যে মূল্যে প্রতিষ্ঠিত হবে
আল্লাহর শরীয়াহ
মূল- শাইখ ইবরাহীম আর রুবাইশ রহ.
অনুবাদ- সুলাইমান হাম্মাদ
[আলিম, দাঈ ও অনুবাদক[
********************
الحمدلله رب العالمين. والصلاة والسلام على رسوله الأمين
প্রতিটি মুসলিম হৃদয়ের একান্ত বাসনা এই যে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শরীয়াহ বাস্তবায়িত হোক, আর তারা শরীয়াহ অনুযায়ী জীবন-যাপন করার সৌভাগ্য লাভ করুক।
যে মুসলিম তার হৃদয়ে এই বাসনা লালন করে না, তার উচিত স্বীয় ঈমানের অবস্থাকে যাচাই করে নেয়া— সে ঈমানদার আছে না ঈমানহারা হয়ে বসে আছে।
কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُوْلِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের অন্তর্গত ‘ঊলুল আমর’ তথা আদেশ দাতাগণের। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে থাক। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর সমাধান’। [সূরা আন-নিসা-৫৯]
কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে - যারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের শ্রম ব্যয় করে চলেছেন, অর্থাৎ যারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠাকে কেবল মনের কামনা বাসনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একে জীবনের একটি লক্ষ্য বানিয়ে নিয়ে এর জন্য নিজেদের ধন-সম্পদ, সময় ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন— এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম।
যারা এই পর্যায়ে আছেন তাদের সংখ্যাই যদি কম হয়, তাহলে যারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন তাদের সংখ্যা যে কত নগণ্য হবে তা তো বলাই বাহুল্য।
সকলকে সম্বোধন করেই বলছি, সমকালীন ইতিহাস একথা প্রমাণ করে দিয়েছে যে বিশ্ব কুফুরী শক্তি আজ কতটা কঠোর তাদের ব্যাপারে, যারা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যদিও কেউ তা শান্তিপূর্ণভাবে করে।
তাই তাওহীদের পতাকা কখনোই সমুন্নত হবে না, যতক্ষণ না আত্মোৎসর্গকারী তাওহীদপন্থীদের মস্তকের খুলি সমূহের উপর তাকে গেড়ে না দেয়া হবে। আর কোনো দেশে ততক্ষণ পর্যন্ত শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত হবে না যতক্ষণ না তার পদতলে তার অনুসারীদের এই পরিমাণ রক্তের নজরানা পেশ করা হবে, যা তাকে পরিতৃপ্ত করে।
তাই বলছি, যে যেখানেই শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার আহ্বান করবে, ইসলামের বিরুদ্ধে একজোট হওয়া আন্তর্জাতিক কুফুরী শক্তি তার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাবে। আর মুসলিমদের যথেষ্ট প্রতিরক্ষা শক্তি অর্জন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কুফফাররা মুসলিমদের মাথার উপর ছড়ি ঘোরাতে থাকবে। এটা একারণে করবে যেন মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীনের কিছু অংশ (শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা) থেকে পদচ্যুত করতে পারে।
নিঃসন্দেহে মুসলিম উম্মাহ শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে তার ছায়াতলে জীবনযাপনের নেয়ামত ভোগ করতে পারবে না যতদিন না এই উম্মাহর আত্মোৎসর্গকারী কাফেলার অগ্রভাগ আল্লাহর পথে নিজেদের জানকে কুরবানী করে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে। এর পরেই কেবল অবশিষ্ট উম্মাহর শরীয়াহ ছায়াতলে জীবনযাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
কবিতা:—
আমরা চিনি সেই মৃত্যুকে যে যমদূত হয়ে আমাদেরকে স্পর্শ করতে আসে, আর আমরা মৃত্যুদূত হয়ে তাকে মাড়িয়ে চলি।
বহুরূপী দুর্যোগের ঘন আধারে আমরা নিত্য নিক্ষিপ্ত হই, যা আমাদেরকে নিঃশেষ করে দিতে চায়, আর আমরা তাকে যুদ্ধাংদেহী রূপে গ্ৰাস করে নেই।
আমাদের কিছুসংখ্যক মৃত্যু পুরো জাতিকে জীবনের স্বাদ আস্বাদন করায়, নিঃসন্দেহে সামান্য ক্ষতিই পূর্ণতার পথের সঞ্জীবনী।
রাতের আকাশে কিছু নক্ষত্রের পতন যেমন অবশিষ্ট নক্ষত্রের দীপ্তিকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে।
বৃক্ষরাজির কতক ডালের বিসর্জন যেমন বৃক্ষের সবুজ শ্যামলিমাকে আরও মনোমুগ্ধকর করে।
অতএব শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার দিকে আহবানকারী প্রত্যেক দাঈর জন্য আবশ্যক হলো, সামর্থ্যের মধ্যে থাকা সব রকম প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে এর ব্যাপক প্রচার প্রসারের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, এবং সাথে সাথে প্রয়োজনীয় সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকা সেই ভয়াবহ রণাঙ্গনে টিকে থাকার জন্য যা অতিসত্বর তাদের সামনে উন্মোচিত হবে—তারা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন।