বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
'আল ফিরদাউস' পরিবেশিত
'উস্তাদ খুবাইব আহমাদ হাফিজাহুল্লাহ' এর
'তাবলীগ জামাতের বিভ্রান্তি'
****************************
তাবলীগী বয়ান (ভূমিকা)
কেন তাবলীগ নিয়ে লেখালেখি?
১) শায়খ আবু জুবাইদা হাফিজাহুল্লাহ তানজিম আল-কায়েদার ইন্টেলিজেন্সে ছিলেন। ২০০৩ এ ফয়সালাবাদ থেকে গ্রেফতার হন। CIA’র ভয়ংকর অত্যাচারে একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ছোট একটা কাঠের বাক্সে পুরে রাখা। গড়ে দিনে ১৭বারেরও অধিক ওয়াটারবোর্ডিং এর শিকার …
২)শায়খ আবু উবাইদা রামজি হাফিজাহুল্লাহ, খালিদ শায়খ মুহাম্মাদেরও একই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়…
৩) শায়খ উমার আব্দুর রহমান ১৯৯৫ থেকে আমেরিকার জেলে বন্দী। শায়খের অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে করা হয় নানা অত্যচার। শায়খ ইংরেজি পারেন না। আরবি ভাষা জানে এমন কাউকে শায়খের কাছে আসতে দেয়া হয় না। ২১ বছরে কারো সাথে বসে ১টি কথাও বলতে পারেন নি…
৪) শায়খ মুস্তাফা আবু ইয়াজিদ ড্রোন হামলায় শহিদ হয়েছেন স্ত্রী-সন্তান সহ।
৫) শায়খ আবু হামজা আল মুহাজিরের স্ত্রী আজো বন্দী যদিও তিনি জানতেনই না তার স্বামীই আমেরিকার ঘুম হারাম করা দুর্ধর্ষ কমান্ডার!
এই তালিকা অনেক লম্বা… অনেক অনেক লম্বা। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা বিগত কয়েক বছরে কয়েক লাখের উপর। বিভিন্ন কারণে একটানা তাবলীগের সাথে সময় খুব কম লাগিয়েছি। তবে সম্প্রতি ঘটনাক্রমে বহুদিন পর একটানা বেশ লম্বা একটা সময় তাবলীগের সাথে কাটিয়েছি। এই সময়ে তাবলীগী নিসাবের প্রায় সকল কিতাব পড়া হয়েছে। আরও পড়েছি তাবলীগের আলেম ও মুরুব্বিদের লেখা কৈফিয়ত পেশকারী কিতাবাদি। তাবলীগের সিনিওর সাথী, মুরুব্বি, আলেমদের সাথে আলোচনা করেছি। এরই বদৌলতে শোনা… “তাবলীগে বের হওয়ার আর জিহাদে বের হওয়া একই রকম কষ্ট!! ফজিলতও সমান সমান।” এবং অন্যান্য ভয়ংকর তাহরিফ, যা কমবেশী উল্লেখ করেছি ও করছি! আল্লাহু আকবার! যখন শুনি… ওয়াল্লাহি! আমার ইচ্ছা হয় গলাটা চেপে ধরতে…। নিজের রক্ত পানির দামে বিক্রী করা ফি সাবিলিল্লাহকে, কারাগারে হামাগুড়ি দেয়া ফি সাবিলিল্লাহকে — তিন দিন লাগানোর সমমানের বলে মেনে নেয়া এবং চুপচাপ বসে বসে তা প্রচার হতে দেখাকে আমি ভাইদের প্রতি অত্যাচার হিসেবেই দেখেছি।
তাবলীগের ভাইদের মজলিশগুলোতে সাহাবাদের রক্ত ও ঘামে গড়া জীবনকে নিয়ে স্রেফ ঠাট্টা করা হচ্ছে… আর কিছুই না! আমি মনে করি যথেষ্ট হয়েছে!! আবু জুবায়ের ভাইয়ের একটা কথা যুক্ত করে দিলাম, “আমরা কখনই তাবলীগ এর নেক কাজের বিরোধি নই। তাদের ভুল গুলোর সংশোধনে আগ্রহী। এখন যদি কেউ সলাতের ব্যাপারে এমন ওজরখাহি করে মানবেন? যদি কেউ বলে দরুদ পড়লেই সলাত হয়ে যাবে কিংবা রোজা জান্নাতের চাবি। মানবেন?”
তাবলীগ জামাতের বিভ্রান্তি!! (০)
তাবলীগ জামাতের ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে-
তাবলিগীরা বলে, ‘’ইক্কদামি জিহাদ শুধু ঐ কাফির জাতির সাথে বৈধ যারা ইসলামের দাওয়াতের পথে বাঁধা হয়ে আছে। অর্থাৎ ইসলামে জিহাদের আসল মাকসাদ ও সূক্ষ্ম উদ্দেশ্য হলো দাওয়াত ও তাবলীগ। যারা এতে বাঁধা দেবে তাদের সাথে জিহাদ করা বৈধ। আর যারা তাবলীগের কাজে বাঁধা দেয় না; বরং ভিসা ও অনুমতি প্রদান করে তাদের সাথে জিহাদ করা বৈধ নয়।’’
তাবলীগিদের এ কথাটি বড়ই বিপজ্জনক!! কেননা, তাবলীগের অনুমতি দিলেই জিহাদের মাকসাদ পূর্ণ হবে না। কারণ জিহাদের বড় মাকসাদ হলো কুফরি শক্তির প্রভাব ধ্বংস করে ইসলামের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং কালেমায়ে তাওহিদকে বুলন্দ করা। যতক্ষণ কুফরি শক্তি নিঃশেষ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের অন্তর ইসলাম কবুল করার জন্য খুলবে না!” - মুফতি তাকি উসমানি, তাকরিরে তিরমিজি ২/২০৬
এদেশের একজন তাবলীগি আলেম মাওলানা মুহাম্মদ হারুন বুখারি দীনাবাদি লিখিত “তাগুতি শক্তির মূলোৎপাটনের এক মহাজিহাদঃ প্রচলিত তাবলীগ জামাতের বিরোধিতা কার স্বার্থে?” বইয়ে তাবলীগ জামাতের বিপরীতে আসা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। মোটামুটি আউট অফ কনটেক্সট, পয়েন্টলেস আলোচনাই বেশী। তবুও বইয়ের শেষ দিকে ২১৫ পৃষ্ঠায় তিনি তাবলীগের কিছু ভ্রান্তি আছে বলে মেনে নিয়ে উপরোক্ত বক্তব্য (মুফতি তাকি উসমানির উল্লেখিত বক্তব্য) উল্লেখ করেছেন! অর্থাৎ তিনি সম্পূর্ণ সহমত প্রকাশ করেছেন।
উপরোক্ত বক্তব্য উল্লেখ করার মাধ্যমে লেখক কি অকপটে স্বীকার করে নিলেন না যে, তাবলীগ ও জিহাদ কখনই এক নয়!!??অথচ তিনি বইয়ের নামই দিয়েছে “তাবলীগকে মহা-জিহাদ আখ্যায়িত করে”!
