সম্পাদকীয়
এনজিওদের স্বর্গ উত্তর বঙ্গে দুর্ভিক্ষ কেন?
=====================================================================
সােনার বাংলাদেশের অন্যতম অংশ উত্তর বঙ্গ আজ দুর্গত, দুর্ভিক্ষ-পীড়িত। ক্ষুধার অনলে দ্বগ্ধ হয়ে হাহাকার করছে লাখাে লাখাে আদম সন্তান। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন সচিত্র প্রতিবেদন ও সংবাদে দেখা যায় কোটরাগত চোখ, কঙ্কালসার শরীর নিয়ে মানুষ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ঘরে খাদ্য নেই, কর্মসংস্থান নেই। সেখানে চালের কেজী ২০ টাকা, অথচ শ্রমিকের দৈনিক মজুরী ১০ টাকায় নেমে এসেছে। ক্ষুধা-পীড়িত মানুষেরা এখন গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছে একটু বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে। বাংলাদেশের শস্য ভান্ডারখ্যাত উত্তর বঙ্গের এই করুণ পরিস্থিতি আমাদের দুর্ভিক্ষ পীড়িত সােমালিয়া কিংবা আজকের রুয়ান্ডা বা ৭৪'এর বাংলাদেশকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। দেশের সমৃদ্ধ এলাকার এই পরিণতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলের লুকোচুরি খেলাও মর্মান্তিক বটে। সরকার জনসমর্থন হারাবার ভয়ে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা চাপা দিয়ে রাখতে চাইছে। অন্যদিকে জনগণের অকৃত্রিম মঙ্গলাকাঙখী (!) বিরােধী দলগুলােও জনগণের মঙ্গল সাধনে (!) ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা ফাঁকা করতে মহাব্যাস্ত। উত্তর বঙ্গের হতভাগাদের প্রতি নজর দেয়ার ফুরসৎ তাদের নেই।
আমাদের বিশ্বাস, একটি দরিদ্র দেশের সরকারের অবহেলা, সম্পদ বন্টনে অব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক দুর্বলতা প্রভৃতি এই পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ ! কিন্তু এসব দুর্বলতার সুযােগ নিয়ে কোন সংগঠন বা গােষ্ঠী বিশেষ যদি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় মাথা পেতে নেয় এবং নিজেদের অঘােষিত দেশপরিচালকে পরিণত করার পরও এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তবে তাকে কোন অভিধায় অভিহিত করব। হ্যা, ওই এনজিওদের কথাই বলছিলাম। আমরা জানি, দারিদ্র বিমােচন কর্মকান্ডে তৎপর অধিকাংশ এনজিও উত্তর বঙ্গেই বেশী তৎপর। এদের মধ্যে ব্র্যাক, কারিতাস, গ্রামীন ব্যাংক, প্রতি উল্লেখযােগ্য। এসব এনজিও দীর্ঘ দিন যাবৎ উত্তর বঙ্গের পল্লীগুলাে চষে বেড়াচ্ছে তথাকথিত দারিদ্র বিমােচন শ্লোগান ও ঋণের থলে নিয়ে উত্তর বঙ্গের প্রায় সর্বত্রই তাদের ঋণ সাম্রাজ্যের নেটওয়ার্ক রয়েছে। অফিস, শাখা অফিসের মাধ্যমে বছরের পর বছর তারা কোটি কোটি টাকার ঋণ প্রদান করেছে, আদায়ের হার শতকরা ৯৯% বলেও প্রচার মাধ্যমে তাদের দাম্ভিক উক্তি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। শত শত এনজিওর দারিদ্রের ব্লিরুদ্ধে এত বিরাট অভিযানের ফলাফল এত নির্মম, এত ভয়াবহ কেন? কোটি কোটি টাকা ঋণের সুফল কোথায় হারিয়ে গেল? কি সুফল বয়ে এনেছে এই ঋণ? শস্য ভান্ডার উত্তর বঙ্গের মানুষ এখন খাদ্যের অভাবে মৃত্যুপথ যাত্রী কেন? এর জন্য দায়ী কারা?
আমরা পূর্বেই এনজিওদের সেবার মুখােশ উম্মােচন করে তাদের শােষণ ও জুলুমের বীভৎস চেহারা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। আমাদের শংঙ্কা, উত্তর বঙ্গে এনজিওদের সেবার নামে বেপরােয় শােষন প্রক্রিয়ার ফলাফল এই দুর্ভিক্ষ নয়তাে? যেহেতু উত্তর বঙ্গে এনজিওরা বেশী তৎপর ছিল, তাই তাদের শােষণ প্রক্রিয়ার ফলাফলও ওখানে দ্রুত এবং ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে হয়ত। অতএব, দেশব্যাপী এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই আমাদের এর কারণ খুঁজে বের করে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া অতীব জরুরী।
═──────────────═