✪---দেশে দেশে ইসলাম ---
=========================================
অপশক্তির সকল বাধা অতিক্রম করে পূর্ণাঙ্গ ইসলামের পথে এগিয়ে চলেছে সুদান
শহীদুল ইসলাম
---------------------------★
সুদানের বিপ্লবী সরকার গত ৩রা জুন বিপ্লবের পঞ্চবর্ষ পূর্তি উদযাপন করেছে ; পাঁচ বছরের সামরিক শাসনে সুদানে ঘটে গেছে আমূল পরিবর্তন। সমাজ ব্যবস্থায় লেগেছে জাগরণের ছোঁয়া। পাশ্চাত্যের গড্ডালিকা প্রবাহে ঐতিহ্য হারানাে সুদান এখন পূর্ব ঐতিহ্যের সােনালী সােপান বেয়ে তরতর করে সকল বাধা ছিন্ন করে এগোচ্ছে উত্তোরণের পথে । বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের প্লাবনে উতাল পাথল, তখন পশ্চিমা তথাকথিত গণতন্ত্রের ভাষায় বিকৃত সামরিক শাসনের সুদান অবিশ্বাস্য নজীর স্থাপন করেছে। সুদানী নাগরিকরা বিপ্লবী সামরিক শাসকদের গ্রহণ করে নিয়েছে অতি সহজ ও স্বাভাবিকভাবেই। বিপ্লবীরা কি করে জন মনে ঠাঁই করে নিল নিজেদের মর্যাদা পূর্ণ আসন, কোন যাদুকরী কর্মসূচী বিপ্লবীদের বরণীয় করেছে, এরই কিছু বর্ণনা এখানে বিধৃত করা হলো। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র সুদান। আফ্রিকার ছােট বড় আটটি রাষ্ট্রের দ্বারা বেষ্টিত এর সীমানা প্রতিবেশী কোন কোন রাষ্ট্রের সাথে সুদানের যেমন সুসম্পর্ক রয়েছে, তেমন কোন কোনটির সাথে তিক্ততা আছে। মােট কথা, অম্ল-মধু প্রতিবেশী সম্পর্কের মধ্যেই বিরাজ করছে সুদানের বিপ্লবী সরকার। ২৫০৫৮১৩ বর্গ মাইল আয়তনের সুদান বিশাল আফ্রিকা মহাদেশের মোট আয়তনের এক অষ্টমাংশ এবং পুরাে পৃথিবীর দুই শতাংশ । ১৯৯৩ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, সুদানের লোক সংখ্যা আড়াই কোটি। ১০৮২৫ বর্গ মাইল এলাকা নিয়ে অবস্থিত রাজধানী খার্তুম। রাজধানী খার্তুমের উত্তরাংশ টেক্সটাইল মিল, ইস্পাত, প্রিন্টিং ও ভারী কলকারখানা সমৃদ্ধ। উত্তর সুদানের শিল্প শহর মদনী, কাসালা, কাজারফ, পাের্ট সুদান, ওয়াও,কাশেরা, আরিয়াজ ও জুবার সাথে সংযােগ স্থাপনে নির্মিত হয়েছে একটি সেতু। বহু ভাষার দেশ সুদান । খ্যাত-অখ্যাত প্রায় ১১৫ টি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে সুদানীরা তন্মধ্যে ২৬টি ভাষা সমধিক প্রচলিত। তবে অর্ধেকেরও বেশী মানুষ কথা বলে আরবীতে । সুদানের রাষ্ট্রীয় ভাষা আরবী। ১৯৫৮ সালে আরবী ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। দক্ষিণ সুদানের অধিবাসীদের মধ্যে আরবী ভাষা-ভাষীর সংখ্যা কমহলেও বর্তমানে সেখানে আরবী চর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সুদানে শিক্ষিতের হার ৩১ শতাংশ । পুরুষদের জাতীয় পােশাক ঢিলা-ঢালা লম্বা জামা আর পাগড়ী। পাশ্চাত্যের আধুনিক ফ্যাশনের প্রতি ধাবমান তরুণীদের মধ্যেও এখন আপাদ মস্তক ঢাকা গাউনের প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে খুবই । এগারাে শতাব্দীতে সুদানে ইসলামের পুরােপুরি প্রসার ঘটে। অবশ্য নবম শতাব্দীতেই সুদানের কোন কোন অংশে ইসলাম পৌঁছে গিয়েছিল । জন্মলগ্ন থেকেই সুদান রাজনৈতিক উত্থান পতনের শিকার। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও শাসকদের টানাপােড়নে সুদানের উন্নয়ন বারবার বাধাগ্রস্থ হয়েছে। ১৯৫৬ সালে বৃটিশ অপশাসনের কবল থেকে সুদান স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জেনারেল ইব্রাহীম শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৬৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে একটি কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে, কিন্তু ১৯৬৫ সালের ২৫শে মে কর্নেল জাফর নামেরী, এক সেনা অভ্যুথানের মাধ্যমে কোয়ালিশন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। কর্নেল জাফর বেশী দিন সিংহাসনের স্বাদ ভোগ করতে পারেননি। ১৯৮৫ সালে আবদুর রহমান কর্নেল নামেরীকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । তিনি ১৯৮৬ সালে 'সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করলে আল -উম্মাহ পার্টি সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে এবং 'সাদেক আল-মাহদী প্রধান মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে সাদেক আল-মাহদীর সংসদীয় সরকারের তখত উল্টিয়ে দিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল আল-হাসান আহমদ আল-বশীর ক্ষমতায় আরােহণ করেন। জেনারেল উমর হাসান আহমদ আল বশীর ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ছায়া সংগঠন আল-জাবহাতুল ইসলামিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুদানে এই সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব ডক্টর আবদুল্লাহ হাসান তােরাবী। জেনারেল ওমর পরিপূর্ণ ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের অনুসারী, তীক্ষ্ণধী, সত্যান্বেষী নির্ভিক সত্যবাদী এবং পাশ্চাত্যের বিভীষিকা ও সাম্রাজ্যবাদীদের জন্যে ত্রাস । তাঁর পাঁচ বছরের শাসন অতীত সুদানের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল। যে সুদানী সমাজে প্রকাশ্যে হাইজ্যাক, ডাকাতি, সন্ত্রাস, ঘুষ, সুদ, প্রতারণা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছিল, যে সুদানের অলি গলিতে গড়ে উঠেছিল অগণিত মদের দোকান, হাত বাড়ালেই যেখানে পাওয়া যেতাে বিলেতী মদ। নগর জীবনের অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয়েছিল পতিতাপল্লী। রাজপথে, হােস্টেল পার্কে অবাধে চলতো দেহপসারীণীদের দেহ ব্যবসা; সেখানে আজ জ্ঞাতসারে দেহ ব্যবসার কথা কেউ ভাবতেই পারে না। কোন অপরাধী অপরাধ সংঘটনের সাহস পায় না। বিপ্লবী জেনারেল , উমর হাসানের ক্ষমতারােহণের পর সুদানী নাগরিক জীবনে ইসলামী চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামী জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। নব উদ্যমে বর্তমানে সুদানীরা নিজেদেরকে ইসলামের কঠোর অনুসারী হিসেবে উপস্থাপন করাকে গৌরব মনে করে। যে সুদানের সমাজ থেকে ইসলামী পর্দা প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছিল, বর্তমানে সেখানের ৫০% মহিলা' কঠোরভাবে শরয়ী পর্দা মেনে চলে। বিপ্লবী সরকারের আগে সহশিক্ষা ব্যবস্থা বিকল্প কিছু ছিল না । বর্তমানে পৃথক পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং হচ্ছে। মদ, জুয়ার কোন আড্ডা নেই, সিনেমা হল গুলােতে তালা ঝুলছে। সরকারী অনুমোদন ছাড়া কোন চলচ্চিত্র নির্মাণের অবকাশ নেই। কোন কোন সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান বিপ্লবী সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো এই সরকার সুদানের সমাজ জীবনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও নবপ্রজন্মকে ইসলামী চেতনা ও জিহাদী প্রেরণায় উজ্জীবিতকরণ। বর্তমানে সুদানে যে কোন নির্জন সুনসান এলাকা দিয়ে একজন উরসী তরুণী শরীরে স্বর্ণালংকার জড়িয়ে নির্বিঘ্নে একাকী হেঁটে যেতে কোন শংকাবােধ করে না ! কোন দুঃশ্চরিত্রের এমন দুঃসাহস নেই যে, কোন তরুণীর প্রতি বক্র দৃষ্টিতে তাকাবে বা তাকে বাক্যবাণে উত্যক্ত করবে। রাতের আঁধারে ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে যে কোন মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে । ছিনতাই, চাঁদাবাজী, গুণ্ডামী-মাস্তানী বর্তমান সুদান সমাজে নেই বলাই উচিত হবে। কর্নেল জাফর নামেরীর সময় থেকেই সুদানী সমাজ ইসলামী ভাবধারার প্রতি