বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
'আল ফিরদাউস' পরিবেশিত
'উস্তাদ খুবাইব আহমাদ হাফিজাহুল্লাহ' এর
'নব্য দেওবন্দি চিন্তাধারা'
****************************
অসহযোগ আন্দোলন ও থানভি রহঃ
“মুক্তির পর শায়খুল হিন্দ রহঃ ফতোয়া দান করেন, গান্ধির নেতৃত্বে সকল মুসলিমের জন্য জরুরী “অসহযোগ আন্দোলনে” যোগ দেয়া।”
(অসহযোগ আন্দোলন ছিল, ইংরেজদের সকল প্রকার সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়া, সরকারি-আধা সরকারি চাকুরি পরিত্যাগ করা! একই মত ছিল হুসাইন আহমাদ মাদানির) - Deoband Ulema’s Movement for the Freedom of India (1st ed.). মানাক প্রকাশনী. পৃষ্ঠা. ১১৬
উক্ত ফতোয়ার বিরোধিতা করে থানভি রহঃ বলেন,
“কোনো ভাবেই (ইংরেজদের অধীনে থেকে) সরকারী চাকুরি ছেড়ে দেয়া বৈধ হবে না।”
(কামালাতে আশরাফিয়া, পৃষ্ঠা ২২৩)
যারা উক্ত ফতোয়ার আলোকে চাকুরি ছেড়ে দিলেন, তাদেরকে থানভি রহঃ “কমবুদ্ধিসম্পন্ন ও বিবেকহীন” বলে আখ্যায়িত করেন। (আল-ইফাদাতুল আশরাফিয়া দর মাসায়িলে সিয়ামিয়াহ, পৃষ্ঠা ২৬-২৭)
গান্ধীর সমর্থনের বিরোধিতা করে থানভি রহঃ বলেন,
“গান্ধী হচ্ছে তাগুত, দাজ্জাল, প্রতারক, জ্ঞানপাপী, ইসলামের দুশমন।” — আল ইফাদাতুল ইয়াওমিয়্যাহ, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা ৪৮।
উভয়েই ভুলের উপর আছেন এটা তো পরিষ্কার… কেননা ঈমান আনার পর সর্বপ্রথম ফরজ আগ্রাসী শত্রুকে প্রতিহত করা।
বিস্তারিত দেখুন —
তবে মূল বিষয় হচ্ছে, বর্তমান উলামায়ে কেরামের আপোসকামী ও সুবিধাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উৎস কোথায় তা জানা।
জিহাদের বিধান- থানভি রহঃ
মাওলানা আশরাফ আলি থানভি রহঃ বলেন,
“তাহলে খুব ভালো করে বুঝে নাও, জিহাদের বিধান দেয়া হয়েছে ইসলাম হেফাজতের জন্য। প্রচার-প্রসারের জন্য নয়। জিহাদের উদ্দেশ্য মানুষকে মুসলমান বানানো নয়, বরং মুসলমানদের হেফাজতের করাই এর উদ্দেশ্য!”(কামালাতে আশরাফিয়া, মাকতাবাতুল আশরাফ, পৃষ্ঠা ২২৫)
১) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি কিয়ামত দিবসের পূর্বে তরবারী হাতে এ উদ্দেশে প্রেরিত হয়েছি যে, কেবলমাত্র এক আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালারই) ইবাদত করা হবে, আর আমার রিযিক আসে আমার বর্শার ছায়া হতে।
আর যারা আমার আদেশের বিরুদ্ধে যাবে তাদের জন্য অপমান (আর লাঞ্ছনা) তাকদীরে নির্ধারিত হয়েছে, আর যে কেউ তাদের অনুকরণ করে সে তাদেরই একজন”।
(মুসনাদে আহমান, ৪৮৬৯; সহীহ আল জামে’,২৮৩১)
২) আল বুখারী (৪৫৭৭) বর্ণনা করেছেনঃ
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে”।(আলে ইমরান ১১০)
এই আয়াতটি সম্পর্কে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মানুষের জন্য মানুষ কল্যাণজনক তখনই হয় যখন তাদের গ্রীবাদেশে শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসে, এরপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে”।
জিহাদ ব্যতীত কি লোকদের ঘাড়ে শিকল লাগানো অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব?
৩) ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর আল-ফারুসিয়াহ গ্রন্থে (পৃ ১৮) বলেনঃ
“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একদিকে দলীল প্রমাণ সাক্ষ্য সহকারে, এবং অপরদিকে তরবারী ও বর্শা দিয়ে, উভয়ে এমনভাবে একত্রিত আছে যার একটি থেকে অপরটি আলাদা করা যায় না।”
৪) ফাতাওয়া আল লাযনাহ আল দাইমাহ (১২/১৪) তে বর্ণিতঃ
যারা ইসলামের বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছে ও কর্ণপাত করেছে তাদের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে দলীল-প্রমাণাদি সহকারে। আর যারা উদ্ধত, দাম্ভিক অহংকারী ও গোঁয়ার তাদের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে শক্তি ও তরবারীর মাধ্যমে, যে পর্যন্ত না তারা নত করেছে, অহংকার দাম্ভিকতা পরিত্যাগ করেছে, আর সবশেষে সত্য ও বাস্তবতার সামনে আত্মসমর্পণ করেছে। আরও বিস্তারিত দলীলঃ http://tinyurl.com/hecg7vm
যারা মাওলানা আশরাফ আলি থানভি রহঃ’র ন্যায় বলে থাকেন যে, ইসলাম প্রচার-প্রসারে, কাফেরদের ইসলাম গ্রহণে জিহাদের ভূমিকা নেই, জিহাদ কেবল নিজেদের হেফাজতের জন্য… তাদের এহেন চিন্তাধারার ব্যাপারে প্রখ্যাত সিরিয়ান আলেম শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
“ইসলামের প্রসারের একটি মাধ্যম হিসেবে তরবারী ও শক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এটি ইসলামের জন্য লজ্জা বা হীনমন্যতার কিছু নয়, বরং এটি ইসলামের একটি শক্তি ও গুণ। কেননা এর ফলে মানুষ সেই দ্বীনের সাথে লেগে থাকে যা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে উপকৃত করবে। এটা এমন একটি বিষয়, যার জন্য ইসলাম প্রশংসার দাবীদার, নিন্দনীয় নয়।
পরাজিত ধ্বজাধারীদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এ কারণে যে তারা আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করছে, আর একে দূর্বল করে তুলছে বার বার এ দাবী করে যে, এটা হচ্ছে শান্তির ধর্ম।”
******************