বন্দী ভাইদেরকে যেন ভুলে না যাই
শায়খ আবু দুজানা পাশা রহিমাহুল্লাহ
(উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিনের ১ম সংখ্যা থেকে অনূদিত)
উম্মাহ আজ বড় বিপদগ্রস্ত। একের পর এক দুর্যোগ আছড়ে পড়ছে উম্মাহর ওপর। হক ও বাতিলের মাঝে যুদ্ধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এ আগুনে পুড়ে খাটি সোনায় পরিণত হচ্ছে উম্মাহর অন্তর্গত মুজাহিদদের সেই দলটি যাঁরা অবিচলতা ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আসছে দীর্ঘকাল থেকে। যাঁরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে বিসর্জন দিচ্ছেন এই দ্বীনকে সাহায্য করার জন্য। উম্মাহকে রক্ষা করার জন্য তাঁদের শ্রেষ্ঠ লোকগুলো নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে দিচ্ছেন।
এই উম্মাহর সবচেয়ে গভীর ক্ষত ও বড় বিপর্যয়গুলোর একটি হচ্ছে - কাফের-মুশরিক ও তাদের মুরতাদ আমলাদের কারাগারে বন্দী মজলুম মুসলিম। বন্দীদের কাফেলার সদস্যসংখ্যা দিন দিন শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে কিন্তু তাদের মুক্তির ক্ষীণতম সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তাদের এই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। মহৎপ্রাণ এসমস্ত ব্যক্তি জালিমের কারাগারে নানা প্রকার নির্যাতন-নিপীড়ন এবং লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার হচ্ছেন। এরা কারা? বিশ্ববাসীর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট শ্রেণী(আমরাএমনটাই মনে করি) — এরা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা হলেন তাইফা আল-মানসুরা বা সদা সাহায্যপ্রাপ্ত সেই দল, যারা আল্লাহর পথে জিহাদরত। যারাবন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন, স্বদেশ থেকে হিজরত করেছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলসাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লাম এবং মুমিনদেরকে সাহায্য করার জন্য। উম্মাহর জন্য আজ তাঁরা বিপদ-আপদ ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মুখোমুখি। তাঁদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগুলো আজ দাস বাজারে বিক্রি হচ্ছে। শয়তানের গোলামরা তাঁদেরকে দিয়ে ব্যবসা করে নিজেদের মনিবদের নৈকট্য লাভ করছে। জালিমের দল কিছুতেই নিবৃত্ত হচ্ছে না। আল্লাহর মুমিন বান্দাদের ব্যাপারে অন্যায় করতে তাদের বিবেক এতটুকুও বাঁধাদেয়না।
অপরদিকে উম্মাহ একমত, যে-কোনো পন্থায়ই হোকনা কেন, তা প্রয়োগ করে এসব বন্দীকে মুক্ত করা ওয়াজিব। কিতাব-সুন্নাহর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা এ বিষয়ে ভরপুর। এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরবর্তী মুসলিম ইমামদের পথ ও পন্থা। একজন বন্দীর জন্য, তাঁরা সেনাবাহিনী নিয়ে শহরের পর শহর জয় করেছেন। তুমুল যুদ্ধ লড়ে বিপুল অর্থ গনিমত লাভ করেছেন। আজকেরমত হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু বন্দী হলে তারা কি করতেন?! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلْوِلْدَٰنِ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلظَّالِمِ أَهْلُهَا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا
‘আর তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না? অথচ অসহায় নর-নারী ও শিশুরা কাতর কন্ঠে ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের মালিক,আমাদের যালেমদের এই জনপদ থেকে বের করে (অন্য কোথাও) নিয়ে যাও, অতপর তুমি আমাদের জন্য তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক (পাঠিয়ে) দাও, তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্য একজন সাহায্যকারী পাঠাও!’ [সূরা আন-নিসা,৪:৭৫]
কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার বাণী- ‘আর তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না?’ এই আয়াতে জিহাদের প্রতি জোরালোভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কারণ কাফির-মুশরিকদের ন্যক্কারজনক শাস্তি এবং দ্বীনের ব্যাপারে তাদের ফেতনা থেকে দুর্বলদেরকে মুক্ত করার মাধ্যম হলো এই জিহাদ। তাইতো আল্লাহ তায়ালা নিজ কালিমা বুলন্দ করার জন্য, তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য এবং তাঁর বান্দাদের থেকে দুর্বল মুমিনদেরকে উদ্ধার করার জন্য জিহাদকে ওয়াজিব করেছেন। যদিও এতে প্রাণহানি রয়েছে তবুও এটি ওয়াজিব। কারণ, লড়াইয়ের মাধ্যমে হোক কিংবা মুক্তিপণের ব্যবস্থা করেই হোক, মুসলিমদের জামাতের কর্তব্য হলো বন্দীদেরকে মুক্ত করা। এক্ষেত্রে মুক্তিপণ বিধিবদ্ধ হয়েছে এ কারণে যে, এটি প্রাণের চেয়ে তুচ্ছ’। ইমাম মালেক বলেন, ‘মানুষের উপর ওয়াজিব হলো, সমস্ত সম্পদ দিয়ে হলেও বন্দীদের মুক্তির ব্যবস্থা করা। এ বিষয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই’।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন , فكوا العاني - তোমরা বন্দী মুক্ত করো’। হাদীসে বর্ণিত عاني শব্দের অর্থ হলো: বন্দী।
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘যদি কোনো মুসলিম অপর কোনো মুসলিমকে এমন অবস্থায় ছেড়ে আসে যেখানে তার সম্ভ্রমহানি হচ্ছে এবং তার সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে, তবে আল্লাহ তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে আসবেন যখন সে সাহায্য পেতে চাইবে। আর যদি কোনো মুসলিম অপর মুসলিমকে এমন জায়গায় সাহায্য করে যেখানে তার সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে এবং ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, তবে আল্লাহ তাকে এমন জায়গায় সাহায্য করবেন যেখানে সে সাহায্য পেতে চাইবে’।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের সামান্য একটি পার্থিব কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ্ তারথেকে পরলৌকিক বড় একটি বিপদ দূর করে দেবেন’।
ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘কাফেরদের হাত থেকে একজন মুসলিমকে মুক্ত করতে পারা আমার কাছে জাজিরাতুল আরবের চেয়েও বেশি প্রিয়’।
খুলাফায়ে রাশেদীনের একজন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বন্ধুদের উদ্দেশ্যে লিখিত একটি পত্রে বলেন, ‘হামদ ও সালাতের পর…তোমরা নিজেদেরকে বন্দী ভাবছ। আল্লাহর কসম! তোমরা তো আল্লাহর রাস্তায় আটকা পড়ে আছ। তোমরা জেনে রাখ, প্রজাদের মাঝে আমি যা কিছুই বণ্টন করেছি, তারমধ্যে বিশেষভাবে তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সর্বাধিক ও সর্বোৎকৃষ্ট অংশটা দিয়েছি। আমি পাঁচ দিনার দিয়ে তোমাদের কাছে অমুকের ছেলে অমুককে পাঠিয়েছি। রোমের স্বেচ্ছাচারী শাসক তোমাদের থেকে অর্থ ছিনিয়ে নেবে এই ভয় যদি আমার না হতো তবে আমি আরও বাড়িয়ে পাঠাতাম। এদিকে অমুকের ছেলে অমুককে আমি তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি যেন সে তোমাদের ছোট-বড়, নারী-পুরুষ ও দাস-মনিব সকলের জন্য মুক্তিপণের ব্যবস্থা করতে পারে। অতএব, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। ওয়া আসসালাম!’
এমনিভাবে আমাদের সালফে সালেহীনরা এই ওয়াজিব বিধানটি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা এবং এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা দানের ক্ষেত্রে উত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
ইবনুল আরাবী বলেন, ‘সশরীরে তাদেরকে এমনভাবে সাহায্য করা ওয়াজিব হবে যে, আমাদের সংখ্যা যদি পর্যাপ্ত হয়, তাহলে তাদেরকে উদ্ধার করতে রওয়ানা হওয়ার পর কেউই যেন পেছনে না থাকে। আর না হয় তাদেরকে মুক্ত করার জন্য এমনভাবে আমাদেরকে সমস্ত সম্পদ ব্যয় করতে হবে যে কারো কাছে যেন একটি দিরহাম পর্যন্ত অবশিষ্ট না থাকে’। ইমাম মালেকসহ উলামায়ে কেরাম সকলেই এমনটাই বলেছেন। বর্তমান সময়ে মুসলিমরা শত্রুদের অনুগ্রহের উপর নিজেদের ভাইদেরকে ফেলে রাখছে অথচ তাদের কাছেরয়েছে সম্পদের স্তূপ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিপুল অর্থ, শক্তি-সামর্থ্য আর প্রাচুর্যের উপকরণ। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি'উন!
ইমাম কুরতুবী বলেন, “আল্লাহর কসম! আমরা সকলেই অন্য সবার বিপদ মুসিবত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। ফলে আমরা একে অপরের উপর হামলা করছি। আর এক্ষেত্রে মুসলিমদের সাহায্য না নিয়ে কাফেরদের সাহায্য নিচ্ছি। আমরা আমাদের ভাইদেরকে লাঞ্ছিত অপদস্থ অবস্থায় ফেলে রেখেছি। মুশরিকদের নিয়মকানুন তাদের ওপর কার্যকর করা হচ্ছে। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! আমাদের আলিমগণ বলেছেন, ‘বন্দীদের মুক্ত করা ওয়াজিব যদি এক দিরহামও অবশিষ্ট না থাকে’। ইবনে খোয়াইয মিন্দাদ বলেন, ‘আয়াতটিতে বন্দী মুক্ত করা ওয়াজিব করা হয়েছে। আর এই বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি নিজে বন্দী মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন এবং অন্যদেরকে বন্দী মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিমদের যুগ যুগধরে আমল এমনই। এ বিষয়ে উম্মাহ একমত। সাধারণ অবস্থায় বায়তুলমাল থেকে বন্দী মুক্তির ব্যবস্থা করা ওয়াজিব। যদি বায়তুলমাল না থাকে তবে সকল মুসলিমের উপর মুক্তিপণের ব্যয়ভার বহন করা ফরজ। তাদের মাঝে কেউ এ দায়িত্ব পালন করলে অন্যদের দায়িত্ব রহিত হয়ে যাবে’।
ইয ইবনে আব্দুস সালাম বলেন, “কাফেরদের হাত থেকে মুসলিম বন্দীদেরকে উদ্ধার করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতসমূহের একটি। কোনো কোনো আলেম বলেছেন, ‘তারা যদি একজন মুসলিমকে বন্দী করে, তবে আমাদের জন্য ওয়াজিব হলো, অবিরতভাবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া যতক্ষণ আমরা ওই বন্দীকে মুক্ত করতে না পারছি কিংবা তাদেরকে ধ্বংস করে না দিচ্ছি’। এখন তারা যদি মুসলিমদের বিরাট একটা অংশকে বন্দী করে, তবে এর গুরুত্ব কেমন হতে পারে বলে ধারণা হয়?”
