JustPaste.it

দেশে দেশে ইসলাম

তিউনিসিয়ার মুসলিম জনতা রাজপথে এবার

নাসীম আরাফাত

 

             জামহুরিয়্যা আতুনিসিয়া, তিউনিসিয়া প্রজাতন্ত্র। আফ্রিকা মহাদেশের সর্বাধিক সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ। দুই দিকে ভূমধ্য সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি ছোট্ট স্বাধীন মুসলিম দেশ। সাহারা মরুর কোল ছুয়ে অসংখ্য সুস্বাদু ফলের জান্নাতী উদ্যানে সুশোভিত এই দেশ। সত্যতার সূচনালগ্ন থেকে ভূ-মধ্যসাগরীয় এলাকার খাদ্য ঘাটতির যোগান দিয়েছে এই দেশ। এদেশের শস্য ভান্ডারের সংবাদ পেয়েই ছুটে এসেছে বহু শাসকগোষ্ঠী। তাই ফোনিসীয় গ্রীক, রোমান, উমাইয়া, আব্বাসীয়, ফাতেমীয়, ফরাসী শাসকগোষ্ঠী আজও ভুলতে পারেনি এ দেশের কথা।

             ৬০১৬৫ বর্গমাইলের এই দেশটিতে ৭৪ লক্ষ লোক বসবাস করে, যার শতকরা ৯৩ জন মুসলমান। কিন্তু ইতিহাসের কি নির্মম লীলা যে, লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রত্যাশায় ফ্রান্সের সাথে সম্মুখযুদ্ধে জীবন দিয়ে তিউনিসিয়ার বীর মুজাহিদরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো, সেই স্বাধীনতার সুফল তারা এখনো ভোগ করতে পারেনি। এখনো তারা ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি তিউনিসিয়ায়। তাই তারা এবার আরো রক্ত ঢালতে রাজপথে নেমেছে।

 

প্রাচীন ইতিহাস

             আজ থেকে সোয়া তিন হাজার বৎসর পূর্বে ফোনিসীয়রা এদেশে উপনিবেশ গড়ে তোলে। তারা খৃস্টপূর্ব নবম শতকে কার্থেজে নগরী স্থাপন করে উত্তর আফ্রিকার ফোনিসীয় শাসনাধীন অঞ্চলের রাজধানী বানায়। তখনকার দিনে কার্থেজে ছিলো ফোনিসীয় সভ্যতার লীলাকেন্দ্র ও প্রধান নৌ ঘাটি। ১৪৬ খৃস্ট পূর্বাব্দে রোমান সৈন্যদের হাতে নগরীর পতন ঘটে ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই রোমানরা এ নগরীকেই তাদের উত্তর আফ্রিকীয় রোমান শাসিত এলাকার রাজধানী বানায়। ফলে কাথের্জ নগরী আবার সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠে। ফিরে পায় তার হারান রূপ লাবণ্য। রোমান শাসনের সময় রোম নগরীর পরই ছিলো কার্থেজ নগরীর অবস্থান। ৪৩৯ সালে ভ্যান্ডালেরা রোমানদের পরাভূত করে তিউনিসিয়া দখল করে নেয়,

ফলে কার্থেজ নগরীর পতন ঘটে। কিন্তু ৫৩৩ খৃষ্টাব্দে রোমনরা পূনরায় তা দখল করে নেয়।

 

মুসলিম সভ্যতার উত্থানঃ

            চারিদিক নিকষ অন্ধকারে আচ্ছন্ন। রোমানদের অত্যাচার-আনাচার আর নির্মম নির্যাতনে নিপিষ্ট আফ্রিকার আধিবাসীদের নিকট চির সত্যের দীপ্তমান আলোকমালা নিয়ে ৬৩৯ সালে মুসলিম সেনাপাতি আমর ইবনে আস (রাঃ) উপস্থিত হন। ইসলামের সাম্যবোধ ও চির সৌভ্রাতৃত্বের পরশে বিমুগ্ধ মিসরবাসী দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের পতন, আমর ইবনে আস (রাঃ) এর পর মুসলিম সেনাপতি উকবা ইবনে নাফে ৬৭০ সালে তিউনিসিয়াকে রোমানদের কবলমুক্ত করেন। মিসর ও লিবিয়ার ন্যায় চিরমুক্তি, সাম্য ও শান্তির আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিউনিসিয়ার অধিবাসীরাও দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে।

