JustPaste.it

Dajjal 1

thumbnail1.PNG

দাজ্জালীয় সংস্কৃতি-

نحمده و نصل على رسوله الكريم، و بعد:


    সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! বর্তমানে যুবসমাজকে ধ্বংসের একটি চক্রান্তের নাম হচ্ছে তথাকথিত ক্রিড়া সংস্কৃতি। এই খেলাধুলা হচ্ছে নব্য দাজ্জালীয় সংস্কৃতি। যুব সমাজকে অন্যায়ের প্রতিবাদ প্রতিরোধের পথ থেকে সরিয়ে নিরিহ প্রকৃতির ভংগুর মানুষ বানানোর এ এক মহা চক্রান্ত। বিশ্বে যত অন্যায়বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তার সিংহভাগই ছিলো যুব-সমাজ কেন্দ্রীক। আর এই বাস্তবতা বুঝতে পেরেই দাজ্জালের চেলারা যুবকদেরকে তাদের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ওদের তাবেদার জনগোষ্ঠীতে পরিনত করার মানসে মিডিয়াগুলোকে এই বেপারে প্রচার প্রচারনার কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।

 

আমরা যদি একটু ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো নব্বইয়ের দশকের আগের সময়টাতে অন্যায় বিরোধী আন্দোলনের যে একটা ধারা বিশ্বে প্রচলিত ছিলো তার অনেকটাই এখন আর অবশিষ্ট নেই। এর মূল কারনগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে বিশ্বব্যাবস্থা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট,তেমনই রয়েছে যুবসমাজের নৈতিক পদস্খলন। একটা মানুষ যখন সারাদিন বিনোদনের নামে খেলাধুলা ও ক্রীড়া কৌতুকে মত্ত থাকবে স্বাভাবিকভাবেই তার ভিতরের সিরিয়াস সত্তাটার মৃত্যু ঘটবে। যার ফলোশ্রুতিতে কোন অন্যায়কে তার কাছে আর অন্যায় মনে হবেনা। জুলুমকে মনে হবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা, ইবাদাতকে মনে হবে বাড়তি কাজ, এবং খেলোয়াড়েরা হয়ে যাবে তার আদর্শ পুরুষ।

 

এর বাস্তব চিত্র আজ আমাদের চোখের সামনে। কেউ নেইমারের মতো চুল কাটছে, কেউবা মেসির মতো সারা গায়ে ট্যাটু করছে আবার কেউবা রোনালদোর মতো অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে,আর এটাকেই মনে করছে ট্রেন্ড বা আধুনিকতা। অথচ এই যুবসমাজের আইকন হওয়ার কথা ছিলো খালিদ বিন ওয়ালিদ,তারিক বিন যিয়াদ,মুসা বিন নুসাইর কিংবা মুহাম্মাদ বিন কাসেমের মত ইতিহাস বিখ্যাত মুসলিম যুবকগন। যারা তাদের যৌবনের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন ইবাদাত বন্দেগি ও উম্মার এগিয়ে যাওয়ার চিন্তায়। ইমাম মুসলিম আহমাদ (রাহিমাহুমাল্লাহ) তাদের স্ব-স্ব গ্রন্থে বর্ননা করেন-

عن أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؛أَنَّ رَجُلاً قََالَ : يَا رَسُولَ اللهِ ، مَتَى السَّاعَةُ ؟  قَالَ : وَمَاذَا أَعْدَدْتَ لِلسَّاعَةِ ؟   قَالَ : لاَ ، إِلاَّ أَنِّي أُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ ، قَالَ : فَإِنَّكَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ.قَالَ أَنَسٌ : فَمَا فَرِحْنَا بِشَيْءٍ ، بَعْدَ الإِسْلاَمِ ، فَرَحَنَا بِقَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : إِنَّكَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ قَالَ : فَأَنَا أُحِبُّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، وَأَبَا بَكْرٍ ، وَعُمَرَ ، وَأَنَا أَرْجُو أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ ، لِحُبِّي إِيَّاهُمْ، وَإِنْ كُنْتُ لاَ أَعْمَلْ بِعَمَلِهِمْ


          “আনাস (রাঃ) বর্ননা করেন, এক ব্যাক্তি নাবী (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত কখন হবে? নাবী (সাঃ) বলেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছো? লোকটি বললো,তেমন কোন প্রস্তুতি আমার নেই তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালোবাসি। তখন নাবী (সাঃ) বলেন, তুমি যাদেরকে ভালোবাসো তাদের সাথেই তোমার হাশর নাশর হবে। আনাস (রাঃ) বলেন, ইসলাম গ্রহনের পর নাবী (সাঃ) এর এই কথাতে আমরা যতোটা আনন্দিত হয়েছি অন্য কিছুতে ততটা হইনি। কারন আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ও আবু বাকর এবং উমার (রাঃ) কে ভালোবাসি, তাই আশা করি তাদেরকে ভালোবাসার কারনে আমার হাশর তাদের সাথেই হবে, যদিও আমি আমলে তাদের সমান নই”।

