JustPaste.it

ঐতিহ্য ইতিহাস

 

দারুল উলূম মঈনুল ইসলামের অবদান এবং বাংলাদেশে দেওবন্দ পদ্ধতির ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলন - ১৮৮০-১৯৯৪

আবদূর রহীম ইসলামাবাদী

========================================================================

 

        ১৮৮০ সাল থেকে ১৯৯৪ ইংরেজী, একশত চৌদ্দ বছর। হিজরী সালের হিসাব মতে হয় ১১৮ বছর। বাংলাদেশে দেওবন্দ পদ্দতিতে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দেলনের একশত আঠার বছর চলছে। এই দীর্ঘ সময়ে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনের যে বিরাট খেদমত হয়েছে এর কোন বিস্তারিত ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়নি। সময়ের দাবী এ বিষয়ে বিস্তারিত ইতহাস লিপিবদ্ধ হওয়া।

 

        উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ। দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৬ সালে। হিজরী সন হিসেবে ১৩০ বছর সময়ে দেওবন্দ মাদ্রাসা এই উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনে কি অবদান রেখেছে। তা অভিজ্ঞ পাঠকের কাছে স্পষ্ট।

 

দারুল উলুম দেওবন্দের কৃতি ছাত্র

        শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মুহাদ্দেস কুল শিরােমনী আল্লামা সৈয়দ মােঃ আনােয়ার শাহ কাশ্মিরী, তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা মােঃ ইলীয়াছ কান্দলভী, হাকীমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, হযরত আল্লামা আব্দুল ওয়াজেদ বাঙ্গালী, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী, মুফতীয়ে আজম হযরত মাওলানা - আজিজুর রহমান, শায়খুল আরব ওয়াল আজম হযরত মাওলানা সৈয়দ হােসাইন আহমদ মাদানী, অভিবক্ত ভারতের গ্রান্ড মুফতী জামীয়তে উলামায়ে হিন্দের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হয়রত মুফতী কেফায়েতুল্লাহ, মুফতীয়ে আজম পাকিস্তান মাওলানা মােঃ শফী, মুফতীয়ে আজম বাংলাদেশ মাওলানা ফয়জুল্লাহ, শায়খুল তাফসীর আল্লামা ইদ্রিছ কান্দলভী, আল্লামা আতহার আলী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ চাটগামী, মাওলানা মােহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা শামসুল হক ফরিদ পুরী (রহ) প্রমুখ এই উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনে যে অসাধারণ অবদান রেখেছেন তা ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।

 

        আমাদের আলােচ্য বিষয় বাংলাদেশে দেওবন্দ পদ্ধতির ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলন বিষয়ে। আমাদের গবেষণা অনুযায়ী এদেশে দেওবন্দ পদ্ধতির ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কর আন্দোলন শুরু হয় ১৮৮০ ইংরেজী সালের দিকে। দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ৫/৬ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন ছাত্র দেওবন্দ পৌঁছে গিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে প্রথম যে দু'জন আলেমের নাম জানা যায় তারা হলেন, হযরত মাওলানা আবদুল ওয়াহেদ বাঙ্গালী ও হযরত মাওলানা আবদুল হাকিম (রহঃ)। তাদের দু’জনেরই রাড়ী ছিল চট্টগ্রামের বােয়ালখালী থানার হাওরা খরন্দীপ গ্রামে।

 

        মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ বাঙ্গালী (রহঃ) ছিলেন চট্টগ্রামের জিন্নত আলী মুন্সেফ এর পুত্র।

 

        মাওলানা আবদুল ওয়াহেদ বাঙ্গালীই বাংলাদেশে দেওবন্দ পদ্ধতির ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। অনুমানিক ১৮৫০ সালে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। বােয়ালখালী সরভাতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়ার পর তিনি দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণে মনােযােগী হন। প্রথমে কিছু দিন চট্টগ্রাম মুহসেনিয়া মাদ্রাসায় পড়েন। অতঃপর কলকাতা হয়ে তার পিতার এক বন্ধুর সহায়তায় দারুল . উলুম দেওবন্দে গমন করে দীর্ঘদিন দেওবন্দে অবস্থান করেন।

 

        দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম যুগে প্রতিষ্ঠাতা হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা মােঃ কাসেম নানুতবী (রহ), শায়খুল হাদীস মাওলানা মােঃ ইয়াকুব নানুতুবী (রহ), হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ ছাহেব (রহ) প্রমুখের কাছে আরবী, ফারসী, মানতেক, ফলসাফা, হাদীস, তাফসীর, উসূল প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যয়ন করে সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।

 

