সারা পৃথিবীর আলিম, মুফতি , ইসলামী বুদ্ধিজীবি ও মুসলিম দেশের আদালতের রায়ঃ
কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের স্বতন্ত্র আক্বিদা ও বিশ্বাসের কারণেই মুসলমান নয়
================================================================
এদেশের সর্বশ্রেণীর আলিম উলামা, হক্কানী পীর মাশায়েখ এবং ইসলামী চিন্তাবিদ, ফকিহবিদ ও শিক্ষাবিদদের নজরে কাদিয়ানীদের ইসলাম বিরোধী বাতিল ধর্ম প্রচার যথা সময়ে ধরা পড়ে। তারা ব্যক্তিগত ভাবে এবং জামাতবদ্ধ ভাবে এর বিরোধিতা করেন এবং কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম কাফের বলে ঘোষণা দেন।আন্ত্ররজাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত আন্দোলন (বাংলাদেহস শাখা) বাংলাদেহস খতমে নবুওয়াত কমিটি , খতমে নবুওয়াত আন্দোলন পরিষদ বাংলাদেশ , বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি , বাংলাদেহস ইমাম সমিতি ,বাংলাদেশ মসজিদ পরিষদ, বাংলাদেশ সীরাত পরিষদ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান পতাকাতলে সমবেত হয়ে বাংলাদেশের তৌহিদী মানুষ কাদিয়ানীদেরকে অমুসলমান কাফের ঘোষণা দিয়েছে। দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দল্গুলোকাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করেছে। এদেশের কাদিয়ানীদেরকে অন্যান্য দেশের মত আইনগত ও শাসনতান্ত্রিকভাবে অমুসলিমকরার জন্য তারা সরকারের কাছে আবেদন করেছেন এবং তজ্জন্য আন্দোলন করেছেন।
কাদিয়ানীরা ইসলামী নবুওয়াত শীর্ষক একটি আজগুবি পুস্তক লিখে কুরআন হাদীসের তাহরীফ বা বিকৃতি ও মনগড়া অর্থ করে শেষ নবী (সাঃ) এর পরে নতুন নবী আনয়নের পথ সৃষ্টি করে। পুস্তকটি মুওলিম আকিদা বিশ্বাসের মুখে চরম আঘাত হানে ।তজ্জন্য বাংলাদেশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি জনাব সুলতান আহমদ খান ও বিচারপতি জনাব এ, এম, মাহমুদুর রহমান সমবায়ে গঠিত বেঞ্চ যথোপযুক্ত শুনানীর পর কাদিয়ানীদের আবেদন না-মঞ্জুর করেন। মাননীয় বিচারপতিগণ রায়ে হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর পরে নবী আবির্ভূত হওয়ার আকিদাকে কুফরি বিশ্বাস বলে ঘোষণা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন আআদালতের রায়ে কাদিয়ানীরা যে অমুসলীম ঘোষিত হয়েছে হয়েছে, এ শুনাণির মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (হাই কোর্ট ডিভিশন) সে কথাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সংবাদ বাংলাদসেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ২০শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ তারিখে প্রকাশিত হয় । ১৯৯৩ সালে এপ্রিল মাসে অন্য একটি মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল জলিল ও বিচারপতি ও বিচারপতিমোহাম্মদ ফজলুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আইনের দৃষ্টিতে কাদিয়ানীরা অমুসলিম বলে কার্যতঃ ঘোষিত হয়েছে। তাছাড়া বাগদাদ উলামা সম্মেলনের ঘোষণাতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রিও সম্মতি দিয়েছেন। ওআইসির সক্রিয় সদস্য হিসেবে এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ মান্য করতে বাধ্য রয়েছে । এখন শাসনতান্ত্রিকভাবে আইনগত ঘোষণা দিলেই সব লেঠা চুকে যায়।
ও আই স্যার অন্যতম সদস্য নাইজেরিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ। সে দেশ হতে সৌদী আরবের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রার সময় ভ্রমণকারীকে অবশ্যই ‘অ- আহমাদী সনদ’ সংগ্রহ করে সাথে বহন করতে হয়। দেশী বিদেশী সমস্ত পর্যটককেই এ নিয়মের অধীনে সরকারের নিকট হতে এ সনদ সংগ্রহ করে থাকে। আহমদী তথা কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম বিবেচনা করেই সরকার তাদেরকে সৌদি আরব বিশেষত মক্কা- মদীনা শরীফাইনে যেতে দেয়া হয় না।
তুরস্কঃ এ মুসলিম দেশটিতে কাদিয়ায়ী ধর্ম প্রচারিত হওয়াতে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মুসলিম অ কাদিয়ানিদের মধ্যে যে কোন প্রকারের সহিংসতা অ ভুল বুঝাবুঝি অবসান কল্পে সরকার কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতঃ এদেশে বহুদিন যাবৎ বৃটিশ কোলনী থাকার সুবাদে কাদিয়ানীরা এখানে তাদের ধর্ম প্রচারের সুযোগ পায় । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুওয়াতের চরম বিরোধী , এদলটি বাতিল ধর্ম প্রচারে ব্যপৃত থাকায় সরকার এদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করেছে। ঘোষণা তে বলা হয়, এরা এতো সুক্ষ্মভাবে অ গোপনে তাদের মতোবাদ পোষন করে যে, অমুসলিম হয়া সত্ত্বেও এদেরকে মুসলিম হিসেবে ভুল হয়। কারণ এদের নাম , লেবাস, বিবাহশাদী, খাদ্যবস্তু সব কিছুই মুসলমানদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই এদেরকে অমুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়োজনে এ সরকারী ঘোষণা জারি করা হলো।
বিভিন্ন আদালতের রায়ঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদালত কাদিয়ানীদের অমুসলীম ঘোষণা করে রায় দিয়েছে । সকল রায় এখানে বর্নণা করা সম্ভব নয়। মাত্র কয়েকটি রায় নিয়ে এখানে সামান্য আলোচনা করা হলো।
কাদিয়ানী অমুসলামানদের মধ্যে অনুষ্ঠীত বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে উপমহাদেশে অনেক মামলার রায়ে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৩৫ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারী বাহাওয়ালপুরের জেলা জজ এরূপ সিদ্ধান্ত দিয়ে কাদিয়ানী অ মুসলমান্দের মধ্যকার বিবাহ অবৈধ ঘোষনা করেন। অনুরুপ একটি মামলার রায় জামসেদাবাদ পারিবারিক কোর্টের জজ শেখ মোহাম্মাদ রফীক স্বামী নাজির আহমাদ বার্ক কাদিয়ানী হওয়াতে মুসলিম মহিলা আমাতুল হাদীর সাথে তার বিবাহ অবৈধ ঘোষণা করেন। রায়গুলোতে কাদিয়ানীরা যে মুসলমান নয়, এর শরয়ী প্রমাণ পেশ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা ল্যাব করার পরও পাকিস্তানের অসংখ্য মামলায় কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা দিয়ে আদালত রায় দিয়েছে। এখানে রাওয়ালপিন্ডি আদালতের কাদিয়ানি আমাতুল করিম বনাম লেঃ নাজিরুদ্দিন (মুসলমান) নামে একটি মামলায় জেলা জজ যে রায় দেন এর সারাংশ নিম্নে উদ্ধৃত হলোঃ
(ক) কাদিয়ানীদের আকীদা- বিশ্বাস হতে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। ১৪০০ বছর যাবৎ মুসলমানগণ যেভাবে কুরআন বুঝেছেন তারা সেভাবে কুরআন এর অর্থ করে না।
(খ) হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা (সাঃ) সর্বশেষ নবী , তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবে না।
(গ) যে ব্যক্তি হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) কে সর্বশেষ নবী বলে স্বীকার করবে না সে মুসলীম উম্মত ইজমা প্রতিষ্ঠিত আছে ।
(ঘ) মুসলমানদের ঐক্যমত্য অনুসারে কাদিয়ানীরা অমুসলিম।
(ঙ) মির্যা গোলাম আহমাদ দাবী করেছে যে, তাঁর ওপর অবতীর্ন ওহী অন্যান্য নবীদের ওপর অবতীর্ন ওহীর সমান মর্যাদা সম্পন্ন।
(চ) মির্যা গোলাম আহমাদ জীবনের প্রথম দিকের রচনায় যে মানদন্ড নির্ধারন করেছে, সেটাই তাকে নবুয়তের মিথ্যা দাবীদার প্রমাণ করে।
(ছ) তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ নবী হওয়ার দাবী করেছেন-’যিল্লী’ ও ‘বুরুজী’ শব্দগুলোর ব্যবহার প্রতারণা মাত্র।
(জ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পরে করো ওপর নবুয়ওতের ওহী অবতীর্ণ হতে পারে না। যে তা দাবী করবে সে ইসলামের গন্ডি বহির্ভূত হয়ে যায়।
(ঝ) কাদিয়ানী মহিলা মাতুল করিমের সঙ্গে মুসলমান নাজিরুদ্দিনের বিবাহ বাতিল হয়েছে, যেহেতু আদালতের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, কাদিয়ানীরা মুসলামান নহে।
এ মামলায় উচ্চতর আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।
১৯৭৪ সালের অক্টবরে পাকিস্তা গণপরিষদ জাতী সংসদ আইনগত অয়া শাস্নতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাদিয়ানীদেরকে মুসিলিম মিল্লাত হতে খারিজ একটি অমুসলিম ধর্মাবলম্বী বলে ঘোষণা দেবার পর অনেকগুলো মুসলিম দেশ তাদেরকে অমুসলিম কাফের ঘোষণা দিয়েছে। আর এটা মুলতঃ কোনো হিংসা বা বিদ্বেষের কারণে করা হয় নি , বরং তাদের সবতন্ত্র আকিদা ও বিশ্বাসের কারণে করা হয়েছে। পাকিস্তান সাশনতন্ত্রের ২৬০ ধারাএ সঙ্গে (৩) নামে একটি উপধারা সংযোজন করে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছিল। ধারাটি নিম্নরূপঃ
(৩) “নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) কে যে ব্যক্তি সন্দেহাতীত ও শর্তহীনভাবে শেষ নবী বলে বিশ্বাস করবে না অথবা কোনরূপ শব্দ বা বর্ণনার ভাব দ্বারা এ নবীর পরে সে নিজেই একজন নবী হওয়ার দাবি করবে অথবা কোন নবী দাবীকারিকে নবী হিসেবে বা ইসলামের সংশোধনকারী হিসেবে সমর্থন দিবে সে ব্যক্তি আইন ও শাসনতান্ত্রিক প্রয়োজনে একজন মুসলমান বলে গণ্য হবে।”
জাতীয় সংসদ পাকিস্তানের দন্ড বিধীতেও পরিবর্তন করেছে। দন্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারার সঙ্গে নিম্নোক্ত ব্যাখ্যা সংযুক্ত হয়েছেঃ
“ব্যাখ্যাঃ শাসনতন্ত্রের ২৬০ অনুচ্ছেদের (৩) ধারায় দেখানো মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এরশেষ নবী হওয়ার ধারাটির বিরুদ্ধে যে সমর্থন লাভের চেষ্টা করবে।”
সংসদ সর্বসম্মত প্রস্তাবে নিম্নোক্ত সুপারিশও করেন-
“ প্রশাসনিক আইনগুলো তে সমন্ধীয় আনুসঙ্গিক সঙ্গশোধন করা যাবে।”
গণপরিষদ কর্তৃক উক্ত ২৬০ ধারায় (৩) উপধারা যোগ করার পর কাদিয়ানীরা পাকিস্তান ফেডারেল শরীয়া কোর্টে একটি মাওলা রুজু করে। উভয় পক্ষের মধ্যে অস্যংখ্য প্রমাণাদি ও দলিল দস্তাবেজ স্ব স্ব পক্ষের সত্যতা প্রমান করত্যে আদালতে হাজির করা হয়। এক নাগাড়ে দুসপ্তাহ শুনানীর পর কোর্ট কয়েকশত পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করে দেখিয়েছেন যে, মির্যা গোলাম আহমদ ও তাঁর অনুসারীরা মুসলমান নহে। মহামান্য কোর্টের প্রধাণ মন্তব্য নিম্নে দেয়া হলোঃ
“কাদিয়ানীরা মুসলিম উম্মতের অংশ নহে। এটা তদের আচরণ ও বিশ্বাস দ্বারাই প্রমাণিত। তাদের মতে সকল মুসলমানই কাফের । সুতরাং তারা একটি পৃথক উম্মতের অন্তর্ভূক্ত। তারা মুসলিম উম্মতের একটি বিকল্প সৃষ্টি করে মুসলমান্দের সেটা হতে বের করে দিয়েছে। মুসলমানরা তাদের মুসলিম উম্মতের অন্তর্ভূক্ত মনে করা না। আশ্চর্যের বিষয় যে, তারা মুসলিম উম্মতকে ইসলামের গন্ডি বহির্ভূত মনে করে। এতে পরিষ্কার বুঝা গেল যে, দুটি একই উম্মত ভুক্ত হতে পারে না।”
অতএব, ফেডারেল শরীয়া কোর্ট আদেশবলে কাদিয়ানীদেরকে মুসলিম উম্মত বর্হিভূত একটি অমুসলিম জাতি হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর কাদিয়ানীরা অমুসলিম দেশের সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে তাদেরকে মুসলমান ঘোষণার দাবি জানায় এবং তাদের ব্যাপারে দেয়া কাফের ফতোয়া ভুল ঘোষণা করার দাবী করে। কি হাস্যকর ব্যাপার!