পূনঃ প্রত্যাবর্তন শুরু করে। কিন্তু তিনি কোন কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অতিশয় গােরা ছিলেন। যদ্দরুণ অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাঝে মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সাদেক আল-মাহদীও এ বিষয়টির প্রতি তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু জেনারেল উমর হাসান আহমদ আল-বশীর বিধর্মী সংখ্যালঘুদের জন্য ইসলামী অনুশাসন লঘু করে দিয়েছেন। যার ফলে দক্ষিণ সুদানের খৃষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে যে বিদ্রোহ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হতাে তা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার ফলে সুদান ইউরােপ ও পাশ্চাত্যের কোপানলে পড়ে । প্রতিদিন এমন নেই যে, ইউরােপ-আমেরিকার কোন সংবাদ মাধ্যম থেকে সুদানকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চলছে না। বিপ্লবী সরকারকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেয়ার জন্য আমেরিকা বিশেষ ভাবে কতিপয় বিষয়কে চিহ্নিত করেছে। আমেরিকা দক্ষিণ সুদানে সরকারের মানবাধিকার লংঘনের অভিযােগ এবং সুদানী নাগরিক ও ছাত্রদের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের জন্যেও সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযােগ করে। বর্তমানে সুদান সরকারের আইনানুযায়ী ইন্টারমেডিয়েট পাশ করার পর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করলে ডিগ্রীতে ভর্তি হওয়ার সুযোেগ দেয়া হয় না। মেয়েদের জন্যে বাধ্যতামূলক না হলেও অনেক মেয়েরাও স্বেচ্ছায় সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বর্তমান বিপ্লবী সরকার সুদানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থায় অভাবনীয় বিপ্লব সাধন করেছে। এই সরকার সুদানী সমাজকে ইসলামী সাঁচে ঢেলে সাজাচ্ছে এবং নাগরিকদেরকে কঠোর পরিশ্রমী, কষ্ট সাধন, ধৈর্য-সংযম ও ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত করেছে। দক্ষিণ সুদানের গােলযােগ পূর্ণ অঞ্চল সুদানের জন্য একটি মারাত্মক স্ট্রাটেজী । স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দক্ষিণ সুদানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে সরকারের রাজনৈতিক বিরােধ চলছে। বহুবার এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হলেও কোন ফলােদয় হয়নি। কোন অজ্ঞাত ইঙ্গিতে বারবারই ভেঙ্গে গেছে সমঝােতা । বর্তমান সরকার অত্যন্ত বিজ্ঞচিত ভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। কাজোকাজি এলাকার উপর সরকার কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোমর ভেঙ্গে গেছে, ওরা এখন অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে বিপুল অর্থ ব্যয় সুদানের অর্থনৈতিক দুর্বলতার বড় কারণ । ইউরােপের বহু দেশ দক্ষিণ খৃস্টান এলাকায় হাসপাতাল ও সাহায্য সংস্থা খুলে সরকারকে সাহায্য করতে চায়। তবে একথা স্পষ্ট যে, পশ্চিমারা সাহায্যের বেড়ীতে আবদ্ধ করে সরকারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন চাপ সৃষ্টির ঘৃণ্য সুযােগ সন্ধানই করে থাকে। তাই বিপ্লবী সরকার পশ্চিমা ইহুদী খৃস্টানদের সাহায্যের উপর ভরসা করার চেয়ে অপরাপর আরব বিশ্বের সাহায্যের উপরই বেশী ভরসা করে। দুঃখের ব্যাপার এই যে, মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন সৈন্য সমাবেশের প্রচন্ড বিরােধীতা করায় আরব রাষ্ট্রগুলাে সুদান সরকারের উপর নাখােশ হয়ে সাহায্য বন্ধ করে দেয়। বিশেষ করে সৌদি আরব ও কুয়েতের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল সুদান