JustPaste.it

67b69e5ff95045a6de5c6f42561c3f40.jpg

 

 

শুধুই শাহাদাতের তামান্নায়...

 

শহীদ কমান্ডার খুররম সায়ীদ কিয়ানী রহ.

(কমান্ডার কাসিম)

 

 

মাওলানা ইউনুস আব্দুল্লাহ অনূদিত

 

 

c525642d53529394fe85642749f89f42.png

১৪৩৯ হিজরীর মুহাররম মাসে কমান্ডার খুররম কিয়ানী (কমান্ডার কাসিম) রহ. আফগানিস্তানের জাবুল প্রদেশের মাটিকে তার মোবারক রক্ত দ্বারা সিক্ত করেন। যিনি প্রায় বিশ বছরের অধিককাল ধরে মহান রাব্বুল আলামীনের দ্বীনের কালিমা প্রতিষ্ঠা করতে কাশ্মির, হিন্দুস্থান, নেপাল, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের জিহাদে সম্পৃক্ত ছিলেন। কমান্ডার খুররম কিয়ানী রহ. দুনিয়াতে জিহাদের কাজে জড়িত ভাইদের কাছে কমান্ডার কাসিম বা হাসান হামযা অথবা হাজী কাসিম নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পৈত্রিক সম্পর্ক রাওয়ালপিন্ডির সাথে ছিল। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সেই জিহাদের মোবারক ময়দানে পা রাখেন। তারপর কাশ্মিরী সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প থেকে সামরিক ট্রেনিং গ্রহন করে তিনি কাশ্মির রনাঙ্গণের কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। তার পরবর্তী কয়েক বছর পর্যন্ত তিনি উপত্যকার ভেতরে থেকে মুশরিক হিন্দু বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত থাকেন। এ সময়ের মাঝেই তিনি ভারতে প্রবেশের কাগজপত্র সংগ্রহ করেন। তারপর ভারতে লুকিয়ে থেকে নাপাক ভারতীয়দের গোপনীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর বিরুদ্ধে পরিচালিত কয়েকটি অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরী করেন। তার সেই সফল ছক ও পরিকল্পনার ফলেই ভারতের টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাকে গ্রেফতার করার নিমিত্তে ভারতীয় সংস্থাগুলি পুরো ইন্ডিয়াতে অভিযান শুরু করে দেয়, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাকে নিরাপদ রাখেন। এমনকি তখন তার ভারতে থাকাটা খুব দুস্কর হয়ে দাঁড়ায় এবং অন্যদিকে তার পাকিস্তান ফিরে যাওয়ার কোন রাস্তাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ সময়ের মাঝেই আল্লাহ তায়ালা তার জন্য নেপালে প্রবেশের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেন। সেখানে কিছু দিন অবস্থান করে তিনি পুনরায় পাকিস্তানে ফিরে আসেন।

কাশ্মিার ও ভারতে জিহাদে লিপ্ত থাকার সময়েই তার নিকট এই বাস্তবতা খুব ভালোভাবেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, পাকিস্তানি বাহিনী ও আই এস আই মুজাহিদদের জন্য বিশ্বস্ত নয়। তারা কেবল পাকিস্তানি জনগণের দৃষ্টিতে নিজেদের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার নিমিত্তে মুজাহিদীনের কয়েকটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকে। অন্যদিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে মুজাহিদীনের অপারেশনের সরঞ্জামাদি ও সুযোগ-সুবিধাকে কেড়ে নিয়ে তাদের অনেক বেশী গুরত্বপূর্ণ অপারেশনকে নস্যাৎ করে দেয়। মুজাহিদীনের এ জাতীয় সকল ধরণের কুরবানী দেওয়ার পরেও পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী ও আই এস আই ভারতের সাথে দুশমনীর ক্ষেত্রে নিজেদের সনির্বন্ধ মিনতি পাল্টাতে থাকে। সুতরাং তিনি তার জিহাদের সহকর্মী শহীদ কমান্ডার আফজাল রহ. এবং শহীদ কমান্ডার আবদুস সামাদ জাবেদ রহ.কে সাথে নিয়ে ত্বাগুতদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে জিহাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং খোরাসানের পূণ্যভূমি অভিমুখী হন।

ওয়াজিরিস্তান পৌঁছার পর তিনি “আল-কায়েদা” জামাতে অন্তর্ভুক্ত হন। পাশাপাশি জিহাদের দিকে আহবানকারী ইঞ্জিনিয়ার আহসান আযীয রহ. শহীদ কমান্ডার ডাক্তার আরশাদ ওয়াহীদ রহ. এবং শহীদ উস্তাদ আহমাদ ফারুক রহ. প্রমুখের নেতৃত্বে নিজের জিহাদী সফর অব্যাহত রাখেন।

২০০৮ সাল থেকে নিয়ে একেবারে শাহাদাত লাভ অবধি (প্রায় ১০বছর) তিনি খোরাসানের পূণ্যভূমিতে জিহাদের কাজে লিপ্ত থাকেন। গজনী, জাবুল, পাকতিয়া, খোস্ত, উত্তর ওয়াজিরিস্তান এবং দক্ষিন ওয়াজিরিস্তানে তিনি আমেরিকা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত কয়েকটি অপারেশনের নেতৃত্ব দেন। মুজাহিদদের ছোট ছোট গ্রুপকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অসংখ্য মুজাহিদীনকে বিভিন্ন রণাঙ্গণে পাঠিয়েছেন। পাকিস্তানি ও মুহাজির মুজহিদীনের পরিবারের প্রয়োজন পুরা করেছেন। মোটকথা: তিনি ওয়াজিরিস্তানে মুজাহিদীনের প্রশাসনিক বিষয়াবলীকে অত্যন্ত সুচারুভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি নবাগত মুজাহিদীনের সামরিক প্রশিক্ষণদানের জিম্মাদারীও পালন করেছেন। ১৬ বছর বয়সেই জিহাদী রাস্তার মুসাফির শহীদ কমান্ডার খুররম কিয়ানী রহ. জিহাদের সকল স্তর পাড়ি দিয়ে সময়ের এক মহান নেতায় পরিণত হয়েছিলেন।

