ধারাবাহিক উপন্যাস
মরণজয়ী মুজাহিদ-৩৯
মল্লিক আহমদ সারওয়ার
রাশিয়ায় কম্যুনিজম বিরোধী মুজাহিদ রিক্রুট করা খুবই কঠিন ব্যাপার। একতো সিংহ ভাগ মুসলমান চেতনা হারিয়ে বসেছে, দ্বিতীয়ত কেজিবির কঠিন জাল ভেদ করে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে যোগদান খুবই ঝুকিপূর্ণ ব্যাপার। এখানে পৌঁছানোর জন্য একজন মুজাহিদকে বহু ঘাঁটি অতিক্রম করে আসতে হয়। বহু বাধা তাকে ডিঙ্গাতে হয়।
এখানে আমরা প্রত্যেক মুজাহিদকে ছয় মাসের সামরিক ও সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্ব স্ব কর্মে ফিরে যেতে নির্দেশ দেই। অবশ্য তাদের প্রতি নির্দেশ থাকে, বছরের একটি মাস প্রত্যক মুজাহিদকে বাধ্যতামূলক ক্যাম্পে কাটাতে হবে এবং এগারো মাস সে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থেকে অতি সচেতনতা ও সার্থকতার সাথে সাংগঠনিক কাজ করবে। জিহাদের ফান্ড সংগ্রহ এবং সদসস্য সমস্যা বাড়ানোও তাদের অন্যতম দায়িত্ব।
প্রফেসর আইয়ুব বুখারী বললেন, আমাদের কাছে জিহাদ করার মতো প্রয়োজনীয় অস্ত্র-সামগ্রী বলতে গেলে কিছুই নেই। আমরা একান্তভাবে কামনা করি যে, আফগান মুজাহিদরা আমাদের সাহায্য করবে। অর্থ্যাৎ যে সব অস্ত্র তারা রুশবাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে, এ সব থেকে আমাদের কিছু দেবে। আমরা তাদের উচিৎ মূল্য অবশ্যই পরিশোধ করবো। এর সাথে সাথে আমরা অন্য একটি তাকিদ খুব বেশী অনুভব করছি, আশা করি আফগান মুজাহিদরা এ অভাবটুকু পূরণেও আমাদের সাহায্য করবে, তাহলো, রুশ ভাষায় ইসলামী সাহিত্য ও ধর্মীয় পুস্তকাদি ছেপে সরবরাহ করা এবং সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য সমরবিদ প্রশিক্ষক দিয়ে সাহায্য প্রদান।
আলী প্রফেসর আইয়ুব বুখারীর প্রত্যাশার জবাবে বললেন, রাশিয়ায় রুশ ভাষায় বই-পুস্তক সরবরাহের কাজ আহমদ খান নামের এক লোক করছেন, পাকিস্তানে রুশ ভাষায় ইসলামী বই-পুস্তক প্রিন্টিং এর কাজ চলছে। অচিরেই আশা করা যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণে ইসলামী সাহিত্য রুশ মুসলমানদের জন্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আমার দৃষ্টিতে রুশ মুসলমানদের ইসলামী পুস্তকাদির প্রয়োজন অস্ত্রের চেয়েও বেশী। আপনি যে তিনিটি চাহিদার প্রস্তাব করেছেন, আমি আফগানিস্তান গিয়ে আমার চীফ কমান্ডারের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করব। আপনার প্রস্তাবিত প্রয়োজন ছাড়াও সম্ভব সব ধরনের সহায়তা করতে আমরা চেষ্টা করবো-ইনশা আল্লাহ্।
অনেক রাত হয়ে গেছে তখন। আলোচনার বিরতি টেনে প্রফেসর বুখারী বললেন, আপনারা এখন বিশ্রাম করুন, আগামীকাল বাকী কথা হবে।
পরদিন প্রফেসর আইয়ুব বুখারী আলী ও আব্দুর রহমানকে পুরো ক্যাম্প ঘুরিয়ে দেখালেন। ক্যাম্পের অবস্থান ও কৌশলগত বিষয়ে আলী কিছু পরামর্শ দিলেন। প্রফেসর বুখারী সাথে সাথে আলীর কথাগুলো নোট করে নিলেন।
ক্যাম্পের স্থাপনা-বাংকার আলী ও আব্দুর রহামানকে দেখানোর পর নিজ আস্তানায় ফিরে এসে সকল মুজাহিদদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ পাঠালেন, আজ সন্ধ্যায় সকল মুজাহিদ আমার বাংকারে সমবেত হবে।
সকল মুজাহিদ প্রফেসর বুখারীর বাংকারে মাগরিবের নামায আদায় শেষে বসলো। আইয়ুব বুখারী সমবেত মুজাহিদদের কাছে আলী ও আব্দুর রহমানের পরিচয় করিয়ে আলীকে আফগান জিহাদ সম্পর্কে উপস্থিত মুজাহিদদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করলেন।
আলী রুশ মুসলমান মুজাহিদদের কাছে আফগান জিহাদের বিস্তারিত বর্ণনা শেষে বললেন, আমি মুজাহিদদেরকে ভৌগলিক সীমানা দিয়ে বিভক্ত করাকে পছন্দ করি না। মুজাহিদের বড় পরিচয় সে মুজাহিদ। সে আফগান হোক, রুশ হোক কিংবা ফিলিস্তিনী কিংবা কাশ্মীরী, আরাকান সবাই মুজাহিদ, সবাই ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ, মুসলমানদের আযাদীর সৈনিক। এখানে কোন ধরনের বিভক্তি টানা উচিৎ নয়। মুজাহিদদের মধ্যে ভৌগলিক ও অঞ্চলিক বিভক্তি সৃষ্টি, নেতৃত্বের মোহ এবং জাগতিক উদ্দেশ্যেরই প্রকাশ ঘটায়। এমনটি আল্লাহর পথে খাটি জিহাদের পরিচায়ক নয়। প্রকারান্তরে, এ মত পোষণকারীরা ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের লক্ষ্য সকল পরাধীন মুসলমানের আযাদী পুনরুদ্ধার করা। ভৌগলিক বিভক্তি সৃষ্টির দ্বারা কখনও বিশ্বের সকল পরাধীন মুসলমানদের মুক্ত করা সম্ভব নয়। বিশ্বের সকল মুজাহিদকে এক ও অভিন্ন মন-মানসিকতা নিয়ে জিহাদ করতে হবে।
আলীর বক্তৃতা শেষ হলে সমবেত সকল রুশ মুজাহিদ উচ্চ আওয়াজে 'আল্লাহু আকবার' ধ্বনি দিয়ে শ্লোগান দিলো, 'না রাশিয়া না আফগানিয়া ইসলামিয়া! ইসলামিয়া!'...............
বক্তৃতাপর্ব শেষ করে সকল মুজাহিদ এক সাথে আহার করলেন। আহারান্তে আলীকে মুজাহিদরা জিহাদ, বিশ্ব মুসলিমের অবস্থা এবং আফগান জিহাদ সম্পর্কে বহুবিধ প্রশ্ন করল। আলী সুন্দরভাবে সকল প্রশ্নের জবাব দিলেন। সবাই আলীর জবাবে সন্তোষ প্রকাশ করলো এবং আলীর আগমনে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে আলীকে ধন্যবাদ জানালো। গভীর রাত পর্যন্ত মুজাহিদদের সাথে আলীর মত বিনিময় পর্ব চললো।
প্রফেসর আইয়ুব বুখারীর অনুরোধে আলী ও আব্দুর রহমান এক সপ্তাহ এখানে অবস্থান করলেন। অবস্থানকালীন সময়ে আলী ও আব্দুর রহমান এখানের মুজাহিদদেরকে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিলেন এবং আইয়ুব বুখারীকে বহু ধরনের দরকারী পরামর্শ দিলেন।
এক সপ্তাহ কাটানোর পর আলী আইয়ুব বুখারীর কাছে বিদায় প্রার্থনা করলেন। আইয়ুব বুখারী অত্যন্ত ভগ্নহৃদয় ও ভরাক্রান্ত দরদী কন্ঠে বললেন, ভাই আলী! আশা করি আফগানিস্তান যেয়ে আমাদের ভুলে যাবে না।
আলী তাকে আশ্বাস দিলেন, কখনও ভুলবো না। ইনশা আল্লাহ-দেখবেন, কয়েক মাসের মধ্যেই অস্ত্র, ইসলামী বই-পুস্তক আসতে শুরু করবে। বিদায় বেলায় সকল মুজাহিদ সমবেত হয়ে বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তির জন্য মোনাজাত করলো এবং তকবীরে তকবীরে মুখরিত করে আফগান কমান্ডার আলী ও আব্দুর রহমানকে বিদায়ী অভিবাদন জানলো।
আলী ও আব্দুর রহমানের যাত্রাভিযান সহজ হওয়ার জন্য প্রফেসর বুখারী কয়েকটি ঘোড়ার ব্যবস্থা করলেন। দু'টিতে তারা আরোহন করে অন্যগুলোতে ক'জন সাথী মুজাহিদ পাঠালেন ঘোড়াগুলো ফেরত এবং যাত্রা পথ নিষ্কন্টক করে তাদের নিরাপদ স্থানে এগিয়ে দিয়ে আসার জন্য।
ঘোড়ায় চড়ে ফেরত পথে এক দুপুরেই আলী ও আব্দুর রহমান মেইন সড়কের কাছে রাখা তাদের গাড়ীর কাছে পৌঁছে গেলেন। সাথী মুজাহিদদের বিদায় দিয়ে গাড়ী নিয়ে আলী ইসমাঈল সমরকন্দীর বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলেন। অনেক রাতে তারা ইসমাঈল সরকন্দীর বাড়ীতে হাজির হলেন এবং রাতে সেখানেই থাকতে মনস্থ করলেন। ইসমাঈল সমরকন্দী আলীকে জানান, আপনাদের যাত্রা অনেক সুগম হয়েছে, স্টীমার এসে গেছে। ষ্টীমারেই আপনারা ফিরতে পারবেন। পরদিন ইসমাঈল সমরকন্দী তার নিজস্ব গাড়ীতে করে আলী ও আব্দুর রহমানকে আমু দরিয়ার তীর পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন এবং ষ্টীমারে আরোহনের সকল ব্যবস্থা নিজে থেকেই তদারকী করলেন।
দরিয়া পার হয়ে আলী আব্দুর রহমানকে নিয়ে আহমদ খানের বাগানে তার সাথে সাক্ষাত করতে গেলে আহমদ খানের অনুরোধে তাদের রাত এখানেই কাটাতে হলো। আহমদ খান রাশিয়ার পরিস্থিতি কি জানতে চাইলো। আলী সফরের মোটামুটি একটি চিত্র তার সামনে তুলে ধরে অনুরোধ করলেন, আপনি খুব শীঘ্রই রুশভাষায় ছাপানো ইসলামী বই-পত্র ওপারে পাঠানোর চেষ্টা করুন। ওখানে ইসলামী বই এর তীব্র প্রয়োজন। আর এর পাশা-পাশি রুশ মুজাহিদদের জন্য অস্ত্র প্রেরণের ব্যবস্থাও আপনাকে করতে হবে। অনেক যুক্তি-তর্কের পর আহমদ খান বই-পুস্তক এবং অস্ত্র উভয়ই রাশিয়ায় স্মাগলিং এর জন্য রাজী হলেন।
দ্বিতীয়দিন তারা কমান্ডার যবানগুল খান এর ক্যাম্পে পৌঁছলেন এবং রাশিয়ার সফরের রোমাঞ্চকর কাহিনী মুজাহিদদের শোনালেন। মুজাহিদরা আলীর রাশিয়া সফরের বর্ণনা শোনে উজ্জীবিত হলেন।
যবানগুল খানের ক্যাম্প হয়ে দ্রুত আলী নিজ ক্যাম্পে পৌঁছলেন এবং সর্বাগ্রে দরবেশ খানের সাথে বৈঠকে মিলিত হলেন। এ দেড় মাসের মধ্যে দরবেশ খান বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেছে। আলীর অনুপস্থিতিতে দরবেশ খান তার যাবতীয় কার্যক্রমের বর্ণনা দিলে আলী তার সুষ্ঠু কমান্ডিং এ অভিভূত হন এবং দরবেশ খানকে ধন্যবাদ জানান। এক সপ্তাহ আলী ক্যাম্পে অবস্থান করে সকল অধীনস্ত মুজাহিদ কমান্ডারদের সাথে পর্যায়ক্রমে ভবিষ্যত কার্যক্রম নিয়ে পরামর্শ করেন। তারপর আব্দুর রহমানকে নিয়ে হেডকোয়ার্টারের দিকে রওয়ানা হন। হেডকোয়ার্টার এসে আলী তাঁর রাশিয়া সফরের বিস্তারিত ঘটনাবলী সম্পর্কে চীফ কমান্ডারকে অবহিত করেন। চীফ কমান্ডার আলীর দুঃসাহসিক রাশিয়া সফরের কাহিনী শুনে অভিভূত হন। তিনি আলীকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, রাশিয়ায় প্রফেসর আইয়ুব বুখারীর মতো বিজ্ঞ লোকের প্রয়োজন আমরা অনেকদিন থেকেই অনুভব করছি। আমরা শীঘ্রই আইয়ুব বুখারীকে সব ধরনের সহযোগিতা করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