        যাহেরী ইলম অর্জনের সাথে সাথে তিনি ইলমে বাতেনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষন গ্রহণেও মনােযােগী হন এবং শায়খুল আরব ওয়াল আজম হযরত মাওলানা হাজী এমদাদুল্লাহ মােহাজেরী মক্কী (রহ) এর সাথে আধ্যাত্মিক অম্পর্ক কায়েম করেন।

 

        হযরত হাজী ছাহেব (রহ) হিজরত করে মক্কা শরীফে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতেছিলেন তাই ভারত তেকে নিয়মিত যােগাযােগ রাখা এবং ইসলাহ ও সংশােধনের ধারাবাহিকতা রক্ষা কঠিন ছিল বিধায় হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রহ)  আপন উস্তাদ হযরত মাওলানা মোঃ কাসেম নানুতবীর (রহ) এর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক কায়েমের মনস্থ করেন। কিন্তু হযরত নানুতবী (রহ) তাকে পত্র লিখে তখনকার সময়ের প্রসিদ্ধ বুজুর্গ হযরত মাওলানা ফযলে রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদীর (রহ) কাছে প্রেরণ করেন। ছাত্র জীবন সমাপ্তির পর মাওলানা আবদুল ওয়াহেদ। (রহ) হযরত গঞ্জে মুরাদাবাদীর (রহ) দরবারে আরও দু'বছর অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি হযরত মাওলানা ফযলে রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদী ও হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মােহাজেরে মক্কীর (রহ) খেলাফত লাভ করেন।

 

        মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রহ) দীর্ঘ কাল ভারতে অবস্থান করে ১৮৮০ সালের দিকে বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং এদেশে দেওবন্দ এর পদ্ধতিতে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার। আন্দোলন শুরু করেন। ১৮৮০ সালের দিকে বাংলার অবস্থা ছিল ধর্মীয় দিক দিয়ে খুবই করুণ। রাজ্য হারা, ক্ষমতা। হারা মুসলমানরা ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে খুবই বিপদগ্রস্ত অবস্থায় ছিল।

 

        ১৭৫৭ সালে বাংলা বিহার ও উড়িস্যা থেকে মুসলিম শাসনের অবসান, ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বা সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর আলেম সমাজ বৃটিশের সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হন। মুহসেনিয়া মাদ্রাসা নামক মধ্যম স্তরের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছাড়া চট্টগ্রামে আর কোন উল্লেখযােগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছিল না। নানা ধরণের বেদয়াত রুছুমাত, কুসংস্কার ও কোরআন সুন্নাহ বিরােধী কার্যকলাপ সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছিল। এ সময় মাওলানা আবদুল ওয়াহেদ (রহ) চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদের নিকটে একটি দপ্তর খুলে সুন্নত তরীকায় ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে আত্ম নিয়ােগ করেন। এসময় মুহসেনিয়া মাদ্রাসার দুই কৃতি ছাত্র সর্বজনাব মাওলানা আব্দুল হামিদ (রহ) তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং প্রধান সহযােগী হিসেবে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

 

        মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রহ) নিজ এলাকা। বােয়ালখালী, মাওলানা আবদুল হামিদ নিজ এলাকা হাটহাজারী থানার মাদার্ষা ও খন্দকিয়া এবং মাওলানা সূফী আজিজুর রহমান (রহ) নিজ এলাকা ফটিকছড়িতে দেওবন্দের পদ্ধতিতে প্রাথমিক স্তরের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে ইলমে দ্বীনের প্রচার ও প্রসার করতে থাকেন। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ নসিহত এর মাধ্যমে লােকদেরকে সুন্নতে রাসুলের (সাঃ) খাটি অনুসারী হিসেবে গড়ে তুলতে থাকেন ।

 