আল-কায়েদার ভারতীয় শাখা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি কমান্ডার কারী ইমরান শহীদ রহ. এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে আফগানিস্তানে অত্যন্ত সুন্দরভাবে জিহাদী কার্যক্রম আঞ্জাম দিয়েছেন। এরই সাথে সাথে তিনি আমেরিকার চক্ষুশূলেও পরিণত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের শেষ দিকে আমেরিকা প্রথমে তাকে ও তারপর শহীদ কারী ইমরান রহ.কে ড্রোন হামলার টার্গেট বানায়। কারী ইমরান রহ.কে আল্লাহ তায়ালা শাহাদাত নসীব করেন। আর শহীদ কমান্ডার কাসিম রহ. মারাত্মকভাবে আহত হন। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা কুদরতীভাবে তাকে হেফাযত করেন। তিনি তার ক্ষতের পরোয়া না করে আফগানিস্তানে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার সামরিক বিষয়াদির নেতৃত্ব প্রদান করেন। অন্যদিকে আমেরিকা একেবারে পাগলের মত হন্য হয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। এমনিভাবে ২০১৫ সালে আমেরিকান সৈন্যবাহিনী তার আবাসস্থলের উপর এয়ার ফোর্সের কালোছায়া ফেলে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাযত করেন। অতঃপর আমেরিকা তাকে শহীদ করার জন্য একের পর এক অভিযান চালাতে থাকে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকবারই এ বিষয়টি প্রমাণিত করেছেন যে, জীবন-মৃত্যুর ফায়সালা একমাত্র তার হাতেই। অবশেষে ২০১৭ সালের শেষদিকে আমেরিকান ড্রোন বিমান তাকে সফর অবস্থায় জাবুল প্রদেশে টার্গেট বানায় এবং আল্লাহ তায়ালা তার জিহাদী জীবনের কঠিন স্থরসমূহ  সুন্দরভাবে অতিবাহিত করার প্রতিদান স্বরূপ তাকে  শাহাদাতের মহান মর্যাদায় ভূষিত করেন। আমরা আল্লাহর কাছে এমনটাই ধারণা করি, তবে তিনিই ভাল জানেন। তাঁর থেকে আগে বেড়ে আমরা কাউকে ভাল বলি না।

তিনি আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার কেন্দ্রীয় শুরার সদস্য ছিলেন। অতিশয় সুস্থ রুচিবোধসমম্পন্ন, সম্ভ্রান্ত এবং ভাল অভ্যাস সমূহের অধিকারী ছিলেন। সর্বদা নিজের জবানকে আল্লাহ তায়ালা যিকর ও কালামে পাকের তেলাওয়াতের দ্বারা সিক্ত রাখতেন। নেককাজসমূহের ব্যাপারে প্রতিযোগিতায় অগ্রগামী ছিলেন। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করতেন। মুজাহিদীন সাথীদের সাথে খুব মহব্বতের সাথে মিশতেন। সাধারণ মুসলমান ও বিশেষকরে আনসার সাথীদের সাথে তার সুন্দর ব্যবহারের দরুন ওয়াজিরিস্তান ও আফগানিস্তানের সকলের প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। নিজের জবানকে অনর্থক কথা-বার্তা থেকে, মুসলমানদের দোষ-ক্রটি অন্বেষণ করা থেকে এবং গীবত করা থেকে পবিত্র রাখতেন। আল্লাহর শক্রদের শক্র ও মুসলমানদের সহমর্মী ছিলেন। যুদ্ধে ও কঠিন পরিস্থিতে তিনি বীরের গুণ এবং আনন্দের আসরগুলিতে মুচকি হাসি ছড়িয়ে দিতেন। দান-সদকার ব্যাপারে তিনি বিলাসী ও খুব খোলা দিলের অধিকারী ছিলেন। মোদ্দাকথা: তিনি সর্বদা নিজের জান, নিজের মাল এবং নিজের দু‘আর দ্বারা মুসলমানদের খেদমতে নিয়োজিত থাকতেন।

মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা- তিনি যেন তার দরবারে কমান্ডার খুররম কিয়ানী রহ. এর দীর্ঘ জিহাদী জীবনকে কবুল করে নেন। তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের সুউচ্চ মর্যাদায় আম্বিয়াদের, সিদ্দিকীনের, শুহাদাদের ও সালেহীনের সঙ্গী বানিয়ে দেন। উম্মাতে মুসলিমাহকে কমান্ডার কাসিম শহীদ রহ.এর মত এমন ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের উত্তম বদলা দান করেন। তার পরিবারবর্গ, শুভাকাঙখী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং মুজাহিদ সহকর্মীদেরকে সবরে জামীল এবং মহা প্রতিদান দান করেন।…আল্লাহুম্মা আমীন

 

وصلیٰ اللہ تعالیٰ علیٰ خیر خلقہٖ محمد وعلیٰ آلہٖ وصحبہٖ أجمعین۔ وآخر دعوانا أن الحمد للہ رب العالمین۔

 

 

আস-সাহাব মিডিয়া ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা কর্তৃক ২০ মে-২০১৮ তারিখে প্রকাশিত

 كماندان خرم سعيد كيانى (قاسم) رحمه الله

 পুস্তিকার অনুবাদ