JustPaste.it

লজ্জা ভারতের কোটি কোটি মুসলমানের প্রাণ সংহারে উদ্যতঃ সরকার তার ব্যর্থতা লুকাবে কোথায়?

–ফারুক হোসাইন

==================================================

 

        বাংলার কুখ্যাত কলমবাজ তসলিমা নাসরিন। এবার সে মুসলিম বিদ্বেষী বিষবাষ্প বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে উপমহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের অন্যতম এজেন্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতদিন বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও ধর্ম বিশ্বাসের ওপর নগ্ন ছোবল হেনে যথেষ্ট ঘৃণা, ধিক্কার কুড়িয়ে কুখ্যাতি অর্জন করেও তার মুসলিম বিদ্বেষের প্রচন্ডতা এতটুকু হ্রাস পায়নি। বাংলার সচেতন মুসলমান সমাজ তার এ তৎপরতাকে এক অবলা নারীর বালখিল্য বলে গায়ে না মাখায় এটাকে তাদের দুর্বলতা মনে করে তার অপরাধকে সে এখন দুঃশাহসের মাত্রায় নিয়ে গেছে। যে ঘৃণ্য মিশনকে সফল করার জন্য তসলিমা কলমবাজীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

 

        এবং তার মাধ্যমে এদেশের মুসলমানদের ঈমান আকিদার ওপর আঘাত হানছে সে মিশন সফল করা সম্ভব নয়। বুঝতে পেরে এবার সে আরও বড় মাপের টার্গেট নিরুপন করেছে। শুধু মুসলমানদের মনে আঘাত নয় এবার তার টার্গেট, মুসলামানদের রক্তের গঙ্গা বইয়ে দেয়া। এর জন্য চাই খুনাখুনি, মারামারি, অগ্নি সংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ, নির্যাতন – এমনি একটি অরাজকপরিস্থিতির। আর এর শিকার হবে নিরীহ মুসলমানরা! তারা এক তরফাভাবে মার খাবে, খুন হবে, জখম হবে, তাদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া হবে, তাদের মা-বোনকে ধর্ষণ করা হবে, ঘড়-বাড়ি, জমি থেকে উৎখাত করা হবে, পরিশেষে সদলবলে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। আর এর বিনিময়ে তাসলিমার কদর বাড়বে, বাড়বে খ্যাতি, আন্তর্জাতকি অঙ্গনে তাকে নিয়ে একটা হৈ, চৈ পড়ে যাবে। ভাগ্য ভাল হলে শতাব্দীর আলােড়ন সৃষ্টিকারী হিরোইনে পরিণত হলেও বেশী একটা পাওয়া হবে না।

 

        হ্যাঁ, তাসলিমা আজ সেই মিশন নিয়েই বীরঙ্গনার ন্যায় দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পরিধিতে এমন একটা খ্যাতি অর্জন সম্ভব নয় জেনেই এবার সে সাম্প্রদায়িকতার শিকার ভারতের ২০ কোটি মুসলমানকে তার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য “গিনিপিগ” হিসেবে বেছে নিয়েছে। কোটি কোটি মুসলমানের মান ইজ্জত-আব্রু, বেঁচে থাকার নিরাপত্তা, ধর্মপালনের অধিকারকে হুমকিগ্রস্থ ও অনিশ্চিত করার জন্যই এই নষ্ট চরিত্রের মহিলা রচনা করেছিল “লজ্জা’’ নামক একখানা উপন্যাস। একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিজেপির নীল নকশা অনুযায়ী এই মহিলা বইখানার প্রতি পাতায় পাতায় বর্ণনা করেছে এদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানদের কর্তৃক সংখ্যালঘু হিন্দুদের নির্যাতন, নিপীড়নের ভয়ঙ্কর উদ্দেশ্য প্রণােদিত সব কাল্পনিক কাহিনী। এই বইখানা এদেশে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই তা কলকাতায় চলে যায়। অসম্ভব রকম সাম্প্রদায়িক হিন্দু মহলে বেশ আলােড়ন সৃষ্টি করেছে বইটা। এই বইয়ে বর্ণিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের মাল-মশলাকে দলিল বানিয়ে তোলপাড় করে ফিরছে তাবৎ সাম্প্রদায়িক সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বিজেপি, আর এস, এস এর নেতা-কর্মীরা। ওপারে হিন্দুদের হাতেহাতে বইখানি পৌছে দিয়ে তাদের মনের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষ বপন করে দেয়া হচ্ছে।