চীফ কমান্ডার আলী বললেন, তুমি অনেক দিন বাহিরে কাটিয়ে এসেছো। তাহেরাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে আর খোঁজ নেয়ার সময় পাওনি। এখন ওর সাথে দেখা করে এসো। পাকিস্তান থেকে এসে আইয়ুব বুখারী সম্পর্কে কি করা যায়, সে ব্যবস্থা তোমাকেই নিতে হবে। যেতে আগ্রহী হলে আব্দুর রহমানকেও তোমাদের সাথে নিয়ে যাও। পাকিস্তানে রুশ ভাষায় ইসলামী বই-পুস্তক ছাপানোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে আব্দুর রহমানের তত্ত্বাবধানে আফগানিস্তানেই আমরা রুশ মুজাহিদদের দিয়ে জরুরী পুস্তকাদি ছাপানোর ব্যবস্থা নেবো।
চীফ কমান্ডারের নির্দেশে আলী আব্দুর রহমানকে নিয়ে পাকিস্তান এলেন। তাহেরা, খলিল ও তাহেরার আম্মা আলী ও আব্দুর রহমানের আগমনে যারপরনাই খুশী হলেন। তাহেরা যুবায়দা ও আব্দুর রহমানের আম্মার পাঠানো উপহার সানন্দে গ্রহণ করল। তাহেরা আব্দুর রহমানকে বললোঃ ভাইজান! আমার পক্ষ থেকে কি যুবায়দাকে কিছু দেয়া হয়েছিল? আব্দুর রহমানের পক্ষে আলী তাহেরার জবাবে বললেনঃ কেবল একটি নয়-অনেকগুলো দামী ও পছন্দনীয় উপহার তোমার পক্ষ থেকে যুবায়দাকে এবং আব্দুর রহমানের জন্য নাশতার ব্যবস্থা করতে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। আব্দুর রহমান তাহেরার মায়ের সাথে বিগত দিনের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে, এমতাবস্থায় আলী খলিলের লেখা-পড়া এবং তার মাদ্রাসার হাল-হকিকত জেনে নিলেন।
এক সকালে। আলী ও আব্দুর রহমান নাশতা করছে। আব্দুর রহমান বললোঃ আলী! রণাঙ্গন ছেড়ে এলাম এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। শুধু বসে বসে দিন কাটছে। আম্মা ও তাহেরার সাথে সাক্ষাত করার ইচ্ছা ছিল তা তো হয়েছে। তা ছাড়া আমার এখানে থাকার তো কোন দরকারও নেই। তাড়াতাড়ি রণাঙ্গনে ফিরে যাওয়া উচিৎ।
একটু দূরে বসে তাহেরা রুটি সেকছিল। আব্দুর রহমানের কথা শুনে তাহেরা বললোঃ ভাইজান! আমার আদর-যত্নে কোন ত্রুটি হয়েছে নাকি? এক সপ্তাহ হলো না আপনি চলে যাওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছেন! পুরো মাস থেকে না গেলে আমি মনে করবো, হয়তো আমার আদর-যত্নে কোন ত্রুটি হয়েছে অথবা আমার এখানে থাকতে আপনার ভালো লাগে না এবং আমাদের প্রতি আপনার মনে কোন দরদ নেই।
আব্দুর রহমান বললোঃ না তাহেরা! এমন মনে করার কোন অবকাশ নেই। তোমার মতো বোনের কাছে হাজার বছর থাকলেও আদর-যত্নে ঘাটতি হবে না। তা ছাড়া মন তো চায়, তোমার কাছে অনেক দিন থাকি। কিন্তু ভাই! কোন মুজাহিদের পক্ষে জিহাদের ময়দান ছাড়া অন্য কোথাও মন টেকার কথা নয়।
আলী বললেনঃ আব্দুর রহমান! আমারও কেমন জআনি কর্মহীন কর্মহীন লাগছে। আমার হাতে খুজলী দেখা দিয়েছে। বহু দিন হয়ে গেল বন্দুক ব্যবহার করতে পারছি না। হাত পা ছমছম করে। আমার ইচ্ছা করে, আমি এখনই রণাঙ্গনে ফিরে গিয়ে জিহাদে শরীক হই।
