JustPaste.it

সম্প্রদায়িকতা

ভারতকে কোন পথে ঠেলে দিচ্ছে -আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

==============================================================

        একটি মসজিদের শাহাদাত: অব্যক্ত বেদনায় গুমড়ে কাঁদছে এককালের ভারতের দুর্দন্ড প্রতাপশালী, মর্দেমুজাহিদ' মোগল সম্রাট বাবর এর পবিত্র আত্মা। তার শান্তির নীড় ভেঙ্গে গেছে ভারতের উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার গজিয়ে ওঠা শিং এর হিংস্র আঘাতে! ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাবরি মসজিদের আর্তনাদে! বিশ্বের মর্মাহত কোটি কোটি মুসলমানের বেদনায় তিনিও হয়েছেন বেদনার্ত। উগ্র হিন্দুদের মাসজিদের উপর কুঠারর শাবল চালানো আগাত তাঁর হৃদয়কেও করেছে বিদীর্ণ। পশুর মত হিংস্র মানুষগুলো অপবিত্র পাদুকা দারা দলিত করে পবিত্র মসজিদগাহ অপবিত্র কারণে তার প্রাণ হাহাকার করছে! বাবরি মসজিদের অস্তিত্বকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ার তার আত্মা আজ শোকাহত।

          বাবরি মসজিদ ইট-পাথর চুন-সুরকির নির্মিত নিছক কোন এমারত নয়! বিশ্বের লাখো মসজিদের নেয় এই মসজিদের সাথেও মুসলিম জাতির ঈমান ইজ্জত বীরত্ব ও গৌরবময় ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে। এই পবিত্র ঘরের মাধ্যমেই বান্দা তার পরম করুণাময়ের সঙ্গ লাভ করে। এই ঘর মুসলিম জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক! এই ঘর আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অক্লান্ত পরিশ্রমের উপঢৌকন! মুসলিম জাতির উত্থান পতনের সুস্পষ্ট নিদর্শন বদর ওহুদ যুদ্ধের ফলাফল এই পবিত্র ঘর! যাদের পদভারে এককালে এই পৃথিবী থরথর করে কম্পমান হতো সেই ওমর খালিদ তারিক কাসিমের উত্তরসূরিরা যুগে যুগে এই পবিত্র ঘরে সিজদায় মাথা অবনত করেছেন। এই ঘর থেকেই মুআজ্জিন আল্লাহর এবং মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে। আজ সেই লাখো মসজিদের একটি বাবরি মসজিদের অস্তিত্ব অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিলীন করে দেয়া হয়েছে।

          সম্রাট বাবর এর অন্যতম প্রধান সেনাপতি মীর বাকি সম্রাটের শরণার্থী অযোধ্যায় এ মসজিদটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। এজন্যই মসজিদের নামের সাথে সম্রাট বাবরের নাম বিজড়িত। আজ সে মসজিদ ইতিহাসের পাতায় থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। মসজিদের স্থানে পূজিত হচ্ছে রামের মনুষ্যনির্মিত কল্পিত অবয়ব। মসজিদ-মন্দিরে রূপান্তরিত হওয়ার পথে প্রায়।

          বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হঠাৎ বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় মুসলমানদের উপর ইসলাম বিরোধীরা যে আগ্রাসন চালাচ্ছে মুসলমানদের অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার যে কৌশেশ চলছে বাবরী মসজিদ ধ্বংসকাণ্ড নীলনকশার একটা অংশ মাত্র। বিশ্বকে মুসলিম শূন্য করার নীলনকশার আওতায় মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং ইহুদিদের কুক্ষিগত রাখা হয়েছে। বোখারার বিখ্যাত জামে মসজিদকে সরাইখানায় পরিণত করা হয়েছিল। আকিয়াবের বিখ্যাত ঝেটি জামে মসজিদকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বসনিয়ার অসংখ্য মসজিদ বিরান করে দেয়া হয়েছে। গ্রানাডার ও কর্ডোবার বিখ্যাত মসজিদসমূহ সেই চক্রান্তের জন্যই গত পাঁচ বছর ধরে কালের সাক্ষী হিসেবে বিরাণ দাড়িয়ে আসে। বাবরি মসজিদের পরিণতি তারই নব সংযোজন।

          একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় ১৯৯১ সালে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র এর একটি দল বাংলা পাক-ভারত উপমহাদেশ থেকে মুসলমানদের একশ্রেণীর স্টাইলে বিতাড়ণের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে স্পেনে যায়। ঐ খবরে আরো জানা যায় স্পেন থেকে ৮শত বছরের শাসক জাতিকে চিরতরে উৎখাত করণের ব্যাপারে মূল পরিকল্পনা সুদুরপ্রসারী কর্মসূচি ও সফল বাস্তবায়নের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান হাসিলের জন্য র এর এবিশেষজ্ঞ দলটি স্পেনের খৃষ্টান পন্ডিত এর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা চালায়। বর্তমানে তারা স্বদেশে তাদের লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগেরত আছেন। বাবরি মসজিদ যেভাবে সামরিক অপারেশন এর কায়দায় দক্ষতার সাথে ভাঙ্গা হয়েছে, এর পেছনে সেই দলটির যে হাত আছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে দ্বিতীয় কোনো প্রমাণের প্রয়োজন হয়না।

 

 

ভারতের সাম্প্রদায়িকতার উত্থান এর নেপথ্যে:

          উপমহাদেশে মুসলিম জাতির আগমন ও বিস্তার লাভের পর প্রায় এক হাজার বছর ধরে তারা এখানে রাজদণ্ড পরিচালনা করেন ১৮ শতকের শেষভাগে মুসলমান শাসকদের দুর্বলতার সুযোগে ইংরেজ এদেশের ক্ষমতা দখল করে। এই বেনিয়ার জাত বুঝতে পারে স্বাভাবিক ভাবে তারা এই দেশে বেশি দিন শোষণ চালাতে পারবে না। তাই 'ডিভাইড এন্ড রুলস' পলিসি মাফিক হিন্দু-মুসলমান এই দুই জাতির মধ্যে সুকৌশলে শত্রুতার বীজ বপন করে। তারা বুঝেছিল ভারতবাসীকে অন্ধকারে রাখতে হলে ইতিহাসে ভেজাল দিতে হবে! এবং এই ইতিহাসে ভেজাল দেওয়ার মাধ্যমে হিন্দু মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে। ইংরেজ পণ্ডিতগণ নিজেদের লেখা বই ছাড়াও মুসলিম লেখক এর মূল লেখার অনুবাদ করতে গিয়ে অত্যন্ত নিপুণতার সাথে ভেজাল মিশিয়েছেন। কোন কোন স্থানে রুপকথার ন্যায় গল্প জুড়ে দিয়ে তা ইতিহাস বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এইসব অপদার্থ মার্কা বইয়ের অবলম্বনে পরিবর্তিতে ভারতের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে সমগ্র ভারত ব্যাপি ক্যান্সার ব্যাধির মতো দেখা দিয়েছে সাম্প্রদায়িকতা। এই  ইতিহাস বই সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মনীষীর রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ''ভারতবর্ষের যে ইতিহাস আমরা পড়ি এবং মুখস্ত করে পরীক্ষা দেই তা ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক দুঃস্বপ্নের কাহিনী মাত্র'' [চেপে রাখা ইতিহাস]

          আনন্দবাজার, যুগান্তর ও বসুমতির প্রশংসিত গ্রন্থ বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের প্রথম খন্ডে শ্রী ধনঞ্জয় দাস মজুমদার লিখেছেন ইংরেজগণ তখন শাসক জাতি ছিল ভারত শাসনের সুবিধার জন্য তারা হিন্দু শাস্ত্রের বহু তথ্য গোপন বহু তথ্য বিকৃত এবং বহু মিথ্যা প্রক্ষিপ্ত করিয়া যে মিথ্যা ইতিহাস প্রস্তুত করিয়াছে তাহার বহু প্রমাণ দেওয়া হইয়াছে। হিন্দু-মুসলিম বিভেদের সুযোগে ইংরেজ রাজত্ব চিরস্থায়ী করিতে চেষ্টা করেন। এই জন্য তাহারা তাদের নবাগত হিন্দুদিগকে এইরূপ মিথ্যা ইতিহাস লিখিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন [পৃঃ ৬৬-৬৭ চেপে রাখা ইতিহাস]

