সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ তো নয় যেন ইহুদীকরণের প্রতিযোগিতা!
আব্দুল আজিজ আল মাদানী
(উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিনের ১ম সংখ্যা থেকে অনূদিত)
ইহুদীদের সাথে ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারে আরব সরকার বিশেষ করে সৌদি এবং আমিরাতের প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। এজন্য তারা অনেক কার্যকরী পদক্ষেপও নিয়েছে। এটা এখন আর আশ্চর্যের কিংবা নতুন কোনো বিষয় নয়। এতদিন যা গোপন ছিল, এখন এমন অনেক কিছুই প্রকাশ করার সময় এসেছে- এটুকুই। আরব-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের এই প্রক্রিয়া কয়েক বছর আগে থেকেই জোরদারভাবে চালু আছে। বিগত সময়ে এই দুই সরকার জায়নবাদী ইহুদীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পক্ষে মুসলিম জনমত ও সংবেদনশীলতা তৈরির জন্য গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। আমরা সবাই ট্রাম্পের এই উক্তি শুনেছি— “সৌদি না থাকলে ইসরাইল মহাসঙ্কটে পড়ে যেত”।
বিগত বছরগুলোতে সংঘটিত গোপন কার্যক্রম এবং রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অনেক পরিকল্পনার কথাই আজ প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যান নয় বরং কেবল উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, মিডল ইস্ট মনিটর এবং মিডল ইস্ট আই-এর ওয়েবসাইট দুটি যে তথ্য ফাঁস করেছে তাতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল-ওতাইবা এবং মার্কিন কূটনীতিক ডেনিস রস[1] এর মাঝে পত্র আদান প্রদানের মতো বিষয়রয়েছে। চিঠি থেকে জানা গেছে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাত উদগ্রীব।
এমন আরও অনেক গোপন তথ্যের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ বিন সালমানের গোপনে তেল আবিব সফর।এমনিভাবে আবুধাবি ও তেল আবিবের মাঝে বিশেষ বিমান রুট থাকার মতো বিষয়। ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে আরও রয়েছে, কোচাবি’র[2] মালিকানাধীন একটি কোম্পানি ও আবুধাবির মাঝেসম্পাদিত বাণিজ্যিক চুক্তি।এইচুক্তিছিল - পর্যবেক্ষণ ও তদন্তের নানান সাজ-সরঞ্জাম এবং পেট্রোল অনুসন্ধান ও উত্তোলনের বিষয়ে ।
উইকিলিকস ওয়েবসাইটে[3] যে তথ্যগুলো এসেছে, সেখানে দেখা গেছে, ইহুদীবাদীদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে সৌদি সরকারের আগ্রহ তুঙ্গে। নির্ভরযোগ্য এক সূত্রের মাধ্যমে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি পত্রের কথা জানা যায় ।একটি পত্রে এই শিরোনামে একটি প্রবন্ধ সংযুক্ত করা হয়েছে—“সৌদি নিরাপত্তা জোরদারকরণ এবং সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া”। লিখেছে নায়েফ ইবনে আহমদ ইবনে আব্দুল আজিজ। মার্কিন সম্মিলিত বাহিনীর একটি ছোট দলের ব্যাপারে সে প্রবন্ধটি রচনা করাহয়।
প্রবন্ধটিতে নায়েফ ইহুদীবাদীদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে এবং রিয়াদ ও তেল আবিবের মাঝে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। “সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ইসরাইল শত্রু থেকে বন্ধুতে রূপান্তরিত হতে পারে”-শিরোনামে একটি প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত রূপ ওই পত্রে সংযুক্ত ছিল। সেটা লিখেছিল আমির আউরিন। হারেটেজ[4]পত্রিকায় প্রবন্ধটি ছাপা হয়। এই প্রবন্ধটি মূলত নায়েফ ইবনে আহমদ ইবনে আব্দুল আজিজ রচিত পূর্বোক্ত প্রবন্ধের ওপর মন্তব্য স্বরূপ। তাতেবলাহয়েছে- “মার্কিন সামরিক ম্যাগাজিন জয়েন্ট ফর্সেস কোয়ার্টারলি বা জে এফ কিউ-তে প্রকাশিত পদস্থ একজন সৌদি আমিরের প্রবন্ধের মাধ্যমে ইসরাইলের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণকারী পত্রটির পেছনের বক্তব্য হচ্ছে বক্ষ্যমাণ এই প্রবন্ধ”। সৌদি রাজ পরিবারের একজন উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার জোর দিয়ে বলেছেন যে, সরকারি গভর্নরদের অবস্থান পরিষ্কার করার ক্ষমতা তার নেই। এবং তিনি আশ্বস্ত করার জন্য হলেও এ বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করছেন না। অথচ পুরো ব্যাপারটি খোলাসা হওয়া কূটনৈতিক বিচারে অতি-গুরুত্বপূর্ণ।অতএব বোঝা যাচ্ছে, দিনশেষে সৌদি আরবও ইসরাইলের সঙ্গে প্রেমালাপে লিপ্ত তবে সেটা কিছুটা দ্বিধা সঙ্কোচ সহকারে এবং শর্ত সাপেক্ষে।
প্রবন্ধে আরো এসেছে: “এ পর্যায়ে এসে তার (ইসরাইলের) অনুসরণ অপরিহার্য হয়ে যায়”। কারণ তিনি ইঙ্গিতে বোঝাতে চাচ্ছেন, ইসরাইল এবং সৌদি আরব—উভয় রাষ্ট্রই তৃতীয় একটি দেশের শত্রুতায় অংশীদার আর তা হচ্ছে ইরান। একইভাবে উভয় রাষ্ট্রই আরো একটি দেশের সমর্থন লাভের দিক থেকে অংশীদার আর তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অতএব এই দুই রাষ্ট্রের মাঝে দরকার ‘দ্বিপাক্ষিক আলোচনা’।নায়েফ প্রমুখ সামরিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় তা যেভাবেই শুরু হোক না কেন - সে আলোচনার উদ্দেশ্য হবে, উভয় রাষ্ট্রই যেন এতদঞ্চলে কূটনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট এবং সোচ্চার থাকে”।
‘দ্য নিউইয়র্ক ম্যাগাজিন’ তার এক প্রতিবেদনে গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে আমিরাত সরকার বিশেষ করে মুহাম্মদ ইবনে জায়েদের সঙ্গে ইসরাইলের শক্তিশালী গোপন সম্পর্কের তথ্য ফাঁস করেছে।এই হল ফাঁস হওয়া কিছু বিষয়। নয়ত আরো কত কিছু যে গোপন রয়েছে সেটা বলা মুশকিল।
সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের একটি নতুন পর্যায় শুরু হয়েছে। আর তা হচ্ছে জায়নবাদীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রকাশ করা। এখন শুরু হয়ে যাবে সরকারি পত্র পত্রিকা, স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং ইহুদীবাদীদের গুপ্ত অনুচর, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী লেখক কর্তৃক ইসরাইল প্রশ্নে ইতিবাচক মূল্যায়ন।তারাইসরাইলেরসাথে মৈত্রী স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপনের গুরুদায়িত্ব পালনকরাশুরুকরেছে। তবে, এটা হবে অত্যন্ত ধীর-স্থিরভাবে, সতর্কতার সঙ্গে; আবার না গণবিপ্লব আরম্ভ হয়ে যায়—এই ভয়ে ভয়ে। কারণ আল্লাহর ইচ্ছায় আসন্ন ইসলামী বসন্তের দুঃস্বপ্ন তাদের ঘুম দূর করে দিয়েছে এবং জীবন বিষিয়ে তুলেছে।