অনতি দূরে একটি মোড়ায় বসে খলিল তাদের কথা শুনছিল। সে আব্দুর রহমানের উদ্দেশ্যে বললোঃ আব্দুর রহমান ভাই! আমার কাছে একটি প্রস্তাব আছে, এটা গ্রহণ করলে আপনার সময়ও কেটে যাবে, একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজও হয়ে যেতে পারে।
কি প্রস্তাব তোমার, খলিল! জানার আগ্রহ শোনে খলিল বললোঃ পাকিস্তানে ব্যাপক আকারে চোরাগুপ্তা হামলা এবং বোমাবাজি হচ্ছে। এসব অপকর্মের সাথে আফগানরাও জড়িত। যদিও কাজটি রুশ গোয়েন্দারাই পরিচালনা করে থাকে। এসব চোরাগুপ্তা হামলায় শরণার্থী ও পাকিস্তানিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে নির্মূল করতে পারলে পাকিসস্তানি সুহৃদ এবং আফগান মুজাহিদ উভয়েরই উপকার হবে। আমার মনে হয়, আপনি লাগলে সফল হতে পারবেন। রুশ, গোয়েন্দাদেরও ধরতে পারবেন।
ওহ! খুব ভালো একটা কাজের প্রস্তাব তুমি করছো খলিল! তবে কাজটি কিন্তু খুব সহজ নয়। একটু ভেবে বললো আব্দুর রহমান।
আলী এতক্ষণ খলিল ও আব্দুর রহমানের কথা শুনছিলেন। এ পর্যায়ে আলী বললেনঃ খলিল যা বলছে, তা নিঃসন্দেহে একটা রুঢ় বাস্তব। মুজাহিদ নামধারী কতিপয় গাদ্দার পার্থিব স্বার্থে কেজিবির চরবৃত্তি শুরু করেছে। যার ফলে পাকিস্তানে আফগান শরনার্থীদের মধ্যে জিহাদ সম্পর্কে দেখা দিয়েছে মারাত্মক বিরোধ। পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে এরাই ব্যবহৃত হচ্ছে ধ্বংসাত্মক বোমাবাজী ও চোরাগুপ্তা হামলার ক্রীরনক হিসেবে।
ওরা যে শুধু শরনার্থীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, তা নয়। পাকিস্তানে অবস্থানরত মুজাহিদ নেতাদের গুপ্ত হত্যাতেও ওদের হাত রয়েছে। হ্যাঁ, আজ থেকেই আমরা এদের দমন কাজ শুরু করবো। আব্দুর রহমান দৃঢ়স্বরে বললো।
মুজাহিদ ইনচার্জকে বলতে হবে, আমাদের এ পরিকল্পনা যেন ঘুণাক্ষরেও কেউ জানতে না পারে। আব্দুর রহমান আলীকে সর্তক করে দিলেন।
রাতে আলী ও আব্দুর রহমান গভীরভাবে ভেবে-চিন্তে দু'জনের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিল। আলী বস্তি, দোকান-পাট ও বাণিজ্যিক এলাকায় অনুসন্ধান চালাবে, দৃষ্কৃতিকারীদের কোন ক্লু পাওয়া যায় কিনা; আর আব্দুর রহমান সরকারী অফিস, হাসপাতাল এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান করবে।
খলিল পড়ার ফাঁকে উভয়ের কাজেই সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে শুরু করলো।
দু' সপ্তাহ অনেক অনুসন্ধান চালানোর পরও তারা কোন ক্লু বের করতে পারলো না। এদিকে রণাঙ্গন ছেড়ে তাদের পাকিস্তানে চব্বিশ দিন চলে গেছে। হাতে নেয়া কাজের কোনই কিনারা হলোনা। সারা দিন গভীর মনোযোগ সহকারে তিন জন অনুসন্ধান করে রাতে তিনজন কাজের পর্যালোচনা করে পরে দিন আবার বেরিয়ে পড়ে। মোটামুটি সন্ধ্যার পর পরই দিনে যেখানেই থাকুক সবাই বাসায় ফিরে আসে। আজ আলী ও খলিল সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরে এসেছে। কিন্তু আঃ রহমান এখনও ফিরে আসেনি। আলী আব্দুর রহমানের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেল। আব্দুর রহমান ফিরছে না। অথচ পাকিস্তানের এ সীমান্ত অঞ্চলটি মোটেই নিরাপদ নয়। গোত্রশাসিত এ অঞ্চলে রাতের আনাগোনা খুবই ঝুকিপূর্ণ। অস্ত্রধারী পেশাদার ডাকাতরা হর হামেশা পথচারিদের উপর আক্রমণ করে। রাত্রে কেউ একাকী তো দূরের কথা, দলবল নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায়ও বাইরে যাওয়া নিরাপদ মনে করে না। যে কোন সময় ওঁৎ পেতে থাকা ডাকাত দল অতর্কিতে হামলা করে অস্ত্রসম্পদ সবই ছিনিয়ে নিতে পারে।