খ্রিস্টান পল তাদের কিতাব বিকৃত করতে অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এবং অসংখ্য সাংঘর্ষিক বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান নিজেরাই খন্ডন করেছে। জাকির নায়েক, কলিম সিদ্দিকি, আহমাদ দিদাতরা বিধর্মীদের দাওয়াতের ক্ষেত্রে যে এপ্রোচ নেয় তা হচ্ছে, “তাদের বক্তব্য দ্বারাই তাদের রদ্দ করা”। আলহামদুলিল্লাহ! ইসলামে যত বিভ্রান্ত দল আছে এরা প্রত্যেকেই নিজেরাই নিজেদের রদ্দ করে। আপনাকে শুধু সময় বের করে তাদের কয়েকটি বই পড়ে নিতে হবে। সকল ভ্রান্ত ফিরকার পেশকৃত দলীলের প্রত্যুত্তর তাদের কিতাবসমূহেই মজুদ আছে। যার ভিত্তিতে এটা প্রকাশ্য যে, উম্মাতে মুসলিমার কিছু ফিরকা খ্রিস্টান পলের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে যা আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরই ভবিষ্যৎবাণী! নিশ্চয়ই আল্লাহ’র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন -
“তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের স্বভাবের অনুসরণ করবে, প্রতি পদে পদে, এমনকি তারা যদি কোন ধাব(গুইসাপের গর্ত) এও প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাই করবে।”
আমরা (সাহাবাগণ) জানতে চাইলাম, “হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি কি ইহুদী ও নাসারাদের অনুকরণের কথা বলছেন?” তিনি বললেন, “নয়তো কারা?”(সহিহ বুখারী)
ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে ও গুঁইসাপের গর্তের উদাহরণ পেশ করার অর্থ কঠিনভাবে তাদের অনুসরণ করা। এ অনুসরণ অর্থ কুফরি নয়, বরং পাপাচার ও ইসলামের বিরোধিতায় তাদের অনুকরণ করা উদ্দেশ্য। এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট মুজিজা, তিনি যার সংবাদ দিয়েছেন আমরা তা চাক্ষুষ দেখছি।”
তাবলীগী বয়ান (১)
“নির্দিষ্টভাবে কুর’আনের জিহাদের লক্ক্যবস্তু স্থির করে অন্যান্য শাখাকে তার থেকে বের করে দেয়া জিহাদ শব্দের অর্থ বুঝবার ব্যাপারে নিতান্তই অজ্ঞতারই পরিচায়ক। সুতরাং, ইখলাসের সাথে সুন্নাত মতে দ্বীনের যে কোনো কাজের চেষ্টা প্রচেষ্টাকে শরিয়তের পরিভাষায় জিহাদ বলা হয়। অতএব, তাবলীগও একটি জিহাদ।”
- মাওলানা হারুন বুখারি লিখিত “তাবলীগ জামাতের বিরোধিতা কেন ও কার স্বার্থে?”, পৃষ্ঠা ২০২,
বিপরীতে -
“কোনো কোনো বন্ধুকে বলতে শোনা যায় যে, ই’লায়ে কালেমাতুল্লাহ, দ্বীন প্রতিষ্টা বা দ্বীনের প্রচার প্রসারের নিমিত্তে যে কোন কর্ম-প্রচেষ্টাই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। বলা বাহুল্য “জিহাদ” আভিধানিক অর্থে শরীয়ত-সম্মত সকল দ্বীনি প্রচেষ্টাকে বুঝায় এবং শরয়ী নুসূসসমূহের (কুর-আন হাদিসের ভাষা) কোথাও কোথাও এই শব্দটি জিহাদের ছাড়াও অন্যান্য দ্বীনি মেহনতের ব্যাপারেও ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু জিহাদ যা শরীয়তের একটি পরিভাষা এবং যার অপর নাম “ক্বিতাল ফি সাবীলীল্লাহ” তা কখনো এই সাধারণ কর্ম প্রচেষ্টার নাম নয় বরং এই অর্থে “জিহাদ” হল “আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য, ইসলামের হিফাজত ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, কুফরের শক্তি চুরমার করার জন্য এবং এর প্রভাব প্রতিপত্তিকে বিলুপ্ত করার জন্য কাফের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করা।”
ফিকহের কিতাবসমূহে এই জিহাদের বিধি-বিধানই উল্লেখিত হয়েছে। সিরাত গ্রন্থসমূহে এই জিহাদেরই নববী ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে, কুর-আন হাদীসে জিহাদের ব্যপারে যে বড় বড় ফযীলতের কথা বলা হয়েছে তা এই জিহাদের ব্যাপারেই বলা হয়েছে এবং এই জিহাদে শাহাদাতের মর্যাদায় বিভূষিত ব্যক্তিই হলেন প্রকৃত “শহীদ”।
শরয়ী নুসূস এবং শরয়ী পরিভাষাসমূহের উপর নেহায়েত জুলুম করা হবে যদি আভিধানিক অর্থের অন্যায় সুযোগ নিয়ে পারিভাষিক জিহাদের আহকাম ও ফাযায়েল দ্বীনের অন্যান্য মেহনত ও কর্ম প্রচেষ্টার ব্যাপারে আরোপ করা হয়। এটা এক ধরণের অর্থগত বিকৃতি সাধন, যা থেকে বেঁচে থাকা ফরজ।
কেউ তাবলীগের কাজকে “জিহাদ” বলে দিচ্ছেন, কেউ তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধির কাজকে, আবার কেউ রাজনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা বরং ইলেকশনে অংশগ্রহন করাকেও জিহাদ বলে দিচ্ছেন। কারো কারো কথা থেকেতো এও বোঝা যায় যে, পাশ্চাত্য রাজনীতির অন্ধ অনুসরণও জিহাদের শামিল। আল্লাহর পানাহ!!!”
- মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহ, মাকতাবাতুল আশরাফ হতে প্রকাশিত “কিতাবুল জিহাদ”, পৃষ্ঠা ৩৭
মাওলানা আব্দুল মালেক জিহাদকে তালিম/তাবলীগের সাথে সম্পৃক্ত করাকে রীতিমত জুলুম, বিকৃতি সাধন এবং এথেকে বেঁচে থাকা ফরজ বলেছেন। বিপরীতে, ফরজ তরককারী মাওলানা হারুন বুখারির মতে উপমহাদেশের প্রথিতযশা মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিজাহুল্লাহ নিতান্তই অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন!
“উলামায়ে কেরামের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ এবং দ্বীনের বিকৃতির ন্যায় অত্যাচারের অবসান চাই!
তাবলীগী বয়ান (২)
ইশরাকের দুই রাকাত সালাত আদায় করলে কি হজ্জ করার দরকার নেই?
আনাস বিন মালিক (রাদি) হতে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাতের সহিত আদায় করে। অতঃপর, সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলার জিকিরে মশগুল থাকে, তারপর দুই রাকাত নফল পরে তবে সে হজ্জ ও উমরার সাওয়াব লাভ করে।
আনাস (রাদি) বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বার বলেন, পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সাওয়াব।” (“মুন্তাখাবে হাদিস”, মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি কর্তৃক সংকলিত, পৃষ্ঠা ২৫৪, অধ্যায়- নামায, হাদিস ১৭৪)
এখন কেউ যদি একথা বলে, “যে ব্যক্তির ফজর সালাত জামাতের সাথে আদায় করার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকির করে এবং অতঃপর দুই রাকাত চাশতের নামায পরে তবে সে নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে যাবে, কেননা হজ্জ করার পর মানুষ মাসুম শিশুর মত গুনাহমুক্ত হয়ে যায়।” তবে তাকে অপব্যাখ্যাকারী বলা হবে কি? কেউ যদি হজ্জকালীন কাবা তাওয়াফ, আরাফার ময়দানে অবস্থানের সকল ফজিলত ইশরাকের সালাতের সাথে সম্পৃক্ত করে তবে তাকে অপব্যাখ্যাকারী বলা হবে কি? কেউ যদি ইশরাকের সালাতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হজ্জ ও উমরাহ’র সকল ফজিলত নিয়ে আসে তবে তাকে অপব্যাখ্যাকারী বলা হবে কি? এবং কেউ যদি ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত জিকির-আজকার করে ২রাকাত ইশরাকের সালাত আদায় করে হজ্জের ফরজিয়াত আদায়ের দাবী করে বসে তবে সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে!!!?
