কালামে এলাহী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সমগ্র পৃথিবী যতক্ষণ না আল্লাহর নির্দেশের সামনে মাথা নত করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর পথে লড়াই করতে থাক
৩০। আর তাদের সঙ্গে তোমরা লড়াই করতে থাক যতক্ষণ না ফেতনা নির্মূল হয় এবং সামগ্রিকভাবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। অবশেষে যদি তারা ফিরে আসে, তো আল্লাহ তাদের কর্মকাণ্ড দেখছেন।
৩১। কিন্তু যদি তারা পৃষ্টপ্রদর্শন করে, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক। তিনি কত উত্তম অভিভাবক, কত উত্তম সহায়ক। আয়াতঃ ৩৯, 8০।
জিহাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ফেতনা নির্মূল হওয়া। অর্থাৎ কাফিরদের শক্তি এমনভাবে খর্ব করা, যেন তারা মানুষকে ঈমান থেকে ফিরিয়ে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং সত্য-সঠিক ধর্মের বিরুদ্ধে তাদের উচ্চবাচ্য করার সাহস না থাকে। ইতিহাস সাক্ষী আছে যে, যখন-ই পৃথিবীর যে ভূখণ্ডে কাফিররা ক্ষমতা লাভ করেছে, তখনই মুসলমানদের দ্বীন-ঈমান হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। স্পেনের দৃষ্টান্ত তো বিশ্ববাসীর সামনেই রয়েছে।
আর জিহাদ ও কিতালের প্রাথমিক লক্ষ্য হল, যাতে ইসলামের অনুসারীরা নিরাপদে-নিশ্চিন্তে আল্লাহর দাসত্ব করতে পারে এবং তাদের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু কাফিরদের হাত থেকে নিরাপদ থাকে। ফেতনার এই ব্যাখ্যা হযরত ইবনে উমর প্রমুখ সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে।
অপরদিকে জিহাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল কুফর নির্মূল হয়ে যাওয়া, জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং আল্লাহর সত্য দ্বীন আর সব মতবাদের উপর বিজয়ী হওয়া। এই বিজয়ী হওয়াটা অন্যসব মিথ্যা মতবাদের উপস্থিতিতেও হতে পারে। যেমনটি হয়েছিল খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে। কিংবা হতে পারে অন্যসব বাতিল মতবাদকে নিশ্চিহ্ন করে। যেমনটি ঘটবে হযরত ঈসা (আঃ) এর অবতরণের পর।
সারকথা, আলোচ্য আয়াতে প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ-চাই আক্রমণাত্মক হোক কিংবা প্রতিরক্ষামূলক- মুসলমানদের বেলায় তা ততদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যতদিন না আলোচ্য দু'টি লক্ষ্য অর্জিত হবে।
গনীমতের সম্পদ বন্টনে আল্লাহর বিধান
৩২। তোমরা আরো জেনে রাখ যে, যুদ্ধে (কাফিরদের থেকে) তোমরা যা কিছু লাভ কর, তার পাঁচ ভাগের একভাগ আল্লাহ, রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, এতীমদের, দরিদ্রদের এবং মুসাফিরদের, যদি তোমরা ঈমান রাখ, আল্লাহর প্রতি ও সেই বস্তুর প্রতি, যা মীমাংসার দিন-দু'টি দল মুখোমুখি হওয়ার দিন আমি আমার বান্দার (মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) প্রতি অবতারণ করেছিলাম। আর আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। আয়াতঃ ৪১
যুদ্ধের মাধ্যমে কাফিরদের হাত থেকে ছিনিয়ে আনা সম্পদ কিংবা কাফিরদের পালাবার সময় ফেলে যাওয়া বস্তু মুজাহিদরা বন্টন করে ভোগ করবে। এই সম্পদের পাঁচ ভাগের একভাগ আল্লাহর নিজের। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই সম্পদ পাঁচটি খাতে ব্যয় করতে পারেন। ১) নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ২) নিজের সেই স্বজনদের মাঝে, যারা যাকাত খেতে পারেন না ৩) এতীমদের মাঝে 8) অভাবী মুসলমানদের মাঝে এবং ৫) মুসাফিরদের মাঝে। গনীমতের অবশিষ্ট চার অংশ বন্টিত হবে যোদ্ধাদের মাঝে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওফাতের পর এখন গনীমতের আল্লাহর পঞ্চমাংশের পাওনাদারদের শেষ তিন শ্রেণী বাকী আছে। কাজেই বর্তমান যুগে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের পাঁচ ভাগের এক ভাগ বন্টন হবে এতীম, গরীব ও মুসাফিরদের মাঝে।
