JustPaste.it

সম্পাদকীয়

খোদাদ্রোহী শয়তানী চক্রের মরণসন্ধা আল্লাহর পথের সৈন্যদের সনাতন কর্মপদ্ধতি

=======================================================================

 

        অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশে, মুসলমানের ভোটে নির্বাচিত ইসলাম ধর্মাবলম্বী শাসক শ্রেনীর বতর্মানে আল্লাহ-রাসূল (সাঃ) কোরআন-সুন্নাহ ও নৈতিক মুল্যবোধ বিরোধী বক্তব্য প্রদানকারী লেখক, সাংবাদিক ও বৃদ্ধিজীবিদের বিচার করার জন্য কোন যুৎসই আইন খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ ইউরোপের খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও চেতনাকে আইনগতভাবে সুরক্ষিত করে রেখেছে। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য প্রায় সকল মুসলিম রাষ্ট্রেই জনসাধারণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শিক চেতনায় আঘাত হানলে কঠোর শাস্তি পেতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানে আল্লাহ, রাসূল ও পবিত্র কুরআনের অবমাননার শাস্তি দীর্ঘমেয়াদী কারাদন্ড; ক্ষেত্র বিশেষে মৃত্যুদন্ড। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের এক হতভাগা সদস্য বাংলাদেশ। যার সংবিধানে দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ঈমান, আকীদা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শিক চেতনার সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোন ব্যবস্থাই রাখা হয়নি । আল্লাহ-রাসূল, শরীয়ত, কোরআন-হাদীস ও আখেরাত নিয়ে হাস্যরস, বিষোদগার ও বিভ্রান্তিসৃষ্টিকারী ধর্মদ্রোহী কাফের, মুরতাদ এবং জাতীয় কুলাঙ্গারদের বিচার চাইতে গিয়েও হতাশ হতে হয়। আইন খুঁজে পাওয়া যায় না। বিধানে কুলায় না। পাল্টা মামলার শিকার হতে হয়। পুলিশী হয়রানীর ঝক্কি পোহাতে হয়। সীমাহীন দুঃখ-জনক এ পরিস্থিতি।স্বাধীন জনগোষ্ঠির জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে?

 

        দেশে নাকি এখন গণতন্ত্র আছে। নির্বাচিত জাতীয় সংসদের বৈঠক চলছে। সরকারের পক্ষ-বিপক্ষ উভয় শিবিরে কেবল মুসলমানই মুসলমান। ইসলাম ও মুসলিম জনসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষনে এদের সবাই অতিশয় আগ্রহী। তাহলে তিন'শ তের সদস্যের পার্লামেন্টে ন্যুনতম দুই তৃতীয়াংশের ঐকমত্য নিয়ে “জনগনের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শিক মূল্যবোধ সুরক্ষা আইন” কেন পাশ হতে পারেনা? কেন আজ একটি কুলটা রমণীর বেফাঁস মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জনতাকে রাজপথে নামতে হয়? কেনই বা নাস্তিক খোদাদ্রোহী আর বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের দুশমন দালালচক্রের বিচার চেয়ে আন্দোলন, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও হরতাল করতে হয়? মূলতঃ এসবই জাতি হিসেবে আমাদের হীনতা ও দৈন্যের লক্ষন। আমাদের শাসক ও বিরোধী রাজনীতিকদের ভ্রান্ত পথ-পরিক্রমার জ্বলন্ত নির্দশন ।

 