এই ওয়াজিব বিধানটির দলিলসমূহ হাজির করা এখানে আমার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু তবুও আমি এ রচনাটি প্রস্তুত করেছি আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর অনুসরণে—
وذكر فإنّ الذكرى تنفع المؤمنين
আরআপনিউপদেশদিতেথাকুন, কারণনিশ্চয়উপদেশমুমিনদেরউপকারেআসে।
আমি এই কথাগুলো লিখেছি, যাতে আমরা এই বিশ্ব বাস্তবতায় দুর্যোগের যাঁতাকলে পিষ্ট আমাদের বন্দী ভাইদেরকে ভুলে না যাই। আমি সাধারণভাবে সকল মুসলিমকে এবং বিশেষভাবে মুজাহিদ দলটিকে এই বন্দীদের ব্যাপারে নিজেদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে কলম হাতে নিয়েছি। জালিমগোষ্ঠী এবং তাদের আমলারা যখন নিজেদের অপবিত্র হাত দিয়ে এই উম্মাহর গৌরব ও সম্মান ভূলুণ্ঠিত করছে, এ অবস্থায় বন্দী ভাইদেরকে মুক্ত করে সেই সম্মান ও গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়াসী হওয়ার অনুপ্রেরণা দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রাণ বিসর্জন ও অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে বন্দী মুসলিমদেরকে মুক্ত করার চেষ্টা করা হলে তা হবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পালন। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের উপর ঝুলে থাকা একটি শরয়ী ওয়াজিব আদায় হিসাবে গণ্য হবে। এই উম্মাহ সংকটাপন্ন অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এবং নিষ্ঠাবান মুসলিম সন্তানরা কঠিন অবস্থা পার করছে। এমতাবস্থায় এই দায়িত্ব পূরণ করা যদিও সহজ নয়, কিন্তু তাই বলে অনেকেই যেএটাকে অসম্ভব বলেদাবিকরেন, সে কথাও সঠিক নয়।
তাগুত গোষ্ঠীর বোধগম্য ভাষায় তাদেরকে সম্বোধন করাটুকুই আমাদের কাজ। আর আমরা সকলেই জানি, শক্তির ভাষা ছাড়া তাগুত গোষ্ঠী আর কিছুই বুঝে না। শক্তি প্রয়োগ ছাড়া তারা কিছুতেই ঠিক হবে না। শক্তির ব্যবহার ছাড়া তারা কিছুতেই আমাদের কথা শুনবে না। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আটককারী জালিম গোষ্ঠীকে এবং তাদের তোষামোদকারী ও পদলেহন-কারীদেরকে অন্য কোনোভাবে চাপ দেওয়া যাবে না। বরং রাজনৈতিকভাবে, দাওয়াতি পন্থায়, প্রচার-প্রচারণা ইত্যাদির মাধ্যমে, তাদের নিপীড়ন ও কুকর্ম মানুষের কাছে তুলে ধরতেহবে।বন্দীদের ব্যাপারে উম্মাহর দায়িত্বউম্মাহকেস্মরণকরিয়েদিতেহবে।অজ্ঞাত বিস্মৃত সাহায্যের কাঙ্গাল নারী-শিশুদের ব্যাপারে উম্মাহর দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিতেহবে। এক কথায় সম্ভাব্য সকল উপায়ে জালিম গোষ্ঠীর উপর চাপ প্রয়োগ করাও আমাদের কর্তব্য। অথচ আমরা একেবারেই গাফেল! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!
মুসলিম বন্দীরা, কাফের গোষ্ঠীর কারাগারে বন্দী থাকুক কিংবা তাদের আমলা মুরতাদ গোষ্ঠীর কারাগারে থাকুক, তাঁদেরকে মুক্ত করার জন্য আমরা যদি চেষ্টা করি, তাহলে তাঁদের ব্যাপারে আমাদের উপর চেপে থাকা দায়িত্ব পালিত হবে। তাঁদের হক আদায় করা হবে।
এর পাশাপাশি এতে করে আমাদের বন্দী ভাইদের মনোবল চাঙ্গা হবে। তাঁদের দুর্ভোগ কমবে। তাঁরা এই ধারণা লাভ করবে যে, তাঁদের পেছনে পুরো একটি জাতি চিন্তা শক্তি ব্যয় করছে। তাদের ভাইয়েরা এই প্রতিজ্ঞায় নিজেদেরকে আবদ্ধ করেছে যে, সম্মানের সঙ্গে এই বন্দীদশা থেকে যতদিন তাঁরা, তাঁদের ভাইদের মুক্ত করতে না পারছে, পরিবার-পরিজনের কাছে যতদিন তাঁরা, বন্দী ভাইদেরকে নিরাপদে পৌঁছে দিতে না পারছে; ততদিন তারা কিছুতেই শান্ত হবে না,তাঁদের মাঝে স্থিতি ফিরে আসবে না। আমাদের এই প্রয়াস ইনশাআল্লাহ বন্দী ভাইদের নিজেদের দ্বীনের ওপর অটল থাকার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। যে আদর্শের জন্য তাঁদেরকে আটক করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে সে আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।