        একই সময়ে মওলানা হাবীবুল্লাহ ভারতের কানপুর জামেউল উলুম মাদ্রাসায় হযরত হাকীমুল উম্মত মােজাদ্দেদে মিল্লাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ) এর কাছে শিক্ষা ও প্রশিক্ষন লাভ করে চট্টগ্রামে আগমন করে সুন্নাত তরীকায় ইসলামের প্রচার করতে থাকেন। মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ (রহ) মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রহ) ছাহেবের সংবাদ পেয়ে চারিয়া গ্রামের কাজী পাড়াস্থ বাড়ীতে যান এবং তাকে স্থায়ীভাবে দ্বীনি শিক্ষা সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে একটি মাদ্রাসা কায়েমের অনুরােধ জানান। মাওলানা হাবীবুল্লাহ ছাহেব (রহ) এ ব্যাপারে পরামর্শের জন্য হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ) এর কাছে পত্র লিখেন। হযরত থানবী (রহ)-ও এ ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করেন। অতঃপর মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রহ) চারিয়া গ্রামের জোড়পুলের নিকট একখানা মাদ্রাসা কায়েম করেন এবং কিছু ছাত্রকে দ্বীনি শিক্ষা প্রদান করতে থাকেন। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার ছয় মাস পর হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ ও মাওলানা সুফী আজিজুর রহমান (রহ) মাদ্রাসাটি দেখে খুবই সন্তুষ্ট হন। তারা তাকে বলেন যে, এই জায়গাটি বড় ধরনের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য উপযুক্ত স্থান নয়। যদি হাটহাজারী বাজারের ফকির মসজিদের নিকটে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে তাই হবে উত্তম পদক্ষেপ। এর পর তারা মাদার্শা গ্রামে গিয়ে মাওলানা আব্দুল হামিদ ছাহেবকে মাওলানা হাবীবুল্লাহ ছাহেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নতুন মাদ্রাসার সংবাদ প্রদান করলেন এবং সকলে মিলে হাটহাজারী বাজারের কেন্দ্রস্থলে একটি কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা স্থাপনের অনুরােধ করলেন। এভাবে হযরত মওলানা আবদুল ওয়াহেদ, হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ, হযরত মাওলানা সুফী আজিজুর রহমান ও মাওলানা আব্দুল হামিদ ছাহেবান মিলে ১৮৯৯ ইং ১৩১৯ হিঃ সালে হাটহাজারী বাজারের কেন্দ্রস্থলে ফকির মসজিদের উত্তর পার্শে হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

 

বর্তমান জায়গায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাঃ

        এখানে দু'বছর থাকার পর হাটহাজারী মাদ্রাসার বর্তমান স্থানে উল্লেখিত চার বুজুর্গ কতৃক ১৯০১ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। এটাই ছিল বাংলাদেশে দেওবন্দ পদ্ধতির ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনের প্রথম ও প্রধান কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। এর নাম রাখা হয় মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা। পরে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম। হাটহাজারী মাদ্রাসা নামে এটা সর্বত্র পরিচিত হয়। এই হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকেই সর্ব প্রথম বাংলাদেশে “সিয়াহ সিত্তা” হাদীসের দরস ও শিক্ষা শুরু হয়। অতঃপর হাটহাজারী মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত হাজার হাজার দ্বীনি মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, আঞ্জুমান প্রতিষ্ঠিত হয়। এদেশে ইসলাম প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠায় হাটহাজারী মাদ্রাসার অবদান অবিস্মরণীয়।

 

        হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে উত্তীর্ণ উলামায়ে কেরাম উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন, ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে অসাধারণ অবদান রাখেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার কৃতি ছাত্র এবং শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা মােঃ ইয়াকুব ছাহেব (রাহ) বৃটিশ বিরােধী আন্দোলনে বিরাট অবদান রাখেন। তিনি এক বছর কাল বৃটিশের কারা। নির্যাতন ভােগ করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার অপর দু'ছাত্র ব্যারিষ্টার মাওলানা সানাউল্লাহ ও মুফতী মােঃ ইউসুফ ইসলামাবাদী জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে বৃটিশ বিরােধী ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান রাখেন। বৃটিশ বিরােধী আন্দোলনের নেতা জমিয়েতে উলামায়ে হিন্দের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুসলিম সাংবাদিকতার পুরােধা প্রখ্যাত লেখক সাংবাদিক মাওলানা মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সাথে হাটহাজারীর বুযুর্গদের গভীর সম্পর্ক ছিল।

 

        পাকিস্তান আন্দোলনের সমর্থক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হাট হাজারী মাদ্রাসার সাবেক মুহতামিম হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী (রহঃ) এর খলিফা হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল ওহাব ছাহেব (রহ)। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান কে সত্যিকারের ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় নেজামে ইসলাম পার্টি। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দীন, অন্যতম নেতা খতীবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ (রহ) প্রমুখ ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসারই ছাত্র। বর্তমান সময়ে ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনেকেই হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষা প্রাপ্ত । দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা, ফতােয়া ফরায়েজ প্রদান কোরআন, হাদীস, তফসীর ফেকাহ প্রভৃতির শিক্ষা প্রদানের ব্যাপারে ও এ প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ ছাত্ররা বিরাট অবদান। রেখেছেন এবং এখনও রাখছেন। বাংলাদেশের। অধিকাংশ ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষা প্রাপ্ত আলেম । এর মধ্যে রয়েছে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাওলানা জুলফিকার আহমদ কিসমতী, দৈনিক আল-মুজাদ্দিদ এর সহ-সম্পাদক মাওলানা শরীফ মােহাম্মদ ইউসুফ, সাপ্তাহিক জাগাে প্রহরী ও মাসিক রহমত পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, সাপ্তাহিক জমিয়ত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আব্দুর রহীম ইসলামাবাদী, মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে হযরত মাওলানা আহমদ শফী ছাহেব ও মাওলানা আবু যুবাইর মােঃ নুরুল্লাহ, মাসিক আর-রশীদ পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা মুফতী ছাঈদ আহমদ, মাসিক দাওয়াতুল হক পত্রিকার সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুফতী হাবীবুর রহমান কাসেমী ও হাফেয মাওলানা আবু জাফর সাদেক, মাসিক জাগাে মুজাহিদ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মনযূর আহমাদ, মাসিক হক পয়গাম পত্রিকার সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসান শামশাবাদী, মাসিক আল-ফালাহ পত্রিকার সম্পাদক মাওঃ ইয়াকুব শারাফতী, মাসিক পয়গামে হক এর সহকারী সম্পাদক মাওলানা জহিরুল হক ভুইয়া প্রমূখ ইসলামী সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে অবদান রেখে আসছেন।