ইশরাকের সালাতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হজ্জ-উমরাহ’র ফজিলত সংক্রান্ত সকল আয়াত-হাদিস ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যদি অপব্যাখ্যা ও গোমরাহি হয় তবে, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’র সকল আয়াত ও হাদিস দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা কেন অপব্যাখ্যা ও গোমরাহি হবে না?!! আশা করি, তাবলীগের সাথী ভাইয়েরা ও মুরুব্বিরা বিষয়টি নিয়ে ফিকির করবেন।
জেনে রাখুন, ইশরাকের সালাতের ফজিলত বোঝানোর জন্য হজ্জ ও উমরাহ’র সাথে তুলনা দেয়াই যথেষ্ট। ইশরাকের সালাতের ফজিলত বর্ণনার উদ্দেশ্যে হজ্জ-উমরাহ সংশ্লিষ্ট সকল ফজিলতের আয়াত-হাদিস ব্যবহার কোনোভাবেই জায়েজ নেই।
দেখুন দেওবন্দের শাইখুল হাদিস সাঈদ আহমাদ পালনপুরি (দা বা) কী বলছেন -
“জিহাদ ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। কুরআন ও হাদীসে যখন এই শব্দ উল্লেখ করা হয় তখন এর দ্বারা ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহ উদ্দেশ্য হয়। তবে হ্যাঁ কিছু কিছু কাজকে জিহাদের সাথে মিলানো হয়েছে। এ মিলানোটুকুই এ কাজগুলোর ফজিলতের জন্য যথেষ্ট। যেমন হাদীসে আছেঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন –
“যে ইলমের খোঁজার জন্য বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় আছে”।
এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলম অন্বেষণের পথকে الله سبيل في (ফি সাবিলিল্লাহ) আখ্যা দিয়ে জিহাদের সাথে তুলনা করলেন। এই তুলনা করাটাই তালেবে ইলমের জন্য ফজিলত। এর থেকে আগে বাড়ার কোন অধিকার কারো নেই। এমনিভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকেও الله سبيل في (ফি সাবিলিল্লাহ) এর সাথে মিলানো যেতে পারে।
আর মিলানোটাই তার ফজিলত হবে। কিন্তু তাই বলে জিহাদের সমস্ত ফজিলত তার সাথে প্রয়োগ করা الله سبيل في جهاد (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) কে তাবলীগের সাথে ‘খাস’ করা বা الله سبيل في (ফি সাবিলিল্লাহ) কে ‘আম’ করে তাবলীগকেও এর উদ্দেশ্য বানানো সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন দাবি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বদা স্মরণ রাখা জরুরী।”
এছাড়াও আল্লামা তাকি উসমানি অন্য ক্ষেত্রে জিহাদের ফজিলত ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র দলীল অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছেন (দেখুন- তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম), যেমনটা সাইদ আহমাদ পালনপুরি (দা বা) উল্লেখ করেছেন। একইভাবে, ফি সাবিলিল্লাহ একটি বিশেষ পরিভাষা। কুর’আনের ভাষায় এর পারিভাষিক অর্থ “কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ ও এর সংশ্লিষ্ট সকল কাজ!” (সূত্রঃ তাফসিরে তাওজিহুল কুর’আন, আল্লামা তাকি উসমানি)।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) -এর মতে,
الجهاد بذل الوسع والطاقة بالقتال في سبيل الله عزوجل بالنفس والمال واللسان وغير ذلك
অর্থ, ‘জিহাদ হলো আল্লাহর পথে জান, মাল, জবান ইত্যাদির সর্বশক্তি দিয়ে (কাফিরের মোকাবেলায়) যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।’ (বাদায়ে ওয়াস সানায়ে, ৬ষ্ট খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা)
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)’র ব্যাখ্যার বিপরীতে তদীয় সুবিধানুযায়ী তাবলীগের মুরুব্বিদের ব্যাখ্যা গ্রহণ করাই হচ্ছে অন্ধ তাকলিদের একটি প্রকার যেমনটা আল্লামা তাকি উসমানি স্বীয় কিতাব “মাজহাব কী ও কেন” তে উল্লেখ করেছেন।
দাওয়াত ও তাবলীগ সংশ্লিষ্ট কাজের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে ফি সাবিলিল্লাহ’র সকল আয়াত-হাদিস ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়েজ নেই। বরং এথেকে বেঁচে থাকা ফরজ।
(মাওলানা আব্দুল মালেক (দা বা), “কিতাবুল জিহাদ” গ্রন্থের ভূমিকা, পৃষ্ঠা ৩৭)
(দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে ফি সাবিলিল্লাহ’র আয়াত/হাদিস ব্যাপকভাবে ব্যবহারের স্বপক্ষে, ইমাম বুখারি রহঃ ফি সাবিলিল্লাহ সংক্রান্ত একটি হাদিস ‘জুমু’আর সালাতে গমন’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন মর্মে একটি দলীল তাবলীগের মুরুব্বিগণ পেশ করে থাকেন। ইনশা’আল্লাহ এব্যাপারে আলাদা আলোচনা হবে)
প্রশ্নঃ তাবলীগ বিরোধিতা কেন?
উত্তরঃ তাবলীগের সাথে জড়িত লক্ষ-কোটি মানুষ যাতে অপব্যাখ্যা থেকে দূরে থেকে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে পারেন। উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাতের ঢালাও বিরোধিতা কখনোই উদ্দেশ্য নয়। সকল মুসলিম জামাতের মধ্যেই কিছু না কিছু ভালো দিক রয়েছে। যেমন- বেরলবিদের বিরোধিতা বলতে সামগ্রিকভাবে তাদের সকল কাজের বিরোধিতা বোঝায় না। তাদের হাজির-নাজির, নুর-বাশার সংক্রান্ত আকিদা বিশ্বাসের বিরোধিতাকেই বোঝায়। তেমনি, তাবলীগের বিরোধিতা বলতে মসজিদে তিন দিন, চল্লিশ দিন সময় দেয়া কিংবা তাদের অন্যান্য ভালো কাজের বিরোধিতাকে বোঝানো হয় না। জামাতে তাবলীগের একজন হিতাকাঙ্খী হিসেবেই এবিষয়গুলোর অবতারণা করেছি। দুশমনি থেকে নয়। আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে মাফ করুন। আমিন।
“যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।” — (সুরা আন নিসা, ৪:৮৫)
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের বিষয়টি বোঝার এবং তদানুজায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
তাবলীগী বয়ান (৩)
হারুন বুখারী প্রণীত কিতাবের ১৯৮ নং পৃষ্ঠায় “কিতাল (যুদ্ধ) ছাড়াও যে জিহাদ হয় তার প্রমাণ” অধ্যায়ে লিখেন,
“রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক জিহাদ থেকে ফিরে আসার পর বলেছেন
رجعنا من جهاد الاصغر الي جهاد الاكبر
(আমরা ছোট জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করে বড় জিহাদের প্রতি ধাবিত হলাম)
এ হাদিসে কিতাল বা যুদ্ধকে ছোট জিহাদ আর ইলম শিক্ষা ও আমল করা অর্থাৎ নফসের জিহাদকে বড় জিহাদ আখ্যা দেয়া হয়েছে। ইলম ও আমল হলো আসল লক্ষ্য এজন্য এটা বড় জিহাদ, আর কিতাল বা যুদ্ধ হলো তার উপলক্ষ তাই এটা ছোট জিহাদ।” (তাবলীগ জামাতের বিরোধিতা কেন ও কার স্বার্থে, পৃষ্ঠা ১৯৮)
এই বক্তব্যের বিপরীতে যা বলার আছে
ক) উনি একটা অদ্ভুত কথা বলেছেন যে, কিতালের আসল উদ্দেশ্য/লক্ষ্য ইলম ও আমল!!! এটা উনি কোথায় পেলেন বুঝলাম না!! নিঃসন্দেহে এটী মস্তিস্কপ্রসুত বাতিল একটি বক্তব্য! আল্লাহ’র রাস্তায় কিতাল স্বয়ং একটি আমল… !
হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন-
“আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন “আল্লাহর উপর ঈমান আনা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা।”(বুখারী, মুসলিম)।
প্রকৃতপক্ষে কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ’র উদ্দেশ্য হচ্ছে ইলায়ে কালিমাতুল্লাহ অর্থাৎ- আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করা তথা, ইসলামের বিপরীতে আসা বাঁধাকে অপসারণ করা। (দেখুনঃ আল আহকামুস্ সুলতানিয়া, মা’আরিফুল কুরআন)
খ) উনার উদ্ধৃত হাদিসটি একটি জাল হাদিস। যা ঘরে বসে থাকা ব্যক্তিদের হট ফেভারিট। ভ্রস্ট শিরকি পীরেরা খানকায় বসে, জিহাদের সকল ফজিলত স্বীয় মুরিদদের উদ্দেশ্যে বয়ানের উদ্দেশ্যে এই হাদিসটি ব্যবহার করে থাকে। তাবলীগের মুরুব্বিরাও এমনটা শুরু করেছে জানা ছিল না।
তাহকিক
১) হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফিকাহর কিতাব হিদায়াহ’র প্রখ্যাত আরবী ভাষ্যকার ‘নসবুর রায়াহ’র লেখক ইমাম জামালুদ্দিন ঝাই’লায়ী আল হানাফী (রহঃ) তাখরীজু আহাদীসিল কাশশাফ কিতাবে লিখেছেন,
“আমার মতে হাদিসটি নিতান্ত গরীব এবং মুহাদ্দিসীনদের নিকট অপরিচিত।” [তথ্য : তাখরীজু আহাদীসিল কাশশাফ ২য় খণ্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরাঃ ১/১১]
২) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) সরাসরি এটিকে জাল ও বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এ হাদীসের ব্যাপারে ‘তাসদীদুল ক্বাওস’ ( ﺗﺴﺪﻳﺪ ﺍﻟﻘﻮﺱ ﻣﺨﺘﺼﺮ ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﻔﺮﺩﻭﺱ) কিতাবে বলেন:
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻓﻲ ﺗﺴﺪﻳﺪ ﺍﻟﻘﻮﺱ ﻫﻮ ﻣﺸﻬﻮﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻟﺴﻨﺔ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﻛﻼﻡ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﻠﺔ (
“এটা লোক মুখে প্রসিদ্ধ, যা ইবরাহীম ইবনে আবী আবলাহ নামীয় ব্যক্তির উক্তি। (এটি নবীজির হাদিস নয়।)”