উইকিলিকস আবুধাবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আমেরিকানদেরকে উদ্দেশ্য করে মোহাম্মদ বিন জায়েদের এই উক্তির কথা জানা গেছে— “আমিরাতের অধিবাসীরা যদি জানত আমি কী করছি, তবে তারা আমাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করত”। সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সৌদির মজলিশে শূরা প্রধানের একটি বিবৃতি, যেখানে তিনি আরবের সংসদ সভাগুলোর কথাবার্তার সমালোচনা করেছেন এবং ইজরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া স্থগিতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার দাবি তুলেছেন।
একইসঙ্গে কান্না ও হাসির বিষয় হচ্ছে,তিনিতারবক্তব্যেবলেছেন -এজাতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেয়াটা শুধুমাত্র রাজনৈতিকদের একার অধিকার, পার্লামেন্ট সদস্যদের নাকি এখানে হস্তক্ষেপ করা চলবে না।
কি আশ্চর্য! তাদের মাঝে পার্থক্যের কি হলো! এ বিষয়ে আমার সন্দেহ নেই যে, আরব সরকার বিশেষ করে সৌদি এবং আমিরাতের নেতৃবৃন্দের সামনে প্রতিনিয়ত গাদ্দাফির সেই চিত্র মূর্ত হয়ে উঠছে, যখন তাকে হত্যা করা হচ্ছিল। তারা যখন নিজেদেরকে গাদ্দাফির স্থলে কল্পনা করে, তখন ভয়ে তারা কাঁপতে থাকে। আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের এই দুঃস্বপ্ন একদিন বাস্তবায়িত হবে। তাদের ভয় যখন বেড়ে যায়, ভীতি যখন প্রচণ্ড আকার ধারণ করে, তখন তাঁরা মৃদু কিছু অভিযোগ নিয়ে সরব হয়। উদাহরণস্বরূপ:
“ফিলিস্তিনিদের পরাজয় সূচক অবস্থান রেখে ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি সম্পন্ন হতে পারে না”।
এমনিভাবে মুহাম্মদ ইবনে সালমানের উক্তি —“জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত একটি দুঃখজনক পদক্ষেপ”। এদিকে ইসরাইল এবং তাদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের ভিত্তিতে তারা যে রাজনীতি করছে সেদিকে কোনো ইঙ্গিতই নেই।
এ তো গেল পর্দার বাইরের কথা। অতি দ্রুত নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ সুগম করার জন্য এই উভয় মুরতাদ সরকারসম্প্রতি ইহুদীবাদী সংঘ ও পাশ্চাত্যের সঙ্গে পর্দার অন্তরালেও পাকাপাকিভাবে ঘনিষ্ঠতা গড়েছে। প্রথমেই তারা কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
১. নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে ইহুদীদের প্রতি মুসলিমদের লালিত শত্রুতার মনোভাবকে দুর্বল করে দেওয়া। বরং আরো এক ধাপ এগিয়ে ইসরাইল সম্পর্কে ইতিবাচক মূল্যায়ন উপস্থাপন, মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনের ব্যাপারে বিরুদ্ধ জনমত তৈরি, তাদেরকেই স্বদেশের প্রধান শত্রু হিসেবে চিত্রায়ন, এতদঞ্চলে রাফেজী আগ্রাসনের প্রতিরোধে তাদের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখিয়ে জনমনে ইসরাইলের সঙ্গে মৈত্রী-স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উস্কে দেওয়া—এ সবই তাদের প্রথম পদক্ষেপের শামিল। অথচ শিয়া-রাফেজী প্রশ্নে বাস্তবতা হলো, আহলে সুন্নাহ্'র রক্তপাত সমর্থনে প্রথম সারিতে রয়েছে সৌদি আরব। আর ইরানের সঙ্গে আমিরাতের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা কারো অজানা নয়। রাফেজী প্রতিরোধে এই কী তাদের ভূমিকা?