             উমাইয়া যুগে এক’শ বৎসর ধরে এবং আব্বাসীয় যুগের প্রথম দিকে তিউনিসিয়া আলজেরিয়া ও লিবিয়ার মাগরিব প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। অষ্টম শতকের শেষ দিকে এ অঞ্চলের শাসন কার্যে দারুন বিশৃংখলা দেখা দেয়। তখন গর্ভনর ইব্রাহীম ইবনে আগলাব বিশেষ যোগ্যতার সাথে শৃংখলা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। খলীফা হারুনুর রশীদ এতে সন্তুষ্ট হয়ে ৮০০ সালে উক্ত অঞ্চলের লোকদের হাতে বংশানুক্রমিক শাসনভার অর্পন করেন। ৯০৯ সাল পর্যন্ত ইবনে আগলাবের বংশধররা রাজত্ব করেন। তারপর ফাতেমীয় সুলতান উবায়দুল্লাহর সেনাপতি-আবু আব্দুল্লাহ তিউনিসিয়া পদানত করেন। এবং কার্থেজ নগরী ফাতেমীয় রাজত্বের রাজধানীর মর্যাদা পায়। চতুর্থ ফাতেমীয় সুলতান মুইজুদ্দীন মিসর জয় করার পর ৯৫৩ সালে কায়রোতে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয় এবং তিউনিসিয়ায় একজন গভর্নর নিয়োগ করা হয়। রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর তিউনিসীয়রা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং প্রতিষ্ঠিত হয় এক স্বাধীন রাষ্ট্র।

               কিন্তু ফাতেমী বংশের কুখ্যাত সুলতান আল মুসতানসির তিউনিসিয়ার স্বাধীনতা সহ্য করতে পারলনা। ১০৪৯ সালে তিউনিসিয়ার অধিবাসীদের শায়েস্তা করার জন্য সে সশস্ত্র দুই লুটেরা গোত্র বনি হিলাল ও বনি সুলায়েমকে প্রেরণ করে। জ্বলে উঠে তিউনিসিয়ার গ্রামগুলো। লেলিহান অগ্নি শিখায় গ্রামের পর গ্রাম জ্বলতে থাকে। শহরে বন্দরে চলতে থাকে লুটতরাজ আর অগ্নি সংযোগ। ধ্বংসের ভয়াবহ ছোবল নেমে আসে সমগ্র তিউনিসিয়ায়।

                ফলে উত্থান হয় ইতিহাস খ্যাত মুয়াহিদীন নেতৃবৃন্দের। তারা তিউনিসিয়া সহ গোটা উত্তর আফ্রিকায় শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনেন। ১২৩৬ সালে আল-মুয়াহিদ গভর্নর জাকারিয়া ইবনে হাফস এর বংশীয় হাফসী শাসকেরা ১৫৭৪ সাল পর্যন্ত তিউনিসিয়া শাসন করেন। হাফসী শাসনামল ছিল সমৃদ্ধি, সংস্কৃতি ও সত্যতার ক্ষেত্রে তিউনিসীয়ার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ। কারণ এ সময়ে স্পেনের বিপর্যয়ের ফলে মুসলিম মুহাজিররা দলে দলে তিউনিসিয়ায় আশ্রয় নেয় ফলে তাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচর্যা ও লালন ব্যাপক বিস্তৃতি পায়। এমনি এক মুহাজির পৌত্র ছিলেন সমাজ বিজ্ঞানের জনক বিশ্ব বিশ্রুত ব্যক্তিত্ব ইবনে খলদুন। যার সম্পর্কে বিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক অর্নল্ড টয়েনবী বলেন, “তিনি ছিলেন মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তাশীল মনীষী।” অতঃপর তিউনিসিয়া তুরস্কের ওসমানীয় সুলতানদের শাসনাধীনে চলে যায়। ১৭০৫ সালে তুর্কী আগা হোসেন ইবনে আলী নিজেকে তিউনিসিয়ার স্বাধীন সুলতান ঘোষণা করেন। ইতিহাসের ধারা বেয়ে তার উত্তরসূরীরা অকর্মন্য ও বিলাসী হয়ে পড়ে। ভ্রাতৃত্ব বোধ, আত্মমর্যাদা, জিহাদের স্পৃহা, জনগণের সেবার মনোবৃত্তি তারা হারিয়ে ফেলে। ফলে দেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও চরম বিশৃংখলা ও অভাব অনটন দেখা দেয়।

 

পাশ্চাত্য শকুনের কবলেঃ

            তিউনিসের যখন বেহাল অবস্থা, অভ্যন্তরীন সংকট যখন চরম আকার ধারণ করে, ঠিক তখনই তিউনিসিয়ার আকাশে পাশ্চাত্যের তিন শকুন ডানা বিস্তার করে উড়তে থাকে! তিউনিসিয়ার বুকে প্রভুত্ব কায়েমের ক্ষেত্রে পরস্পরে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। ত্রি-শক্তির এ দ্বন্দ দশ বৎসর অব্যাহত থাকার পর ফ্যান্স সাইপ্রাসে বৃটেনকে অবাধ কার্যক্রমের অধিকার অর্পণের বিনিময়ে তিউনিসিয়ার সার্বভৌমত্ব লাভ করে। অতঃপর ১৮৮১ সালে ফ্রান্স ইতালীকে পদানত করে সামরিক অভিযান চালিয়ে গোটা তিউনিসিয়া দখল করে নিলে তিউনিসিয়া হয়ে পড়ে ফ্রান্সের এক “অবাঞ্চিত অঞ্চল”।

               কিন্তু মুসলিম জনতা তা মানতে রাজী নয়, রুখে দাড়ায় তারা অস্ত্র হাতে নিয়ে। স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যকে তারা অস্তমিত হতে দিবেনা। চলতে থাকে বিদ্রোহ, জিহাদ-জীবন নেয়া দেয়ার রক্তাক্ত খেলা। দীর্ঘ সাত বৎসর ধরে এ খেলায় শাহাদাতের অমীয় সুধাপান করে হাজার হাজার মুজাহিদ। রক্তের ঢলে ভেসে যায় তিউনিসিয়ার পীচঢালা পথ ঘাট। চরম নির্যাতনের কবলে ঝিমিয়ে পড়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম। ফলে ফ্রান্স তার পূর্ণ আধিপত্য কায়েম করে তিউনিসিয়ার বুকে।

 

ফরাসীদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম

              মুজাহিদদের প্রচন্ড হস্তে দমন করার পর, ফ্রান্স তিউনিসিয়ার বুকে তান্ডব লীলা শুরু করে। চরম নির্যাতন ও নিপীড়নে নিপিষ্ট হতে থাকে মুসলিম জনতা। দেশময় অর্থনৈতিক, মানসিক, সামাজিক সর্বক্ষেত্রে এক চরম হতাশা বিরাজ করতে থাকে। টু শব্দটি বলারও কারো অধিকার নেই। বুলেটের শব্দের সাথে হাজার হাজার হাহাকার করুণ আকুতি, নিবেদন, প্রার্থনা মিশে যায় ইথারের পরতে পরতে।