 

        পশ্চিম বঙ্গের সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘কলমে’ প্রকাশিত হয়েছে যে, সম্প্রতি শিলিগুড়ির কিরণচন্দ্র ভবনে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে হিন্দু চিন্তাধারা ও রাষ্ট্রীয়তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অশোক সিংঘল বাংলাদেশের লেখিকা তাসলিমার ‘ লজ্জা ’ উপন্যাস খানা ভারতের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়ার আহবান জানান। তিনি পশ্চিম বঙ্গ থেকে বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করে হিন্দু বাংলা গড়ার জন্য ছেলেদের ‘বজরং’ এবং মেয়েদের ‘দুর্গা বাহিনী’ গড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে মন্তব্য করেন, এখানে হিন্দু বাংলা গড়ার বীজ বপন করাই আছে। আপনারা তাতে শুধু একটু জল ঢালুন। অর্থাৎ এখানে হিন্দুদের মনে মুসলিম বিদ্বেষী যে উন্মাদনা বিদ্যমান আছে তাকে আরও শাণিত করার জন্য তাসলিমার লজ্জা উপন্যাসকে সকলের পাঠ্য হিসাবে বেছে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।

 

        ঐ পত্রিকা আরও জানিয়েছে যে, ইতিমধ্যে আর, এস, এস সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তাদের মুখপাত্র ‘পাঞ্জজন্য’ এ ধারাবাহিকভাবে লজ্জা উপন্যাসের হিন্দি অনুবাদ ছাপা হবে। সমগ্র হিন্দি ভাষাভাষী হিন্দুদের এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হবে মুসলিম বিদ্বেষী ঘৃণা। ইতিমধ্যে পশ্চিম বঙ্গে পান-বিড়ির দোকান থেকে শুরু করে সাধারণ ম্যাগাজিন স্টল এমনকি ফুটপাতে ফুটপাতে ঢেলে সাজিয়ে মুড়ি মুড়কির ন্যায় বিক্রি হচ্ছে ‘ লজ্জা ’ খানা। উপেন মন্ডল নামে বিজয় বুক স্টোরের কর্মী (৫৬, শ্যামাচারণ দে স্ট্রিটের) ওই নিবন্ধের প্রতিবেদকের সামনেই আকর্ষনীয় ভাষায় লজ্জা বিক্রি করছিলঃ “আসুন! আসুন। তাসলিমার ফাটাফাটির বই ‘লজ্জা’ পড়ুন, জানুন বাংলাদেশের হিন্দুদের কি করুণ অবস্থা।” এমনি করে হাজার হকারও লজ্জা বিক্রি করে চলেছে হরদম- পশ্চিম বঙ্গের ফুটপাত, বাস, রেল, স্টেশন সর্বত্র। শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র আর, এস এস ও বিজেপির কর্মীরা লজ্জার ফটোকপি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে বেড়াচ্ছে। আর একটাই প্রচারণা চালাচ্ছে যে, “বাংলাদেশের একজন মুসলমান লেখিকা তার বইতে বাংলাদেশে হিন্দুদের প্রতি নির্যাতন, ভিটেমাটি উচ্ছেদ, মন্দির ধ্বংস করাও পাইকারী গণধর্ষণের এই বর্ণনা দিয়েছে।” তাহলে বুঝুন, আসল ব্যাপার আরও কত ভয়ঙ্কর। সুতরাং এখন কেন আমরা মুসলমানদের উপর তার বদলা নেব না? কেন তাদেরকে পুরোপুবি নির্মুল করে পবিত্র হিন্দু-বাংলা গড়ব না?”

 

        এভাবে ‘ লজ্জা’কে কেন্দ্র করে বিজেপি, সংঘ পরিবার ও আর, এস, এসের মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণার ফলে পশ্চিমবঙ্গে কয়েকমাস ধরে অদ্ভুত ঘৃণা ও বিদ্বেষের আবর্তে মুসলমানরা জড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে বইটির জনপ্রিয়তা এত দূর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে, সাহিত্য বোঝেনা, পত্রিকা, বই পত্র পড়ায় যাদের রুচি নেই তারাও ‘লজ্জা’ কিনে পড়ছে এবং বাসে-ট্রেনে-ট্রামে সর্বত্র পরিচিত মুসলমান দেখলেই উত্তেজিত হয়ে জবাবদিহি চাইছে, “ওদেশের হিন্দুদের কী অবস্থা ‘লজ্জায়’ পড়েছেন? আপনারা তো এখানে বেশ জামাই আদরেই আছেন। বিজেপি ঠিকই বলে।” উল্লেখ্য, পশ্চিম বঙ্গে গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত লজ্জার আকাশচুম্বি চাহিদার জন্য ছয়টি মুদ্রণ শেষ হয়ে গেছে বলে উক্ত পত্রিকার সূত্রে জানা গেছে।

 

        ওপারের সেকুলার বলে পরিচিত ভদ্রলােকরাও বসে নেই। তারাও লজ্জার প্রেমে পড়ে বিজেপির প্রচারে লেগে গেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকুলার হিসেবে পরিচিত ইতিহাসের অধ্যাপক শ্রী অমলেন্দু দে বর্তমানে বইটির ফটোকপি সকলকে পড়িয়ে বেড়াচ্ছেন আর মুসলমানদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখছেন, “এখানে আপনারা দাঙ্গার কথা বলেন। লজ্জা পড়ে দেখুন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কী অত্যাচার হচ্ছে। এবার আপনারা জবাব দিন এসব অবিচারের।”

 

        ওপারের সংখ্যাগুরু বুদ্ধিজীবীদের এখন একটাই কথা, “বইটিতে তাসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলামনদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রতিনিয়ত খুন, বলাৎকার, শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনা, অপমান, লাঞ্ছনা, ঘৃণা, অবিরাম দাঙ্গা ও একতরফা গণহত্যার মধ্যে কীরকম ঘৃণ্য জীবন কাটাচ্ছে তারই সত্যনিষ্ঠ, রগরগে বর্ণনা রয়েছে ‘ লজ্জার’ মধ্যে।”

 

        লজ্জার পাতায় পাতায় কোন তথ্যসূত্র ছাড়াই রয়েছে অজস্র হিন্দু মন্দির, দোকান, বসত বাড়ি লুটপাট, অগ্নি সংযোগের ভয়াবহ লম্বা লম্বা তালিকা। বইয়ে বর্ণিত হয়েছে ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনারা বেছে বেছে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে, যৌনাঙ্গ কেটে ফেলেছে, বাড়ি লুটপাট করেছে অথচ আশেপাশের একটা মুসলমানের গায়েও হাত দেয়নি, স্বাধীনতার পরও এদেশের মুসলমানরা প্রতিবেশী হিন্দুদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে। সে জন্য “লজ্জার” নায়কের বাবার মত প্রতিনিয়ত অসংখ্য হিন্দু তাদের জমি-জমা বাজার দামের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করে অন্যত্র চলে যেতে বা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এমনি একটা ধারণা দেয়া হয়েছে বইটায়। তাই ওপারের হিন্দু সমাজ, ‘লজ্জার’ এই রগরগা কাহিনী পড়ে সর্বত্র এই মন্তব্যই করছে যে, বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলমানরা ভয়ঙ্কর ধরণের সাম্প্রদায়িক। তারা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন চালাচ্ছে। তাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। সুতরাং আমরা কেন ভারত থেকে মুসলমানদের তাড়িয়ে দেব না? তাদের ওপর এর প্রতিশোধ কেন নেব না?

 

‘লজ্জা’ যে হিন্দু সাম্প্রদায়িক বিজেপি-তাসলিমার গোপন ষড়যন্ত্রের ফসল তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ, বইটি কলকাতার অন্যতম বিজেপি মানসিকতাসম্পন্ন লেখক শ্রী বুদ্ধদেব গুহকে উৎসর্গ করা হয়েছে। তা ছাড়া কলকাতার মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণার অগ্রদূত আনন্দ বাজার গোষ্ঠি এবং বিজেপি ; আর, এস, এস বইটির ব্যাপক প্রচারে যে হারে শরীরের ঘাম ঝরাচ্ছে তা অন্য কোন লেখক লেখিকার বেলায় দেখা যায় না।

 

        সম্প্রতি সিলেটে সাহাবা সৈনিক পরিষদের পক্ষ থেকে তাসলিমার মাথার মূল্য ঘোষণা দেয়ার কথিত অভিযোগ তুলে গত ২ রা অক্টোবর বিজেপির পাঁচজন মহিলা প্রতিনিধি নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করে তাসলিমার নিরাপত্তার দাবী করে স্মারকলিপি প্রদান করে। তাসলিমার জন্য বিজেপির এত মায়া কান্নার কি উদ্দেশ্য? তাদের দালালী করে তাসলিমা তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে বলেই কি ‘প্রকৃত স্বজনের’ ন্যায় তারা তাসলিমার পাশে এসে দাড়ান নি? ভারতের নিরাপরাধ নিরীহ সংখ্যালঘু মুসলমানদের আর একটি নিষ্ঠুর দাঙ্গার মধ্যে ঠেলে দেয়ার পটভূমি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাধারণ হিন্দুদের মনে ‘গণ-ঘৃণা’ সৃষ্টির প্রয়াসে যদি তাসলিমা এই ঘৃণ্য বই রচনা না করে থাকবে তাহলে এদেশে এই বই প্রকাশের পূর্বে পশ্চিম বঙ্গে আগে প্রকাশ কেন? তাসলিমা যদি ভারতের মুসলমানদরে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার জন্য হাতিয়ার হিসেবে এই বইকে ব্যবহার না করতে চায় তবে আর, এস, এস ও বিজেপি তার বইকে ব্যবহার করে দাঙ্গা বাধানোর জন্য সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে বাধা দিচ্ছে না কেন? এই বইয়ের কল্পিত কাহিনী ওপারে ব্যাপক প্রচার করে বাংলাদেশের মুসলমানদের ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক প্রমাণ করে বিজেপি, আর, এস, এসের মুসলিম নিধন অভিযানের পক্ষে মজবুত রসদ যোগানো ছাড়া তাসলিমার আর কোন উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে?

 

        আশ্চর্যের ব্যাপার, এদেশে বিসমিল্লাহ বলে ক্ষমতাসীন সরকার কায়েম থাকতেও দীর্ঘদিন যাবৎ এই কুচক্রী ও ইসলাম বিদ্বেষী মহিলা এদেশের মুসলমানদের ধর্মের ওপর আঘাত হেনে তাদের অনুভূতিকে দলিত মথিত করে চলছে, তাদের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক বলে গালাগালি করে চলছে, সর্বশেষে সুকৌশলে এদেশের মুসলমানদের সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী সাম্প্রদায়িক অপবাদ দিয়ে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের ওপর নির্যাতন চালানোর ব্যবস্থা করেছে। অথচ এই মহাঅপরাধীর বিচার হচ্ছে না। তার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে না যে, ‘লজ্জা’ বইয়ে বর্ণিত সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা কতখানি সত্য, কতখানি বাস্তব।

 

        মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধুই হিন্দুরা নির্যাতিত হয়েছে এমন ভয়ঙ্কর ইতিহাস বিকৃতি ঘটনোর দুঃসাহস তাকে কে দিয়েছে? সম্প্রতি তাসলিমাকে হত্যার জন্য মৌলবাদীরা হুমকি প্রদান করেছে বলে মহল বিশেষের এই ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার নিরাপত্তার জন্য সরকার পুলিশ মোতায়েন করেছে। যে তাসলিমা কোটি কোটি মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত প্রদান, তাদের ধর্ম, ঈমান-আকিদাকে উপহাসের খোরাক বানিয়েছে, তার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হল, কিন্তু তার অপরাধের জন্য যে কোটি কোটি মুসলমানের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে তার কোন বিচার হচ্ছে না। এই কলমবাজ মহিলা কলমের খোঁচায় ভবিষ্যতে যেন মুসলমানদের অনুভূতিতে আরও আঘাত করতে না পারে সে ব্যাপারে এখনও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তবে কি এই রকার জনস্বার্থে নয়, অপরাধীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নিয়োজিত?

 

        আমরা জানি, মানবতার আইনে কোন মানুষের কথা বা কাজের দ্বারা অন্য কোন মানুষের চিন্তা চেতনা বা অনুভূতিকে আঘাত করলে তা দৈহিক আঘাতের ন্যায় অপরাধ বলে গণ্য হবে, এবং এ অনুযায়ী সে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হবে। তাসলিমা নাসরিন যদি লেখার স্বাধীনতার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে কোটি কোটি মুসলমানের মনে আঘাত দিতে পারে তবে সেই মুসলমানরাও যদি গণতান্ত্রিক অধিকার বলে এবং সরকারের নিরবতার কারণে তাসলিমা নাসরিনকে শাস্তি দেয়ার উদ্যোগ নেন তবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন? দেশের নাগরিকদের দৈহিক, মানবিক নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকার পালন করবে বলেই নাগরিকেরা সরকার নির্বাচিত করে, সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে। কিন্তু এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের অনুভূতিতে আঘাত প্রদানকারীকে সরকার কোন বিচার করতে পারেনি বলে বিভিন্ন স্থানে মুসলমানরা হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল, মিটিং করতে বাধ্য হয়েছে। তথাকথিত প্রগতিবানদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, সিলেটে আয়োজিত এক জনসভায় মৌলবাদীরা নাকি তাসলিমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। অথচ সেই সংগঠনের পক্ষ থেকে এর সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছে। তবুও উক্ত মহল ভিত্তিহীন এই অভিযোগকে তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করে বেড়াচ্ছে।

 

        কিন্তু এ নিয়ে এত হৈ চৈ-ই বা কেন? তাসলিমা গণতান্ত্রিক অধিকার বলে মানুষের অনুভূতিতে আঘাত। করে, তাদের সাম্প্রদায়িক বলে মিথ্যে অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারলে, পরিশেষে ইতিহাস বিকৃতি ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কোটি কোটি মুসলমানকে দাঙ্গার শিকার হয়ে গণহত্যার মত হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারলে এবং সরকারের নিকট এসব অপরাধ যদি অপরাধবলে গণ্য না হয় তবে সেই একই গণতান্ত্রিক অধিকার বলে তার অপরাধের শিকার কোটি কোটি মুসলমানের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে তাকে কেন ফাঁসী দেওয়ার দাবী জানাতে পারবে না? সেই সরকারই বা কোন আইন বলে একে অপরাধ বলে গণ্য করবে? অথচ মুসলমানরা সন্ত্রাস ও অরাজকতায় বিশ্বাস করে না বলে স্বাভাবিক ভাবে শান্তি প্রক্রিয়ায় ইনসাপূর্ণ বিচার কামনা করে বলেই এখনও তাদের তৎপরতা মিটিং মিছিল এবং দাবী পেশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কোন সমাজ ক্ষমা করতে পারে না।

 

         আজকের তাসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ উপন্যাসের কারণে ভারতের মুসলমানরা আরও একবার দাঙ্গা পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। মানুষ হিসেবে তাদের নিরাপত্তা বিধানে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। যেহেতু তারা যে পরিস্থিতির শিকার হতে চলছে তার রূপকার আমাদের দেশেরই নাগরিক। আমরা যদি আন্তর্জাতিক কুচক্রীদের এদেশীয় এই এজেন্টের তৎপরতা বন্ধ করতে সক্ষম না হই তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে প্রতিটি ভারতীয় মুসলমানের দুর্ভোগের জন্য দায়ী হবে, সরকার কি এটা উপলব্ধি করতে পারছে না? তাদের কাছে অন্য দেশের বলে কি কোটি কোটি মুসলামনকে দাঙ্গার মুখে ঠেলে দিয়ে হত্যা, মুণ্ঠন, ধর্ষণ, উৎখাত, নির্যাতনের শিকার হওয়ার উস্কানি প্রদান করা অপরাধ বলে গণ্য হবে না? এদেশের মানুষকে কলমের খোঁচায় এই মহিলা সাম্প্রদায়িক বানিয়ে ছেড়েছে, কোন কারণে সরকার নিরব থেকে এদেশের মানুষকে এতবড় অভিযোগ মাথা পেতে নিতে বাধ্য করছে? এই মহিলার কারণে বিদেশেও আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, তা উদ্ধারের জন্য কেন কোন উদ্যোগ নেই? এদেশের তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার প্রবক্তা এরং প্রগতির দাবিদার আহমদ শরীফ, কবীর চৌধুরী, জাহানারা ইমাম, শামছুর রহমান, সুফিয়া কামাল প্রমুখ বুড়াে বামরাই বা এখন কোন গর্তে লুকিয়ে আছে। তাসলিমা যে সাম্প্রদায়িকতার আগুন নিয়ে মরণ খেলায় মেতে উঠেছে তার প্রতিবাদে গলাবাজী করতে তারা রাস্তায় নামছে না কেন? তাসলিমা তার বইয়ে যে ভয়ঙ্কর সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা আবিস্কার করেছে তা যদি বাস্তব হয়েই থাকে তবে এতদিন তারা কেন সংখ্যালঘুদের উদ্ধারে মহাযুদ্ধ  ঘোষণা করে ময়দানে নামেনি? হিন্দুদের এত মর্মান্তিক অবস্থা হল আর স্বাধীনতার পর স্বাধীনতার স্বপক্ষ টাইটেল নিয়ে তারা ২৩ টি বছর ধরে প্রতিবাদ না করে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল কেন? তাসলিমা বইয়ে অভিযোগ করেছে যে, স্বাধীনতার পরও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলেছে। স্বাধীনতা লাভের পর তিনটি বছর ধরে এদেশে সেকুলার সরকার কায়েম ছিল, নিশ্চয়ই সে সময়ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে।

 

        যদি এটা সত্য না হবে তবে তারা এর প্রতিবাদ করছে না কেন? তাসলিমা আর এক স্থানে বইটিতে অভিযোগ করেছে যে, এদেশের আওয়ামী – কমুনিষ্ট থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক দলের কেউই দাঙ্গার কবল থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার চেষ্টা করে না। যে সেকুলার কমুনিস্টরা অসাম্প্রদায়িক সাজার জন্য ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে ওকালতি করে বেড়াচ্ছে, তাসলিমা তাদেরও সাম্প্রদায়িক বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে, তারা অভিযোগের কি জবাব দেবেন? তবে কি আমরা ধরে নেব, এদেশের তাবৎ সেকুলার, কমুনিস্ট, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িকতার দাবিদারেরা তাদের বিবেক বুদ্ধি তসলিমার কাছে বন্ধক রেখেছে অথবা তার পতাকা তলে সমবেত হয়ে তাসলিমার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে? সর্বশেষ খবর হল, বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে যে, তাসলিমার মূন্ডর মূল্য ধার্য সম্পর্কিত গুজব আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হওয়ায় এবং বিশ্ব নিন্দিত মুরতাদ সালমান রুশদীর পাশে ছবি ছাপিয়ে তাসলিমার কৃতিত্বের (?) মূল্যায়ন হওয়ার পর তাসলিমার প্রতি নাকি রুশদির দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তার দুঃখে জারে জার হয়ে তিনি নাকি তাসলিমাকে নির্ভয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পত্র মারফত উৎসাহ যুগিয়েছেন। বিগত যৌবনা বুড়াে আদভানী, যোশী ও সুনীলদের ‘গুতোগুতিতে’ তাসলিমা যেভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তার ওপর যদি গর্তে লুকানো ধারী শেয়ালের আছর পড়ে তাহলে চঞ্চলা যুবতী তাসলিমা আরও কতখানি জানি বেপরোয়া হয়ে ওঠে সেটাই এখন দেখার ব্যাপার।

 

*****