একইভাবে কাতার সরকারও ইহুদীকরণের প্রতিযোগিতায় তাদের চেয়ে পিছিয়ে নেই।এউদ্দেশ্যবাস্তবায়নেরজন্যকাতাররাজনৈতিক সমস্যা দিয়ে মানুষকে ব্যস্ত রাখছে।এরপরধীর স্থিরভাবে জায়নবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ও ইহুদীকরণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য - বারবার একই বিষয়ে জনসাধারণের মনোযোগ আকৃষ্ট করেচলেছে।
২. মুসলিমদের সম্পদ কেড়ে নিয়েসেঅর্থ দস্যু ট্রাম্পের নিরাপত্তা বিধান ও তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যয় করাহচ্ছে। এভাবে কথিত ‘ওয়ার অন টেরর’বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার ধ্বস-নামা অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখারচেষ্টাকরাহচ্ছে। অথচ তাদেরই জানা নেই, সন্ত্রাসীরা কবে পরাজিত হবে? এটাও জানা নেই তাদেরকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যটাই বা কী? যেমন বব উডওয়ার্ড রচিত “ওবামা’স ওয়ারস” গ্রন্থে গেটসের এই উক্তি; “আমরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি তা সম্পূর্ণ সঠিক। আমাদের এই লক্ষ্যনির্ধারণ সুদূর পরিকল্পনা প্রসূত। তালেবানের পরাজয়কে লক্ষ্য বানিয়ে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত আছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তালেবানকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যটা কী?”
যাইহোক, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আরব সরকার কর্তৃক মুসলিমদের সম্পদ লুণ্ঠন বিগত দশ বছর ধরে চলে আসছে। এক্ষেত্রে তারা এই নীতি গ্রহণ করেছে— ‘বেশিটা এড়াতে অল্পতেই রাজি হয়ে যাও’। এর ভিত্তিতে তারা স্বল্প অঙ্কের কিছু অন্যায় ট্যাক্স বসিয়েছে এবং পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছে। এর দ্বারা তারা মানুষের মনে এ ধারণা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে যে, এসব ছোটখাটো অন্যায় আজকাল স্বাভাবিক। এসব কূটকৌশলের মাধ্যমে তারা চলতে থাকা ভয়ানক এই লুণ্ঠন প্রক্রিয়াকে আড়াল করেছে। আর সমাজের বড় অংশই এই কূটকৌশল ও প্রতারণার শিকার হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ট্রাম্পকে তারা এত পরিমাণ অর্থ দিয়েছে, কেজির বাটখারাতেই যার পরিমাপ চলে। এমনকি ট্রাম্প তার এক বক্তব্যে বলেছে, “অর্থের মতো অন্য কোনো কিছু সৌদির নেই”। ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে, অর্থ ছাড়া সৌদি সরকার একটি খরগোশের চেয়েও দুর্বল।
৩. গান-বাদ্যের অনুষ্ঠান ও অশ্লীল বিনোদনের আয়োজন করে মুসলিমদেরকে নৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া। এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা যদি চিন্তা করত, যে অর্থ ব্যয় করে এগুলোর আয়োজন করা হচ্ছে সেগুলো যদি তাদেরই জন্য ব্যয় করা হতো, তবে তাদের জীবনযাত্রার মান আরো উন্নত হতো, তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেত এবং বাণিজ্যের বাজারে তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারত! কিন্তু বাস্তবতা হলো, নির্বোধদের যারা চিকিৎসা করবে, বোকামি আজ তাদেরকেই পেয়ে বসেছে। এদিকে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কুচক্রীমহল এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করছে; একদিকে জনসাধারণকে অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে আবার এসকল গান-বাদ্যের অনুষ্ঠান ও বেহায়াপনার আয়োজনে তাদের কাছ থেকেই অর্থ আদায় করছে।
