বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
'আল ফিরদাউস' পরিবেশিত
'উস্তাদ খুবাইব আহমাদ হাফিজাহুল্লাহ' এর
'খিলাফাহ কায়েমের চেষ্টা দিবাস্বপ্ন'
****************************
জনৈক কওমি আলিম “আমরা যারা ইসলামী হুকুমতের দিবা-স্বপ্ন দেখি তাদের জন্য হাদিয়া।” শিরোনামে কিছু দালিল পেশ করে বোঝাতে চেয়েছেন ইমাম মাহাদি (আ) এর আগমনের পূর্বে খিলাফত আসবে না। (উনার মূল লেখার লিঙ্ক- https://www.facebook.com/azim.alam.129/posts/1177569805616793)
উনার প্রথম পয়েন্টঃ ইসলামি হুকুমাত কায়েমের প্রচেস্টা ‘দিবাস্বপ্ন”
উনি উনার বক্তব্যের স্বপক্ষে আহলুস সুন্নাহ মহান দুই ইমাম, ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার ও ইমাম নববি (রহ) বক্তব্য টেনে এনেছেন। ইমাম ইবনে হাজার (রহ) এবং ইমাম নববী যদি তা ই বুঝে থাকেন অর্থাৎ ইসলামী হুকুমাত কায়েমের প্রচেষ্টাকে যদি উনারা ‘দিবাস্বপ্ন’ মনে করে থাকেন, তাহলে উনারা কেন রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম ফিরিয়ে আনার দিবাস্বপ্ন নিজেরাই দেখেছেন এবং দিবাস্বপ্ন দেখার স্বপক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, উপরন্তু ওয়াজিব বলেছেন !!!?
১/ ইসলামি হুকুমাতের দিবাস্বপ্ন দেখতে উৎসাহদানকারী ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ)’র বক্তব্য –
ইবনে হাজার (রহঃ) এ ব্যাপারে ইবনে বাত্তাল, ইবনে তীন, দাউদী (রহঃ) সহ অন্যান্যদের ইজমা উল্লেখ করে বলেন:
وملخصه أنه ينعزل بالكفر إجماعا فيجب على كل مسلم القيام في ذلك، فمن قوي على ذلك فله الثواب، ومن داهن فعليه الإثم، ومن عجز وجبت عليه الهجرة من تلك الأرض
মোট কথা : তাকে তার(শাসক) কুফরীর কারণে অপসারণ করতে হবে। সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব হলো তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। যে তাতে সক্ষম হবে তার জন্য রয়েছে প্রতিদান। যে অবহেলা করবে সে হবে গুনাহগার। আর যে অক্ষম হবে তার উপর ওয়াজিব হলো ঐ এলাকা থেকে হিজরত করা। (ফাতহুল বারী, কিতাবুল ফিতান, ১৩/১২৩)
*তাহলে যে ব্যক্তি অবহেলা করে এবং অবহেলা করার দিকে আহ্বান করে, উপরন্তু দালিল পেশ করে একটি ওয়াজিব দায়িত্বকে ‘’দিবাস্বপ্ন’’ আখ্যায়তি করে তার হুকুম কি হবে?? আল্লাহ’র কাছে আশ্রয় চাই!! ইমাম সাহেবের বক্তব্য ভুলভাবে পেশ করে আহলুস সুন্নাহ’র এই মহান ইমামের নামে কালেমা লেপনের চেষ্টাকারী ব্যক্তির ফয়সালা আল্লাহ্ তা’আলাই করবেন ইনশা’আল্লাহ!