        সম্প্রতি ইসলাম বিরোধী বিশ্বচক্রের পুতুল-কন্যা তসলিমাকে নিয়ে বড় ধরণের গণরোষ সৃষ্টি হয়েছে। কলকাতার একটি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তসলিমা মত প্রকাশ করেছে যে, "আল-কোরআনের আমূল পরিবর্তন ও সংস্কার প্রয়োজন ইত্যাদি"। এর আগেও এ মেয়েলোকটি  নিতান্তই বেহায়া টাইপের বহুসংখাক মন্তব্য এমন করেছে যা ইতিপূর্বে ছাপার অক্ষরে আর কোনদিন প্রকাশিত হয়নি । যাক্, এবার নাকি ঢাকার পুলিশ তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কোথাও তার গন্ধও পাওয়া যাচ্ছেনা । রাজধানীতে গুজব রটেছে যে, তসলিমা কোন মুরুব্বী দেশের দূতাবাসে আশ্রয় পেয়েছে। কেউ বলছে, পুলিশের অবাধ যাতায়াত সম্ভব নয়, এমন কোন নিরাপদ আশ্রয়ে সে রয়েছে । মোটকথা, তসলিমাকে ধরার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। এখানে অবশ্য একটা প্রশ্ন এমনিতেই উঠে যে, এ ব্যর্থতা কি সত্যিকারের না সাজানো? সাজানো হয়ে থাকলে এর পেছনে কোন্‌ অদৃশ্য শক্তির ইশারা ক্রিয়াশীল?

 

        সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সুযোগে একশ্রেনীর পত্র-পত্রিকা বিগত ক'বছর ধরেই ইসলাম ও মুসলমানের অবমাননায় লিপ্ত । অবোধগম্য আকস্মিক উত্থানের কৃতিত্বে আক্রান্ত “দৈনিক জনকণ্ঠ” তার একটি অসতর্ক উপসম্পাদকীয়ের জন্যে বড় ধরণের একটা ধরা খেয়ে সাম্প্রতিক জনঅসন্তোষের ভাগী হয়েছে । সরকার এর বিরুদ্ধে আইন যুদ্ধে কী পর্যন্ত এগুতে পারবে তা জানা না থাকায় এ ব্যাপারটি নিয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছেনা । তবে “ঈমান ও নৈতিক মূল্যবোধ সুরক্ষা আইন” কার্যকর হলে নাস্তিক মুরতাদ ও প্রগতিশীল মাথাখারাপদের সাথে সাথে, বেয়াড়া পত্র-পত্রিকারও নাট-বল্টু একটু টাইট হয়ে যেতো । এ সবই কিন্তু  আইনানুগ, গণতান্ত্রিক ও নিয়মের কথা ।

 

        তবে এসব ক্ষেত্রে সরকার ও রাজনীতির অভিভাবকদের ঔদাসীন্য থেকে অন্য একটা জিনিসের জন্ম হয়ে থাকে । সেটি হলো, অত্যাচারিত জনসাধারণের সহজাত ক্ষোভ ধুমায়িত হয়ে গণপ্রতিরোধের ভয়াল রূপ, যার শুরু মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, হরতাল ও ঘেরাও এর ধারা অতিক্রম করে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় ক্ষোভ প্রশমনের আদি আসল পন্থার দিকে । 'খোদাদ্রোহী’ চক্রের সদস্যদের দেখা মাত্রই গণধোলাই, নাস্তিক্যবাদী লেখক বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের পথে ঘাটে চড়-চাপড়, কিল-ঘুষি মারা এবং শেষ পর্যন্ত এদের একটু দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠান্ডা করে দেয়ার প্রক্রিয়া । এসব ঝামেলায় জনগণকে যেতে না দেয়ার জন্য আইন পরিষদের ভুমিকা ও আইন-শৃংখলা রাক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের তৎপরতার বিকল্প নেই। অন্যথায় সাধারণ মানুষ এলোপাতাড়ি পদক্ষেপ গহণ শুরু করে দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করা বড় মুশকিল হয়ে থাকে। তাছাড়া, বিষবাম্প জমতে জমতে শ্বাসরুদ্ধকর আবহাওয়া চরমে উঠলে গণমানুষের হাত-পা ছোঁড়াটা একটু অনিয়ন্ত্রিত হওয়াটাই সাভাবিক । অপরিশীলিত ও অমার্জিত তো বটেই।

 

        যদি মনে করা হয় যে, আল্লাহ-রাসূল. কোরআন-হাদীস, ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি হামলা ও নিকৃষ্ট ধরণের বিষোদগার কেবল আলেম সমাজ, ইসলামপ্রিয় সুধী ও ইমানী চেতনায় উদ্দীপিত তাওহীদি জনতাকেই আহত করে । এতে সরকার ও রাজনীতিকদের কিছুই যায় আসেনা । তাহলে এটা মারাত্নক ভুল হবে । কেননা, ইসলাম ও ঈমানের ব্যাপারে, আল্লাহ রাসূল ও কোরআন-সুন্নাহর প্রশ্নে বাংলাদেশের তাওহীদি গণমানুষ ও তাদের আধ্যাত্নিক নেতৃপুরুষেরা অবশ্যই আপোষহীন ভুমিকায় নামবেন । ধীর ও ঈমানী দায়িত্বের তাগিদেই তারা হয়ে উঠবেন আন্দোলন মুখর। প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করে এরা হয়ে উঠবেন অসাধারণ সমরকুশলী, বিপ্লবী-যোদ্ধা ।

 

        আর তখন বিদেশী প্রভুদের বেতনভোগী, পশ্চিমা সাহায্য সংস্থার মদদপু্ষ্ট, ইহুদী-থৃষ্টান চক্রের ক্রীড়ানক লেখক, বুদ্ধিজীবী ও পত্রিকাওয়ালাদের পালিয়ে বাঁচারও কোন পথ খোলা থাকবেনা । জনতার রুদ্র রোষে শাসক, বিরোধীদল তথা জাতির স্বঘোষিত দিকনির্দেশকরাও খড়কুটোর মতো ভেসে যাবে। বাংলাদেশের বড় বড় নাস্তিক, খোদাদ্রোহী ও ধিকৃক বুদ্ধিজীবী গুলোকে শায়েস্তা করতে খুব বড় ধরনের প্রস্তুতি বা দীর্ঘ কোন সময়ের প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়।

 

        রাজধানীতে বসবাসকারী মুরতাদচক্রের আস্তানাগুলো, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের নিরাপদ আবাস আর আভিজাত এলাকার নিশ্ছিদ্র গৃহকোন, এ সবই আল্লাহ ও রাসূলের প্রেমে প্রাণদানকারী জানবায সৈন্যদের জন্য নিতান্তই সহজগম্য আর সরলভেদ্য । কোনরূপ সাংগঠনিক সমন্বয়, সুসংহত কেন্দ্রিকতা বা পরিকল্পনা ছাড়াই কখনো কোন ব্যক্তি বা টিম যখন ঢাকার রাজপথে একটু হৈ-হুল্লোড় করে, জোরে নারায়ে তাকবীরের আওয়াজ তুলে বা খামখেয়ালী বশতঃ এক দু'টো পটকা ফুটায় তখনই সেসব দুর্বলচিত্ত নাস্তিক বুদ্ধিজীবী, রোগাক্রান্ত লেখক ও বীর পুঙ্গব সাংবাদিককে হাসপাতালে নিতে হয় । বেনামা টেলিফোন আর পত্র পেয়ে যেসব আদর্শের সৈনিকেরা(?) আমাশয়ে আক্রান্ত হয়ে আশপাশের ফামের্সীগুলোতে ফ্লাজিল সংকট সৃষ্টি করে ফেলে, এসব খোদাদ্রোহীকে ধুলায় মিশিয়ে দিতে বিপ্লবী মুসলিম তারুণ্যের কোন সন-তারিখ বা লগ্ন ঠিক করার প্রয়োজন হওয়ারও কথা নয়। তবে ইসলামী জীবনবোধে বিশ্বাসী যোদ্ধাদের একটা নীতি-পদ্ধতি আছে । এতে রয়েছে দাওয়াত/আহবান, ইসলাহ/সংশোধন, ইতমামে হুজ্জত/চরম সতর্কীকরণ-এর তিনটি পর্যায় । এরপর শুধু ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাওয়া আর লক্ষ্যবিন্দু ভেদকরে আল্লাহর যমীনকে শয়তানী শক্তির পাঞ্জামুক্ত করা। এ জন্যেই যোদ্ধাদের জাগিয়ে তোলার এ সচেতন প্রয়াস ।

 

 

 ═──────────────═