ইসলাম ধর্মের বিষয়ে অভিজ্ঞ উলামা ফকীহ এর ঐক্যমত ফতোয়া
১৩২৬ হিজরি সনে (১৯০৮খৃঃ) উপমহাদেশের বিভিন্ন মতের আলেমগণের কাছে কাদিয়ানীদের বিষয়ে একটি ফতোয়া চাওয়া হয়। এটা “ফতোয়ায়ে তাকফীরে কাদিয়ান” নামে প্রচারিত হয়। এ ফতোয়ার মাধ্যমে অবিভক্ত ভারতের দেওবন্দ , সাহারানপুর, থানাবন, রায়পর, দিল্লী, কলকাতা,বেনারসি, লখনৌ, আগ্রা, মুরাদাবাদ,লাহোর,অমৃতসর,লুধিয়ান,পেশোয়ার,রাওয়াল্পিন্ডি,মূলতান,হুশিয়ারুর,গুরুদাসপুর,ঝিলাম, শিয়ালকোট,গুজরাত গুজরানয়ালা, হায়দ্রাবাদ (দক্ষিণাত্য),ভূপাল এবং রায়পুরের সমস্ত চিন্তাবিদ আলেম-ফকিহ সর্বসম্মতিক্রমে কাদিয়ানীদেরকে কাফের ও ইসলাম হতে খারিজ বলে ঘোষনা দেন।
১৯২৫ সালে আহ্লে হাদিসের অমৃতসর কেন্দ হতে একটি ফতোয়া "ফসখে নিকাহে মির্জাইয়া" নামে প্রচারিত হয়। এতে অবিভক্ত ভাওরতের বিভিন্ন মতাদর্শের আলেমগণের স্বাক্ষর রয়েছে। সকলে এক বাক্যে মির্যায়ীদেরকে অমুসলিম ,কাফের বলে ফতোয়া দিয়েছেন।
১৩৩০ হিজরিতে (১৯১২ঈঃ) মুদ্রিত ও প্রকাশিত "আল-কাওলুছ ছহীহ ফী আকায়ীদিল মসীহ" নামে পুস্তকটিতে তদানিন্তন ভারতের প্রতিটি প্রদেশে ও জেলার শত শত আলমের দস্তখত রয়েছে। এতে সকল আলেমই সর্বসম্মতভাবে কাদিউয়ানীদেরকে অমুসলিম ও কাফের বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের অন্যতম পৃষ্টপোষক কুতবে আলম হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহী (১৮২৮-১৯০৫ঈঃ)-এর নেতৃত্বে ভাওরতের অনেক আলেম বুজুর্গ মির্যা গোলাম আহমদকে কাফের বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সেসব বুজুর্গদের মধ্যে ছিলেন মাওলানা শিব্লী নোমানী (১৮৫৭-১৯১৪ঈঃ),মাওলানা সৈয়দ সোলায়মান নদভী (১৮৮৪-১৯৫৩ঈঃ)মাওলানা আশ্রাফ আলী থানভী (১৮৬৩-১৯৪৩ঈঃ)
মাওলানা আহমদ আলী লাহোরী (মৃতঃ ১৯৬২ঈঃ), মাওলানা উবায়দুল্লাহ সিন্ধী (১২৮৯-১৩৬০ঈঃ), মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী(১৮৭৯-১৯৫৭ঈঃ),মাওলানা আবুল কালাম আযাদ(১৮৭০-১৯৫৮ঈঃ),মাওলানা আব্দুল গণি, মাওলানা মোহাম্মাহ ইয়াকুব নানুতবী,মাওলানা মুহাম্মাদ মাজহার,মাওলানা মুহাম্মাদ যামেন,মাওলানা শেখ মুহাম্মাদ থানুভী, মাওলানাখলিল আহমদ সাহরানপুরী,মাওলানা আব্দুর রহিম রায়পুরি,খতীবে আযম মাওলানা মাওলানা সিদ্দিক আহমদ ,মাওলানা রশন খান,মাওলানা মোহাম্মাদ সিদ্দিক মুহাজেরে মাদানী,মাওলানা ইসহাক, মাওলানা মোহাম্মাদ ছালেহ হাসান, আল্লামা সৈয়দ সোলায়মান নদবী, মাওলানা হাসানাত, মাওলানা দাউদ গজনভী,মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী (১৮৯১-১৯৭৪ঈঃ), মাওলানা আহমদ আলী, সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী(১৯০৩-৭৯ঈঃ),মাওলানা এহতাশামুল হক থানবী, মাওলানা ফরিদপুরী (১৮৯৫-১৯৬৮ঈঃ),মাওলানা আব্দুল হামেদ কাদেরী, মুফতী মোহাম্মাদ শফী (মৃত১৯৭৬ঈঃ), মাওলানা মুহাম্মাদ ইদ্রিস,মাওলানা আতাহার আলী (মৃঃ১৯৯০ঈঃ)প্রমুখ বিখ্যাত আলেম ও ফকিহবিদগণ।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেছেন-