হঠাৎ করে সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভীষণ সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। অতি স্বল্প মূল্যে বা প্রায় বিনামূল্যে কুয়েত ও সৌদী আরব থেকে তৈল, সম্পদ পাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে প্রচুর দেশীয় মুদ্রা ব্যয় করে বর্তমানে বাইরে থেকে সুদানকে জ্বালানী সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতিকূলাবস্থা সুদানী জনগণ অতি ধৈর্য-সংযম এবং দৃঢ়তার সাথে মােকাবেলা করছে, সাহায্যের বিনিময়ে এক প্রকার নৈতিক গােলাম থেকে মুক্তির জন্যে বরং তারা অধিক খুশী হয়েছে। সুদানের অর্থনৈতিক পশ্চাদ্ধারতার অন্য একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে লিবিয়ার উপর জাতিসংঘের অর্থনৈতিক অবরােধ। যে পেট্রোল লিবিয়া থেকে সুদান অতি কম খরচে সংগ্রহ করতে পারত তা এখন সংগ্রহ করতে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠার জন্য সম্প্রতি সুদান এশিয়ার আরব দেশগুলাের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। পাকিস্তান ও ভারতের সাথে সুদানের অর্থনৈতিক যােগাযােগ স্থাপনের দেনদরবার চলছে।বাংলাদেশের সাথেও সুদানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ইতিবাচক । সুদান সরকার যাকাতের টাকা সরকারীভাবে সংগ্রহ করে খাতকদের মধ্যে বন্টন করে। যাকাতের ৮০% সরকার উসুল করে আর ২০% দাতারা নিজ অধীনে বিলি বন্টন করে। মানবাধিকার লংঘনের আমেরিকান অভিযােগ সুদান দৃঢ়তার সাথে নাকচ করেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার একদল পর্যবেক্ষক সুদান পর্যবেক্ষন করে, এই রিপাের্ট দিয়েছে যে, সুদান সরকারের হাতে সেখানে কোনরূপ মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে না। বিশ্ব ব্যাংকের দেয়া ঋণ ছাড়াই সুদানের ঘাড়ে আই এম এফ এর ১২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় সুদানের ভেটো ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ভঙ্গুর অর্থনীতিকে বর্তমান সরকার অনেকাংশে চাঙ্গা করতে সক্ষম হয়েছে। নিজের পায়ের উপর দাঁড়াতে সুদানের যদিও দীর্ঘ সময় প্রয়ােজন তবুও বিপ্লবী সরকার অর্থনীতিতে উল্লেখ যোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বর্তমানে সুদান নিজ তেল ক্ষেত্র থেকে তেল সংগ্রহ শুরু করেছে, বহু রাস্তা, ব্রীজ তৈরী করেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছে। নতুন নতুন অনেক কল কারখানা নির্মাণ করছে। আবাদী জমি উন্নয়ন সাধনে খাল কেটে সেচের ব্যবস্থা করছে। বহিবিশ্বের সাথে নতুন নতুন চুক্তি করছে। সুদান সরকার নাগরিকদের জন্যে এই চেতনা জাগাতে সক্ষম হয়েছে যে, পরনির্ভরশীলতা মুমিনের কাজ নয়, তাই আমাদেরকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে হবে। “আমরা যা উৎপাদন করব তাই আমরা আহার করব এবং আমরা যা বুনবো তাই আমরা পরিধান করব” এটাই এখন সুদানীদের জাতীয় শ্লোগান। সুদান সরকার সুদহীন ঋণ দেয়ার জন্য সকল ব্যাংক সমূহকে ইসলামীকরণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। শিক্ষা খাতে বর্তমান সুদান সরকার সব চেয়ে বেশী অগ্রগতি সাধন করেছে। বিপ্লবের আগে অশিক্ষার হার ছিল ৭৬ শতাংশ । ৫০% শতাংশ শিশু স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযােগ পেত; সেস্থানে বর্তমানে কোন কোন এলাকার ১০০% শিশু স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযােগ পাচ্ছে। আগে বছরে মাত্র পাঁচ হাজার ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযােগ ছিল, এখন প্রতিবছর ২৭ হাজার ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার সুযােগ পাচ্ছে। মাত্র চারটি বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্থলে বর্তমান সরকার, বিশটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে! বিদেশ-মুখী শিক্ষার্থীরা বর্তমানে নিজ দেশেই উচ্চ শিক্ষার জন্য আগ্রহী হচ্ছে। সুদান সরকার অল্পদিনের মধ্যেই কোন কোন এলাকায় অশিক্ষার হার শূণ্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। চলতি বছর সুদান সরকার আজহারী ও মাহদী নামে আরাে দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে। এতে বছরে ত্রিশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার সুযােগ পাবে। শিক্ষার মাধ্যম আরবী করা হয়েছে ।। আধুনিক সকল বিষয়কে আরবী ভাষায় রূপান্তর করার কাজ চলছে। সকল শিক্ষা কারিকুলাম ইসলামী ধাঁচে ঢেলে সাজানাে হচ্ছে। দেশ ব্যাপী সরকারী লাইব্রেরী, একাডেমী, বিনােদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জোর তৎপরতা চলেছে। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন এবং সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রােধে বিপ্লবী সরকার নাগরিকদের মধ্যে সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক সমিতি গঠন করেছে । । দরিদ্র জনগণের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে সরকার একটি সংস্থা ও ফান্ড গঠন করেছেন। এই ফান্ড থেকে গরীব কন্যা ও ছেলেদের দাম্পত্য জীবন গঠনে সাহায্য করা হয়। অপরাধ প্রবণতা সুদানী সমাজ থেকে বহুলাংশে নির্মূল হয়ে গেছে। বিচার ব্যবস্থায়ও বর্তমান সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দ্রুত ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিচারকদের সংখ্যাও বৃদ্ধি করেছে । ইতিমধ্যে বিচার বিভাগ মননে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের মধ্যে বিপুল সমাদৃত হয়েছে। সুদান বিপ্লবী সরকার আরেকটি উল্লেখযােগ্য সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে পার্লামেন্টে শুরা' ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। জাতীয় সংসদ ভবনের প্রবেশ ফটকের উপরে পবিত্র কুরআনের আয়াত লেখা রয়েছেঃ “তােমরা পরস্পর পরামর্শ করে কার্য সম্পাদন কর”। এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাও একটি শুভ লক্ষণ । উল্লেখ্য যে, বর্তমান সুদান পার্লামেন্টের স্পীকার একজন খ্যাতনামা আলেম। সুদান সরকার মাদ্রাসা, মসজিদ, হিফজুল কুরআন শিক্ষার প্রতি অতি গুরুত্ব দিয়েছে। রমযানে সরকারী ভাবে ইফতার, তারাবীহ ও সালাতুল লাইলের ব্যবস্থা করা হয় । সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, সুদান সরকারের মন্ত্রী গণ নিজেদের জন্য বরাদ্দ গার্ড ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। তারা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়ােজনও বােধ করেন না। সুদানী মন্ত্রীদের দেখা যায়, নিজেরাই রাজ পথে গাড়ী ড্রাইভিং করে যাচ্ছেন, অথবা অবাধে বাজারে গিয়ে কেনা কাটা করছেন। ট্রাফিক সিগনালে মন্ত্রীরাও সাধারণ নাগরিকদের মতাে ক্লিয়ারেন্সের জন্য অপেক্ষা করেন। যে কোন নাগরিক বিনা দ্বিধায় তাদের অভাব অভিযােগ সরাসরি মন্ত্রীদের কাছে বলতে পারে। কোন সময়ই নিরাপত্তা জনীত দুশ্চিন্তায় ভােগেন না । ইত্যাকার সবরকম জন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানের সক্ষম হওয়ার পিছনে এক মাত্র কারণ হচ্ছে বর্তমান সুদান শাসকদের দ্বীনদারী । ইসলাম রাষ্ট্র সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে সুখ শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করতে পারে এর উৎকৃষ্ট নজীর স্থাপন করেছে সুদানের বর্তমান বিপ্লবী সরকার।