৩) ইমাম বাইহাকী (রহঃ) স্বীয় “আয যুহদুল কাবীর” কিতাবে এটি উল্লেখ করে লিখেছেন- ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻫﺬﺍ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﻓﻴﻪ ﺿﻌﻒ এটি দুর্বল সনদে বর্ণিত।” [তথ্য, আয যুহদুল কাবীর ১ম খণ্ড, ৩৮৮ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৩৮৪]
৪) ইবনে আররাক (রহ) তাখরীজুল ইহইয়া কিতাবে একে দ্বয়িফ বা দুর্বল বলেছেন। [তথ্য: তাখরীজুল ইহইয়া ]
৫) ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন-
ﻗﺎﻝ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﻓﻲ ” ﻣﺠﻤﻮﻉ ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻱ ” ( 11/197 ) : ” ﻻ ﺃﺻﻞ ﻟﻪ ، ﻭﻟﻢ ﻳﺮﻭﻩ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﻌﺮﻓﺔ ﺑﺄﻗﻮﺍﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﻓﻌﺎﻟﻪ ، ﻭﺟﻬﺎﺩ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻣﻦ ﺃﻋﻈﻢ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ، ﺑﻞ ﻫﻮ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﺎ ﺗﻄﻮﻉ ﺑﻪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ
“হাদিসটির কোন ভিত্তি নেই। যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথা ও কাজ অর্থাৎ হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা কেউ এ হাদিসটি বর্ণনা করেন নি।
কুফফারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই সবচেয়ে বড় আমল বরং মানুষ যত ইবাদত করে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে জিহাদ।”[তথ্য: মাজমূ’উল ফাতাওয়া ১১ খণ্ড, ১৯৭ পৃষ্ঠা]
৬) আল্লামা আজলূনী (রহ) তিনিও একে দ্বয়িফ বলেছেন।[সূত্র — কাশফুল খিফা ১/৪২৪]
৭) ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী আল-হানাফি (রহ) আল আসরারুল মারফূয়াহ কিতাবে একে মওদ্বূ বা বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
সুতরাং এটাই সাব্যস্ত যে, এটি একটি জাল হাদিস। হারুন বুখারী সাহবের উক্ত বক্তব্যের দুটি ভ্রান্তির জবাবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ’র একটি বক্তব্যই এখানে যথার্থ… “হাদিসটির কোন ভিত্তি নেই। যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথা ও কাজ অর্থাৎ হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা কেউ এ হাদিসটি বর্ণনা করেন নি। কুফফারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই সবচেয়ে বড় আমল বরং মানুষ যত ইবাদত করে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে জিহাদ।”
দা’ঈ ইলাল্লাহ ও উলামায়ে কেরামের জন্য,
ক) মস্তিষ্কপ্রসুত বিদ’আতি ব্যাখ্যা থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার।
খ) জাল হাদিস থেকে হুকুম সাব্যস্ত করার বিপদ থেকে মানুষকে সতর্ক করাও দরকার। এবং আল্লাহ্ তা’আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন!
তাবলীগী বয়ান (৪)
কট্টর লা-মাজহাবি ও তাবলীগিদের মধ্যকার সাদৃশ্য
১) লা-মাজহাবিরা পূর্ববর্তি ইমামদের সাথে নিজেদের সাদৃশ্যের দাবী করে ঠিকই কিন্তু, হাদিস ও ফিকহের ক্ষেত্রে সালাফ ইমামদের মতকে ছুঁড়ে ফেলে পরবর্তী আলেমদের ও স্থানীয় মুরুব্বিদের মত অনুসরণ করে। একই ভাবে তাবলীগও মুজতাহিদ ইমামগণের ব্যাখ্যা যথেষ্ট মনে করে না। যেমন- জিহাদের ব্যাখ্যায় তারা পরবর্তী আলেম ও স্থানীয় মুরুব্বিদের মতকেই অধিকতর প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
২) ফিকহের ক্ষেত্রে লা মাজহাবিরা হানাফি, হাম্বলি, শাফেই ও মালেকি ফিকহের ব্যাখ্যা যথেষ্ট মনে করে না। একইভাবে তাবলীগও ইমাম চতুষ্টয় রাহিমাহুমুল্লাহ’র ব্যাখ্যাকে যথেষ্ট মনে না করে, ব্যাখ্যারও ব্যাখ্যা করেন।
৩) লা-মাজহাবিরা যেমন ইমাম আবু হানিফা ও অন্য তিন ইমাম রাহিমাহুমুল্লাহ’র ব্যাখ্যা ছুঁড়ে ফেলে বুখারী শরিফের হাদিসের কথা বলে। একইভাবে তাবলীগও ইমাম আবু হানিফা রহঃ ও অন্য তিন ইমাম রাহিমাহুমুল্লাহ’র ব্যাখ্যা ছুঁড়ে ফেলে বুখারী শরিফের হাদিসের কথা বলে।
বিস্তারিত প্রমাণঃ
১)ইমাম আবু হানিফা রহঃ বলেন,
الجهاد بذل الوسع والطاقة بالقتال في سبيل الله عزوجل بالنفس والمال واللسان وغير ذلك
অর্থ, ‘জিহাদ হলো আল্লাহর পথে জান, মাল, জবান ইত্যাদির সর্বশক্তি দিয়ে (কাফিরের মোকাবেলায়) যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।’(বাদায়ে ওয়াস সানায়ে, ৬ষ্ট খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা)
কিন্তু তাবলীগের মুরুব্বি-সাথীরা এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট মনে করেন না। তারা ইমাম আবু হানিফা রহঃ’র মতকে দেয়ালে ছুঁড়ে ফেলে পরবর্তী আলেম তথা মাওলানা আশরাফ আলি থানবি, মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভি রহঃ দের ব্যাখ্যা গ্রহণ করে থাকে, যদিও দেওবন্দি আলেমদের কেউই মুজতাহিদ নন। এটি সুস্পষ্ট লা-মাজহাবিদেরই বৈশিষ্ট্য!
২) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) -এর মতে,
الجهاد بذل الجهد في قتال الكفار لاعلاء كلمةالله
অর্থ, ‘জিহাদ হলো আল্লাহর বাণী সমুন্নত করার জন্য কাফিরদের মোকাবেলায় যুদ্ধের ময়দানে সর্বশক্তি ব্যয় করা।’ (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ৭ম খন্ড, ৪র্থ পৃষ্ঠা )
ইমাম মালেক (রহঃ) এর মতে,
الجهاد قتال المسلم كافرا غير ذي عهد لاعلاء كلمةالله
অর্থ, ‘জিহাদ হলো যে সকল কাফেরদের সাথে মুসলমানরা চুক্তিবদ্ধ নয় তাদের সাথে যুদ্ধ করা।’ (আশ-শারহুস সগীর, বাবুল জিহাদ)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর মতে,
الجهاد قتال الكفار
অর্থঃ “জিহাদ হচ্ছে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করা।” (মাতালিবুন্নূহা)
জিহাদ সম্পর্কে উপরে বর্ণিত মুসলমানদের জন সর্বজন স্বীকৃত চার মাযহাবের চার ইমামের বক্তব্য থেকে এটাই সু-স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, জিহাদ হলো কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করা। অথচ, তাবলীগের মুরুব্বি-সাথী ভাইরা জিহাদের পারিভাষিক অর্থ “কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করা” এটা যথেষ্ট মনে করেন না। সাম্প্রতিক আলেম ও মুরুব্বিদের করা ব্যাখ্যা ব্যতিত ইমাম চতুষ্টয় রাহিমাহুমুল্লাহ’র ব্যাখ্যাকে তারা অপর্যাপ্ত মনে করেন। (লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)।
শুধু তাই না, জিহাদকে কিতালের সাথে খাস করাকে অজ্ঞতার পরিচায়ক বলেও উল্লেখ করা হয়েছে হারুন বুখারি লিখিত কিতাব “তাবলীগ বিরোধিতা কেন ও কার স্বার্থে” এ।
ঠিক যেভাবে লা-মাজহাবিরা মনে করে, ইমাম রহঃ দের কাছে হাদিস পৌছায়নি তাই উনারা সহিহ ব্যাখ্যা করতে অক্ষম (!) ছিলেন। তাবলীগের সাথী-মুরুব্বিদের বুঝও ঠিক সেরকমই দৃশ্যমান হচ্ছে। আল্লাহু আ’লাম।
৩) লা-মাজহাবিরা মুজতাহিদ ইমামগনের বিপরীতে খণ্ডিতভাবে ইমাম বুখারি রহঃ’র কিতাব থেকে হাদিস উদ্ধৃত করে ইমাম চতুষ্টয়ের ব্যাখ্যাকে রদ্দ করতে চায়। একইভাবে তাবলীগের সাথী-মুরুব্বিরা “দাওয়াত ও তাবলীগ”কে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে সহিহুল বুখারির একটি হাদিস সামনে নিয়ে আসে! তাবলীগের স্বপক্ষে লিখিত কিতাবগুলোতে (মাওলানা জাকারিয়া শাহারানপুরি লিখিত, হারুন বুখারি লিখিত ইত্যাদি) উল্লেখ করা হয়েছে
“ইমাম বুখারি রহঃ জুম’আর নামাজে গমন অধ্যায়ে ফি সাবিলিল্লাহ’র একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তির পা আল্লাহ’র রাস্তায় ধুলিবর্ণ হয়েছে, আল্লাহ্ তা’আলা তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন।”
তাই যেহেতু জুম’আর নামাজে গমনকে ফি সাবিলিল্লাহ বলা হয়েছে সেহেতু দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ কেন ফি সাবিলিল্লাহ হবে না?” (তাবলীগ জামাতের বিরোধিতা কেন ও কার স্বার্থে, পৃষ্ঠা ১৯৮-১৯৯)
অথচ পূর্বেকার নেককার সালাফদের নীতি ছিল, “ফজিলতের জন্য ফি সাবিলিল্লাহ’র সাথে তুলনা করাই যথেষ্ট।” (দেখুন দেওবন্দের শাইখুল হাদিস সাইদ আহমাদ পালনপুরী (হাফি)’র বক্তব্য) এবং আল্লামা তাকি উসমানি (দা বা) বলেছেন, “স্বতন্ত্র দলীল প্রয়োজন।”
দেখুন, একটি মীমাংসিত বিষয় অর্থাৎ জিহাদের পারিভাষিক অর্থ কী এব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা রহঃ ও অন্য তিন ইমামের ব্যাখ্যা মজুদ থাকা সত্ত্বেও তাবলীগের আলেম-মুরুব্বি-সাথী ভাইয়েরা বুখারি শরিফের একটি বিচ্ছিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে সাধারণের অজ্ঞতার সুযোগ নিচ্ছেন, ঠিক যেমনটা লা-মাজহাবিরা করে থাকে…
যেখানে সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ‘শরাহ ইরশাদুস সারী’ (৫/৩১) গ্রন্থে বলা হয়েছে, জিহাদ হলোঃ ‘ইসলামের হিফাজত এবং আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে কাফিরদের সাথে লড়াই করা।’ (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, ৩/১)। পাঠকদের কাছে জিজ্ঞাসা রইলো এটা কি হুবহু লা-মাজহাবিদের বৈশিষ্ট্য নয়?
প্রাজ্ঞ হানাফি, দেওবন্দি আলেমদের বলব আকাশে অঙ্কিত নাম ইমাম আবু হানিফা রহঃ’র সমর্থনে ও মাজহাবের দিফার উদ্দেশ্যে তাবলীগের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন যেমনটা আপনারা লা-মাজহাবিদের ক্ষেত্রে হয়েছেন। সমালোচনার ক্ষেত্রে আপনারা সততা দেখান। “আপনাদের মাসলাকের ব্যক্তিরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র হাদিস, ইমাম আবু হানিফা রহঃ’র মর্যাদা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তখন ছাড় দেন অথচ অন্য মাসলাককে ছাড়েন না বরং উলামা কনফারেন্স করেন!!” — এমন কথা কাউকে বলার সুযোগ করে দিবেন না দয়া করে। আল্লাহ্ আপনাদের সাহায্য করুন। আমিন।
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের তাবলীগের ভাইদের ও সকলকে সহিহ বুঝ দান করুন। আমিন।
তাবলীগী বয়ান (৫)
আল্লাহ’র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“আমার ইচ্ছা হয় আমি আল্লাহ’র রাস্তায় সফরে বের হই তারপর নিহত হই, আবার জীবিত হই আবার নিহত হই, আবার জীবিত হই আবার নিহত হই”।
তো ভাই তৈরি আছি না আমরা ইনশা’আল্লাহ, আল্লাহ্’র রাস্তায় সময় লাগানোর জন্য?” তাবলীগের একটি জেলা মারকাজের ইমাম সাহেব। (একজন ‘আলেম’, এক সাল চিল্লা দিয়েছেন)
বয়ান শেষে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন অমুক আলেমের সাথে গিয়ে কথা বলে আসুন। মূল হাদিসটি পড়ুন — http://wwwihadiscom/bukhari/56/2797
মূল হাদিসের আরবি পাঠ লক্ষ্য করুন,
وَلاَ أَجِدُ مَا أَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ، مَا تَخَلَّفْتُ عَنْ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فِي سَبِيلِ اللَّهِ
যার অর্থ দাঁড়ায় “আল্লাহ্ রাস্তায় যুদ্ধাভিযান” !! আল্লাহু আকবার! অর্থের কি বিকৃতি !! মুরুব্বি সাহেবের কি সবৈর্ব মিথ্যাচার!! (উনি বেশ কিছু হাদিস মুখস্থ আরবিতে বললেও, এই হাদিসটির আরবি বলা থেকে বিরত ছিলেন)।
তাবলীগের ভ্রান্তি মূলতঃ দুই লেয়ারের -
১) মাওলানা জাকারিয়া রহঃ ও তৎসংশ্লিষ্ট পূর্ববর্তী মুরুব্বিরা যে সকল আয়াত-হাদিসে “ফি সাবিলিল্লাহ” বা “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ” শব্দটি রয়েছে, সেসকল আয়াত-হাদিসকে ব্যাপক করে দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে লাগিয়েছেন যা তাদের টেক্সটে আছে। যদিও ইসলামের ১৪শ বছরের ইতিহাসে কেউই ঐ সকল আয়াত-হাদিস থেকে দাওয়াত ও তাবলীগ উদ্দেশ্য বুঝেন নি।
২) কালপরিক্রমায় পরবর্তী ও বর্তমান মুরুব্বিরা আরও এক ধাপ এগিয়ে। ফি সাবিলিল্লাহ যে সকল ইবাদতের সাথে পাওয়া গিয়েছে উনারা সেগুলোকেও দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে নিয়ে এসেছেন। উনারা রিবাত, হিজরত, কিতাল সংক্রান্ত আয়াত-হাদিসকেও সরাসরি দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে ফেলছেন। অর্থাৎ, কোনো আয়াত-হাদিসে কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ, গাজওয়া ফি সাবিলিল্লাহ সরাসরি উল্লেখ থাকলেও সেগুলোকেও দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে মিলিয়ে ফেলছেন! ওয়াল্লাহু আ’লাম! এভাবে চলতে থাকলে দুই দিন পর হজ্জের আয়াত-হাদিসও ব্যাবহার করা শুরু হয় কি না!! আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় চাই!
যেমন গত সপ্তাহে আমাদের এলাকায় জামাত এসে বলছে তারা নাকি মুহাজির ফি সাবিলিল্লাহ। আর এলাকার রাহবার ও যারা বয়ান শুনছে তারা নাকি আনসার ফি সাবিলিল্লাহ। যে জায়গায় মুহাজির ও আনসাররা একসাথে কাজ করে সেখানে নাকি দ্বীন চমকায়ে যায়!!! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!!
কি নিকৃষ্ট জুলুম! নি নিকৃষ্ট অত্যাচার! আল্লাহ্ তা’আলার আয়াত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র হাদিস এবং সাহাবাদের রক্তাক্ত জীবনের উপর!
‘আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে।” (সহিহুল বুখারি, হা/১০৬)
তাবলীগের ভাইরাই সবচেয়ে বেশী বলে থাকেন “এতগুলো লোক জাহান্নামে চলে যাচ্ছে আর আপনি অলস বসে আছেন? দ্বীনের ফিকির করি ভাই”! তাই আমার প্রচেষ্টার কারণ হচ্ছে, তাবলীগের সাথে সম্পৃক্ত লক্ষ-কোটি মানুষ যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যাচার করে জাহান্নামে জায়গা না করে নেয়!
তাবলীগী বয়ান (৬)
শাইখুল হাদিস সাঈদ আহমাদ পালনপুরী (হাফিজাহুল্লাহ) বলছেন,- “তাবলীগের কাজ জিহাদ নয়”।
“তিনি (মাওলানা ওমর পালনপুরী সাহেব) এক চিঠিতে দলিল হিসাবে এ কথা আমাকে লিখেছেন যে, তিরমিযি শরীফের একটি রেওয়ায়েতে তাবেঈ উবায়াহ্ রহঃ মসজিদে যাওয়াকে الله سبيل في (ফি সাবিলিল্লাহ) এর প্রয়োগ ক্ষেত্রে সাব্যস্ত করেছেন। তাহলে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে কেন তা প্রয়োগ করা যাবে না?
