JustPaste.it

আমরা যাদের উত্তরসূরী

 

পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা কথোপকথন: জনৈকা বুযুর্গ মহিলার ইলমী কারামাত

জসীম উদ্দিন খান পাঠান

===========================================================

 

        হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মােবারক (রাহঃ) (১১৮-১৮১ হিঃ) ছিলেন একজন উঁচু পর্যায়ের সুবিখ্যাত আলেম, বুযুর্গ, ফকীহ ও হাদীস শাস্ত্রবিদ। বাগদাদের মরু অঞ্চলে ১১৮ হিজরীতে তাঁর জন্ম। তিনি আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ শিখরে আরােহণসহ একজন দুনিয়া বিখ্যাত ফকীহ ও হাদীস শাস্ত্রবিদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। ইবনে মােবারক ছিলেন ইমাম আবু হানিফা’র (রঃ) শাগরেদগণের মধ্য থেকে অণ্যতম একজন। অসংখ্য কেরামত ও অলৌকিকতার দ্বারা তাঁর জীবন পরিপূর্ণ। একদা তিনি হেজাজের সফরে যাচ্ছেন।রাস্তার জনশূন্য প্রান্তরে জনৈকা আরব বংশােদ্ভুত বৃদ্ধা রমনীকে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে থাকতে দেখে তিনি বিস্মিত হলেন। অতঃপর মহিলাকে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মহিলা সকল কথার উত্তর পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা দিয়ে ইবনে মােবারককে তাজ্জব বানিয়ে দেন।

 

        এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে মােবারক নিজেই বলেন, অতঃপর আমি তার নিকটে গিয়ে সালাম দিলাম। সালামের জবাবের পর বৃদ্ধা বল্লেন, “অতঃপর তাদেরকে সালাম জানানাে হবে দয়াময় রবের পক্ষ থেকে।” (ইয়াসিন ৫৮)

 

        ইবনে মুবারকঃ আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন। আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন?

 

        বৃদ্ধাঃ আল্লাহ যাকে পথহারা করেন তাকে কেউ পথ দেখানাের থাকে না।” (আ'রাফঃ ১৮৫) অর্থাৎ, আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি।

 

        ইবনে মুবারকঃ আপনার গন্তব্যস্থল কোথায়?

 

        বৃদ্ধাঃ “সে মহান সত্তার পবিত্রতা যিনি তাঁর প্রিয় বান্দাকে (মেরাজের) রাতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা (বায়তুল মাকদাস) পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। (বনী ইসরাঈলঃ ১) অর্থাৎ হজ্ব সম্পাদন করে বায়তুল মাকদাস যাওয়ার ইচ্ছা।

 

        ইবনে মুবারকঃ এখানে আপনি কয়দিন যাবত এভাবে পড়ে আছেন?

 

        বৃদ্ধাঃ “পূর্ণ তিন রাত (দিনসহ)” (মারইয়ামঃ ১০)

 

        ইবন মুবারকঃ আপনার কাছে কি পানাহারের কিছু আছে?

 

        বৃদ্ধাঃ “তিনিই (আল্লাহ) আমাকে খাওয়ান এবং তিনিই আমাকে পান করান।” (শুয়ারাঃ ৭৯)

 

        ইবনে মুবারকঃ আপনি ওজুর প্রয়ােজন কিভাবে সমাধা করেন?

 

        বৃদ্ধাঃ “অতঃপর যদি তােমরা পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও।” (নিসাঃ ৪৩)

 

        ইবনে মুবারকঃ আপনি কি খাদ্য খাবেন? আমার নিকট কিছু খাদ্য আছে।

 

        বৃদ্ধাঃ অতঃপর তােমরা রােজাকে রাত পর্যন্ত পূর্ণ কর।” (বাকারাঃ ১৮৭) অর্থাৎ, আমি রােযাদার।

 

        ইবনে মুবারকঃ এটা তাে রমযান মাস নয় সুতরাং রােযা ভাংতেও পারেন।

 

        বৃদ্ধাঃ “আর যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট চিত্তে সৎকাজ করে আল্লাহ্ পাক তার মর্যাদা দেন এবং ব্যক্তির নিয়্যত সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত।” (বাকারাহঃ ১৫৮) অর্থাৎ নফল রােযার বিনিময়েও বিপুল সওয়ার রয়েছে।

 

        ইবনে মুবারকঃ সফরের অবস্থায় তাে রােযা ভেঙ্গে ফেলা যায়।

 

        বৃদ্ধাঃ “আর সফরাবস্থায় যদি তােমরা রােযা রাখ তবে সেটাই উত্তম। যদি তােমরা এর নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করতে সক্ষম হও।” (বাকারাহঃ ১৮৪) অর্থাৎ সফরের অবস্থায় রােযা রাখাই উত্তম।

 

        ইবনে মুবারকঃ আপনি আমার মত স্বাভাবিক ভাষায় কথা বলছেন না কেন?

 

        বৃদ্ধাঃ “যে কোন্ বাক্য মুখ থেকে বের করা মাত্র তা লিপিবদ্ধ করার জন্যে একজন প্রহরী প্রস্তুত রয়েছে।” (কাহফঃ ১৮) অর্থাৎ যেহেতু সব কথাকে ফেরেশতা লিপিবদ্ধ। করে নেয় সুতরাং কুরানিক বাক্য দ্বারা কথা বলাই ভাল, যেন আমলনামা পবিত্র কুরআন পাঠের সওয়াব দ্বারা ভরপুর করা যায়।

 

        ইবনে মুবারকঃ আপনি কোন গােত্রের লােক?