বদর যুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি আল্লাহ তাআলার সাহায্যের ধরন
৩৩। স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকট প্রান্তে (মদীনার দিকে) এবং তারা (কাফিররা) ছিল দূর প্রান্তে আর (আবু সুফিয়ানের) কাফেলা ছিল তোমাদের থেকে এড়িয়ে নিন্মভূমিতে। যদি তোমরা (ও মুশরিকরা) পরস্পর অঙ্গীকার নিতে, তবে অঙ্গীকার পূরণে তোমাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিত। কিন্তু যা ঘটার ছিল, আল্লাহ তা ঘটাবেন-ই, যাতে যাদের জন্য ধ্বংস অবধারিত, প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা ধ্বংস হবে আর যাদের জীবিত থাকার কথা, প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা জীবিত থাকে। আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৩৪। স্মরণ করুন, আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে, তারা সংখ্যায় কম। যদি তিনি আপনাকে এমন দেখাতেন যে, তারা সংখ্যায় অনেক, তাহলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে এবং কাজে পরস্পর বিরোধ করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে ভীরুতা ও বিবাদ থেকে নিরাপদ রেখেছেন। আল্লাহ মানুষের মনের খবর সম্পর্কে সম্যক অবগত।
৩৫। আরো স্মরণ কর, তোমরা যখন পরস্পর মুখোমুখী হয়েছিলে, তখন তিনি তাদেরকে তোমাদের চোখে স্বল্প সংখ্যক এবং তাদের চোখে তোমাদেরকে অধিক-সংখ্যক দেখিয়েছিলেন, যা সংঘটিত হওয়ার ছিল তা ঘটাবার জন্য। আর সব কিছু তো আল্লাহর সমীপেই প্রত্যাবর্তিত হয়। আয়াতঃ ৪২, ৪৩, 8৪।
হে মুজাহিদগণ! তোমরা দৃঢ়পদে লড়াই কর এবং বেশি করে
আল্লাহকে স্মরণ কর
হে মুমিনগণ! তোমরা যখন কোন বাহিনীর মুখোমুখী হবে, তখন দৃঢ়পদ থাকবে এবং বেশী করে আল্লাহকে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফল হতে পার। আয়াতঃ ৪৫।
হে মুজাহিদগণ! অন্তর্দ্বন্ধ থেকে তোমরা বিরত থাক; অন্যথায়
সাহসহারা ও দুর্বল হয়ে পড়বে।
৩৭। তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর আর পরস্পর বিবাদ কর না। অন্যথায় তোমরা সাহসহারা হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। তোমরা ধৈর্যধারণ কর; আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।
৩৮। তোমরা সেই লোকদের ন্যায় হয়ো না, যারা দম্ভভরে ও লোক দেখাবার জন্য আপন ঘর থেকে বের হয়েছিল। তারা লোকদের নিবৃত্ত করে আল্লাহর পথ থেকে। আল্লাহ তাদের কর্মকাণ্ডকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। আয়াতঃ ৪৬, 8৭।
এ দু'টি আয়াতে এবং এর আগের একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুজাহিদদেরকে ছয়টি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। (১) অবিচল থাকা (২) অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করা (৩) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা (8) বিবাদ থেকে বিরত থাকা; চাই তা জিহাদের আমীরের সঙ্গে হোক বা পরস্পর হোক (৫) ধৈর্য ধারণ করা এবং (৬) দম্ভভরে লোকদেরকে নিজেদের শক্তি ও শান দেখাবার জন্য বের না হওয়া।
শয়তান তার বন্ধুদের ধোঁকা দিয়েছে
৩৯। স্মরণ কর, শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকাণ্ডকে শোভন করে দিল এবং বলতে শুরু করল, আজ কোন মানুষই তোমাদের উপর জয়ী হতে পারবে না; আর আমি তোমাদের পার্শ্বেই আছি। কিন্তু পরে যখন দু'টি দল পরস্পর মুখোমুখি হল, তখন সে পিছন দিকে কেটে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখছি, যা তোমরা দেখছ না। আমি আল্লাহকে ভয় করি। আর আল্লাহ্ শাস্তি দানে কঠোর। আয়াতঃ ৪৮।