আমি উত্তরে লিখেছি যে –
প্রথমতঃ উবায়াহ্ রহঃ কোন সাহাবী নন। হানাফী আলেমদের নিকট সাহাবীদের কথা حخت বা দলিল। কিন্তু তাবেঈদের ব্যাপারে স্বয়ং ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা হল هم رخال ونحن رخل — তারাও মানুষ আমরাও মানুষ।
অর্থাৎ তাঁদের কথা আমাদের হানাফী আলেমদের নিকট حخت বা স্বতন্ত্র দলিল নয়। যদি কোন সাহাবী এই পরিভাষাটি “আম” (ব্যাপক) করতেন তাহলে একটা কথা ছিল।
(নোটঃ যদি তাবে’ঈ’র বক্তব্যই দলিল না হয় তাহলে হানাফিদের নিকট- “ইমাম বুখারি রহঃ’র জুমু’আর সালাতে গমন অধ্যায়ে ফি সাবিলিল্লাহ’র হাদিস এনেছেন” একথা বলা কেমন যৌক্তিক হবে? নাকি সুবিধানুযায়ী হানাফি থেকে শাফেয়ি হয়ে যাওয়া যাবে?
লক্ষ্য করুন, সাইদ আহমাদ পালনপুরী হাফিঃ তাবলীগের কাজকে ফি সাবিলিল্লাহ বলতেই নারাজ। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তো আরও বহুদূরের বিষয়!!!!! সুবহান’আল্লাহ!)
দ্বিতীয়তঃ একমাত্র দাওয়াত ও তাবলীগই কেন এর প্রয়োগ ক্ষেত্র হবে? যদিও কোন কোন ভাইকে বলতে শুনা যায় — তাবলীগই দ্বীনি কাজ। হযরত রহঃ এমন বলতেন না। যদিও তিনি বলতেন তাবলীগও দ্বীনি কাজ। কিন্তু তাবলীগ জামাতের ভায়েরা “ও” কে “ই” দ্বারা পাল্টে দিয়েছেন। মোটকথা, তারা নিজেদের কাজকেই জিহাদ বলেন। বরং তারা হয়তো হাকীকী জিহাদকেও জিহাদ মনে করেন না। তাঁদের মতে জিহাদের ফজিলতগুলোও দাওয়াত ও তাবলীগের মাঝে সীমাবদ্ধ।
তৃতীয়তঃ অন্য সকল দ্বীনি কাজ সম্পাদনকারীরা যেমন দ্বীনি শিক্ষাদান ও লেখালেখিতে ব্যস্ত আলেমরা নিজেদের কাজের জন্য الله سبيل في (ফি সাবিলিল্লাহ) ও জিহাদের ফজিলত সাব্যস্ত করেন না। এরপরেও কেন তাবলীগের ভাইরা এসকল হাদীসগুলোকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন? (সূত্রঃ তোহফাতুল আলমায়ী)।
তাবলীগী বয়ান (৭)
ক) হারুন বুখারী স্বীয় কিতাব “তাবলীগ জামাতের বিরোধিতা কেন ও কার স্বার্থে”’ পৃষ্ঠা ২০২ এ বলেছেন,“তাবলীগও একটি জিহাদ।”
খ) এস এম সালেহিন স্বীয় কিতাব “তাবলীগের প্রশ্নের উত্তর”, পৃষ্ঠা ৩২ এ বলেছেন,
“তাবলীগ স্বয়ং শাশ্বতঃ, সম্পূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতম জিহাদ।” শরিয়তের পরিভাষার উপর এই নিদারুন অত্যাচারের জবাব দিচ্ছেন মুতাকাল্লিমে ইসলাম শায়খ ইলিয়াস ঘুম্মান হাফিজাহুল্লাহ…
“আমি সর্বশেষ ঐ দলিলটি পেশ করব যেটাকে প্রথমেই উল্লেখ করা উচিৎ ছিল। কিন্তু এটা স্বয়ং সাহেবে শরীয়ত ও সর্বশেষ নবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক প্রদত্ত জিহাদের ব্যাখ্যা। আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদত্ত ব্যাখ্যার পরে অতিরিক্ত অন্য কিছুর কোনো অবকাশই বাকী থাকে না। এজন্য এটাকে আলোচ্য বিষয়ের চূড়ান্ত দলিল হিসাবে পেশ করছি।
হযরত আমর ইবনে আবাসা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করল, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! জিহাদের অর্থ কি?”
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন, “যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।” সে আবার জিজ্ঞাসা করলো “সর্বোত্তম জিহাদ কোনটি?” রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন, “যে মুজাহিদের অশ্বকে হত্যা করা হয় এবং মুজাহিদের রক্ত প্রবাহিত করে দেওয়া হয়।”(সূত্রঃ মুসনাদে আহমাদ, ১৩/২৪২)
আপনি একটু চিন্তা করুন! এতো স্পষ্টভাবে বলার পরেও কি জিহাদের অর্থ যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোন শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করার অবকাশ আছে? বরং জিহাদের অর্থে ব্যপকতা প্রদান করে অন্যান্য পূণ্যময় কাজগুলোকে নিজের পক্ষ থেকে মনগড়া জিহাদ আখ্যা দেওয়াটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদত্ত জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর অর্থের সাথে বাড়াবাড়ি নয় কি? হে আল্লাহ!তুমি আমাদের সঠিক বোধশক্তি দান কর। আমীন!” (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ পার ই’তেরাজাত কা ইলমি জায়েজা, পৃষ্ঠা ৬২)
শায়খ ইলিয়াস ঘুম্মানের যে কিতাব থেকে উক্ত ব্যাখ্যা নেয়া হয়েছে সেই বইয়ের সাথে একাত্মতা পোষণ করে প্রশংসাসূচক অভিমত দিয়েছেন যে সকল উলামায়ে কেরাম —
১) ডক্টর শের আলি শাহ
২) রইসূল্ মুনাজিরিন মাওলানা আব্দুস সাত্তার তিউনিশি
৩) মুফতি হামিদুল্লাহ জান সাহেব
৪) জাকারিয়া কান্ধলভি রহঃ’র খলিফা আল্লামা আব্দুল হাফিজ মক্কি
৫) জামিয়া ফারুকিয়া করাচির মুহতামিম, মাওলানা সলিমুল্লাহ খান
৬) শাইখুল কুর’আন মাওলানা আসলাম শেখপুরী প্রমুখ!
তাবলীগী বয়ান (৮)
মুফতি শামসুজ্জোহার কথাবার্তা আমার বেশ ভালো লাগে। টু দা পয়েন্ট কথা বলেন। চিৎকার-চেঁচামেচি করেন না। আল্লাহ্ শায়খকে হেফাজত করুন। কিন্তু শায়খ তাবলীগ জামাতের ডিফেন্সে বলেছেন, “একটা প্রমাণও কি দেখানো যাবে যে, ফাজায়েলে আ’মাল পড়ে কেউ কুর’আন-হাদিসের বিরুদ্ধে গিয়েছে”?
(সূত্রঃ https://wwwyoutubecom/watch?v=cNdQjCLmlRg — ১৩মিনিট ২০ সেকেন্ডে দেখুন)
১) জী! এমন লক্ষাধিক উদাহারণ দেখানো যাবে। শায়খকে অনুরোধ করব তাবলীগের ভাইদের মজলিশগুলোতে বসার জন্য। প্রমাণ পেয়ে যাবেন ইনশা’আল্লাহ। কুর’আন পড়লে, বুখারি পড়লে মানুষ গোমরাহ হয়ে যাবে একথা তাবলীগের আম-মুরুব্বিরা ওপেনলিই বলে থাকে…
২) ব্যস্ততার কারণে সময় লাগাতে না পারলেও সমস্যা নেই। দারুল উলুম দেওবন্দ আপনাদের জন্য প্রমাণ হাজির করছে -
(۴) اگر کہیں کوئی عالم قرآن پاک کی تفسیر بیان کرتے ہیں تو اسے روک دیتے ہیں اور کہتے ہیں کہ صرف فضائل اعمال پڑھی جائے گی اور کوئی کتاب نہیں پڑھی جائے گی۔
অর্থঃ “কোনো আলেম তাফসির করতে গেলে তারা থামিয়ে দেয়, ফাজায়েলে আ’মাল পড়তে বলে।”(ফতোয়া নং ৬৮৭৮৪)
(সূত্রঃ http://darulifta-deobandcom/home/ur/Dawah--Tableeg/68784)
সমস্যা হচ্ছে দিফায়ে তাবলীগ কার্যক্রমে শামিল ব্যক্তিরা না জেনেই ডিফেন্ড করেন অথবা জেনেশুনে এগুলো লুকিয়ে ফেলেন। আল্লাহ্ সহজ করুন। আমিন।
তাবলীগী বয়ান (৯)
“আল্লাহর পথে একটি সকাল কিংবা একটি সন্ধ্যা ব্যয় করা গোটা দুনিয়া এবং দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের চেয়ে উত্তম।”(সহীহ বুখারী)
হাদিসের সকল ইমামগণ উক্ত হাদিসটি কিতাবুল জিহাদ/ কিতাবুল মাগাজির অধীনে এনেছেন। এছাড়াও, মুন্তাখাব হাদিসে উল্লেখিত- ৬টি আয়াত এবং প্রায় ৫০+ হাদিস শুধুমাত্র জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’র ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ইসলামের ১৪০০ বছরের ইতিহাসে মুন্তাখাবে হাদিস সম্ভবত প্রথম সংকলিত হাদিসের কিতাব, যেখানে এসকল আয়াত-হাদিস “দাওয়াত ও তাবলীগ” এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহু মুস্তা’আন!
তাবলীগী বয়ান (১০)
“অনেকে বলেন আল্লাহর রাস্তা তথা তাবলীগে ১ টাকা ব্যয় করলে ঊনপঞ্চাশ কোটি টাকা ব্যয় করার ছওয়াব পাওয়া যায়। আবার অনেকে ঊনপঞ্চাশ কোটি না বলে ৭ লক্ষ বলেন।
এ সংশ্লিষ্ট বিষয়টিও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। পরিষ্কার করার জন্য বলছি,
এক হাদীসে এসেছে,
مَنْ غَزَا بِنَفسه في سَبيل اللّه، وأنفَقَ في وَجهِ ذَلك، فَلَهُ بِكُلِّ دِرهَم سَبعُمائة ألف دِرهم
অর্থ যে ব্যক্তি নিজে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এবং সে পথে অর্থ ব্যয় করে, প্রতি এক দিরহামের বিনিময়ে তার থাকবে ৭ লক্ষ দিরহাম। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ২৭৬১)
অপর এক হাদীসে এসেছে,
إنَّ الصلاةَ و الصيامَ و الذكرَ تُضَاعَفُ على النَّفقةِ في سبيل الله بسبعمائة ضِعف
অর্থ নামায, রোযা ও যিকিরের ছওয়াব আল্লাহর রাস্তায় দান করার তুলনায় ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। (সুনানে আবু দাঊদ, হাদীস নং ২৫০০)
৭ লক্ষকে ৭০০ দ্বারা পূরণ করলে ফল হয় ঊনপঞ্চাশ কোটি। এর দ্বারা পরিষ্কার হলো যে, তাবলীগের পথে ১ টাকা ৪৯ কোটি বা ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করার সওয়াব পাওয়ার কথাটা পুরাই ভুল। কারণ, উল্লেখিত হাদীসদ্বয় দ্বারা স্পষ্টতই বুঝা গেল, ৪৯ কোটি গুণ ছওয়াবের ফযীলতটি ইবাদতসংশ্লিষ্ট। আর ৭ লক্ষ গুণের ছওয়াবটি ব্যয়সংশ্লিষ্ট। তাছাড়া ইবাদত ও ব্যয়ের আলোচ্য ফযীলতটিও ব্যাপক নয়। তা বরং আল্লাহর রাস্তার জিহাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এপর্যায়ে আলেমসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি,
শরীয়তের কোনো হুকুম যখন خلاف قیاس বা যুক্তির বিপরীত পরিলক্ষিত হয়, তখন তা ْمَوْرِد তথা যে ক্ষেত্রে বলা হয়েছে সে ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে।
যেমন নামাযে উচ্চস্বরে হাসলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। এখানে উচ্চস্বরে হাসাকে অযু ভঙ্গের কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর উচ্চস্বরে হাসা অযু ভঙ্গের কারণ হওয়া যুক্তির বিপরীত। তাই ْمَوْرِد তথা যে ক্ষেত্রে বলা হয়েছে সে ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে।- শুধু রুকু’-সিজদাওয়ালা নামাযের মধ্যকার উচ্চস্বরে হাসাকে অযু ভঙ্গের কারণ বলা হবে। জানাযার নামাযের ও অন্য কোন সময়ের উচ্চস্বরে হাসাকে অযু ভঙ্গের কারণ বলা হবে না।
তদ্রূপ টাকা খরচ করবে একটি, আর ছওয়াব হবে ৭ লক্ষ। এটা কি খেলাফে কিয়াস ও যুক্তির বিপরীত নয়?
অতএব এ সাওয়াবের কথা যে ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তার জিহাদ করার ব্যাপারে, সে ক্ষেত্রেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য আমলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। অতএব আলেমসমাজের সঠিক বিষয়টি মানুষের সামনে এখন ব্যাপকভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। অন্যথায় বর্তমানে সমাজে যে, বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।”
বয়ান : মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ
সংকলন : মাওলানা সফিউল্লাহ ফুআদ, দারুল উলুম মাদানিনগর!
তাবলীগী বয়ান (১১)
“তাবলীগ বাড়লে ইহুদি-নাসারাদের কোনো সমস্যা নাই।”
কথাটি বিলকুল সত্য। ১০০% সত্য।
১) ইজরায়েলের জাতীয় দৈনিক “ইজরায়েল ন্যশনাল নিউজ” এ প্রকাশিত, জায়োনিস্ট ইজরায়ে্লি ইহুদি, তাবলীগি জামাতের জিহাদের বিকৃত সংজ্ঞার চূড়ান্ত ভক্ত- রেবেকা আব্রাহামসন লিখিত নিচের লেখাটি পড়ার আহ্বান রইলো —
Giving Voice to Muslims Who Support Peace: Tablighi Jamaat
২) এছাড়াও ইহুদিদের কট্টর দালাল, কায়রো বিশ্ববিদ্যায়ের ওমর সালেম বলেছে,
“ইহুদিদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হচ্ছে তাবলীগ জামাত।” (লিঙ্কেই পাবেন)
৩) সি আই এ’র অফিসার গ্রাহাম ফুলার তাবলীগ জামাতের প্রশংসা করে বলে,
“শান্তিকামী এবং রাজনৈতিকভাবে অথর্ব।” (Graham Fuller, “The Future of Political Islam” )
৪) ইজরায়েলের তাবলীগের সাথী ভাই Emad Saada চোখে সমস্যা হওয়াতে, এক ইহুদি কাব্বালিস্ট রাব্বির কাছে যায় ঝাড়ফুঁকের জন্য এবং এর ফলে সে সুস্থতা লাভ করে বলে জানায়।
তাবলীগী বয়ান (১২) (মুন্তাখাব হাদিস)
মাওলানা আব্দুল মালেক (দা বা) বলেন,
“…আমার জানা মতে জিহাদের পারিভাষিক অর্থে যেসব আয়াত ও হাদীস এসেছে মুরুব্বীরা সেগুলোর অর্থ শুধু দাওয়াত বলেন না। তবে তারা ‘সাবীলুল্লাহ’র ফযীলত বিষয়ক নুসূখের ক্ষেত্রে প্রশস্ততা অবলম্বন করেন। আর এটা তো স্পষ্ট যে, ‘লুগাত’ ও ‘উরফ’-দুই দিক থেকেই ‘সাবীলুল্লাহ’ শব্দটা ব্যাপক। (দেখুন রফীক আমজাদ কাসেমীকৃত ‘আওয়া লাইসা ফী সাবীলিল্লাহি ইল্লা মান কুতিল’।)
কিন্তু যেখানে পূর্বাপর দ্বারা জিহাদের বিশেষ অর্থ (ফিকহী পরিভাষার জিহাদ) নির্ধারিত হয়ে যায় সেখানে সম্প্রসারিত অর্থ গ্রহণের সুযোগ নেই।”(পুরো লেখার লিঙ্ক)
সম্প্রতি তাবলীগের কিছু ভাই উনার এই বক্তব্য থেকে নানা উপায়ে তাহরিফের বৈধতা আদায়ের চেষ্টা করছেন। এটা তো সবাইই মেনে নিয়েছে অকপটে যে, কিছু হাদিসে ফি সাবিলিল্লাহ ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন —রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।’-(জামে তিরমিযী ২/৯৩)
কোনো কোনো মুহাদ্দিস নিম্নোক্ত হাদিসের ফি সাবিলিল্লাহও ব্যাপকার্থে নিয়েছেন-
“আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল বা এক বিকাল ব্যায় করলে দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চাইতে উত্তম।” [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৫৬, জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার]
এরকম কিছু হাদিস রয়েছে যেখানে ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ জিহাদ ব্যাতিত অন্যক্ষেত্রে মুহাদ্দিসরা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। এটা নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। যেমনটা মাওলানা আব্দুল মালেক (দা বা)ও বলেছেন! কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মাওলানা আব্দুল মালেক (দা বা)’র পরবর্তী বক্তব্যটি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার দেখুন মাওলানা হাফিঃ কী বলেছেন-“কিন্তু যেখানে পূর্বাপর দ্বারা জিহাদের বিশেষ অর্থ (ফিকহী পরিভাষার জিহাদ) নির্ধারিত হয়ে যায় সেখানে সম্প্রসারিত অর্থ গ্রহণের সুযোগ নেই।”
অর্থাৎ, ফি সাবিলিল্লাহ যেখানে ফিকহি অর্থে অর্থাৎ, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ অর্থে এসেছে সেখানে সম্প্রসারিত অর্থে নেয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।”
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, মুন্তাখাব হাদিসে শুধু “ফি সাবিলিল্লাহ” উল্লেখিত হাদিসই নয়- সরাসরি জিহাদ, হিজরত, গণিমত, ঘোড়া, রিবাত শব্দ ব্যবহৃত হওয়া হাদিসগুলোও “দাওয়াত ও তাবলীগ” অধ্যায়ের অধীনে আনা হয়েছ!!!
