প্রচ্ছদ প্রতিবেদন:
ব্যাভিচার বৈধকরণে জাতিসংঘের নির্লজ্জ প্রস্তাব এবং মুসলিম উম্মাহর সাহসী প্রতিবাদ।
-ফারুক হোসাইন খান।
বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নৈতিক আর অনৈতিকতার মধ্যকার এক স্নায়ুবিদ্ধংসী দ্বন্দ্ব। সারাবিশ্বের নীতি ও চরিত্রবান মানুষ মাত্রই উৎকণ্ঠায় ছিল এ দ্বন্দ্বের ফলাফল কি হয় কি হয় ভেবে।পক্ষান্তরে, অনৈতিকতা ও সমাজের সকল অপাংক্তেয় ও ঘৃণ্য কদর্যতার হোতারা যে কোনো মূল্যে নৈতিক মূল্যবোধ কে পদদলিত করে তাদের বিষাক্ত মনোবৃত্তিকে যে কোনো মূল্যে নীতিবান বিশ্ববাসীর ঘাড়ে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নীতি আদর্শের জন্য আপোষহীন মানুষগুলোর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এর নিচে চাপা পড়ে গেছে অপরাধ আর কদর্যতার ধ্বজাধারীদের সকল স্পর্ধা। চরিত্রবান মানুষদের সিংহ গর্জন এর মুখে দুরুদুরু ভয়ে কম্পমান হৃদয়ের মানুষদের সকল দুঃসাহস মিইয়ে গিয়েছে। আর এ জন্যই বুঝি,এ প্রবাদ বাক্যের উদ্ভব হয়েছে যে, চক্রান্তকারী হাজার বছর ধরে চক্রান্তের জাল বুনে আর হকপন্থীর এক গর্জনেই সব চক্রান্ত স্তব্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে কায়রোতে জনসংখ্যা সম্মেলনের নামে বিকৃত যৌনাচারের প্রবক্তা বিশ্ব মোড়লদের তথাকথিত যৌথ সম্মেলনের ফলাফলে উদ্যোক্তারা এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিকৃত যৌনাচারকে ছড়িয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টা চালিয়েছিল বিবেকবান মানুষের ক্ষণিকের প্রতিবাদের মুখেই তাদের এতদিনের সকল শ্রম সাধনা ভন্ডুল হয়ে গিয়েছে। তারা বাধ্য হয়েছে সম্মেলনের খসড়া দলিল থেকে বিতর্কিত অংশ বাদ দিয়ে কোন প্রকারে সম্মেলন শেষ করতে। উদ্যোক্তারা খসড়া দলিলের যে অংশগুলির জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দা কুড়িয়েছেন, নিজেদের ঘৃণার পাত্রে পরিণত করেছেন তা হলোঃ
১) গর্ভপাত বৈধকরণ
২) কিশোর কিশোরীদের যৌন স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান
৩) অভিভাবকরা যাতে সন্তান-সন্ততির যৌন আচরণের ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ না করে তা নিশ্চিত করা।
৪) বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংগঠন কর্তৃক কিশোর-কিশোরীদের এসব অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উৎসাহ দান।
৫)বিবাহের বাইরে নারী-পুরুষের একত্রে বসবাসের ও দাম্পত্য জীবন চালনার অধিকার।
৬) একই লিঙ্গকে বিবাহ করা তথা সমকামিতা বৈধকরণ।
৭) ব্যভিচারের মাধ্যমে কোন নারী গর্ভবতী হলে তাকে বিশেষ সাহায্য প্রদান।
৮) যেসব আইন-কানুন স্বাধীন যৌন মিলনে বাধা স্বরূপ সেগুলো বাতিলকরণ।
৯) অবৈধ যৌন চর্চা ও সন্তান উৎপাদানকে ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে গণ্য করণ।
১০) পরিবার প্রথার বিলোপ সাধন।
১১) নিরাপদ যৌনাচারের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান।
