পাশাপাশি সারাজোভোর এক মসজিদের ইমামতি করতেন। এই কমাণ্ডের অধীনে অনেক ব্যাটালিয়ান রয়েছে। প্রতি ব্যাটালিয়ান এক থেকে দেড়শ মুজাহিদ নিয়ে গঠিত। এদের মধ্য থেকে মিলিটারী পুলিশ বানিহীও গঠন করা হয়েছে। এরা মুজাহিদদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখে। কেউ ধর্মীয় রীতি-নীতির পরিপন্থী কাজ করলে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়। এই বাহিনী বসনিয়ার মুসলমানদের মন জয় করেছে এবং তাদের সকল আশা-আকাঙ্খা এদের ভিত্তি করেই গড়ে ওঠেছে।

 

       প্রশ্নঃ আপনাদের একটি কঠিনতম লড়াই সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।

 

       উত্তরঃ সবচেয়ে কঠিনতম লড়াই হয়েছে জেকো শহরে। এই লড়াইয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মুজাহিদ অংশ নেয়। আল্লাহর সাহায্য ও সুদৃঢ় প্রতিরক্ষার ফলে সার্বরা পরাজিত হয়। সারাজেভো শহর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার তাদের আকাঙ্খা সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ হয় এই পরাজয়ে। এই যুদ্ধে দুশো সার্ব নিহত হয়। এবং অসংখ্য ঘাঁটি ধ্বংস হয়। পক্ষান্তরে আমাদের মাত্র ৮ জন সাথী শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন।

 

       প্রশ্নঃ সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল মুসলিম বাহিনী কীভাবে সার্বিয়ান নিয়মিত বাহিনীরসাথে লড়াই করে টিকে আছে? তাদের প্রশিক্ষণের জন্য আপনারা কি ব্যবস্থা গ্রহ করেছেন?

 

       উত্তরঃ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ফলে সেখানে ভারী বা মাঝারি ধরনের কোন অস্ত্র পৌছতে পারছে না। এজন্যে আমাদের হালকা অস্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করেছি। সেখানে ১৫ দিনের কোর্স হয়। এ সময় যুবকদের জিহাদী জজবায় উদ্বুদ্ধ করার সাথে সাথে ক্লাসিকোভ, হ্যাণ্ড গ্রেনেড ও অন্যান্য হালকা অস্ত্রের ট্রেনিং দেয়া হয়। রণাঙ্গণে যাবার সময় তাদের প্রত্যেককে ক্লাসিনকোভ ও প্রয়োজনীয় গুলী দেয়া হয়। বর্তমানে ত্রিশটি দেশের মুসলিম যুবকেরা এই ক্যাম্পে ট্রেনিং নিয়ে স্থানীয়দের পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের সাহস বৃদ্ধি পাচ্ছে, তারা আর নিজেদেরকে একা ভাবছে না, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে মন করছে।

 

       প্রশ্নঃ বসনীয় সার্ব এবং ক্রোটরা মুসলমানদের কিভাবে মূল্যায়ন করে?

 

       উত্তরঃ সার্বরা অর্থোড্রক্স খৃস্টান, তাদের পাদ্রীরা শিক্ষা দিয়েছে যে, তাদের ধর্মে বিশ্বাসী ছাড়া আর কারো দুনিয়ায় বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এজন্য প্রথমে ক্যাথলিক ক্রোটদের সাথে তাদের বিরোধ বাঁধে। পরবর্তীকালে সকল খৃষ্টান রাষ্ট্রনায়কেরা তাদের মধ্যে সমঝােতা চুক্তি স্বাক্ষর করিয়ে উভয়কেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। ক্রোটদের সম্পর্কে ধারণা যে, তারা মুসলমানদের বন্ধু। এটা সম্পূর্ণ ভুল এবং ক্রোটদের প্রচারণা তারা সার্বদের মতই মুসলমানদের অবজ্ঞা করে। এবং সুযোগ পেলে পদদলিত করে রাখার মওকা হাতছাড়া করে না। এ সম্পর্কে একটি ঘটনা বলছিঃ একবার আমাদের ক্যাম্পের কাছে একটা পেট্রোল পাম্পে তেল ভরা নিয়ে এক ক্রোট ও এক মুসলমানের মধ্যে ঝগড়া বাঁধে। মুসলমান আগে এসে তেল ভরতে শুরু করলে ক্রোট তাকে বাধা দেয়, তার দাবি সে পরে আসলেও খৃষ্টান হওয়ার কারণে তাকে আগে তেল ভরাতে দিতে হবে।

 

       এ নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং ক্রোট মুসলমানকে হত্যা করে। এ খবর মুসলমানদের কাছে পৌঁছতেই তারা ক্রোটদের সকল পথ বন্ধ করে দিয়ে তাদের ক্যাম্পের ওপর হামলা চালায়। এ লড়াইয়ে ১৮০ জন ক্রোট মারা যায়, মুসলমানদের মধ্যে শহীদ হয় ২০ জন। যুদ্ধে আমার মত লম্বা দাড়িওয়ালা একজন মুসলমান ক্রোটদের হাতে বন্দী হন। তারা মনে করে আবু আবব্দুল আজীজ গ্রেফতার হয়েছে এই আনন্দে তারা মিষ্টি বিতরণ করে। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে তারা ভুল বুঝতে পেরে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে আমাকে গ্রেফতার বা, হত্যাকারীকে এক লাখ ডলার পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করে। বসনিয়া থেকে বের হওয়ার জন্য আমার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আলহামদুলিল্লাহ তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আমি বাইরে এসেছি। আমরা আভ্যন্তরীণ কোন লড়াইয়ে অংশ নিই না। এ যুদ্ধে স্থানীয়রা অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও সকল পত্র-পত্রিকা ফলাও করে প্রকাশ করে যে, আরবরা অংশ নেয়ায় মুসলমানরা ক্রোটদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করছে।

 

       প্রশ্নঃ আন্তর্জাতিক সকল প্রচার মিডিয়া সার্বদের ক্রমাগত বিজয়ের খবর প্রচার করে, এর সত্যতা সম্পর্কে মন্তব্য করুন।

 

       উত্তরঃ ইহুদী-খৃস্টানদের নিয়ন্ত্রিত কোন কোন পত্রিকা একমাত্র সারাজেভো ব্যতীত আর সকল শহর সার্বদের নিয়ন্ত্রণে বলে প্রচার করছে। মূলতঃ এরা সার্বদের মিথ্যা প্রচারণার এজেন্সী নিয়েছে। সেব্রোনিয়াসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ শহর এখনো মুসলমানরা নিয়ন্ত্রণ করছে।

 

           প্রশ্নঃ বসনিয়ার কত অংশ সার্বদের দখলে আর কত অংশ মুসলমানদের দখলে?

 

       উত্তরঃ বসনিয়ার এক-তৃতীয়াংশ মাত্র সার্বরা নিয়ন্ত্রণ করছে। এক ভাগ ক্রোটদের দখলে ও বাকী অশং মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে।

 

         প্রশ্নঃ আপনার এ সফরের উদ্দেশ্যসম্পর্কে মন্তব্য করুন।

 

       উত্তরঃ আমি মুসলিম বিশ্বে সফরের জন্য বের হয়েছি। আমি মুসলিম বিশ্বের কাছে বসনিয়ার মুসমানদের নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরতে চাই। মা-বোনদের পক্ষ থেকে তাদের সাহায্যের পয়গাম পৌছে দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে আমি এ সফরে এসেছি। মুসলিম রাষ্ট্রনায়কদের বসনিয়ায় অস্ত্র সাহায্য প্রদানের দায়িত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়া আমার সফরের মূল উদ্দেশ্য। আমি তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে এসেছি যে, বসনিয়ার মুসলামনদের রক্ষার জন্য তারা পাশচাত্য ও জাতিসংঘের ওপর দায়িত্ব গছিয়ে দিয়ে ভুল করছে। পাশ্চাত্য বা জাতিসংঘ ইহুদী-খৃষ্টানদের রক্ষা করবে। মুসলমানদের নয়। তাইতো সার্বিয়া ও ক্রোশিয়ায় প্রচুর মুসলমান থাকা সত্ত্বেও সেখানে নির্ভেজাল খৃষ্টান সরকার মেনে নিয়েছে কিন্তু বসনিয়ার সংখাগরিষ্ঠ মুসলিম সরকারকে তারা মানতে নারাজ।

 

       ইউরোপের বুকে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের মানচিত্র তারা বরদাস্ত করতে পারছে না। আমি তাদের জানাতে এসেছি যে, তারা যখন জাতিসংঘের পানে তাকিয়ে আছে, তখন প্রতিদিন সারজেভো নগরীর ওপর পাঁচশো মর্টার, কামান ও ট্যাঙ্ক অবিরাম গোলা বর্ষণ করে চলেছে। এই গোলা বারুদে সে শহর ধ্বংস্তুপে পরিনত হচ্ছে। আহত ও গৃহহীন লোকদের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। মিনি কেয়ামত চলছে বসনিয়ার সর্বত্র। অথচ জাতিসংঘ তা দেখতে পায় না।

