JustPaste.it

জাতীয় মসজিদের জুমার খোতবা

 

কোন মুসলমানের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ

অনুসরণ করা সম্ভব নয়

- খতীব মাওলানা উবায়দুল হক

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের জুমা'র এক খুতবায় খতীব মাওলানা উবায়দুল হক বলেন, একটি পুরনো প্রবাদ রয়েছে, 'একশ' ইঁদুর মেরে বিড়াল গেছে হজ্বে পাপ মোচন করতে।' এমনি অবস্থা হয়েছে আজকের তুরস্কের। খিলাফতের মূলোৎপাটন করে তারা এখন আয়োজন করছে ‘উপসাগরীয় খিলাফতের সাতশ' বছর পূর্তি' উৎসবের।

উসমানীয় খিলাফতের কারণে পুরো বিশ্বে মুসলমানদের সম্মান ও মর্যাদা ছিল। তুর্কীদেরও সেরকম সম্মান ছিল মুসলমানদের কাছে। ইহুদী নাসারাদের প্রভাবিত কিছু ব্যক্তি সুকৌশলে তুর্কী খিলাফতের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে অবস্থান নেয়। বিশেষ করে সামরিক বাহিনীতে তাদের তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। এদেরই একজন মোস্তফা কামাল পাশা। পরে তাকে আতাতুর্ক বলা হতো। সে ছিল বিশিষ্ট যোদ্ধা। যুদ্ধের কলাকৌশলে তার নৈপুণ্য ছিল। ইহুদী-খ্রিষ্টানরা মন-মগজ প্রভাবিত করে তাকে নাস্তিক বানিয়ে ফেলে। ইসলাম-খিলাফত এগুলো সে সহ্য করতে পারে না। শেষ পর্যন্ত ১৯২৪ সালে সে খিলাফতের অবলুপ্তি ঘটায়।

তিনি বলেন, আমাদের উপমহাদেশে খিলাফত টিকিয়ে রাখার জন্য ১৯২০-১৯২৪ সাল পর্যন্ত খিলাফত আন্দোলন করা হয়। কিন্তু বাইরের শক্রদের বদলে ঘরের ভেতরের আক্রমণেই খিলাফত উৎখাত হয়।

সুলতান আবদুল হামিদকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসে কামাল পাশা। ক্ষমতায় বসেই সে ইসলাম, আল্লাহ, কুরআন অস্বীকার করে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে। আরবী ভাষা নিষিদ্ধ করা হয়। নামায আদায়, কুরআন তিলাওয়াত তুর্কী ভাষায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তুর্কী ভাষা আরবী হরফে লেখা হতো। কামাল পাশা আরবী হরফের বদলে ল্যাটিন হরফে তুর্কী ভাষা চর্চার নির্দেশ দেয়। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম আর আরবী পড়তে শেখেনি। তারা কুরআন পড়তে পারে না।

খতীব বলেন, অনেকে কামাল আতাতুর্ককে আদর্শ হিসেবে মনে করেন। কামাল পাশা তাদেরই আদর্শ হতে পারে, যারা তার মত নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষ। আল্লাহ্‌র দ্বীনের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে। দুঃখজনক ‍হলো, ঢাকার একটি প্রধান সড়কের নাম কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ।

তিনি বলেন, খেলাফত আল্লাহ্‌র প্রতিনিধিত্ব। পবিত্র কুরআনে মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে ফেরেশতাদের বলেছেন, আমি দুনিয়াতে আমার প্রতিনিধি পাঠাবো। ফেরেশতারা বললেন, ইবাদতের জন্য তো আমরাই যথেষ্ট। উত্তরে আল্লাহ্‌ বলেন, আমি যা জানি তোমরা তা জান না। এরপর আল্লাহ্‌ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন। আদম (আঃ) দুনিয়ায় আল্লাহ্‌র প্রথম খলিফা।

মাওলানা উবায়দুল হক আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানিয়েছেন, আমার পরে আর কোন নবী আসবে না। যারা আমার আদর্শ অনুসরণ করবে, তারাই সঠিক পথে থাকবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর খোলাফয়ে রাশেদা, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসীয় খিলাফত, মিসরীয় খিলাফত হয়ে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত খিলাফত প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯২৪ সালে কামাল পাশা ঘোষণা করলেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোন রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে না। পাশ্চাত্য প্রভাবিত কামাল পাশার চিন্তা এখনকার তুর্কী শাসকরাও অনুসরণ করছে। এখনো তুরস্কে আরবী পড়া নিষিদ্ধ। মেয়েদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ। এই শাসকদের ওসমানীয় খেলাফতের ৭শ' বছর পূর্তি উৎসব আয়োজন তাদের জন্যই লজ্জাকর।

মাওলানা উবায়দুল হক বলেন, খিলাফতের দায়িত্ব আল্লাহ্‌র জমিনে আল্লাহ্‌র আইন প্রতিষ্ঠা করা। কোন মুসলমানের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ অনুসরণ করা অসম্ভব। খেলাফতের মর্যাদা রক্ষা করতে হলে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষতা ত্যাগ করতে হবে।