তাছাড়া, এতে বন্দীদের পরিবার-পরিজনের হক আদায় করা হবে। তাঁদের মনোবল দৃঢ় হবে। তাঁদের মনে এই আশা সঞ্চারিত হবে যে, অচিরেই সেদিন আসছে যেদিন আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় তাঁরা আপনজনকে দেখে নিজেদের চক্ষু শীতল করতে পারবেন।
একইভাবে, এতে উম্মাহর মনোবল দৃঢ় হবে। উম্মাহ দেখতে পাবে, তার সন্তানদের মাঝে এমন ব্যক্তি রয়েছে যে তার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে পারে এবং তাকেদেখে আরো অনেকেই জীবন উৎসর্গ করতেউৎসাহিতহবেইনশাআল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ! মতপার্থক্য সত্ত্বেও এ বিষয়ে উম্মাহর ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত।
এমনিভাবে মুসলিম বন্দীদেরকে মুক্ত করার চেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন উপায় গ্রহণ করা হলে আমাদের শত্রুরা এই বার্তা পাবে যে, আমরা কিছুতেই জুলুম মেনে নেব না। আমরা লাঞ্ছনা-গঞ্জনা কিছুতেই সহ্য করব না। এমনিভাবে গোটা বিশ্ববাসী এই বার্তা পাবে যে, আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে যাবে, আমাদের সকলের প্রাণ উৎসর্গিত হয়ে যাবে, আমাদের অর্থ-কড়ি সবই নিঃশেষ হয়ে যাবে, প্রয়োজনে আমরা গাছের পাতা খাব, আমরা পেটে পাথর বাঁধব, তবু আমরা আমাদের বন্দী মুসলিম ভাইদেরকে মুক্ত করে ছাড়ব। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে তারা নিরাপদে, নির্বিঘ্নে, নির্ঝঞ্ঝাটে,সচ্ছল ,স্বাচ্ছন্দ্য জীবন-যাপন করছে, এটি না দেখা পর্যন্ত আমরা কিছুতেই থামব না।
শেষ করব উম্মাহ এবং তার মুজাহিদ দলটিকে এক বিশেষ ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে তাঁদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে । কর্মমুখর জীবনের অধিকারী সেই আলেমের কথা বলছি, যিনি বিপদ-আপদ সহ্য করে ধৈর্যের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিপদ-আপদে, সহিষ্ণুতা ও অবিচলতায় যিনি পর্বতপ্রমাণ। বন্দী-স্বাধীন সকলের যিনি ইমাম। যিনি আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী এবং জালিম ও মুশরিকদের আতঙ্ক। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন ডক্টর ওমর আব্দুর রহমান। আমি ভাইদেরকে বলব, এ ব্যক্তির ব্যাপারে আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন! এ ব্যক্তির ব্যাপারে আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন!
আমাদের জানা উচিত যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে তখনই সাহায্য করেন, যখন তারা তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তিনি তাঁর বন্ধুদেরকে তখনই মদদ দান করেন, যখন তারা তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করে। আমাদের দায়িত্ব তো শুধু এটাই যে, আমরা আল্লাহর ওয়াদা সত্য মনে করে বাতিল শক্তির ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকব, এরপর তো আল্লাহই তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করে দিবেন। আমরা তো সংখ্যা বা বাহ্যিক উপায়-উপকরণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করি না; বরং আমাদের হাতিয়ার তো হলো এই দ্বীন। আমরা তো আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পালন করতে রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হই। আমাদের শক্তি তো এখানেই। আর আল্লাহ নিজ কাজে প্রবল কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
হে আল্লাহ, পৃথিবীর সকলস্থানের আমাদের মুসলিম বন্দী ভাই-বোনদেরকে মুক্ত করে দিন। হে আল্লাহ, আপনি তাঁদের অন্তরে সাহস সঞ্চার করে দিন এবং তাঁদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন। হে রহমান, হে রহিম, আপনি তাঁদের জন্য দ্রুত আপনার রহমতের ফায়সালা করুন! ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
******