(ক) উম্মতের মধ্যে শুধু মাত্র তাকে নবী আখ্যা দেয়া হয়েছে।-(হকিকাতুল ওহী,পৃঃ৩৯১)
(খ)তিনি ওহী পেয়েছেন এবং আল্লাহ্র রসূল মনোনীত হয়েছেন।-ঐ
(গ) তিনি বিশ্বের রহ্মত স্বরূপ তথা রহামাতাল্লিল আলামীন রূপে প্রেরিত হয়েছেন।-(হকিকাতুল ওহী,পৃঃ৮৫)
(ঘ)অম্য যে কোন মানুষ হতে তাকে আল্লাহ্ বেশী সম্মানিত করেছেন।-(হকিকাতুল ওহী,পৃঃ ১০২)
(ঙ)আল্লাহ্ তাকে 'কাওছার' দান করেছেন।-(যামিমা আনজামে আথহাম পৃঃ ৩৫)
(চ) তিনি নিজেকে সত্য খোদারূপে আল্লাহ্র সমআন মর্জাদা দাবী করেন এবং খোদা হিসেবে তিনি আসমান জমিন পয়দা করেছেন।-(আয়নায়ে কালামাত-ই-ইস্লাম,প্রিঃ৫৬৪)
(ছ) তজ্জন্য যে তাকে অবিশ্বাস করবে সে কাফের হবে।-(হকিকাতুল অহী,পৃঃ১৬৩)
(জ) আল্লাহ্ তাকে বলেছেন যে, তাকে (মির্যা গোলাম আহমদকে) সৃষ্টি না করলে এ জগত সৃষ্টি করতেন না। -(হকিকাতুল ওহী,পৃঃ৯৯)
মির্যা গোলাম আহমদের উপরক্ত মন্তব্যগুলোর ওপর অবিভক্ত ভারতের সকল মতের আলেম উলামার নিকট হতে ১৩৩৬ হিজরি সনে একটি সর্বসম্মত ফতোয়া নেয়া হয়। পুস্তিকাকারে প্রকাশিত উক্ত ফতোয়াটিতে স্পষ্টভাবে মির্যা গোলাম আহমদ ও তাঁর উম্মতকে কাফের বলে সাব্যস্ত কারা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো ইংরেজী সাম্রাজ্যবাদীরা বহুদিন নিজেদের অধীনে রাখে। এ সুযোগে সেখানে কাদিয়ানীরা তাদের কেন্দ্র স্থাপন করে আহমদী ধর্ম প্রচার করে। তাদের প্রচারের মোকাবেলা করতে কেপটাউনের আথলোনে মুসলমানরা " মুসলিম বিচারক কাউন্সিল" নামে একটি সংস্থা গঠন করে। বিজ্ঞ আলেম এবং ইসলামী পন্ডিত ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিরা এর পরিচালক পরিষদে সংযুক্ত আছেন। এ সংস্থা ১৯৬৭ সালে শায়েখ এম,এস জামার দীনের অধীনে পরিচালিত হয়ে এবং শায়েখ আহমদ নাযিরের সভাপতিত্বে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত আফ্রিকার অনেক দেশে গৃহীত ও অনুসৃত হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার আলেম- উলামাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হলো "নাদয়াতুল উলামা ইন্দোনেশিয়া"। এ নাদয়াতুল উলামা ১৯৮৪ সালে সর্বসম্মত প্রস্তাবে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষনা করেছে। নাদওয়ার পক্ষ হতে সরকারকে সাংবিধানিকভাবে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণার দাবী করে দেশে তাদের ধর্ম প্রচার বন্ধের জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
*****