JustPaste.it

জীবন পাথেয়:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতিপয় বরকতময় অভ্যাস

=================================================================

 

        উপবেশনঃ হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রাদি) বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারজানু  হয়েও উপবেশন করতেন এবং কোন সময় তিনি হেলান দিয়ে ও বসতেন। হযরত জাবের (রাদি) বলেন আমি তাকে বাম পার্শ্বে একটি বালিশের উপর হেলান দিয়ে বসে দেখেছি। (শামায়েল)

        হযরত হানযালা ইবনে হুযায়ম (রাদি) বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁকে চারজানু হয়ে উপবিষ্ট দেখেছি। এক পা অপর পা অপর পায়ের উপর রাখা ছিল; ডান পা বা পায়ের উপর। (আল-আদাবুল-মুফরাদ)

 

        চলার ভঙ্গিঃ (হযরত হাসান ইবনে আলী (রাদি) থেকে বর্ণিত) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরেসুরে পা তুলে চলতেন, পা  এমনভাবে রাখতেন যে, তা সামনে ঝুঁকে পড়তো। তিনি বিনম্রভাবে পা বাড়িয়ে চলতেন। চলার সময় মনে হত যেন তিনি উচ্চস্থান থেকে নিম্নভূমিতে অবতরণ করেন। ডান অথবা বামের কোন বস্তু দেখতে চাইলে তিনি পুরোপুরি ঘুরে দেখতেন (অর্থাৎ, চোখের কোণ দ্বারা দেখার অবভ্যাসও ছিল না) তিনি দৃষ্টি নত রাখতেন। আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করা অপেক্ষা মাটির দিকে অধিক দৃষ্টি রাখতেন। তার সাধারন অভ্যাস নত দৃষ্টিতে দেখা (অর্থাৎ, অত্যধিক লজ্জার কারনে সম্পূর্ণরূপে মাথা তুলে নয়ন ভরে দেখতেন না।) চলার সময় সাহাবায়ে কেরামকে অগ্রে রাখতেন। কারোও সাথে দেখা হলে তিনি প্রথমে সালাম করতেন। (নশরুত্তীব)

 

        রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম যখন উচ্চভূমিতে আরোহণ করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং যখন নিম্নভূমিতে অবতরণ করতেন তখন তাসবিহ পাঠ করতেন। (যাদুল-মা'আদ)

 

        মুচকি হাসিঃ হযরত জাবের (রাদি) বলেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাসি কেবল মুচকি হাসি ছিল। কোন হাসির কথা শুনে তিনি কেবল নিঃশব্দে মুচকি হাসতেন-(যাদুল-মা'আদ)

 

        আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস (রাযি)বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা অধিক মুচকি হাসতে কাউকে দেখিনি। (শামায়েল)

 

        হযরত জরীর (রাযি) বলেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমাকে দেখতেন, মুচকি হাসতেন। (অর্থাৎ, প্রফুল্লবদনে মুচকি হাসতে হাসতে সাক্ষাৎ দিতেন।) (শামায়েল)

 

        ক্রন্দনঃ হাসির ন্যায় তাঁর ক্রন্দনের মধ্যেও কোন আওয়াজ সৃষ্টি হতো না। তবে ক্রন্দনের সময় তার নেত্রদ্বয় অবশ্যই অশ্রু সজল হয়ে উঠত এবং অশ্রু প্রবাহিতহত। তখন তার বক্ষ থেকে ক্রন্দনের মৃদু আওয়াজ শোনা যেত। কখনও তিনি মৃতের প্রতি শোক প্রকাশার্থে ক্রন্দন, কখনও উম্মতের বিপদাশঙ্কার কারণে, কখনও আল্লাহর ভয়ে এবং কখনো আল্লাহর কালাম শুনতে শুনতে ক্রন্দন করতেন। এই শেষোক্ত ক্রন্দন মহাব্বত, ঔৎসুক্য ও আল্লাহ্ তায়ালার জালাল প্রত্যক্ষ করার কারণে হত। (যাদুল-মা'আদ।)

 

        রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিহাসঃ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু সালাম এর মজলিস সমূহের গাম্ভীর্য ও ধীরস্থিরতা সর্বক্ষণ বিরাজিত থাকত। এমনকি স্বয়ং সাহাবায়ে কেরাম বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সঙ্গে এমন আদব সহকারে শিষ্টাচারী হয়ে বসতাম, যেন আমাদের মাথায় পাখী বসে রয়েছে এবং যা সামান্য একটু নাড়া পেলেই উড়ে যাবে। এতদ্বসত্ত্বেও তার হাস্য-পরিহাসের ঝলক এসব বৈঠককে প্রাণবন্ত করতে থাকত। কেননা, তিনি একদিকে যেমন রেসালাতের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে ওয়াজ ও উপদেশ ব্যাপৃত থাকতেন, তেমনি অপরদিকে সাহাবায়ে কেরামের সাথে একজন অকপট বন্ধু ও হাস্যোজ্জ্বল সঙ্গী হিসেবেও মেলামেশা করতেন। অধিকতর সময়ে তার মজলিস একটি ধর্মীয় পাঠাগার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে থাকলেও কিছুক্ষণের জন্য তা হাস্য-পরিহাসকারী বন্ধুবর্গের বৈঠকও হয়ে যেত, যাতে হাসি-কৌতুকের কথাবার্তাও চলত এবং ঘর-সংসারের নিত্য নৈমিত্তিক কিসসা কাহিনীও বর্ণিত হত। মোটকথা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের সাথে অপকটে এবং সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে প্রাণ খুলে কথা বার্তা বলতেন।

 

        এখন দেখতে হবে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের হাসি-কৌতুক কি প্রকার ছিল?

এর ব্যাখ্যা প্রয়োজন এই কারণে যে, অনেক বিষয় আমাদের ভ্রান্ত কর্মের ফলে আমাদের মতবাদ বদলে গেছে, চিন্তাধারা কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছে এবং আমরা প্রত্যেক ব্যাপারে মিতাচার হারিয়ে ফেলেছি। যদি আমরা গম্ভীর হই, তবে এতটুকু যে, খোশমেজাযী ও হাসি-কৌতুক আমাদের থেকে বহু দূরে চলে যায়। পক্ষান্তরে যদি আমরা রঙ্গরসে অবতীর্ণ হই, তবে ভদ্রতা আমাদের কাছ থেকে বিদায় হয়ে যায়। তাই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কর্ম থেকে আমরা একটি বিশেষ একটি মাপকাটি নিজেদের সামনে রাখতে চাই। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ইসলামের হাসি-কৌতুকের সজ্ঞা স্বয়ং তারই পবিত্র মুখ থেকে শুনুন। একবার সাহাবায়ে কেরাম তাজ্জব হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হুজুর আপনিও হাসি-ঠাট্টা করেন! এরশাদ হলঃ হাঁ, নিঃসন্দেহে  কিন্তু আমার হাসি-ঠাট্টা পুরোপুরি সত্যের উপর ভিত্তিশীল। (শামায়েল) এর বিপরীতে আজকাল আমাদের হাসি-ঠাট্টা, মিথ্যা,পরনিন্দা, অপবাদ, দোষারোপ ও অযথা অতিশয়োক্তিকে পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়।

 

*****