 

তাই হে যুবক! ভেবে দেখো তোমার ভালোবাসার তালিকায় কাদের নাম রয়েছে। তুমি কি মেসি রোনাল্ডোদের সাথে হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে দাড়াতে চাও নাকি রসূল এবং সাহাবীদের সাথে দাড়াতে চাও। সিদ্ধান্ত তোমার তাওফিক আল্লাহর। তবে নিজেকে ধোকায় ফেলোনা এই ভেবে যে তুমি তাদের পাশাপাশি আল্লাহ ও তার রাসুলকেও ভালোবাসো। কারন যে হৃদয়ে ইহুদি খৃষ্টানদের প্রতি ভালোবাসা থাকে আল্লাহ সেই হৃদয়ের ভালোবাসা নেননা।

    সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা,  আজকে বিশ্বজুড়ে মুসলিম জাতি নির্যাতনের শিকার, এখন প্রয়োজন এই উম্মার অদম্য যুবসমাজকে, যারা এর প্রতিকারে নিজেদেরকে উৎসর্গ করবে। কিন্তু এর বিপরিতে চিত্রটি একেবারেই উল্টো। মুসলিম যুবকরা আজ খেলাধুলা নিয়ে মহা ব্যাস্ত। সিরিয়া কিংবা ইরাকে কতো মুসলিম না খেয়ে দিনাতিপাত করছে, কতো মুসলিম অন্যায়ভাবে নিহত হচ্ছে, এই সংবাদগুলো সামাজীক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আসলেও আমাদের যুবকদের চোখ সেই খবরগুলো এড়িয়ে পাশে থাকা আইপিএলে তার প্রিয় দলের সর্বশেষ স্কোরের দিকে নিবদ্ধ হয়। ফিলিস্তিনের বাইতুল মুকাদ্দাসে নামাজরত অবস্থায় ইয়াহুদীদের হাতে শতশত মুসলিম নিহত হওয়ার খবরের চেয়ে সাকিব কেনো ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হলো এই ইস্যুটি তাকে বেশি চিন্তিত করে। উইগুর মুসলিমদের উপর চীনা বৌদ্ধ শয়তানদের অকথ্য নির্যাতনের কথা সে না জানলেও গত টেনিস ম্যাচে মারিয়া শারাপোভাকে সেরেনা উইলিয়ামস কতো কতো সেটে হারিয়েছে সেটা তার খুব ভালো করেই জানা।

 

ভাবতেও অবাক লাগে আমরাই একদিন অর্ধবিশ্ব শাসন করেছিলাম বিরত্বের সাথে। আপনার ঘরে আজ শোভা পায় খেলোয়াড়দের বিভিন্ন স্টাইলের ছবি, তার কিছু অর্ধনগ্ন আর কিছুর গায়ে কাপড় নেই। একটিবার চিন্তা করে  দেখুন আপনার পিতা বা দাদার আমলে যেখানে শুভা পেতো “লা ইলাহা ইল্লাহ” পোস্টার সেখানে আজকে আপনার ভাই বা সন্তান তার পছন্দের খেলোয়ারের ছবি ঝুলিয়ে দিয়েছে। আপনিও এটাকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছেন। আপনার চিন্তায় একটি বারও আসলোনা যে কিসের সাথে কি বদল হয়ে গেলো। কালিমায়ে তয়্যিবার স্থানে কোন একটা লম্পট চরিত্রের খেলোয়ারের স্থান হয়ে গেলো। এটা আপনার সামনেই ঘটে গেলো কিন্তু আপনার কিছু ভাবার বা কিছু করার সময়টুকু নেই। আফসোস এই জাতির জন্য।

 

সম্মানিত দ্বিনি ভাই ও বোন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনুল কারিমের বহু জায়গায় আমাদেরকে আখিরাতের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। কুরআনুল কারিমের মূল বক্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানুষ যেন আখিরাতমুখী হয়, দুনিয়া নিয়ে বেশি ব্যাস্ত না হয়, দুনিয়ার চাকচিক্য যেনো তাকে ধোকায় না ফেলে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। মানুষ তার উল্টো কাজই করে বেড়াচ্ছে।

 