 

        হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষা প্রাপ্ত আলেম সমাজ পবিত্র কোরআন, তাফসীর, হাদীসের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় বহু ইসলামী গ্রন্থাদী লিখেছেন। বাংলা ইসলামী সাহিত্যেও তারা যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার দু'কৃতি ছাত্র শায়খুল হাদীস মাওলানা নেছারুল হক ছাহেব ও মাওলানা আবুল ফাত্তাহ ভূইয়া ছাহেব মুসলিম শরীফের বাংলা ভাষায় অনুবাদ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা লিখেছেন । হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রাক্তন শায়খুল আদব আল্লামা নজির আহমদ ছাহেব বােখারী শরিফের এক খানা ব্যাখ্যা গ্রন্থ সংকলন করেছেন। এটি আল্লামা সৈয়দ মােঃ আনােয়ার শাহ কাশ্মিরীর (রহ) তাকরীরের সংকলন। আল্লামা হাফেজ আবুল হাসান ছাহেব (রহ) লিখেছেন মেশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ তানযীমুল আশতাত। আল্লামা মােহাম্মাদ আলী (রহ) আরবী ভাষায় মেশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ, শরহে আকায়েদ নসফী এর আরবী ও উর্দু ব্যাখ্যা গ্রন্থ, মাকামাতে হারিরীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ সহ বহু সংখ্যক দ্বীনি কিতাব লিখেছেন।

 

        উপমহাদেশের অধিকাংশ দ্বীনি মাদ্রাসায় হাদীস, তাফসীর, ফেকাহ প্রভৃতির শিক্ষা প্রদান করেছেন দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত আলেম সমাজ। বাংলাদেশের কওমী ও আলীয়া উভয় পদ্ধতির মাদ্রাসায় হাদীস, তাফসীর প্রভৃতির অধ্যাপনার খেদমতে নিয়ােজিত আছেন হাটহাজারী ও দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে উতীর্ণ আলেমগণ।

 

        চট্টগ্রাম হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম, কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা, মাদ্রাসাই আলীয়া ঢাকা, শশীনা দারুচ্ছুন্নাত আলীয়া মাদ্রাসা মাদ্রাসাই আলীয়া সিলেট, চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে দারুল উলুম দেওবন্দ ও দারুল। উলুম হাটহাজারীর ছাত্রগণ মুহাদ্দেস ও মুফাস্সের হিসেবে বিরাট অবদান রাখেন। আল্লামা ইসহাক বর্ধমানী, মাওলানা সাঈদ আহমদ আকবরাবাদী, মাওলানা মােঃ তাহের প্রমুখ কালিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায়। আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী, মাওলানা মিয়া মােহম্মদ কাসেমী, হযরত মাওলানা। ওবাইদুল হক, হযরত মাওলানা আব্দুল হক প্রমুখ। ঢাকা মাদ্রাসাই আলীয়ায় হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ সন্দিপী, আল্লামা ইবরাহীম বলিয়াবী, মুফতী ফয়জুল্লাহ, আল্লামা মােঃ ইয়াকুব, আল্লামা অবদুল কায়উম ও মাওলানা আবদুল আজিজ প্রমুখ হাটহাজারী মাদ্রাসায়। আল্লামা নিয়াজ মাখদুম খােত্তানী হুজুর শর্ষিনা আলীয়া মাদ্রাসায়, আল্লামা সহুল উসমানী সিলেট আলীয়া মাদ্রাসায় । আল্লামা আবদুল অদুদ জিরী মাদ্রাসায়, আল্লামা ফজলুর রহমান, মাওলানা নবাব হােসেন ও মাওলানা নেছারুল হক প্রমুখ চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসায়। আল্লামা ইসহাক বর্ধমানী, আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী, শায়খ আবদুর রহীম প্রমুখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলমে হাদীসের অধ্যাপনায় বিরাট খেদমত আঞ্জাম দেন।

 

 

═──────────────═