          এ সব প্রচলিত ইতিহাস দ্বারা শেখানো হয়েছে যে মুসলমানরা বহিঃভারত থেকে এসে এই দেশ দখল করে নিয়েছিল। তারা সাথে করে নিয়ে এসেছিল হাতি ঘোড়া ও অস্ত্রশস্ত্র। তারা আক্রমণকারী বিদেশি লুণ্ঠনকারী, ভারতীয়দের হত্যাকারী, হিন্দুদের মন্দির ধ্বংসকারী এবং তারা হিন্দুদের কে জোর করে মুসলমান বানিয়ে ছিল ইত্যাদি। সাম্রাজ্যবাদী কলমবাজদের কলম দ্বারা লিখিত হলো মুঘল সম্রাট বাবর ছিলেন একজন লুণ্ঠনকারী ডাকাত। তিনি এদেশের লুণ্ঠন করতে এসে রাম জম্মভূমি মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করেছেন।

          এই ইংরেজ শাসনামলে একজন ইংরেজ লেখিকা 'এনেট সুসান বেভারেজ' ''বাবর নামার'' অনুবাদ শেষে মন্তব্য জুড়ে দেনঃ

          ''বাবর একজন মুসলিম হিসেবে এবং হিন্দু মন্দিরের গৌরব ও পবিত্রতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সম্ভবত মন্দিরের একটা অংশ ভেঙ্গে ফেলে একটা মাসজিদ তৈরি করেছেন। মোহাম্মদের একজন আজ্ঞাবাহী অনুগামী হওয়ার ফলে বাবর অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু ছিলেন এবং তাই তার কাছে মন্দিরকে অপসারিত করে একটি মসজিদ তৈরি করাটা কর্তব্য পূর্ণ এবং যোগ্য কাজ ছিল।''

          ব্যাস, ইতিহাস, স্থাপত্য, যুক্তি বা বৈজ্ঞানিক কোন প্রমাণ না থাকলেও লেখিকার এই নিজস্ব কল্পনা এবং সম্ভবত একটা অংশ ভেঙ্গে ফেলা কথাকে অবলম্বন করে বাবরি মসজিদ আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত।

          তবে বাবর যে উপমহাদেশে স্ব ইচ্ছায় আসেনি বরং উপমহাদেশকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্তের একটা অংশ হিসেবে যে তাকে হিন্দুরাই আহবান করে এনেছিল তা নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের লেখার দ্বারা প্রমাণিত।

          দিল্লিতে তখন লোদী বংশের সূর্য অস্ত যায় যায় অবস্থা। অবর্ণ মেবারের রানা সংঘ একে হিন্দু রাজত্ব কায়েমের স্বর্ণযুগ বলে মনে করে। কিন্তু তার ইব্রাহিম লোদীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার সাহস ছিল না। তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা খেলায় তিনি সুদূর ফারগানার আমির বাবরকে আমন্ত্রণ জানান দিল্লি আক্রমণের। সতর্ক এবং কৌশলী রাজনীতিবিদ বাবর দিল্লি দখল করার পর রানা সংঘের কুমতলব টের পেয়ে যান। তাই উপমহাদেশে মুসলিম স্বার্থের বিপদ বুঝতে পেরে তিনি সাহসিকতার সাথে রানা সংঘের মোকাবিলা করে রাম রাজত্ব কায়েমের পথ রুদ্ধ করে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা নির্লজ্জের মত বাবর এর উপর ভারত আক্রমণ কারী ও মন্দির ভাঙ্গার অপবাদ আরোপ করে।

          উপমহাদেশে মুসলিম শাসকদের প্রচেষ্টা নয় বরং অসংখ্য সুফি দরবেশ পীর আউলিয়াদের প্রচেষ্টায়ই যে ব্যাপক ভাবে ইসলাম প্রসারিত হয়ে এসেছিল সে ব্যাপারে এখন আর কোনো মতভেদের অবকাশ নেই। উপমহাদেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মাজার তারই প্রমাণ। জোর জুলুম করে ইসলাম প্রচার করা হলে এইসব মহাপুরুষকে মুসলমানদের সময় হিন্দুদেরও ভক্তি করার কোন যুক্তি থাকে না। তাছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালয় প্রভৃতি দ্বীপে কোন সৈন্যবাহিনী বা রাজা-বাদশা সুলতান অভিযানে আসেনি। অথচ সেখানে এখন মুসলমানে ভরপুর। ইন্দোনেশিয়ার শতকরা ৯০ জন এবং বোর্নিও দ্বীপ এর ১০০%ই মুসলমান। আসল সত্য হলো, উপমহাদেশের মুসলিম শাসকেরা ধর্ম প্রচারের অপেক্ষায় রাজ্য শাসন নিয়ে বেশী ব্যস্ত ছিলেন বলে দীর্ঘ এক হাজার বছর যাবৎ তাদের শাসন চলার পরও উপমহাদেশের বৃহত্ত এলাকা ভারতের লোক সংখ্যা মাত্র ১৫% মুসলমান। মুসলিম শাসকেরা যদি হিন্দু ধর্ম বিলোপ সাধনে বা জোর করে তাদের মুসলমান বানানোর চেষ্টা করত তবে কমপক্ষে মুসলিম শক্তির প্রধান কেন্দ্র গুলির অধিবাসীরা অবশ্যই হিন্দু থাকত না। দেশটিতে দীর্ঘ সময় ধরে ৮০ কোটি কেন মুসলমানদের পরব পরিবর্তে দেশ শাসন করার মতো একজন হিন্দুও খুঁজে পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ! কিন্তু তারা উদারতার সাথে দেশ শাসন করেছেন কারো ধর্মের উপর আঘাত করেন্নি। কারো ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধার সৃষ্টি করেননি।

          ইতিহাস বিকৃতির এই পথ ধরে ভারতের উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন আরএসএস, বিজেপি, বজরঙ্গ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি দাবি করল যে তাদের আরাধ্য দেবতা রাম চন্দ্র ঠিক আজকের  অযোধ্যার সেখানে বাবরি মসজিদ রয়েছে সেখানেই জন্ম নিয়েছিল এবং ওইখানে একটি রাম মন্দিরও ছিল তাদের এর স্বপক্ষে একমাত্র প্রমাণ হলো ইংরেজ লেখিকা বেভারেজের দেয়া নিজস্ব অলীক মতামত। ভারতের আগমন ও মুসলিম ঐতিহাসিক নৃতত্ত্ববিদ ও মনীষী যুক্তি-প্রমান সহ দেখিয়েছেন যে রামচন্দ্র একটি কাল্পনিক চরিত্র। বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই। তাছাড়া আজকে অযোধ্যার সাথে রামায়ণের বর্ণিত যে অযোধ্যায়ও কোন মিল নেই। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রতা যুক্তি-প্রমাণের কোন ধার ধারে না। ভারতের প্রাত্ন তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ রামলা থাপরসহ ২৫ জন ইতিহাসবিদ বলেছেন যে বাবরি মসজিদের সাথে রাম মন্দিরের সামান্যতম সংশ্লিষ্টতা নেই। মসজিদের যে কালো পাথর যা সীতাকে উদ্ধারের সময় লংকা থেকে আনিত বলে কথিত, সেগুলো হয়তো অন্য কোন স্থান হতে আনীত। মসজিদটি-মন্দির ভেঙ্গে করা হয়েছে এমন কোন প্রমান নেই।

          জাওহারলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর হিস্টোরিকাল স্টাডিজ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রামের জীবনের বর্ণনা সর্বপ্রথম রামকথা প্রচারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বর্তমানে এটা মূল রূপে পাওয়া যায়না। যদিও এটা কে সামনে রেখেই বাল্মিকী রামায়ণ নামে দীর্ঘ কাব্য রচনা করেছিলেন। যেহুতু রামায়ণ একটি কাব্য সেহুতু এরমধ্যে বর্ণিত সকল পাত্র, স্থান, ইত্যাদি বাল্মিকী। [৯ ডিসেম্বর,১৯৮৯ ডাক্তার দ্বারকানাথ কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটি, পশ্চিমবঙ্গ]

          পণ্ডিত প্রবর অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রামায়ণ  প্রসঙ্গে বলেন, বাল্মিকী বলে অভিহিত কোন এক কবির সৃষ্টি রামায়ণ একটি সাহিত্য কীর্তি। পরবর্তীকালে এর অনেক সংযোজন ও পরিবর্তন হয়। বিপুল সংখ্যক রামায়ণ বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত যে রামায়ণ একজন প্রতিভাশালী কবি। তিনি তিন বা ততোধিক লোকগাথাকে একত্রিত করে একটি সুসংবদ্ধ কাব্য কাহিনী রচনা করেছেন। এই মহাকাব্যের অন্তরালে বা পশ্চাদ্ভাগে কোনরূপ ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে বলে প্রভাবিত হয় না। বর্তমানেকালে ভারতীয় ইতিহাসের কোন পন্ডিত ব্যক্তি মনে করেন না যে রামায়ণের নায়ক রামচন্দ্র কোন ঐতিহাসিক পুরুষ ছিলেন। [suniti kumar chatterjee, word literature and togore, Visva bharati, 1971, P: 48-49 quoted in sl No (9) XVII-XVIII]

          ১৫২৮খ্রিস্টাব্দে বাবরি মসজিদ নির্মাণের সময় পরম রামভক্ত তুলসীদাসের বয়স ছিল ৩৫ বছর। তিনি অযোধ্যায় বসেই "রামচরিত নামক" রচনা করেন। রামকে পূজা করার প্রথা তিনি তাঁর কণ্ঠে উল্লেখ করার পরই তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি নিশ্চয় রামের জন্মস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য তিনি প্রথম রামের জন্মস্থান বা রাম মন্দির ভেঙ্গে যে মসজিদ তৈরীর ঘটনা ঘটলো তা উল্লেখ করেননি। অথচ তিনি এই সময়ে ইসলাম ধর্মের উত্থান নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

          কিন্তু উগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের নিকট ইতিহাসের কোন মূল্য নেই! সত্যের কোন বালাই তাদের নেই। "রাম জনভূমি এবং অযোধ্যার মন্দির ভেঙে মসজিদ করার দাবির বিপক্ষে পাহাড়প্রমাণ ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ সত্যও হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা তাদের মত ও ইচ্ছেকে গায়ের জোরে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে বহুদিন থেকে। যখন তারা যুক্তি প্রমাণ ও তথ্যের সামনে দাঁড়াতে পারছে না তখন ঝুলি থেকে বিড়ালটি বেড়িয়ে পড়লো। এবার বলা হয় "ধর্ম" বিশ্বাসের ব্যাপার! প্রমাণের ব্যাপার নয়! শুধুমাত্র বিশ্বাসের জোরেই খ্রিস্টানরা যীশু খ্রীষ্ট কে ঈশ্বরের সন্তান বলে মেনে নেয়! শুধুমাত্র বিশ্বাসের বলেই মুসলমানরা মুহাম্মদকে ফেরিত নবী বলে স্বীকার করে! এবং হিন্দুরাও শুধুমাত্র বিশ্বাসের জোরে মেনে নেয় যে অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি হল ভগবান রামের জন্মস্থান" [কে এস লাল অর্গানাইজার পত্রিকা অক্টোবর ১৯৮৯]

 

          সুতরাং স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবে এবং যীশুখ্রীষ্ট ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম কে ফেলেস্টাইনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এটা বাস্তব। তারা যে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ এটা হল বিশ্বাসের বিষয়! সেরকম রাম অবতার ছিল! এটা হয়তো হিন্দুরা মানতে পারে কিন্তু তার নির্ভরযোগ্য জন্ম ইতিহাস বা কোনো বাস্তব ছাড়া বাস্তবতা ছাড়া কিভাবে বিশ্বাস করা যায় যে তিনি অযোধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাস তো কোনো বিশ্বাসের বস্তু নয়, কল্পনা ও বিশ্বাস যেমনি ইতিহাসের ব্যাপার নয় তেমনি তথ্য প্রমাণের উপর ভর না করে ইতিহাস চলতে পারে না। আর যুক্তি-প্রমাণ বিজ্ঞান ও বাস্তবের সাথে মিল না থাকলে এবং সুদৃঢ় ভিত্তি না থাকলে তাকে কোনো গ্রহণযোগ্য ধর্ম বলা যায়না অন্ধ বিশ্বাস বা কল্পকাহিনীকে মূর্খতা বলা যেতে পারে। তাকে অবশ্যই কোন ধর্ম বলা যায়না।

মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনার দায়ী কারা?:

          গত ১১ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও বিবিসির সংবাদদাতা মার্ক টালির সাথে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা মির্জা আমি বা আমার সরকার দায়ী নয়। এর জন্য পুরোপুরি দায়ী রাজ্য সরকার তার এই দাবি কতখানি সত্য!? নরসিমা রাও কি ভুলে গেলেন যে হাজার ১৯৪৯ সালে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে উগ্র হিন্দুরা মসজিদে রামের মূর্তি স্থাপন করেছিল এবং ঘটনার সাথে সাথে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ মসজিদটি ক্রোক করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। মুসলমানদের জন্য মাসজিদটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। মসজিদ থেকে মূর্তি তো সরানো হয়নি বরং হিন্দুদেরকে মসজিদের দরজা থেকে ১০ ফুট দূরে থেকে মূর্তি পূজা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এভাবে কংগ্রেস সরকার আজকের সাম্প্রদায়িক রক্তা রক্তির উদ্বোধন করেছিল।

          ১৯৯৬ সালে এই কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তালা খুলে এদিকে হিন্দুদের পুজো করতে উন্মুক্ত করে দেয়, মসজিদকে পরিণত করে মন্দিরে।

          ১৯৮৯ সালে সেই রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে হিন্দু মৌলবাদীরা বাবরি মসজিদের পাশে রাম মন্দিরের শিলা বিন্যাস করে চূড়ান্তভাবে হিন্দু-মুসলিম হানাহানির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।

          আর ১৯৯২ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। সুতরাং পুরো ঘটনার সূচনা থেকে সমাপ্তি ঘটে কংগ্রেস সরকারের আমলে। উগ্রপন্থী হিন্দুরা কখনই ক্ষমতায় ছিল না। কংগ্রেস সরকারের মদদ না পেলে বা মসজিদ রক্ষায় কংগ্রেস সরকার আন্তরিক না হলে! উগ্রপন্থীরা কখনো এত দূর অগ্রসর হতে পারতো না বা তা সম্ভবও নয়। তা যদি হতো তবে কংগ্রেস সরকার অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াত। তিনি কিভাবে কংগ্রেস সরকারকে এ ব্যাপারে নির্দোষ দাবি করতে পারলেন?। মসজিদ ভাঙার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবেও দায়ী নন এটাও তার একটা হাস্যকর ও ছেলে ভুলানো কথা। কেননা তিনি ভালভাবেই জানেন ১৯৯১ সালে এর নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিজয় লাভ করার পর রাজ্য সরকার কল্যাণ সিং পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন আজ রাম জন্মভূমিতে মন্দির নির্মাণের সকল বাধা দূর হয়েছে পৃথিবীর কোন শক্তি নেই যে এখন আমাদের মন্দির নির্মাণে বাধা দিতে পারে! কেন্দ্রীয় সরকার যদি আমাদের কাজে বাধা দেয় তবে তার পরিণত পূর্বেকার সরকারের মত হবে।

          ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার ঢাকার একটি দৈনিকে স্বনামে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানিয়েছে যে, ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই মসজিদ ভাঙ্গার ৫ দিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন যে জঙ্গী হিন্দুরা মসজিদ ভাঙ্গায় বদ্ধপরিকর।

          মসজিদ ভাঙ্গার পূর্বে ভারতের দুটি পত্রিকা পাইওনিয়ার ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায় যে মধ্যপ্রদেশের চম্বল নামক দুর্গম পার্বত্য এলাকায় ৫০০ শিবসেনা ১৫ দিন ধরে মসজিদ ভাঙ্গার প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে অযোধ্যায় অবস্থান নিয়েছে।

          মসজিদ ভাঙ্গার পূর্বে রাজ্যের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মসজিদ ভাঙ্গার দৃঢ়-সংকল্প গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের পরেও তিনি মসজিদটির রক্ষার জন্য কোন পদক্ষেপ নেননি। ভিপি সিং সময়কার হাজার হাজার পুলিশের কঠোর বেষ্টনী ভেদ করেও জঙ্গি হিন্দুরা মসজিদে হামলা চালিয়েছিল। সেই ঘটনা তার জানা থাকার পরও জঙ্গী হিন্দুদের মসজিদে হামলা না চালানোর মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে তুষ্ট হয়ে এবং লক্ষ লক্ষ জঙ্গিকে ঠেকানোর জন্য রাজ্য সরকারের মাত্র ৫০০ পুলিশ মোতায়েন করার তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। 30 শে নভেম্বর পিটিআই পরিবেশিত এক খবরে জানা যায় কেন্দ্রীয় সরকার মসজিদ রক্ষায় ১৫হাজারা সৈন্য অযোধ্যায় মোতায়েন করেছে। তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে দাঙ্গা প্রতিরোধের জন্য গঠিত বিশেষ কমান্ডো বাহিনীর টহল দিচ্ছে। মসজিদের ভেতরে ৪০০ ক্ষিপ্তগতি সম্পন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। মসজিদের বাইরে দেড় হাজার সৈন্য দাঙ্গাবিরোধী সরঞ্জাম, কাঁদানো গ্যাস, রাবার বুলেট, পানিকামান নিয়ে অবস্থান নিয়েছে।

          এই মসজিদ ভাঙ্গার একসপ্তাহ পূর্বের ঘটনা কিন্তু মসজিদ ভাঙ্গার সময় কমান্ডো ক্ষিপ্ত সৈন্যরা কোথায় ছিল? মসজিদ ভাঙ্গার সময় তো কোনো সৈন্য বা পুলিশের নামগন্ধও ছিল না বরং ঘটনার আর দশ মিনিট পূর্বে ক্ষুদ্র পুলিশ বাহিনীকে ও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। মসজিদ ভাঙ্গার পর তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে বলেন যে কুয়াশার কারণে সৈন্যদের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়েছিল! প্রবল তুষার ঝড় উপেক্ষা করে যে সৈন্যদের কাশ্মীরি মুজাহিদদের ধরার নামে নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে আনতে কষ্ট হয়না! তাদের কিনা কুয়াশার জন্য অযোধ্যায় পৌঁছেছে এক সপ্তাহ দেরি হল! যে ঐতিহাসিক মসজিদটির বিতর্ক নিয়ে সারাদেশে তোলপাড়, সমগ্র দেশের আইন-শৃঙ্খলা যার সাথে জড়িত, যার সাথে ২০ কোটি মানুষের নিরাপত্তা ও চেতনার প্রশ্নটি জড়িত সেই দুর্ঘটনাটির দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেকে কিভাবে নির্দোষ দাবি করবে কংগ্রেস বা নরসিমা রাও?।

বাবরি মসজিদ নিয়ে এদেশের কত লোকের অসাম্প্রদায়িকতা চর্চা ও কদর্য বাৎচিত:

          বাবরি মসজিদ পরিস্থিতি নিয়ে এদেশের একশ্রেণীর ভারতীয় স্বার্থের তকমা আটা  রাজনীতিক আরো একটা কদর্য খেল খেললেন। এসব জননেতা (?), নেত্রীরা ভারতের মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনাকে নিন্দা জানাতে পারেনি! পারেনি পুনরায় বাবরি মাসজিদ যথাস্থানে নির্মাণ করার দাবি জানাতে। এরা রাজপথে নেমে আসা প্রতিবাদী জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রদান সহ কয়েকজন নেতার সাথে আদভানির আঁতাতের পর মসজিদ ভাঙ্গা হয়েছে বলে প্রচার করেন এবং এলাকায় এলাকায় শান্তি বাহিনী গঠন করার আহ্বান জানান। রাজপথে নেমে আসে তাদের ভারী শান্তি মিছিল অর্থাৎ মসজিদ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী জনগণকে তারা শান্ত থাকার সবক দেন এবং বুঝাতে চান মসজিদ ভাঙ্গা কোনো ঘটনা নয়, ওটা পুনঃনির্মাণ বা অপরাধীদের শাস্তি দাবি করার প্রয়োজন কি?

          কোন কোন নেত্রী আবার বলে ফেললেন যে "ভারত সরকার যেমনি মসজিদ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে তেমনি এ দেশের সরকারও এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে"। অর্থাৎ সরকার এদেশের জনগণকে মসজিদ ভাঙ্গার পক্ষে প্রতিবাদ জানাতে সুযোগ দিয়েছেন! তাদের কঠোর হস্ত শান্ত রাখেননি বলে এই মানুষটির বড় আক্ষেপ! তাছাড়া ভারতের জঙ্গি হিন্দুদের কর্মকাণ্ড ছিল বর্বরতম এবং সাম্প্রদায়িক আর এদেশের জনগণ তার প্রতিবাদ করেছিলেন মাত্র পার্থক্যটুকু উপলব্ধি করার মত সেন্স উক্ত মানুষটির আছেকি? এ দেশের সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতির ওপর ভারত একের পর এক আগ্রাসন চাপিয়ে দিল সে দেশের কোটি কোটি মুসলমানের উপর নির্যাতন হলেও এদের নিন্দা জানাবার সাহস নেই বুকের উপর এলএমজি থেকে হাজার রাউন্ড গুলি খরচ করলেও যারা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি কথা খরচ করতে পারবে না তাদের রাজনীতি যে এদেশের সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ খোঁজার মধ্যে সীমিত থাকবে তাতে আর আশ্চর্য হওয়ার কি আছে!।

বাবরি মাসজিদের ভবিষ্যৎ:

          সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন ভারতের মুসলমানরা সে দেশে হিন্দু কাপালিকদের কর্তিক দখল করে নেয়া তালাবদ্ধ সাড়ে ৪ হাজার মসজিদসহ কোন নির্মিতব্য বাবরি মসজিদে একযোগে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া নামাজ আদায় করবে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় নরসিমা রাও এক বছরের মধ্যেই মসজিদ তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনরোষ হ্রাস পাওয়ার মওকায় আছেন। মসজিদের স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে যে কায়দায় মন্দির গড়ে ওঠে। তিনি তৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়ে সে মন্দির অপসারণ করতে পারেননি। এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও যেভাবে উগ্র হিন্দুদের তাড়িয়ে নিজেরাই নব নির্মিত মন্দিরের রাম মূর্তিকে পূজা করেছে, তাতে তিনি মন্দির ভেঙে পুরো ভারতের দ্বিতীয় বার সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বালানোর ঝুঁকি নেবেন কি? সে যাই হোক ইতিহাস বলে অন্য কথা। অন্যান্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ের মত মাসজিদ দীর্ঘদিন বিরান হয়েছে।

          কমিউনিজমের কঠোর নিষ্পেষণে মধ্য এশিয়ার হাজার হাজার মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মসজিদ হয়েছিল নাট্যশালা, বার, পাঠাগার, নৃত্যমঞ্চ।  কিন্তু মাত্র ৭০ বছরের ব্যবধানে তারাই আবার সেই বদ্ধ মসজিদগুলোকে নিজহাতে খুলে দিয়েছে। নূহ (আঃ) এর নৌকা একবার কাফেররা অপবিত্র করে দিয়েছিল কিন্তু সেই কাফেররাই আবার তার নৌকাকে পবিত্র করে দেয়। এমনিভাবে আলবেনিয়া, ইরিত্রিয়া, চীন, বুলগেরিয়া, আফগানিস্তানের বন্ধ মসজিদগুলোতে আজ রীতিমতো মুসলমানদের ভীড় জমছে। সুতরাং এই জঙ্গি হিন্দুরাই যে পুনরায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করে দেবে এবং মুসলমানরা শুকরিয়া নামাজ আদায় করবে ইতিহাস তাই বলে।

          ইতিহাসের শিক্ষা হলো যারা সত্যকে হত্যা করতে চায় তারা লক্ষ গুণ শক্তিশালী হলেও একদিন তাদেরকে ইতিহাসের আদালতে দাঁড়াতে হয়। ইতিহাসের বিচারে তাদের স্থান হয় আবর্জনার স্তূপে।