             অবশেষে ১৯২০ সালে শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে ফরাসীদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন শক্তিশালী হয়। আন্দোলনের মূলে ছিলেন শেখ আছ-ছালাবী। কিন্তু ১৯২৩ সালে শেখ ছালাবীকে নির্বাসিত করা হয় এবং ফরাসীদের চরম দমন নীতির মুখে শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু নির্যাতিত জনতা নীরব থাকার নয়। হতোদ্যম হতে পারে না। তাই ১৯৩৪ সালে নতুন দস্তুর পার্টি স্থাপন করে হাবীব আবু রকীবার নেতৃত্বে এক ব্যাপক গণ-আন্দোলন শুরু হয়। দীর্ঘ ২২ বৎসর চলতে থাকে এ আন্দোলন। অবশেষে লাখ মুজাহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৪৬ সালে ২০শে মার্চ তিউনিসিয়ার আকাশে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদিত হয়। স্বাধীনতার আনন্দ উল্লাসের ফরুধারা বয়ে যায় গোটা তিউনিসিয়া জুড়ে। সবাই আশা ছিল এবার দেশে ইসলামী অনুশাসন কায়েম হবে। দেশ কুরআন ও হাদীসর আলোকে পরিচালিত হবে। খিলাফতের স্বর্ণ যুগের অনুপম আদর্শ আমরা তিউনিসিয়ার বুকে বাস্তবায়িত করবো।

পোষ্যপুত্রদের কবলেঃ

              ইসলামী বিশ্ব থেকে দুর্বার আন্দোলনের মুখে একে একে সবগুলি মুসলিম দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় সাম্রাজ্যবাদী সকল পাশ্চাত্যশক্তি। স্বাধীনতা লাভ করে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, তুরস্ক, মিসর, লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, আরো অনেক মুসলিম দেশ। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো চলে গেলেও রেখে যায় তাদের পোষ্যপুত্র, তাদের উত্তরাধীকারী। যারা জন্ম সূত্রে মুসলমান হলেও চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ মন- মানসিকতা ইত্যকার সবদিক থেকেই তাদের মানসপুত্র, শত কৌশলে তাদের হাতেই তারা প্রশাসন অর্পণ করে। যায়। ফলে সব মুসলিম দেশেই ইসলামী শরীয়ার বাস্তবায়নে এই শক্তিটিই চরম বাধার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে মুসলিম বিশ্বের বহু দেশে মুসলিম ভাইয়ের হাতেই মুজাহিদ ভাই শহীদ হচ্ছে। রক্তাক্ত হচ্ছে। আলজেরিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইরাকসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের একই চিত্র, একই সমস্যা, যার কারণে অসহায় মুসলিম জনগণ আজো ইসলামী শরীয়া তথা কোরআন- সুন্নাহর আইন থেকে বঞ্চিত হয়ে ইহুদী- খৃষ্টানদের রচিত আইনের চাকাতলে পিষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আবার ইসলামী চেতনা জাগ্রত হচ্ছে। ইসলামী শরীয়া বাস্তবায়নের দাবী ও আন্দোলন জোরদার হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের দিকে দিকে! তিউনিসিয়ার মুসলমানরাও আবার জেগেছে। আবার তারা রাজপথে নেমেছে।

তিউনিসিয়ার বর্তমান অবস্থাঃ

              স্বাধীনতা লাভের পর হাবীব বরগুইবা জগদ্দল পাথরের মত ক্ষমতার মসনদে চেপে বসে এবং সমাজতন্ত্র আমদানী করে শক্তিবলে ইসলামী ঐতিহ্যের পরিপন্থী বহু আইন জারী করে। বরগুইবারের পতন হয়। কিন্তু তার উত্তরসূরীরা এখনো তার গলিজ লাশ বহন করে চলছে। বিশ্বব্যাপী মানবতা বিরোধী ধর্ম বিরোধী সমাজতন্ত্রের পতন হলেও তিউনিসিয়ার মুসলমানরা এখনও এর কবল থেকে মুক্তি পায়নি। এবার তারাও জেগেছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনের জোয়ারের ঢেউ তিউনিসিয়ায়ও আঘাত হেনেছে। মুসলিম জনগণ তাদের হারানো ঐতিহ্যে ফিরে যেতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। যুবকরা ইসলামী শরীয়া বাস্তবায়নের প্রবল দাবী তুলছে। যুব সমাজের মন-মানসিকতা পুনর্গঠনের জন্য ইসলামী দাওয়াতের পরিধি দিনে দিনে ব্যাপকতর হচ্ছে।

