JustPaste.it

সত্যের সন্ধানে

হিন্দু জাতি প্রসঙ্গে আল কুরআন

========================================================================

 

        বহু হিন্দু মহাশয় যারা ইসলামের আদর্শে প্রভাবিত এবং কুরআন সম্পর্কে মোটামুটি অবগত তাদেরকে এ ধরণের অভিযোগ করতে শুনা গেছে যে, কুরআনে অনেক জাতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু কোথাও তো আমাদের সম্পর্কে কোন আলোচনা নেই।

 

        এদের এই অভিযোগের উত্তরে যখন আমরা বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হই তখন একথা একবারও ভেবেছি কি যে, আমরা আমাদের অজান্তে অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের মত কুরআনের উপর এমন কোন অভিযোগ করছি না তো?

 

        শ্রীগংগা প্রসাদ উপধ্যায় মূল আরবীতে কুরআন অধ্যয়ন করে তার অভিজ্ঞতার আলোকে উর্দুতে 'মাসাবীহুল ইসলাম' নামে যে গ্রন্থটি রচনা করেছেন তা থেকে একটি অংশ আমরা উদ্ধৃত করছিঃ

 

        “কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে বলা হয়েছে যে, খোদা বিভিন্ন জাতির হেদায়েতের জন্য বিভিন্ন নবী প্রেরণ করেছেন। কিন্তু কুরআনে বিশেষ কোন জাতি সম্পর্কে তেমন ব্যাপক কোন আলোচনা লক্ষ্য করা যায় না। তবে মজার কথা হল যে, সকল প্রাচীন জাতির সভ্যতা সাংস্কৃতি হাজার হজার বছরের পুরাতন যেমন, হিন্দুস্তানী, চীনা প্রভৃতি। এদের সম্পর্কে কোন ইংগিত কুরআনে পাওয়া যায় না। তাই এ আসমানী গ্রন্থ যাকে কুরআন বা কালামে মজীদ নামে অবিহিত করা হয় এর সাথে মানবতার কোন সম্পর্কই নেই বলে মনে হয়।"

 

        নিঃসন্দেহে কুরআনের প্রথম শ্রোতা ছিলেন আরববাসীগণ। উপরন্তু এই কুরআন কেবল ১৪০০ বছরের পুরাতন কোন গ্রন্থ নয় বরং বর্তমান সময়েও এর প্রযোজ্যতা অক্ষুন্ন রয়েছে। তাই এ কেমন করে হতে পারে যে, পৃথিবীর প্রাচীনতম যে জাতিটি, যে জাতিটির ইতিহাস কুরআন নাযিল হওয়ার ও হাজার হাজার বছর পুরাতন, সেই জাতির আলোচনা কুরআনে থাকবে না? অতএব কুরআনের ওপর এমন অভিযোগ করা অশোভনই শুধু নয় অন্যায়ও বটে। আমরা কি কখনও হিন্দুজাতির নাম পরিচয় কুরআনে সন্ধান করেছি? হ্যাঁ, কথাটি ঠিক। আমরা সন্ধানী দৃষ্টিতে তা সন্ধান করি নি। কুরআনের মধ্যে হিন্দু নামটি পাওয়া যায় না ঠিক, কিন্তু ইসায়ী বা খৃষ্টান নামটি পাওয়া যায় কি? এবার আমরা বুঝতে পারলাম কি, ইসায়ী নামটিও যে কুরআনের কোথাও নেই? কুরআনে ইসায়ীদের বেলায় 'নাসারা' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর কোন ইসায়ী নিজেদেরকে ‘নাসারা’ বলে পরিচয় দেয় না, অথচ আমরা জানি যে, কুরআনে ওই সকল লোককে নাসার বলা হয়েছে যাদেরকে আমরা খৃস্টান বা ইসায়ী বলে থাকি। তাই বিচিত্র কি, যে জাতিটি আজ নিজেদেরকে হিন্দু বলে পরিচয় দিচ্ছে কুরআন তাদেরকে অন্য কোন নামে অবিহিত করেছে।