খসড়া দলিলের এ প্রস্তাবনাগুলো পড়ে যে কেউ এগুলো পাশ্চাত্যের কোন যৌনবাদী গ্রুপ বা সংগঠনের মেনিফেস্টো বলে ভুল করতে পারেন। কিন্তু আসলে তা নয়। জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের খসড়া দলিলও খোদ জাতিসংঘের তথাকথিত সভ্য বিবেকবান (!) বিশ্বের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা আবিষ্কার করেছেন, অনুন্নত বিশ্বের দারিদ্র্যের মূল কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। আর এই জনসংখ্যা বিস্ফোরণকে ঠেকাতে তারা উপরোল্লেখিত দাওয়াই বাতলিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্য মোচনের জন্য এ দলিলের মাধ্যমে যত কান্নাকাটি করার চেষ্টাই করুন বাস্তবে তারা সে জন্য একটুকুও চিন্তিত নন। এ সম্মেলন মোটেই তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র দূর করার লক্ষ্যে আহূত হয়নি। তা পর্যায়ক্রমে আমরা প্রমান করবো। এ সম্মেলনের হোতা ছিল সাম্রাজ্যবাদ দেশ সমূহ। জাতিসংঘের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা তাদের ঘৃণ্য সাম্রাজ্যবাদকে টিকিয়ে রাখা এবং বিশ্বব্যাপী তাদের দাপটকে নিষ্কণ্টক রাখার জন্যই এ ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছিল মাত্র। স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর মুসলিম বিশ্ব পাশ্চাত্যের এক নম্বর টার্গেটে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী তাদের সাম্রাজ্যবাদ কায়েমের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলাম। তাই মুসলমানদের সামাজিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনাচারের নিক্ষেপ করে তাদের ঘায়েল করার এক সুক্ষ্ম চাতুরী ছিল তৃতীয় বিশ্বের প্রতি তথাকথিত দরদের বহিঃপ্রকাশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। আমরা জানি, পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধে পাশ্চাত্যে কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। চিরদিনের জন্য পঙ্গু ও কর্মক্ষমহীন হয়ে যায় আরও অসংখ্য মানুষ। সমাজে তখন নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়ে। বিবাহ করার মত যুবক খুঁজে পাইনি অনেক যুবতী। ফলে তাদের জনবল হঠাৎ করে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে থাকে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় একই সাথে অনেকগুলো মুসলিম দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। তারা তাদের বিপুল জনশক্তি কর্মক্ষম ও শিক্ষিত করে তুলে ক্রমোন্নতি ঘটাতে থাকে। ফলে এ হারে চলতে থাকলে মুসলিম বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নতি, জনশক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বে প্রথম সারিতে চলে যেতে পারে এ আশঙ্কায় আক্রান্ত হয়ে মুসলিম বিশ্বে বহুল প্রচলিত স্লোগানের "মানুষ বাড়ছে,বাড়ছে না জমি-সম্পদ" মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে আতঙ্কে পরিণত করে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তারাই সার্বিক সাহায্য প্রদান করতে থাকে তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র মোচনের মনোহরী বাক্যের অন্তরালে।তাই আজও দেখা যায়, মুসলিম বিশ্বের উদ্বাস্তু সমস্যা, রাজনৈতিক সমস্যা জুলুমের শিকারে পরিণত বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য তাদের কোন শিরঃপীড়া না থাকলেও মুসলিম দেশসমূহের জনসংখ্যা হ্রাসে পরিকল্পনা প্রণয়ন,বাস্তবায়ন ও পরিবার পরিকল্পনার সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে জাতিসংঘ ও দাতাদের কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তারাই মূল হোতার ভূমিকা পালন করছে। তাদের বর্তমান প্রয়াশকে মুসলিম বিশ্বের জনসংখ্যা হ্রাসের আল্ট্রা মর্ডান সংস্করণ বলা যেতে পারে। পাশ্চাত্যের দেশসমূহ যত দ্রুত বিজ্ঞান,প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করছে ততো দ্রুত ডুবে যাচ্ছে পাপ-পঙ্কিলতা ও যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায়। তারা পাপ জেনেও বিবাহ প্রথাকে বাদ দিয়ে লিভিং টুগেদার, সমকামিতা, অবাধ যৌনাচারকে ফ্যাশনে পরিণত করেছে। পুরুষ যে কোন নারীতে উপগত হতে পারছে।