৪.(জায়নবাদীদের সঙ্গে) সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ইস্যুতে যারা সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতির বিরোধিতা করে কিংবা অন্ততপক্ষে সমর্থন না জানিয়ে নীরব থাকে, তাদেরকে জেলে বন্দি করা। তারা এখানেই থেমে থাকেনি, বরং আরো দূর অগ্রসর হয়ে তাদেরই আসন সুদৃঢ়কারী শুভানুধ্যায়ীদেরকে বন্দী করেছে, যারা এক সময় মানুষকে এই মিথ্যা আশ্বাস বাণী শোনাতেন, “এ সরকার না থাকলে উঁচু-নিচু সব জায়গা থেকে ফেতনা ধেয়ে আসত। এ রাষ্ট্রের সরদারগণজনগণেরকল্যাণকামী”। সে সময় তাদের জানা ছিল না, এ সরকারই সকল অনিষ্টের মূল। সকল ফেতনা ও অনর্থের উৎস। সরকার তাদেরকে মুজাহিদদের বিরোধিতায় পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। অবশেষে যখন দেখেছে, তাদের আর প্রয়োজন নেই, তখন বন্দিশালায় নিক্ষেপ করেছে।
ওপরে তো কেবল সরকারের সমর্থক গোষ্ঠীর কথা বলেছি। এর বাইরে আরও বহু ওলামা এবং তালেবে এলেমকে বন্দি করা হয়েছে, দ্বীনি খেদমতে যাদের রয়েছে পূর্বদৃষ্টান্ত ও অগ্রণী ভূমিকা[5]।
এখানেই শেষ নয়! তারা আরো যে কতকিছু করেছে তার ইয়ত্তা নেই। এখানে শুধু এতটুকু বলি, খাশোগি হত্যাকাণ্ড কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি।
অপরাধের এত দীর্ঘ ফিরিস্তি সত্ত্বেও একদল এখনো তাদের ব্যাপারে সু-ধারণা পোষণ না করে পারে না!!
৫. খ্রিস্টান নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, তাদের জন্য ভোজসভার আয়োজন ও হিন্দুদের জন্য মন্দির নির্মাণ প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মুসলিমদের ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা[6]’নামক চিরাচরিত আকিদার বিলোপ সাধন। নানান জাতি, ধর্ম ও মতাদর্শের লোকদেরকে একীভূতকরণ। এই সবকিছুই করা হচ্ছে আরব উপদ্বীপে মুসলিমদেরকে শক্তিহীন দুর্বল করার জন্য, এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ জনসংখ্যায় কাফির,মুশরিকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।
এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও প্রতিরোধের দায়িত্বভার সাধারণভাবে সকল মুসলিমের এবং বিশেষভাবে আহলে এলেম শ্রেণীর কাঁধে ন্যস্ত।
৬. আরব বসন্তের বিপরীত বিপ্লবে সমর্থন দান। মিশর, লিবিয়া ও ইয়েমেন প্রভৃতি দেশে মুসলিমদেরকে নিধন করার জন্য এবং চোর-ডাকাত নিয়ন্ত্রিত শাসন ব্যবস্থার অনুগত বানানোর জন্য ঘাতকদেরকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে মুসলিম দেশগুলোতে সঙ্কট জিইয়ে রাখা।
অবস্থা খুবই খারাপ। এ সমস্ত সরকার খোদ ইহুদীদের অপেক্ষা অধিক ইহুদীবাদী। তাদেরকে অপসারণ করার জন্য কাজ করা শরীয়ত নির্দেশিত দায়িত্ব। এ দায়িত্বে অবহেলা করা চলবে না।
**************
[1]মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রক্রিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি। তাকে বলা হয়ইসরাইলি স্বার্থের বিশ্বস্ত সংরক্ষণকারী।
[2]ইহুদিবাদী ইসরাইলের একজন গুরুত্বপূর্ণ পদস্থ কর্মকর্তা
[3]২০১২ সালে
[4]২০১২ সংখ্যা
[5]আমরা তাদের ব্যাপারে এমনটাই মনে করি, সর্বোপরি আল্লাহ্-ই তাদের জন্য যথেষ্ট!
[6]আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা