সত্যের সন্ধানে
ইসাবেলা
মাওলানা আব্দুল হালীম শরর লখনভী।
অনুবাদ -মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক।
(পূর্ব প্রকাশের পর)
দ্বিতীয় অধিবেশন
সোমবার
সকাল হতেই বড় গীর্জার পাদ্রীদের আনাগোনা পুনরায় শুরু হয়। ইসাবেলার সাথে আজ বহু খৃস্টান মহিলা সভায় আগমন করেছে। এই চিত্তাকর্ষক সম্মেলনের মহামূল্যবান আলোচনার আনন্দ উপভোগের জন্য আজ তারা অত্যাধিক উৎসুক। অল্পক্ষণ পরেই ওমর লাহমী, মাআ'য এবং আরও কতিপয় উলামায়ে ইসলাম গীর্জায় প্রবেশ করলেন। তাদের দর্শনমাত্রই পাদ্রীসাহেবগণের চেহারায় এক নিরুৎসাহের ভাব পরিস্ফুট হয়ে উঠল এবং তারা পরস্পর ফিসফিস্ শব্দে কথাবার্তা বলতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর ওমর লাহমী সভাকে উদ্দেশ করে বললেনঃ
অদ্যকার আলোচ্য বিষয় যীশুর খোদায়িত্ব এবং প্রায়শ্চিত্ত'।গতকল্য এই কথাই সভায় সাব্যস্ত হয়েছে। আর যেহেতু একই সময়ে দুটি বিষয়ের আলোচনা হতে পারে না, তাই এতদুভয়ের মধ্যে যে কোন একটি বিষয়কে প্রথমে আলাচনার জন্য নির্বাচিত করা হোক।
পিটার্সঃ উক্ত দুটি বিষয় প্রকৃত প্রস্তাবে একই এবং এতদুভয়ের মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক রয়েছে, কাজেই আপনি এর যে কোন একটি সম্বন্ধে প্রথমে আলোচনা করতে পারেন।
ওমর লাহমী সর্বপ্রথমে কুরআন মজিদের সূরায়ে লোকমান থেকে কয়েকটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সমবেত জনতার উপর এক পবিত্র মোহময় পরিবেশের সৃষ্টি হলো। বিশেষভাবে ইসাবেলার চেহারায় এক নৈসর্গিক পরিবর্তন দেখা দিল। এমনকি তেলাওয়াত শেষ না হতেই সে বেহুশ হয়ে পড়ে গেলো। তার সহচরবৃন্দ সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে উঠাল। পিটার্স ও মীখাইল ইসাবেলার কোমল মুখমন্ডলের নিকট ঝুঁকে পড়ে তার এরূপ হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, কিন্তু কোন উত্তরের পরিবর্তে চক্ষু হতে অশ্রু নির্গত হয়ে তার গোপনলাপী গণ্ডযুগল সিক্ত হতে লাগল।
যথেষ্ট পরিচর্যার পর ইসাবেলার জ্ঞান ফিরে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের পর সে বল্লো, কিছুদিন যাবত অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম জনিত দুর্বলতার ফলেই সম্ভবতঃ এরূপ হয়েছিল। যা হোক এজন্য "আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। সভার কাজ আপনারা রীতিমত চালিয়ে যান। আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কোন কোন পাদ্রীর অন্তরে সন্দেহের উদয় হয়েছিল যে, সম্ভবতঃ কুরআনের আয়াত ইসাবেলাকে প্রভাবান্বিত করেছে। কিন্তু ইসাবেলার জবাবে তাদের সন্দেহ বিদূরিত হলো। সভার কাজ পুনরায় চালু হলো। ওমর লাহমী সভা শান্ত ভাব ধারণ করার পর দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেনঃ
মহোদয়গণ! আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, খৃস্টীয় আকায়েদের প্রকৃত ভিত্তি যীশুর খোদায়িত্ব ও প্রায়শ্চিত্তের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমি এখন শুধু প্রায়শ্চিত্ত সম্বন্ধে একটি কথা জানতে চাই। যীশুর খোদায়িত্বের মীমাংসাও একথার মাধ্যমেই সাধিত হবে। কথাটি হলো, প্রায়শ্চিত্তের জন্য খোদা-পুত্রেরই কি প্রয়োজন ছিল? এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোন একজন সাধু ব্যক্তিকে নির্বাচন করলেই চলত, যিনি সম্পূর্ণ পাপী মানবের পক্ষ হতে ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে আপন জীবন বিসর্জন দিতেন, স্বয়ং খোদার পুত্রকে কেন ক্রুশবিদ্ধ করা হলো?
এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য মহামান্য পিটার্সকেই পুনরায় নির্বাচিত করা হলো; কিন্তু তাঁর অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। অত্যন্ত দ্বিধা দ্বন্দ্বের ভিতর তিনি দাঁড়াতে বাধ্য হলেন এবং প্রকম্পিত স্বরে জবাব দিতে আরম্ভ করলেন।
পিটার্সঃ প্রায়শ্চিত্তের জন্য খোদা-পুত্রেরই প্রয়োজন ছিল , কেননা সমস্ত মানবই পাপী, চাই সে নবী বা রাসূলই হোক না কেন। আর একথা স্পষ্ট যে, কোন পাপী কখনও অন্য পাপীর জন্য সুপারিশকারী হতে পারে না। যেহেতু খোদাওন্দ যীশু স্বয়ং খোদারই একমাত্র পুত্র, তাই তিনি গোনাহ হতে পবিত্র এবং নিজেও খোদা ছিলেন, কাজেই গোনাহগারদের প্রায়শ্চিত্তের জন্য তিনিই ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন।
ওমরঃ বেশ, তবে আর একটি কথা ব্যক্ত করুন, ক্রুশবিদ্ধ করে যীশুর কোন জিনিসটিকে হত্যা করা হয়েছে? তা কি যিশুর খোদায়িত্ব, না তার মানবত্ব? যদি যীশুর খোদায়িত্ব নিহত হয়ে থাকে, তবে বুঝতে হবে যে, একত্ব গুণের অধিকারী স্বয়ং খোদার সত্তাই ক্রুশের যাতনা বরদাস্ত করেছেন এবং খোদার স্বত্তার উপরই মৃত্যু এসেছে অর্থাৎ স্বয়ং খোদারই মৃত্যু ঘটেছে। আর যদি বলা হয়, যীশুর মানবত্ব ক্রুশবিদ্ধ হয়েছে এবং তার মানবত্বই সম্পূর্ণ যাতনা সহ্য করেছে, তবে তো আপনার দেয়া জবাবটি অর্থহীন সাব্যস্ত হবে। কেননা, এমতাবস্থায় কোন মানুষকে ক্রুশবিদ্ধ করাই যুক্তিযুক্ত ছিল, খোদাকে নয়। কারণ এতদুভয় অবস্থাতে শুধু মানবত্বের ক্রুশবিদ্ধ হওয়া নিহিত ছিল, খোদায়িত্বের নয়। তাই খোদার পুত্রকে ক্রুশবিদ্ধ করার মধ্যে তাঁর খোদায়িত্বকে বাঁচিয়ে রেখে শুধু মানবত্বকে নিহত করাই যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে যে কোন একজন মানুষকে ক্রুশবিদ্ধ করলেই এ উদ্দেশ্য সাধিত হত।
পিসার্ট: নিঃসন্দেহে খোদাওন্দ যীশু পরিপূর্ণ খোদা এবং পরিপূর্ণ মানব ছিলেন, অর্থাৎ, খোদা এবং মানুষের পরিপূর্ণ গুণ এবং ক্ষমতা তার মধ্যে মৌজুদ ছিল। কিন্তু তাঁর মানবত্ব গুণও খোদায়িত্ব গুণের ন্যায় নিষ্পাপ ও পবিত্র ছিল। অতএব, প্রায়শ্চিত্তের জন্য ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার উপযুক্ত একমাত্র ব্যক্তি তিনিই ছিলেন। যেহেতু অন্যান্য মানব সকলেই গোনাহগার, কাজেই প্রায়শ্চিত্ত অপর কারো দ্বারা সম্ভব ছিল না।
ওমরঃ যার দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত চলতে পারে এমন কোন নিষ্পাপ মানুষ দুনিয়ায় মৌজুদ না থাকায় আসমান হতে স্বয়ং খোদাকে নীচে নেমে আসতে হল; আর এখানে এসেও তার খোদায়িত্ব ক্রুশে নিহত না হয়ে শুধু মানবত্বটুকুই নিহত হল। এতে প্রমাণিত হল যে, প্রায়শ্চিত্তের জন্য কোন একজন নিষ্পাপ মানুষের প্রয়োজন ছিল। এমতাবস্থায় খোদা স্বয়ং না এসে যার দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত চলতে পারে এমন একজন নিষ্পাপ মানুষ এখানে পয়দা করে নিজে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার স্থলে উক্ত মানুষটিকে ক্রুশবিদ্ধ করে প্রায়শ্চিত্তের কর্ম সাধনা করলেন না কেন?
পিটার্সঃ খোদা কেন এরূপ না করে প্রায়শ্চিত্তের উদ্দেশ্যে স্বয়ং আগমন করেছেন আমরা তার কিছুই বলতে পারি না, খোদার ভেদ খোদাই জানেন। অবশ্য একটি কথা বোধগম্য হয় যে, প্রায়শ্চিত্তের জন্য স্বয়ং খোদার আগমন তাঁর চূড়ান্ত স্নেহ ও ভালবাসার পরিচায়ক। খোদা আপন বান্দাগণকে এত ভালবেসেছেন যে, সমস্ত পাপী বান্দার পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়ার উদ্দেশ্যে নিজের একমাত্র পুত্রকে প্রেরণ করলেন। তাঁর পরিবর্তে কোন মানুষকে ব্যবহার করলে এ উদ্দেশ্য কখনই পূর্ণ হতো না।
ওমরঃ যদি খোদা আপন বান্দাদেরকে এরূপই ভালবাসতে চাচ্ছিলেন, তবে তিনি মানব সৃষ্টির প্রারম্ভেই আপন পুত্রকে প্রেরণ করে ক্রুশে হত্যা করেন নি কেন? যীশুর আগমনের পূর্বযুগের মানুষের সাথে কি তার কোন ভালবাসা ছিল না? হাজার হাজার বৎসর পরে তিনি এই ভালবাসার প্রকাশ কেন করলেন?
পিটার্সঃ এ রহস্যের ব্যাপারে আমরা অজ্ঞ। খোদার ভেদ খোদাই জানেন।
ওমরঃ আমার প্রশ্নটি এখনও পূর্ববৎই রয়ে গেল। শুধু ভেদ বলার দ্বারা কিছুই হয় না। বরং একথাই বলুন যে, ক্রুশের সাহায্যে শুধু মানবত্বেরই মৃত্যু হয়েছে, কাজেই এতদুদ্দেশ্যে স্বয়ং খোদার আগমন সম্পূর্ণ অর্থহীন প্রমাণিত হল। অন্য কোন মানুষকে ক্রুশে জীবন বিসর্জন দেয়ার জন্য ব্যবহার করলেই উত্তম হত।
পিটার্সঃ আমি তো পূর্বেই জবাব দিয়েছি যে, অন্য সব মানুষ গোনাহগার হওয়ার কারণে তারা প্রায়শ্চিত্তের উপযুক্ত ছিল না। খোদাওন্দ যীশুর মানবত্বকে ক্রুশে বিদ্ধ করে এইজন্যই নিহত করা হয়েছিল যে, তিনিই ছিলেন একমাত্র মাসুমিয়্যাত বা পাপহীনতার প্রতীক।
ওমরঃ যেহেতু যীশুর মানব সম্পূর্ণ নিষ্পাপ ছিল। কাজেই সমস্ত মানুষের পাপের বোঝা তার উপর চাপিয়ে দেয়া আবশ্যক হল। পাদ্রী সাহেব! আপনার বক্তব্য কেবল আমি কেন আপনি নিজেই বুঝতে অক্ষম। আচ্ছা, আপনি বলুন তো, যদি খোদার একমাত্র পুত্র সমস্ত পাপী মানুষের পাপের বোঝা মাথায় বহন করার স্থলে তাদের জন্য এমন কোন সৎকাজ করে যেতেন, যা সকলের পাপের চেয়ে অধিক ভারী হয়, তবে কোন অসুবিধা হতো কি? এরূপ করা হলে না হত নিষ্পাপ নিরপরাধ যীশুর উপর অপরের পাপের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার প্রয়োজন, না হত তাকে ক্রুশে হত্যা করার আবশ্যক। আর এতে মানবত্ব ও খোদায়িত্বের দ্বন্দের উৎপত্তিও কোন দিন হত না।
পাপের প্রতিষেধক পূণ্য। যীশুকে জগদ্বাসীর পাপের উপর জয়ী হওয়ার জন্য এমন কোন পূণ্যের কাজ করার প্রয়োজন ছিল, যা সকল মানুষের পাপ হরণের জন্য যথেষ্ট হয়। পাপের সাথে মোকাবেলা করার পন্থা আত্মহত্যা নয়।
পিটার্সঃ খোদাকে পরামর্শ দেয়ার অধিকার আমাদের নেই। তিনি যেমন ইচ্ছা তেমনি করছেন। খোদাকে সবক পড়ান আপনার বেআদবী।
ওমরঃ এ কথাটি আপনি জ্ঞাত আছেন কি যে, খোদাওন্দ যীশু সতী-সাধ্বী মরিয়মের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেছেন। এই জন্মগ্রহণের সম্বন্ধ মানুষের সাথে না খোদার সাথে? অর্থাৎ মরিয়মের উদর থেকে মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে না খোদা জন্মগ্রহণ করেছেন।
পিটার্সঃ খোদা তো জন্মগ্রহণ করা থেকে পবিত্র। যীশুর অভ্যন্তরে যে মানবত্ব ছিল তাই জন্মগ্রহণ করেছে মাত্র।
ওমরঃ আর ক্রুশে কার মৃত্যু হয়েছে?খোদার না মানুষের?
পিটার্সঃ খোদা মৃত্যু থেকেও পবিত্র। ক্রুশে মানুষেরই মৃত্যু হয়েছে, অর্থাৎ যীশুর মানবত্বের।
ওমরঃ অর্থাৎ জন্ম এবং মৃত্যুর সম্বন্ধ যীশুর মানবত্বের সাথে যুক্ত, খোদায়িত্বের সাথে নয়!
পিটার্সঃ নিঃসন্দেহে একথা সত্য।
ওমরঃ (বাইবেল আইয়ুব খণ্ড হাতে নিয়ে) এই দেখুন, আইয়ুবের কেতাব ১৪ঃ১৫ পদে লিখিত হয়েছে, “নারী থেকে যার জন্ম হয়েছে সেই পাপী।" এ কথা প্রমাণ করে মরিয়মের গর্ভে খোদায়িত্বের জন্ম হয় নি বরং মানবত্বের জন্ম হয়েছে, অতএব হযরত আইয়ুবের ফয়সালা অনুযায়ী, যীশুর মানবত্বও পাপী সাব্যস্ত হল। আরো দেখুন, রোমীও ২৩ঃ৬ পদে লিখিত রয়েছে, “পাপের মজুরী মৃত্যু” অর্থাৎ যার মৃত্যু হয় সে ব্যক্তি যে পাপী ছিল মৃত্যুই তার প্রকাশ্য প্রমাণ। আর যেহেতু আপনার কথা মতে যীশুর খোদায়িত্বের মৃত্যু হয় নি, মৃত্যু হয়েছে তার মানবত্বের। আর এ কথা দ্বারা তার মানবত্ব পাপী হওয়া প্রমানীত হল। কেননা তার মৃত্যু হয়েছে। অতএব মৃত্যুর দ্বারা তার মানবত্ব প্রমাণ হওয়ায় এ কথা বুঝায় যে, “যীশুর মানবত্বের মৃত্যুর দ্বারা সমস্ত মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত সাধিত হয়েছে।”আমার দেয়া প্রমাণ অনুযায়ী, উক্ত মানবত্বও পাপী ছিল। অতএব, আমার সেই প্রশ্ন পুনরায় দেখা দিল যে, খোদা অন্য কোন মানুষকে ক্রুশে নিহত করে প্রায়শ্চিত্ত গ্রহণ করলেন না কেন, যাতে খোদার খোদায়িত্ব কলঙ্কের হাত থেকে রক্ষা পেত? আর আপনি একথাও বলেছেন যে, পাপীর দ্বারা পাপের প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে না। অতএব যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে প্রায়শ্চিত্ত কর্ম সমাধা হয়নি।
পিটার্সঃ (অতিরিক্ত ঘাবড়িয়ে সর্বাঙ্গ ঘামে সিক্ত ও শুষ্ক কন্ঠে) আমি তো বললাম যে, এসব খোদার ভেদ, খোদা যেরূপ চেয়েছেন করেছেন। এ বিষয়ে আমি অথবা আপনি অভিযোগ করার কে?
ওমরঃ আপনার ধর্মের ভিত্তি যদি খোদার ভেদের উপরেই দাঁড় করানো হয়ে থাকে তবে আপনারা আমাদেরকে এখানে কেন ডেকেছেন? আর দু' সপ্তাহকাল ব্যাপী আপনাদের এবং আমাদের অমূল্য সময় কেন নষ্ট করলেন?
যেহেতু খোদায়িত্বের দর্শন সম্পর্কীয় আলোচনার সাথে ইসাবেলার বিশেষ আন্তরিক আকর্ষণ ছিল, কাজেই সে এই সভার আলোচনাসমূহ অত্যন্ত মনোযোগের সাথে শ্রবণ করছিল এবং ক্রোধে ও ক্ষোভে পাদ্রীদের উদ্দেশ্যে অলক্ষে দন্ত ঘর্ষণ করছিল। কেননা সে লক্ষ্য করছিল যে, যখনই তারা প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য কোন পথ খুঁজে না পায়, তখনই ভেদের অন্তরালে আশ্রয় গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে অধ্যাপক মীখাইল দাঁড়ালেন এবং বক্তব্য শুরু করলেন-
“মহোদয়গণ! আজ খৃষ্ট ধর্ম এবং ইসলামের মধ্যে মোকাবেলার দিন। কিন্তু আপনারা জানেন, ইসলাম কিরূপ ধর্ম? ইসলাম চার চারটি বিবাহকে আবশ্যকীয় বলে ঘোষণা দিয়েছে। ইসলাম অমুসলিমদের পাইকারী ভাবে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামের পয়গম্বর স্বয়ং এগারজন মহিলাকে বিবাহ করেছেন এবং ......।”
ওমরঃ আমাদের প্রশ্নের জবাব দেয়া যদি আপনাদের সামর্থ্যে না কুলায়, তবে তা পরিষ্কার ভাষায় বলে দিন। তারপর ইসলামের বিরুদ্ধে যা কিছু অভিযোগ আপনাদের আছে তা পেশ করুন। আমরা সমস্ত প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কাউকে ঘরে ডেকে এনে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পরিবর্তে অন্তর্বেদনা দায়ক বাক্যবান বর্ষণ করাই কি আপনাদের ভদ্রতা? বোন ইসাবেলা! আপনি নিজেই বলুন, পাদ্রী সাহেবদের এই আচরণ কি শোভনীয়?
একথা শুনা মাত্র ইসাবেলার আর বিলম্ব সইল না। তৎক্ষণাৎ সে দাঁড়িয়ে ভারাক্রান্ত ও গম্ভীর স্বরে বলতে শুরু করলঃ
আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ কথা মনোযোগের সাথে শুনেছি, কিন্তু বড়ই দুঃখ যে, মহামান্য পিটার্স, আমার শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মীখাইল কেউ প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম হন নি। ওমর লাহমীর দাবী সম্পূর্ণ ন্যায্য। হয়ত আপনারা তার প্রশ্নের জবাব দিন, নতুবা নিজেদের পরাজয় স্বীকার করুন। কিন্তু আমার ধারণা, এর কোনটিই আপনাদের দ্বারা সম্ভব হবে না। অতএব, এই আলোচনা এখানেই ক্ষান্ত করা হোক, যেন খৃস্টধর্ম আপনাদের দ্বারা আরও হাসির বস্তুতে পরিণত না হয় এবং আপনাদের বিদ্যাবত্বার আবরণ আর উন্মোচিত না হয়। আশ্চর্যের বিষয় যে,............
(চলবে)