২/ ইসলামি হুকুমাতের দিবাস্বপ্ন দেখার ব্যাপারে ইমাম নববি (রহ)’র বক্তব্য -
আবু হোরায়রা (রাদিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করলেন, আবু বকর (রাদিঃ) খেলাফতের দায়িত্বগ্রহণ করলেন, এ সময় আরবের অনেক ব্যক্তি কুফরী করলো। তখন উমর (রাদিঃ) বললেন, হে আবু বকর আপনি মানুষদের সাথে কিভাবে কিতাল করবেন? অথচ রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, যাতে আমি মানুষদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত কিতাল করি যতক্ষণ না তারা বলে লা-ইলাহা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই)। আর যে ব্যক্তি লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে সে তার মাল ও জানকে আমার কাছ থেকে নিরাপদ করে নেবে তবে তার হক্বের কারণে আর তার হিসাব আল্লাহ তাআলার কাছে ন্যস্ত।
আবু বকর (রাদিঃ) বললেন: আল্লাহর শপথ অবশ্যই আমি এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিতাল করবো যে নামায ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে। কেননা যাকাত হলো মালের হক্ব। আল্লাহর শপথ তারা যদি এমন একটি ছাগল ছানা দেয়া পর্যন্ত বিরত থাকে যা তারা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রদান করতো তাহলে এই বিরত থাকার কারণে অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করবো। উমর (রাদিঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ আমি প্রত্যক্ষ করেছি এটি একারণে হয়েছে যে,আল্লাহতা‘আলা কিতালের ব্যাপারে আবু বকর (রাদিঃ) এর বক্ষকে উন্মোচন করে দিয়েছিলেন। আর আমিও বুঝতে পেরেছি যে এটাই হক্ব। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫২৬)
ইমাম নববী (রহঃ) উক্ত হাদীসের আলোকে বলেন:
وفيه وجوب قتال ما نعى الزكاة أو الصلاة أو غيرهما من واجبات الاسلام قليلا كان أو كثيرا لقوله رضى الله عنه لو منعونى عقالا أو عناقا
এতে এ প্রমাণ বিদ্যমান আছে যে, যারা যাকাত, নামায অথবা অন্য কোনো ওয়াজিব আদায় করা থেকে বিরত থাকে — চাই কম হোক কিংবা বেশী, তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করা ওয়াজিব। কেননা আবু বকর (রাদিঃ) বলেছেনঃ যদি তারা আমাকে একটা রশি (অপর রেওয়াতে এসেছে) যদি একটা উটের বাচ্চা পর্যন্ত দেয়া থেকে বিরত থাকে (তথাপি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো)। (শরহে মুসলিম লিন নববী,খন্ড:১, পৃষ্ঠা:২১২)
৩/ ইসলামি হুকুমাত প্রতিষ্ঠার দিবাস্বপ্নে বিভোর আল্লামা ত্বকী উসমানী (দাঃ বাঃ) এর ফতওয়া:
فالذي يظهر لهذا العبد الضعيف عفا الله عنه بعد مراجعة النصوص الشرعية وكلام الفقهاء والمحدثين في هذا الباب — والله أعلم — أن فسق الإمام على قسمين:
الأول ما كان مقتصرا على نفسه , فهذا لا يبيح الخروج عليه , وعليه يحمل قول من قال : إن الإمام الفاسق أو الجائر لا يجوز الخروج عليه .
والثاني: ما كان متعديا وذلك بترويج مظاهر الكفر , و إقامة شعائره , وتحكيم قوانينه , واستخفاف أحكام الدين , والامتناع من تحكيم شرع الله مع القدرة على ذلك لاستقباحه , وتفضيل شرع غير الله عليه . فهذا ما يلحق بالكفر البواح . ويجوز حينئذ الخروج بشروطه.
“শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ” এ প্রসঙ্গে শরয়ী নুসূস সমূহ এবং মুহাদ্দিসীন ও ফুকাহাগণের উক্তি সমূহ অধ্যায়নের পর এই দুর্বল বান্দার নিকট [আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করুন] যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে [আর আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন] শাসকের পাপাচারসমূহ দু’ধরনের:
এক. যা শাসকের নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। এ ধরনের অপরাধ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে বৈধ করেনা। আর যারা বলেছেন ফাসিক অথবা জালিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বৈধ নয় তাদের মত এক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হবে।
দুই. যা অন্যের মাঝেও প্রভাব সৃষ্টি করবে। আর তা হলো, কুফরের প্রকাশ স্থলগুলোর অনুমতি প্রদান করা, কুফরের শে‘আরগুলো প্রতিষ্ঠা করা, কুফরী বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা করা, দ্বীনী বিধি-বিধান সমূহকে গুরত্বহীন মনে করা, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা থেকে বিরত থাকা, তাকে অপছন্দ করার কারণে আল্লাহর শরীয়ার উপর অন্য কোনো শরীয়াকে প্রাধান্য দেয়া। আর এ সবগুলোই কুফরে বাওয়াহ বা সুস্পষ্ট কুফরের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হবে। আর এ ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বৈধ হবে।” [দেখুন: তাকমীলায়ে ফাতহুল মুলহীম, খন্ড:৩, পৃষ্ঠা: ৩২৬-৩৩১]
উনার দ্বিতীয় পয়েন্টঃ বারজন খলিফা এসে গেছেন। ইমাম মাহাদি (আ) আসার পূর্বে আর কোনো খলিফা আসবে না
ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, জনাব আবু মুহাম্মাদ আউট অফ কনটেক্সট দালিলা-আদিল্লা দিয়ে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। কেননা এখানে এটি পরিষ্কার যে, হাদিসে যে বার জনের কথা এসেছে এবং আহলুস সুন্নাহ’র ইমামরা বারজনের ব্যাপারে যা বলছেন তা হচ্ছে, “খিলাফাহ আলা মিনহাজুন নাবুওয়াহ”র ব্যাপারে।(ভুল হলে আলিম ও তালিবুল ইলমদের থেকে সংশোধনী আশা করছি) কিন্তু এই ব্যক্তি বিষয়টি ব্যাপকভাবে নিয়ে হুকুম লাগিয়েছেন।
লক্ষণীয়! কোনো ইমামই বারজন খলিফার আলোচনা শেষে উনার মত এই বলে উপসংহার টানেননি যে,”ইমাম মাহাদি (আ)’র পূর্বে আর কোনো খলিফা আসবে না।”
এছাড়াও উনি যেসকল দালিল দিয়েছেন তার সবই উসমানি খিলাফত প্রতিষ্ঠার আগে। যদি উনার গবেষণালব্ধ ফলাফল সহিহ তাহলে তো বলতে হয় উসমানি খিলাফতও অবৈধ খিলাফত, যা সুস্পষ্টভাবেই উম্মতের ইজমাবিরোধী।
দেখুন — এই মহোদয়ের অদ্ভুত অবস্থান !! খিলাফত যদি সম্ভব নাও হয়… যদি উনার এই কথাটা মেনেও নেই … ভালো করে লক্ষ্য করুন — এই ব্যাক্তি খিলাফাহ’র দলীল দিয়ে এটাও প্রমাণ করে দিতে চাইলো যে, ইসলামই হুকুমাতই দিবাস্বপ্ন !!আউজুবিল্লাহ!
এই ব্যাক্তি খানকা-মসজিদের-পীরদের প্রতি বায়াতের ভেতর ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে ফেলতে চাইছে বহু আগে থেকেই। ইচ্ছাপ্রণোদিতভাবে ইমামদের বক্তব্য এমন স্থানে পেশ করছে যা ইমাম (রাহিমাহুমুল্লাহ) দের বুঝের সম্পূর্ণ বিপরীত। এমনটা করা সম্পূর্ণই উনাদের উপর অপবাদ আরোপ ব্যাতিত কিছুই নয়। এমন দিমুখীচারিতা থেকে আশ্রয় চাই। এই ব্যাক্তি আরও কিছু বিষয় এড়িয়ে গিয়েছে, খলিফারা ফাসিক হওয়াতে কি তাদের থেকে বায়াত উঠিয়ে নিতে হবে? খলিফাদের থেকে ইসলাম বিদায় নিয়েছিল বলতে কী বোঝানো হচ্ছে সেটাও তিনি স্পষ্ট করলেন না। উনি যাদের কাছে বায়াত হতে বলেন তারা কি নিস্পাপ? উপরন্তু, উনি ইতিমধ্যে ১২জনের নাম উল্লেখ করে ফেলেছেন। তার মানে দাঁড়ায়, ইমাম মাহাদিও এই ১২জনের বাইরে !!
আরেকটি বিষয়, অনেক দেওবন্দি ভাই সালাফিদের আক্রমণ করে এই বলে যে, অনেক সালাফি উসমানি খিলাফতের স্বীকৃতি দেয় না। এখানে দেখুন, এই ভদ্রলোক তো মাত্র ১২ জন খলিফা ব্যাতিত বাকীদেরও স্বীকৃতিই দিচ্ছে না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা মুমিনদের সামনে থেকে সংশয়ের ফিতনা দূর করে থাকেন!
************************