             তাই পোষ্যপুত্র এর দল আজ বেসামাল হয়ে পড়েছে। তাদের ধারণা, বাঁশ না থাকলে বাঁশিও বাজবেনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেই ইসলামী আন্দোলন শক্তি লাভ করে। তাই পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করলে প্রচুর ফল পাওয়া যাবে। এ উদ্দেশ্যে সরকার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার কথা চিন্তা করছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণীসমূহের পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম, ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাদ দেয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে জিহাদের ধারণা ও ইসলামের রাজনৈতিক চিন্তাধারার মূলোৎপাটন করা হয়েছে। অথচ স্বাধীনতা আন্দোলনে জিহাদী চেতনা ও ইসলামের অনন্য বৈশিষ্ট্যময় রাজনৈতিক শিক্ষাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল, পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছিলো।

             ১৯৮৭ সালের এক সামরিক অভ্যুত্থানে মূল সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতন হয়। ফলে মুসলিম জনগণ আশা করে যে, দেশে হয়তো আযাদী ফিরে আসবে। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে স্বাধীনভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। তারা নির্বাচনে প্রচুর ভোট পেলেও নির্বাচনী বিধির কারিশমায় একটি আসনও তারা পেল না। নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন বিন আলী মুসলিম নেতৃবৃন্দকে নানাভাবে নির্যাতনের শিকারে পরিণত করে। ইসলামী আন্দোলনের আট হাজার কর্মীকে জেলে পাঠায়, সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নাহদাতুল ইসলামিয়া সংগঠনের নেতা রাশেদ গানোউশী বেশ কিছু দিন যাবৎ ইংল্যান্ডে নির্বাসিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

                তিউনিসিয়ায় আগের পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা বাদ দিয়ে নারী পুরুষের যৌথ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ফ্রয়েডের মত অন্যান্য অমুসলিম বিভ্রান্ত চিন্তাবিদকে সামনে টেনে আনা হচ্ছে। ইতিহাসের পাঠ্যে তিউনিসিয়ার ইসলামপূর্ব যুগের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে। খৃষ্টান যুগের উপরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শুধু অবহেলিত হচ্ছে ইসলামী যুগ।

             কিন্তু তাই বলে তিউনিসিয়ার মুসলিম মুজাহিদরা নীরবে বসে নেই। দর্শকের গ্যালারীতে বসে আর কতো কাল তারা খেলা দেখবেন। এবার তারা মাঠে নেমেছেন। রাজপথে নেমেছেন। স্থানে স্থানে ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলছেন। জনগণ আজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। আলজেরিয়ার মত এবার তারাও সশস্ত্র আন্দোলনের পথে অগ্রসর হচ্ছেন।

            তাই আজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে উঠতে মন চায়ঃ

            সত্য মুক্তি স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের,

            খোদার রাহে জান দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের।

              তবে আমরা এ দেশের বুকে ইসলামী শরীয়া বাস্তবায়নে জান দিতে প্রস্তুত হচ্ছি না? আমরা কি বিদ্রোহী কবির কণ্ঠে সুর মিলিয়ে উক্ত চরণ দু'টি পাঠ করতে পারি না? দিকে দিকে ইসলামী জানারয়ের মশাল জ্বলছে, আমরা কেন জানাচ্ছি না?

তথ্য সূত্রঃ

(১) মুসলিম জাহান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

(২) জাগ্রত মুসলিম আফ্রিকা,

(৩) সাপ্তাহিক মীযান, কলিকাতা

(৪) ওয়াসিংটন পোষ্ট ওডন-১১ জুলাই সংখ্যা