সন্তান লালন-পালন করার কোনো ঝামেলা তারা মাথা পেতে নিতে চাচ্ছে না। তাই তারা বিবাহ প্রথাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে, অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলে পিতৃপরিচয়হীন দৈবাৎ যে সন্তান জন্ম নেয়, অধিকাংশ কুমারী তরুণী তার গর্ভপাত ঘটায়। কেননা তার উপার্জিত টাকায় জীবনকে একটু ভালোভাবে উপভোগ করার আগেই তাতে আরেকজনকে অংশীদার বানাতে তারা রাজি নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে কোন নারী যদি সন্তান জন্ম দিয়েই ফেলে তবে তার স্থান হয় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত জারজ সন্তান লালন-পালন কেন্দ্রে। এভাবে পাশ্চাত্যের সিংহভাগ ভবিষ্যৎ নাগরিক পিতা-মাতার স্নেহহীন একটা পরিবেশে বড় হচ্ছে। আর এই ভোগবাদী প্রবনতার কারণে পাশ্চাত্যে দিনের পর দিন জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তাদের জনশক্তি যে হারে প্রবীণ ও পৌঢ়ত্ব বরণ করেছে তার স্থান পূরণ করতে সে হারে তারুণ্য শক্তির সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ দেশ এখন হিসাব করছে, এ হারে চলতে থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে দেশ বৃদ্ধ-বৃদ্ধায় পূর্ণ হয়ে যাবে। রাষ্ট্র যন্ত্র পরিচালনা, বিজ্ঞান, ব্যবসা, বাণিজ্য তথা সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত তরুণ-যুবকের অভাব দেখা দেবে।ফলে রাষ্ট্র হয়ে যাবে জনশক্তিহীন। যেমনটা আজকের মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ দেশ গুলির বেলায় হচ্ছে। তাদের সম্পদ আছে কিন্তু জনশক্তির অভাবে তা কাজে লাগাতে পারছে না। তাদের বিদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করে ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। অন্যদিকে, বাকি মুসলিম বিশ্বের চিত্র হচ্ছে ভিন্নতর। মুসলিম বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ উন্নয়নের পথে ধাবিত হচ্ছে। যেমনঃ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, লিবিয়া, আরব আমিরাত প্রভৃতি। এসব দেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত ও সংগঠিত জনশক্তি দেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলি ইতিমধ্যে তাদের সম্পদ সুষম ব্যবহার করার জন্য দেশের জনসংখ্যার হার বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী হয়েছে। তারা কোনো নাগরিকের সন্তান নেয়ার জন্য বোনাস প্রদান এবং তাদের শিক্ষা চিকিৎসা ব্যয় রাষ্ট্রের দায়িত্বে গ্রহণ করেছে। মুসলিম বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ছাড়া বাকি সবগুলো দেশ অর্থনীতি ও সম্পদে মোটামুটি সমৃদ্ধ। তবে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, সুদান প্রভৃতি দরিদ্র দেশগুলিরও রয়েছে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ মওজুদ থাকার সম্ভাবনা যা সঠিকভাবে অনুসন্ধান ও উত্তোলন করতে পারলে এসব দেশের চেহারা রাতারাতি পাল্টে যেতে পারে। সামরিক শক্তির দিক থেকেও মুসলিম বিশ্ব এখন আর ফেলনা নয়। এক সোমালিয়ার গুটিকতক ক্ষুধার্ত, অসহায় মানুষ যখন পরাশক্তি আমেরিকাকে চরম শিক্ষা দিয়ে দেয়ার যোগ্যতা রাখে এরপর পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, মিশর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের সামরিক বাহিনীর উল্লেখ অপ্রয়োজনীয়। এতোদিন পরাশক্তির যে পারমাণবিক অস্ত্রের দাপটে দুর্বল দেশসমূহকে হুমকি-ধমকি মেরে ঠান্ডা করতে চাইত সে পারমাণবিক বোমার মওজুদও মুসলিম বিশ্বে কম নয়। একমাত্র কাজাখস্তানেরই রয়েছে ১০০ টি পারমানবিক বোমা। এছাড়া ইরান-ইরাক, পাকিস্তান, আলজেরিয়ার হাতে রয়েছে এ বোমা বানানোর প্রস্তুতি, প্রযুক্তি। বিশ্বের বৃহত্তম গেরিলা বাহিনীর চারণভূমি এখন আফগানিস্তান। এছাড়া অনুরূপ আরও একটা বাহিনী তৎপর রয়েছে কাশ্মীরে। সর্বোপরি আফগান জিহাদের চেতনার ধারক মুজাহিদ বাহিনী এখন সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তৎপর। তাজিকিস্তান, ফিলিস্তিন, মিশর, আলজেরিয়া, কাশ্মীরে চলছে তাদের অগ্রযাত্রা। একই সাথে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে চলছে ইসলামী জাগরণ। সব মিলিয়ে আগামী শতাব্দীতে মুসলমানরা বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করার পথে। মুসলিম বিশ্ব যখন জনবল,অস্ত্রবল, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতি সাধন ঘটাবে তখন পাশ্চাত্যের হাতে সবকিছু থাকলেও থাকবে না প্রয়োজনীয় জনবল, বিশাল সেনাবাহিনী, মেধাসম্পন্ন কর্মী। ফলে তারা হবে সংখ্যালঘু এবং সব থাকতেও অসহায় যা একটা অসহনীয় ব্যাপারই বটে। মুসলিম বিশ্বের এই উত্থানের প্রক্রিয়ায় আরও কতিপয় তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে পরিচিত দেশের উত্থান ঘটবে। যেমনঃ দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান, নাইজেরিয়া। সুতরাং এক ঢিলে দুই পাখি মারার ন্যায় পাশ্চাত্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি ও মুসলিম বিশ্বের যুগপৎ উত্থান প্রতিরোধ করার জন্য পূর্বোক্ত ব্যর্থ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে পাশ্চাত্য যে পঙ্কিলতার কারণে এই অভিশপ্ত অবস্থার মুখোমুখি তা মুসলিম বিশ্বে চাপিয়ে দিয়ে মুসলিম বিশ্বের জনসংখ্যা হ্রাসের ঘৃণ্য চেষ্টা চালায়। মুসলিম বিশ্বের মুসলমানদের আত্মিক শক্তির মূল উৎস হল ইসলামের সুমহান আদর্শ। কোন ব্যক্তিকে এই আদর্শ বিচ্যুতি করানো গেলে তার আর পশুর মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। পাশ্চাত্য তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নের নামে যৌন উশৃঙ্খলতার বিষাক্ত প্রস্তাবনার মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে পরিণত করতে চেয়েছিল পশুতে। যেহুতু সকল ধর্মেই অবাধ যৌনাচার পাপ বলে বিবেচিত। কিন্তু ধর্মীয় আদর্শ উপেক্ষা করে একমাত্র মুসলিম জাতি ব্যতীত সকল ধর্মাবলম্বীই ব্যাপকহারে অঘোষিতভাবে অবাধ যৌনাচারে আসক্ত হয়ে পড়েছে। খসড়া দলিলে উল্লেখিত প্রস্তাবনাসমূহ তাদের সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হিসাবে ঘোষিত অঘোষিতভাবে ব্যাপকহারে চর্চিত হচ্ছে। ফলে এ প্রস্তাব গৃহীত হলেও তাদের ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা ছিল না। মুসলিম বিশ্বেও এই মহামারী বিক্ষিপ্তভাবে দেখা দিলেও তা ব্যাপকভাবে চর্চিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই একমাত্র বলিষ্ঠ ধর্মীয় অনুশাসন, পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থার