সম্মানিত দ্বিনি ভাই ও বোন, আমাদের সমাজে এক শ্রেনীর যুবক আছে যারা নিজেদেরকে খেলাধুলার সাথে এতোটাই জড়িয়ে নিয়েছে যে, একে কেন্দ্র করে পরিবারের সাথেও তারা সম্পর্ক খারাপ করে ফেলছে। তাদের কাছে খেলাধুলা পরিবারের চেয়েও গুরুত্তপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীতে হেনো কোন খেলাধুলা নেই যার বিস্তারিত খবর তাদের কাছে থাকেনা। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে যত বেশি খেলাধুলার খবর জানে তার কাছে মনে হয় সে ততবেশি স্মার্ট। হাফেজগন যেভাবে কুরআনের আয়াতসমূহ হিফজ করেন তারা সেভাবে ক্রিকেট ফুটবল টেনিসের স্কোর মুখস্থ করে এবং এটা নিয়ে গর্বও করে!! তাদের প্রতি আমাদের কিছু প্রশ্ন থাকবে। তোমরা যারা খেলেধুলা নিয়ে এতো ব্যাস্ত, বলতে পারবে যদি তোমরা পৃথিবির সকল খেলাধুলার খবর রাখো, তোমরা যদি খেলাধুলার বিশ্বকোষও হয়ে যাও তবুও এই জ্ঞান মানব জাতীর কোন কল্যানে আসবে? তোমার এই বিশাল জ্ঞানের ভান্ডার থেকে কতোজন অভাবী তার অভাব দুর করতে পারবে? তোমার এই সাগর পরিমান জ্ঞান থেকে কতোজন মাজলুম তার প্রতিকার পাবে? কিংবা কতোজন পথহারা পথিক তার পথের দিশা পাবে? আমি জানি তোমার কাছে এর কোন সদুত্তর নেই। কারন আসলেই এই জ্ঞান দ্বারা মানবজাতির দুনিয়া ও আখিরাতে কোনই কল্যান সাধিত হবেনা। অন্যদিকে এই জ্ঞানের ক্ষতির দিকগুলোর খতিয়ান করলে দেখা যাবে তোমার এই পাহাড়সম খেলোয়াড়ী জ্ঞান অনেক দ্বীনমুখী মানুষকে দুনিয়ামুখী করে দিয়েছে, বাবা মায়ের অত্যন্ত বাধ্য সন্তানকে অবাধ্য করে ছেড়েছে, স্কুল মাদ্রাসার বহু মেধাবী ছাত্রের পড়াশোনার পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে, সর্বোপরি তোমার এই খেলোয়াড়ি জ্ঞানের সংস্পর্শে এসে সমাজের অনেক প্রতিবাদী ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদকে বেহুদা কাজ মনে করে শান্ত হয়ে টিভি সেটের সামনে বসে সময় কাটাতে শুরু করেছে।

 

সুতরাং হে প্রিয় যুবক ভাই আমার! সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি তবে কখন ফুরোবে তার কোন নিশ্চয়তা তোমার কাছে নেই। তাই সময়কে কাজে লাগাও। যে কাজগুলো দুনিয়ার দিকে ধাবিত করে সেগুলো বাদ দিয়ে আখিরাতমুখী কাজে মনযোগ দাও। তোমার স্বজাতির দুঃখ দুর্দশা দূরিকরনের অভিযাত্রায় শামিল হও, এটা না পারলেও কমপক্ষে উম্মাহকে নিয়ে চিন্তা করো। কারন মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَة قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ، وَلَمْ يُحَدِّثْ نَفْسَهُ بِهِ، مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنْ نِفَاقٍ

     আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে মারা গেলো এমন অবস্থায় যে সে যুদ্ধ করেনি এবং যুদ্ধের কথা মনে মনে ভাবেনি সে এক প্রকার নিফাকির উপর মারা গেলো।" সুতরাং উম্মাহর দুর্দশা নিয়ে চিন্তা করাটাও একটা ইবাদাত। আল্লাহ তোমাকে রহম করুন।

 

সম্মানিত দ্বিনি ভাই ও বোন! আপনি হয়তো কারো বাবা কিংবা মা, ভাই কিংবা বোন। আপনার অধিনস্ত যুবকটি আপনার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাখা আমানত। যদি আপনার কোন গাফিলতির কারনে এই যুবক বিপথগামী হয় তার দায়ভার আপনি কখনো এড়াতে পারবেন না। আল্লাহর মহান দরবারে আপনাকে ঠিক এর জবাবদিহি করতে হবে। তাই এখন থেকেই খেয়াল রাখুন আপনার সন্তান বা ভাই বোন কি নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। জীবনের মূল লক্ষ উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে দাজ্জালীয় ফিৎনায় পতিত হচ্ছে কিনা। ঘরের টিভি সেটটি কোন কাজে ব্যাবহৃত হচ্ছে। অন্যথায় মহা দুর্যোগের অপেক্ষায় থাকুন, যখন আপনার আদরের সন্তান বা ভাই বোন আপনার সামনেই দাজ্জালের হাতের পুতুলে পরিনত হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

 

وَ صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَى خَيْرِ خَلْقِهِ مُحَمَّدٍ وَآلِه وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ تَسْلِيْمًا كَثِيْرًا