এ অঞ্চলের এই ট্রাজেডি শত বছরের পুরনো। এ কথা ভেবে বাসার সবাই বড় চিন্তিত হয়ে পড়লো। অস্থিরভাবে ঘরের মেঝে পায়চারি করছিলেন আলী।
এক পর্যায়ে আলী তার মুজাহিদ এজেন্সিতে ফোন করলেন। কিন্তু সেখানে আব্দুর রহমানের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না।
বিষন্ন মনে আলী তাহেরার কাছে এই আশংকা ব্যক্ত করলেন, তাহেরা! আমার ভয় হচ্ছে যে, যদি আব্দুর রহমান রাশিয়ান এ কথা কেজিবির পাকিস্তানী এজেন্টরা জানতে পারে, তাহলে ওরা আব্দুর রহমানকে অপহরণ করতে পারে।
তাহেরা ও তাহেরার আম্মা আব্দুর রহমানের অমঙ্গল চিন্তায় কাতর হয়ে পড়েছিল। আলীর মুখে আশংকাজনক কথা শোনে তাহেরা অনুযোগের স্বরে বললোঃ আপনি ঘরে টহল দিবেন, না কিছু করবেন? প্লীজ আমার ভাইয়ের জন্য কিছু একটা করুন। আল্লাহ্ না করুন তার কিছু হলে....
আলী মুজাহিদ অফিসে টেলিফোন করে একটি গাড়ী আনালেন। দু'জন সশস্ত্র মুজাহিদকেও বললেন গাড়ীতে থাকতে। খলিলকে সঙ্গে করে নিজে গাড়ি নিয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করলেন। কিছু আব্দুর রহমানকে পাওয়া গেল না। মুজাহিদ অফিসের গেটকিপার বললো, আব্দুর রহমান অন্যান্য দিনের মতো অফিস বন্ধ হওয়ার সময়ই চলে গেছেন। কিন্তু কোথায় গেছেন এমন কোন আলামত কারো কাছে পাওয়া গেল না।
রাত সাড়ে দশটায় ভগ্ন মনে আলী বাসায় ফিরে এলেন। তাহেরা আব্দুর রহমানের নিখোঁজ সংবাদে ভেঙ্গে পড়লো। দু' চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকলো অশ্রু। আলী তাহেরাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাতে তাহেরার কান্না আরো বেড়ে গেল। সে বিলাপ শুরু করে দিল।
তাহেরার কান্না দেখে আলীও ভড়কে গেলেন। তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না, যে মেয়ে আপন ভাইকে নিজ হাতে হত্যা করে এক ফোটা চোখের পানি ফেললো না, আর সেই মেয়ে পাতানো ভাইয়ের জন্যে এভাবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে!
আলী একটু কঠিন হলেন। বললেন, তাহেরা! আব্দুর রহমান কোন অবুঝ শিশু নয়। যদি ওকে কেজিবি অপহরণ করে থাকে, তবে যে ভাবেই হোক আগামী কালের মধ্যেই আমি ওকে মুক্ত করবো ইনশা আল্লাহ্। যেখানেই থাক না কেনো, ওকে আমি খুজে বের করবোই করবো।