 

       প্রশ্নঃ পত্রিকার খবরে প্রকাশ জাতসংঘের সৈন্যরাও বন্দী মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করছে। কীভাবে তারা এ গর্হিত অপরাধ করার সাহস পেল? এর সত্যতা। সম্পর্কে বলুন।

 

       উত্তরঃ জাতিসংঘই যখন এ অপরাধের কথা স্বীকার করেছে তখন এর সত্যতা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। তারা মনে করেছে, এই মজলুম মহিলাদের ফরিয়াদ কে শুনবে? কে এদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে? জাতিসংঘের সৈন্যরা মুসলমানদের রক্ষার ধুঁয়া তুলে সার্বদের রক্ষা করার জন্যই বসনিয়ায় এসছে।

 

       প্রশ্নঃ আমরা শুনেছি, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ মুসলমান হিযরত করে চলে গেছে। বর্তমানে বসনিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যা কত।

 

       উত্তরঃ সাত লাখ মুসলমান হিজরত করে চলে গেছেন, যাঁদের অধিকাংশ শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। যুবকেরা হিজরতের পরিবর্তে দেশে থেকে লড়াই করাকে শ্রেয় মনে করছেন। তাছাড়া সরকার যুবকদের দেশত্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

 

       প্রশ্নঃ মুসলিমদেশের সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর দেয়া সাহায্য সামগ্রী কি পর্যাপ্ত?

 

       উত্তরঃ মোটেই না। এর চেয়ে খৃষ্টান এনজিওগুলো খৃষ্টান সার্ব-ক্রোটদের বহুগুণ বেশী সাহায্য সামগ্রী প্রদান করছে। সেবার ছদ্মবেশে এসব এনজিও পঁচিশ হাজার মুসলিম শিশুকে বিভিন্ন দেশে নিয়ে গিয়ে খৃস্টান করে গড়ে তুলছে। এসব শিশুদের মায়েরাও জানেন না যে, তাদের সন্তানেরা কোথায় আছে। সন্তানকে বাঁচানোর স্বার্থে বাধ্য হয়ে অভাগা ময়েরা যে কেউ এসে শিশুদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে তাদের হাতে তার সন্তানদের তুলে দিচ্ছে। অথচ কেউ নেই খৃষ্টানদের খপ্পর থেকে এসব শিশুদের রক্ষা করার। এ ব্যাপারে একবার আমি বসনিয়ার প্রেসিডেন্ট আলীজা ইজ্জত বেগের সাথে কথা বলছিলাম। তিনি জবাবে বলেন, “তোমার কাছে কি কোন সমাধান আছে? যদি কোন মুসলিম সরকার বা সাহায্য সংস্থা তাদের দায়িত্ব নেয় তবে আমরা তাদের উদ্ধারের সংস্থাসমূহে চাপ দেব।” এরপর তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “যে শিশুরা এখান থেকে চলে গেছে তাদের কথা বাদ দিয়ে যারা এখনও রয়ে গেছে তাদের কথা ভাবো। তারা বাচ্চাদের লালন পালন করবে কি করে? এ অবস্থায় কি তাদের চিন্তার অবকাশ আছে যে, তার সন্তান খৃষ্টান হবে না মুসলমান হবে? অথচ ভবিষ্যতে এই শিশুরা খৃষ্টানদের কাতারে সামিল হয়ে আমাদেরই বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

 

       প্রশ্নঃ বিশ্ব মুসলিম যুবকদের প্রতি আপনার কোন পয়গাম আছে কি?

 

       উত্তরঃ আমাদের দ্বীনি ভাইদের এই কঠিন বিপদের দিনে প্রত্যেক মুসলিম নওজোয়ানের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া ফরজ। এখানের লড়াই আমাদের ঈমানী লড়াই। মিথ্যা ও বাতিলের বিরুদ্ধে সত্য ও ইনসাফের লড়াই। ক্রুসের সাথে ইসলামের লড়াই। সমগ্র খৃষ্ট জগত সার্বিয়ানদের মদদ যোগাচ্ছে ইউরোপ থেকে মুসলমানদের উৎখাত করার জন্য। সুতরাং আমাদের ঈমানী ভাইদেরও এখন একান্ত কর্তব্য বসনিয়ান ভাইদের সব রকমের সাহায্য প্রদান করা। যাতে তারা খৃষ্টান জগতের চ্যালেঞ্জ ও বাতিল শক্তির ঐদ্ধত্য চূর্ণ করে ইউরোপের বুকে টিকে থাকতে পারে।

 

অনুবাদঃ ফারুক হাসান

 

 

*****