এটিও বদর যুদ্ধের ঘটনা। যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে শয়তান এক আরব নেতার রূপ ধরে মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। কিন্তু পরে যখন আকাশ থেকে ফেরেশতা অবতরণ করতে শুরু করেন, তখন সে পালিয়ে যায়। (পরবর্তী তিন আয়াতেও বদর যুদ্ধের কাহিনী বিবৃত হয়েছে)
8০। স্মরণ কর, যখন মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা বলতে শুরু করল যে, এদের (মুসলমানদের) দ্বীন এদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে। (অর্থাৎ সংখ্যায় এত নগন্য এবং নিরস্ত্র হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের অস্ত্রসজ্জিত শক্তিশালী বিপুলসংখ্যক সৈন্যের মোকাবেলায় এগিয়ে আসা প্রমাণ করে যে, এরা ধোঁকায় পড়েছে। জবাবে আল্লাহ্ বলছেন, এটি ধোঁকা নয়-তাওয়াক্কুল) বস্তুত যে আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখে, সে নিশ্চিন্ত। কেননা, আল্লাহ্ অতি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
8১। তুমি যদি দেখতে পেতে, যখন ফেরেশতা কাফিরদের জান কবজ করে; প্রহার করে তাদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে এবং বলে, ভোগ কর জাহান্নামের শাস্তি।
৪২। এ হল সেই কর্মের পরিণতি, যা তোমাদের হাত পূর্বে প্রেরণ করেছে। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করেন না। আয়াতঃ ৪৯, ৫০, ৫১।
৪৩। এদের (মক্কার মুশরিকদের) অবস্থা ফেরআউনের অনুসারী এবং তাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদের ন্যায়। তারা আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে; ফলে আল্লাহ্ তাদের পাপের জন্য তাদেরকে শাস্তি দেন। আল্লাহ্ শক্তিমান, কঠোর শাস্তিদাতা।
8৪ । তার কারণ এই যে, আল্লাহ্ কখনো পরিবর্তন করেন না সেসব নেয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান করেছেন, যতক্ষণ না তারা পাল্টে দেয় নিজেদের নীতি-আদর্শ। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।
৪৫। ফেরআউনের অনুসারী এবং তাদের পূর্ববর্তীদের অভ্যাসের ন্যায় এরাও এদের রব এর নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে। তাদের পাপের জন্য আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। আর ডুবিয়ে মেরেছি ফেরাআউনের বংশধরদের। তারা সকলে-ই ছিল জালিম। আয়াতঃ ৫২, ৫৩, ৫৪।
৪৬। আল্লাহ্র নিকট নিকৃষ্ট জীব তারা, যারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না।
৪৭। তাদের মধ্য থেকে তুমি যাদের সঙ্গে চুক্তি করেছ, তারা প্রতিবার তাদের চুক্তি ভঙ্গ করে এবং পরে সাবধান হয় না।
৪৮। কাজেই যুদ্ধে যখনি তুমি তাদেরকে আয়ত্তে পাবে, পিছনের লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুমি তাদেরকে এমন শাস্তি দেবে, যাতে তারা শিক্ষা পায়।
৪৯। যদি তুমি কোন সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ভঙ্গের আশংকা কর, তবে তোমার চুক্তিও তুমি তাদের দিকে ছুড়ে ফেলে দাও এমনভাবে, যেন তোমরা ও তারা সমান হয়ে যাও। বিশ্বাস ভঙ্গকারীকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না। আয়াতঃ ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮।