 

 

কুরআনে সকল জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা স্থান পায়নি 

        কুরআনে এমন বহু জাতির নাম এসেছে যাদের সঠিক পরিচয় আজ পর্যন্ত মুফাসসিরগণ সর্বসম্মতভাবে নির্ধারণ করতে পারেনি। যেমন ‘আসহাবুররুস' ও “কওমু্ত্তবাআ'। এছাড়া পবিত্র কুরআনের মধ্যে একাধিক স্থানে "সাবিয়ীদের আলোচনা মুমিন, ইয়াহুদী ও নাসারাদের সাথে এমনভাবে উল্লেখিত হয়েছে যাদ্বারা মনে হয়, এরা বিশ্বের উল্লেখযোগ্য জাতি সমূহের মধ্যে অন্যতম কোন জাতি হবে।

 

        উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে, কুরআনে উল্লেখিত হয়েছেঃ “ নিসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে এবং ইয়াহুদী ও সাবেইদের মধ্যে যারা আল্লাহর উপর ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য তার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। " -(বাকারাঃ ৬২ আয়াত)

 

        এ আয়াতে সাবিয়ীদের মুমিন, ইয়াহুদী ও ইসায়ীদের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল এখাইে নয় বরং কুরআনের যেখানেই সাবিয়ীদের উল্লেখ এসেছে সেখানেই তাদেরকে বিশ্বের বড় বড় জাতিসমূহের পাশাপাশি দেখা যাচ্ছো। দুঃখের বিষয় হলো, এমন একটি ঐতিহ্যবাহী জাতি যাদেরকে কুরআনের মধ্যে তাবৎ বড় বড় জাতির পাশাপাশি রাখা হয়েছে এদের সঠিক পরিচয় নির্ধারণে আমরা আজ পর্যন্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও জোরদার কোন অনুসন্ধান চালাতে সক্ষম হইনি। অথচ এদের অস্তিত্ব মুসলমান, ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের মতই অবশ্যম্ভাবি। অবশ্য যদি একটু চিন্তা করি তবে সহজেই এদের অনুসন্ধানের মূল সূত্র আমরা পেয়ে যাব।

 

        এখন দেখা যাক, মুসলমান , খৃষ্টান এবং ইয়াহুদী ব্যতীত পৃথিবীতে আর কোন বড় জাতি রয়েছে কি না। যদি থেকে থাকে তবে সাবিয়ীনও এদের একটি। যাক একথা এ পর্যন্ত রেখে আমরা এখন অন্য আর একটি সূত্র ধরে অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হব।

 

        কুরআরের মধ্যে শরীআতসহ যত নবীর আলোচনা এসেছে তাদের মধ্যে বিশেষভাবে একাধিকবার যাদের নাম আলোচিত হয়েছে তারা হলেন, হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইব্রাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রমুখ ।

 

        কুরআনের মধ্যে বলা হয়েছে, “আমি নবীদের নিকট থেকে, তোমার নিকট থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও মারইয়াম তনয় ঈসার নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম - গ্ৰহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।" (সূরা আহযাবঃ ৫৭ নং আয়াত)

 

        “আমি তোমাদের জন্য দ্বীন নির্ধারিত করেছি যার নির্দেশ নূহকে দিয়েছিলাম আমি প্রত্যাদেশ করেছি তোমাকে আর নির্দেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে। এ বলে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে মতভেদ করো না।" (সূরা শুরা; আয়াত নং ১৩)

 

        আমরা লক্ষ্য করেছি, কুরআনের মধ্যে যত বড় বড় জাতির নাম পাশাপাশি উল্লেখিত হয়েছে তারা হল মুসলমান, খৃস্টান, ইয়াহুদী ও সাবিয়ীন। অন্যান্য স্থানে একসাথে যেসকল শরীআত ওয়ালা নবীর নাম কুরআনে এসেছে তারা হলেন, মুহাম্মদ (সাঃ), ঈসা (আঃ) ও নূহ (আঃ) প্রমুখ। এদের মধ্যে মুসলামনরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হিসাবে বিশ্বাস করে, খৃস্টানরা অনুসরণ করে ঈসা (আঃ) -কে, ইয়াহুদীরা অনুসরণ করে মূসা (আঃ) -কে। কিন্তু সাবিয়ীনরা কার অনুসরণ করে? এ প্রসঙ্গে আমরা নিরব হয়ে যাই।

 

        আরও দেখুন, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) -এর উম্মতকে মুমিন বলা হয়, হযরত ঈসা (আঃ) -এর কথিত অনুসারীদেরকে খৃস্টান বলা হয় এবং হযরত মূসা (আঃ) -এর কথিত অনুসারীদেরকে ইয়াহুদী বলা হয়। কিন্তু হযরত নূহ (আঃ) -এর অনুসারীকে কি বলা হয়? এর সঠিক উত্তর আজ পর্যন্তও জানা যায়নি। তবে আমরা বলব, এই নূহ (আঃ) -এর কওম বা অনুসারীদেরকেই সাবিইন বলা হয় না তো?

 

 

হযরত নূহ (আঃ) -এর জাতিই সাবিয়ীনঃ 

        আব্দুর রহমান ইবনে যায়িদের সূত্রে তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখিত হয়েছে যে, 'সাবিয়ীনরা’ নিজেদেরকে হযরত নূহ (আঃ) -এর দ্বীনের অনুসারী বলে দাবী করে।

 

        সাবিয়ীনদের সম্বন্ধে হযরত ওমর (রাঃ),

        ইমাম আবু হানীফা (রহঃ),

        ইমাম ইসহাক (রহঃ),

        আবূয্যিনাদ (রহঃ),

        কুরতুবী (রহঃ),

        আল্লাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ),

        ইমাম গাযযালী (রাহঃ),

        ইমাম রাগিব (রা),

        মাআলিম (রাঃ),

        ইবনে জাবীর (রাঃ),

        আল্লামা শাওকানী (রহঃ),

        ইবনে কাসীর (রহ),

        ইমাম সুহাইলী (রাহঃ) ,

        আল্লামা শাওকানী (রহঃ),

        কাযী বইযাবী (রহঃ),

        আব্দুল মজীদ দরিয়াবাদী (রহঃ)

 

        এবং সাইয়্যেদ সুলায়মান নদভী (রাহঃ) সহ প্রমুখ। ইমাম গবেষকের মন্তব্য ব্যাখ্যা সহকারে পর্যায়ক্রমে নীচে উল্লেখ করা হলঃ

 

        ১। “এরা ইরাকের ওই অংশের বসবাস করত যেখানে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

        (হযরত ইব্রাহীম (আঃ) -এর জন্মস্থান ‘উর’ এবং হিন্দুস্থানের সভ্যতা, হড়প্পা ও মহেঞ্জদাড়োর শীলালিপি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ উভয় সভ্যতার মধ্যে একটা বিশেষ সামঞ্জস্য রয়েছে।)

 

        ২। এরা কিতাবী বা আহলে কিতাব ছিল। (একথা কুরআনের আলোচনা দ্বারাই অনুমিত হয়। এদের আলোচনা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আসমানী কিতাব ওয়ালা জাতিদের পাশাপাশি উল্লেখিত হয়েছে। তবে সাবিয়ীদের নিকট নূহ (আঃ) কোন সহীফা খানা নিয়ে এসেছিলেন সে সম্পর্কে সামনে আলোচনা করা হবে।)

 

        ৩। এরা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলে কিন্তু মুশরিক বটে। (এর ওপর সামনে আলোচনা করা হবে যে, হিন্দুদের কলেমাও হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।)

 