"আব্দুর রহমান যদি আমার আপন ভাই হতো, তাহলে সে শহীদ হলেও আমি একটুকু বিচলিত হতাম না। তবে আপন ভাই না হলেও যে পবিত্র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আমাকে বোন হিসেবে গ্রহণ করেছে, পরদেশী হয়েও আমাদের স্বাধীনতা ও মা বোনদের ইজ্জত রক্ষার্থে জিহাদ করছে, নিজে মা বাবা প্রেমিকার সস্নেহমায়া ভালোবাসা উপেক্ষা করে দ্বীনের স্বার্থে নিজেকে উৎসর্গ করেছে, মৌখিক ডাকের বোন হলেও ভাই হিসেবে আমাকে যে স্নেহ আদর দিয়েছে, পৃথিবিতে এর নজীর খুবই কম পাবে। আমি তার কোন অনিষ্ট কল্পনাও করতে পারছি না। তা ছাড়া সে আমাদের মেহমান। তার সকল শুভ দিক হেফাজত করা আমাদের দায়িত্ব। আমি আর ভাবতে পারছি না। খোদার কসম! আপনি ওর জন্য কিছু একটা করুন।
তাহেরার মা আলী ও তাহেরা উভয়কে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন আর বিক্ষিপ্তভাবে নিজেদের পেরেশানী নিয়ে কথা বলছিলেন। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল। আলী রিসিভার উঠালেই ওপাশ থেকে আব্দুর রহমানের কন্ঠ ভেসে এলো। মুহূর্তের মধ্যে চেহারার সকল দুঃশ্চিন্তা খুশীর আভায় তলিয়ে গেল। আলী উচ্চস্বরে বলে উঠলেনঃ আব্দুর রহমান! তুমি কোথায়? কোত্থেকে বলছো, এতো রাত হলো এখনও তুমি বাসায় ফিরলে না! তোমাকে সারা শহর খুঁজে আমরা হয়রান হয়ে গেছি। বাসায় কারো পানাহার নেই। কাঁদতে কাঁদতে তাহেরার অবস্থা শোচনীয়।
আলী এক নিঃশ্বাসে অবস্থাটা তুলে ধরলেন। ভাই আলী! আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুস্থ। তাহেরাকে আমার কুশল জানাও, আম্মাকেও বলো। আর হ্যাঁ, তুমি এক্ষুণি মুজাহিদ দফতরে এসো। আমি মুজাহিদদের দু'টি গাড়ী পাঠিয়েছি। আসার সময় পথে যে সব মুজাহিদ অবস্থানে আছে সবাইকে নিয়ে এসো। তবে বাসায় দু'জন সশস্ত্র পাহারাদার রেখে আসতে ভুল করো না।
আলীঃ কোন গোয়েন্দা আড্ডার সন্ধান পেয়েছো মনে হয়। আব্দুর রহমানঃ হ্যাঁ।
তাহেরাকে দু'কথা বলে শান্ত করো যে, তুমি ভালো আছো, নিরাপদ আছো, সুস্থ আছো।
তাহেরা দ্রুত আলীর হাত থেকে রিসিভার নিয়ে ভূমিকা ছাড়াই বললোঃ ভাইজান! আপনি আমাদের অনেক পেরেশান করেছেন। সেই সন্ধ্যা থেকে আমরা দুঃসহ-যন্ত্রণা ভোগ করছি। আপনি এর আগে একটি টেলিফোন করলেই পারতেন। আব্দুর রহমান বললোঃ বোন আমার! আমি দুঃখিত। তোমাদের বড় কষ্ট দিয়েছি। অতটা ভাবনার কি আছে। আমি ছোট্ট শিশু নাকি? আমাকে কারো পক্ষে ধরে নেয়া অতো সহজ নয়।
এতোটা দেরী হয়ে যাবে, তা আগে বুঝতে পারিনি। এজন্য টেলিফোন করার প্রয়োজন বোধ করিনি। আর যখন দেরি হয়ে গেছে, তখন আর টেলিফোন করার অবকাশ ছিল না। তোমাদের পেরেশানির কথা শুনে সত্যিই আমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আগামীকাল ভোরে যখন বিলম্বের কারণ জানতে পারবে, তখন যেরূপ পেরেশান হয়েছো, ঠিক তদ্রূপ খুশী হবে। আলীকে খাইয়ে আমার খানাও ওর কাছে দিয়ে দিও। রাতে আর বাসায় ফেরা সম্ভব হবে না।
তাহেরাঃ ভাইজান! কোন আশংকাজনক পরিস্থিতি নয় তো? আব্দুর রহমানঃ মুজাহিদ কোন আশংকাকে ভয় করে না। তোমার মুখে এসব আশংকার কথা মানায় না তাহেরা! আর কখনও এমন কথা বললে কিন্তু আমি ভীষণ রাগ করবো।
ঠিক আছে আর এমন হবে না। বললো তাহেরা।
খলিল এবং অন্য এক মুজাহিদকে আলী পাহারা দেয়ার জন্য রেখে পাকিস্তান থেকে আগত মুজাহিদদেরকে বিভিন্ন শিবির থেকে জাগিয়ে গাড়ীতে তুলে নিলেন। পনের বিশজন মুজাহিদকে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আলী মুজাহিদ দফতরে পৌঁছলেন।