কারণে। পাশ্চাত্যের মহাপণ্ডিতরা জানত যে, সঙ্গত কারণেই একমাত্র মুসলিম জাতি ছাড়া অন্য কেউ এই খসড়া দলিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে না। তাই মুসলিম দেশগুলির এ প্রতিবাদ গুড়িয়ে দেয়ার জন্য তারা দাতা সংস্থা, বিশ্ব ব্যাংক ও এনজিওগুলির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে এ প্রস্তাবনা হজম এবং বাস্তবায়নে বাধ্য করারও পরিকল্পনা এঁটেছিল। কিন্তু মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদ হয়েছে ঝড়ের গতিতে। অন্যদিকে, প্রতীকী ধর্মীয় আদর্শ টুকু রক্ষার তাগাদায় খ্রিস্টান বিশ্বের পোপও তৎপর হন। এ প্রস্তাবনার বিপক্ষে চালান জোরালো কূটনৈতিক প্রচারণা। অবশেষে চক্রান্তকারীরা হার মানে। খসড়া দলিল থেকে বিতর্কিত অংশটুকু ছাঁটাই করে হাফ ছাড়ে তারা। "জনসংখ্যা ও উন্নয়নের শিরোনামে" এ সম্মেলনের খসড়া দলিলে তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্যের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে প্রধান কারণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। আসলে কি তাদের এ মূল্যায়নের কোন বাস্তবতা আছে? ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, কথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দারিদ্র্যের কারণ জনসংখ্যা নয়, আজকের সভ্য জাতির দাবিদার উন্নত দেশগুলি এর জন্য দায়ী। এই উন্নত দেশগুলি;
১) মধ্য যুগে এসব দেশে উপনিবেশ কায়েম করে সব ধন সম্পদ লুন্ঠন করে নিজেদের দেশে স্তুপ করে। ফলে তারা সরে যাওয়ার পর দেশগুলোর অর্থনীতি দেউলিয়া হয়ে যায়। যেমনঃ বাংলাদেশ।
২) উপনিবেশিক শাসনের ন্যায় বর্তমান সময়েও তারা বহুজাতিক কোম্পানি গঠন করে অনুন্নত দেশগুলির সম্পদ কুক্ষিগত করে চলেছে। অনুন্নত দেশের মূলধন উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি তথা অবকাঠামোগত সুবিধার অভাব, শিল্প কারখানা, ব্যবসা, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করে। উন্নত বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানি সমূহ এ সুযোগ গ্রহণ এবং একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে সম্পদ নিজ নিজ দেশে স্থানান্তরিত করছে। এসব কোম্পানি আবার দেশীয় মূলধনে উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত ও উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে নিজেদের পণ্য মূল্য কমিয়ে দিয়ে বা অন্যান্য গোপন পন্থা প্রয়োগ করে দেশীয় শিল্পকে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলে এবং ধ্বংস করে দেয়। ফলে দেশীয়ভাবে দেশে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়ে অনুন্নত দেশসমূহের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
৩) উন্নত দেশগুলি অনুন্নত দেশগুলির সাথে একটি অসম বাণিজ্য ব্যবসা জিইয়ে রাখে। তারা আমদানি করে কম, রপ্তানি করে বেশি। ফলে অনুন্নত দেশের সম্পদ তাদের দেশে চালান হয়ে যায়।
৪)উন্নত দেশের ভোগ্য সামগ্রী উৎপাদক কোম্পানিগুলো অনুন্নত দেশে তাদের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রকার লোভনীয় প্রচারকার্য চালায়। ফলে আয়ের সাথে এসব ভোগ্য পণ্য ক্রয়ের সংগতি না থাকলেও তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ কথিত সভ্য মানুষ সাজার মোহে আক্রান্ত হয়ে যেকোন উপায়ে তা সংগ্রহ করতে সচেষ্ট হয়। ফলে দেশের সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি চুরি-ডাকাতি ব্যাপক আকার ধারণ করে। দেশের উন্নতির চেয়ে অধিক সম্পদ উপার্জন করে অধিক ভোগ্য পণ্য ক্রয়ই তাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। দেশের সম্পদ চলে যায় বিদেশি কোম্পানির হাতে। এসব ভোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে টিভি, ভিসিআর, ফ্রিজ, দামি আসবাব পত্র, কসমেটিক্স, ফ্যাশন সামগ্রী প্রভৃতি।
৫) প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞের অভাবে অনুন্নত দেশগুলো তাদের খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহার করতে পারে না। ধনী দেশের কোম্পানিগুলি এতে সাহায্য করে বোখরা আদায় করে নেয়।
৬) ধনী দেশগুলো অধিক মুনাফার আশায় অনুন্নত দেশগুলোকে চড়া সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। তাই প্রতি বৎসর অনুন্নত দেশগুলো ঋণের বিশাল অংশ শোধ করতে বার্ষিক আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করে। ফলে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হয়না। এছাড়া আমরা জানি পৃথিবীর কোন দেশই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বা তথাকথিত সমাধানের মাধ্যমে উন্নত হয়নি। তারা উন্নত হয়েছে সম্পদের সুষম বন্টন, সুপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে। জাপানের কথাই ধরা যাক। ১৪৫,৮২৪ বর্গমাইল আয়তনের দেশটির মাত্র ৫ এর ১ ভাগ জমি কৃষি যোগ্য। দেশটির বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা নিয়েও তারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে নয়, সম্পদের সুষম বন্টন ও পরিশ্রমের কারনেই আজ অর্থনৈতিক পরাশক্তি। উন্নত দেশগুলি পূর্বোক্ত বিভিন্ন উপায়ে তৃতীয় বিশ্বের সম্পদ শোষণ করে নিজেরা অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও ভোগ বিলাসে মগ্ন থাকে। খোদ জাতিসংঘের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বের দেশগুলো সামরিক খাতের ১ দিনের বাজেট থেকে ৫০ লক্ষ শিশুর এক বৎসরের লালন-পালন ব্যয় মেটানো যায়। এই যে সামরিক খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে, অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস সামরিক উত্তেজনার পরিসমাপ্তি ঘটানোর উদ্যোগ নিয়ে কি বিশ্বের খাদ্য সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়? সম্ভব, তারও প্রমাণ জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সামরিক তথা প্রতিরক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফলে জাপানের প্রতি বছরের সামরিক খাতে ব্যয় উদ্বৃত্ত থাকে। তারা এই বিপুল অর্থ শিল্প ও কৃষি উন্নয়নে বিনিয়োগ করে। আমেরিকার মাতাব্বরি মার্কা ভূমিকার জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জাপানের কাছে মার্কিনীরা চরম মার খাচ্ছে। আর বোকামির জন্য মাথার চুল ছিঁড়ছে।
জাতিসংঘ তার দলিলে জনসংখ্যা হ্রাসের চেষ্টা করতে গিয়ে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে অবাধ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে। তারা নারীকে মূল্যায়ন করেছে যৌন সম্পর্ক এবং দেহের ভিত্তিতে। নারীর মন বা নারীও যে মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ তা জাতিসংঘ দলিলে স্থান পেতে পারে নি।তারা পাশ্চাত্যের ভোগবাদী কায়দায় চাতুর্যপূর্ণ ভাষায় নারীকে শুধু অপমান করেই ক্ষান্ত হয় নি, নারীকে বানিয়েছে ভোগেরর পণ্য। মার্কিন মুলুক, স্কান্ডিনেভিয়ান কান্ট্রিসমূহ এবং ইউরোপীয়ান ভোগবাদী কালচারের মূলে রয়েছে নারী দেহ, নর দেহ ভোগ করার উদগ্র লালসা এবং নারীর সাথে পুরুষের বাধাহীন যৌন সম্পর্ক। জাতিসংঘ জনসংখ্যা হ্রাস এবং উন্নয়নের নামে বিশ্বব্যাপী এই পঙ্কিল কালচারকে অবাধে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল মাত্র। আমরা জানি না, বিশ্বের নারীবাদী আন্দোলনকারীদের দৃষ্টি থেকে বিষয়গুলো কিভাবে এড়িয়ে গেল।
(১) জাতিসংঘ লিভিং টুগেদারকে অবাধ করে নারীর ওপর পুরুষের সর্বাধুনিক অত্যাচারকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল । পাশ্চাত্য সমাজে প্রচলিত লিভিং টুগেদারের কোন আইনগত বৈধতা নেই। তারা কোন
বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই নারী-পুরুষ একত্র বসবাস করে, সংসার সাজায়, সন্তান গ্রহণ করে। উভয়ের আয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ হয়। কিন্তু সে সমাজের অধিকাংশ পুরুষ সঙ্গী নারীটি একটু বয়স্কা হয়ে গেলে বা কোন প্রকারে বনিবনা না হলে তাকে ত্যাগ করে নতুন সঙ্গীনী খুঁজে নেয়। ফলে পরিত্যাক্তা নারীটি তাদের সম্পর্কের আইনগত বৈধতা না থাকায় কোন ক্ষতিপূরণ আদায় বা খোরপোশ পায় না। অন্যদিকে, বয়স্কা হওয়ায় নতুন সঙ্গী জুটিয়ে নেয়াও তার কষ্টকর হয়ে দাড়ায়। অথচ তারা বিবাহিত হলে খোরপোষ পেত এবং স্বামীর সাথে পূণর্মিলনেরও একটা সুযোগ থাকত । জাতিসংঘ এই বিবাহ প্রথাকে উচ্ছেদ করে এবং লিভিং টুগেদারকে ব্যক্তি স্বাধীনতা ঘোষণা করে নারীকে চরম অভিশাপের মধ্যে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল।
(২) জাতিসংঘ তার দলিলে স্বাধীন যৌন চর্চাকে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং এর প্রতিবন্ধক সকল আইন অপসারণের আহবান জানিয়েছিল। আমরা জানি, ঘাতক ব্যধি এইডস ও অন্যান্য যৌন রোগের ৯০% উপসর্গ হল অবৈধ যৌন চর্চা এবং সমকামিতা। এসব রোগে পুরুষের চেয়ে নারীর ক্ষতির পরিমাণ বেশী। যেহেতু দলিলে বলা হয়েছে, সন্তানের পরিচয় হবে মা এবং পরিবারও হবে মাতৃতান্ত্রিক। ফলে এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে তার পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।পক্ষান্তরে, পুরুষের সন্তানের কোন দায়-দায়িত্ব নেই, দলিল অনুযায়ী অবাধ যৌন চর্চা করে বেড়ানোর স্বাধীনতা তার রয়েছে। সে এইডস আক্রান্ত হলেও শুধু তার নিজেরই ক্ষতি হবে, আর এ তথ্যটুকু গোপন রেখে তার অবাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে হাজার হাজার নারীকে এইডস সংক্রামণে আক্রান্ত করলেও তার কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
(৩) দলিলে কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষের যৌন সংযম সম্পর্কে আলোকপাত না করে উল্টো তাকে অবাধ ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে ঘোষিত হয়েছিল ।। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হত একমাত্র নারীরা যেমন হচ্ছে পাশ্চাত্যে। তারা ‘অবাধ কর্মকাণ্ডের ফলে বার বার গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং বার বার গর্ভপাত ঘটায়। আবার স্কুলের গণ্ডি পেরুবার আগেই সন্তান জন্ম দিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেয় জারজ সন্তান লালন পালন কেন্দ্রে। এভাবে বার বার গর্ভধারণ ও গর্ভপাত করা নিশ্চয়ই নারীর স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। জাতিসংঘ নারী জাতিকে সেদিকেই ঠেলে দিতে চেয়েছিল ।
(৪) আমরা জানি, অপরিণত বয়সে কিশোর-কিশোরীরা থাকে আবেগ তাড়িত। ঘালি সাহেবরা তাদের সে বয়সেই ‘অবাধ চর্চার প্ররোচনা যুগিয়ে শয়তানী বুদ্ধির খোলশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। অভিভাবকরা তাদের কিশোর-কিশোরীদের ভরণ-পোষণ, লালন-পালন করবেন, কিন্তু তাদের যৌন উশৃঙ্খলা সম্পর্কে যাতে কিছু না বলেন বরং এহেন অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান সে নসিহতও এ দলিলে রয়েছে। এর ফলে অল্প বয়সেই কিশোর কিশোরীর এইডস সহ অন্যান্য প্রাণঘাতি যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার মারাত্মক আকার ধারণ করত। ফলে, ক্ষতিগ্রস্থ হতো কিশোরীরাই বেশী।
এছাড়া জাতিসংখের এ সম্মেলনে জনসংখ্যা হ্রাস নয়, বরং বিকৃত যৌনাচারের প্রসার ঘটানোর অপচেষ্টা বলা যায়। তার প্রমাণ দলিলের ভাষ্য “প্রতিটি শিশুই বাঞ্ছিত শিশু', সন্তান জন্মদানকে ব্যক্তি স্বাধীনতা বিবেচনা এবং যে কোন উপায়ে কোন নারী গর্ভবতী হলে তাকে বিশেষ সাহায্য প্রদান ও শ্রদ্ধা করার মতলবের মধ্যে এসব নিহিত। কেননা অবাধ যৌন চর্চার মাধ্যমে জনসংখ্যা কমবে না বরং বাড়বে। যে কোন উপায়ে গর্ভধারণের স্বাধীনতা থাকায় বৈধভাবে এবং অবৈধভাবে দু'প্রকারেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। গর্ভপাত করা বা না করার অধিকার থাকায় অবৈধ গর্ভধারণ কারীরা যদি সন্তান গ্রহণ করতে থাকে তবে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে কিভাবে? বরং বৈধ সন্তানের সাথে অবৈধরা মিলে জনসংখ্যাকে আরও ভারী করবে, এটা কে না বুঝে?
অতএব বলা যায়, ইবলিসী মস্তিষ্ক প্রসূত এ দলিলের একমাত্র টার্গেট মুসলিম বিশ্ব। পাশ্চাত্যের খৃস্টজগতের ন্যায় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও অবৈধ যৌন চর্চা,লিভিং টুগেদার, কুমারী মাতা, এইডস, সমকামিতা, মাদকাশক্তি, বিবাহ বিচ্ছেদ,বিবাহের প্রতি ক্রমশ অনীহা, পরিবার ভাঙ্গন প্রভৃতি মহামারির আকারে দেখা দিচ্ছে,তাদের সমাজ জীবনকে করছে বিপর্যস্ত। অপরাধ মুলক তৎপরতায় তাদের নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ। একমাত্র ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে মুসলিম বিশ্ব এখনও এ অভিশাপ থেকে মুক্ত। তাই জাতিসংঘের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের মোড়লেরা এই অভিশাপ আমাদের মাথার ওপর চাপিয়ে আমাদেরও ক্ষতবিক্ষত করতে চেয়েছিল তাদের ন্যায়। আর এ জন্য বেছে নিয়েছিল মুসলিম নামধারী এই গাদ্দারকে। মুসলিম বিশ্বের কুখ্যাত মোনাফেক হোসনি মোবারকের দেশ মিশরের রাজধানী কায়রোকে বানিয়েছিল সম্মেলনের ভ্যেনু। যাতে মুসলমানদের বলা যায় এটা “কায়রো ঘোষণা"। দ্বিতীয় গাদ্দার হল জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক প্রধান পাকিস্তানী মহিলা নাগরিক ডঃ নাফিস সাদিক। তারই উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় কুখ্যাত দলিল প্রণয়ন ও সম্মেলন আয়োজিত হয়েছে। পাশ্চাত্য ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কূলো হিসেবে যোগ্য পাত্রদেরই খুঁজে নিয়েছে। আপাততঃ চক্রান্তকারীরা আমাদের ঈমানী শক্তির কাছে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও ময়দানে, যে কোন সময় যে কোন চক্রান্ত তাদের দ্বারা সম্ভব। সুতরাং আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।