মুন্তাখাব হাদিসের “দাওয়াত ও তাবলীগ” অধ্যায়ের অধীনে উল্লেখিত অন্তত ৬টি আয়াত এবং ৫৪টি হাদিস সম্প্রসারিত অর্থে নেয়ার সুযোগ কোথায়!!?
মুন্তাখাব হাদিসের “দাওয়াত ও তাবলীগের ফজিলত” অধ্যায়ের, ৪৮, ৫৮, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৫, ৮৬, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ১০৯, ১১০, ১১১, ১১২, ১১৩, ১১৪, ১১৫, ১১৬, ১১৭, ১১৮, ১১৯, ১২৪, ১২৬, ১৩০, ১৩১, ১৮১, ১৮৩, ১৮৬ নং হাদিসসমূহ দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত করা যাবে বলে কোনো মুহাদ্দিস মত দিয়েছেন কি?
এই হাদিসগুলো কি সম্প্রসারিত অর্থে ব্যবহার করা আদৌ সম্ভব? তাবলীগের ভাই ও মুরুব্বিদের নিকট জানার আগ্রহ প্রকাশ করছি। আশা করি মুহতারাম ভাইয়েরা আমাদের অশান্ত আত্মাকে প্রশান্ত করবেন!
*এখানে আমি সেসব হাদিস উল্লেখ করিনি যেগুলোর ব্যাপারে তাবলীগের ভাইরা দূরবর্তী দলীলও আনতে পারবেন (যেমন, আল্লাহ্’র রাস্তায় ধুলাবালি লাগানো, এক সকাল ও এক বিকাল আল্লাহ্’র রাস্তায় কাটানো ইত্যাদি হাদিসের নম্বর এখানে উল্লেখ করা হয়নি যদিও এই হাদিসসমূহও কিতাবুল জিহাদের হাদিস)…
কান্ধলভি পরিবার (আশ্চর্যতম ইতিহাস)
#কান্ধলভি_পরিবার #তাবলীগী_বয়ান (আশ্চর্যতম ইতিহাস)
১) মাওলানা ইলিয়াস রহঃ, তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা
২) মাওলানা জাকারিয়া রহঃ, মাওলানা ইলিয়াসের ভাতিজা
(তাবলীগী নিসাব ‘ফাজায়েলে আ’মাল’ এর রচয়িতা)
৩) মাওলানা এহতেশামুল হাসান কান্ধলভি, মাওলানা ইলিয়াসের চাচাতো ভাই
(তাবলীগী মানহাজের পরিচিতি ও ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘পুস্তিকা ওয়াহেদ এলাজ’এর রচয়িতা)
৪) মাওলানা ইউসুফ রহঃ, মাওলানা ইলিয়াসের ছেলে
(২য় দায়িত্বশীল, তাবলীগী নিসাব ‘মুন্তাখাবে হাদিস’ এর সংকলক)
৫) মাওলানা ইনামুল হাসান কান্ধলভি, মাওলানা ইলিয়াসের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে
(মাওলানা এহেতেশামুলের ছেলে, ৩য় দায়িত্বশীল)
৬) মাওলানা সাদ কান্ধলভি, মাওলানা ইলিয়াসের নাতি
(মাওলানা ইউসুফের ছেলে, ৪র্থ ও বর্তমান দায়িত্বশীল)
(সুত্রঃ হালতে মাশায়েখে কান্ধলা)
সুবহান’আল্লাহ!! তাবলীগ জামাতের কাজ ৯০ বছর ধরে একটি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে আবর্তিত!!
তাবলীগ জামাত মূলতঃ একটি বংশীয় কাজ! আল্লাহ্ই ভালো জানেন পর্দার আড়ালের কথা! কেন একটি পরিবারের বাইরে এই কাজ কখনোই আসেনি! এই পরিবারটির প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল ও আছে আল্লাহ্ তা’আলাই উত্তম জানেন!
তাবলীগ জামাত বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নাদভি রহঃ’র মেহনতের ফলে। সেই আলি নাদাবি রহঃই পরবর্তীতে তাবলিগকে বর্জন করেন এবং প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন!! (এব্যাপারে বিস্তারিত আসছে পরবর্তীতে) অথচ, এখন বিশ্বব্যাপী কাজ ছড়ানোর কথা বলে নিজেকে কবুল দাবী করা হচ্ছে! হাস্যকর! মুখে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নতের কথা অথচ, খোদ শীর্ষ পর্যায়েই ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নাতকে। এটা কীভাবে সম্ভব যে এর চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আর পাওয়াই যায় নি তাবলীগ জামাতের জিম্মাদারির জন্য!!!!!
নবীওয়ালা কাজ, সাহাবাওয়ালা কাজ কখনোই একটি নির্দিষ্ট পরিবারমুখী হতে পারেনা। যে কোনো কাজই বংশীয় ধারায় আটকা পরেছে, নিঃসন্দেহে তা জবরদস্তিমুলক কাজে পরিণত হয়েছে! যা পূর্বে ভিন্ন মাসলাকের মানুষদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। এখন হচ্ছে স্বয়ং দেওবন্দিদের কাছেও...
আল্লাহ্ তা’আলার কাছে সর্বব্যাপী ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই!!! আমিন!
তাবলীগের মুরুব্বি সাদ সাহেবের ব্যাখ্যা
শায়খ সিনান হান্নাদ বলেন,
২০১৪ সালের ইজতেমায় বয়ানে সা’দ সাহেব বুখারির কিতাবুয যাকাতের একটি হাদীসের ভূল ব্যাখ্যা করেন। পরে বুখারির দারসে আবু সাবের আব্দুল্লাহ সাহেব এর কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘সা’দ সাহেব যে ব্যাখ্যা করলেন এই হাদীসের, এটা সালাফ-খালাফের কেউ করেননি। সবচে’ আশঙ্কার কথা হচ্ছে তিনি যেভাবে কসম খেয়ে এইসব ব্যাখ্যাগুলো করেন- খোদা কি কাসাম, হারগিজ নেহি হুতা ইত্যাদি- নিজের একটা ব্যাখ্যার ওপর ওনার এই আত্মবিশ্বাস বড় ভয়ের ব্যাপার। দেওবন্দের ফারেগীনদের মধ্যে সবচে’ বড় মুহাদ্দিস ছিলেন আল্লামা কাশ্মীরি রহঃ। তিনি পর্যন্ত উনার কোন ব্যাখ্যায় এই রকম আত্মবিশ্বাস দেখানোর সাহস দেখাননি, যে সব ব্যাখ্যায় সালাফ-খালাফের কারো মতামত না পাওয়া যায়।’
সা’দ সাহেবের এই সব ব্যাখ্যা নতুন কিছু নয়। মুনতাখাব হাদীসের হাদীসগুলো জমা করেছেন ইউসুফ কান্দলভী রহঃ। কিন্তু এর হাদীসগুলো কে বিভিন্ন অধ্যায়ে নাম দিয়ে বিন্যাস করেছেন সা’দ সাহেব।
বিভিন্ন জায়গায় উনার এইসব শুযুয কথাবার্তা বন্ধ করতে সাঈদ পালানপুরি সাহেব তাকে চিঠি লিখেছেন, লোক মারফত বলেছেন, এবং সরাসরি বলেছেন। এরপরো এইসব বন্ধ হয়নি। অবশেষে পালানপুরি সাহেব ২০১৩/১৪/১৫ সালে বুখারির দারসে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমরা দাওয়াত ও তাবলীগের এই পদ্ধতির সাথে সম্পর্কচ্ছিন্ন করার ঘোষনা প্রকাশ্যে দিতে বাধ্য হব।
********************