 

        বৃদ্ধাঃ “আর যে বিষয়ে তােমার স্পষ্ট জ্ঞান নেই সে বিষয়ে লিপ্ত হয়ােনা, নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তকরণ সম্পর্কে প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করা হবে।” (বনী ইসরাঈলঃ ৩৬) অর্থাৎ প্রয়ােজনাতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত। যেহেতু উল্লেখিত অঙ্গ সমূহ সম্পর্কে কেয়ামতের দিনে জিজ্ঞেস করা হবে।

 

        ইবনে মুবারকঃ তবে কি আপনি আমার এ অপরাধ ক্ষমা করবেন না?

 

        বৃদ্ধাঃ “আজ তােমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযােগ নেই। আল্লাহ তােমাদের অপরাধ ক্ষমা করুন।” (ইউসুফঃ ৯২} অর্থাৎ আমি তােমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

 

        ইবনে মুবারকঃ আপনি যদি কাফেলার সাথে একত্রে যাওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছুক থাকেন তবে কি আমি আপনাকে উটের ওপর করে নিয়ে যাব?

 

        বৃদ্ধাঃ “এবং তােমরা যে সৎকাজ করবে আল্লাহ্ পাক সে বিষয়ে অবগত।” (বাকারাহঃ ১৯৭) অর্থাৎ আমাকে নিয়ে চলুন। আল্লাহ্ আপনাকে এর পুরস্কার দিবেন।

 

        ইবনে মুবারকঃ আমি উটনীটিকে বসিয়ে দিয়েছি আপনি এর উপর আরােহন করুন।

 

        বৃদ্ধাঃ “আপনি মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন দৃষ্টি নীচু করে রাখে।” (নূরঃ ৩০) অর্থাৎ আমি আরােহন করছি আপনি এখন দৃষ্টি বন্ধ রাখুন। আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক বলেন, আমি উটনিকে কাবু করে বসাতে যেয়ে সেটির পা বেঁধে নিতে ভুলে যাই। ফলে মহিলা আরােহণ প্রাক্কালে উটনীটি নড়ে উঠলে তাঁর পরিধেয় কাপড় পাঁক খেয়ে ছিড়ে যায়। এ কারণে মহিলা তেলাওয়াত করে ওঠল, “আর তােমাদের ওপর যে দুঃখ মছিবত পৌছে তা তােমাদেরই হস্ত দ্বারা অর্জিত।” (আশশুরাঃ ৩০) অর্থাৎ এই মছিবত তােমার ভুলের কারণেই হয়েছে।

 

        ইবনে মুবারকঃ আপনি একটু দাঁড়ান। আমি উটনীটির পা বেঁধে দিচ্ছি।

        বৃদ্ধাঃ "অতঃপর আমি সুলায়মান (আঃ)-কে এর সমঝ দান করেছিলাম।” (আম্বিয়াঃ ৭৯) অর্থাৎ সুলায়মান (আঃ)-কে আল্লাহ পাক যেভাবে সমঝ দান করেছিলেন অতঃপর তােমাকে সে বুঝ দান করলেন।

 

        ইবনে মুবারকঃ আমি উটনীটি বসিয়ে দিয়েছি সুতরাং আপনি এখন তার ওপর সওয়ার হােন।

 

        বৃদ্ধাঃ “সেই জাতের পবিত্রতা, যিনি আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন এ প্রাণীকে। অন্যথায় আমরা তাে একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না এবং নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তন করব।” (যুখরুকঃ ১৩)

 

        ইবনে মুবারক আরাে জানালেন, অতঃপর আমি উটের লাগাম টেনে ধরে শব্দ করে কবিতা আবৃত্তি করতে করতে দ্রুত হাটছিলাম! এতে মহিলা বিরক্ত বােধ করলে তেলাওয়াত করে উঠলেন, “এবং নিজের কণ্ঠস্বরকে অবদমিত করুন। নিশ্চয়ই আওয়াজ সমূহের মধ্যে সর্বাধিক কর্কশ আওয়াজ হল গাধার।” (লােকমানঃ ১৯) সুতরাং আমি আওয়াজ এবং চলার গতি ধীর করে দিলে মহিলা এ আয়াত খানা তেলাওয়াত করেন, “অতঃপর তােমরা যে পরিমাণ কুরআন সহজে পড়া যায় পড়।” (মুযযাম্মিলঃ ২০)

 

        ইবনে মুবারকঃ আমি এতক্ষণ আপনার কাছ থেকে খায়রে কাসীর অর্থাৎ পাথেয় স্বরূপ অনেক কিছুই শিখলাম।

 

        বৃদ্ধাঃ “আর জ্ঞানী ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে” (আলে-ইমরানঃ ৭)

        ইবনে মুবারক একথা শুনে চুপ হয়ে যান এবং চলতে চলতে কাফেলার সাথে মিশে যান এবং মহিলাকে জিজ্ঞেস করেন, এই কাফেলায় কি আপনার নিজস্ব কোন লােকজন আছে?

 

        বৃদ্ধাঃ “ধন-সম্পদ, সন্তান, সন্ততি।” (কাহফঃ ৪৬) অর্থাৎ এই কাফেলার সাথে আমার এই সব রয়েছে। পরে ইবনে মােবারক জানতে পারেন, সেই মহিলা চল্লিশ বছর যাবত এভাবে কুরআনের আয়াত দ্বারা কথাবার্তা বলছেন। যা বাস্তব পক্ষে অস্বাভাবিক বিস্ময়কর বইকি!

 

*****