মুজাহিদ দফতরটি ছিল সীমান্ত শহরের এক পাশে আবাসিক এলাকার বাইরে বিচ্ছিন্ন একটি এলাকার পুরাতন বাড়ীতে। দফতরের পাশ ঘেষেই প্রবাহমান একটি ছোট্ট নালা। দফতরটি যে এলাকায় অবস্থিত, সেটির সন্নিকটেই শহরের বড় কবরস্তান। এ কবরস্তানে শহীদের অসংখ্য কবর। নতুন কবরগুলোতে লাল নিশান রাতের ঝিরঝিরে বাতাসে দুলছে। দফতরের পাশের একটি খোলা জায়গায় মুজাহিদদের গাড়ী গ্রেজ এবং ঘোড়া খচ্চরের আস্তাবল।
আলী দফরে ঢুকেই দেখলেন, দফতরের এক কোণে এক যুবতী মহিলা মুখ নীচু করে বসে আছে। তার হাত পিছন থেকে বাধা। মহিলাটির পাশেই এ দফতরের বাইতুল মাল-এর ইনচার্জ আসফ খান। তারও হাত-পা শক্তভাবে বাঁধা। বিমর্ষ আসফ খান। আসফ খান ও মহিলার অবস্থা দেখে আলী বুঝতে পারলেন, এদের খুব পিটানো হয়েছে।
আলী লক্ষ্য করলেন, দফতরটি বেশ জমকালো। পুরো বাড়িটি দামী কার্পেটে সজ্জিত। দফতরের দেয়ালের একদিকে বড় একটি আফগান মানচিত্র। ওপর দিকে মুজাহিদদের দলীয় পতাকা সুদৃশ্য একখানা ফ্রেমে বাঁধানো। তা ছাড়া কয়েকটি তেল রং এর পেট্টেটও রয়েছে।
আব্দুর রহমান আলীকে বললোঃ আসিফকে তো তুমি জান। এ মহিলা ওর স্ত্রী। ওদের কাছ থেকে দেড় দু'ঘণ্টা আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রের করেছি। খুব দ্রুত অপারেশন চালাতে হবে। আপাততঃ এদের দল নেতাকে গ্রেফতার করতে হবে। বিস্তারিত পরে বলবো, এখন চলো।
দু'জন শক্তিশালী মুজাহিদকে এদের পাহারায় বসিয়ে দফতরের মেইন গেটে তালা লাগিয়ে গেটের বাইরে দু'জন সশস্ত্র মুজাহিদ রেখে বাড়িটির ছাদের উপরেও একজন অস্ত্রধারী মুজাহিদকে নিয়োজিত করলেন। যেকোন ধরনের বহিরাক্রমণে সতর্ক থাকতে।
এরপর আলী ও আব্দুর রহমান বারোজন মুজাহিদ সাথে নিয়ে ইপ্সিত লক্ষ্যে বের হলেন।
শহরটি ছিল সীমান্ত প্রদেশের একেবারে আফগান মুক্তাঞ্চলের সাথে। এখানকার অধিবাসী বিশ হাজারের বেশী নয়। কিন্তু উদ্বাস্তু শরণার্থীদের আগমনে শহরের বাসিন্দা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া শহরটি সীমান্ত প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসা কেন্দ্র।
রাতের সুনসান পথঘাট। কোথাও জনরব নেই। বেওয়ারিশ কুকুরগুলো গাড়ীর লাইটে পড়ে ভয়ার্ত ঘেউ ঘেউ শব্দে নিশির নিঃস্তব্ধতা ভঙ্গ করছিল। মাঝে মাঝে রাস্তার ধারে বন্য জানোয়ারের আনাগোনাও চোখে পড়ল। কয়েকটি গলি চক্কর দিয়ে শহরের অপর প্রান্তে একটি সরু গলি এসে আব্দুর রহমান গাড়ি থামালেন। গাড়ী থেকে নেমে আব্দুর রহমানের ইঙ্গিত মতো মুজাহিদরা অগ্রসর হলো। এক জায়গায় এসে আব্দদুর রহমান দু' মুজাহিদকে বললেনঃ তোমরা ডান দিকের গলিতে প্রবেশ করে অগ্রসর হয়ে প্রথম বায়ের গলিতে ঢুকে সামনের মসজিদের পাশে দাঁড়াবে। সেখানে পৌঁছে ডানে বায়ে কোন মানুষকেই যেতে দেবে না। যদি কেউ ছাদের উপর থেকে উঁকি দিয়ে গলির অবস্থা দেখতে চায়, তবে তাকেও ঠান্ডা করে দিবে। [চলবে]
ভাষান্তরঃ শহীদুল ইসলাম