আয়াতের অর্থ হল, যেসব কাফির তাদের কুফরীর উপর অটল এবং বারংবার চুক্তি ভঙ্গ করে, তারা আল্লাহ্র সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব। যুদ্ধে যখনই এদের নাগালে পাওয়া যাবে, এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন বংশ পরম্পরায় সে কথা মনে থাকে। প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমনটি করেছিলেন বনু কুরায়জার সঙ্গে। আর যদি কোন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিশ্বাসভঙ্গের আশংকা দেখা দেয়, তাহলে তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তি বাতিল করে দেয়ার অনুমতি আছে। কিন্তু বিষয়টি আগেই তাদেরকে জানিয়ে দিতে হবে, যাতে তোমরা এবং তারা আপন আপন নিরাপত্তায় সমানভাবে সজাগ হতে পার। এমন যেন না হয় যে, হঠাৎ বাহিনী নিয়ে গিয়ে চুক্তিভঙ্গের ঘোষণা দিলে। মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ্ বিশ্বাসভঙ্গকারী ও প্রতারককে ভালবাসেন না। তবে যদি কাফিররা এমনটি মনে করে যে, তোমাদের এই নীতি অনুযায়ী কাজ করায় তারা তোমাদের ক্ষতি সাধন করার সুযোগ পাবে, তো এটি তাদের ভুল ধারণা। (পরবর্তী আয়াতটিতে একথাটি বিবৃত হয়েছে)
৫০। কাফিররা যেন কখনো মনে না করে যে, তারা রক্ষা পেয়ে গেছে। (আল্লাহকে) তারা কখনো শক্তিহীন করতে পারবে না। আয়াতঃ ৫৯।
মুসলমানগণ! তোমরা জিহাদের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ কর
৫১। আর কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য তোমরা যত পার শক্তি ও অশ্ববাহিনীর প্রস্তুতি নাও, যা দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ্র শত্রুকে ও তোমাদের শক্রকে। এছাড়া অন্যদেরও যাদের তোমরা চেন না, চেনেন আল্লাহ্। আর আল্লাহ্র পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। আয়াতঃ ৬০। এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেল, শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করার ন্যায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়াও ফরজ এবং আবশ্যক পরিমাণ যুদ্ধের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে রাখাও ফরজ।
আলোচ্য আয়াতে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, প্রত্যেক যুগে যুগের উপযোগী যুদ্ধ সরঞ্জাম প্রস্তুত করে রাখা মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য।
সন্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করা যেতে পারে
৫২। আর যদি তারা সন্ধির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে, তবে তুমিও তার প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহ্র উপর ভরসা কর। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৫৩। যদি তারা তোমাকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে, তো তোমার জন্য আল্লাহ্-ই যথেষ্ট। তিনি-ই তোমাকে তাঁর সাহায্য এবং মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।
৫৪। আর তিনি-ই তাদের (মুমিনদের) পরস্পরের হৃদয়ের মাঝে প্রীতি স্থাপন করেছেন। পৃথিবীর সব সম্পদ ব্যয় করেও তুমি তাদের মাঝে প্রীতি সঞ্চার করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ্ তাদের মাঝে প্রীতি সঞ্চার করে দিয়েছেন। নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৫৫। হে নবী! তোমার জন্য আল্লাহ্-ই যথেষ্ট এবং মুমিনদের যারা তোমার অনুসারী হয়েছে, তাদের জন্যও। আয়াতঃ ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪।
কাফিররা যদি তোমার কাছে সন্ধির প্রস্তাব পেশ করে, তাহলে সরলমনে তুমি তাদের প্রস্তাব মেনে নাও। অতঃপর যদি তাদের উদ্দেশ্য হয় প্রতারণা করা, তাহলে তাদের সঙ্গে বুঝা-পড়া করার জন্য আল্লাহ্-ই যথেষ্ট। আগেও আমি তোমাকে সব রকম সাহায্য করেছি এবং তোমার সহযোগিতার জন্য মুমিনদের প্রস্তুত করেছি। এক কালে যারা ছিল একে অপরের খুনের পিয়াসী, আমার-ই অনুগ্রহে এখন তারা-ই পরিণত হয়েছে তোমার নবুওতের মশালধারী হিসেবে।
ইবনে হাতেম