        ৪। এরা ইয়েমেনের দিকে মুখ করে নামায পড়ে। (একথাও সভ্যতার ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত যে, হিন্দু ধর্মানুসারীদের বিশেষ একটি অংশ পূর্বে ইয়েমেনে বসবাস করত। যেখান এখনও ‘শিয়াম ' এবং ‘হিন্দ’ নামক দুটি কেল্লা রয়েছে।)

 

        ৫। সাবিয়ীন একটি অনারব নাম আরবী নয়।

 

        ৬। এরা ফেরেশতা পূজারী জাতি ছিল। (হিন্দু ধর্মের বহু দেবতাকে ফেরেশতা ধারণা করা হয় এবং তারা তাদের পূজা করে।)

 

        ৭। এরা রাশিচক্র এবং তারকারাজির প্রভাবে বিশ্বাসী ছিল। (পৃথিবীর কোন জাতি তারকার প্রতি এতটা প্রভাবিত নয় যতটা প্রভাবিত হিন্দুস্তানের হিন্দুরা।)

 

        ৮। এরা তারকা পূজারী। (বিভিন্ন তারকা এবং গ্রহ নক্ষত্রের পূজা করা বর্তমান হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের একটা বিশেষ অংশ।)

 

        ৯। এরা অগ্নি উপাসক। (হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অগ্নি পূজার নামে এখন ও হাওয়ান, শাদী, আরথী, ইত্যাদি পূজা করে থাকে।)

 

        ১০। যুথুরিষ্ট ইরানী বংশদ্ভুদ। এরাও অগ্নি উপাসনা করত এবং হিন্দু ছিলো। এরা ছিলো আরিয়ান, এদিক (ইরান) থেকেই আরিয়ানরা হিন্দুস্থানে প্রবেশ করেছিলো।

 

        ১১। এরা ধর্মীয় নির্দেশ অনুসারে দিনে একাধিকবার স্নান করে থাকে। (ধর্মগতভাবে পৃথিবীর মধ্যে সবচে গুরুত্বের সাথে হিন্দুরাই স্নান করে। স্নান ব্যতীত কোন পূজা তাদের শুদ্ধ হয় না। এছাড়া কয়েকটি স্থানে এরা সম্মিলিতভাবে স্নান - ব্রত সম্পাদন করে।-)

 

        ১২। ধর্মান্তরিত হওয়া এদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের একটি। (ভবিষ্যতে এরাই ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হবে। এ বিষয়ে আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি।)

 

        ১৩। এরা এমন একটি জাতি যারা অন্যের আদর্শে প্রভাবিত এবং আসক্ত। নীতি বর্জনকারী জাতি হিসেবে হাদীসের মধ্যে এ কওমের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ সম্বন্ধেও পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।)

 

        এ হল সবিয়ীদের সম্পর্কে আমাদের মুফাসসির ও আলিমগণের মন্তব্য। যার প্রত্যেকটির বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। আশ্চর্যের কথা হলো, তথ্য সমূহ বিভিন্ন হলেও প্রত্যেকটি তথ্য হিন্দুদের বেলায় প্রযোজ্য। তবে এক এক জন ব্যাখ্যাদাতা এক এক এলাকার বাসিন্দাদেরকে সাবিয়ীন বলে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু বর্তমানে উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট সমূহ একই ভূখণ্ডে বসবাসকারী একটি জাতির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছো। তাই হয়ত উপরোল্লেখিত বৈশিষ্ট মণ্ডিত ও বিশ্বাসীদের সকল সম্প্রদায় কোন এক সময়ে স্থান। পরিবর্তন করে হিন্দুস্তানে এসে একত্রিত হয়েছিলেন। আমার মনে হয়, এই আলোচনার পর সাবিয়ীনদের পরিচয় কারও নিকট অস্পষ্ট থাকার কথা নয়। পূর্বকালে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্তমান সাবিয়ীনদের বৈশিষ্ট বিদ্যমান ছিলো বটে। তবে একালে সাবিয়ীন বলে যাদেরকে আমরা বুঝি তাদের পরিচয় আজ দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল ও স্পষ্ট।

 

        এ প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ না করলে আলোচনাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অর্থাৎ শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রহঃ) -ও সাবিয়ীনদেরকে সাবিয়ান বংশদ্ভুদ বলে মনে করতেন । প্রমাণ হিসাবে হুবহু তার মন্তব্য উদ্ধৃত করা হলঃ

 

        “ঈসা (আঃ) ছিলেন মহান বুযুর্গ নবী। যিনি তাঁর আদর্শকে অইস্রাঈলী কথা সাবিয়ীন বা আবিয়ানীদের মধ্যেও প্রচার করার চেষ্টায় ব্রত ছিলেন।"

 

        সেকালে ইরান আরিয়ান অর্থাৎ সাবী কওমের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এর পূর্বে এদের কেন্দ্র ছিল হিন্দুস্থান।

 

        এবার দেখুন মাওলানা সায়্যেদ সুলায়মান নদভীর অভিমত - যিনি সাবিয়ীনদেরকে প্রাচীন হিন্দুস্থানী হিসাবে বিশ্বাস করেন।

 

        তিনি বলেন, “আহলে কিতাবদের মধ্যে যেমন পথভ্রষ্ট ও পথভ্রষ্টকারী রয়েছে তেমনিভাবে আহলে কিতাবীদের সঙ্গে সাযুজ্য রাখে এমন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যেও তাদের মানসিকতার ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ধাছের দুষ্টামী পরিলক্ষিত হয়। এমন দুটি সম্প্রদায় সম্পর্কে কুরআন আমাদেরকে অবহিত করেছে। এরা হলো মাজুস ও সাবিয়ীন সম্প্রদায়। যাদের মধ্যে ইরান এবং হিন্দের প্রচীন বাসিন্দারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 

        উল্লেখ্য যে, ইরাক এবং সিরিয়ায় এখনও এমন স্বল্প সংখ্যক লোক রয়েছে যারা নিজেদেরকে ‘সাবী' বলে দাবী করে। এরা হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) - এর পরের কোন নবীর আনুগত্য স্বীকার করে না। হযরত ঈসা (আঃ) -কেও বিশ্বাস করে না। তবে হযতর ইয়াহিয়া (আঃ) থেকে পূর্বের সকল নবীকে তারা নবী বলে স্বীকার করে। হয়ত কুরআন এদেরকেই সাবিয়ীন বলে অবিহিত করেছে। কিন্তু সায়্যিদ সুলায়মান নদভীর মত সত্যান্দ ব্যক্তি এবং মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীর মত সুতীক্ষ্ম মেধার অধিকারী ব্যক্তি ও সমাজ বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে সাবিয়ীনরা হিন্দুস্তানী বংশদ্ভোদ বলে নিশ্চিত। অবশ্য সাবিয়ীদের ব্যাপারটাও ভাবার বিষয় বটে। এছাড়া এই স্বঘোষিত সাবিয়ীন সম্প্রদায়ের মধ্যে আহলে কিতার হওয়া ব্যতীত অন্যকোন বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় না। যে সকল বৈশিষ্ট্য মুফাসসিরগণ সাবিয়ীদের পরিচয়ে পেশ করেছেন। যা আমরা ইতিপূর্বে উদ্ধৃত করেছি একথা অনস্বীকার্য যে, কুরআনের বহু ‘পরিভাষা' কখনও এক কালের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বেলায় প্রযোজ্য হয় এবং কখনও তা বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বেলায়ও তা প্রযোজ্য হতে দেখা যায়। তাই হয়ত এই সাবী সম্প্রদায়টিও কুরআনের উল্লেখিত সাবিয়ীনদেরই একটি অংশ। তবে একথা নিশ্চিত যে, হিন্দুস্তানের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাবিয়ীন হওয়ার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। (চলবে)

 

অনুবাদঃ মনযুর আহমাদ

 

═──────────────═